০২. অর্থনৈতিক অবস্থা

অর্থনৈতিক অবস্থা

দ্রব্যমূল্য, আমদানী-রপ্তানী ও রাষ্ট্রীয় কর

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম অস্থিরতা চলছিল। বহির্বাণিজ্য পাশ্চাত্যবাসীদের হাতে চলে যায়। কারণ, তখন ইউরোপীয়রা সিরিয়ার সাথে যুদ্ধ করে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল নিজেদের করায়ত্ত করে নেয়। দুই যুগের অধিককাল ধরে তারা এটি নিজেদের করতলগত রাখতে সমর্থ হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিয়মিতভাবে নদী খনন না করা এবং পানি সেচ ও ভূমি উন্নয়নের ব্যবস্থা না করার কারণে কৃষিপণ্যের ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। দুর্ভিক্ষ, মহামারী ও বিশৃংখলার কারণে গ্রাম ও জনপদগুলো বিরান হয়ে যাচ্ছিল। সাথে সাথে যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে এবং আমির-উমারাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্যে অর্থ সঞ্চায়ের উদ্দেশ্যে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানী বৃদ্ধি করতে হয়েছিল। কিন্তু সে তুলনায় আমদানী ছিল কম।

বিপ্লবাত্তর যুগে পালিয়ে যাওয়া আমীর-উমারা, বরখাস্তকৃত নায়েবরা এবং সচিব ও আমলারা ফিরে আসে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা জনসাধারণ থেকে সম্পদ দাবি করে।(২৮) সুলতানের নায়েবগণ কোন কোন ক্ষেত্রে গত তিন বছরের বকেয়া কর কিংবা ৪ মাসের খাজনা অগ্রিম দাবি করে বসে।(২৯)

রাজনৈতিক অস্থিরতা, ব্যবসায়-বাণিজ্যের মন্দাভাব এবং কৃষিপণ্যের উৎপাদনহীনতা দেশকে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির দিকে ঠেলে দেয়। তখন একজোড়া ভেড়ার বাচ্চা বিক্রি হত ৫০০ দিরহামে ।(৩০) একটি গারারার (এক বস্তা খাদ্যবস্তুর) দাম পৌঁছেছিল ২২০ দিরহামে। অনেক সময় রুটির অভাব দেখা দিত। ফলে কাঠের গুড়ি মিশ্ৰিত ভেজাল যবের রুটিও বিক্রি হতো। এক রতল* পরিমাণ যায়তুনের তেল বিক্রি হত। ৪.৫০ দিরহামে। সাবান ও চাউলের মূল্যও অনুরূপ বৃদ্ধি পেয়েছিল। কোন কিছুই জনগণের ক্রয়-ক্ষমতার আওতার মধ্যে ছিল না। তবে গোশত বিক্রি হত। ২.২৫ দিরহামে। এক সেরা মিহি ময়দা বিক্রি হত ৪ দিরহামে। আঙ্গুর রসের দাম ছিল এক কিনতার ২০০ দিরহামের উপরে। চাউলের দাম ছিল আরো বেশি।(৩১) তবে সুলতান নাসিরের শাসনামলে কিছুটা সচ্ছলতা ও উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। ৭২৪ হিজরী সনে সুলতান নাসির খাদ্য শস্যের কর রহিত করে দেন। তখন সমগ্র খাদ্যশস্য সিরিয়ায় সংরক্ষিত ছিল। ফলে সুলতানের কল্যাণের জন্যে অনেকেই দু’আ করেন।(৩২)

সুলতানের নায়েবও তখন বহু কর রহিত করে দেন। তার মধ্যে রয়েছে গো-খাদ্যের কর, দুধ-কর এবং চামড়ার উপর করা। বাজার পরিদর্শকদের থেকে অর্ধ দিরহামের অতিরিক্ত যে করা নেয়া হত তা তিনি বাতিল করে দেন। লাশ দাফন-কাফনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের আয় থেকে যে কর নেয়া হত তাও তিনি বাতিল করে দেন। অপরিপক্ক খেজুর বিক্রয়ের বিধি-নিষেধ তিনি প্রত্যাহার করেন। ফলে জিনিসপত্র অনেকটা সস্তা হয়ে যায়। এমনকি তখন বলা হত যে, এক কিনতার** খাদ্যশস্য বিক্রি হত ১০ দিরহামে।(৩৩)

পরবর্তীতে লবণ-কর এবং প্রাসাদ-করও রহিত করলেন।(৩৪) অনুরূপভাবে ছাগল-ভেড়ার করের অর্ধেক প্রত্যাহার করে নেন, যেমন করেছিলেন স্থানীয় ও বিদেশী সুতার কারের ক্ষেত্রে। ফলে জনগণ আনন্দিত হয়।(৩৫) ঐ আমলটি রাজকীয় বিলাস-ব্যসনের জন্য চিহ্নিত হয়ে আছে অবশ্য, যদিও তখন জনগণ ক্ষুধা-তৃষ্ণায় আর্ত-চীৎকার করছিল। তখন ৭৩২ হিজরী সনে সুলতান মালিক নাসিরের পুত্ৰ আনুক মুহাম্মদের সাথে আমীর সাইফুদ্দীন বাক্তামার আস-সাকীএর কন্যার বিবাহ হয়। ঐ বিবাহে যৌতুক ছিল দশ লাখ দীনার। এই বিবাহ ভোজে বকরী, মুরগী ও ঘোড়া-গরু মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার প্রাণী যবেহ করা হয়েছিল। ১৮ হাজার কিনতার মিষ্টান্ন বিতরণ করা হয়েছিল। আলোকসজ্জায় তিন হাজার কিনতার তৈলাদি পোড়ানো হয়েছিল।(৩৬)

—————–

(২৮) ইব্‌ন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খঃ ১৪, পৃঃ ১৬৯, ১৭৭।

(২৯) প্রাগুক্ত, খঃ ১৪, পৃঃ ১৫।

(৩০) প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৭।৷

* এক রতল হচ্ছে প্ৰায় এক পাউণ্ড বা আধা কেজি।

(৩১) প্রাগুক্ত, পৃঃ ১১৭, ১৮৩, ২১৯, ২২০, ২২৩।

(৩২) ইব্‌ন কাসীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ১৪, পৃঃ ১১৫।

** কিনতার=১০০ রতল যা ১ মণের অধিক। (৩৩) প্রাগুক্ত, ১৪, পৃঃ ১৯০।

(৩৪) প্রাগুক্ত, পৃঃ ২৯৩।

(৩৫) প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩২৭।

(৩৫) প্রাগুক্ত, পৃঃ ৩২৭।

(৩৬) প্রাগুক্ত, পৃঃ ১৬৫।

সকল অধ্যায়

১. ০১. রাজনৈতিক অবস্থা
২. ০২. অর্থনৈতিক অবস্থা
৩. ০৩. শিক্ষা ব্যবস্থা
৪. ০৪. ইব্‌ন কাসীর (র)-এর জীবনী
৫. ০৫. সৃষ্টি জগতের সূচনা
৬. ০৬. আরশ ও কুরসী সৃষ্টির বিবরণ
৭. ০৭. সাত যমীন প্রসঙ্গ
৮. ০৮. সাগর ও নদ-নদী
৯. ০৯. পরিচ্ছেদ
১০. ১০. ফেরেশতা সৃষ্টি ও তাঁদের গুণাবলীর আলোচনা
১১. ১১. পরিচ্ছেদ
১২. ১২. জিন সৃষ্টি ও শয়তানের কাহিনী
১৩. ১৩. আদম (আ)-এর সৃষ্টি
১৪. ১৪. আদম (আ) ও মূসা (আঃ)-এর বাদানুবাদ
১৫. ১৫. হাদীসে আদম (আ)-এর সৃষ্টি প্রসঙ্গ
১৬. ১৬. কাবীল ও হাবীলের কাহিনী
১৭. ১৭. ইদরীস (আ)
১৮. ১৮. নূহ (আ)-এর কাহিনী
১৯. ১৯. হযরত হূদ (আ.)-এর কাহিনী
২০. ২০. হযরত সালিহ (আ)-এর বর্ণনা
২১. ২১. হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা
২২. ২২. ইসমাঈল যাবীহুল্লাহ (আ)-এর ঘটনা
২৩. ২৩. ইসহাক (আ)-এর জন্ম
২৪. ২৪. বায়তুল আতীক বা কাবাগৃহ নিৰ্মাণ
২৫. ২৫. হযরত ইবরাহীম খলীল (আ)-এর প্রশংসায় আল্লাহ ও তার রাসূল (সা)
২৬. ২৬. কওমি শু’আয়ব বা মাদিয়ানবাসীর ঘটনা
২৭. ২৭. হযরত ইসমাঈল (আ)
২৮. ২৮. ইসহাক ইব্‌ন ইবরাহীম (আ)
২৯. ২৯. হযরত ইউসুফ (আ) ঘটনা
৩০. ৩০. হযরত আইয়ুব (আ)-এর ঘটনা
৩১. ৩১. যুল-কিফ্‌ল-এর ঘটনা
৩২. ৩২. ইউনুস (আ)-এর বর্ণনা
৩৩. ৩৩. মূসা কালীমুল্লাহ (আ)-এর বিবরণ
৩৪. ৩৪. পরিচ্ছেদ
৩৫. ৩৫. ফিরআউন ও তার বাহিনী ধ্বংসের বিবরণ
৩৬. ৩৬. ফিরআউনের ধ্বংসোত্তর যুগে বনী ইসরাঈলের অবস্থা
৩৭. ৩৭. মূসা (আ) ও খিযির (আ)-এর ঘটনা
৩৮. ৩৮. মূসা (আ)-এর সাথে কারূনের ঘটনা
৩৯. ৩৯. মূসা (আ)-এর ফযীলত স্বভাব গুণাবলী ও ওফাত
৪০. ৪০. খিযির (আ) ও ইলিয়াস (আ)-এর ঘটনা
৪১. ৪১. ইলিয়াস (আ)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন