লক্ষীছাড়া

কাজী নজরুল ইসলাম

লক্ষীছাড়া

 আমি   নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।
শেষে   সে-ই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারই জন।
দূর হতে মোর বাঁশির সুরে
পথিক-বালার নয়ন ঝুরে
তার   ব্যথায়-ভরাট ভালোবাসায় হৃদয় পুরে গো!
তারে   যেমনি টানি পরান-পুটে
অমনি   সে হায় বিষিয়ে উঠে!
তখন   হারিয়ে তারে কেঁদে ফিরি সঙ্গীহারা পথটি আবার নিজন।
মুগ্ধা ওদের নেই কোনো দোষ, আমিও ওগো ধরা দিয়ে মরি,
প্রেম-পিয়াসি প্রণয়ভুখা শাশ্বত যে আমিই তৃপ্তিহারা,
ঘরবাসীদের প্রাণ যে কাঁদে পরবাসীদের পথের ব্যথা স্মরি
তাইতো তারা এই উপোসির ওষ্ঠে ধরে ক্ষীরের থালা,
শান্তিবারিধারা।
ঘরকে পথের বহ্নিঘাতে
দগ্ধ করি আমার সাথে,
লক্ষ্মী ঘরের পলায় উড়ে এই সে শনির দৃষ্টিপাতে গো!
জানি আমি লক্ষ্মীছাড়া
বারণ আমার উঠান মাড়া,
আমি   তবু কেন সজল চোখে ঘরের পানে চাই?
নিজেই কি তা জানি আমি ভাই?
হায়   পরকে কেন আপন করে বেদন পাওয়া, পথেই যাহার
কাটবে জীবন বিজন?
আর   কেউ হবে না আপন যখন, সব হারিয়ে চলতে হবে
পথটি আমার নিজন।
আমি   নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।

কলিকাতা
ভাদ্র ১৩২৮

সকল অধ্যায়

১. আশা
২. সন্ধ্যাতারা
৩. শায়ক-বেঁধা পাখী
৪. ব্যথা-নিশীথ
৫. বিদায়-বেলায়
৬. বিজয়িনী
৭. কমল-কাঁটা
৮. পলাতকা
৯. দূরের বন্ধু
১০. চৈতী হাওয়া
১১. চিরশিশু
১২. আপন-পিয়াসী
১৩. স্তব্ধ বাদল
১৪. মরমি
১৫. অকরুণ পিয়া
১৬. দহনমালা
১৭. পাপড়ি-খোলা
১৮. চির-চেনা
১৯. চাঁদমুকুর
২০. পাহাড়ি গান
২১. অমর-কানন
২২. পুবের হাওয়া
২৩. আলতা-স্মৃতি
২৪. রৌদ্রদগ্ধের গান
২৫. মানস-বধূ
২৬. নীল পরি
২৭. অনাদৃতা
২৮. বিবাগিনী
২৯. প্রতিবেশিনী
৩০. দুপুর-অভিসার
৩১. ছলকুমারী
৩২. বিধুরা পথিকপ্রিয়া
৩৩. মনের মানুষ
৩৪. প্রিয়ার রূপ
৩৫. বাদল-দিনে
৩৬. কার বাঁশি বাজিল?
৩৭. বেদনা-মণি
৩৮. চিরন্তনী প্রিয়া
৩৯. স্নেহ-ভীতু
৪০. হারামণি
৪১. মুক্তি-বার
৪২. বেদনা-অভিমান
৪৩. নিশীথ-প্রীতম
৪৪. অ-বেলায়
৪৫. হার-মানা-হার
৪৬. লক্ষীছাড়া
৪৭. শেষের গান
৪৮. নিরুদ্দেশের যাত্রী
৪৯. পরশ পূজা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন