১৪. ঘরের ছেলে

নীহাররঞ্জন গুপ্ত

ঘরের ছেলে

কিরীটী বাসাতেই ছিল।

সুব্রত হাসতে হাসতে কিরীটীকে বললে, তোর ও খবরের কাগজের প্যাচ বোধহয় শেষ পর্যন্ত লেগে গেল রে।

কিরীটী একটা পেনসিল দিয়ে কাগজের গায়ে হিজিবিজি কাটছিল, মুখ না তুলেই জবাব দিল, হিসাবের কড়ি বাঘে খায়না রে, বুঝলি? চৌদ্দ আনা মীমাংসা তো প্ৰায় হয়েই আছে। বাকী দুআনার জন্য গোলমাল বেঁধেছিল। দেখি তাও বোধ হয় হয়ে এল।

বলত ব্যাপার কী?

Advertisement টা কতদিন হলো দেওয়া হচ্ছে?

তা প্ৰায় দিন পনের তো হবেই

এমন সময় জংলী এসে ঘরে প্রবেশ করল। কিরীটী ওর মুখের দিকে চেয়ে প্রশ্ন করল, কি চাস–

চা দেব কী?

নিশ্চয়ই, যা-নিয়ে আয় জলদি।

সুব্রত তখন এক নিঃশ্বাসে একটু আগের দুপুরের সকল ঘটনা সবিস্তারে বলে গেল।

কিরীটী শুনতে শুনতে গম্ভীর হয়ে উঠল।

কি জানি কেন-কিরীটী কিন্তু খুব উৎসাহিত বোধ করে না।

সুব্রত জিজ্ঞাসা করে, কি ভাবছিস?

কিছু না–

তোর কি মনে হয়—ঐ ছেলেই কি—

দেখা যাক–

 

রঘুনাথ লোকটি আর কেউ নয়-পূর্ববর্ণিত কিশোরী।

কিশোরী আর জগন্নাথ শহরের ভদ্রবেশ ধারী দুটি নাম করা গুণ্ডা। তাদের অসাধ্য কোন কােজ নেই। বিজ্ঞাপনটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই কিশোরীর মনে একটা মতলব খেলে যায়।

পরামর্শ করে তারপর সে জগন্নাথকে সুব্রতর কাছে পাঠায়।

সেখানে যখন জানতে পারে ছেলেটিকে ওরাও চেনেনা এবং চেনে কেবল একমাত্র ‘হরমোহিনী’ অনাথ আশ্রমের সিংহী লোকটা-ওরা গিয়ে গোপনে সিংহীর সঙ্গে দেখা করে, এবং টাকার লোভ দেখিয়েও প্ৰাণের ভয় দেখিয়ে সিংহীকে দলে টানে।

তারপর—

 

সাত দিন পরে সুব্রতর গৃহে ছেলেটিকে নিয়েই রঘুনাথ ওরফে জগন্নাথ এসে হাজির হলো।

সুব্রত আর কিরীটী ছেলেটিকে নিয়ে তখন টালীগঞ্জে হরমোহিনী আশ্রমে গেল—সেখানকার সুপারিনটেণ্ডেন্ট সনাক্ত করল ঐ ছেলেটিকেই সুধীর চৌধুরী বলে।

অতঃপর কিরীটী ছেলেটিকে নিয়ে শশাঙ্ক চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করাই ঠিক করলে এবং পরের দিন ছেলেটি ও জগন্নাথ সহ শ্ৰীপুরের দিকে রওনা छ्ळीं।

শশাঙ্কমোহন বাইরের ঘরে চুপটি করে বসে সেদিনকার খবরের কাগজটা উল্টে পাল্টে দেখছেন, এমন সময় সেদিনকার সেই ভদ্রলোকটি এসে ঘরে প্ৰবেশ করল।

নমস্কার শশাঙ্কবাবু।

শশাঙ্কমোহন মুখ তুলে চাইলেন।

কিন্তু ভদ্রলোকের পশ্চাতে দাঁড়িয়ে একটি সুশ্ৰী বছর পনেরর ছেলে। একটু পরে কিরীটী ইঙ্গিতে জগন্নাথকে ছেলেটিকে নিয়ে পাশের ঘরে যেতে <ळ्ळ्ञ्।

ধূর্জন্টিবাবু-কি খবর।

একটা বিশেষ জরুরী কাজে এসেছি—

বলুন।

আপনার হারিয়ে যাওয়া ছেলের সন্ধান বোধ হয় পাওয়া গিয়েছে

সত্যি-আনন্দে উৎফুল্প হয়ে ওঠেন। শশাঙ্কমোহন, কোথায়-কোথায় %R-

ব্যস্ত হবেন না-শুনুন একটু।

কিন্তু-?

যে ছেলেটিকে দেখলেন-বলে সংক্ষেপে জগন্নাথ কাহিনী বর্ণনা করে কিরীটী, ঐ-বোধ হয় আপনার ছেলে-।

অতঃপর ছেলেটিকে আবার ঘরে ডেকে আনা হলো।

শশাঙ্কমোহন। একদৃষ্টে চেয়ে আছেন তখনো ঐ ছেলেটির দিকে। সরল গোবেচারী গোছের চেহারা ছেলেটির।

এবং তারপর আবার ছেলেটিকে কিরীটী পাশের ঘরে যেতে বলল। ছেলেটি চলে গেল।

কিরীটী বলে, আপনার সেই ফটোটা থাকলে হয়ত নিশ্চিন্ত ও আমরা স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারতাম—তবে হরমোহিনী’ আশ্রমের সুপারিনটেনডেন্টস্থির নিশ্চিত-বললেন এই সেই নিরুদ্দিষ্ট সুধীর—

বলেছেন—বলেছেন—তিনি!

হ্যাঁ–তবে একটা কথা আছে—

বলুন। ব্যাপারটা আরো কিছু দিন বোধহয় গোপন রাখাই ভাল হবেবেশ-

কিন্তু ছেলেটি—

ইচ্ছা করলে তাকে এখানে আপনি রাখতে পারেন। তবে–ছেলেটি বা কেউ যেন না জানে—আসলে সে কে। কি তার পরিচয়।

বেশ-তাই হবে।

 

কিরীটী ছেলেটিকে রেখে ফিরে গেল। শশাঙ্কমোহনেরই অনুরোধে। কিন্তু শশাঙ্ক মোহন কথা রাখতে পারলেন না।

এতদিন পরে হারানো ছেলের সন্ধান পেয়ে আনন্দে দিশেহারা হয়ে স্ত্রী বিভাবতীকে ডেকে সব খুলে বললেন।

বিভাবতী যখন এতকাল পরে স্বামীর মুখে শুনলেন—আসলে তার মেয়ে হয়নি—হয়েছে ছেলে এবং সেই ছেলে এতকাল পরে তীর বুকে ফিরে এসেছে-আনন্দে যেন পাগল হয়ে যান।

কি করবেন ভেবে পান না। এবং স্বামীর অনুরোধ সত্ত্বেও কথাটা গোপন রাখতে পারেন না। একটু একটু করে কথাটা জানাজানি হয়ে যায়। সংবাদটা মৃগাঙ্গমোহনও শুনলেন।

মৃগাঙ্কমোহন এসে জিজ্ঞাসা করলেন, এসব কি শুনছি। দাদা? সত্যি। তবে কি আপনার ছেলেই হয়েছিল?

হ্যাঁ। শশাঙ্কমোহন গম্ভীর স্বরে জবাব দিলেন।

তবে এতদিন সেকথা লুকানো ছিল কেন?

প্রয়োজন ছিল।

প্রয়োজন তখন ছিল, না এখন হয়েছে? মৃগাঙ্কমোহনের গলার স্বর কঠিন ও রূঢ়।

শশাঙ্কমোহন চুপ করে রইলেন।

আর এ ছেলে যে সত্য সত্যই জমিদার শশাঙ্ক চৌধুরীর তারই বা প্রমাণ কি? উইলের দাবীকে দাঁড় করাবার জন্য এটা স্বয়ং জমিদারের একটা যে চাল নয়। তাই বা কে বলবে?

তুমি কি বলতে চাও মৃগু?

আমি যা বলতে চাই তা অত্যন্ত সহজ ও সরল।

অর্থাৎ–

অর্থাৎ এ ছেলে আপনার নয়। কস্মিনকালে ও কোন দিন আপনার ছেলে হয়নি। আপনার মেয়েই হয়েছিল, সেকথা গায়ের জোরে আপনি স্বীকার করতে চাইলেও আদালত অস্বীকার করবে না–

আর যদি প্ৰমাণ করতে পারি যে এ ছেলে আমার?

দিনকে রাত করতে চাইলেই তা কিছু সম্ভব হয় না। অতএব পাগলামি বা একটা কেলেঙ্কারী না করাই কি ভাল নয়। কথাগুলো বলে মৃগাঙ্কমোহন ঘর ছেড়ে চলে গেল।

সকল অধ্যায়

১. ০১. কিরীটী
২. ০২. বোতাম
৩. ০৩. পানু ও সুনীল
৪. ০৪. অদ্ভুত চিঠি
৫. ০৫. কবুলতি
৬. ০৬. শশাঙ্কমোহনের চিন্তা
৭. ০৭. নতুন চাকর
৮. ০৮. ছায়া না কায়া
৯. ০৯. চঞ্চল সুনীল
১০. ১০. ছিন্ন সূত্রের গ্ৰন্থি
১১. ১১. ঝোড়ো হাওয়া
১২. ১২. পুরানো দিনের ইতিহাস
১৩. ১৩. হারিয়ে যাওয়া ছেলে
১৪. ১৪. ঘরের ছেলে
১৫. ১৫. অনাথ আশ্রম
১৬. ১৬. পলায়ন
১৭. ১৭. পথহারা
১৮. ১৮. বিদায়
১৯. ১৯. গোপন কথা
২০. ২০. মায়ের প্রাণ
২১. ২১. আসল নকল
২২. ২২. দুর্যোগের মেঘ
২৩. ২৩. রাতের অভিসার
২৪. ২৪. ধাঁধার উত্তর
২৫. ২৫. বিশ্লেষণের শেষ
২৬. ২৬. শেষের কথা
২৭. ০১. নতুন ম্যানেজার
২৮. ০২. ভয়ংকর চারটি কালো ছিদ্র
২৯. ০৩. মানুষ না ভূত
৩০. ০৪. আঁধারে বাঘের ডাক
৩১. ০৫. আবার ভয়ঙ্কর চারটি ছিদ্র
৩২. ০৬. খাদে রহস্যময় মৃত্যু
৩৩. ০৭. নেকড়ার পুটলি
৩৪. ০৮. পুঁটলি রহস্য
৩৫. ০৯. আঁধার রাতের পাগল
৩৬. ১০. অদৃশ্য আততায়ী
৩৭. ১১. ময়না তদন্তের রিপোর্ট
৩৮. ১২. আরো বিস্ময়
৩৯. ১৩. মৃতদেহ
৪০. ১৪. রাত্রি যখন গভীর হয়
৪১. ১৫. রহস্যের মীমাংসা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন