১০. ছিন্ন সূত্রের গ্ৰন্থি

নীহাররঞ্জন গুপ্ত

ছিন্ন সূত্রের গ্ৰন্থি

ছায়ামূর্তির গলার ফাঁসটা আড়াআড়ি ভাবে পড়েছিল এবং ফাসটা লাগাবার সাথে সাথেই পিছনপানে এক হেঁচকাটান খেয়ে ছায়ামূর্তি আর টাল সামলাতে পারলে না। পিছন দিকে হেলে পড়ে গেল এবং পড়বার সময় মাথাটা একটা টবের গায়ে প্রচণ্ডভাবে ঠুকে গেল। সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা ও সমগ্ৰ দেহটা যেন কেমন ঝিম ঝিম করে উঠল। সমস্ত স্মৃতি কেমন অসাড় ও গুলিয়ে একাকার হয়ে গেল। ছায়ামূর্তি ক্ষীণ অস্ফুট একটা শব্দ করে লুটিয়ে পড়ল।

শিথিল হাতের মুঠি থেকে একটা খাম মাটিতে পড়ে গেল। যে আততায়ী এতক্ষণ ছায়ামূর্তিকে অনুসরণ করে তার উপর আচমকা পিছন থেকে চাদর চাপা দিয়ে ফাস লাগিয়েছিল। সে এতক্ষণে এগিয়ে এল।

ক্ষিপ্ৰহস্তে ভূপতিত ছায়ামূর্তির মাথার উপর থেকে ফাসটা খুলে চাদরটা সরিয়ে নিল।

তারপর মাটির উপর থেকে খামটা তুলে নিয়ে নিঃশব্দে সেখান থেকে সরে পড়ল।

 

ছায়ামূর্তির জ্ঞান যখন ফিরে এল তখনও মাথাটার মধ্যে কেমন যেন বিমঝিম করছে।

মাথাটা উঁচু করতে গিয়ে মনে হল যে সেটা যেন লোহার মতই ভারী। মাথার একটা জায়গা ব্যথায় টন টন করছে। হাত দিয়ে অনুভব করে বুঝল যে বেশ খানিকটা কেটে গেছে। অজ্ঞান হওয়ার আগের সমস্ত ঘটনাগুলি একে একে মনের পর্দার উপর ছায়াছবির মত ভেসে ওঠে।

হাতের উপর ভর দিয়ে লোকটা উঠে বসলো।

মেঘের আড়ালে বোধ হয় চাঁদ ঢাকা পড়েছে। চারিদিকে কালো আঁধার থমথম করে।

টচটা পাশেই পড়েছিল। একটু খুঁজতেই সেটা পাওয়া গেল।

টর্চের বোতাম টিপে আলো জেলে আহত ব্যক্তি চারিদিক খুঁজল।

কিন্তু খামটি কোথাও দেখতে পেলে না।

আশ্চর্য! কোথায় গেল সেই খামটা।

তবে কি।–এতক্ষণে আগাগোড়া সমস্ত ব্যাপারটা একটা ক্ষীণ সন্দেহের আকারে মনের কোণে উঁকি দিল।

কিন্তু কে সে?

 

ভোরবেলা খবরের কাগজটা পড়তে পড়তে কিরীটী রায় মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।

সুব্রত এসে ঘরে প্রবেশ করল।

শ্ৰীপুর রহস্যের কিছু কিনারা হলো? কালকের সে বস্তুটি কোন কাজে লাগল?

নিশ্চয়ই–লেগেছে বৈকি-দশ আনা হয়ে গেছে। বাকী ছয় আনা।

তার মানে, তবে তো প্ৰায় মেরে এনেছিস বল?

হ্যাঁ কতকটা। চার ফেলেছি-মাছ টোপ গিলবেই-কিন্তু ঐ যে গাছের ডালে দুটো চিল ধ্বসে আছে, তাদের নিয়েই মুশকিল বেঁধেছে।

চিল।

হ্যাঁ–

সামনেই টিপিয়ের ওপরে একটা সাদা কাগজের গায়ে কয়েকটা কথা বড় বড় অক্ষরে লেখা।

১ নম্বর– বোতাম ‘ম’
২ নম্বর– চার বৎসর ‘ম’ ‘শ’

৩ নম্বর—চিঠি ‘শ’ ‘ম’

সুব্রত টিপয়ের উপর থেকে কাগজটা তুলে নিয়ে চোখ বুলিয়ে লেখাগুলির মাথামুণ্ড কিছুই বুঝতে পারলে না।

কিরীটীর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলে, এটা কি রে? কোন ধাঁধার উত্তর ঠিক করছিলি নাকি?

কিরীটী কাগজটার দিকে চোখ রেখেই জবাব দিল, না-একটা ধাঁধা তৈরি করবার চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু মিলাতে পারলাম না।

তাই নাকি? এমন সময় জংলী সকল বেলাকগর ডাক এনে টিপয়ের উপর রাখে। কিরীটী চিঠিগুলি একটি একটি করে পড়ে নামিয়ে রাখতে লাগল।

হঠাৎ একটা চিঠি দেখে সেটা খাম ছিঁড়ে বের করে পড়তে পড়তে কিরীটীর চোখের মণি দুটো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

সে তাড়াতাড়ি চিঠিটা ভাঁজ করে জামার পকেটে রাখতে রাখতে বললে, সুব্রত, ঐ এক নম্বর অর্থাৎ বোতাম positive-অর্থাৎ হ্যাঁ–

সুব্রত খানিকক্ষণ হাঁ করে কিরীটীর প্রফুল্ল মুখখানির দিকে তাকিয়ে থেকে অবশেষে প্রশ্ন করলে, য়্যাঁ, কী বললি?

বললাম, পয়লা নম্বরে ভুল নেই। ওটার উত্তর মিলেছে।

সকল অধ্যায়

১. ০১. কিরীটী
২. ০২. বোতাম
৩. ০৩. পানু ও সুনীল
৪. ০৪. অদ্ভুত চিঠি
৫. ০৫. কবুলতি
৬. ০৬. শশাঙ্কমোহনের চিন্তা
৭. ০৭. নতুন চাকর
৮. ০৮. ছায়া না কায়া
৯. ০৯. চঞ্চল সুনীল
১০. ১০. ছিন্ন সূত্রের গ্ৰন্থি
১১. ১১. ঝোড়ো হাওয়া
১২. ১২. পুরানো দিনের ইতিহাস
১৩. ১৩. হারিয়ে যাওয়া ছেলে
১৪. ১৪. ঘরের ছেলে
১৫. ১৫. অনাথ আশ্রম
১৬. ১৬. পলায়ন
১৭. ১৭. পথহারা
১৮. ১৮. বিদায়
১৯. ১৯. গোপন কথা
২০. ২০. মায়ের প্রাণ
২১. ২১. আসল নকল
২২. ২২. দুর্যোগের মেঘ
২৩. ২৩. রাতের অভিসার
২৪. ২৪. ধাঁধার উত্তর
২৫. ২৫. বিশ্লেষণের শেষ
২৬. ২৬. শেষের কথা
২৭. ০১. নতুন ম্যানেজার
২৮. ০২. ভয়ংকর চারটি কালো ছিদ্র
২৯. ০৩. মানুষ না ভূত
৩০. ০৪. আঁধারে বাঘের ডাক
৩১. ০৫. আবার ভয়ঙ্কর চারটি ছিদ্র
৩২. ০৬. খাদে রহস্যময় মৃত্যু
৩৩. ০৭. নেকড়ার পুটলি
৩৪. ০৮. পুঁটলি রহস্য
৩৫. ০৯. আঁধার রাতের পাগল
৩৬. ১০. অদৃশ্য আততায়ী
৩৭. ১১. ময়না তদন্তের রিপোর্ট
৩৮. ১২. আরো বিস্ময়
৩৯. ১৩. মৃতদেহ
৪০. ১৪. রাত্রি যখন গভীর হয়
৪১. ১৫. রহস্যের মীমাংসা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন