০৯. উত্তর ও মধ্য কলকাতার রাস্তাঘাট

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

এক সময় উত্তর ও মধ্য কলকাতার রাস্তাঘাট খুব ভালোই চিনতেন মামুন, চব্বিশ বছরের ব্যবধানে সব কিছুই যেন ঝাঁপসা হয়ে গেছে। এখন কলকাতা একটা বিদেশী শহর, এতগুলি বছরে কত পরিবর্তন হয়েছে কে জানে, এই শহর কি তাঁদের সহৃদয়ভাবে গ্রহণ করবে? কোথায় থাকবেন কোনো ঠিক নেই। বালুরঘাট থেকে মালদা হয়ে কলকাতায় চলে এসেছেন শুধু এই ভরসায় যে, এর মধ্যেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতা, পূর্ব পাকিস্তানের বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী ও অধ্যাপক কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। কিন্তু এত বড় শহরে কোথায় সন্ধান পাবেন তাঁদের?

আগে একটা মাথা গোঁজার জায়গা ঠিক করা দরকার। হোটেল ছাড়া গতি নেই। কলকাতার হোটেলে মুসলমানদের থাকতে দেয় তো? ছেচল্লিশের দাঙ্গার স্মৃতি অবধারিতভাবে মনে পড়ে, এবং গা ছমছম করে ওঠে। মামুনদের ছাত্র বয়েসে চৌরঙ্গি, পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলকে বলা হত সাহেব পাড়া, আর পার্ক সার্কাস, বেকবাগান, কলুটোলা, মীজাপুর, কলাবাগান, রাজাবাজার ইত্যাদি অঞ্চলগুলো ছিল প্রধানত মুসলমান পাড়া। সেই সব অঞ্চলে অনেক মুসলমানদের হোটেল ছিল। কিন্তু এখনও কি সেই সব হোটেল আছে? অধিকাংশ হোটেলই তো ছিল অবাঙালী মুসলমানদের।

বাস বা ট্রামে উঠলে ঠিক দিশা পাবেন না, এই জন্য মামুন বাধ্য হয়ে একটা ট্যাক্সি নিলেন। দাড়িওয়ালা, বলিষ্ঠকায় একজন পাঞ্জাবী সদারজী সেই ট্যাক্সির চালক, তার কোমরে কৃপাণ। লাহোর করাচী থেকে বিতাড়িত শিখদের নিশ্চয়ই জাতক্রোধ আছে পাকিস্তানীদের সম্পর্কে, এই লোকটাও সেই রকম কেউ নাকি? মামুন যথাসম্ভব কণ্ঠস্বর স্বাভাবিক রেখে বললেন, চলিয়ে বেকবাগান।

হেনা আর মঞ্জুর মুখে উৎকণ্ঠার কালো ছায়া। তারা বারবার মামুনকে দেখছে চকিত দৃষ্টিতে। এই এক অচেনা বৃহৎ শহরে তাদের সামনে পড়ে আছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। মঞ্জু ভেতরে ভেতরে দারুণ অনুতাপে দগ্ধ হচ্ছে, এখন মনে হচ্ছে, ঢাকা ছেড়ে চলে আসা তার উচিত হয়নি। আর কি কোনোদিন সে তার স্বামীকে ফিরে পাবে? বাবুল যেন ইচ্ছে করেই তাকে দূরে সরিয়ে দিল। ঢাকায় যদি এত বিপদ, তা হলে বাবুল কেন থেকে গেল সেখানে? মামুনমামাকে সে একটুও পছন্দ করে না, তবু মামুনমামার সঙ্গেই তাকে পাঠিয়ে দেবার এত আগ্রহ কেন তার?

মামুন কৃত্রিম উৎসাহ দেখিয়ে বললো, এই যে হাওড়া ব্রীজ দেখছিস তোরা, দ্যাখ মাঝখানে কোনো সাপোর্ট নাই, এত বড় ঝুলন্ত সেতু এশিয়ায় আর নাই। ঐ দ্যাখ কত লোক এই সাত সকালেই গঙ্গার পানিতে ডুব দিতে এসেছে, হিন্দুরা মনে করে গঙ্গায় তিনবার ডুব দিলেই সব পাপ দূর হয়ে যায়! ঐ পাড়টা হলো বড়বাজার, মাউড়া ব্যবসায়ীদের বড় বড় দোকান।

মঞ্জু জিজ্ঞেস করলো, মামুনমামা, বেকবাগানে তোমার চেনা কেউ আছে?

মামুন উত্তর দিতে ইতস্তত করলেন। কলেজ জীবনে তাঁর অনেক হিন্দু বন্ধু ছিল। ভারত সীমান্তে পা দেবার পর থেকেই তাঁর মনে পড়ছে তাঁর এককালের ঘনিষ্ঠ বন্ধু প্রতাপ মজুমদারের কথা। কিন্তু দীর্ঘকাল কেউ কারুর খোঁজ রাখেননি।

মামুন বললেন, চেনা তো অনেকেই আছে, আস্তে আস্তে খুঁজে বার করতে হবে।

তারপর তিনি সুখুর কাঁধ চাপড়ে বললেন, এই দ্যাখ ট্রাম। আগে তো কখনো ট্রাম দেখিস নাই। কেমন, সুন্দর না?

সুখু বিজ্ঞের মতন বললো, ট্রাম তো ইস্টিমারের মতন। মাটির উপরে চলে!

মামুন বললেন, ঠিক বলেছিস! আর ঐ দ্যাখ, দুতলা বাস!

হেনা বললো, বাবা, কইলকাতায় এত মানুষ?

এখন মাত্র সকাল সওয়া ছ’টা, তবু পথে মানুষের স্রোত শুরু হয়ে গেছে। ব্রীজ শেষ হবার পর হ্যারিসন রোডের মুখটায় রিকশা, ঠ্যালাগাড়ি ও ঝাঁকা মুটেদের জটলা পাকানো। এইটুকু এসেই মামুন উপলব্ধি করেছেন যে তাঁর যৌবনের সেই সুন্দর, ঝকঝকে, প্রাণবন্ত শহরের সঙ্গে এখনকার কলকাতার বিশেষ মিল নেই। বাড়িগুলির চেহারা মলিন, রাস্তাগুলো হাড় বার করা, আর যেদিকেই চোখ যায়, শুধু মানুষ, অসংখ্য মানুষ।

বেকবাগান ও পার্ক সার্কাস অঞ্চল ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটা ছোটখাটো হোটেল পাওয়া গেল। নাম ‘হোটেল মদিনা’। কাছেই একটি মসজিদ, সেই মসজিদ থেকে তখন মাইক্রোফোনে আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

হোটেলের মালিকের মুখে উর্দ শুনে মামুন হতচকিত হয়ে গেলেন। তাঁর ধারণা ছিল, পার্টিশানের পর অবাঙালী মুসলমানরা সবাই কলকাতা ছেড়ে পালিয়েছে। তা তো সত্যি নয়। দেখা যাচ্ছে। এখানে এখনো এরা ব্যবসা চালায়? আশেপাশের বস্তিও মুসলমানদের।

তিনখানা বেড়ওয়ালা একটা বড় রুম পাওয়া গেল, ভাড়া দৈনিক পঞ্চান্ন টাকা। খাওয়ার। খরচ আলাদা। মামুনের কাছে যা রেস্ত আছে, তাতে দশ বারোদিনের বেশি চলবে না। মঞ্জুর হাতে দুটো সোনার বালা আর হেনার কানে দুটো মুক্তোর দুল, এইগুলো বিক্রি করলে কিছু পাওয়া যাবে, কিন্তু তারপর?

একটি অল্প বয়েসী ছোকরা তাদের নিয়ে এলো দোতলার ঘরে। দেওয়ালের রং ফাটা ফাটা, অন্ধকার-অন্ধকার ভাব, ঘরের মধ্যে আরশোলার ডিমের গন্ধ। মঞ্জু আর হেনার ঘর পছন্দ হয়নি, তবু মামুন তাদের বোঝালেন যে আপাতত এখানেই কয়েকদিন থাকতে হবে। দু’একদিন বিশ্রাম নেওয়া যাক, তারপর খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে অন্য কোথায় যাওয়া যায়।

ছোকরাটিকে একটা টাকা বকশিশ দিয়ে তিনি বললেন, একটু জল খাওয়া তো বাবা, বড় তেষ্টা পেয়েছে। কী গরম এখানে!

ছোকরাটি টেবিলের ওপর রাখা একটি টিনের জগে টোকা মেরে বললো, সাব, এতে পানি ভরা আছে। চা-নাস্তা খেতে হলে আপনাদের নিচে যেতে হবে। এই হোটেলে রুম সার্ভিস পাবেন না।

মামুন হাসলেন। বডার পার হবার আগে, দারুণ সঙ্কট আর উত্তেজনার মধ্যেও এস ডি ও শামসুদ্দীন সাহেব শিখিয়ে দিয়েছিলেন, ইন্ডিয়ায় গিয়ে আর পানি বলবেন না, জল বলবেন। ওরা পানি শুনলে ভুরু কুঁচকায়। সেই থেকে মামুন হিলির ডাক বাংলোয়, বালুরঘাটে, মালদায়, ট্রেনে সব সময় সচেতনভাবে পানির বদলে জল বলে এসেছেন। অথচ, কলকাতার হোটেলের এক বেয়ারা তাঁর মুখের ওপর পানি বলে গেল!

মামুনদের ছাত্র বয়েসে জলপানি বলে একটা কথা প্রচলিত ছিল। স্কলারশিপের বাংলা। হয়তো হিন্দু-মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের ছাত্রদের কথা ভেবেই শব্দটা তৈরি করা হয়েছিল। অনেকদিন মামুন জলপানি শব্দটা শোনেননি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর হিন্দু আর মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মিলনের যে-কোনো প্রস্তাবই অপরাধ বলে গণ্য করা হত। পশ্চিম পাকিস্তানীদের চোখে হিন্দু মাত্রই কাফের এবং পাপের সঙ্গী। বাঙালী মুসলমানদের তারা আধা হিন্দু মনে করেই তো ঘৃণা করেছে! ভারত অর্থাৎ ইন্ডিয়াতেও নিশ্চয়ই তার বিপরীত ধারণাই গড়ে উঠেছে।

হেনা একটা বন্ধ জানলা ঠেলে ঠেলে খুলে দিয়ে বললো, বাবা, কইলকাতা শহরে, কী রকম যেন একটা গন্ধ।

মামুন জিজ্ঞেস করলেন, কী রকম গন্ধ রে? দুবার জোরে জোরে শ্বাস টেনে, ভুরুতে ঢেউ খেলিয়ে বললো, কী জ

যায় না, তবে অন্য রকম, ঢাকার মতন না।

মঞ্জু জিজ্ঞেস করলো, মামুনমামা, আমরা কতদিন থাকবো এখানে?

এ প্রশ্নের উত্তর মামুনের জানা নেই। তিনি সুখুর মাথায় হাত বুলোত বুলোত বললেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবি, সব ঠিক হয়ে যাবে।

ঘরের সংলগ্ন বাথরুম নেই, যেতে হবে বারান্দার এককোণে। সেখান থেকে ঘুরে এসে হেনা বললো, কী নোংরা! কাপড় ছাড়ার জায়গা নাই।

কলকাতা শহরে পঞ্চান্ন টাকা ভাড়ার হোটেল আর কত ভালো হবে। নিরাপত্তা আছে কিনা। সেটাই বড় কথা। সেদিক থেকে মনে হয় ভয়ের কিছু নেই।

মামুন উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, তোরা কাপড় টাপড় ছেড়ে নে, আমি একটা ঘুল্লা দিয়ে আসি।

একতলায় এসে দেখলেন, একজন লোক ইংরিজি কাগজ পড়ছে। মামুন পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি দিলেন। প্রথম পৃষ্ঠায় ছ’ কলমের হেড লাইনে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের সংবাদ। যশোরে একটা সাইকেল রিকশার ওপর তিনটি লাশের ছবি। বিদেশী সাংবাদিকদের বিবরণ।

পশ্চিম বাংলাতেও খুনোখুনির সংবাদ রয়েছে প্রথম পৃষ্ঠাতেই। নকশালপন্থী, পুলিশ, সি পি এম আর কংগ্রেসীদের লড়াই। শামসুদ্দীন সাহেব সাবধান করে দিয়েছিলেন, কলকাতার কোনো কোনো অঞ্চলে নকশালপন্থীরা নাকি অচেনা মানুষ দেখলেই খুন করে।

একটা বাংলা কাগজ কেনার জন্য মামুন রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন। এপ্রিল মাসের রোদ শরীরে আলপিন বিধিয়ে দেয়। এর মধ্যেই ট্রামগুলো টই-টুম্বুর ভর্তি, বাইরেও লোক ঝুলছে। মামুন হাঁটতে লাগলেন, কোন রাস্তা কোন দিকে গেছে তা তাঁর মনে পড়লো না। তবে পাড়াটা চেনা চেনা লাগছে। আগের তুলনায় অনেক ঘিঞ্জি হয়েছে, ফাঁকা জায়গা এক ইঞ্চিও পড়ে নেই কোথাও।

খানিক বাদে তিনি এসে পৌঁছোলেন চৌরাস্তার মোড়ে। এই জায়গাটা তাঁর স্পষ্ট মনে পড়লো। বাঁ দিকে পার্ক স্ট্রিটের পুরনো কবরস্থান। সামনে আরও এগিয়ে গেলে নতুন খ্রীষ্টানী কবরখানা, সেখানে শুয়ে আছেন মাইকেল মধুসূদন। ডান দিকে কিছু দূরে পার্ক সার্কাস ময়দান। রিপন স্ট্রিটের একটা মেসে মামুন কিছুদিন ছিলেন, সে জায়গাটা এখান থেকে বেশি দূর হবে না।

একখানা আনন্দবাজার কিনে মামুন চা খেতে ঢুকলেন এক দোকানে। দোকানটিতে নাস্তা খাওয়ার জন্য লোকেদের বেশ ভিড়। অধিকাংশ খদ্দের এবং লুঙ্গিপরা বেয়ারারা কথা বলছে। উর্দুতে। দু’একটি টেবিলে উর্দু সংবাদপত্র। মামুনের হাতে বাংলা কাগজ দেখে অন্যরা কি তাঁকে হিন্দু ভাবছে? প্রথম দিন এসেই কলকাতা শহরের এই চিত্রটি দেখবেন, মামুন একেবারেই তা আশা করেননি।

আনন্দবাজার পত্রিকাটা মামুন দেখলেন অনেকদিন পর। যখন তিনি মুসলিম লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন, তখন এই পত্রিকার নীতির সঙ্গে তাঁর খুবই মতবিরোধ ছিল। মনে আছে, একবার তাঁরা রাস্তায় এই কাগজ পুড়িয়েছিলেন।

এই পত্রিকায় এখন চলিত ভাষায় খবর লেখা হয়। মামুন বরাবর সাধু বাংলাতেই লিখে এসেছেন। যশোর-খুলনা-চট্টগ্রামের অত্যাচার ও সঙ্ঘর্ষের খবরই বেশি। ঢাকায় গুলি চালনা বিষয়ে রয়টারের খবরের একটি ছোট বক্স আইটেম। চতুর্থ পৃষ্ঠায় আবদুল আজাদ নামে একজনের লেখা ঢাকায় পঁচিশে মার্চ রাত্রির নারকীয় ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ। মামুন মন দিয়ে লেখাটি পড়লেন, সত্যি কথাই লিখেছে, পড়লে মনে হয় লেখকটি ঢাকার একজন সাংবাদিক। কিন্তু আবদুল আজাদ কে? ঢাকার সাংবাদিক লেখকদের প্রায় প্রত্যেককেই মামুন চেনেন, হয়তো এই লোকটি ছদ্মনামে লিখেছে।

পূর্ব পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার রিফিউজি আসছে ভারতে, সে খবরও রয়েছে প্রথম পৃষ্ঠায়, সঙ্গে ছবি। মামুন ভাবলেন, তিনিও তো রিফিউজি।

পাশের টেবিলে কয়েকটি ছোকরা বোম্বাইয়ের একটি সিনেমা বিষয়ে আলোচনা করছে। দিলীপকুমার নামে একজন নায়ক নাকি আসলে মুসলমান, সে রাজকাপুর নামে আর একজন নায়কের চেয়ে যে অনেক বড় অভিনেতা, সেটাই ওদের বক্তব্য। নার্গিস ও সায়রা বানুর মতন দুই সুন্দরী অভিনেত্রীর সঙ্গে বোম্বাইয়ের আর কোনো মেয়ের তুলনাই চলে না। মহম্মদ রফি হেমন্তকুমারের চেয়ে অনেক বড় গায়ক।

কলকাতার কোনো চায়ের দোকানে যে এ ধরনের কথাবার্তা শুনবেন, মামুন কল্পনাই করতে পারেননি। এ যেন মীরপুরের কোনো দোকান। কোনো অলৌকিক উপায়ে কলকাতার এই রেস্তোরাঁটি কি চব্বিশ বছর আগের জগতেই রয়ে গেছে? কোনো হিন্দু কি এ দোকানে আসে na? দোকানের দরজার ওপর ‘নো বীফ’ লেখা একটা ছোট্ট বোর্ড ঝুলছে।

কলকাতা থেকে মাত্র শ’খানেক মাইল দূরেই মুসলমান এখন মুসলমানকে মারছে, খুন হচ্ছে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ, মুসলমানের ঘরের মেয়েদের ধর্ষণ করছে মুসলমান সৈন্য, গ্রামের পর গ্রাম জ্বলছে আগুনে, সে সম্পর্কে এখানে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই? এরা কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না? ওদের সামনে টেবিলে যে উর্দু কাগজ পড়ে আছে, তাতে কী লিখেছে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা সম্পর্কে? মামুন উর্দু শুনে বুঝতে পারলেও পড়তে পারেন না। ঐ লোকগুলির সঙ্গে কথা বলতেও মামুনের ভয় করলো। নিদারুণ একাকীত্ব বোধের অবসাদে ছেয়ে গেল তাঁর বুক।

হোটেলে ফিরে এসে মামুন লম্বা এক ঘুম দিলেন। বিকেলে একবার ঘুম থেকে উঠে বেরুবার কথা চিন্তা করেও বেরুলেন না শেষ পর্যন্ত। কোথায় যাবেন? একটা কোনো চেনা মানুষের ঠিকানা তাঁর সঙ্গে নেই। এম আর আখতার মুকুলরা সদলবলে এসে কোথায় উঠবেন, সেটাও যদি জেনে রাখতেন! সহায়সম্বলহীন অবস্থায় কতদিন থাকতে পারবেন এই কলকাতা শহরে। এত বড় শহর, এর প্রকাণ্ড উদর, এখানে যে আসে সে-ই ঠাঁই পেয়ে যায়, তারপর কে মরলো, কে বাঁচলো, তা কেউ খেয়ালও করে না।

সন্ধে হতে না হতেই আবার ঘুমিয়ে পড়লেন মামুন। তাঁর শরীর পুরোপুরি সুস্থ নয়, টাইফয়েডের পরে, এখনও গায়ে জোর পাননি।

হোটেলের আব্বাস নামে একটি বাচ্চা বেয়ারাকে এর মধ্যেই হাত করে নিয়েছে মঞ্জু, সে নিচের তলা থেকে চা-খাবার এনে দেয়। মঞ্জু আর হেনা দু’জনে মিলে ঠেলাঠেলি করেও মামুনকে কিছু খাওয়াতে পারলো না।

পরদিন মামুন জোর করে ঝেড়ে ফেললেন অবসাদ। একটা কিছু করতেই হবে। তিনি ঠিক করলেন, তিনি কোনো খবরের কাগজের অফিসে যাবেন। সাংবাদিকরাই বলতে পারবে, পূর্ব বাংলার নেতাদের মধ্যে কে কোথায় উঠেছেন, মুক্তি আন্দোলন চালাবার জন্য কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি নিজেও সহজভাবে কথা বলতে পারবেন সাংবাদিকদের সঙ্গে।

আনন্দবাজার অফিসটা বর্মণ স্ট্রিটে না? একবার যেন গিয়েছিলেন কার সঙ্গে। কিন্তু কাগজটা নিয়ে দেখলেন অন্য ঠিকানা। এই জায়গাটা কোথায়? পোস্টাল জোন যখন কলিকাতা-১, তখন জি পি ওর কাছাকাছি হবে।

মামুন বেরুবার উদ্যোগ করতেই হেনা জিজ্ঞেস করলো, বাবা, আমরা কইলকাতা শহর দেখবো না?

মামুন বললেন, দেখবি, দেখবি, আমি তোদের নিয়ে যাবো সব জায়গায়, দু’একটা দিন সবুর কর।

মঞ্জু খাটের ওপর পা মেলে বসে আছে, শাড়িটা এলোমেলো, চুল বাঁধেনি, চোখ দুটো ফুলো ফুলো, সে যে গোপনে কান্নাকাটি করছে, তা দেখলেই বোঝা যায়।

মামুন বললেন, তোরা ঘর থেকে এক পাও বাইরাস না। সুখুকে দেখবি, যেন হুট করে রাস্তায় না যায়। আমি ঘুরে আসতেছি।

কলকাতা শহরে মামুন অন্তত দশ বারো বছর কাটিয়েছেন, এখন এই শহরে রাস্তা হারিয়ে ফেললে খুব লজ্জার বিষয় হবে। মোড়ের মাথায় এসে তিনি এসপ্লানেড লেখা একটা ট্রামে চড়ে বসলেন।

বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর তিনি পেয়ে গেলেন আনন্দবাজার অফিস। মস্ত বড় লোহার গেট, অনেকগুলি দারোয়ান, এই পত্রিকার আগেকার অফিসের সঙ্গে কোনো মিলই নেই। একজন দারোয়ান ভেতরে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিল।

কাচের দরজার ওপাশে একটা কাউন্টার। তার এক পাশ দিয়ে লোকজন যাতায়াত করছে। মামুন সেখান দিয়ে ঢুকতে যেতেই একজন বেশ মোটা গোঁফওয়ালা বলিষ্ঠ ব্যক্তি প্রায় হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলো, এই যে, কোথায় যাচ্ছেন?

মামুন বিনীতভাবে বললেন, সম্পাদক মশাইয়ের সঙ্গে একটু দেখা করতে চাই।

গোঁফওয়ালা লোকটি মুখে হাসি ছড়িয়ে বিদ্রূপের সুরে বললো, এডিটরের সঙ্গে দেখা করতে। চান? চাইলেই কি দেখা করা যায় নাকি? আপনার অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে?

মামুন বললেন, জী না। অ্যাপয়েন্টমেন্ট নাই।

–তবে দেখা হবে না। তিনি এমনি এমনি কারুর সঙ্গে দেখা করেন না।

–নিউজ এডিটরের সাথে দেখা হতে পারে কী?

–তিনি খুব ব্যস্ত। যার-তার সঙ্গে দেখা করেন না।

–হলে অন্য কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে যদি দেখা করা যায়।

–আপনার কী দরকার, কোথা থেকে এসেছেন, সেটা বলুন।

–দেখুন, আমি নিজেও একজন সাংবাদিক, ঢাকা থেকে এসেছি, যদি এখানে কারুর সাথে একটু আলাপ করা যায়।

গোঁফওয়ালা লোকটি লাফিয়ে উঠে বললো, ঢাকা থেকে? জয় বাংলা? হ্যাঁ, হ্যাঁ আসুন। আসুন। এই যে স্লিপে নাম লিখুন।

লোকটির ব্যবহার সম্পূর্ণ বদলে গেল, খাতির করে নিজে এসে মামুনকে লিফটে তুলে নিয়ে গেলেন ওপরে, একটা টেবিলের সামনে গিয়ে বললেন, অমিতবাবু, ইনি ঢাকা থেকে এসেছেন, রিপোর্টার।

অমিতবাবুও হাসি মুখে বললেন, আরে মশাই, বসেন, বসেন! বাড়ি কোন জেলায়? সিলেট নাকি?

সেই টেবিলের উল্টোদিকে একজন লম্বা মতন লোক নিউজ প্রিন্টের প্যাডে খসখস করে দ্রুত কী যেন লিখে চলেছে, মামুন তার পিঠে হাত দিয়ে বললেন, গাফফার না?

লোকটি মুখ ফিরিয়ে কয়েক মুহূর্ত নিষ্পলকভাবে চেয়ে রইলো, তারপর বললো, মামুন ভাই? আমি শুনেছিলাম আপনাকে ধরে নিয়ে গেছে? ছাড়া পেলেন কী করে?

মামুন বললেন, না আমাকে ধরতে পারে নাই। হিলি বর্ডার দিয়ে পালিয়ে এসেছি।

আবদুল গাফফার চৌধুরীকে পেয়ে মামুন যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলেন। তাঁকে নিজের মুখে পরিচয় দিতে হলো না এখানে। গাফফার কয়েকদিন আগেই এখানে এসেছেন, অনেকের সঙ্গে চেনা হয়ে গেছে।

অমিতাভ চৌধুরীর সঙ্গে খানিকক্ষণ আলাপ করার পর গাফফার বললেন, চলেন, আপনারে সন্তোষদার কাছে নিয়ে যাই। তিনিই এই কাগজের সর্বেসর্বা।

কিন্তু সন্তোষকুমার ঘোষের ঘরে তখন খুব ভিড়, ভেতরে ঢোকা গেল না। গাফফার তাঁকে। নিয়ে ঘুরে ঘুরে অন্য কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবার পর এলেন দেশ পত্রিকার ঘরে। সম্পাদকের সামনে গিয়ে বললেন, সাগরদা, ইনি সৈয়দ মোজাম্মেল হক, আমাদের ঢাকার খুব শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক, একটা ডেইলি পত্রিকার এডিটর ছিলেন। জঙ্গীবাহিনী একে ধরতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে কোতল করে দিত। বহু কষ্ট করে পালিয়ে এসেছেন।

দেশ পত্রিকার সম্পাদক মধ্যমাকৃতি, হৃষ্টপুষ্ট চেহারা, দেখলে খুব গম্ভীর মনে হয়। গাফফারের কথা শুনে তিনি শুধু হাত তুলে নমস্কার করলেন, মুখ দিয়ে কিছু উচ্চারণ করলেন না।

মামুন বললেন, আমি এক সময় দেশ পত্রিকা নিয়মিত পড়েছি। সিক্সটি ফাঁইভের পর তো। আমাদের ওখানে এদিককার কোনো পত্র-পত্রিকাই পাওয়া যেত না। অনেকদিন টাচ নাই। আজ আপনার সাথে আলাপ করে খুব খুশী হলাম।

সম্পাদক মশাই এবারেও একটিও কথা বললেন না।

গাফফার বললেন, জানেন সাগরদা, দুটি মেয়ে আর একটি বাচ্চাকে নিয়ে মামুন-ভাই যেভাবে প্রায় দেড় শশা মাইল রাস্তা পার হয়ে বড়ার ক্রশ করে এসেছেন, সে এক রোমহর্ষক ব্যাপার।

সম্পাদক মশাই হঠাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে পেছন ফিরলেন। এবার বোঝা গেল তাঁর নীরবতার রহস্য। জানলার কাছে গিয়ে পানের পিক ফেলে এসে তিনি মুখে সহৃদয় হাসি ফুটিয়ে। বললেন, আপনার অভিজ্ঞতার কথা লিখে দিন না আমাদের কাগজের জন্য। পূর্ব বাংলায় সত্যি সত্যি কী ঘটছে সব পাঠকরা জানতে চায়। দেরি করবেন না, কালই লিখে আনুন।

মামুন অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললেন, আপনি যে বললেন, এতেই আমি ধন্য হয়ে গেলাম। লেখার চেষ্টা করবো অবশ্যই, যদি আপনার পছন্দ হয়…।

খানিক বাদে গাফফার মামুনকে নিয়ে ঢুকলেন সন্তোষকুমার ঘোষের ঘরে। ছোটখাটো চেহারার মানুষটি, গায়ে একটা সিল্কের পাঞ্জাবি, তার এক জায়গায় মাংসের ঝোলের দাগ। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। স্বভাবটি যে অত্যন্ত ছটফটে তা অল্পক্ষণ দেখলেই বোঝা যায়। বাঁ হাতে একটা কাগজ তুলছেন, ডান হাতে একটা কাগজ ছুঁড়ে ফেলছেন, লম্বা সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে গুঁজে জল খেলেন এক চুমুক, আবার ধরিয়ে ফেললেন একটা সিগারেট। অন্য একজনের সঙ্গে কী নিয়ে যেন বকাবকি করছিলেন, সেই ব্যক্তিটি চলে যাবার পর গাফফার সামনে এসে মামুনের পরিচয় দিলেন।

সন্তোষকুমার কপালের কাছে হাত তুলে বললেন, আস্সালাম আলাইকুম। বসুন! কী নাম। বললেন? সৈয়দ মোজাম্মেল হক? নামটা চেনা চেনা।

ভুরু কুঁচকে একটু চিন্তা করতে করতে ফস্ করে পকেট থেকে একটা ক্যাটকেটে সবুজ রঙের চিরুনি বার করে চুল আঁচড়ে নিলেন অকারণে। তারপর বললেন, সৈয়দ মোজাম্মেল হক? আপনি এক সময় সওগাতে কবিতা লিখতেন না? ‘আশমানের প্রজাপতি’ নামে আপনার কবিতার বই আছে, আমি পড়েছি। কিছুদিন ‘দিন কাল’ নামে একটি ডেইলি পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ‘অনুসন্ধিৎসু’ ছদ্মনাম দিয়ে আপনিই তো একটা কলাম লিখতেন, তাই না?

মামুন স্তম্ভিতভাবে তাকিয়ে রইলেন মানুষটির দিকে।

গাফফার বললেন, মামুন ভাই, এই হচ্ছেন সন্তোষদা। ফ্যানটাসটিক মেমারি। বাংলা ভাষায় বোধ হয় একটাও ছাপার অক্ষর নাই, যা উনি পড়েন নাই। আমার নাম শোনামাত্রই উনি। বলেছিলেন, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটা আপনার লেখা না?

সন্তোষকুমার গাফফারকে এক ধমক দিয়ে বললেন, চুপ করো! আমি যখন কথা বলবো, তখন অন্য কেউ কথা বলবে না। আপনি পচিশে মার্চ রাত্তিরে ঢাকায় ছিলেন? মিলিটারি অ্যাকশান কিছু দেখেছেন নিজের চোখে?

মামুন বললেন, অনেক কিছুই দেখেছি।

সন্তোষকুমার বললেন, কালই সেই অভিজ্ঞতার কথা লিখে আনুন। পার্সোনাল টাচ দিয়ে লিখবেন, প্রবন্ধ-ট্রবন্ধ নয়, ঠিক যা-যা দেখেছেন।

মামুন বললেন, দেশ পত্রিকার সাগরময় ঘোষবাবুও আমাকে ঐ বিষয়ে লিখতে বললেন।

সন্তোষকুমার চোখ রাঙিয়ে বললেন, ঐ সব দেশ পত্রিকা-টত্রিকা ছাড়ুন। আমি বলছি, এখানে লিখতে হবে। দেশে লিখে ক’ পয়সা পাবেন? এখানে রিফিউজি হয়ে এসেছেন, টাকার দরকার নেই? উঠেছেন কোথায়?

–একটা হোটেলে।

–ব্যাঙ্ক লুট করা টাকা এনেছেন নাকি?

মামুন এবারে হাসলেন। এই মানুষটির কথাবার্তায় একটা কঠিন ব্যক্তিত্ব আরোপের চেষ্টার মধ্যেও যে একটা সরল ছেলেমানুষী আছে, তা বুঝতে দেরি লাগে না।

সন্তোষকুমার আবার বললেন, গাফফার এখানে লিখছে। সৈয়দ সাহেব, আপনি ইচ্ছে করলে। এই কাগজে একটা রেগুলার ফিচার লিখতে পারেন। তাতে আপনার এখানকার খরচ চলে। যাবে।

মামুন বললেন, আমাকে সৈয়দ সাহেব বলবেন না। বড় গালভারি শোনায়। অনেকেই আমাকে মামুন বলে ডাকে। আপনি আর আমি বোধ হয় এক বয়েসীই হবো।

সন্তোষকুমার আবার একটু ট্যারা হয়ে কিছু চিন্তা করে বললেন, আপনি যখন সওগাতে কবিতা লিখতেন, তখন আমি চাকরি করতুম মোহাম্মদী কাগজে, তা জানেন? আমার বাড়ি ছিল ফরিদপুর। আপনার বাড়ি.দাঁড়ান, দাঁড়ান, বলবেন না, উচ্চারণ শুনে মনে হচ্ছে, কুমিল্লা। তাই না?

আধঘণ্টা পরেই মামুনের মনে হলো, এই মানুষটির সঙ্গে তার অনেক দিনের চেনা। তিনি একবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তো অনেককিছু জানেন, কলকাতায় আমার এক পুরনো। বন্ধুকে খুঁজে বার করতে চাই, প্রতাপ মজুমদার, তার কোনো সন্ধান দিতে পারেন?

–প্রতাপ মজুমদার? তিনি কী লেখেন? না, ঐ নামে কোনো লেখক নেই। কী করেন। তিনি?

–মুন্সেফ ছিলেন, এখন বোধ হয় সাবজজ বা ডিস্ট্রিক্ট জজ হয়েছেন। কলকাতায় থাকেন। কিনা তাও অবশ্য জানি না।

–সেভাবে তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এক যদি বাড়িতে টেলিফোন থাকে, গাইডে ঠিকানা। পাওয়া যাবে।

মামুন চমৎকৃত হয়ে ভাবলেন, তাই তো, টেলিফোন গাইড দেখার কথা তো তার আগে মনে। আসেনি?।

সন্তোষকুমার আবার চ্যাঁচামেচি করে উঠলেন, গাইডটা কোথায় গেল? আঃ, কাজের সময় ঠিক জিনিসটা পাওয়া যায় না, গুনধর, গুধির! স্টুপিড, কে এখান থেকে গাইডটা নিয়ে গেছে? যাও, তোমার আর চাকরি নেই!

টেলিফোনের ওপর সামনেই মোটা গাইডটা রাখা। গুণধর নামে বেয়ারাটি সেটি নিঃশব্দে এগিয়ে দিল। সন্তোষকুমার পাঁচ টাকার একটা নোট বকশিশ হিসেবে তাকে ছুঁড়ে দিয়ে ফরফর করে পাতা ওল্টাতে লাগলেন। তারপর বললেন, না, ও নামে কেউ নেই। আর কেউ চেনা নেই?

মামুন বললেন, আর একজন ছিল বিমানবিহারী, তার পদবী মনে নাই।

–ওভাবে কলকাতায় মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না। কিছুদিন থাকুন, আস্তে আস্তে খোঁজ পাবেন। লেখাটা কিন্তু কালকেই চাই। আপনার কিছু টাকা অ্যাডভান্স লাগবে?

খানিকটা পরে গাফফারের সঙ্গে আনন্দবাজারের গেট দিয়ে বাইরে এসে মামুন বললেন, বুকখানা এখন হালকা লাগছে। এদেশে আমাদের শুভার্থী আছে সেটা ঠিক আগে বুঝি নাই। আচ্ছা গাফফার, আনন্দবাজার অফিসে ঢোকার এত কড়াকড়ি কেন? গেটে পাহারাদার, খবরের কাগজের অফিস, অথচ কেমন যেন দুর্গ দুর্গ ভাব!

গাফফার বললেন, নকশালদের ভয়ে এই ব্যবস্থা। নকশালরা যদি বোমা মেরে প্রেস উড়িয়ে দেয়! বামপন্থীদের এই কাগজের উপর খুব রাগ। এরা তো বলে জাতীয়তাবাদী দৈনিক, ইন্ডিয়াতে জাতীয়তাবাদ মোটেই ফ্যাসানেল নয়। কলকাতার অনেক দেয়ালে দেখবেন চীনের চেয়ারম্যানের নামে প্রশস্তি।

মামুন বললেন, আনন্দবাজার বরাবরই অ্যান্টি পাকিস্তানী কাগজ। ঢাকায় বসে আমরা কেউ আনন্দবাজারের নামও উচ্চারণ করতাম না। এখন এই কাগজই আমাদের বড় সাপোর্টার। তুমি আর আমি এই কাগজের লেখক হতে চলেছি। একেই বলে নিয়তি।

সকল অধ্যায়

১. ০১. পেঁজা তুলোর মতন পাতলা তুষার
২. ০২. সিদ্ধার্থ এসে অতীনকে
৩. ০৩. সাদা পাজামা আর তাঁতের পাঞ্জাবি পরা
৪. ০৪. কৃষ্ণনগরে বিমানবিহারীদের বাড়ি
৫. ০৫. কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর
৬. ০৬. অতীনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও
৭. ০৭. দরজা খোলার জন্য
৮. ০৯. উত্তর ও মধ্য কলকাতার রাস্তাঘাট
৯. ০৮. আরিচা ঘাটে বিশাল যমুনা নদীর দিকে
১০. ১০. পিজি হাসপাতালের গেটের সামনে
১১. ১২. সরকারি মতে বসন্ত এসে গেছে
১২. ১১. হেনা দু’বার ডাকতেই মামুন
১৩. ১৩. অতীন প্যান্টে বেল্ট বেঁধে
১৪. ১৪. দরজায় বেল শুনে
১৫. ১৫. বড় তেঁতুল গাছটার নিচে
১৬. ১৬. ছেলের প্যান্ট সেলাই
১৭. ১৭. জানলার পর্দাটা সরালেই
১৮. ১৮. কতদিনই বা আগের কথা
১৯. ১৯. জাহানারা ইমাম খেতে বসেছেন
২০. ২০. প্রায় হাজারখানেক নারী-পুরুষ
২১. ২২. গোল্ডার্স গ্রীনে তুতুলের অ্যাপার্টমেন্ট
২২. ২১. পেট্রাপোল স্টেশান দিয়ে
২৩. ২৩. ক্রিস্টোফার রোডে বিরাট লম্বা লাইন
২৪. ২৪. চার্লস নদীর এক পারে
২৫. ২৫. ল্যাবরেটরিতে কাজ করছে অতীন
২৬. ২৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গাড়ি
২৭. ২৭. শেষ পর্যন্ত অলিকে
২৮. ২৮. জ্বর কিংবা কোনো শক্ত অসুখ
২৯. ২৯. খবরের কাগজের জন্য একটা প্রবন্ধ
৩০. ৩০. পুলিস হারীতকে মারধর করলো না
৩১. ৩২. আজ রাতেই অলির প্লেন
৩২. ৩১. আজ ছুটির দিন
৩৩. ৩৩. বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে
৩৪. ৩৪. দু শো-আড়াই শো জন যুবক
৩৫. ৩৫. তার নাম তোতা মিঞা
৩৬. ৩৬. হাসপাতাল থেকে তুতুল ফিরে এসেছে
৩৭. ৩৭. সকাল থেকেই বৃষ্টির বিরাম নেই
৩৮. ৩৮. প্রথমে মামুনের মনে হলো
৩৯. ৩৯. এক একটা গান হঠাৎ
৪০. ৪০. ব্রিটিশ মিউজিয়াম ও কয়েকটি আর্ট গ্যালারি
৪১. ৪১. সারাদিন একটানা বৃষ্টি পড়ছে
৪২. ৪২. আগরতলা থেকে প্লেনে চাপলো সিরাজুল
৪৩. ৪৩. দেশ থেকে লন্ডনে যাওয়ার সময়
৪৪. ৪৪. বাবার আমল থেকে রয়েছে চাবুকটা
৪৫. ৪৫. আজ কাজের দিন
৪৬. ৪৬. পঁচিশে মার্চের পর টিক্কা খানের নাম
৪৭. ৪৭. ছোট ছোট শহরের বিশ্ববিদ্যালয়
৪৮. ৪৮. প্রতিমার গায়ে রং লাগানো হয়ে গেছে
৪৯. ৪৯. চুরুটটা নিভে গেছে অনেকক্ষণ
৫০. ৫০. হঠাৎ লণ্ডনের ব্যবসা গুটিয়ে
৫১. ৫২. দুপুরবেলা মমতাদের খাওয়া-দাওয়া
৫২. ৫১. দরজাটা সামান্য ফাঁক করে
৫৩. ৫৩. প্রতাপের বাড়ি বেশ দূরে
৫৪. ৫৪. এ বছর এত বৃষ্টি
৫৫. ৫৫. আবিদ হোসেনের ঘরে
৫৬. ৫৬. মেয়েদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা
৫৭. ৫৭. হলুদ ও কমলা রঙের শাড়ি পরা
৫৮. ৫৮. ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকা
৫৯. ৫৯. একটা নদীর বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে
৬০. ৬০. টাঙ্গাইল শহর এখন সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত
৬১. ৬১. বেইরুটে প্লেন এগারো ঘণ্টা লেট
৬২. ৬২. সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে
৬৩. ৬৪.২ নিউ জার্সি টার্ন পাইকের কাছে
৬৪. ৬৩. লাল রঙের গাড়িটার ওপর
৬৫. ৬৪.১ উপসংহার : বিকেল শেষ হবার মুখে
৬৬. ৬৪.৩ সেগুন বাগিচার অতবড় বাড়িটা
৬৭. ৬৪.৪ হাজরা পার্কের কাছে
৬৮. ৬৪.৫ তারপর কী যেন
৬৯. ৬৪.৬ হরিদ্বারে যাওয়ার ব্যাপারটা
৭০. ৬৪.৭ টুং করে একটা শব্দ হতেই
৭১. ৬৫. লেখকের কথা
৭২. ৬৪.৮ হোটেলে চেক ইন করে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন