অধ্যায়-১৮ : মধ্যযুগ থেকে আধুনিক ইউরোপে

আব্দুল্লাহ ইবনে মাহমুদ

অধ্যায় ১৮ : মধ্যযুগ থেকে আধুনিক ইউরোপে

স্পেন, মধ্যপ্রাচ্য এবং বর্তমান রাশিয়ার ক্রাইমিয়া যে জায়গা, সেখান থেকে মধ্যযুগে আশকেনাজি ইহুদীরা ধীরে ধীরে পোল্যান্ডে চলে আসতে থাকে। পোল্যান্ডের কালিশের যুবরাজ ১২৬৪ সালে ঘোষণা দিলেন, সকল ইহুদী আইনি প্রতিরক্ষার অধীনে থাকবে। পরবর্তী শতকে রাজা তৃতীয় কাসিমির পুরো পোল্যান্ড জুড়েই এ আজ্ঞা জারি করে দিলেন। সেই থেকে পোল্যান্ড ইহুদীদের অভয়ারণ্য।

১৩৮৮ সালে লিথুয়ানিয়ার গ্র্যান্ড ডিউকও একই রকম সুবিধা দিলেন ইহুদীদেরকে। এ দুটো দেশে তাই ইহুদীরা নিরাপদেই বাস করতে লাগলো ইউরোপে। পোলিশ ইহুদীরা কর সংগ্রাহক, বিভিন্ন জমিদার বাড়ির ব্যবস্থাপক, ইত্যাদি পদে চাকরি করতে লাগলো। সেই সাথে বিভিন্ন কৃষিকাজ, উৎপাদন, রপ্তানি, ইত্যাদি কাজেও নিয়োজিত ছিল তারা। তবে তাদের সাথে যে বৈষম্য করা হতো না, তা নয়। যেমন, তাদেরকে আলাদা পোশাক পরতে বাধ্য করা হতো। আর মাঝে মাঝে খ্রিস্টীয় প্রথায় বাধা দানের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হতো তাদেরকে।

পঞ্চদশ শতকের দিকে পোল্যান্ডে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার ইহুদী ছিল। পরের শতকে সংখ্যাটি হয়ে দাঁড়ায় দেড় লাখ! ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে পোলিশ জমিদারেরা তাদের জমির দেখাশোনার জন্য নিয়োগ দিতেন ইহুদীদের, তারা কর তুলতো। অভিজাতদের নিজস্ব শহরেও কর তোলার কাজ করতো তারা।

পোল্যান্ড হয়ে উঠলো ইহুদীদের জ্ঞানচর্চার এক চারণভূমি। তবে সপ্তদশ শতকে এসে ইহুদী সমাজের প্রায় এক চতুর্থাংশ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় ইউক্রেনীয় কোস্যাকদের হাতে। এরপর পোল্যান্ডে তাদের অবস্থান অস্থিতিশীল হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু লিথুয়ানিয়াতে বেশ স্বাভাবিকভাবেই জীবন কাটাতে লাগলো ইহুদীরা। মধ্যযুগে স্পেন ও দক্ষিণ-পূর্ব ফ্রান্সের প্রোভোসের ইহুদীদের হাতে তাদের কাব্বালা ও দর্শন উন্নতি লাভ করে। ১৫০০ সালের দিকে ফেরার, মান্তুয়া, ভেনিস, পাদুয়া, ফ্লোরেন্স ও রোমে ইহুদীদের সমাজ ছিল গমগমে। ইতালির রেনেসাঁর যুগে কিছু কিছু ইহুদী বনেদি ইতালীয়দের মতোই জীবন যাপন করতে লাগলো, ইতালীয় মানবতাকর্মীদের সাথে তাদের বেশ খাতির তখন। সেই ইতালীয়রা ইহুদীদের কাব্বালার পাঠ্যবই জোহার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে খ্রিস্টীয় কাব্বালা নিয়ে লেখালেখি শুরু করে দেয়। আবার রেনেসাঁর প্রভাবও পড়ে ইহুদীদের মাঝে। মোট কথা, ইতালি তখন ইহুদী প্রিন্টিং, সিনাগগ (উপাসনালয়) সঙ্গীত ও অন্যান্য উন্নতির প্রাণকেন্দ্র। হিব্রু নাটকের জন্য ইতালিতে ইহুদী থিয়েটার গড়ে তোলেন লিওঁ দেসোমো (১৫২৭-১৫৯২)।

তবে এরপরই শুরু হয় ইহুদীদের বিপদ- খ্রিস্টীয় ইহুদী নিধন আর বিতাড়ন। ষোড়শ শতকে কাউন্টার রিফরমেশন চার্চ ইহুদী সমাজকে আলাদা করে ফেলতে চায়। ১৫৫৩ সালে ইহুদীদের পবিত্র গ্রন্থ তালমুদ পোড়ানো হয়, এবং দুবছর পরে পোপ চতুর্থ পল ইহুদীদেরকে আলাদা গেটোতে বসবাসের আদেশ জারি করেন। ইহুদীদের সংস্কৃতি গ্রহণ করা মারানোদেরকেও আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। চার্চের অধীনে থাকা এলাকাগুলো থেকে বের করে দেয়া হলো ইহুদীদেরকে।

ওদিকে জার্মানিতে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানদের তোপ বাড়ছে, আর সেই সাথে বাড়ছে সেখানকার ইহুদীদের ওপর চাপ। প্রথম দিকে জার্মান ধর্মযাজক মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬) ইহুদীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখলেও দ্রুতই তিনি বুঝতে পারেন, এদের ধর্মান্তরিত হবার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তখনই তিনি ইহুদীদের প্রতি খারাপ মনোভাব দেখাতে শুরু করেন।

ইহুদীদের তৎকালীন ত্রাণকর্তা ছিল তাদের ব্যবসায়ীরা, যারা বিভিন্ন জার্মান যুবরাজ এবং গণ্যমান্যদের সাথে সুসম্পর্ক রাখতো। তাদের বরাতে কখনও কখনও ইহুদীদের ওপর শ্যেনদৃষ্টি পড়া বাদ যেত আরকি।

সপ্তদশ শতকে হল্যান্ডের অ্যামস্টারডামে এসে পৌঁছে আশকেনাজি ইহুদীরা, সেখানে তারা নানা ব্যবসায়িক কাজ শুরু করে দেয়। সপ্তদশ শতক শেষ হবার আগেই সেখানে প্রায় ১০,০০০ ইহুদী হয়ে যায়। তারা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে শুরু করে চিনি, তামাক, হীরা, বীমা, পণ্য উৎপাদন, নাটক, প্রিন্টিং, ব্যাংকিং, ইত্যাদি কাজ করত। তবে ইহুদীরা হল্যান্ডে নাগরিকত্ব পায়নি, তাই কখনও স্বাধীনভাবে ধর্মপালনের অধিকারও পায়নি।

অষ্টম শতকে ইহুদীদের ইউরোপীয় সমাজের অবস্থা কাহিল হয়ে দাঁড়ায়। তুর্কি সেফার্দি ইহুদী সাব্বাতাই জেভি কনস্ট্যান্টিনোপলে আসেন ১৬৬৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রধান উজির ফাজিল আহমেদ পাশার আদেশে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বন্দী অবস্থাতেই তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে প্রায় ৩০০ ইহুদী পরিবারও একই কাজ করে। তার এহেন কর্ম ইউরোপীয় ইহুদীদের ব্যাপক হতাশ করে ফেলে। এ বইতেই কিছু আগে হাসিদী দলের কথা বলেছি, হিব্রু ‘হাসিদ’ শব্দের অর্থ ‘ধার্মিক’। জেভির ইসলাম গ্রহণের পর অনেকেই মূলধারার র‍্যাবাইকেন্দ্রিক ইহুদী ধর্ম বাদ দিয়ে নিজকেন্দ্রিক হাসিদী ইহুদী হয়ে যায়। এটি হাসিদী আন্দোলন নামেও পরিচিত। অবশ্য মূলধারার ইহুদীরা দ্রুতই ১৭৮১ সালের মাঝে হাসিদী ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।

১৭৭০ সালের দিকে খ্রিস্টান ইউরোপের ইহুদী জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ। ইংল্যান্ড ও হল্যান্ডে তাদের জীবন আরামের হলেও মধ্য ইউরোপে অবস্থা ছিল খারাপ। যে করেই হোক, ইহুদীদের এমন কাপড় পরতে হতো, যেন দেখলেই বোঝা যায় তার ধর্ম-পরিচয় ইহুদী। তবে ওই শতকের আশির দশকে ইহুদীদেরকে কিছুটা কম ঝামেলা পোহাতে হয়।

রোমান সম্রাট দ্বিতীয় জোসেফ (১৭৪১-৯০) ১৭৮১ সালে ইহুদীদের বাধ্যতামূলক ভিন্ন পোশাক বা চিহ্ন ধারণ করার প্রথা বাতিল করেন। এর পরের বছর তিনি ভিয়েনাতে ইহুদীদের যেকোনো ব্যবসায় অংশ নেয়ার অধিকার দেন ইহুদী সমাজের বাইরেও। তখন থেকে ইহুদীরা তাদের সন্তানদেরকে সরকারি স্কুলেও পড়াতে পারতো, নিজেদের স্কুলও বানাতে পারতো। ১৭৮৪ সালে জার্মানির সেনাবাহিনীতে ইহুদীরা চাকরিও পেয়ে যায়।

ধীরে ধীরে ফ্রান্সেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে। অবশ্য প্যারিস এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের সেফার্দি ইহুদীরা আরামে থাকলেও, বাদবাকি ফরাসি জায়গার আশকেনাজি ইহুদীরা তখনও নানা বৈষম্যের শিকার হতো। ১৭৯০ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের সেফার্দি ইহুদীদের নাগরিকত্ব দেয়া হয়। ১৭৯৬ সালে হল্যান্ডেও তাদেরকে নাগরিক করা হয়। পরের বছর পাদুয়া ও রোমে ইহুদীদের গেটোতে থাকবার নীতি উঠিয়ে দেয়া হয়।

সম্রাট নেপোলিয়ন ১৮০৪ সালে সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ঘোষণা করেন। ফলে ইহুদীরা তখন পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে যায়, তবে নেপোলিয়ন পরে ইহুদীদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চেয়েছিলেন। ১৮০৬ সালে তিনি কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেন ইহুদীদের নিয়ে। ইহুদীদের বিবাহ ও বিচ্ছেদ রীতি কি ফরাসি নীতির সাথে সাংঘর্ষিক? ইহুদীরা কি খ্রিস্টানদের বিয়ে করতে পারবে? ফরাসি ইহুদীরা কি দেশপ্রেমিক? তারা কি ফ্রান্সকে তাদের নিজেদের দেশ বলে মনে করে? এর জবাবে সংসদ জানায়, ইহুদী রীতি আর ফরাসি রীতি সাংঘর্ষিক নয়। পরের বছর নেপোলিয়ন ইহুদীদের সানহেদ্রিনের সদস্যদের তলব করলেন, নিশ্চিত করতে জিজ্ঞেস করলেন, তারা কি সংসদের বক্তব্যের সাথে একমত? তারা বললেন, হ্যাঁ একমত। তখন নেপোলিয়ন ১৮০৮ সালে দুটো নিয়ম করলেন ইহুদীদের নিয়ে। এক, তিনি কয়েকজন ইহুদী আইনপ্রণেতা রাখলেন, যারা ফরাসি সরকারের অধীনে থেকে এসব বিষয় দেখভাল করবেন। আর দুই, ইহুদীদের প্রতি যারা ঋণী ছিলো, সেই ঋণগুলো তিনি বাতিল করে দিলেন, এবং তাদের জন্য ব্যবসায়িক রীতি নিয়ন্ত্রণ করে দিলেন।

নেপোলিয়ন হেরে যাবার পর ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন, এবং তখন ভিয়েনা কংগ্রেস নতুন করে ইউরোপের মানচিত্র আঁকলো ১৮১৪ ও ১৮১৫ সালে। এর সাথে সাথে কংগ্রেস ইহুদীদের জীবনধারা উন্নত করার সুযোগ দেয়ার কথাও বলে দিল। কিন্তু জার্মান সরকার তা না মেনে, ইহুদীদের আগের স্বাধীনতা বাতিল করে আবার তাদের ওপর যত রকম নিয়ম জারি করা যায়, তা করে দিলো। ১৮১৯ সালে জার্মানে ইহুদীদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। অবশ্য ১৮৩০ সালের দিকে ইহুদীদের ব্যাপারে অনেকে শিথিলতা আসে, অনেকে পক্ষেও কথা বলতে থাকে তাদের।

১৮৪৮ সালে শুরু হলো ফরাসি বিপ্লব। এর ফলশ্রুতিতে প্রুশিয়া, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি ও বোহেমিয়ার শাসকেরা এমন সংবিধান জারি করতে বাধ্য হয়, যেখানে সবার স্বাধীনতাই আগের চেয়ে বেশি ছিল। ফলে ইহুদীদের লাভই হলো। অবশ্য, বিপ্লব পুরোপুরি শেষ হবার আগ পর্যন্ত এই সংবিধানগুলো কার্যকর হয়নি। ১৮৬৯ সালে উত্তর জার্মান ফেডারেশন ইহুদীদের ব্যাপারে সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার ঘোষণা দিল সংবিধানে। এরপর ১৮৭১ সালে অস্ট্রিয়া ও পুরো জার্মানি হোয়েনজলার্ন রাজপরিবারের অধীনে খ্রিস্টীয় জার্মান রাইখের (সাম্রাজ্যের) অধীনে চলে আসে, তখন থেকে পুরো রাজ্য জুড়েই ইহুদীদের আর কোনোই বাধা থাকলো না। হোক সেটা চাকরি, ব্যবসা, বিবাহ কিংবা ভোটের অধিকার।

প্রশ্ন জাগতে পারে, ইউরোপে কিছু হলেই এত ক্ষেপে যেতে কেন লোকে ইহুদীদের ওপর? খ্রিস্টীয় সাধারণ সমাজে যীশুর ক্রুশবিদ্ধের ঘটনা নিয়ে এমনিতেই ইহুদীদের প্রতি একটা ঘৃণা কাজ করতো বটে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি রাগের কারণ ছিল তাদের মহাজনি সুদ প্রথা। চড়া সুদে ঋণ দেয়ার রীতি অনেকের এতই বিপদ ডেকে আনে যে খুব দ্রুতই ইহুদীরা চক্ষুশূল হয়ে পড়ে। শেক্সপিয়রের ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’-এর শাইলক চরিত্র থেকে মোটামুটি ভালই আন্দাজ করা যায় ইহুদীদের প্রতি সাধারণ মনোভাব তখন কেমন ছিল। নেপোলিয়ন তো আইন করেই ইহুদী কর্তৃক ঋণ প্রদান রীতি বাতিল করেন।

অন্যদিকে পূর্ব দিকে রুশ অঞ্চলগুলোতে ইহুদীরা স্বাধীনভাবে ব্যবসা করতে থাকলেও ক্যাথারিন দ্য গ্রেট ১৭৯১ সালে মধ্য রাশিয়াতে ইহুদীদের থাকা নিষিদ্ধ করে দিলেন। তখন থেকে কেবল দক্ষিণ ইউক্রেনে থাকতে পারবে ইহুদীরা। ১৮০৪ সালে জার প্রথম আলেকজান্ডার (১৮০১-২৫) পশ্চিম রাশিয়ার কোন কোন জায়গায় ইহুদীরা থাকতে পারবে, সেটা চিহ্নিত করে দিলেন। তিনি কয়েকবার চেষ্টা করেছিলেন পুরো দেশ থেকেই ইহুদীদের তাড়িয়ে দিতে। ১৮১৭ সালে তিনি নতুন এক রীতি করলেন, ইসরাইলি খ্রিস্টান সংঘ থেকে ধর্মান্তরিত ইহুদীদেরকে (মানে যারা ব্যাপ্টাইজ হয়ে খ্রিস্টান হলো), তাদেরকে আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা করা হবে। ১৮২৪ সালে গ্রামগুলো থেকে ইহুদীদের বের করে দেয়া শুরু হলো। তবে সে বছরই জার প্রথম আলেকজান্ডার মারা গেলেন এবং ক্ষমতা পেলেন জার প্রথম নিকোলাস (১৮২৫-৫৫)। তিনি আবার ইহুদীদের প্রতি প্রচণ্ড ক্ষেপা। তিনি নিয়ম জারি করলেন, ইহুদী ছেলেদেরকে অবশ্যই ২৫ বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে হবে, যদি না তারা ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়ে যায়। তিনি ১৮৩০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রাম ও প্রদেশ থেকে ইহুদী বিতারণ করেন। ১৮৩৫ সালে পশ্চিম রাশিয়ার ইহুদীদের ব্যাপারে আইন পুনঃসংস্কার করা হলো। ১৮৪৪ সালে সম্রাট নিকোলাস ইহুদীদের সমাজকে পুলিশি নজরে রাখার আদেশ দিলেন। ১৮৫০ ও ১৮৫১ সালে সরকার চেষ্টা করলো ইহুদী পোশাক আশাক, ধর্মীয় জুলফি, ইত্যাদি নিষিদ্ধ করতে।

১৮৫১ সালে রাশিয়ার সকল ইহুদীকে আর্থিক শ্রেণীকরণ করা শুরু হলো, যেন কাকে দিয়ে কোন কাজ করানো যায়, তা ঠিক করা যায়। যেমন কেউ কামার, কেউ কৃষক, কেউ বণিক, ইত্যাদি। অবশ্য ১৮৫৩-৫৪ সালের ক্রাইমিয়ান যুদ্ধের পর জার দ্বিতীয় আলেকজান্ডার (১৮৫৫-৮১) এসব নীতি বাদ দেন। ফলে সেইন্ট পিটার্সবার্গ এবং মস্কোর মতো জায়গাতেও ইহুদীদের দেখা যেতে লাগলো। সীমিত সংখ্যক ইহুদীদেরকে তখন আইনি পেশাতেও যোগ দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়। উনিশ শতকের ষাট ও সত্তরের দশকে অনেক ইহুদীই তখন রাশিয়ার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অবদান রাখতে শুরু করলো।

উনিশ শতকের শেষ দিকে যদিও ইউরোপীয় ইহুদীরা স্বাধীন জীবন কাটাতে পেরেছে, তারপরও সত্তরের দশক থেকেই জার্মানিতে আবার মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ইহুদী-বিরোধী মতবাদ।

একটি কথা না বললেই নয়, পশ্চিমারা একে অ্যান্টি-সেমিটিজম বলতে পছন্দ করে, তবে এ টার্মটি ভুল। কেন? কারণ, সেমেটিক ধর্ম বলতে ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মও বোঝায়। তাই কেবল ইহুদী ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বললে তাকে ‘অ্যান্টি- সেমিটিজম’ বলা হবে, কিন্তু খ্রিস্ট ধর্ম বা ইসলাম ধর্মের বেলায় নয়, এটি ভাষাগত দিক দিয়েই ভুল।

সকল অধ্যায়

১. অধ্যায়-১ : পূর্বকথন
২. অধ্যায়-২ : সেকেন্ড টেম্পলের যুগে
৩. অধ্যায়-৩ : হেলেনিজম শেষে
৪. অধ্যায়-৪ : রাজা হেরোদের রাজত্বে
৫. অধ্যায়-৫ : দুই নবীর হত্যাকাণ্ড
৬. অধ্যায়-৬ : অতঃপর যীশু খ্রিস্ট
৭. অধ্যায়-৭ : রোমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
৮. অধ্যায়-৮ : জেরুজালেমের পতন
৯. অধ্যায়-৯ : মাসাদার ঘটনা ও মহাবিদ্রোহের ইতি
১০. অধ্যায়-১০ : রোমান শাসনে ইহুদী জীবন
১১. অধ্যায়-১১ : ব্যবিলনের ইহুদী সমাজ
১২. অধ্যায়-১২ : ইসলামি সাম্রাজ্যে ইহুদী ধর্ম
১৩. অধ্যায়-১৩ : খাজার ও কারাইট ইহুদীদের আবির্ভাব
১৪. অধ্যায়-১৪ : আন্দালুসিয়ার দিনগুলিতে
১৫. অধ্যায়-১৫ : মধ্যযুগের খ্রিস্টান ইউরোপে
১৬. অধ্যায়-১৬ : স্পেনের খ্রিস্টান রাজত্বে
১৭. অধ্যায়-১৭ : উসমানি সাম্রাজ্যে ইহুদীরা
১৮. অধ্যায়-১৮ : মধ্যযুগ থেকে আধুনিক ইউরোপে
১৯. অধ্যায়-১৯ : ইহুদী জাতি এবং সুদপ্রথা
২০. অধ্যায়-২০ : ইহুদীদের আমেরিকা গমন
২১. অধ্যায়-২১ : জায়োনিস্ট আন্দোলনের সূচনা
২২. অধ্যায়-২২ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং ইহুদী গণহত্যা
২৩. অধ্যায়-২৩ : ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম
২৪. অধ্যায়-২৪ : ছয়-দিনের সেই যুদ্ধ
২৫. অধ্যায়-২৫ : ভৌগোলিক ইসরাইল-ফিলিস্তিন
২৬. অধ্যায়-২৬ : অসলো অ্যাকর্ডস অবধি
২৭. অধ্যায়-২৭ : অতঃপর বর্তমান
২৮. অধ্যায়-২৮ : ইহুদী এসকাটোলজি
২৯. পরিশিষ্ট-১ : পাঠকের যত প্রশ্নের উত্তর
৩০. পরিশিষ্ট-২ : এক ঝলকে পুরো ইতিহাস
৩১. পরিশিষ্ট-৩ : হিব্রু পঠন (অসম্পূর্ণ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন