১৭. ইদরীস (আ)

ইদরীস (আ)

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

অর্থাৎ-স্মরণ করা, এ কিতাবে উল্লেখিত ইদরীস-এর কথা। সে ছিল সত্যনিষ্ঠ, নবী এবং আমি তাকে উন্নীত করেছিলাম উচ্চ মর্যাদায়। (১৯ : ৫৬)

এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ইদরীস (আ)-এর প্রশংসা করেছেন এবং তার নবী ও সিদীক হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনিই হলেন, উপরে বর্ণিত খানুখ। বংশ বিশেষজ্ঞদের অনেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর বংশ লতিকার অন্যতম স্তম্ভ। আদম (আ) ও শীছ (আ)-এর পরে তিনিই সর্বপ্রথম আদম সন্তান যাকে নবুওত দান করা হয়েছিল। ইব্‌ন ইসহাক (র) বলেন, ইনিই সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লেখার সূচনা করেন। তিনি আদম (আ)-এর জীবন কালের তিনশত আশি বছর পেয়েছিলেন। কেউ কেউ বলেন, মু’আবিয়া ইব্‌ন হাকাম সুলামী-এর হাদীসে এ ইদরীস (আ)-এর প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, একজন নবী ছিলেন যিনি এ বিদ্যার সাহায্যে রেখা টানতেন। সুতরাং যার রেখা চিহ্ন তার রেখা চিহ্নের অনুরূপ হবে তাঁরটা সঠিক। বেশকিছু তাফসীরকার মনে করেন যে, ইদরীস (আ)-ই প্রথম ব্যক্তি যিনি এ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তারা তাঁকে দুর্ধর্ষ সিংহকুলের জ্যোতিষী বলে অভিহিত করেন এবং তাদের বক্তব্যে অনেক অসত্য তথ্য তার প্রতি আরোপ করা হয়েছে। যেমনটি অন্য অনেক নবী-রসূল, দার্শনিক, পণ্ডিতবর্গ ও ওলীর প্রতি আরোপ করা হয়েছিল। ‘

وی فشنگاه مکان) علیا : (۹۹۹عSIIgl (আর আমি তাকে সুউচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম।) (১৯ : ৫৭) প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে মি’রাজ সংক্রান্ত হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর চতুর্থ আসমানে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। ইব্‌ন জারীর (র) হিলাল ইব্‌ন য়াসাফ (র) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, ইব্‌ন আব্বাস (রা) আমার উপস্থিতিতে ক’ব (রা)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, ইদরীস (আ) সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার উক্তি …|4 (%LK% £L»4_%%% -এর অর্থ কী? উত্তরে কা’ব (রা) বলেছিলেন, আল্লাহ তা’আলা ইদরীস (আ)-এর কাছে ওহী প্রেরণ করেন যে, প্রতিদিন আমি আদম৷ সন্তানদের সমস্ত আমলের সমপরিমাণ প্রতিদান দেবো। সম্ভবত তার সমকালীন মানব সন্তানদেরকেই বুঝানো হয়েছে। এতে তিনি তাঁর আমল আরো বৃদ্ধি করতে আগ্ৰহান্বিত হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর এক ফেরেশতা বন্ধু তাঁর নিকট আগমন করলে তিনি তাকে বললেন, আল্লাহ তা’আলা আমার প্রতি এরূপ এরূপ ওহী পাঠিয়েছেন। আপনি মালাকুল মাউত-এর সঙ্গে কথা বলুন, যাতে আমি আরো বেশি আমল করতে পারি। ফলে সেই ফেরেশতা তাকে তার দু’ডানার মধ্যে বহন করে আকাশে নিয়ে যান। তিনি চতুর্থ আসমানে পৌছলে তাঁর সঙ্গে মালাকুল মউতের সাক্ষাত ঘটে। ফেরেশতা তার সঙ্গে ইদরীস (আ)-এর বক্তব্য সম্পর্কে আলাপ করেন। মালাকুল মউত বললেন, ইদরীস (আ) কোথায়? জবাবে তিনি বললেন, : এই তো তিনি

আমার পিঠের উপর। মালাকুল মউত বললেন, আশ্চর্য! চতুর্থ আকাশে ইদরীস (আ)-এর রূহ কবয করার আদেশ দিয়ে আমাকে প্রেরণ করা হলে আমি ভাবতে লাগলাম যে, কিভাবে আমি চতুর্থ আকাশে তাঁর রূহ কবয করব, অথচ তিনি পৃথিবীতে রয়েছেন। যা হোক, মালাকুল মাউত সেখানেই তার রূহ কবয করেন।

আল্লাহ তা’আলার কালাম (%J& ((<% &UA: 45%-এর অর্থ এটাই। ইব্‌ন আবু হাতিম (র) এ আয়াতের তাফসীরে এ তথ্যটি বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, তখন ইদরীস (আ) সে ফেরেশতাকে বলেছিলেন যে, আপনি মালাকুল মাউতকে একটু জিজ্ঞাসা করুন, আমার আয়ু আর কতটুকু বাকি আছে? ফেরেশতা তাকে তা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি না দেখে বলতে পারব না। তারপর দেখে তিনি বললেন, তুমি আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি, যার আয়ুর এক পলক ব্যতীত আর কোন সময় অবশিষ্ট নেই। তারপর ঐ ফেরেশতা তার ডানার নীচের দিকে ইদরীস (আ)-এর প্রতি দৃষ্টিপাত করে দেখেন যে, তাঁর মৃত্যু হয়ে গেছে অথচ তিনি তা টেরই পাননি। এ তথ্য ইসরাঈলী বৰ্ণনা থেকে গৃহীত হয়েছে। এর কিছু কিছু অংশ মুনকার পর্যায়ের। (…… (ALK% £L%: 45% -এর ব্যাখ্যায় ইব্‌ন আবু নাজীহ মুজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন যে, ইদরীস (আ)-কে তুলে নেয়া হয়েছে; তার মৃত্যু হয়নি, যেমন তুলে নেয়া হয়েছে। হযরত ঈসা (আ)-কে। তার এ কথার অর্থ যদি এই হয় যে, তিনি এখন পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেননি, তা হলে এতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আর যদি তার অর্থ এই হয় যে, তাঁকে জীবিতাবস্থায় তুলে নেয়া হয়েছে, তারপর সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়–তাহলে ক’ব আহবারের পূর্ব বর্ণিত অভিমতের সঙ্গে এর কোন বিরোধ নেই। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

আওফী বলেন, : (44 14644 412 45%-এর ব্যাখ্যায় ইব্‌ন আব্বাস (রা) বলেন, ইদরীস (আ)-কে ষষ্ঠ আকাশে তুলে নেয়া হলে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। যাহহাক (র)-এর অভিমতও তাই। ইদরীস (আ)-এর চতুর্থ আকাশে থাকা সম্পর্কিত ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র) বর্ণিত হাদীসটিই বিশুদ্ধতর। মুজাহিদ (র) প্ৰমুখের অভিমতও তাই। হাসান বসরী (র) বলেন, [‘*14 (ALK_A & %: 45% অর্থ তাকে আমি জান্নাতে তুলে নিয়েছি। অনেকের মতে, ইদরীস (আ)-কে তার পিতা য়ারদ ইব্‌ন মাহলাইল-এর জীবদ্দশাতেই তুলে নেয়া হয়। আল্লাহই সর্বজ্ঞ। কারো কারো মতে, ইদরীস (আ) নূহ (আ)-এর পূর্বসূরি নন। বরং তিনি বনী ইসরাঈলের আমলের লোক।

ইমাম বুখারী (র) বলেন, ইব্‌ন মাসউদ ও ইব্‌ন আব্বাস (রা)-এর বরাতে বলা হয়ে থাকে যে, ইলিয়াস (আ) ও ইদরীস (আঃ) অভিন্ন ব্যক্তি। মি’রাজ সম্পর্কে আনাস (রা) থেকে বৰ্ণিত যুহরীর হাদীসের বক্তব্য দ্বারা তারা এর প্রমাণ পেশ করেন যে, উক্ত হাদীসে আছে, নবী করীম (সাঃ) যখন ইদরীস (আ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, তখন তিনি বলেছিলেন, পুণ্যবান ভাই ও পুণবান নবীকে খোশ আমদেদ। আদম (আ) ও ইবরাহীম (আ)-এর ন্যায়। এ কথা বলেননি যে, পুণ্যবান নবী ও পুণ্যবান পুত্ৰকে খোশ আমদেদ। তারা বলেন, ইদরীস (আ)। যদি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর বংশের উধ্বতন পুরুষের অন্তর্ভুক্ত হতেন, তাহলে আদম (আ) ও ইবরাহীম (আ) যা বলেছিলেন, তিনিও তাই বলতেন। কিন্তু এতে তাদের দাবি সপ্রমাণিত হয় না। তাছাড়া বর্ণনাকারী হাদীসের বক্তব্য সুষ্ঠুভাবে মুখস্থ রাখতে না পারার সম্ভাবনাও রয়েছে। অথবা বিনয় স্বরূপ তিনি পিতৃত্বের পরিচয় না দিয়ে এরূপ বলেছেন, আদি পিতা আদম (আ) এবং আল্লাহর বন্ধু ও মুহাম্মদ (সা) ব্যতীত সর্বশ্রেষ্ঠ মহান নবী ইবরাহীম (আ)-এর মত নিজের পিতৃত্বের উল্লেখ করেননি।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাজনৈতিক অবস্থা
২. ০২. অর্থনৈতিক অবস্থা
৩. ০৩. শিক্ষা ব্যবস্থা
৪. ০৪. ইব্‌ন কাসীর (র)-এর জীবনী
৫. ০৫. সৃষ্টি জগতের সূচনা
৬. ০৬. আরশ ও কুরসী সৃষ্টির বিবরণ
৭. ০৭. সাত যমীন প্রসঙ্গ
৮. ০৮. সাগর ও নদ-নদী
৯. ০৯. পরিচ্ছেদ
১০. ১০. ফেরেশতা সৃষ্টি ও তাঁদের গুণাবলীর আলোচনা
১১. ১১. পরিচ্ছেদ
১২. ১২. জিন সৃষ্টি ও শয়তানের কাহিনী
১৩. ১৩. আদম (আ)-এর সৃষ্টি
১৪. ১৪. আদম (আ) ও মূসা (আঃ)-এর বাদানুবাদ
১৫. ১৫. হাদীসে আদম (আ)-এর সৃষ্টি প্রসঙ্গ
১৬. ১৬. কাবীল ও হাবীলের কাহিনী
১৭. ১৭. ইদরীস (আ)
১৮. ১৮. নূহ (আ)-এর কাহিনী
১৯. ১৯. হযরত হূদ (আ.)-এর কাহিনী
২০. ২০. হযরত সালিহ (আ)-এর বর্ণনা
২১. ২১. হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা
২২. ২২. ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা
২৩. ২৩. ইসহাক (আ)-এর জন্ম
২৪. ২৪. বায়তুল আতীক বা কাবাগৃহ নিৰ্মাণ
২৫. ২৫. হযরত ইবরাহীম খলীল (আ)-এর প্রশংসায় আল্লাহ ও তার রাসূল (সা)
২৬. ২৬. কওমি শু’আয়ব বা মাদিয়ানবাসীর ঘটনা
২৭. ২৭. হযরত ইসমাঈল (আ)
২৮. ২৮. ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম (আ)
২৯. ২৯. হযরত ইউসুফ (আ) ঘটনা
৩০. ৩০. হযরত আইয়ুব (আ)-এর ঘটনা
৩১. ৩১. যুল-কিফ্‌ল-এর ঘটনা
৩২. ৩২. ইউনুস (আ)-এর বর্ণনা
৩৩. ৩৩. মূসা কালীমুল্লাহ (আ)-এর বিবরণ
৩৪. ৩৪. পরিচ্ছেদ
৩৫. ৩৫. ফিরআউন ও তার বাহিনী ধ্বংসের বিবরণ
৩৬. ৩৬. ফিরআউনের ধ্বংসোত্তর যুগে বনী ইসরাঈলের অবস্থা
৩৭. ৩৭. মূসা (আ) ও খিযির (আ)-এর ঘটনা
৩৮. ৩৮. মূসা (আ)-এর সাথে কারূনের ঘটনা
৩৯. ৩৯. মূসা (আ)-এর ফযীলত স্বভাব গুণাবলী ও ওফাত
৪০. ৪০. খিযির (আ) ও ইলিয়াস (আ)-এর ঘটনা
৪১. ৪১. ইলিয়াস (আ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন