লাল কার্ড হাতে ছোট ছোট ফুটবল দলের গান

নবারুণ ভট্টাচার্য

লাল কার্ড হাতে ছোট ছোট ফুটবল দলের গান । নবারুণ ভট্টাচার্য

আমরা ছোট ছোট দল ঠিকই
কিন্তু এক হতে পারলে আমরা
মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলকেও হারিয়ে দিতে পারি
মাঝে মাঝে তো হারিয়ে দিই
তখন আমাদের মার খেতে হয়
সেই কবে থেকে আমরা মার খেয়েই আসছি
আমাদের মার খাওয়াটাই তো ইতিহাস
আর আমাদের মারাটাই যেন নিয়ম

আপনি ভাবছেন কী ক’রে চিনবেন আমাদের
আমাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে লাল কার্ড

বড় বড় দলের প্লেয়াররা আমাদের মারে
সেটা দেখে রেফারি চোখে প’রে ফেলে ঠুলি
ওদের বোকা সাপোর্টাররা আমাদের ইট মারে
ওরা জানেনা কী করছে
ফাটা মাথা আর অবিচার বহন ক’রে আমরা খেলে যাই
হতে পারি আমরা ছোট ছোট দল
কিন্তু একজোট হলে আমরা
ওদের চোয়াল ভেঙে দিতে পারি

আমাদের রোগা রোগ কোচ, মুষ্টিমেয় সমর্থক
ছেঁড়া বুট, নড়বড়ে তাঁবু, ভেজা বল
হাঁটুর তলায় কালশিটে, কপালে ফেট্টিবাঁধা
কিন্তু ভাবুন তো একবার
কতদিন ধরে কী লড়াইটাই না আমরা চালিয়ে যাচ্ছি
সবাই এক হলে লড়াই-এর চেহারাটাই তো পাল্টে যাবে
সত্যি কথা লুকিয়ে রাখতে আমরা ঘৃণা বোধ করি
তাই স্পষ্ট গলায় জানিয়ে দিচ্ছি
যারা লাথি মারে ইতিহাস তাদের মুছে ফেলে
যারা লাথি খায় তারাই হাতমুঠো ক’রে উঠে দাঁড়ায়

মনে রাখবেন হাড়জিরজিরে খালি-পা রুশ যুদ্ধবন্দীদের
এগারো জন
সাঁজোয়া জার্মান দলকে পুঁতে ফেলেছিল
খেলার শেষে এগারো রুশকে গুলি ক’রে মারা হয়েছিল
মনে রাখবেন ফেরেঙ্ক্‌ পুসকাস
ছেঁড়া ন্যাকড়ার দলা পাকিয়ে খেলতে শিখেছিলেন
তেরেস কোরাকোয়েস–সেই শহরের গরীব ছেলে ‘দিকো’
সাত বছর বয়সে যে করতো জুতো পালিশ
দুনিয়ার ফুটবল পাল্টে দিয়ে হলো ‘পেলে’
ইউরোপের সেরা ফুটবলারের ট্রফি লম্বা চুল ছেলে
রুড গুলিট উৎসর্গ করেছে নেলসন ম্যাণ্ডেলার নামে
এগুলো আপনারা মনে রাখবেন
যে সব ব্যবসাদার, ফড়ে, মহাজন, স্মাগলার, ডাক্তার, মন্ত্রী
আপনারা, যাঁরা বড় বড় ক্লাবের পাণ্ডা, ময়দানের মা বাপ

আপনি ভাবছেন কী ক’রে চিনবেন আমাদের
আমাদের প্রত্যেকের হাতে রয়েছে লাল কার্ড

আমাদের ছোট ছোট ক্লাবের টুকরো টুকরো মেঘ মেঘ পতাকা
একসঙ্গে হলে আকাশ মাপের একটা নিশান তৈরি হবে
আমাদের জার্সির ফালিগুলো জুড়লে
দেখা যাবে ক্ষ্যাপা বাউলের সেই আশ্চর্য জোববা
আমাদের বুদ্ধি, মেহনত ও অঙ্গীকার এক হলে
সমুদ্রও তাজ্জব হয়ে যাবে উপযুক্ত প্রতিপক্ষ দেখে

হারাবার জন্যে আছে হীনমন্যতা, আমিত্ব, নিজেকে না চিনতে
পারা
অথচ আমরা পারি, আমরাই পারি
ফুটবলের ইতিহাসটা ঢেলে সাজাতে
প্রত্যেকটা স্টেডিয়ামের ভি আই পি গ্যালারিতে
কাদামাখা রাগী বল ছুঁড়ে দিয়ে
জাল ছিঁড়ে, বার কাঁপিয়ে
লীগ, শীল্ড, ডুরাণ্ড, রোভার্স— সর্বত্র অঘটন ঘটিয়ে
ওদের হিসেব, কেতাব, খাতা— তোলপাড় ক’রে দিতে পারি

আবার একবার, এবার আরো জোর গলায় জানিয়ে দিচ্ছি

যারা লাথি মারে ইতিহাস তাদের মুছে ফেলে
যারা লাথি খায় তারাই হাতমুঠো ক’রে উঠে দাঁড়ায়

সকল অধ্যায়

১. এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না
২. দুটি প্রাথমিক প্রশ্ন
৩. ১৯৮৪-র কলকাতা
৪. একটা ফুলকির জন্যে
৫. ভিয়েতনামের ওপর কবিতা
৬. সার্কাসের অসুখ
৭. আমার খবর
৮. শেষ ইচ্ছে
৯. আমার একটা মোটরগাড়ি চাই
১০. নীল
১১. খারাপ সময়
১২. কুষ্ঠরোগীর কবিতা
১৩. পটভূমি—১৩৮৮
১৪. গ্রহণ
১৫. একটি অসাধারণ কবিতা
১৬. রাতচরা লোক
১৭. সামন্তর বন্দুক উধাও
১৮. ম্যাচবাক্সের মানুষ
১৯. জুয়াড়ির নৌকো
২০. শীত সন্ধ্যার পার্ক স্ট্রিট
২১. হে লেখক
২২. শঙ্কিত কথামালা
২৩. স্লোগানের কবিতা
২৪. বিপ্লবের চিত্রকল্প
২৫. হাত দেখার কবিতা
২৬. কলকাতা
২৭. পেট্রল আর আগুনের কবিতা
২৮. ভাবনার কথা
২৯. বরফ আর আগুন
৩০. ভাসানের সুন্দরবনে সোনার তরী
৩১. স্বদেশ গাথা (প্রেরণা গোবিন্দচন্দ্র দাস)
৩২. কালবেলা
৩৩. ঘুমন্ত দৈত্য
৩৪. আমাকে দেখা যাক বা না যাক
৩৫. পোস্টার
৩৬. নির্গুণের গান
৩৭. কিছু একটা পুড়ছে
৩৮. তৃতীয় বিশ্বের শিশুদের
৩৯. পুলিশ করে মানুষ শিকার
৪০. বুভুক্ষু ক্ষুধার্ত মানুষ
৪১. তোমার, আমার, আমাদের
৪২. কবির ঔদ্ধত্য
৪৩. মাংসনগরে, পণ্যের বাজারে
৪৪. সংবাদ মূলত কবিতা
৪৫. সমাজবিরোধিতার কথা
৪৬. বিষুব অরণ্যে, জ্যোৎস্নার তল্লাসী আলোয়
৪৭. রেস্তরাঁর খাদ্য তালিকা
৪৮. লুম্পেনদের লিরিক
৪৯. মৃত্যুর একটি গান
৫০. টেলিভিশন
৫১. লাল কার্ড হাতে ছোট ছোট ফুটবল দলের গান
৫২. প্রতি কর্তৃপক্ষকে
৫৩. শর্ত
৫৪. সাত যুবক

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন