মুখ্যমন্ত্রী তলিয়ে দেখবেন

গৌরকিশোর ঘোষ (রূপদর্শী)

মুখ্যমন্ত্রী তলিয়ে দেখবেন

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিদ্ধার্থশংকর রায় কংগ্রেসী নেতা এবং এম এল এ-দের কে কে লেভি দিয়েছেন আর কে কে লেভি দেননি তা তলিয়ে দেখবার জন্য সুন্দর একটা ডুবুরির পোষাক তৈরি করিয়েছেন। গত শনিবার সাংবাদিকদের সেই ডুবুরির পোষাকটা দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ডুবুরি সংস্থার মুখ্য পরামর্শদাতা মি: আনডারওয়াটার ডাইভারকে দিয়ে এই ডুবুরির পোষাকটির ডিজাইন করিয়ে নিয়েছি। এর গুণাগুণ তিনিই আপনাদের বলবেন।’

অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মি: আনডারওয়াটার ডাইভারের পরিচয় করিয়ে দেন। মিং ডাইভার জানান, তিনি সেইদিনই মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ওই ডুবুরির পোষাকটি ডেলিভারি দিতে কলকাতায় এসে পৌঁছান।

অন্যান্য ডুবুরির পোষাকের চাইতে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নির্মিত এই পোষাকটির আলাদা বৈশিষ্ট্য কী আছে, সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এই প্রশ্ন করা হলে তার উত্তরে মি: ডাইভার বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যাতে গভীর এবং অগভীর জলে ডুব দিয়ে একই রকম স্বাচ্ছন্দ্য সহকারে ঘোরাফেরা করতে পারেন, সেইদিকে নজর রেখেই এই ডুবুরির পোষাকটির ডিজাইনটা তৈরি করেছি। এই মডেলটি ডুবুরিদের টেকনিক্যাল ভাষায় যাকে বলা হয়, ডীপ ডিসেনটস্ উইথ ফ্রি ডাইভিং ইকুইপমেন্ট, সেই তারই রকমফের আর কী! এর সঙ্গে ডিমিস্ট্রি রেবিকফের স্কিন ডাইভিং পদ্ধতির সুবিধাগুলোও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।’

মুখ্যমন্ত্রী হাসতে হাসতে বললেন, ‘এটা আমার নিজস্ব ফরমায়েস। ইজন ইট?’

মি: ডাইভার, ‘ও সিওর। অরডারটা পেয়ে আমরা বরং একটু অবাকই হয়েছিলাম।’ মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘নাউ লেট মি এক্‌প্লেন। আমাদের এখানে পি ডি এ আছে। আই মিন্‌, সি পি আই আমাদের এলায়েনসের পার্টনার। সেইজন্যই ভাবলাম আমার এই ডুবুরির পোষাকটার ডিজাইনে রাশিয়ান টাচ যদি একটু দিয়ে রাখি তাহলে আমাদের জুনিয়ার পার্টনারের আর বলার কিছু থাকে না। উই অলওয়েজ ট্রাই টু কিপ্‌ দেম ইন গুড হিউমার।’

মি: ডাইভার, ‘নাউ, আই মা প্রোসিড। প্রত্যেকটা ডুবুরির পোষাকে একটা করে হেডগিয়ার থাকে। ডুব দিয়ে চলতে গেলে ডুবুরি যাতে ঠিকমত নিঃশ্বাস নিতে পারে হেড গিয়ারের সঙ্গে তার ব্যবস্থাও রাখতে হয়। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর যাতে নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা না হয় তার জন্য যথাসম্ভব হালকা এবং অত্যন্ত টেকসই একটা মাস্ক তৈরি করে দিয়েছি। ওই মুখোস পরে লুকোনো কোনও জিনিষ দেখতে ওঁর যাতে সুবিধে হয় এবং ওঁর দৃষ্টিভঙ্গী যাতে কোনও কিছুর সংস্পর্শে এসে ঘোলাটে না হয়ে পড়তে পারে, তার জন্য বিশেষ ধরনের লেন্স ওই মুখোসে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এই মুখোসটি সম্পূর্ণ রাশিয়ান মডেলে তৈরি।’

জনৈক রিপোরটার ‘মুখ্যমন্ত্রীর ওই মুখোসটা সর্বদাই তাহলে একটা প্রোগ্রেসিভ পাবলিক ইমেজ থ্রো করতে পারবে। কি বলেন?’

মি: ডাইভার : ‘আর ওই মুখোসের ভিতর যাতে বাতাসের অভাব না হয় সেই কারণে পিঠের উপর বেল্ট দিয়ে ঘনীভূত বাতাসের দুটো হালকা অথচ টেঁকসই আমেরিকায় তৈরি বোতল ফিট করে দেবার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আর যে পাইপ দিয়ে বাতাস ভর্তি বোতল দুটোর সঙ্গে মুখোসের সংযোগ ঘটানো হয়েছে সেটা সম্পূর্ণই ভারতে তৈরি।’

মি: ডাইভার আরও জানান, এই ফ্রি ডাইভিং পদ্ধতিতে গভীর জলে ডুব দিয়ে কে লেভি দিয়েছে আর কে লেভি দেয়নি তা নির্ণয় করতে গেলে তাঁর উপর উচ্চ চাপ এবং নিম্ন চাপ কী পরিমাণ পড়বে তা নিরূপণ করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে বাতাসের স্বাভাবিক অনুপাত (২০.৯% অক্সিজেন, ৭৮.১% নাইট্রোজেন এবং ১% আরগন ও অন্যান্য গ্যাস) ২৬০ থেকে ৩২০ ফুট নিচে গেলেই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। সেই কথা স্মরণ রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর গতিবিধি যাতে ২৮০ পর্যন্ত স্বচ্ছন্দ থাকে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘হোয়াই দুশ আশী? ২৮০ তো শুধু আমাদের আই মিন কংগ্রেসের। পি ডি এ ধরলে ওটা ৩৩৫-এ পৌঁছবে।’

মি: ডাইভার, ‘স্যর, ওর জন্য অসুবিধে হবে না। ওটা মাইনার অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপার।’

রিপোর্টার, ‘হোয়াট অ্যাবাউট প্রেসার। চাপ বেশী পড়লে মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়কে আবার নতি স্বীকার করতে হবে না তো।’

‘কে নতি স্বীকার করবে? আমি!’ মুখ্যমন্ত্রী উত্তেজিতভাবে বলে উঠলেন, ‘কভি নেহি। লিখে নাও, লেভি যাঁরা দেবেন না তাঁদের বিরুদ্ধে মিসা প্রয়োগ করা হবে। এ ব্যাপারে কোনও এম এল এ, কি কোনও কংগ্রেস নেতা অভিযুক্ত হলেও রেহাই পাবেন না।’

মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি বিভিন্ন স্তরের কংগ্রেস নেতা ও এম এল এ-দের কাছ থেকে লেভি সম্পর্কে হিসেব চেয়ে পাঠিয়েছেন। ইতিমধ্যে অনেকের কাছ থেকে হিসেব পাওয়া গিয়েছে। আগামী সপ্তাহে বাকি উত্তর আসবে বলে তিনি আশা করছেন।

‘হিসেবটি পেলেই,’ মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘আমি বিষয়টি তলিয়ে দেখব। প্রয়োজন হলে অতল তলে ডুব দিয়ে দেখব। সেইজন্যই এই ডুবুরির পোষাকটা করিয়েছি। আমি যে সিরিয়াস, এই ডুবুরির পোষাকটাই তার প্রমাণ।’

রিপোরটার, ‘আপনাকে কত দূর তলাতে হবে বলে আপনি আন্দাজ করছেন?’

মুখ্যমন্ত্রী, ‘এখনই বলা মুশকিল। কিছু এম এল এ আছে অল্প জলে ফরফর করে। তাদের জন্য আমি ভাবি না। কিন্তু কিছু গভীর জলের মাছও তো আছে। তারা যে কত গভীরে ঘোরাফেরা করছে, এতদিন ডাঙায় বসেছিলাম তাই তেমন বুঝতে পারিনি। এখন, ডুবুরির পোষাক করিয়েছি, আর ভাবিনে।’

রিপোরটার, ‘স্যার, আপনি কি শুধু কংগ্রেসীদের জলই ঘোলা করবেন?’

মুখ্যমন্ত্রী, ভুলে যেয়ো না, আমি মুখ্যমন্ত্রীই শুধু নই, আমি পি ডি এরও নেতা। ডুব দিয়ে যাকে পার তাকেই ধরব। ডুবুরির পোষাক যখন এসেছে, তখন আমি নিশ্চিত যে আমার অভিযান এবার সফল হবে। এবার আমরা ধান চাল সংগ্রহের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুবোই।’

১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪

সকল অধ্যায়

১. অতিথি-যোজনামন্ত্রী, স্বাগতম
২. খাদ্যমন্ত্রীর নব আবিষ্কার
৩. চুয়াত্তরের সুসমাচার
৪. পোড়া বাড়ির রহস্য
৫. অত্যাশ্চর্য ভাসমান রাজপথ
৬. রেডার যন্ত্রের ঝড়ের সংকেত
৭. রেল-ডাকাতি নিরোধের অব্যর্থ উপায়
৮. আপেক্ষিক মোরচাবাদ : নয়া বিজ্ঞান
৯. মুখ্যমন্ত্রী তলিয়ে দেখবেন
১০. খাদ্যমন্ত্রীর দুঃসাহসিক অভিযান
১১. শিশুবোধক জৌন শিক্ষা, সহজ পাঠ
১২. পশ্চিমবঙ্গে বেড়াতে আসুন
১৩. গণমৃত্যু উদ্যাপনের দুর্লভ সুযোগ
১৪. কলকাতার নৌবহ খাল প্রসঙ্গ
১৫. পঞ্চম যোজনা এখন ছুটিতে আছেন
১৬. বহিরাগত বিতাড়ন আইন
১৭. লণ্ঠন ও হাত-পাখা মন্ত্রীর আশা
১৮. কমরেড দামোদরের মর্মবেদনা
১৯. রেলগাড়ি চালু রাখার মিশ্র পদ্ধতি
২০. ভারত মন্ত্রশক্তিতে শক্তিমান হল
২১. অসার খলু সংসারে
২২. মন্ত্রিগণের নিদারুণ অগ্নিপরীক্ষা
২৩. পি ডি এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন
২৪. কাদাংচু কমিশনের নেপথ্য-চিত্র
২৫. লুমবিনির ওঁরা কী বলেছিলেন?
২৬. প্রোফেসার পাংচু’স্ ওয়ানডার ইনক্
২৭. বি আর মোহান্ত সংরক্ষণের প্রস্তাব
২৮. মিলনের পালা : নিকসন-মাও পদ্ধতি
২৯. কীভাবে আমরা লাভ করতে পারি
৩০. প্রেসিডেনট নিকসনের মারাত্মক ভুল
৩১. নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নাও প্রকল্প
৩২. মুক্ত কারার গুপ্ত জ্ঞান
৩৩. ফুটপাথের এই হানাদাররা কারা?

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন