৩৭. সন্ধ্যেবেলা রূপচাঁদবাবুর বাড়িতে

বিমল মিত্র

সন্ধ্যেবেলা রূপচাঁদবাবুর বাড়িতে যেতেই সরকারবাবু ডাকলে— এই যে ভূতনাথবাবু, বাবু একবার খুঁজছিলেনআপনাকে?

—আমাকে? কেন? যেন ভয় করতে লাগলো ভূতনাথের। কাজের কোথাও কোনো গাফিলতি হয়েছে নাকি? কিম্বা কোনো

ত্রুটি।

সরকারবাবু বললে—আর কি, আপনার তো হয়ে গেল, মেরে দিলেন আপনি।

—কী হয়ে গেল?

—বাবু তো অকারণে ডাকেনি, আর কাউকে তো ডাকে না, আপনার ওপর একটু নেকনজর আছে ভূতনাথবাবু, যাই বলুন আর তাই বলুন। হা হা করে সঁাত বের করে নির্বোধের মতো হাসতে লাগলো সরকারবাবু! হাসি থামিয়ে সরকারবাবু বললে—আপনাকে বাবু বসতে বলে গিয়েছেন—এখনি বেরোবেন।

ভূতনাথের মনে হলো–কী এমন কাজ যার জন্যে এমন অপেক্ষা করতে হবে। কোনো দোষ হয়েছে তার, কোনো গাফিলতি কিম্বা কোনো অপরাধ।

সরকারবাবু বললে—ভয় নেই আপনার, আপনার ক্ষতি হবে কিছু।

-কীসে বুঝলেন?

—আরে এতদিন কাজ করছি তা আর বুঝি না, আর কাউকে তো এমন করে কই ডাকে না, আপনার উন্নতি এই হলো বলে, দেখে নেবেন।

—কখন আসবেন?

-এই তো এখনি আসবেন বলে গিয়েছেন, গাড়িও তো তৈরি হয়ে রয়েছে।

ভূতনাথ দেখলে উঠোনের পাশে রূপচাঁদবাবুর গাড়ি সত্যিই তৈরি। ঘোড়া দুটো অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে।

সরকারবাবু ভাউচারগুলো নিয়ে পাকা খাতায় তুলতে লাগলো। একে-একে সব খুটিয়ে-খুটিয়ে হিসেব দিতে হয়। রূপচাঁদবাবুর কোম্পানীর কাজ খুব পাকা। হিসেবের খুব কড়াকড়ি। প্রত্যেকদিনের হিসেব প্রত্যেকদিন খাতায় ওঠে। তারপর পাওনাদারদের হিসেব মেটানো হবে সেই পাকা খাতা দেখে। কোথায় সুরকি গেল দু’গাডি, ইট গেল কত হাজার, চুন ডেলিভারি ক’বস্তা, সব লিখতে হবে। যা যা দরকার সব ইঞ্জিনিয়ার ওভারসিয়ারদের অর্ডার মাফিক বিলবাবুকে সাপ্লাই দিতে হবে দোকান থেকে। দোকানে গিয়ে মাল লোডিং থেকে ডেলিভারি হওয়া পর্যন্ত সক বিলবাবুর কাজ। এমনি কাজ শিখতে-শিখতে একদিন ওভারসিয়ার হওয়া। মাপজোক করতে শেখা, নক্সা করতে শেখা, কতগুলো ঘর করতে কত ইট চুন সুরকি লাগে তার হিসেব জানা।

তা এই ক’মাসেই ভূতনাথ বেশ পাকা হয়ে গিয়েছে বৈকি। এখন একলাই ফিতে ধরে হিসেব করতে পারে। চুরি ধরতে পারে। চারদিকে যখন এত বাড়ি উঠছে, ওভারসিয়ার-এর সংখ্যাও বাড়বে। রূপচাঁদবাবুর কোম্পানীও আগেকার চেয়ে এখন অনেক বড় হয়েছে। নতুন শহর গড়ছে, বস্তি ভেঙে নতুন বাড়ি, নতুন সমাজ তৈরি হচ্ছে—নতুন সভ্যতা। এখানে সবই যেন নতুন। নতুন মানুষ, নতুন সমাজ, নতুন বাড়ি,নতুন প্রাণ! উকিল ব্যারিস্টার কত নতুননতুন হচ্ছে। একটু পয়সা হলেই ভবানীপুরে বাড়ি করা চাই।

এই তো সেদিনের কথা।

৩০শে আশ্বিন। ভূতনাথ প্রথমে ভেবেছিল কিছু হবে না! কিন্তু সেই দিন রাখী বাঁধার কী হিড়িক।

ইদ্রিস বলে—হাত দেখি বিলবাবু।

–কেন?

–হাত বাড়ান না।

ওভারসিয়ার আর ইঞ্জিনিয়ারবাবুরাও বাদ গেল না। রূপচাঁদবাবু প্রথমে কিছু বলেন নি। কিন্তু ভূতনাথই গিয়ে সাহস করে সামনে দাঁড়ালো।

–ও আবার কী? ও-বুঝতে পেরেছি, রাখী বুঝি, বাঁধুন, বেঁধে দিন—বলে বাঁ হাতটা বাড়িয়ে দিলেন।

বিল কালেকশন করতে গিয়ে বিকেল বেলা ভিড় দেখে একবার সাইকেল থেকে নামলো ভূতনাথ। মাথার ওপর ঝাঁ-ঝ করছে রোদ। কিন্তু তবু অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে ঠায়। সকালে বাড়িতে-বাড়িতে অরন্ধন ছিল। উপোস করেছে লোকে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভলান্টিয়াররা বলেছে—একটা দিন না হয় না খেলেন–কী হয় তাতে। ভবানীপুরের পাড়াতে অনেকে রান্নাই করেনি। দোকান-পাটও অনেক বন্ধ ছিল। এ-এক ধরনের অভিজ্ঞতা।

বড়বাড়িতে মেজবাবু হুকুম দিয়েছিল—কাউকে ঢুকতে দেবে না–যত সব বদমাইস-এর দল।

তা বড়বাড়িতে কে-ই বা ঢুকতে সাহস করবে! ভূতনাথেরও মনে হয়েছিল খাবে না সে। সত্যিই তো একটা দিন না খেলে কী হয়। ভিস্তিখানাতে গিয়ে স্নান সেরে নিয়ে আবার সাইকেল-এ উঠতে যাবে, এমন সময় বংশী এসে গেল। বললে—যাচ্ছেন যে শালাবাবু, খাবেন না আজ?

–রান্না হয়েছে আজকে?

–রান্না হবে না কেন?

—অরন্ধন হয়নি আজ? ভলান্টিয়াররা আসেনি?

—কে সাহস করে ঢুকবে আজ্ঞে, মেজবাবু ব্রিজ সিংকে গেট বন্ধ করতে বলে দিয়েছেন।

—বাজার খোলা ছিল?

-কিছু-কিছু ভোলা ছিল হুজুর, বাজার বন্ধ হবে কোন্ দুঃখে। মাছ এল, তরকারি এল, বিধু সরকার মশাই আজকাল নিজে বাজার করে কি না, মধুসূদন চলে যাওয়া এস্তোক…

ভূতনাথের মনে হয়েছিল এক বড়বাড়ি ছাড়া সেদিন সব বাড়িতেই বুঝি সমান অবস্থা। অন্তত ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে লোকজনদের মুখের দিকে চেয়ে তাই মনে হলো। এমনি আর একটা ভিড়ের কথা মনে পড়লো ভূতনাথের। সে কিন্তু শীতকাল ছিল। ভোরবেলা সেদিন শেয়ালদ’ স্টেশনে স্বামী বিবেকানন্দ এসে নেমেছিলেন। সে কয়েক বছর আগেকার কথা।

ভিড়ের মধ্যে কে একজন বললে—প্রেসিডেন্ট আসছেন না আজ জানেন তো—আনন্দমোহন বসু অসুস্থ।

আর একজন বললে—আসছেন তিনি, স্ট্রেচারে করে তিনি আসছেন—খবর এসেছে এইমাত্র।

শেষকালে সত্যিই তিনি এসে পড়লেন। সমস্ত জনতা জয়ধ্বনি করে উঠলো। বন্দে মাতরম্। বহুদিন থেকে কঠিন রোগে শয্যাশায়ী। আজ তিনি মুমূযু! কিন্তু এমন মুহূর্ত তো তার জীবনে আর ফিরে আসবে না। চারদিকের জনতা সেই অগ্রজ জননায়কের কথা শোনবার জন্যে অধীর আগ্রহে চুপ করে আছে।

সব মনে নেই ভূতনাথের। তবু কিছু-কিছু মনে আছে। সেদিন কলকাতার সেই জনসমুদ্রের মধ্যে দাঁড়িয়ে ভূতনাথের মনে হয়েছিল সত্যিই একটা জাতির মহা-অভ্যুদয় যেন সে প্রত্যক্ষ করছে।

শুয়ে-শুয়েই আনন্দমোহন বসু বললেন—আমার সামনে সেই দিন উপস্থিত যেদিন এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে অনন্তের পথে যাত্রা করতে হবে, আজ এই যে আপনাদের দেখলাম, হয় তো এই আমার শেষ দেখা…আমি ঋষি নই, কোনো ঋষির পদধূলি গ্রহণেরও যোগ্য নই, তবু যিনি সকলের পিতা, ভারতবাসী ও ইংরেজের পিতা, তাকে আজ আমি আমার অন্তরের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই জন্যে যে তিনি আমাকে এইদিন পর্যন্ত জীবিত রেখেছেন, আমি যাবার আগে দেখে যেতে পারলাম এই এক জাতির অভ্যুদয়। এই যে মিলন-মন্দিরের ভিত্তি আজ প্রতিষ্ঠিত হলো, এই অখণ্ড বঙ্গভবন, এর ভিত্তি আমাদের সকলের অশ্রু-ধৌত আর্দ্র হৃদয়ের ওপর—এই শোণিতহীন নবতর সংগ্রামক্ষেত্রে আজ দেবতারা এসেছেন উধ্ব থেকে পুষ্পবৃষ্টি করতে

আনন্দমোহন বসুর পাশে শিখ নেতা কুঁয়ার সিং, কৃপাণধারী শিখ অনুচরদের নিয়ে উপস্থিত ছিলেন। বাঙলার পক্ষ থেকে সুরেন বাড়জ্জে উঠে নিজের হাতে রাখী বেঁধে দিলেন। বললেনবাঙলার আর পাঞ্জাবের প্রেমবন্ধন অটুট হোক।

সভায় তুমুল হাততালি পড়লো।

তারপর উঠলেন কবি রবীন্দ্রনাথ। তিনি ঘোষণা করলেন— ‘যেহেতু বাঙালী জাতির সর্বজনীন প্রতিবাদ অগ্রাহ্য করিয়া গভর্নমেন্ট বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ কার্যে পরিণত করা সঙ্গত বোধ করিয়াছেন, অতএব আমরা প্রতিজ্ঞা করিতেছি, বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদের কুফল নাশ করিতে আমরা সমগ্র বাঙালী জাতি আমাদের শক্তিতে যাহা কিছু সম্ভব, তাহার সকলই প্রয়োগ করিব, বিধাতা আমাদের সহায় হউন।

শুনতে-শুনতে ভূতনাথের বুকটাও কেঁপে উঠলো থর-থর করে। সেই নিবারণের কাছে একদিন শুনেছিল ব্রিটিশ অত্যাচারের কাহিনী। কেমন করে মিথ্যা দিয়ে, ছলনা দিয়ে ভারতবর্ষ একদিন জয় করে নিয়েছিল তারা। আর শুনেছিল আর একজনের কাছে। সে বদরিকাবাবু! বৈদূর্যমণি যেবার রাজাবাহাদুর হয়েছিলেন, সেবার বদরিকাবাবু বলেছিলেন—রাজাবাহাদুর তো নয়— রাজসাপ হয়েছে বড়বাবু। বলে গড়গড় করে সমস্ত ভারতবর্ষের ইতিহাসটা মুখস্ত বলে গিয়েছিল।

আজও কান পাতলে ভূতনাথ যেন সেদিনের সব কথা শুনতে পায়। ভবানীপুরের অর্ধসমাপ্ত বাড়ির ভারার ওপর দাঁড়িয়ে যখন কাজ তদারক করে তখন মাঝে-মাঝে কারা দল বেঁধে গান গাইতে গাইতে যায়–

“দণ্ড দিতে চণ্ডমুণ্ডে
এসো চণ্ডী যুগান্তরে–
পাষণ্ড প্রচণ্ড বলে
অঙ্গ খণ্ড খণ্ড করে…

চারিদিক থেকে চিৎকার ওঠে–বন্দে মাতরম্–

দুটি শব্দ। সমুদ্রতরঙ্গের অবিশ্রান্ত গর্জনের মতো সারা দেশের অন্তর থেকে এই শব্দ দুটি ধ্বনিত হয়ে ওঠে। সহস্র কণ্ঠের সংস্পর্শে দুটি শব্দ হয়ে উঠলো একটা জাতির মর্ম-সঙ্গীত। মহাকালের ইঙ্গিতে ওই দুটি শব্দই একদিন জাতির জাগ্ৰত-চেতনার মতো অক্ষয় হয়ে রইল।

সভার শেষে বড়বাড়িতে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভূতনাথ যেন বিমর্ষ হয়ে গেল কিছুক্ষণের জন্যে। বংশী এখনও ছোটবাবুর কাছে। তার দেখা পাওয়া গেল না। আস্তে-আস্তে সাইকেলটা আস্তাবলবাড়িতে রেখে নিজের চোরকুইরিতে গিয়ে ঢুকলো। তারপর মনে পড়লো একবার পটেশ্বরী বৌঠানের কথা। তখনও একটা রাখী আছে। বৌঠানের হাতে তো রাখী বাঁধা হয়নি।

অন্ধকার বারান্দা আজ। মেজবৌঠান হয় তো বাঘবন্দি খেলছে গিরির সঙ্গে নিজের ঘরে বসে। ওদিকে বড়বৌঠান চৌষট্টিটা সাবানের টুকরো নিয়ে হাত ধুতে ব্যস্ত বোধহয়। এখানে নতুন সমাজের শব্দ এসে পৌঁছোয় না বুঝি। দারোয়ান, দেউড়ি, সদর, অন্দরমহল পেরিয়ে এখানে আসতে বুঝি ভয় পায় তারা।

আস্তে-আস্তে ছোটবৌঠানের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ভূতনাথ। চুপি-চুপি ডেকেছিল—বৌঠান–

ভেতর থেকে বৌঠানের গলার শব্দ এল—কে? ভূতনাথ? আয়–আয়।

ঘরে ঢোকবার আগে কেমন যেন ভয় করছিল ভূতনাথের। অনেকদিন দেখা হয়নি বৌঠানের সঙ্গে। যদি গিয়ে দেখে বৌঠানের মুখের সে হাসি নেই, চোখের সে দীপ্তি নেই আর! স্বপ্নে দেখা বৌঠানকে দেখতে যেন ভয় করে। ভয় হয়—বড়বাড়ির চেহারা দেখলে যেমন আজকাল মায়া হয়, তার বৌঠানকে দেখেও যদি তাই হয়। পটেশ্বরী বৌঠান তার, ধ্যানের জিনিষ। তার আত্মার সম্পদ। পটেশ্বরী বৌঠানের কোনো ক্ষতি কোনো লোকসান যেন সহ্য করতে পারবে না ভূতনাথ।

কিন্তু না। সব ঠিক তেমনিই আছে। ঘরের প্রত্যেকটি জিনিষ, প্রত্যেকটি খুটিনাটি। এমন কি বৌঠানের যশোদাদুলাল পর্যন্ত। আলমারির সেই ঘাগরা-পরা মেম-পুতুলটি পর্যন্ত। আর বোঠান। বৌঠানের দিকে চাইলে ঠিক আগেকার মতোই চোখ যেন জুড়িয়ে যায়।

বৌঠান শুয়ে ছিল। বললে—আমি কিন্তু তোর ওপর রাগ করেছি ভূতনাথ।

ভূতনাথ আস্তে-আস্তে সামনে এগিয়ে গেল। বললে—তুমিও তো আর একবার ডেকে পাঠাওনি।

—আমি দেখছিলুম, আমি না ডাকলে তুই আসিস কি না।

ভূতনাথ বললে—একটা চাকরি করছি বৌঠান আজকাল, সময় পাই না আর আগেকার মতন।

—তাও শুনেছি বংশীর কাছে, বংশী বলছিল—শালাবাবুকে ডাকবো? আমি বললাম—তোর শালাবাবুর বিবেচনাটা কী রকম দেখি না..তা সবাই তো একে-একে চলে যাচ্ছে, তুই-ই বা আর আছিস কেন? তুইও চলে যা, ছোটকর্তার অসুখ, চাকর-বাকররা শুনছি আজকাল মাইনে পায় না নিয়ম করে, বড়বাড়ির বিপদের দিনে তত কেউ থাকবে না জানা কথা, তোরা সুখের পায়রা, তুই-ই বা কেন থাকবি, চলে যা।

ভূতনাথের বুক ফেটে কান্না পেতে লাগলো। বললে—তুমিও আমাকে এই কথা বলছে বৌঠান।

বৌঠান হাসতে লাগলো। বললে—তোর সঙ্গে বড়বাড়ির কীসের সম্পর্ক রে ভূতনাথ, তুই এ-বাড়িতে একদিন এসেছিলি হঠাৎ, আবার হঠাৎ চলে যাবি, তুই আমার কে বল না যে তোকে জোর করে ধরে রাখতে পারবো, আমার ভাই-ও নেই, বোমও নেই, বাবাও নেই, মা-ও নেই—আবার না-হয় মনে করবো আমি একলা। ছোটকর্তা যতদিন আছে ততদিন আমিও আছি—তারপর যা করে আমার যশোদাদুলাল–বলে হাসতে লাগলো বৌঠান। অদ্ভুত এক ধরনের হাসি।

ভূতনাথ বললে—আমারই বা কে আছে বলো?

–তুই পুরুষ মানুষ, তোর সব আছে ভূতনাথ।

—না, বৌঠান তুমি তো জানো না, আমার কেউ নেই, সংসারে নিজের বলতে আর কেউ নেই, এক তুমি ছাড়া।

বৌঠান এবার উঠে বসলো। কানে হীরের দুল দুটো ঝকঝক। করে উঠলো! হাতের চুড়ি গায়ের গয়না বেজে উঠলো টুং-টাং করে। বলে—আমাকে সত্যি তুই নিজের মতন মনে করিস ভূতনাথ?

ভূতনাথ মেঝের ওপরই বসে পড়লো। বললে—সত্যিই বিশ্বাস করে বৌঠান, তোমার মতো আপনার আমার আর কেউ নেই সংসারে। আজ যদি বড়বাড়ি থেকে আমাকে তোমরা তাড়িয়ে দাও, আমার কোনো যাবার জায়গাও নেই।

বৌঠান এবার উঠলো। বললে—তুই আমাকে আজ কিন্তু বকতে পারবিনে ভূতনাথ—আজ আমি একটু খাবোই—বলে আলমারির মধ্যে থেকে একটা বোতল আর একটা গেলাশ নিয়ে এল।

–এখনও ওটা খাও তুমি বৌঠান?

—রোজ খাই না, কিন্তু এক-একদিন না খেলে বড় কষ্ট হয় ভূতনাথ, না খেয়ে আর পারিনে।

ভূতনাথ বললে—তবে যে শুনলুম ছোটকর্তা ছেড়ে দিয়েছে একেবারে!

—ছোটকর্তা সত্যিই ছেড়ে দিয়েছে, যার জন্যে শুরু করলুম তিনি ছেড়ে দিলেন, কিন্তু আমি ছাড়তে পারছিনে আর।

—নেশা হয়ে গিয়েছে নাকি তোমার?

বৌঠান গেলাশটা মুখে উপুড় করে বললো ভাই, নেশাই হয়ে গিয়েছে বোধ হয়, তোর কাছে আর বলতে লজ্জা নেই, একদিন স্বামীকে ফেরাবার জন্যেই ধরেছিলাম, প্রথম-প্রথম কত গা ঘিনঘিন করতো, বমি-বমি হতো, আজ কিন্তু আর না হলে চলে না। তুই আজ আর বারণ করিসনে আমায়—আজ আমি প্রাণ ভরে খাবো।

–কিন্তু না খেলেই কি নয়?

বৌঠান সে-কথার উত্তর দিলে না। বোতলটা হাতে নিয়ে একবার ভালো করে দেখলে। আর সামান্যই মাত্র বাকি আছে। বললে—একটা কাজ করতে পারবি ভূতনাথ?

—কী?

–আর একটা বোতল না হলে আমার চলবে না।

—তার আমি কী করবো?

—ছোটকর্তা তো খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, আর কোথাও নেই, যে-ক’টা বোতল বাকি ছিল সব শেষ হয়ে গেল আজ, আর একটা বোতল এনে দিতে হবে তোকে।

—তুমি কি পাগল হয়েছে বৌঠান?

বৌঠান বললে—পাগলামি নয় রে ভূতনাথ, আমার খুব টনটনে জ্ঞান রয়েছে, ছোটকর্তাকে সেদিন তো তাই বলছিলাম, ও-মানুষটাই বা কী করবেন, একদিন আমাকে ধরিয়েছিলেন উনিই, সেদিন বললেন—ছাড়ো, ওটা ছেড়ে দাও ছোটবউ, ও বড় সর্বনাশা নেশা, পুরুষদের ধরলে তবু ছাড়ে, মেয়েদের একবার ধরলে আর রক্ষে নেই।

ভূতনাথ খানিকক্ষণ পাথরের মতন চুপ করে চেয়ে রইল বৌঠানের দিকে।

বৌঠানের চোখ দিয়ে ঝর-ঝর করে জল পড়তে লাগলো। বললে—সেই শেষকালে আমি স্বামীকে পেলুম ভূতনাথ কিন্তু এমন করে পেতে কে চেয়েছিল?

বৌঠানকে এমন করে কাঁদতে কখনও দেখেনি ভূতনাথ। চোখ দিয়ে জল পড়ছে টপ-টপ করে যেন এক-একটা হীরের টুকরো। বললে—এক-একবার যাই ছোটকর্তার ঘরে, ভারী কষ্ট হয় দেখে। নড়তে পারেন না, সমস্ত অঙ্গ পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। অমন রূপ, অমন স্বাস্থ্য, অমন মন, ওই অসুখ, তবু ওঁর চোখে জল নেই রে একটু, আমি কেঁদে ভাসিয়ে দিলুম পায়ের ওপর মাথা রেখে, আমার যশোদাদুলালকে তো তাই বলছিলাম, এ তুমি কী করলে ঠাকুর, আমার মানুষকে আমার কাছে ফিরিয়েই দিলে যদি, তবে অমন করে তার সব কেড়ে নিলে কেন? আমি তোমার কাছে কী অপরাধ করেছি, এ তোমার কেমন বিচার ঠাকুর?

ছোটকর্তা আমার কান্না দেখে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেলেন। জানিস ভূতনাথ, একটা কথা পর্যন্ত বললেন না। আজ তার বলবার মতো মুখও নেই বুঝি।

ভূতনাথ বললে—আর একদিন যাবে বৌঠান?

–কোথায় রে?

—সেই যে সেখানে, বরানগরে?

বৌঠান বললে—যেতে চাস চল কিন্তু আমার সব বিশ্বাস আজ হারিয়ে ফেলেছি ভূতনাথ, আমার মনে হয় এমন করে যশোদাদুলালকে মিনতি করলাম, এত পূজো, এত উপোস, এত ব্ৰত করলাম, আমার যা সাধ্য সব করলাম, এততেও যখন হলো না তখন আর কিছুতেই হবে না। মানুষের ওপর, দেবতার ওপর, এমন কি নিজের ওপরও আর বিশ্বাস নেই। নিজের মনের ওপরও আর যেন জোর নেই।

ভূতনাথ বললে—একটা কথা শুনবে বৌঠান, সমস্ত ফিরে পাবে তুমি, শুধু মদটা তুমি খেয়ো না।

বৌঠান বললে—আমারও কি খেতে সাধ ভাই, কিন্তু ওই যে বললুম নিজের ওপরেও আর বিশ্বাস নেই–কতবার ঠিক করি খাবো না, স্বামী যার রোগশয্যায় শুয়ে আছে, তার এ খাওয়া উচিত নয়, প্রতিজ্ঞা করি আর আমি ছোঁবো না, যশোদাদুলালের পা ছুঁয়ে কতবার দিব্যি করলুম, কই, রাখতে তত পারিনি আমার প্রতিজ্ঞা—আমি পারবো না ভূতনাথ। আজকের মতো তুই এনে দে লক্ষ্মীটি।

ভূতনাথ উঠলো এবার। বললে—আজ আমি আনছি—কিন্তু আর কখনও আমাকে বলে না।

বৌঠান বললে–আর যদি কখনও খাই, তুই আমাকে শাপ দিস ভূতনাথ, তুই বামুনের ছেলে, তুই শাপ দিস আমাকে-তুই শাপ দিলে নির্ঘাৎ ফলবে।

ভূতনাথ হাসলে—তোমাকে শাপ দিলে সে-শাপ বুঝি আমার গায়ে লাগবে না ভেবেছে।

বোঠান বললে তোকে সত্যি কথাই বলি ভূতনাথ, আমার আর বাঁচতে সাধ নেই, বেঁচে তো দেখলাম অনেকদিন, এবার দেখবো মরে কত সুখ।

ভূতনাথ হঠাৎ বললে—আমারও আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না বৌঠান।

—তুই কোন্ দুঃখে মরবি ভূতনাথ, তোর আমি কোনো অভাব রাখবো না, আমার যা কিছু আছে যাবার আগে সব তোকে দিয়ে যাবো, আমার শাশুড়ীর যত গয়না, সব আমাকে দিয়ে গিয়েছেন, আমি ছোটবউ ছিলাম, বড় আদরের বউ ছিলাম রে এ-বাড়ির, আমার সব তোকে দেবো।

বোতলের শেষটুকু গেলাশে ঢেলে নিয়ে সেটুকুও মুখে ঢেলে দিলে বৌঠান। তারপর বললে—এবার যা, আর একটা বোতল নিয়ে আয় তুই, কাল থেকে আর আমি খাবো না—কথা দিচ্ছি—বলে হঠাৎ এক কাণ্ড করে বসলো বৌঠান। ভূতনাথের পা দুটো ছুঁয়ে বললে—এই কথা দিচ্ছি তোকে ভূতনাথ।

তাড়াতাড়ি নিজের পা দুটো সরিয়ে নিয়ে ভূতনাথ দুটো হাত চেপে ধরলো বৌঠানের। বললে-করলে কি—ছিঃ–ছিঃ–নেশা হলে মানুষের আর জ্ঞান থাকে না!

বৌঠান হাত দুটো মাথায় ঠেকিয়ে বললে—না রে, তুই বামুন, নিলে দোষ নেই।

ভূতনাথ রেগে গেল। বললে—এরকম আর কখনও করো না বৌঠান—যদি করো আর কখনও তোমার কাছে আসবে না।

বৌঠান তখন অঝোরে কাঁদতে শুরু করেছে। চুপ করে বসে চোখ বুজে আছে। আর দুই গাল বেয়ে ঝর-ঝর করে জল গড়িয়ে পড়ছে। ভূতনাথ তখনও দুই হাতে ধরে রয়েছে বৌঠানকে। হাত দুটো ছেড়ে দিলেই যেন বৌঠান পড়ে যাবে। যেন অবশ হয়ে গিয়েছে বৌঠানের সারা শরীর। বললে—আর একদিন সত্যি যাবে ভূতনাথ বরানগরে।

ভূতনাথ বললে—কবে যাবে বৌঠান?

বৌঠান বললে-ছোটবাবু একটু ভালো হোক, এখন বড় ভয় করে..কখন ছোটকর্তার কী হয়—সারাদিন ও-মানুষ রোগে কাতর হয়ে পড়ে থাকে, মনটা কেমন যেন করে-মাঝে কখনও যদি ডাকেন..আজকাল বড় ডাকেন আমাকে, অনেক কথা বলেন।

আমি বলি—কিছু ভয় নেই, তুমি আবার সেরে উঠবে।

ছোটকর্তা বলে—আমি হয় তো আর সারবো না ছোটবউ!

আমি বুঝিয়ে বলি—তোমাকে যে সেরে উঠতেই হবে, নইলে আমার পূজো-উপোস-ব্ৰত সব মিথ্যে হবে যে!

এক-একদিন যখন আমার মুখে গন্ধ পান, তখন ওঁর চোখ দুটো কঠোর হয়ে আসে, বলেন—তুমি এখনও ওটা ছাড়তে পারেনি।

আমি বলি—কী করে ছাড়বো তুমি বলে দাও?

—নিজের মনের জোরেই ছাড়তে হবে, তোমার ইচ্ছে না হলে কেউ ছাড়াতে পারবে না।

সেইদিন থেকে চেষ্টা করি কতরকম ভাবে। বার-বার যশোদা  দুলালের পায়ে লুটিয়ে পড়ি, কত কাদি, তারপর কখন ঘুমিয়ে পড়ি, পোড়া চোখে ঘুমও তো আসে আমার, কিন্তু আবার এক সময় সব প্রতিজ্ঞা, সব কল্পনা ধুয়ে-মুছে যায়, তখন স্বামী, সংসার, আমার যশোদাদুলাল সকলের কথা ভুলে যাই। মনে হয়, যেন কতদিন ঘুমোইনি, কতকাল খাইনি, তখন নিজেই বোতলটা পেড়ে নিয়ে, একটু খাই—আবার কাঁদি, আবার অনুতাপ হয়।

বৌঠান আবার বললে-যা ভূতনাথ, ওই সিন্দুক খুলে টাকা নিয়ে যা। আজকের মতো শেষবার খাবো, কাল থেকে আর ও ছোঁবো না—কথা দিচ্ছি তোকে।

কিন্তু সিন্দুক খুলে ভূতনাথ সেদিন কম অবাক হয়নি। আর একদিন এমনি নিজের হাতে ভূতনাথ সিন্দুক খুলে সুবিনয়বাবুর দেওয়া পাঁচ শ’ টাকা রেখে দিয়েছিল। সেদিন সে-সিন্দুকের ভেতর কত ঐশ্বর্য দেখে চোখ ঝলসে গিয়েছিল ভূতনাথের। কত গয়না, কত মোহর অগোছালো ভাবে ছড়ানো ছিল চারিদিকে। আজ যেন মনে হলো অনেকটা খালি। অন্ধকারে ভালো করে দেখা যায় না। তবু অনেক খুঁজেও যেন কোথাও টাকা পাওয়া গেল না।

ভূতনাথ বললে—টাকা তো নেই বোঠান এখানে!

—নেই? বলে বৌঠান নিজেই এবার নেমে এল পালঙ থেকে। বললে–সামনেই রয়েছে আর দেখতে পাসনে তুই ভূতনাথ–কিন্তু নিতে গিয়ে বৌঠানও যেন কেমন অবাক হয়ে গিয়েছে। বললে— কোথায় গেল বল তো! এই রূপোর বাটিতেই তো থাকতো। বোঠানও অনেক খুজলো। শেষে বললে-“থাক গে, দরকার নেই, রাত হয়ে যাচ্ছে, এইটে নিয়ে যা। কানের একটা মুক্তোর ফুল দিয়ে বললে—এইটেই নিয়ে যা তুই।

–ওই মুক্তোর ফুল? ওর যে অনেক দাম বৌঠান?

–তা হোক, ওরকম কত আছে, বেঁচে থাকলে আরো কত হবে, তুই আর ‘না’ করিস নি ভূতনাথ, দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ভূতনাথ বিস্ময়ে অবাকই হয়েছিল সেদিন। কিন্তু বৌঠানের আদেশ অমান্য করবার সাহস তার ছিল না। সেই রাত্রে স্যাকরার। দোকানে কেমন করে ফুলটা বাধা দিয়ে টাকা এনেছিল তা আজো মনে আছে। বৌঠানের ঘরে বোতলটা দিয়ে যখন ফিরে যাচ্ছে। তখন রাত বেশ গভীর হয়েছে।

আস্তে-আস্তে বাইরে পা দিতেই কে যেন পেছন থেকে বলে উঠলো—কে?

মেজবাবুর গলার মতন অওয়াজ।

এক নিমেষে অন্ধকারের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে ভূতনাথ চোরকুরির মধ্যে পালিয়ে এসেছিল। কিন্তু মেজবাবু তখনও হাঁকডাক দিচ্ছে—কে গেল ওদিকে? কে?

চোরকুরির মধ্যে ঢুকেও যেন বুকের সে অস্থিরতা থামেনি ভূতনাথের সেদিন। যদি এখনি ধরা পড়ে যেতো! যদি কেউ দেখতে পেতো! সর্বনাশটার সবটুকু কল্পনা করতে গিয়ে বারেবারে বিছানায় শুয়েও শিউরে উঠেছিল ভূতনাথ। কিন্তু মেজবাবু এমন সময়ে বাড়ির অন্দরমহলে আসবে সেদিন, কে জানতো! এমন তো কখনও আসে না। রাত বারোটার আগে মেজবাবুর গাড়ি কখনও ঢোকেনি বাড়িতে। মেজবাবু এলে বাড়িতে সোরগোল পড়ে যায়, পাড়ার লোক টের পায়। দারোয়ান থেকে বেণী, চাকর-বাকর সবাই সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে। শুধু মেজগিন্নীই এক অঘোরে ঘুমিয়ে থাকে নিজের ঘরে।

পরের দিন বংশী বললে—খুব বেঁচে গিয়েছেন কাল আপনি শালাবাবু।

—মেজবাবু খুঁজেছিলেন বুঝি?

বংশী বললে—আমাকে ডাকলে মেজবাবু, বললে—কে গেল রে ওখান দিয়ে?

–তুমি কী বললে?

–আমি বললাম—আমিই তো বেরোলাম ছোটমা’র ঘর থেকে, ছোটমা ডেকেছিল আমাকে। মেজবাবু তবু ছাড়ে না, বলে— বারান্দাটা অন্ধকার করে রাখিস কেন, লোক চেনা যায় না।

–তোমার ছোটমা কী বললে?

বংশী বললে-ছোটমা শুনে বললে—যদি এর পরে কেউ জিজ্ঞেস করে কোনো দিন ভূতনাথের কথা, বলবি, আমার গুরুভাই। তা ভাগ্যিস সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল আজ্ঞে, নইলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেত। মেজবাবুর মেজাজ যে রাশভারী, যখন ভালো তো ভালো, একবার রাগলে ঠিক ছোটবাবুর মতন হুজুর, আর জ্ঞান থাকে না।

—তা মেজবাবু কাল অত সকাল-সকাল বাড়ি ফিরেছে যে?

—মেজবাবু তো কাল বেরোয় নি, ভৈরববাবু এল তখন সন্ধ্যে, হাসিনী, মাঠাকরুণ ওঁয়ারাও এলেন, একে-একে সবাই ফিরে গেল, মেজবাবু কারোর সঙ্গে দেখা করলেন না, কাল কেবল তামাক খেয়েছেন বসে-বসে নাচঘরের ভেতর, মেজাজ ভালো যাচ্ছে না এ ক’দিন—আর ছোটবাবুরও অসুখ, বাড়িতে শান্তি নেই কারো মনে।

-কিন্তু কেন এমন হলো রে বংশী?

বংশী বললে—সত্যি মিথ্যে জানিনে শালাবাবু, শুনছি তত বাবুদের কয়লার ব্যবসা ফেল পড়েছে, কে জানে, ওদিকে খাজাঞ্চীখানায় পাওনাদারের ভিড় দেখেন না–দিনরাত হা-পিত্যেশ করে লোক ধতে দিচ্ছে। শুনছি নাকি বাবুরা বাড়ি বিক্রি করে দেবে–সত্যি মিথ্যে ভগমান জানেন।

–কিন্তু তা হলে যাবে কোথায় সব? এতগুলো লোক, দুটো দশটা তো নয়!

বংশী যেন হতাশায় হাত দুটো চিত করে ফেললে। বললে–ছুটুকবাবু তো পাথুরেঘাটায় গিয়ে উঠবে, এই বলে রাখছি আপনাকে শালাবাবু, দিনরাত তো দত্তমশাই আসছে সেই বিয়ে হওয়া এস্তোক, ছুটুকবাবুও শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে এক-একদিন রাত কাটিয়ে আসে, এমন তো কখনো দেখিনি বড়বাড়িতে, এত বছর কাটিয়ে দিলাম এখানে—তা ছুটুকবাবুই কয়লার ব্যবসা ধরালে, শেষকালে ওই ব্যবসাতেই গেল তো–মেজবাবু-ছোটবাবুর তত ইচ্ছে ছিল না আজ্ঞে।

–তুমি ঠিক ভালোরকম জানো, কয়লার ব্যবসা ফেল হয়েছে?

—লোকে তো বলে আজ্ঞে।

–কোন লোক?

—আমাদের আর জানতে কি কিছু বাকি থাকে শালাবাবু, বালকবাবু যখন অত ঘন-ঘন আসা-যাওয়া করছে তখনই বুঝেছি একটা কিছু অনখ বাধবে, তারপর সেদিন অত খাওয়া-দাওয়া হলো! মারোয়াড়ীবাবুরা আসছে যাচ্ছে, আর তো কই আসতে দেখি না, ভৈরববাবু তো তেমন আসে না আজকাল, আজকাল তেমন পায়রাও ওড়ায় না মেজবাবু।

—তা মেজবাবু কোথায় যাবে?

–আজ্ঞে, মেজবাবুর ভাবনা কী? মেজবাবুর শ্বশুরের তিরিশখান বাড়ি কলকাতায়, ছেলে নেই তো, মেজমা’ই একমাত্র মেয়ে, তাই দেখেন না, নাতিরা সারা বছরই দাদামশাই-এর কাছে থাকে, আজকাল তো সেখানেই লেখাপড়া করছে, সেখানেই থাকে, শ্বশুরের সম্পত্তি সবই তো মেজবাবু পাবে। ভাবনা তো ছোটবাবু আর ছোটমা’র জন্যে শালাবাবু, কোনো কিছুতে নেই, অথচ যত দুখ-কষ্ট সব ছোটবাবুরই। তাই তো দেখি-ছোটবাবু দিনরাত শুয়ে পড়ে আছে, কাছে গিয়ে পায়ে হাত বুলিয়ে দিই আর মানুষটাকে দেখে চোখ ফেটে জল পড়ে, কী বাবুই ছিল আজ্ঞে, একখানা কাপড় দু’বার পরতো না কখনও, একখানা পাঞ্জাবী দু’বার গায়ে দিতো না, সেই মানুষের এখন কোনো দিকে নজর নেই, ময়লা ময়লাই সই, আগে ভালো গিলে না হলে আমায় জুতো-পেটা করতো ধরে। সেই মানুষকে একবার দেখে আসুন গিয়ে, শুয়ে আছে যেন শিব একেবারে, সাক্ষাৎ শিবের মতন শুয়ে পড়ে আছে। তাই তো পা দুটো মাথায় ঠেকিয়ে এক-একবার হাউহাউ করে কেঁদে ফেলি—আর থাকতে পারিনে আজ্ঞে।

ভূতনাথেরও তাই মনে হয়, এ আর ক’দিন! যখন সবাই এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবে! কিন্তু একমনে কাকে লক্ষ্য করে যেন ভূতনাথ তার একান্ত প্রার্থনা জানায়—তেমন ঘটনা যেন চোখে দেখতে হয়—তেমন দৃশ্য দেখবার আগে যেন এ-বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে পারে সে! সে বড় মর্মান্তিক যে!

সেদিন আরো মর্মান্তিক লাগলো আর একটা ঘটনা। ঠিক মৌলালির কাছে। সামনে একটা গাড়ি আসছিল। সাইকেল থেকে নেমে দাঁড়াতেই যেন অবাক লাগলো। সন্ধ্যেবেলা। ভালো করে অন্ধকার হয়নি। তবু আশে পাশের দোকানে রাস্তায় আলো জ্বেলে দিয়েছে। সাইকেল-এর বাতিটাও জ্বলতে হবে। মোড়ের একটা পান-বিড়ির দোকানে দেশলাই কেনবার জন্যে দাঁড়ালো গিয়ে।

পেছন থেকে কে যেন হঠাৎ এসে ডাকলে—শালাবাবু!

পেছন ফিরে চেহারা দেখেই অবাক হবার কথা! অথচ এমন চেহারা চিনতে না পারাই তো উচিত। সে-চেহারাই বদলে গিয়েছে বৃন্দাবনের। ছোট বড় করে চুল ছাঁটা। মুখে পান। পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন কামানো মুখ।

ভূতনাথ বললে—তুমি? বৃন্দাবন?

–আজ্ঞে, যাচ্ছিলাম রাস্তা দিয়ে, দেখলাম কিনা আপনাকে, চুনীদাসী বললে—ভালোমানুষবাবু না?

ভূতনাথ বললে—চুনীদাসী? কোথায়?

–ওই তো।

ভূতনাথ এদিক-ওদিক চেয়ে কোথাও দেখতে পেলে না চুনীদাসীকে।

—ওই যে শালাবাবু, গাড়িতে বসে আছে।

এতক্ষণে দেখা গেল। নীল রং-এর একটা মোটরগাড়ি। তারই এক কোণে বসে আছে।

—চলুন, আপনাকে ডাকছে যে চুনীদাসী।

সাইকেলটা হেলান দিয়ে রেখে ভূতনাথ মোটরের কাছে গেল। চুনীদাসীকে দেখেও অবাক হয়ে গেল ভূতনাথ। এত গয়না, এত তো ছিল না আগে! মোটরগাড়ি আবার কিনলে কবে! বৃন্দাবনের পোষাক-পরিচ্ছদেরও বাহার বেড়েছে।

চুনীদাসীর হাতে রূপোর পানের ডিবে। গাল ভরা পান। মুখ বাড়িয়ে পানের খানিকটা পিক ফেলে হাসতে-হাসতে বললে— হাগা ভালোমানুষবাবু, আমাদের চিনতে পারো?

ভূতনাথ কেমন যেন আড়ষ্ট হয়ে গেল। মুখে একটা হাসি আনবার চেষ্টা করতে গিয়েও যেন কেমন বিকৃত হয়ে গেল মুখটা।

—আমি তো মরে গিয়েছিলুম একেবারে ভালোমানুষবাবু, মাস দুই হাসপাতালে ছিলুম, এখন ক’দিন হলো উঠতে পেরেছি। ডাক্তারে বলে একটু করে গঙ্গার হাওয়া খেতে, তাই বেড়াতে গিয়েছিলাম—তা সেই যে গিয়েছিলে আমার বাড়ি—বলি আর একবার কি আসতে নেই?

ভূতনাথ আমতা-আমতা করে বললে-একেবারে সময় পাওয়া যায় না…বড় খাটুনির চাকরি।

বৃন্দাবন বলে—আগে তবু বড়বাড়ির খবর-টবর পেতাম মধুসূদন খুড়োর কাছে, কি লোচনের কাছে—তা এখন আর তারও উপায় নেই। মধুসূদন খুড়ো আর আসছে না দেশ থেকে।

—লোচন তো পানের দোকান করেছে বড়বাজারে।

—তা করবে না কেন শালাবাবু, কাজ গুছিয়ে নিয়ে সরে পড়েছে সে–তা এখন কে কাজ করছে ওদের জায়গায়?

বিনা লোকেই চলছে। বৃন্দাবন হা হা করে হাসতে লাগলো—তখনই চুনীকে বলেছিলাম, ছোটবাবু-ছোটবাবু করেছিলে এখন দেখ—দত্তমশাই সত্যি কথাই বলে।

—কে দত্তমশাই?

—নটেবাবু, এত বড় একটা কাণ্ড ঘটে গেল, চুনীর তো প্রাণ নিয়েই টানাটানি, হাজার-হাজার টাকার ওষুধ খরচাই হয়ে গেল, আমরা তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম, ছোটবাবু তো একবার দেখতেও এল না।

বাধা দিয়ে চুনীদাসী হঠাৎ বললে—ছোটকর্তা এখন কেমন আছে ভালোমানুষবাবু?

হেলান দিয়ে বসেছিল চুনীদাসী। শান্তিপুরী শাড়ির জরির আঁচলটা বুকের ওপর লোটাচ্ছে। এতক্ষণে ভালো করে দেখে ভূতনাথের মনে হলো যেন একটু দুর্বলই দেখাচ্ছে চুনীদাসীকে! নাকের হীরের নাকছাবি, পাউডার আর গয়নার জৌলুশে এতক্ষণ বোঝ যায়নি ভালো করে। জিজ্ঞেস করলে–ডাক্তার কি বলে?

–বলে আর সারবে না।

—সে কি কথা ভালোমানুষবাবু, দেখে না বুঝি কেউ? ছোটবৌ কি সেবা-যত্ন করে না ভালো মতন?

চুনীদাসীর চোখ দুটো যেন করুণ হয়ে উঠলো। বললে— অন্যবার অসুখের সময় আমার কাছে এলেই সেরে উঠতো। তা আমি আর কী করবো ভালোমানুষবাবু—আমার এমন করে হাত-পা বাঁধা না থাকলে একবার গিয়ে নিয়ে আসতাম আমার বাড়িতে।

বৃন্দাবন ঝাঁজিয়ে উঠলে—তুমি আর বকো না চুনী, দত্তমশাই কি সাধ করে বলে—দত্তমশাই ছিল বলে এ-যাত্রা বেঁচেছে, মনে থাকে যেন।

সে-কথায় কান না দিয়ে চুনীদাসী বললে–রোগ শুধু ওষুণে সারে না ভালোমানুষবাবু, সেবা চাই, যত্ন চাই। বড়বাড়িতে সেবা যা হবে তা তো বুঝতেই পারছি, আমি তো ওখানে ছিলাম, সব জানি। দিনের বেলা বউদের দেখা করবার হুকুম নেই। যা করে সেই বদমাইশ বংশীটা-ওটাকে দেখতে পারি নে দু’চক্ষে।

বৃন্দাবন বললে—এই দেখুন না শালাবাবু, দত্তমশাই ছিল বলেই না আবার আমার চুনীর গাড়ি হয়েছে–গয়না হয়েছে, ছোটবাবুর ওপর ভরসা করে থাকলেই হয়েছিল আর কি! চলে, চুনী, দত্তমশাই বোধহয় এতক্ষণ এসে গিয়েছে।

চুনীদাসী বললে—একটা কাজ করবে ভালোমানুষবাবু!

—কী কাজ?

—ছোটবাবু যখন মদ খাবে, তখন একটা ওষুধ খেতে দেবো মদের সঙ্গে-বরাবর খেতে সেইটে ছোটকর্তা।

ভূতনাথ বললে-মদ তো আর খায় না ছোটকর্তা, ছেড়ে দিয়েছে।

–ছেড়ে দিয়েছে?

বৃন্দাবনও অবাক হয়ে গেল।—ছেড়ে দিয়েছে?

–হ্যাঁ, ছোটবাবু মদ ছোঁয় না পর্যন্ত—ডাক্তার বারণ করেছে, বলেছে মদ খেলে আর বাঁচবে না।

কথাটা শুনে দুজনেই যেন কিছুক্ষণের জন্যে কথা বলতে পারলে। যেন মনে হলো মর্মান্তিক আঘাত পেলে।

বৃন্দাবন বললে—শিবের বাবার সাধ্যি নেই এ-রোগ সারায়।

চুনীদাসী কিছুই বললে না।

বৃন্দাবন বললে—চলো, চলো, দত্তমশাই বোধহয় হা-পিত্যেশ করে বসে আছে এখন।

যাবার সময় চুনীদাসী একটা কথাও বললে না। যেন নির্বাক হয়ে গিয়েছে খবরটা শুনে। গাড়িটা হুশ করে চলে গেল ধোঁয়া উড়িয়ে। অথচ সেবারে দেখা হলে বারবার করে আসতে বলেছিল ভূতনাথকে। না-আসতে বলেছে ভালোই হয়েছে। সেদিনকার সেই নেশাচ্ছন্ন অবস্থায় কী করে যে শেষ পর্যন্ত বড়বাড়িতে এসে পৌচেছিল ভূতনাথ, তাই একটা আশ্চর্য ঘটনা। সমস্ত কলকাতাময় যেন ঘুরে বেড়িয়েছে সে। সমস্ত ইতিহাসটা যেন প্রদক্ষিণ করেছে। শেষে মেছোবাজারের সেই গুণ্ডাপাড়ার কাছে এসে যখন নিশানা পেয়েছিল তখনই ফিরে এসেছিল বড়বাড়িতে। বাড়িতে যখন এসে পৌঁছেছিল তখন রাত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। মেজবাবুর গাড়ি তার আগেই এসে পৌঁছে গিয়েছে। ছোটবাবু তখনও আসেনি। ব্রিজ সিং গেট-এ দাঁড়িয়ে তুলছিল। সাড়া পেয়ে জিজ্ঞেস করেছিল—কোন্ হ্যায়?

বংশী এসে সব দেখে-শুনে মাথায় বরফ দিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে দিয়েছিল। বললে—কী সব্বনাশ করেছিলেন আজ্ঞে, বলুন তো?

ভূতনাথ বললে—ওরা পালিয়েছে?

–কারা?

–যারা আসছিল পেছন-পেছন—গুণ্ডারা?

—কেউ তো আসেনি।

ভূতনাথের যেন তখনও মনে হচ্ছিলো মেছোবাজারের কাফ্রি গুণ্ডারা সেই রাত্রে তখনো তার পেছন-পেছন আসছে। যেন তাদের পায়ের শব্দ বাজছে কানে। তাদের ফিসফিস আওয়াজ, গুজগুজ, ফুসফুস। সমস্ত রাত্রির নিস্তব্ধ প্রহর গুলো তখন যেন থমথম করছে থেকে-থেকে। বুকের ধড়ফড়ানি থামেনি তখনও।

এ-সব বেশি দিনের কথা নয়। কিন্তু সেই বড়বাড়ি দেখতেদেখতে কী হয়ে গেল। কেন যে কার পরামর্শ শুনে কয়লার খনি কিনতে গেল চৌধুরীবাবুরা। মধুসূদন তখন ছিল। যেবার কয়লার খনি কেনা হলো সেবার খনি দেখতে গিয়েছিল সে।

মেজবাবু বলেছিল—এখনও তো কিছুই হয়নি, সবে খুড়ছে।

মধুসূদন বললে—তাই-ই দেখবো হুজুর, কেমনভাবে কয়লা ওঠে—এই সব।

তা শেষ পর্যন্ত ছুটি নিয়ে গেল মধুসূদন। ফিরে এল একদিন পরেই। বললে—কিচ্ছু হয়নি শালাবাবু, এখন শুধু আপিস বসেছে, মাপ-জোপ হচ্ছে চারিদিকে, জল তুলে ফেলছে নলে করে আর হাজার-হাজার কুলি মাটি খুড়ছে কেবল—আর চারদিকে শুধু মাঠ, ধোঁয়া, আর কালো-কালো ধুলো।

—ধোঁয়া কেন?

–কাঁচা কয়লা পোড়াচ্ছে যে চারদিকে—সেই কয়লায় রান্না হবে।

—তোর কোথায় খাওয়া-দাওয়া করলি?

-রান্না করলুম মাঠের ধারে, একবেলা তো ছিলুম, শুধু, কপিকল বসবে, ইঞ্জিন চলবে, এখন অনেক দেরি, মাটির ভেতর কুলিরা সব নামবে—নেমে কাজ করবে, ওখানে দিনরাত কাজ হয় কি না!

মধুসূদন সুখচরে আগে গিয়েছে, এখন আবার বাবুদের কয়লার খনিও দেখে এল। তা সেই কয়লার খনি তারপর যে এমন করে ফেল মারবে কে ভাবতে পেরেছিল। কত লক্ষ টাকা জলে চলে গেল শুধু-শুধু। ঘরে এল না একটা পয়সা।

ভাবতে-ভাবতে অনেক দেরি হয়ে গেল। সরকারবাবু হঠাৎ বললে—ওই বাবু এসে গিয়েছেন।

–কই?

—গাড়ির বাজনা শুনছেন না!

সত্যিই রূপচাঁদবাবু এলেন। গাড়ি থেকে নেমে বললেন–ভূতনাথবাবু কই?

—আজ্ঞে, আমাকে ডাকছিলেন?

রূপচাঁদবাবু থমকে দাঁড়ালেন—এই তো, আপনাকে খুঁজছিলুম, শুনেছেন সুবিনয়বাবুর অসুখ!!

–সুবিনয়বাবুর অসুখ? আমি তো কালকেও গিয়েছিলাম, কোনো খারাপ কিছু দেখিনি তো তখন।

-হ্যাঁ, এইমাত্র খবর পেলাম, অবস্থা বড় খারাপ, আমাদের সমাজের সবাই গিয়েছেন, আমি যাচ্ছি এখন, আপনি যাবেন নাকি?

সুবিনয়বাবুর অসুখের খবর শোনার সঙ্গে-সঙ্গে জবার কথাটা মনে পড়লো ভূতনাথের। বললে—আমার তো একটু দেরি হবে, একটু বাকি আছে, ভাউচারগুলো বুঝিয়ে দিয়েই যাচ্ছি।

–তবে আমি যাই, আপনি আসুন।

সকল অধ্যায়

১. ০১. কাহিনী
২. ০২. ১৬৯০ সালের জব চার্নকের কলকাতা
৩. ০৩. সকাল বেলা ব্রজরাখালের ডাকে
৪. ০৪. সেদিন আপিস থেকে ব্রজরাখাল ফিরলো
৫. ০৫. মোহিনী-সিঁদুর
৬. ০৬. সেদিন তেমন কিছু গোলমাল হলো না
৭. ০৭. বনমালী সরকার লেন
৮. ০৮. আয়ের বহরটা বোঝা যায় না
৯. ০৯. এখন এই পরিবেশের মধ্যে
১০. ১০. একা পেয়ে সেদিন বংশী এসে ধরলো
১১. ১১. আজ এতদিন পরে ভাবতে অবাক লাগে
১২. ১২. মোহিনী-সিঁদুর আপিসে
১৩. ১৩. ১৮৯৭ সাল
১৪. ১৪. ভোর বেলাই বংশী এসেছে
১৫. ১৫. সেদিন আবার
১৬. ১৬. আজো মনে আছে সেটা শুক্রবার
১৭. ১৭. তখন বিংশ শতাব্দীর শুরু
১৮. ১৮. কোথা দিয়ে ঘুমের মধ্যে দিয়ে
১৯. ১৯. বিকেলবেলার দিকে ভূতনাথ
২০. ২০. সেদিন ছোটবৌঠান ডেকে পাঠালেন
২১. ২১. আজ এতদিন পরে ভাবতে যেন কেমন লাগে
২২. ২২. শহর তখন নিঝুম
২৩. ২৩. বংশী চলে গেল
২৪. ২৪. এর পর থেকে ভূতনাথের জীবনে
২৫. ২৫. ইতিহাসের একটা বাঁধা পথ আছে
২৬. ২৬. পায়রা ওড়ানো শেষ হতে
২৭. ২৭. সেদিন সেই ঘটনার পর
২৮. ২৮. বংশী দেখতে পেয়েই দৌড়তে
২৯. ২৯. বার-শিমলের পথে একলা হাঁটতে
৩০. ৩০. নটে দত্তকে ভূতনাথের এই প্রথম দেখা
৩১. ৩১. জবাদের ঘোড়ার গাড়ির পেছনে
৩২. ৩২. বড়বাজারে গলির ভেতর দাঁড়িয়ে
৩৩. ৩৩. এক সঙ্গে এক গাড়ির মধ্যে
৩৪. ৩৪. খিড়কির গেট পেরিয়ে
৩৫. ৩৫. দিন গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়
৩৬. ৩৬. ব্ৰজরাখাল সেদিন ‘কল্যাণ হোক’ বলে আশীর্বাদ
৩৭. ৩৭. সন্ধ্যেবেলা রূপচাঁদবাবুর বাড়িতে
৩৮. ৩৮. রূপচাঁদবাবু চলে গেলেন
৩৯. ৩৯. আজো ভূতনাথের মনে আছে স্পষ্ট
৪০. ৪০. চোরকুঠুরির ভেতর শুয়ে
৪১. ৪১. ম্যানেজারের সঙ্গে আর একদিন দেখা
৪২. ৪২. কলকাতার রাস্তা তখন জনহীন
৪৩. ৪৩. সকালবেলা দুমদুম করে কে দরজা ঠেলছে
৪৪. ৪৪. ছোটবৌঠান সেদিন কী রাগই করেছিল
৪৫. ৪৫. ভোর বেলা ট্রেন
৪৬. ৪৬. সেদিন ভূতনাথের একটিমাত্র উদ্দেশ্য ছিল
৪৭. ৪৭. সকাল বেলার গণ্ডগোল শেষ হতে বিকেল
৪৮. ৪৮. সেদিন চাঁদনীর হাসপাতালে শুয়ে ভূতনাথ
৪৯. ৪৯. চাঁদনীর হাসপাতালে শুয়ে
৫০. ৫০. উপকাহিনী

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন