৩২. আজ রাতেই অলির প্লেন

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

আজ রাতেই অলির প্লেন, অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পারমিশান পাওয়া গেল দুপুর দেড়টার সময়। অর্থাৎ সেইসময় পর্যন্ত অলির যাওয়াটা অনিশ্চিত ছিল। পাশপোর্ট থেকে আরম্ভ করে প্রায় সব কটা সরকারি অফিসেই প্রায় শেষ মুহূর্তের আগে কাজ হয় না। অলির থেকেও তার বাবা উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় অনেক বেশী কাহিল হয়ে পড়লেন।

ব্যাঙ্কের কাজ শেষ করেই অলিকে দৌড়োতে হলো ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে একটা দর্জির দোকানে। অলি রেডিমেড পোশাক পরতে পারে না। শীতের ভয় দেখিয়ে অনেকেই অলিকে বলেছে কয়েকটা টেরিউলের ব্লাউজ ও ড্রয়ার নিয়ে যেতে, একজন চেনা দর্জির কাছে তার মাপ দেওয়া ছিল, আগেরদিন পর্যন্ত সে সেগুলো ডেলিভারি দিতে পারেনি। কিছু কিছু উপহারের জিনিসও কিনে নিয়ে যাওয়া দরকার। অনবরত এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ছোটাছুটি, অলির সঙ্গে সর্বক্ষণ রয়েছে বর্ষা।

এরই মধ্যে অলির মনে একটা অপরাধবোধ খচখচ করছে। আজ দুপুরে মমতা তাকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াবেন বলেছেন, কয়েকদিন আগেই কথা দেওয়া আছে, মমতারা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করছেন। ওঁদের বাড়িতে টেলিফোন নেই, তাই খবরও দেওয়া যায়নি, সেখানে একবার যেতেই হবে। বর্ষা বলেছে আজ সে সারাদিন থাকবে অলির সঙ্গে, একেবারে এয়ারপোর্টে তুলে দিয়ে আসবে। বর্ষাকে কি অতীনদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া যায়? মমতাকাকীমা অলির সঙ্গে নিরিবিলিতে কথা বলবেন বলে আর কারুকেই নেমন্তন্ন করেননি।

পৌনে তিনটের সময় অলি নিরুপায়ভাবে বলে উঠলো, বর্ষা, বাবলুদার মা আমাকে ওদের বাড়িতে খেতে বলেছেন, একবার না গেলে ওঁরা খুব দুঃখ পাবেন। তুই যাবি আমার সঙ্গে, একটু বসবি ওখানে?

বর্ষা রীতিমতন বিরক্ত হয়ে বললো, আজই নেমন্তন্ন? তোর মাথা খারাপ, শেষদিন কেউ নেমন্তন্ন নেয়? রাত দেড়টায় প্লেন, তোর এখন বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া উচিত, তা ছাড়া আরও কত খুঁটিনাটি দরকারি জিনিসের কথা মনে পড়বে…

পমপম আর কৌশিকদের ব্যাপারে জড়িয়ে পড়ায় এর মধ্যে অলি নিজেই আগে আর মমতার সঙ্গে দেখা করতে পারেনি। দোষটা তো অলিরই! তা ছাড়া আজ সকাল থেকে দেড়টা পর্যন্ত যে শুধু রিজার্ভ ব্যাঙ্কেই ধনা দিয়ে বসে থাকতে হবে, তা কি অলি আগে বুঝেছিল? সে ভেবেছিল, শেষ দিনটাতেই দুপুরে তার কিছু করার থাকবে না।

অলি বললো, আমাকে একবার যেতেই হবে রে, বর্ষা!

বর্ষা বললো, ঠিক আছে, তুই ঘুরে আয়, আমি তোদের বাড়িতে বসছি। একঘণ্টার বেশী দেরি করিস না!

শহরের উপান্তে মমতাদের বাড়ি যখন পৌঁছোলো অলি, তখন তিনটে বাজে। সে প্রায় হাঁফাচ্ছে!

আদালত থেকে ছুটি নিয়ে একটার সময় বাড়ি চলে এসেছেন প্রতাপ, কারুরই খাওয়া হয়নি, সবাই অপেক্ষা করছেন অলির জন্য। অলির চোখমুখের অবস্থা দেখে শিউরে উঠে মমতা বললেন, একী, কী হয়েছে তোর, আজ যাওয়া হবে না?

ব্যাঙ্ক ক্লিয়ারেন্সের ঝাটের ঘটনাটা প্রতাপ সবিস্তারে শুনলেন এবং গজরাতে লাগলেন। অনুমতি যখন দিলই, আগে দিলে কী হতো? আজই যাবার তারিখ, একটি মেয়ে একা একা অত দূর বিদেশে যাবে, তার যে কতখানি টেনশন হয়, তা কি ওই সরকারি লোকগুলো বোঝে না?

মমতা বললেন, যাক, শেষপর্যন্ত তো ব্যবস্থা হয়েছে! এখন খেতে বোস, অলি, তারপর কথা বলবো?

অলি ক্লিষ্ট মুখে বললো, আর এখন খেতে ইচ্ছে করছে না, কাকীমা!

মমতা অলির মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বললেন, সত্যি, এত দৌড়োদৗড়ি করলে কি আর খিদে থাকে? একটুখানি খেয়ে নে, যেটুকু ইচ্ছে হয়, তোর জন্য কইমাছের পাতলা ঝোল করেছি, তুই কইমাছ ভালোবাসিস, ওদেশে তো আর এসব মাছ পাওয়া যায় না!

সকাল থেকেই অলি কিছু খায়নি, খেতে বসে দেখলো, তার খারাপ লাগছে না, ভেতরে একটা চাপা খিদে রয়ে গিয়েছিল ঠিকই।

আজ অলি বিদেশে যাবে, তাই হঠাৎ সে সকলের একসঙ্গে মনোযোগের কেন্দ্রমণি হয়ে উঠেছে। মুন্নি-টুনটুনিরা একদৃষ্টিতে তার খাওয়া দেখছে।

সুপ্রীতি নেই, পরশুদিন সুপ্রীতিকে ভর্তি করতে হয়েছে নীলরতন হাসপাতালে। তাঁর কিডনিতে অসহ্য ব্যথা, অপারেশন করা ছাড়া গতি নেই।

প্রতাপ জিজ্ঞেস করলেন, তা হলে কী ঠিক হলো, অলি, তুই কি মাঝপথে লণ্ডনে থেমে যাবি?

কইমাছের কাঁটা বাছতে বাছতে অলি বললো, হ্যাঁ, লণ্ডনে তিনদিন থাকবো। বাবার এক বন্ধু আছেন, তাঁর বাড়িতে।

প্রতাপ বললেন, হ্যাঁ, রমেশ দাশগুপ্ত, আমিও চিনি, সে এয়ারপোর্টে আসবে তোকে নিতে?

অলি বললো, হ্যাঁ। বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে।

মমতা বললেন, তুতুলকেও লিখে দেওয়া হয়েছে, সেও নিশ্চয়ই এয়ারপোর্টে দেখা করতে আসবে তোর সঙ্গে। আমার তো মনে হয়, তুতুলই জোর করে তোকে নিয়ে যাবে তার কাছে।

প্রতাপ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এ বাড়ির দুটি ছেলেমেয়ে চলে গেছে বিদেশে। কেন যেন মনে হয়, তারা হারিয়ে গেছে চিরকালের মতন। ছেলেটার তো দেশে ফেরার পথ বন্ধ, আর তুতুল, সে তার মাকে এত ভালোবাসতো, সেও তার মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে না?

মমতা বললেন, দিদির অসুখের কথা কি তুতুলকে জানানো ঠিক হবে? কিডনির অপারেশন এমন কিছু ভয়ের তো না! শুধু শুধু অতদূরে বসে মেয়েটা দুশ্চিন্তা করবে!

প্রতাপ কোনো মতামত দিলেন না।

মমতা নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে বললেন, আমার তো মনে হয়, না বলাই ভালো। তুই ওসব কিছু বলিস না রে, অলি। বলবি, আমরা সবাই ভালো আছি।

অলির তৎক্ষণাৎ মনে হলো, হাসপাতালে সুপ্রীতির সঙ্গে তার একবার দেখা করে যাওয়া উচিত। সুপ্রীতি নিশ্চয়ই সেরকম আশা করে রয়েছেন। এদিকে বাড়িতে একগাদা আত্মীয়স্বজনের আসবার কথা বিকেলে, অনেকেই চেনাশুনো কারুর জন্য জিনিসপত্র পাঠাবে। তবু সন্ধের আগে খানিকটা সময় বার করতেই হবে অলিকে।

প্রতাপ এবার বললেন, মাস দেড়েক আগে তুতুল লিখেছিল, শিগগিরই সে দেশে আসবে একবার। তারপর আর তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। কী ব্যাপার কিছুই বুঝলাম না।

মমতা বললেন, তারপরেও তো তুতুলের দুখানা চিঠি এসেছে। তুমি দেখোনি বোধ হয়। ও প্রায় প্রত্যেক সপ্তাহেই চিঠি লেখে, সে বিষয়ে ও মেয়ের কোনো গাফিলতি নেই।

প্রতাপ বললেন, দুখানা চিঠি লিখেছে আমি জানি, কিন্তু তাতে দেশে ফেরার বিষয়ে তো আর কিছু উচ্চবাচ্য করেনি! দিদি অনেক আশা করেছিল, লাস্ট চিঠি পাবার পর থেকেই তো দিদির পেট ব্যথাটা বাড়লো!

মমতা বললেন, কোনো অসুবিধেয় পড়েছে নিশ্চয়ই। হয়তো ছুটি পাচ্ছে না। ওদেশে ছুটি পাওয়া খুব শক্ত না?

প্রতাপ বললেন, হ্যাঁ, ছুটি পাওয়া শক্ত। তা হলেও কেউ কি বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করবার জন্য দেশে ফেরে না।

অপ্রিয় প্রসঙ্গটা এড়াবার জন্য মমতা তাড়াতাড়ি অলিকে বললেন, তুই লণ্ডনে পৌঁছেই আমাদের একটা চিঠি দিস, কেমন?

অলি আমেরিকায় পড়াশুনো করতে যাচ্ছে বলে মমতাই যেন সবচেয়ে বেশী খুশী হয়েছেন। অলির সঙ্গে বাবলুর দেখা হবে। অলি চমকার মেয়ে, বাবলুর মতন গোঁয়ারগোবিন্দ, মাথা-গরম ছেলেকে অলি ঠিক সামলে রাখতে পারবে। আর যে কথাটা দুই পরিবারের মধ্যে আজও একবারও উচ্চারিত হয়নি, সেটা কি এবার ঘটবে না?

মাছ খাওয়া হয়ে গেছে অলির, মমতা একটা ছোট্ট বাটি করে খানিকটা পায়েস দিলেন তাকে।

অলি বললো, কাকীমা, আমি আর খেতে পারছি না। মিষ্টি খাবো না!

মমতা ঠোঁট টিপে হেসে বললেন, একটুখানি মুখে দে অন্তত।

পায়েস রাঁধবার কারণটা মমতাকে বলতে হলো না, মুন্নি বলে উঠলো, আজ কেন পায়েস রান্না হয়েছে জানো, অলিদি? আজ ছোড়দার জন্মদিন। ছোড়দা তো আর খেতে পেল না, তুমি একটু খাও, ছোড়দাকে গিয়ে বলো! ছোড়দা বোধ হয় নিজের জন্মদিনের কথা মনেই রাখে না!

মমতার মনটা প্রসন্নতায় ভরে গেল, প্রত্যেক ছেলেমেয়ের জন্মদিনেই তিনি পায়েস রান্না করেন। সেই নর্থবেঙ্গলে চাকরি করতে যাবার পর থেকেই অতীন আর বাড়িতে আসেনি, তিন তিনটে জন্মদিন সে বাড়ির বাইরে, তবু মমতা প্রত্যেক বছর তার জন্মদিনে পায়েস বেঁধেছেন। কী আশ্চর্য যোগাযোগ, অলি আজ বাইরে যাচ্ছে, আজই বাবলুর জন্মদিন, আজ অলিকে তিনি এই পায়েস খাওয়াতে পারছেন বলে কত ভালো লাগলো।

পায়েস মুখে দিতে গিয়ে কয়েক মুহূর্ত অন্যমনস্ক হয়ে গেল অলি। বাবলুদার জন্মদিন বলেই আজকের দিনে বিশেষ করে অলিকে নেমন্তন্ন করেছিলেন মমতা। যদি অলি শেষপর্যন্ত আসতে পারতো, তা হলে মমতা কত আঘাত পেতেন! এরপর পায়েসটুকু সব শেষ করে সে বললো, দারুণ ভালো হয়েছে, কাকীমা, নারকোল দিয়ে রান্না করেছেন, আর একটু দিন!

মমতা কিংবা প্রতাপ মুখ ফুটে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারেননি। মুন্নি জিজ্ঞেস করলো, ছোড়দাকে তোমার যাবার কথা জানিয়েছে তো? ছোড়দা উত্তর দিয়েছে?

অলি লাজুক ভাবে বললো, হ্যাঁ। বস্টন থেকে নিউ ইয়র্ক এসে আমাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করবে লিখেছে। লণ্ডন থেকে আমি ফ্লাইট নাম্বার আর তারিখ জানিয়ে দেবো।

প্রতাপ বললেন, মমো, এবার অলিকে ছেড়ে দাও, ওর নিশ্চয়ই আরও অনেকের সঙ্গে দেখা করবার আছে।

মমতা উঠে গিয়ে একটা প্যাকেট নিয়ে এসে বললেন, এই নে, অলি, এটা আমি তোর জন্য এনেছি, তুই না বলতে পারবি না!

অলি প্রায় আঁতকে উঠে বললো, এত দামি টাঙ্গাইল শাড়ি! কাকীমা, আমার অনেক শাড়ি জমে গেছে, বেশী নিতে পারবো না, এটা মুন্নিকে দিন!

মমতা ছদ্ম ধমক দিয়ে বললেন, তুই নে তো! তোর নাম করে কিনেছি, তুই পরবি ওখানে গিয়ে–

প্রতাপ বললেন, সুতির শাড়ি কি ওখানে পরার স্কোপ পাবে?

অলি শাড়িটা হাতে নিয়ে বললো, হ্যাঁ, তা পরা যাবে। ওখানে বুঝি গরম পড়ে না? রঙটা খুব সুন্দর, এটা আমি নিয়ে যাবো, কাকীমা!

মুন্নি বললো, অলিদি, তুমি আজই এটা পরে যেও।

মমতা এরপর খানিকটা কুণ্ঠিতভাবে বললেন, তোর কি অনেক জিনিসপত্তর হয়ে গেছে অলি? বাবলুর জন্য দু-একটা জিনিস নিয়ে যেতে পারবি?

অলি বললো, হ্যাঁ, হ্যাঁ, কেন নিতে পারবো না? কুড়ি কেজি পর্যন্ত অ্যালাউড, কম নাকি?

মমতা বললেন, বাবলুর জন্য একটা শার্ট, আর এক শিশি ঘি। ও ঘি দিয়ে গরম ভাত খেতে ভালোবাসে, ও দেশে মাখন পাওয়া গেলেও ঘি তো পাওয়া যায় না!

মুন্নি বললো, আমি ছোড়দার জন্য ছখানা রুমাল দেবো। আমেরিকায় সুতির রুমালের খুব দাম। ফুলদির জন্য ব্লাউজ পীস আর একজোড়া দুল।

মমতা বললেন, বাবলুর জন্য একটু আচার আর পাঁপর আর…

প্রতাপ এবার বাধা দিয়ে বললেন, আর বাড়িও না, আর বাড়িও না। মেয়েটার ঘাড়ে কত কী চাপাবে?

মমতা বললেন, তুতুলের জন্য একটা শাড়ি তো নিতেই হবে। সেটাও আমি আগেই কিনে রেখেছি।

প্রতাপ বললেন, তুতুল দেশে আসবার কথা লিখেছিল, যদি শিগগির আসতে পারে, তা হলে আর তার জন্য শাড়ি পাঠানোর কী দরকার?

মমতা ঝঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন, তবু পাঠাতে হয়, তুমি বোঝো না, সোঝো না, চুপ করো তো!

অলি তুতুলের শাড়িটাও হাত পেতে নিল।

প্রতাপ বললেন, ব্যস, এ পর্যন্ত। আচার পাঁপর-টাপর আর দিতে হবে না। ওদের কাস্টমসে অনেক সময় ফুড মেটেরিয়াল অ্যালাউ করে না, কাগজে পড়েছি।

অলি বললো, না, এগুলোও দিয়ে দিন কাকীমা। নিয়ে তো যাই, কাস্টমস যদি অ্যালাউ না করে তখন বলবো, তোমরা তা হলে রাখো। নিজেরাই খাও!

মমতা বললেন, তুতুল আচার খায় না। ঘিয়ের শিশি থেকে তুই অর্ধেকটা তুতুলকে ঢেলে নিতে বলিস।

বিদায় নেবার সময় মমতা অলিকে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুই অতদূরে যাবি, জীবনে। যে-মেয়ে একা একা কৃষ্ণনগরে পর্যন্ত যায়নি। খুব সাবধানে থাকিস অলি, আর আমার ছেলেটাকে বলিস–

ছেলেকে কী বলতে হবে তা আর জানাতে পারলেন না, মিতা, হঠাৎ তাঁর চোখে জল এসে গলা বুজে গেল। কান্নায় কান্না টানে। অলিও সামলাতে পারলো না নিজেকে। কিসের জন্য এই কান্না কে জানে!

প্রতাপ অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, অলি, আর দেরি করিস না। তোর বাবার সঙ্গে কথা হয়ে আছে, রাত্তিরে আমিও যাবো এয়ারপোর্টে।

বাবলুর সময়ে প্রতাপ যেতে পারেননি। একটা চোরাই জিনিসের মতন বাবলুকে পাচার করা হয়েছিল গোপনে। তাও ট্রেনে তাকে আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বম্বে। বিমানবিহারী প্রতাপকে হাওড়া স্টেশনেও যেতে দেননি, যদি পুলিশ প্রতাপের ওপর নজর রেখে থাকে, তা হলে একটা ঝুঁকির ব্যাপার হবে। প্রতাপকে সেদিন অন্যদিনের মতই বসতে হয়েছিল আদালতের এজলাশে। পাঁচ-পাঁচটা মামলার হিয়ারিং শুনতে হয়েছিল ধৈর্য ধরে।

আজ অলি যাবে, আজকের দিনটা প্রতাপের পক্ষে ভালো নয়। দিদিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে বলে মনটা ভালো নেই। হাসপাতালের বিশ্রী নোংরা পরিবেশে, জেনারেল ওয়ার্ডে সাত-সতেরো রকম রুগীদের সঙ্গে শুয়ে আছেন সুপ্রীতি। প্রথমদিন সেখানে দিদিকে রেখে আসার সময় প্রতাপের বুক মুচড়ে মুচড়ে উঠছিল। মালখানগরের ভবদেব মজুমদারের কন্যা, বরানগরের একদা বিখ্যাত সরকার পরিবারের বধূ, সুপ্রীতিকে বাধ্য হয়েই দিতে হয়েছে জেনারেল ওয়ার্ডে, অনেক চেষ্টা করেও ক্যাবিন পাওয়া যায়নি। দিদিকে নার্সিংহোমে রাখার সাধ্য নেই প্রতাপের। কেউ কি বিশ্বাস করবে যে এই মহিলারই মেয়ে বিলেতের ডাক্তার! সুপ্রীতি প্রতাপকে মাথার দিব্যি দিয়েছেন, তাঁর অসুখের কথা যাতে কিছুতেই তুতুলকে চিঠিতে জানানো না হয়।

কদিন ধরে প্রতাপের নিজের শরীরটাও ভালো যাচ্ছে না। মাথাটা ঝিম ঝিম করে মাঝে মাঝে। এটা তাঁর একটা পুরোনো রোগ, রাস্তায় ঘাটে এরকম হলেই শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। এই অস্বস্তিটার জন্য রাত্তিরে ঘুমও হচ্ছে না ভালো। এখন দিদির অসুখ, প্রতাপ নিজের এই শারীরিক অসুবিধের কথা কারুকে জানাননি।

তবু তিনি অলিকে বিদায় জানাতে এয়ারপোর্টে যাবেনই ঠিক করেছেন। অলিকে তিনি খুব পছন্দ করেন। অলির মুখের মধ্যেই এমন একটা পরিচ্ছন্নতার ছাপ আছে, যা আজকাল খুবই দুর্লভ, যেন সে জানেই না অন্যায় কাকে বলে।

অলির সঙ্গে প্রতাপও বাইরে বেরিয়ে এলেন। চারটে বেজে গেছে, তিনি হাসপাতালে দিদির কাছে যাবেন। মমতা-মুন্নিরা সকালে গিয়েছিল। এ বেলা প্রতাপের যাওয়ার পালা।

অলি জিজ্ঞেস করলো, কাকাবাবু, আপনাকে আমি খানিকটা পৌঁছে দেবো?

প্রতাপ বললেন, নারে, আমি এই তো ঢাকুরিয়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে চলে যাবো। শিয়ালদায়, তাতেই সুবিধে হবে। তুই কতদিন বিদেশে থাকবি, অলি, কিছু ঠিক করেছিস?

অলি বললো, দু বছরের বেশী একদিনও নয়! আপনি লিখে রাখতে পারেন, প্রতাপকাকা। ওখানে গিয়ে তো আমাকে আবার এম এ করতে হবে। এক বছরে বোধ হয় শেষ করে উঠতে পারবো না। পি এইচ ডি করার বিন্দুমাত্র বাসনা আমার নেই। দু একটা পাবলিশিং ফার্মে ট্রেনিং নেবার ইচ্ছে আছে বরং।

প্রতাপ বললো, হ্যাঁ, তাই করিস। খুব বেশীদিন থাকিস না। তুই তোর বাবা-মা’র অনেকখানি ভরসা। তবে, বাবলুকে তুই বলিস, সে যেন হঠাৎ ফিরে আসার চেষ্টা না করে। দেশের অবস্থা কীরকম, তুই তো দেখেই যাচ্ছিস। পুলিশ এখন একটু নকশাল গন্ধ পেলেই ছেলে গুলোকে খুন করছে। আরও অন্তত বছর দুয়েক কাটুক …

অলি জিজ্ঞেস করলো, প্রতাপকাকা, তুতুলদির মা’র অসুখটা কী খুব সিরিয়াস? তুতুলদির সঙ্গে দেখা হলে তো জিজ্ঞেস করবেই।

উত্তর দেবার জন্য প্রতাপ একটু সময় নিলেন। একটা সিগারেট ধরিয়ে যে ছেড়ে বললেন, ডাক্তাররা তো বলছেন, খুব একটা ভয়ের কিছু নেই। তোর কাকীমা যে বললো, তুতুলকে কিছু না জানাতে, দিদিরও সেটাই ইচ্ছে। না জানানোই ভালো বোধ হয়। তুতুল ওখানে একজনকে বিয়ে করতে চেয়েছিল, সে ব্যাপারে তুই কিছু জানিস?

অলি দু দিকে মাথা নাড়লো।

প্রতাপ বললেন, তুতুল আমাদের মতামত না নিয়ে আগেই একজনকে পছন্দ করেছে, সেইজন্যই দিদির অভিমান হয়েছে খুব। তুতুল তো সেরকম মেয়ে ছিল না। যাই হোক, সে সম্পর্কেও তুতুল আর কিছু লেখে না।

পরক্ষণেই প্রতাপ ব্যস্ত হয়ে বললেন, তুই আজ যাচ্ছিস, তোকে এত সব কথা ভাবতে হবে তো! তুই যা, বাড়িতে সবাই নিশ্চয়ই ব্যস্ত হয়ে উঠেছে এতক্ষণে। তোর মায়ের সঙ্গেও তো খানিকটা সময় কাটাবি!

গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে তুতুলকে উঠতে দিয়ে প্রতাপ বললেন, গিয়েই কিন্তু চিঠি লিখিস!

অলি বাড়িতে এসে দেখলো বর্ষা ছাড়াও তার কলেজের কয়েকজন বন্ধুবান্ধবী এসে বসে আছে তার ঘরে। দোতলায় বাবার কাছে এসেছেন তাঁর কয়েকজন বন্ধু এবং তাঁদের স্ত্রীরা তিনতলায় মায়ের কাছে। সারা বাড়ি ভর্তি মানুষজন, যেন একটা উৎসব।

নিজের বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে পারলো না অলি, মা তাকে ডেকে পাঠালেন। মায়ের ঘরে মহিলাদের কয়েকজনের মুখচেনা, কয়েকজন একেবারে অপরিচিতা। এদের সকলেরই ছেলে কিংবা মেয়ে-জামাই কিংবা ভাই-টাই কেউ থাকে বিলেত–আমেরিকায়। প্রত্যেকেরই হাতে একটি করে প্যাকেট। অলি দিশেহারা হয়ে যাচ্ছে, এতসব জিনিস, এত ঠিকানা, সে সব সামলাবে কী করে?

মুখের ওপর কারুকেই কোনো ব্যাপারে না বলতে পারে না অলি, মায়ের নির্দেশে সবাইকেই প্রণাম করে। সকলেরই জিনিসপত্র এক জায়গায় রেখে দিচ্ছে অলি। সে নিচ্ছে একটা সুটকেশ, এতগুলি প্যাকেট দুটো সুটকেশেও আঁটবে না। মা-ও কিছু বুঝছেন না, শেষ পর্যন্ত বাবার সাহায্য নিতে হবে অলিকে।

সম্ভ্রান্ত চেহারার মহিলারা শুধু যে আপনজনের জন্য উপহার দ্রব্য দিচ্ছেন অলিকে তাই-ই নয়, উপদেশও দিচ্ছেন অনেক। অলি মাথা নেড়ে শুনে যাচ্ছে সব।

একজন এমনকি বলে উঠলেন, এই বয়েসের মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে বিদেশে পাঠাচ্ছো, কল্যাণী, তোমার সাহস তো কম নয়! শেষে যদি তোমার সাহেবজামাই হয়?

কয়েকজন মহিলা মিষ্টির বাক্সও এনেছেন। তাঁরা ওই মিষ্টি কল্যাণীকে দেননি, অলির হাতে তুলে দিয়ে বলছেন, তোমার জন্য এনেছি! অলি কি আজই এই সব মিষ্টি খাবে, না সঙ্গে নিয়ে যাবে?

কৌশিক-পমপমদের ঘাটশিলায় পৌঁছে দিয়ে অলি কলকাতায় ফিরে এসেছে মাত্র চারদিন আগে। এর মধ্যে গত দিন সাতেকে সে এত মিথ্যে কথা বলেছে, তার এতদিনের জীবনেও সেরকম বলতে হয়নি। সে মার কাছে মিথ্যে কথা বলেছে, বাবার কাছে মিথ্যে কথা বলেছে। মিথ্যে কথা সম্পর্কে তার মনের মধ্যে একটা ঘৃণার ভাব ছিল, এখন সে নিজের কাছে পরিষ্কার থাকার জন্য অনবরত মনে মনে বলে যাচ্ছে উইলিয়াম ব্লেকের দুটো লাইন :

A truth told with bad intent
is worse than all lies that you can invent…

সত্যিকথা বলা অনেক সময় ক্ষতিকর। অলি এবার প্রত্যক্ষভাবে নিজে তা বুঝেছে। পমপমের কথায় সাক্ষ্য দেবার জন্য সে কৌশিকের কাছে মানিকদার নামে মিথ্যে কথা বলেছে, সে সময় সত্যি কথা বললে কৌশিককে বাঁচানো যেত না। কৌশিকের সারা শরীরে ব্যাণ্ডেজ বলে ট্রেনে নেবার সময় কৌশিককে শাড়ি পরিয়ে মেয়ে সাজানো হয়েছিল, নইলে তার সারা শরীর ঢাকা যেতো না। ট্রেনের কামরার এক কোণে কৌশিক মাথায় ঘোমটা দিয়ে ঘুমের ভান করে পড়েছিল। খড়গপুর স্টেশনে দাঁড়াবার পরেই সেই কামরায় তিনজন পুলিশের লোক উঠেছিল। এমনই চমকপ্রদ ব্যাপার, তাদের মধ্যে একজন চিনতে পারলো অলিকে। অলি কিন্তু পুলিশটিকে চেনে না। কিন্তু সে অলির নাম ঠিকঠাক বললো, তার বাবাকে চেনে, অলিদের বাড়িতে সে ছাত্রজীবনে এসেছে কয়েকবার, অলির বাবা নাকি তার পড়াশুনোর ব্যাপারে কিছু সাহায্য করেছিলেন। সেই লোকটি অলিকে যেই জিজ্ঞেস করলো যে সে কোথায় যাচ্ছে, অমনি অলি উত্তর দিয়েছিল, সে তার এক অসুস্থ দিদিকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি রাঁচিতে পৌঁছে দিতে যাচ্ছে। কী করে যে এই উত্তরটা সেই মুহূর্তে তার মাথায় এলো, তা সে নিজেই এখনো বুঝতে পারছে না। অদ্ভুত কাজ হলো তাতেই। পুলিশ তিনটি কামরার কিছু লোকের ঘুম ভাঙিয়ে নানা কথা জিজ্ঞেসবাদ করছিল, অলিদের কাছে আর ঘেষলোই না। দামামা ধ্বনির মতন শব্দ হচ্ছিল তখন অলির বুকের মধ্যে, কিন্তু তার মুখ দেখে কেউ কি কিছু বুঝেছে? পুলিশের সেই ছেলেটিকে মিষ্টি হেসে অলি বলেছিল, আপনি আসবেন একদিন আমাদের বাড়িতে, বাবাকে বলবো আপনার কথা!

সেইসময় সত্যি কথা বলাটা মানুষ খুন করার মতন অপরাধ হতো না? দারুণ আহত ও অসুস্থ হলেও কৌশিক তার সঙ্গে অস্ত্রটা রেখেছিল এবং সে ঠিক করেই রেখেছিল, পুলিশের কাছে সে নিরীহভাবে ধরা দেবে না, পুলিশ তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে এলেই সে গুলি চালাতে। কী একটা সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার হতো তা হলে!

এমনকি বর্ষাকেও অলি সঠিক বলেনি, সে পমপমের সঙ্গে কোথায় গিয়েছিল। ঘাটশিলা নামটাই উচ্চারণ করা নিষিদ্ধ। একটা বিরাট গোপনীয়তার বোঝা সে বহন করে চলেছে। আজ সারাদিন ধরে তার এত ব্যস্ততা, এত লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে, তবু ভেতরে ভেতরে সে অনবরত ভেবে চলেছে কৌশিক-পমপমদের কথা। নিশ্চয়ই ওদের আর কোনো বিপদ হয়নি।

একবার বাবার ডাক শুনে দোতলায় নেমে যাচ্ছে অলি, অচেনা প্রেীদের সামনে লাজুক লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে আঙুল খুঁটতে খুটতে অবান্তর কথা শুনে যেতে হচ্ছে। একবার দৌড়ে আসছে বন্ধুদের কাছে, সেখানে শুনতে হচ্ছে নানারকম রসিকতা। অলি ঠোঁটে হাসি ফোঁটাচ্ছে বটে কিন্তু কিছুতেই যেন যোগ দিতে পারছে না। এরই মধ্যে মায়ের ঘরে এক দূর সম্পর্কের পিসিমা একটা হাস্যকর ব্যাপার করলেন।

এই পিসিমা এ বাড়িতে বিশেষ আসেন না। এর কোনো ছেলেমেয়ে আত্মীয়াও লণ্ডন বা আমেরিকায় নেই। কিন্তু ইনি এসেছেন একটি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে। তাঁর ঝোলার মধ্যে একখানা জগদীশবাবুর বাংলা গীতা। সেই গীতা ছুঁয়ে অলিকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে সাহেবদের দেশে গিয়ে সে কোনোদিন কোনোক্রমেই গো-মাংস স্পর্শ করবে না।

গোরুর মাংস খাওয়া না-খাওয়া সম্পর্কে অলি কিছু চিন্তা করেনি। গোরুর মাংস হয়তো সে এমনিতেই খেত না কোনোদিন, কারণ সে কোনো মাংসই বিশেষ পছন্দ করে না। কিন্তু এত প্রতিজ্ঞার বাড়াবাড়ির কী আছে? কিন্তু বাতিকগ্রস্ত ওই পিসিমাটির ধারণা, এ বংশের একজন কেউ গো-মাংস ভক্ষণ করলেই সমস্ত বংশটির জাত যাবে।

কল্যাণীও অতিশয় ভদ্র বলে কারুকে মুখের ওপর কিছু কঠিন কথা বলতে পারেন না। এই পিসিমাটিকেও বাধা দিতে পারছেন না তিনি। মাস কয়েক আগে হলেও অলি গীতা ছুঁয়ে এরকম একটা প্রতিজ্ঞা করতে দ্বিধা করতো, কিন্তু গত কয়েকটা দিনে সে অনেক বেশী অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছে, সে বুঝেছে, সত্য মিথ্যে, ন্যায়-অন্যায়ের ব্যাখ্যা নির্ভর করে বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে, এবং সেই সব ব্যাখ্যার সামান্য গোঁড়ামিতে মানুষের জীবন-মৃত্যুও নির্ভর করতে পারে। সুতরাং এইরকম একটা প্রতিজ্ঞা করা না করাতেও কিছু আসে যায় না।

সে বিদেশে যাচ্ছে একাধিক গোপনীয়তার বোঝা নিয়ে। পমপম বারবার বলে দিয়েছে, মানিকদার মৃত্যুর কথাটা এখন যেন অতীনকেও জানানো না হয়। মানিকদা অ্যাবসকণ্ড করে আছেন, এইটুকু জানানোই যথেষ্ট।

লণ্ডনে গিয়ে তুতুলদিকে জানানো চলবে না তার মায়ের অসুখের কথা। কিন্তু আমেরিকায় বাবলুদার কাছে সে মানিকদার খবরটা কতদিন গোপন রাখবে? বাবলুদার সামনে সে মিথ্যে অভিনয় চালিয়ে যেতে পারবে কী? তুতুলদির কাছে পারলেও বাবলুদাকে নিয়েই তার ভয়!

সকল অধ্যায়

১. ০১. পেঁজা তুলোর মতন পাতলা তুষার
২. ০২. সিদ্ধার্থ এসে অতীনকে
৩. ০৩. সাদা পাজামা আর তাঁতের পাঞ্জাবি পরা
৪. ০৪. কৃষ্ণনগরে বিমানবিহারীদের বাড়ি
৫. ০৫. কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর
৬. ০৬. অতীনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও
৭. ০৭. দরজা খোলার জন্য
৮. ০৯. উত্তর ও মধ্য কলকাতার রাস্তাঘাট
৯. ০৮. আরিচা ঘাটে বিশাল যমুনা নদীর দিকে
১০. ১০. পিজি হাসপাতালের গেটের সামনে
১১. ১২. সরকারি মতে বসন্ত এসে গেছে
১২. ১১. হেনা দু’বার ডাকতেই মামুন
১৩. ১৩. অতীন প্যান্টে বেল্ট বেঁধে
১৪. ১৪. দরজায় বেল শুনে
১৫. ১৫. বড় তেঁতুল গাছটার নিচে
১৬. ১৬. ছেলের প্যান্ট সেলাই
১৭. ১৭. জানলার পর্দাটা সরালেই
১৮. ১৮. কতদিনই বা আগের কথা
১৯. ১৯. জাহানারা ইমাম খেতে বসেছেন
২০. ২০. প্রায় হাজারখানেক নারী-পুরুষ
২১. ২২. গোল্ডার্স গ্রীনে তুতুলের অ্যাপার্টমেন্ট
২২. ২১. পেট্রাপোল স্টেশান দিয়ে
২৩. ২৩. ক্রিস্টোফার রোডে বিরাট লম্বা লাইন
২৪. ২৪. চার্লস নদীর এক পারে
২৫. ২৫. ল্যাবরেটরিতে কাজ করছে অতীন
২৬. ২৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গাড়ি
২৭. ২৭. শেষ পর্যন্ত অলিকে
২৮. ২৮. জ্বর কিংবা কোনো শক্ত অসুখ
২৯. ২৯. খবরের কাগজের জন্য একটা প্রবন্ধ
৩০. ৩০. পুলিস হারীতকে মারধর করলো না
৩১. ৩২. আজ রাতেই অলির প্লেন
৩২. ৩১. আজ ছুটির দিন
৩৩. ৩৩. বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে
৩৪. ৩৪. দু শো-আড়াই শো জন যুবক
৩৫. ৩৫. তার নাম তোতা মিঞা
৩৬. ৩৬. হাসপাতাল থেকে তুতুল ফিরে এসেছে
৩৭. ৩৭. সকাল থেকেই বৃষ্টির বিরাম নেই
৩৮. ৩৮. প্রথমে মামুনের মনে হলো
৩৯. ৩৯. এক একটা গান হঠাৎ
৪০. ৪০. ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও কয়েকটি আর্ট গ্যালারি
৪১. ৪১. সারাদিন একটানা বৃষ্টি পড়ছে
৪২. ৪২. আগরতলা থেকে প্লেনে চাপলো সিরাজুল
৪৩. ৪৩. দেশ থেকে লন্ডনে যাওয়ার সময়
৪৪. ৪৪. বাবার আমল থেকে রয়েছে চাবুকটা
৪৫. ৪৫. আজ কাজের দিন
৪৬. ৪৬. পঁচিশে মার্চের পর টিক্কা খানের নাম
৪৭. ৪৭. ছোট ছোট শহরের বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮. ৪৮. প্রতিমার গায়ে রং লাগানো হয়ে গেছে
৪৯. ৪৯. চুরুটটা নিভে গেছে অনেকক্ষণ
৫০. ৫০. হঠাৎ লণ্ডনের ব্যবসা গুটিয়ে
৫১. ৫২. দুপুরবেলা মমতাদের খাওয়া-দাওয়া
৫২. ৫১. দরজাটা সামান্য ফাঁক করে
৫৩. ৫৩. প্রতাপের বাড়ি বেশ দূরে
৫৪. ৫৪. এ বছর এত বৃষ্টি
৫৫. ৫৫. আবিদ হোসেনের ঘরে
৫৬. ৫৬. মেয়েদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা
৫৭. ৫৭. হলুদ ও কমলা রঙের শাড়ি পরা
৫৮. ৫৮. ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা
৫৯. ৫৯. একটা নদীর বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে
৬০. ৬০. টাঙ্গাইল শহর এখন সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত
৬১. ৬১. বেইরুটে প্লেন এগারো ঘণ্টা লেট
৬২. ৬২. সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে
৬৩. ৬৪.২ নিউ জার্সি টার্ন পাইকের কাছে
৬৪. ৬৩. লাল রঙের গাড়িটার ওপর
৬৫. ৬৪.১ উপসংহার : বিকেল শেষ হবার মুখে
৬৬. ৬৪.৩ সেগুন বাগিচার অতবড় বাড়িটা
৬৭. ৬৪.৪ হাজরা পার্কের কাছে
৬৮. ৬৪.৫ তারপর কী যেন
৬৯. ৬৪.৬ হরিদ্বারে যাওয়ার ব্যাপারটা
৭০. ৬৪.৭ টুং করে একটা শব্দ হতেই
৭১. ৬৫. লেখকের কথা
৭২. ৬৪.৮ হোটেলে চেক ইন করে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন