হেটি গ্রিন : তার আয় ছিল ঘণ্টায় তিন শ ডলার অথচ

ডেল কার্নেগি

হেটি গ্রিন : তার আয় ছিল ঘণ্টায় তিন শ ডলার অথচ

একসময় হেটি গ্রিন ছিলেন আমেরিকার শ্রেষ্ঠ ধনী মহিলা। তার সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় সাড়ে ছয় কোটি ডলার। এমন কী তার চেয়েও বেশি। এক বিশাল ধনসম্পত্তির মালিক হয়েও অত্যন্ত সস্তা জীবনযাপন করতেন, যে কোনো ঝাড়ুদারনি তা চেয়ে ভালো পোশাক পরে, ভালো খাবার খায় এবং ভালো বিছানায় ঘুমোয়। মোটেই বিলাসিতা করতেন না তিনি।

হেটি গ্রিনের আয় ছিল প্রতিমিনিটে পাঁচ ডলার বা ঘণ্টায় তিনশ ডলার অথচ প্রতিদিন সকালবেলা তিনি দুসেন্ট দিয়ে যে কাগজ কিনতেন তা পড়ে আবার বিক্রি করে দিতেন। দেশের প্রায় প্রত্যেকটা রেলপথের বন্ড তার ছিল, দুটো রেলপথ সবসুদ্ধ কিনে ফেলেন অথচ রেলগাড়িতে ভ্রমণের সময় বিলাস কামরায় না বসে সাধারণ কামরাতেই বসে ভ্রমণ করতেন।

অত্যন্ত নিম্নমানের এবং কমদামি খাবার খেতেন হেটি গ্রিন; কিন্তু তিনি ছিলেন সুন্দরী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। আটাত্তর বছর বয়সে তার কমনীয় স্বাস্থ্যের গোপন রহস্য সম্পর্কে এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করায় তিনি বলছেন, সকালবেলা একটুকরো কেবল মাংস, আলু ভাজি, এক পেয়ালা চা ও দুধ দিয়ে নাস্তা করতেন; মাংসের টুকরো ও দুধের জীবাণু মারার জন্য সারা দিন ধরে সেঁকা পেঁয়াজ চিবোতেন।

১৮৯৩ সালের এক রোদঝলসানো গরম দিনে হেটি গ্রিন বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এক গুদামঘরের চিলেকোঠায় উঠলেন। টিনের চালের নিচে অত্যন্ত গরমের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রঙিন কাপড়ের টুকরো থেকে সাদা টুকরোগুলো আলাদা করতেন। এ কাজের জন্য খরিদ্দার প্রতি পাউন্ডের জন্য তাকে এক সেন্ট মূল্য বেশি দিত।

তার জমানো টাকার হিসেব দেখাশোনা করার জন্য অধিক সময় তাকে ওয়েল স্ট্রিটে কাটাতে হত। তিনি জানতেন, যদি নিউইয়র্ক সিটিতে একটা রুম ভাড়া নেন অথবা যদি একখণ্ড আসবাবপত্রেরও মালিক হন তা হলে ট্যাক্স কালেক্টর তার কাছ থেকে ছোঁ মেরে একটা মোটা অঙ্কের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। তাই ট্যাক্স কালেক্টরের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য একটা সস্তা বাসা থেকে আরেকটা সস্তা বাসায় সরে যেতেন। তিনি ছদ্মনামে বাসা ভাড়া করতেন, ছেঁড়া কাপড় পরে থাকতেন। সাথে এত সামান্য জিনিসপত্র রাখতেন। যে তার সন্দেহে প্রধান বাড়িওয়ালারা তার রাত্রিযাপনের ভাড়াটা অগ্রিম আদায় করে ছাড়ত। তার এক বান্ধবী তাকে সৌন্দর্যচর্চার প্রসাধনীর জন্য তিনশ ডলার ব্যয় করতে রাজি করাল। তাকে গ্রারান্টি দেয়া হল যে এই প্রসাধনী ব্যবহার করলে তার বয়স কম দেখাবে।

হেটি গ্রিন নিউইয়র্কের কেমিক্যাল ন্যাশনাল ব্যাংকে কয়েক মিলিয়ন ডলার জমা রেখেছিলেন। চেক জালিয়াতের ভয়ে নিত্যন্ত বাধ্য না হলে তিনি চেকে সই করতেন না। তার ট্রাঙ্ক ও স্যুটকেসগুলো ব্যাংকে জমা রাখতেন। তিনি একটি এক ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে ব্যাংকে আসতেন, এর চাকাগুলো খুলে ব্যাংকের দোতালায় উঠিয়ে রাখতেন।

হেটি গ্রিন অনেক দিক দিয়ে ছিলেন দয়ালু হৃদয়ের। ন্যাশনাল ব্যাংকে এক দারোয়ান ছিলেন, একবার ব্যাংক থেকে তাকে বরখাস্ত করায় হেটি গ্রিন তার জন্যে এত দুঃখ বোধ করেছিলেন যে, তিনি নিজে একসপ্তাহ সময় ব্যয় ও খোঁজাখুঁজি করে তাকে আরেকটা চাকরি যোগাড় করে দিলেন।

হেটি গ্রীন একাশি বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। তাঁর শেষ পীড়ায় যে সেবিকারা সেবা করতে এসেছিল তাদের সাদা ইউনিফর্ম পরতে দেয়া হয় নি। তারা রাস্তায় বেড়ানোর পোশাক পরত যাতে হেটি ভাবেন যে সাধারণ ভৃত্য, কারণ যদি হেটি সন্দেহ করতেন যে তারা ব্যয়বহুল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবিকা তাহলে তিনি শান্তিতে মরতে পারতেন না।

সকল অধ্যায়

১. জন ডি. রকফেলার : যার ধন সম্পদ এখনো বেড়ে চলেছে
২. এন্ড্রু কার্নেগি : অন্যদেরকেও ধনী করে তুলতেন
৩. আর জোলসন : দারিদ্র্যকে যিনি জয় করেছিলেন
৪. উইলিয়াম রেভলফ্‌ হার্স্ট : যার মাসিক আয় দশ লক্ষ ডলার
৫. ফ্লোরেঞ্জ জিগফেল্ড : ইতিহাসের যে-কোনো ব্যক্তির চেয়ে তিনি অধিক সংখ্যক
৬. লিও টলস্টয় : জীবনবাদী লেখক
৭. সমারসেট মম্ : একজন বিশ্বখ্যাত লেখকের নেপথ্য কথন
৮. লর্ড বায়রন : মানুষের মাথার খুলিতে করে মদ পান করতেন
৯. মার্টিন জনসন : ভ্রমণের জন্যে রাঁধুনি হয়েছিলেন
১০. লায়ানল ব্যারিমোর : নিজের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে চিন্তা করার অবকাশ পান নি
১১. হেলেন কিলার : যাকে নেপোলিয়নের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছিল
১২. হাওয়ার্ড থার্সটন : একজন বিখ্যাত জাদুকর
১৩. এনরিকো কারুজো : মূল্যবান কণ্ঠের অধিকারী ছিলেন
১৪. ওয়েন্ডেল পরিবার : নিউইয়র্কের সবচেয়ে অদ্ভুত ধনী পরিবার
১৫. হেটি গ্রিন : তার আয় ছিল ঘণ্টায় তিন শ ডলার অথচ
১৬. ইভানজিলিন বুদ : একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুখী মহিলা
১৭. লরেন্স টিবেট : প্রত্যাখান তাকে অনেকদূর নিয়ে গেছে
১৮. ক্লেরান্স ডেবরা : একজন শ্রেষ্ঠ আইনজীবী
১৯. চার্লস ডিকেন্স : বিস্ময়কর ও জনপ্রিয় লেখক
২০. ডায়মন্ড জিম ব্রেডি : একজনের জন্য এক মিলিয়ন ডলার দিতে চেয়েছিলেন
২১. উইলিয়াম শেক্সপিয়ার : ইংরেজি সাহিত্যের কিংবদন্তি
২২. সিনক্লেয়ার লুইস : তিনি নোবেল বিজয়ী হলেন
২৩. ক্লাইভ বিটি : সার্কাসশিল্পী
২৪. মেয়ো ভ্রাতৃযুগল : আমেরিকার সবচেয়ে বিখ্যাত চিকিৎসক
২৫. শিক সেল : একটি বইয়ের জনপ্রিয় লেখক
২৬. বেজিল জেহারফ : লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাধিপ্রস্তর হল তাঁর স্মৃতিসৌধ
২৭. থিয়োডর রুজভেল্ট : বুকে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরেও বক্তৃতা থামান নি
২৮. বিলি সানডে : একজন জনপ্রিয় ধর্মপ্রচারক
২৯. জ্যাক লন্ডন : যাঁর আয় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের আয়ের দ্বিগুণ
৩০. উড্রো উইলসন : বিশ্বশান্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন
৩১. জে. পি. মর্গান : একজন বিশিষ্ট ধনকুবের, যিনি ছিলেন অখ্যাত ও রহস্যময়
৩২. ক্যাপটেন রবার্ট ফ্যালকন স্কট : দক্ষিণ মেরুতে ভ্রমণকারী দ্বিতীয় ব্যক্তি
৩৩. ফ্রান্সিস ইয়েটস ব্রাউন : যিনি তার জীবনে অনেকগুলো জীবনযাপন করেছেন

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন