আমার খোলা জানালাতে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আমার খোলা জানালাতে
শব্দবিহীন চরণপাতে
কে এলে গো, কে গো তুমি এলে।
একলা আমি বসে আছি
অস্তলোকের কাছাকাছি
পশ্চিমেতে দুটি নয়ন মেলে।
অতিসুদূর দীর্ঘ পথে
আকুল তব আঁচল হতে
আঁধারতলে গন্ধরেখা রাখি
জোনাক-জ্বালা বনের শেষে
কখন এলে দুয়ারদেশে
শিথিল কেশে ললাটখানি ঢাকি।

তোমার সাথে আমার পাশে
কত গ্রামের নিদ্রা আসে–
পান্থবিহীন পথের বিজনতা,
ধূসর আলো কত মাঠের,
বধূশূন্য কত ঘাটের
আঁধার কোণে জলের কলকথা।
শৈলতটের পায়ের ‘পরে
তরঙ্গদল ঘুমিয়ে পড়ে,
স্বপ্ন তারি আনলে বহন করি।
কত বনের শাখে শাখে
পাখির যে গান সুপ্ত থাকে
এনেছ তাই মৌন নূপুর ভরি।

মোর ভালে ওই কোমল হস্ত
এনে দেয় গো সূর্য-অস্ত,
এনে দেয় গো কাজের অবসান–
সত্যমিথ্যা ভালোমন্দ
সকল সমাপনের ছন্দ,
সন্ধ্যানদীর নিঃশেষিত তান।
আঁচল তব উড়ে এসে
লাগে আমার বক্ষে কেশে,
দেহ যেন মিলায় শূন্য’পরি,
চক্ষু তব মৃত্যুসম
স্তব্ধ আছে মুখে মম
কালো আলোয় সর্বহৃদয় ভরি।

যেমনি তব দখিন-পাণি
তুলে নিল প্রদীপখানি,
রেখে দিল আমার গৃহকোণে,
গৃহ আমার এক নিমেষে
ব্যাপ্ত হল তারার দেশে
তিমিরতটে আলোর উপবনে।
আজি আমার ঘরের পাশে
গগনপারের কারা আসে
অঙ্গ তাদের নীলাম্বরে ঢাকি।
আজি আমার দ্বারের কাছে
অনাদি রাত স্তব্ধ আছে
তোমার পানে মেলি তাহার আঁখি।

এই মুহূর্তে আধেক ধরা
লয়ে তাহার আঁধার-ভরা
কত বিরাম, কত গভীর প্রীতি,
আমার বাতায়নে এসে
দাঁড়ালো আজ দিনের শেষে–
শোনায় তোমায় গুঞ্জরিত গীতি।
চক্ষে তব পলক নাহি,
ধ্রুবতারার দিকে চাহি
তাকিয়ে আছ নিরুদ্দেশের পানে।
নীরব দুটি চরণ ফেলে
আঁধার হতে কে গো এলে
আমার ঘরে আমার গীতে গানে।–

কত মাঠের শূন্যপথে,
কত পুরীর প্রান্ত হতে,
কত সিন্ধুবালুর তীরে তীরে,
কত শান্ত নদীর পারে,
কত স্তব্ধ গ্রামের ধারে,
কত সুপ্ত গৃহদুয়ার ফিরে,
কত বনের বায়ুর ‘পরে
এলো চুলের আঘাত ক’রে
আসিলে আজ হঠাৎ অকারণে।
বহু দেশের বহু দূরের
বহু দিনের বহু সুরের
আনিলে গান আমার বাতায়নে।

হাজারিবাগ, ১৬ চৈত্র, ১৩০৯

সকল অধ্যায়

১. অচির বসন্ত হায় এল, গেল চলে
২. অত চুপি চুপি কেন কথা কও
৩. আকাশ-সিন্ধু-মাঝে এক ঠাঁই
৪. আছি আমি বিন্দুরূপে, হে অন্তরযামী
৫. আজ মনে হয় সকলেরই মাঝে
৬. আজি হেরিতেছি আমি
৭. আজিকে গহন কালিমা লেগেছে গগনে
৮. আপনারে তুমি করিবে গোপন
৯. আমাদের এই পল্লিখানি পাহাড় দিয়ে ঘেরা
১০. আমার খোলা জানালাতে
১১. আমার মাঝারে যে আছে কে গো সে
১২. আমি চঞ্চল হে
১৩. আমি যারে ভালোবাসি সে ছিল এই গাঁয়ে
১৪. আলো নাই, দিন শেষ হল, ওরে
১৫. আলোকে আসিয়া এরা লীলা করে যায়
১৬. ওরে আমার কর্মহারা, ওরে আমার সৃষ্টিছাড়া
১৭. ওরে পদ্মা, ওরে মোর রাক্ষসী প্রেয়সী
১৮. কত দিবা কত বিভাবরী
১৯. কাল যবে সন্ধ্যাকালে বন্ধুসভাতলে
২০. কী কথা বলিব বলে
২১. কুঁড়ির ভিতর কাঁদিছে গন্ধ অন্ধ হয়ে
২২. কেবল তব মুখের পানে চাহিয়া
২৩. ক্ষান্ত করিয়াছ তুমি আপনারে
২৪. চিরকাল একি লীলা গো
২৫. তুমি আছ হিমাচল ভারতের অনন্তসঞ্চিত
২৬. তোমার বীণায় কত তার আছে
২৭. তোমারে পাছে সহজে বুঝি
২৮. তোমায় চিনি বলে আমি করেছি গরব
২৯. দিয়েছ প্রশ্রয় মোরে, করুণানিলয়
৩০. দুয়ারে তোমার ভিড় ক’রে যারা আছে
৩১. দেখো চেয়ে গিরির শিরে
৩২. ধূপ আপনারে মিলাইতে চাহে গন্ধে
৩৩. নব বৎসরে করিলাম পণ
৩৪. না জানি কারে দেখিয়াছি
৩৫. নানা গান গেয়ে ফিরি নানা লোকালয়
৩৬. পথের পথিক করেছ আমায়
৩৭. পাগল হইয়া বনে বনে ফিরি
৩৮. বাহির হইতে দেখো না এমন করে
৩৯. বিরহবৎসর-পরে মিলনের বীণা
৪০. ভারতসমুদ্র তার বাষ্পোচ্ছ্বাস নিশ্বসে গগনে
৪১. ভারতের কোন্‌ বৃদ্ধ ঋষির তরুণ মূর্তি তুমি
৪২. ভোরের পাখি ডাকে কোথায়
৪৩. মন্ত্রেসে যে পূত রাখীররাঙা সুতো
৪৪. মোর কিছু ধন আছে সংসারে
৪৫. যদি ইচ্ছা কর তবে কটাক্ষে হে নারী
৪৬. রোগীর শিয়রে রাত্রে একা ছিনু জাগি
৪৭. শূন্য ছিল মন
৪৮. সব ঠাঁই মোর ঘর আছে
৪৯. সাঙ্গ হয়েছে রণ
৫০. সে তো সে দিনের কথা, বাক্যহীন যবে
৫১. সেদিন কি তুমি এসেছিলে ওগো
৫২. হায় গগন নহিলে তোমারে ধরিবে কে বা
৫৩. হে জনসমুদ্র, আমি ভাবিতেছি মনে
৫৪. হে নিস্তব্ধ গিরিরাজ
৫৫. হে পথিক, কোন্‌খানে চলেছ কাহার পানে
৫৬. হে বিশ্বদেব, মোর কাছে তুমি
৫৭. হে ভারত, আজি নবীন বর্ষে
৫৮. হে রাজন তুমি আমারে
৫৯. হে হিমাদ্রি, দেবতাত্মা, শৈলে শৈলে আজিও তোমার

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন