মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
“আদেঁ ফ্রাঁসোয়া ভিলিয়ার্স,” একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে মেরি আবারো বললো। তারা তাদের টেরাসের ঘরে ফিরে এসে অবিশ্বাস্য তথ্যটা হজম করার চেষ্টা করছে। “তিনি সায়ারের গ্র্যাজুয়েট, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একজন নায়ক। প্রতিরোধ সংগ্রামের কিংবদন্তী। আলজেরিয়া নিয়ে দ্য গলের সাথে বিরোধের আগে তিনি গলের সম্ভাব্য একজন উত্তরসূরি ছিলেন। জেসন, এরকম একজন লোককে কার্লোসের সাথে জড়ানো একেবারেই অবিশ্বাস্য।”
“কানেকশানটা তো আছে। বিশ্বাস করো।”
“এটা একেবারেই কঠিন। ভিলিয়ার্স ফ্রান্সের খুবই পুরনো, সপ্তদশ শতকের অভিজাত এক পরিবারের সদস্য। বর্তমানে তিনি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির একজন উল্লেখযোগ্য সদস্য। তিনি আইন মেনে চলা মিলিটারি ব্যক্তিত্ব। এটা অনেকটা ডগলাস ম্যাকআর্থারকে মাফিয়া বন্দুকবাজদের সাথে জড়ানোর মতো। এটা একেবারেই অসম্ভব।”
“তাহলে অন্য কিছু দেখা যাক। দ্য গলের সাথে তার বিরোধটা কি ছিলো?”
“আলজেরিয়া। ষাট দশকের শুরুর দিকে তিনি ওএএস-এর সাথে জড়িত ছিলেন—একজন আলজেরিয়ান কর্নেল সালানের অধীনে। তারা ইভিয়ান চুক্তির বিরুদ্ধে ছিলো যাতে আলজেরিয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়। তারা বিশ্বাস করতো আলজেরিয়া আইনত ফ্রান্সেরই।”
“আলজেরিয়ার উন্মাদ কর্নেল,” বর্ন বললো। কথাটা কোত্থেকে এলো সে জানে না।
“এটা তোমার কাছে কিছু মনে হচ্ছে?”
“হ্যা, তবে আমি জানি না সেটা কি?”
“ভাবো,” মেরি বললো। “কেন ‘উন্মাদ কর্নেল’ কথাটা তোমার মনে পড়লো? এতো দ্রুত!”
তার দিকে অসহায়ের মতো তাকালো জেসন। তারপরই কথাট তার মনে উদয় হলো। “বোমা বর্ষণ…অনুপ্রবেশ। উস্কানি দাতারা। তুমি সেগুলো স্টাডি করো; তুমি মেকানিজমটা স্টাডি করো।”
“কেন?”
“আমি জানি না।
“তোমাকে যা শেখানো হোতো সেটার উপর ভিত্তি করেই কি তুমি সিদ্ধান্ত নিতে?”
“আমারও তাই মনে হয়।”
“কি ধরণের সিদ্ধান্ত? তুমি কি সিদ্ধান্ত নিতে?”
“বিশৃঙ্খলা।”
“এটা তোমার কাছে কি অর্থ বহন করে? বিশৃঙ্খলার কথা বলছি।”
“আমি জানি না! আমি ভাবতে পারছি না!”
“ঠিক আছে…ঠিক আছে। অন্য সময়ে এটা নিয়ে আমরা ভাববো।”
“সময় তো হবে না। চলো ভিলিয়াসকে নিয়ে কথা বলি। আলজেরিয়ার পরে কি হয়েছিলো?”
“দ্য গলের সাথে তার একধরণের সমঝোতা হয়েছিলো। ভিলিয়ার্স সরাসরি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত ছিলেন না। তার মিলিটারি রেকর্ড ছিলো খুবই অসাধারণ। যে কারণে তাকে একটু ছাড় দেয়া হয়। ফ্রান্সে ফিরে আসেন তিনি—তাকে আসলে স্বাগতই জানানো হয়—একজন পরাজিত যোদ্ধা, তবে কাজটা দেশপ্রেম থেকেই করেছিলেন। আবারো তার কমান্ড ফিরে পান তিনি, রাজনীতিতে যোগ দেয়ার আগে তাকে একজন জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়।”
“তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন, তারপর?”
“এজন মুখপাত্র বলতে পারো। একজন বয়স্ক মুখপাত্র। এখনও তার শিকড় মিলিটারিতে প্রোথিত। ফ্রান্সের ক্ষয়িষ্ণু মিলিটারিতে এখনও তার প্রভাব রয়েছে।”
“হাওয়ার্ড লিল্যান্ড,” জেসন বললো। “এটাই তোমার কার্লোসের সাথে কানেকশান।”
“কিভাবে? কেন?”
“কারণ লিল্যান্ডকে হত্যা করা হয় কুয়ে দরসে অস্ত্র মওজুদ আর রপ্তনীর ব্যাপারে নাক গলানোর জন্যে ‘
“এটা তো খুবই অবিশ্বাস্য ব’লে মনে হচ্ছে। এরকম একজন একজন মানুষ…” মেরির কণ্ঠটা মিইয়ে গেলো। সে কিছু মনে করার চেষ্টা করছে। “তার ছেলে খুন হয়, সেটা ছিলো রাজনৈতিক বিষয়। আজ থেকে ছয় বছর আগে।”
“আমাকে বলো সেটা।”
“তার গাড়িটা রুই দুবাকে বিস্ফোরিত হয়। খবরটা সব পত্রিকায়ই ছাপা হয়েছিলো। সেও ছিলো রাজনীতিতে সক্রিয়, তার বাবার মতোই একজন রক্ষণশীল। সব সময় সমাজতান্ত্রিক আর কমিউনিস্টদের বিরোধীতা করতো। সে পার্লামেন্টে তরুণ সদস্য ছিলো। সরকারের ব্যয় সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের পথে একটা বাঁধা হিসেবে আর্বিভূত হয়, খুবই জনপ্রিয় ছিলো। আকর্ষণীয় আর অভিজাত এক ব্যক্তিত্ব ছিলো সে।”
“তাকে কে খুন করলো?”
“অনুমাণ করা হয় এটা কমিউনিস্ট উগ্রপন্থীদের কাজ। সে বামপন্থীদের একটি লেজিস্লেশনে বাঁধা দিয়েছিলো। তার মৃত্যুর পর সেই লেজিলেশনটা পাস হয়ে যায়। অনেকেই ভাবে এজন্যেই ভিলিয়ার্স আর্মি ছেড়ে দিয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে যোগ দেন। এটা অবশ্য খুবই বিসদৃশ্য ব’লে মনে হয়। হাজার হোক তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিলো; তুমি কোনোভাবেই ভাবতে পারো না তিনি একজন পেশাদার গুপ্তহত্যাকারীর সাথে জড়িত আছেন।”
“আরো কিছু ব্যাপার আছে। তুমি বলছো তিনি প্যারিসে ফিরে আসলে তাকে স্বাগত জানানো হয়, কারণ তার সাথে সরাসরি সন্ত্রাসের সম্পর্ক ছিলো না।”
“যদি তিনি তা ক’রে থাকেন,” মেরি বাঁধা দিয়ে বললো। “এটা ধামাচাপা দেয়া হয়েছিলো। ফরাসিরা তাদের দেশ আর বিছানার ব্যাপারে অনেক বেশি উদার। আর তিনি ছিলেন তাদের নায়ক। সেটা তুমি ভুলে যেয়ো না।”
“কিন্তু একবার যে সন্ত্রাসী সে চিরকালই সন্ত্রাসী, সেটাও ভুলে যেয়ো না।”
“আমি একমত নই। মানুষ বদলায়।”
“কিছু কিছু ব্যাপারে নয়। কোনো সন্ত্রাসী কখনই ভুলে যায় না সে কতোটা কার্যকরী। সে ওসবের মধ্যেই বেঁচে থাকে।”
“আমি এক্ষুণি নিজেকে জিজ্ঞেস করবো কিনা সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।”
“তাহলে সেটা কোরো না।”
“তবে আমি ভিলিয়ার্সের ব্যাপারে নিশ্চিত। আমি তাকে ধরছি।” বর্ন বেডসাইড টেবিল থেকে ফোনবুকটা তুলে নিলো। “চলো দেখি, তার নাম্বারটা লিস্টেড নাকি প্রাইভেট। তার ঠিকানাটা আমার দরকার।”
“তুমি তার ধারে কাছেও যেতে পারবে না। তিনি যদি কার্লোসের লোক হয়ে থাকেন তবে তাকে প্রহরা দিয়ে রাখা হবে। তারা তোমাকে দেখামাত্রই গুলি করবে। তাদের কাছে তোমার ছবি আছে, ভুলে গেছো?”
“সেটা তাদের কোনো সাহায্যে আসবে না। তারা যা খুঁজছে সেটা তা নয়। এই তো। ভিলিয়ার্স, এ. এফ. পার্ক মশিউ।”
“তারপরও আমি এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। শুধু জানি মহিলা যাকে ফোন করে সে অবশ্যই লাভিয়াকে ভড়কে দিয়েছে।”
“অথবা মহিলাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যাবে যেখানে সে যা খুশি তাই করতে পারবে।”
“তোমার কাছে কি এটা অদ্ভুত ব’লে মনে হয় না যে, তাকে নাম্বারটা দেয়া হবে।”
“এই রকম পরিস্থিতিতে নয়। কার্লোস চায় তার ড্রোনরা জানুক সে ঠাট্টা করছে না। সে কেইনকে চায়।”
মেরি উঠে দাঁড়ালো। “জেসন, ‘ড্রোন’ কি?”
“বর্ন তার দিকে তাকালো। “আমি জানি না…তবে মনে হয়, অন্ধভাবে যে অন্য আরেকজনের হয়ে কাজ করে।”
“অন্ধভাবে? মানে, না দেখে?”
“না জেনে। ভাবে সে একটা অন্য কিছু করছে।”
“এমনভাবে করা হয় যাতে ট্রেস্ করা না যায়।”
“হ্যা, তাই।”
“জুরিখে সেটাই হয়েছিলো। ওয়াল্টার এপফেল ছিলো একজন ড্রোন। সে চুরির কাহিনীটা ছড়িয়েছে না জেনেই।”
“কোন্ কাহিনীটা?”
“এটা খুব ভালো অনুমাণ যে, তোমাকে এমন একজনের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হলো যাকে তুমি ভালোভাবেই চেনো।”
“ট্রেডস্টোন সেভেনটি-ওয়ান,” জেসন বললো। “আমরা আবার ভিলিয়ার্সের কথায় ফিরে যাই। কার্লোস আমাকে গেইমেনশেফটের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছে। তার মানে সে ট্রেডস্টোন সম্পর্কে জানে। ভিলিয়ার্সও তা জানে, সেটার বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে। সে যদি তা না জানে তবে হয়তো তাকে আমাদের জন্যে খুঁজে বের করার একটা পথ রয়েছে।”
“কিভাবে?”
“তার নাম। তুমি যা বললে তিনি যদি আসলেই তাই হয়ে থাকেন তবে তিনি এটার সম্পর্কে বেশ ভালোই জানেন। অনার অব ফ্রান্সের পশুতুল্য কার্লোসের সাথে গাটছড়া বেঁধেছেন তার হয়তো কোনো কারণ রয়েছে। আমি পুলিশের কাছে, পত্রপত্রিকার কাছে যাওয়ার হুমকি দেবো।”
“তিনি এটা সোজা অস্বীকার করবেন। বলবেন এটা জঘন্য মিথ্যে।”
“বলতে দাও তাকে। এটা আসলে মিথ্যে নয়। তার নাম্বারটা লাভিয়ার অফিসে ছিলো। তাছাড়া, কোনো রকম অস্বীকার করা হবে তার জন্যে মৃত্যুর শামিল।”
“আগে তো তাকে তোমার পেতে হবে।”
“পাবো। মনে রেখো, আমি হলাম বহুরূপী।”
.
পার্ক মঁশিউ’র বৃক্ষশোভিত রাস্তাটা কোনো না কোনোভাবে একটু পরিচিত ব’লে মনে হচ্ছে। তবে এমন নয় যে, সে এই রাস্তাটা দিয়ে এর আগে হেটে গেছে। বরং, এটার পরিবেশ তার খুব চেনা চেনা লাগছে। দুই সারি চমৎকার পাথরের বাড়িঘর, চকচকে দরজা-জানালা, আলোঝলমলে ঘরদোর। ছাদ থেকে অর্কিড ঝুলে আছে। এটা ধনীদের এলাকা। সে এরকম একটা এলাকার সাথে পরিচিত। এটা তার কাছে অন্য রকম কিছু অর্থ বহন করে।
৭টা ৩৫ বাজে, ঠাণ্ডা মার্চের রাত, আকাশ পরিস্কার, বহুরূপী এই কাজের জন্যে একটা পোশাক পরেছে। বর্নের সোনালী চুল একটা ক্যাপে ঢাকা, তার কাঁধটা একটা জ্যাকেটের আড়ালে চাপা পড়ে গেছে। সেই জ্যাকেটটার পেছনে একটা মেসেঞ্জার সার্ভিসের নাম লেখা আছে। তার কাঁধে একটা খালি ক্যানভাস ব্যাগ।
তাকে দুটি অথবা তিনটি স্টপে যেতে হবে, যদি সে প্রয়োজন মনে করে তবে হয়তো চারটাতেও যেতে হবে। খামগুলো সত্যিকারের খাম নয়। কিন্তু ব্রশিউরগুলো বতিয়ো মোশে’র বিজ্ঞাপন কাজের জন্যে ব্যবহার করা হয়। ওগুলো সে একটা হোটেল লবি থেকে তুলে নিয়েছে। জেনারেল ভিলিয়ার্সের বাড়ির আশেপাশে কয়েকটা বাড়ি সে বেছে নেবে দৈবচয়ণের ভিত্তিতে, সেই সব বাড়ির মেইল বক্সে ব্রশিউরগুলো ফেলে দেবে। যা দেখবে সবই তার চোখ রেকর্ড ক’রে রাখবে, সবকিছুর উপরে তার লক্ষ্য একটাই। ভিলিয়ার্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কি রকম? কে জেনারেলকে গার্ড দেয় এবং কতোজন দেয়?
যেহেতু সে ধরে নিয়েছিলো হয় লোকগুলো গাড়িতে নয়তো পোস্টের সামনে হাটতে থাকবে, তাই সেরকম কাউকে দেখতে না পেয়ে খুবই অবাক হলো বর্ন। আদেঁ ফ্রাঁসোয়া ভিলিয়ার্স, জাঁদরেল মিলিটারি জেনারেল, কার্লোসের ঘনিষ্ঠ একজন, তার বাড়ির বাইরে কোনো ধরণের প্রহরার ব্যবস্থা নেই। যদি তাকে নিরাপত্তা দেয়া হয়ে থাকে তবে সেটা কেবলমাত্র বাড়ির ভেতরেই দেয়া হয়। তার অপরাধের মাত্রার তুলনায় এরকম অরক্ষিত থাকার কারণ হতে পারে সে অনেক বেশি অহংকারী নয় তো বোকারহদ্দ।
পাশের বাড়িটার প্রবেশদ্বারের সিঁড়িতে উঠে গেলো জেসন। ভিলিয়ার্সের দরজাটা এখান থেকে বিশ ফিটের বেশি দূরে হবে না। সে দরজার ফাঁক দিয়ে ব্রশিউরটা ঢুকিয়ে দিয়ে ভিলিয়ার্সের বাড়ির জানালার দিকে তাকালো একটা মুখ, একটা মানুষ দেখার জন্যে। কাউকে দেখতে পেলো না।
বিশ ফিট দূরের দরজাটা আচমকা খুলে গেলে বর্ন একটু নিচু হয়ে জ্যাকেটের ভেতর থেকে তার অস্ত্রটাতে হাত দিতে নিজেকে তার আস্ত একটা বোকা বলেই মনে হলো। সে যেমনটি দেখেছে আসলে তার চেয়ে বেশি কিছু আছে এখানে। কেউ এখানে নজরদারী করছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু যে কথা সে শুনতে পেলো সেটা তাকে বলে দিলো ঘটনা সেরকম কিছু নয়। এক মধ্যবয়সী দম্পতি—ইউনিফর্ম পরিহিত মহিলা আর কালো জ্যাকেট পরা একজন পুরুষ—দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
“অ্যাস্ট্রেগুলো পরিস্কার কিনা দেখে নিও,” মহিলা বললো। “তুমি তো জানোই, উনি ছাই ভর্তি এস্ট্রে কি রকম ঘেন্না করেন।”
“উনি বিকেলে আড্ডা মেরেছেন,” লোকটা জবাব দিলো। “তার মানে ওগুলো ভর্তি হয়ে আছে।”
“ওগুলো গ্যারাজে নিয়ে গিয়ে পরিস্কার কোরো। তোমার হাতে সময় আছে। দশ মিনিটের আগে উনি নিচে নেমে আসবেন না। সাড়ে আটটার আগে তিনি নাঁতেরে’তে যাবেন না।”
লোকটা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে জ্যাকেটের হাতা গোটাতে গোটাতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো। “দশ মিনিট,” সে আপন মনে বললো।
দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলে আবারো নিরবতা নেমে এলো আশেপাশে। জেসন উঠে দাঁড়ালো। ফুটপাত দিয়ে হনহন ক’রে হেটে যেতে থাকা লোকটাকে দেখলো সে। নাঁতেরে জায়গাটা কোথায় সেটা সে জানে না। কেবল জানে জায়গাটা প্যারিসের কোনো মফশ্বল হবে। ভিলিয়ার্স যদি সেখানে একা একা গাড়ি চালিয়ে যায় তবে ওখানে তার মুখোমুখি না হওয়ার কোনো কারণই নেই।
বর্ন তার কাঁধের ব্যাগটা অন্য কাঁধে সরিয়ে নিয়ে সিঁড়ি থেকে নেমে পড়লো। বাম দিকে মোড় নিয়ে রাস্তায় পা বাড়ালো। দশ মিনিট।
.
দরজাটা খুলে যেতেই জেসন উইন্ডশিল্ড দিয়ে জেনারেল আঁদ্রে ফ্রাঁসোয়া ভিলিয়ার্সকে দেখতে পেলো। মাঝারি উচ্চতা আর ষাট-সত্তরের মতো বয়স হবে তার। বুকটা বেশ চওড়া। মাথায় কোনো টুপি নেই, ধূসর চুলগুলো ছোটো ছোটো ক’রে কাটা। মুখে সাদা চাপ দাড়ি। তার ভাবসাব সন্দেহাতীতভাবেই সামরিক টাইপের।
বর্ন তাকে দেখে একটু অবাকই হলো, কোন্ কারণে একজন লোক কার্লোসের মতো সন্ত্রাসীর সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখে, ভেবে পেলো না সে। কারণ যাইহোক না কেন, সেটা হবে খুবই শক্তিশালী, যেহেতু সে নিজে খুব শক্তিশালী—সরকারের ভেতরে তার শক্ত অবস্থান রয়েছে।
ভিলিয়ার্স ঘুরলো, গৃহকর্ত্রীর সাথে কথা বলে হাত ঘড়িটা দেখে বাড়ির সামনে দাঁড় করানো বড়সড় সিডান গাড়িটার কাছে যেতেই মহিলা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে দরজাটা বন্ধ ক’রে দিলো। গাড়িতে উঠতেই সেটা সাই ক’রে চলে গেলো। গাড়িটা সামনের ডান দিকে মোড় নেবার আগপর্যন্ত জেসন অপেক্ষা করলো। তারপর সে তার রেনল্ট গাড়িটা আস্তে ক’রে চালিয়ে নিয়ে গেলো সামনের গাড়িটার পেছনে পেছনে। একটা চার রাস্তার মোড়ে এসে ভিলিয়ার্সের গাড়িটা আবারো ডান দিকে মোড় নিলো। এই কাকতালী ব্যাপারটার মধ্যে নিশ্চিত একটা পরিহাস আছে, যদি কেউ এরকম কোনো কিছুতে কিশ্বাস করে তো এটা একটা ভবিষ্যৎবাণী। জেনারেল ভিলিয়ার্স নাঁতেরের যে এলাকাটা বেছে নিলো সেটার সাথে সেন জার্মেইন লায়ে’র অনেক মিল আছে, যেখানে বারো ঘণ্টা আগে মেরি জেসনের কাছে অনুনয়বিনয় করেছিলো সে যেনো তার জীবন নিয়ে, মেরিকে নিয়ে হাল ছেড়ে না দেয়।
এই জায়গাটা বিশাল বিশাল মাঠ আর চারপাশে চমৎকার পাহাড়ে ঘেরা। চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে আছে সব। জেসনের মনে হলো এই জায়গাটা কাউকে পথরোধ করার জন্যে বেশ উপযুক্তই হবে। গাড়িটা অনুসরণ করা জেসনের জন্যে খুব একটা কষ্টসাধ্য কাজ ব’লে মনে হচ্ছে না। তাই কোয়ার্টার মাইল দূরত্ব বজায় রেখে সে অনুসরণ করতে লগলো, কিন্তু তারপরও জেনারেলের গাড়িটা খুব সামনে দেখে সে একটু অবাকই হলো। ভিলিয়ার্স তার গাড়িটার গতি কমিয়ে রাস্তা থেকে নেমে যাওয়া বনের মাঝ দিয়ে চলে যাওয়া একটা পথ দিয়ে ছুটতে লাগলো। পথের শেষমাথায় পার্কিংলটটার ফ্লাডলাইটের আলোয় চোখে পড়লো দুটো পোস্টের সাথে চেইন দিয়ে বাঁধা একটা সাইনবোর্ডের দিকে : লাবেলেয়া। জেনারেল এই গ্রামীণ এলাকার এসেছে কোনো এক রেস্তোঁরায় ডিনার করার জন্যে।
বর্ন প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকেই পাশের ঝোঁপে গাড়িটা আড়াল ক’রে রাখলো। তাকে ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে হবে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তার মনে দাউ দাউ ক’রে আগুন জ্বলছে। সেটা ক্রমশ বাড়ছে। আচমকা সে অসাধারণ এক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে।
হোটেল মঁক্রজে গত রাতে বিশাল এক ধরা খেয়েছে কার্লোর্স। তাই মনে হচ্ছে আদেঁ ভিলিয়ার্সকে জরুরি এক মিটিংয়ের জন্যে ডেকে আনা হয়েছে। হয়তো কার্লোস নিজেই আছে এখানে। যদি তাই হয়ে থাকে তবে জায়গাটা বেশ সুরক্ষিত আর অবশ্যই এখানে সশস্ত্র প্রাহরী আছে। তাদের কাছে হয়তো তার ছবিও আছে, তাই তাকে দেখামাত্রই সবাই চিনে ফেলবে। গুলি চালাবে সঙ্গে সঙ্গে। অন্যদিকে, কার্লোসের একটা ঘাঁটি নিজের চোখে দেখা যাবে অথবা স্বয়ং কার্লোর্সকেই—এই সুযোগটা হয়তো আর কখনই আসবে না। তাকে লাবেলেয়া’র ভেতরে যেতেই হবে। ঝুঁকিটা নেবার জন্যে তার ভেতরে প্রচণ্ড তাড়া অনুভব করলো সে। যেকোনো ঝুঁকি। এটা পাগলামী! কিন্তু সে তো সুস্থও নয়। স্মৃতিভ্রষ্ট এক উন্মাদ। কার্লোস। কার্লোসকে খুঁজে বের করো! হায় ঈশ্বর, কেন?
কোমরের পিস্তলটা টের পেলো সে। জ্যাকেটের পেছনে লেখাগুলো ঢাকার জন্যে গাড়ি থেকে বের হয়ে কোটটা পরে নিলো। সিট থেকে একটা টুপি নিয়ে সামনের দিকে অনেকটা ঝুঁকে পরে নিলো যাতে তার চেহারাটা সহজে বোঝা না যায়। তার ছবিটা যখন তোলা হয়েছিলো তখন কি তার চোখে চশমা ছিলো—জেসন ভাবলো। না, ছিলো না। প্রচণ্ড মাথা ধরার কারণে সে চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রেখে দিয়েছিলো। চশমাটা তার শার্টের পকেটেই আছে, দরকার হলে পরে নিতে পারবে। গাড়ির দরজা বন্ধ ক’রে সে বনের ভেতর দিয়ে এগোতে লাগলো।
জেসন যতোই সামনের দিকে এগোলো রেস্তোরাঁর ফ্লাডলাইটের আলো বনের গাছপালা ভেদ ক’রে ততোই উজ্জ্বল হতে লাগলো। বনের শেষপ্রান্তে এসে পড়লো সে, এখান থেকে রোস্তোঁরার এলাকাটা শুরু হয়েছে। জায়গাটা এই গ্রামীণ রেস্তোরাঁর পাশের একটা অংশ। সারি সারি ছোটো ছোটো জানালা রয়েছে এপাশটাতে। ভেতরে মোমবাতির আলোতে ডিনার করা লোকজনদের দেখা যাচ্ছে। এরপরই তার চোখ গেলো দ্বিতীয় তলার দিকে। এটি ভবনটার মতো সমান আকৃতির নয়, কিছুটা অংশ খোলা। সেই খোলা জায়গাটাকে বিশাল একটা বারান্দা বলেই মনে হবে যে কারোর কাছে। বারান্দাটার পাশেই সুবিশাল একটা ঘর। সেখানকার জানালা দিয়েও মোমবাতির আলো দেখা যাচ্ছে। সেই ঘরের লোকগুলো নিচের ঘরের ডিনার করা লোকগুলো থেকে একটু আলাদা।
তারা সবাই পুরুষ, কেউ ব’সে নেই, দাঁড়িয়ে আছে নয়তো ইতস্তত হেটে বেড়াচ্ছে। তাদের হাতে গ্লাস, সিগারেট। কতোজন আছে সেটা বলা অসম্ভব—দশজনের বেশি হবে, তবে বিশ জনের কম। এইতো সে। একটা জটলা থেকে আরেকটা জটলার দিকে যাচ্ছে। জেনারেল ভিলিয়ার্স তাহলে সত্যি কোনো মিটিংয়ের জন্যে এখানে এসেছে। তাদের এই মিটিংটা গত আটচল্লিশ ঘণ্টায় তাদের ব্যর্থতা নিয়ে, যে ব্যর্থতার কারণে কেইন নামের লোকটা এখনও বেঁচে আছে।
তাহলে অস্বাভাবিকতাটি কি? প্রহরীরা কোথায়? তারা কতোজন, কোথায় তাদের স্টেশন? বর্ন রোস্তোঁরার সামনের দিকে চলে এলো। কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার আগের জায়গায় ফিরে গেলো সে। এবার অন্য দিক দিয়ে রোস্তেরার পেছনে চলে এলো।
সেখানকার একটা দরজা খোলা আছে। সাদা জ্যাকেট পরা এক লোক সেই দরজাটা দিয়ে বের হয়ে এলে বর্ন দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একটা সিগারেট বের ক’রে জ্বালালো। বর্ন ডানে-বায়ে আর উপরে তাকিয়ে দেখলো, কাউকেই দেখা যাচ্ছে না। বাইরে কোনো রক্ষীও নেই। ঠিক যেমনটি ভিলিয়ার্সের বাড়ির আশেপাশে এবং ভেতরে ছিলো না।
আরেকজন লোক দরজা দিয়ে বের হয়ে এলো। সেও সাদা জ্যাকেট পরে আছে। তবে মাথায় শেফের টুপি। তার কণ্ঠস্বরটা খুবই রাগী। তার ফরাসি উচ্চারণে গ্যাসকোনি টান আছে। “তুমি আয়েশ ক’রে সিগারেট খাচ্ছো আর আমরা কাজ করতে করতে ঘেমে উঠছি! পেস্ট্রির কার্টটা তো একেবারেই খালি। সেটা এক্ষুণি ভরো, বানচোত!
পেস্ট্রির লোকটা ঘুরে কাঁধ ঝাঁকিয়ে সিগারেটটা ফেলে ভেতরে চলে গেলো। দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলে ভেতরের আলোটা আর দেখা গেলো না। রইলো শুধু চাঁদের আলো। সেই আলোতে বারান্দাটা দেখা যাচ্ছে। কেউ নেই সেখানে। কেউ পাহারাও দিচ্ছে না। এমন কি বিশাল দরজাটার সামনেও।
কার্লোস। কার্লোসকে খুঁজে বের করো। ফাঁদে ফেলো তাকে।
সে এখন ভবনটার সামনের অংশ থেকে চল্লিশ ফিটেরও কম দূরে দাঁড়িয়ে আছে, আর উপরের বিশাল বারান্দাটার রেলিং থেকে দশ ফিট নিচে। বাইরের দেয়ালে দুটো ভেন্টিলেটর আছে ধোঁয়া বের হবার জন্যে। সেগুলোর পাশেই আছে একটা ড্রেন পাইপ। সেটা চলে গেছে রেলিং পর্যন্ত। সে এই পাইপ বেয়ে উঠতে পারবে, তবে কোট পরে নয়, তাই জেসন কোটটা এবং টুপিটা খুলে পায়ের কাছে রেখে ঘাস দিয়ে সেগুলো ঢেকে দিলো। এবার সে পাইপটা বেয়ে আস্তে আস্তে নিঃশব্দে উঠে যেতে লাগলো। রেলিং থেকে যখন মাত্র আঠারো ইঞ্চি দূরে তখনই নিচের দরজাটা ধপাস ক’রে খুলে গেলো। এক লোক বের হয়ে এলো টলতে টলতে। তার পেছন পেছন সেই সাদা টুপি পরা শেফ। সে চিৎকার করছে।
“বানচোত! তুমি হলে মাতাল, বুঝলে, আস্ত একটা মাতাল! সারা রাত ধরে তুমি মদ খেয়েছো! ডাইনিং রুমের মেঝে জুড়ে পেস্ট্রি পড়ে আছে। সব কিছু তছনছ হয়ে আছে। বের হয়ে যাও।”
দরজাটা ধপাস ক’রে বন্ধ হয়ে গেলো আবার। জেসন এতোক্ষণ ধরে পাইপে ঝুলে রাইলো। তার পা আর হাত ব্যথা করছে। ঘেমে উঠছে কপাল। নিচের মাতাল লোকটা শেফের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে অশ্লীল কিছু একটা দেখালো কিন্তু বুঝতে পারলো লোকটা সেখানে নেই। তার চোখ ঘুরতে ঘুরতে দেয়ালের দিকে গেলো। বর্নের দিকে চোখ পড়তেই সে চোখ পিট পিট ক’রে আবারো তাকালো। জেসনের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে এলো। লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করলো। চোখ দুটো বন্ধ ক’রে আবারো তাকালো। তারপর যেনো অনেকটা নিশ্চিত হলো দেয়ালের দৃশ্যটা আসলে তার অতিরিক্ত মদের কুপ্রভাব। সে ঘুরে চলে যেতে গেলো।
বর্ন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। পুণরায় ওঠার জন্যে উদ্যত হতেই তার স্বস্তিটা তিরোহিত হলো। তার পায়ে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। ব্যথাটা অগ্রাহ্য করেই রেলিংয়ের একটা বার ধরতে পারলে খুব সহজেই বারান্দায় উঠে এলো। বারান্দাটা একেবারে ফাঁকা।
এই বারান্দাটা বসন্ত এবং গ্রীষ্মকালে ডাইনিং করার জন্যে বানানো হয়েছে। দশ থেকে পনেরোটি টেবিল রাখার ব্যবস্থা আছে সেখানে। বারান্দার মাঝখানে বড় দরজাটা সে নিচের বন থেকে দেখেছে। ভেতরের মানুষগুলো এখন ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। কয়েক মুহূর্তের জন্যে জেসনের মনে হলো কোনো এলার্ম বেজেছে কিনা—নাকি তারা তার জন্যেই অপেক্ষা করছে। সে নিজের অস্ত্রটাতে হাত রাখলো। একটুও নড়লো না। কিন্তু কিছুই হলো না। চুপিসারে সে দরজার দিকে এগোলো। দরজার কাঁচের প্যানটার দিয়ে ভেতরে উঁকি মারলো সে।
যা দেখতে পেলো সেটা তাকে সম্মোহিত করলো, তবে মোটেও ভীতিকর কিছু নয়। লোকগুলো সারি ক’রে দাঁড়িয়ে আছে—তিনটি সারি। একেক সারিতে চারজন করে—সবাই আদেঁ ভিলিয়ার্সের দিকে তাকিয়ে আছে। সে সবার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে তেরোজন লোক, বারোজন লোক কেবল দাঁড়িয়ে নেই বরং সামরিক প্যারেডের মতো এটেনশন হয়ে আছে। সবাই বৃদ্ধলোক, অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক। কেউই ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় নেই। তার বদলে প্রত্যেকের কলারেই রিবন আর রেজিমেন্টাল র্যাঙ্কের স্মারক লাগানো আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা সবাই কমান্ড করতে অভ্যস্ত—ক্ষমতাবান। এই সব লোক যদি কার্লোসের চ্যালা হয়ে থাকে তবে বলতেই হয়, কার্লোসের রিসোর্স একেবারেই অসাধারণ আর মারাত্মকভাবেই বিপজ্জনক।
আলজেরিয়ার উন্মাদ কর্নেল-তাদের আর কি আছে? যে স্মৃতি নিয়ে তারা তাড়িত হচ্ছে সেটার অস্তিত্ব নেই। যে যুদ্ধের কথা তারা স্মরণ করে সেটা আর চলছে না। অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
জেনারেল তার কণ্ঠটা চড়া করলে জেসন কাঁচের ওপর পাশ থেকে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলো। কথাগুলো এখন পরিস্কার শোনা যাচ্ছে।
“…আমাদের উপস্থিতি, আমাদের উদ্দেশ্য, সবই বোধগম্য। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি আমাদের নীতির পক্ষে, আর এই ঐক্য খুবই দৃঢ়। আমাদের কথা শুনতে হবে! আমাদের যেসব ভাই দেশমাতৃকার জন্যে জীবন দিয়েছে তাদের স্মরণে বলছি, আমরা আমাদের দেশকে বাধ্য করবো তাদেরকে স্মরণ করতে। যারা আমাদের বিরোধীতা করে তারা আমাদের শক্তি সম্পর্কে বেশ ভালোভাবেই অবগত আছে। আমরা এখন ঐক্যবদ্ধ। আমরা সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা করছি যারা আমাদের আগে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তারা যেনো শান্তিতে থাকে। আর আমরা, আমরা এখনও যুদ্ধের মধ্যে আছি…বন্ধুগণ : আমি আপনাদেরকে আমাদের লেডি অব ফ্রান্সকে দেবো!”
এক সঙ্গে সবাই সম্মতিসূচক ধ্বণি তুললো। বৃদ্ধ যোদ্ধাদের মাঝ থেকে আরেকটা কণ্ঠ উচ্চারিত হলো। তার সাথে বাকিরা তাল মেলালো। সেটা একটা গানের অংশ।
আলোয়া এফোঁয়া দ্য লা পারি,
লো জুখ দ্য গ্লোয়ে এস্তে এরাইভ…
বর্ন মুখটা সরিয়ে ফেললো। ঘরের ভেতরের কথাবার্তা আর দৃশ্যে সে অসুস্থ বোধ করলো। গৌরবের জন্যে জীবন বিসর্জন দাও। সহযোদ্ধার মৃত্যু আরো বেশি আত্মত্যাগ দাবি করে। এর দরকার আছে। এর মানে যদি হয় কার্লোসের সাথে আঁতাত তবে তাই হোক।
কোন্ জিনিসটা তাকে এতোটাইব্রত করলো? আচকা কেন তার মধ্যে ক্রোধ আর হতাশা ভর করলো? তার ভেতরে কোন্ প্রণোদনা তাকে তাড়িত করলো? এরপরই সে বুঝতে পারলো। সে আদেঁ ভিলিয়ার্সের মতো লোককে, এই ঘরের সব লোকগুলোকে ঘৃণা করে। তারা সবাই যুদ্ধ করে। তরুণদের কাছ থেকে তাদের জীবন চুরি করে…খুবই অল্পবয়সীদেরও।
কুয়াশাটা কেন আবার তাকে জাপটে ধরছে? তীব্র যন্ত্রণাটা কেন আবার ফিরে এলো? প্রশ্ন করার কোনো সময় এখন নয়। সেগুলো সহ্য করার মতো শক্তিও নেই। তাকে এসব তার মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে, আদেঁ ভিলিয়ার্সের ব্যাপারে মনোযোগ দিতে হবে। যার সাথে এক কুখ্যাত গুপ্তঘাতকের সম্পর্ক রয়েছে।
সে জেনারেলকে ফাঁদে ফেলবে। তাকে সব কিছু বলতে বাধ্য করবে। সে যা জানে তার সবই সে জেনে নেবে, হয়তো তাকে খুনও করবে। ভিলিয়ার্সের লোকেরা অল্পবয়সীদের কাছ থেকে তাদের মূল্যবান যৌবন চুরি করে। খুবই অল্প বয়সীদের কাছ থেকে। তারা বেঁচে থাকার আশা করতে পারে না। আমি আবারো আমার গোলক ধাঁধায় পড়ে গেছি, দেয়ালগুলোতে কাটা লাগানো। ওহ্, ঈশ্বর, ওগুলো খুব কষ্ট দিচ্ছে আমাকে।
জেসন পাইপ বেয়ে নিচে নেমে গেলো। নামার সময় তার সমস্ত শরীরে সুতীব্র ব্যথা অনুভূত হলো। এসব ব্যথা এড়িয়ে তাকে এখন এই চাঁদের আলোয় পথে নামতে হবে, মৃত্যুর ফেরিওয়ালাকে ফাঁদে ফেলতে হবে।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন