খানাতল্লাশ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

শীর্ষেন্দু মুখােপাধ্যায়

খানাতল্লাশ

আসুন ইনস্পেকটর, আসুন!

বলতে কী, একটা জীবন আমি আপনার জন্যই অপেক্ষা করেছি। আপনি আসবেন, খানাতল্লাশিতে লন্ডভন্ড করে দিয়ে যাবেন আমার সযত্নে সাজানো সংসার, আপনি এবং আপনার সেপাইদের বুটের আওয়াজে চমকে উঠবে আমার শিশু ছেলের ঘুম, আমার বউ আর বোন কোণে লুকিয়ে কাঁপবে থরথর করে, আমার বুড়ো মা বাপ ইষ্টনাম জপ করবে, আমার ভাই অকারণ গ্রেফতারের ভয়ে পিছনের দরজা দিয়ে পালাবে। দৃশ্যটা আমি দেখতে চেয়েছিলাম। জানিই তো ইনস্পেক্টর একদিন আসবেনই তাঁর দলবল নিয়ে। বড় উৎকণ্ঠা ছিল, বড় ভয়। এই স্থায়ী ভয় থেকে পরিত্রাণ করতে আজ আপনি এলেন। যতদূর সম্ভব লন্ডভন্ড করে দিয়ে যান। আমার সংসার। এরপর আমি নিশ্চিন্ত হতে পারব। সুখীও।

আপনি লম্বা লোক, মাথাটা একটু নীচু করে আসুন। আমরা কেউ লম্বা নই বলে দরজাটা খুব উঁচু করে তৈরি করা হয়নি। জানেনই তো আমরা সব সাধারণ মানুষ, বেঁটেখাটো, আমাদের বড় দরজার দরকার হয় না।

এক মিনিট ইনস্পেকটর, আমার আগফা ক্লিক ক্যামেরায় আপনার একটা ছবি তুলে নিই!

না? নিয়ম নেই? তাহলে থাক। ক্যামেরাটা নিন, নিয়ে দেখুন, এর ভিতরে লুকোনো বোমা পিস্তল বা বিস্ফোরক নেই। ক্যামেরাই। তবে ফিলম আছে কিনা বলতে পারব না। ক্যামেরাটা ‘আমার’ বলে উল্লেখ করলাম, না? আসলে তা নয়। এটা আমার এক মাসতুতো বোনের। সে খুব বড়লোকের বউ ছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না। তার স্বামীর আবার অন্য মেয়েছেলে ছিল। বিয়ের পর থেকেই আমার সেই বোন দুঃখী। বড় কান্নাকাটি করত। সেই বোনই একবার নিমন্ত্রণে এ-বাড়িতে এসে ক্যামেরাটা ফেলে যায় অন্যমনস্কতাবশত। সেই রাতে ফিরে গিয়েই টিক-কুড়ি খেয়ে আত্মহত্যা করে। ক্যামেরাটা কেউ ফেরত নিতে আসেনি, আমরাও দিইনি। রয়ে গেছে। দিশি জিনিস, ভালো করে এর ট্রেডমার্কটা পরীক্ষা করতে পারেন। অন্তত এটা চোরাই আমদানি নয়।

আঃ, কী বিশাল চেহারা আপনার! আপনি যে রাজকর্মচারী তা চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। ঠিক এরকমটাই আমি আশা করছিলাম। এরকম না হলে কি ইনস্পেকটরকে মানায়? আপনি যেমন লম্বা, তেমনি বিশাল আপনার কাঁধ, কী অসাধারণ আপনার দুটি দীর্ঘ ও সবল হাত। কী গম্ভীর আপনার পদক্ষেপ! আর কী অদ্ভুত তীব্রতা আপনার চোখে!

হ্যাঁ, ইনস্পেকটর, এটাকেই বলতে পারেন আমাদের বাইরের ঘর। আপনি তো নিশ্চয়ই খবর রাখেন যে এটা আমার নিজের বাড়ি নয়? আজ্ঞে হ্যাঁ। ভাড়া। একশো ত্রিশ টাকা, আর ইলেকট্রিক।

না, না, আপনি ভুল বুঝেছেন। আমরা খুব লম্বা নই বলে দরজাটা উঁচু করে তৈরি করা হয়নি —এ কথার দ্বারা আমি কিন্তু এমন ইঙ্গিত করিনি যে বাড়িটা আমার বা আমাদের তৈরি। তা নয়। এখানে আমরা অর্থে আমরা সবাই। আমরা সবাই আজকাল বেঁটে মানুষ। যেমন আমি, তেমনি এ-বাড়ির মালিক, তেমনি সব বাড়ির সবাই। ঢুকবার বা বেরোবার জন্য খুব বড় দরজার দরকার হয় না আমাদের। আপনার মতো দীর্ঘকায় অতিথিও তো বড় একটা আসে না আমাদের বাড়িতে।

হ্যাঁ, এটাই বাইরের ঘর। তবু বলি, মাত্র দু-খানা ঘর বলে এ-ঘরটাকে আমরা এক্সকুসিভ করতে পারিনি। একাধারে ওই যে চৌকি দেখছেন, ওখানে আমার বাবা আর মা শোয়। মেঝেতে আমার বোন। না, ভাই শোওয়ার জায়গা পায় না। সে রাত্রিবেলা এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে থাকে। ভিতরের ঘরটায় আমরা স্বামী স্ত্রী, একটা ছোট্ট ছেলে। তবু এই ঘরটাই আমাদের বাইরের ঘর, কেউ এলে ওই যে সব তুচ্ছ চেয়ার দেখছেন ওগুলোয় বসে, গল্প-টল্প করে। এটাকে ড্রইংরুম বলা কি অপরাধ ইনস্পেকটর?

ফুলদানির মধ্যে কী খুঁজছেন ইনস্পেকটর? ফুলগুলো? হাহা। না, ওসব ফুল আমি রোজ কিনি। কী করে কিনি বলুন? হ্যাঁ, এখনও টাটকা তাজা ও সৌরভে ভরপুর ওই রজনীগন্ধা দেখে। মোটেই ভাববেন না যে আমার রোজ ফুল কেনার পয়সা জোটে। বাড়তি পয়সা আমার মোটেই নেই। চুপিচুপি বলি ইনস্পেকটর, গতকাল আমাদের বিবাহবার্ষিকী গেছে। না না, ওসব বিবাহ বার্ষিকী-টার্ষিকী পালন করা আমাদের হয় না। কাউকে নিমন্ত্রণ করিনি, ফালতু উপহার কিনে পয়সাও নষ্ট করিনি, কেবল মায়াবশে স্মৃতিবিভ্রমে, ভাবপ্রবণতার দরুন একডজন ফুল কিনেছি। হে মহান ইনস্পেকটর, ক্ষমা করুন আমার এই হৃদয়দৌর্বল্য। না, সত্যিই আমাকে এসব মানায় না। ফুল দিয়ে কী হয়? কিচ্ছু না, কিচ্ছু না। এ ফুল কেবল আমাদের বোকামির প্রতীক।

কিছু পেলেন ফুলদানির ভেতরে? না? আমিও জানতাম, কিছুই পাবেন না। ফুলগুলো ফেলে দিয়েছেন ছুড়ে। জল ঢেলে ফেলেছেন মেঝেয়, শূন্য ফুলদানিটা আছড়ে ফেলার জন্য হাত উদ্যত করেছেন, হে বৃহৎ, আপনাকেই এসব মানায়। চমৎকার। ফেলে দিন, লন্ডভন্ড করুন। আমি দেখি।

ওই কৌটোটা? না ইনস্পেকটর, ওর মধ্যে কালো অন্ধকারে যা লুকোনো আছে তা নয় বুলেট বা বারুদ। ও হচ্ছে আমার মায়ের নামজপের মালা। দোহাই ইনস্পেকটর। বেডকভারটা তুলবেন না। ওর নীচে ছেঁড়া চাদর, তেলচিটে বালিশ।

তুললেন? হায় ঈশ্বর, আমি বরং দেওয়ালের দিকে মুখ ঘুরিয়ে থাকি। কী লজ্জা! ইনস্পেকটর, আপনি কি চাদর তুলে তোশকটাও দেখবেন? হায়। তবে আর লজ্জার কিছুই বাকি থাকবে না। কী করে তবে গোপন করব, ওই প্রায় চল্লিশ বছরের পুরোনো তোশকটাকে? ওর তুলোগুলো চাপ বেঁধে খাপে-খাপে ঝুপ হয়ে আছে, ছেড়া টিকিনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসছে তুলো, ওর সারা দেহে চন্দ্রদেহের মতো খানাখন্দ।

না মহান, আমি কাঁদছি না। তবে আপনি বড় নিষ্ঠুর। কেন দেখলেন ওসব?

ওই বাক্সটা? হাহা। না, ওটা নয় বেঁটে বন্দুক বা লম্বা পিস্তল। হাসির কথা, আমার বাবা একসময়ে বেহালা বাজাতেন। আপনি কি কখনও বেহালার বাক্স দেখেননি? না, আমরা কেউ বেহালা বাজাতে জানি না। ওটা এমনি পড়ে আছে। দেখুন, ভালো করে দেখে নিন।

ফরেন মেড? আজ্ঞে হ্যাঁ, তা বটে। তবে ওটাও সেই পঞ্চাশ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে কেনা। তখনকার দিনে ওসব শৌখিন জিনিস বিদেশ থেকেই আসত। আজ্ঞে হ্যাঁ, ওই ক্ষুরটাও। বাবা ওটা দিয়ে দাড়ি কামান। অন্য কোনও কাজে লাগে না, বিশ্বাস করুন। না, এসব চোরাই চালানের নয়, স্মাগলিঙেরও নয়।

কালো টাকা?

হে বৃহৎ, হে প্রকাণ্ড, টেবিলের টানায় রাখা ওই সাঁইত্রিশ টাকা ষাট পয়সার কথা জিগ্যেস করছেন তো? না ধর্মাবতার, ওটা কালো টাকা নয়, বরং ভীষণরকমের সাদা টাকা। এত সাদা যে ওকে রক্তহীন ফ্যাকাসে টাকাও বলা যায়। মাসের আরও ছ’দিন বাকি মহাত্মন, ও টাকার আয়ু আর কতক্ষণ? সেই অন্তিম মুহূর্তের ভয়ে ওরা ফ্যাকাসে হয়ে আছে দেখছেন না?

ঘট? আজ্ঞে হ্যাঁ, ওর মধ্যে আমার স্ত্রী খুচরো পয়সা জমান। ভাঙুন ইনস্পেকটর, ভাঙুন। আমার স্ত্রী কোনওদিন আমাকে তার মাটির ঘট ছুঁতে দেয় না। কিন্তু আপনার সঙ্গে তো চালাকি চলবে না। হে সর্বশক্তিমান, আপনি ঘটটা ভেঙে দেখুন তো কত জমিয়েছে আমার বউ।

না, না, আপনাকে কষ্ট করে ওই দুই-তিন নয়া পয়সার খুচরো গুনতে হবে না। আন্দাজ করছি। দু-তিন টাকার বেশি নেই। তা এই দু-তিন টাকার মধ্যে একটা কালো টাকার ছায়া আছে। এটা প্রায় চুরির টাকা। ওটা আপনি বাজেয়াপ্ত করতে পারেন।

এই নিন লোহার আলমারির চাবি। হাহা মশাই, আলমারিটা আমার কি না জিগ্যেস করছেন? মহান, এই একটিমাত্র সত্যিকারের দামি জিনিস যা আমি বিয়েতে পেয়েছিলাম। এই স্টিলের আলমারি দিতে নারাজ হয়েছিলেন আমার গরিব শ্বশুর, তার ফলে আমার বিয়ে ভেঙে যায় আর

কী! হাহা। না, অবশেষে তিনি আলমারি দিতে রাজি হয়েছিলেন, বিয়েটাও হয়েছিল শেষ পর্যন্ত।

এই আমার আর আমার স্ত্রীর ঘর। কী দেখছেন শ্রদ্ধাস্পদ? প্লিজ, প্লিজ, ওই বাঁশের চ্যাঙারিটা দেখবেন না। দোহাই আপনার, আমাদের মতো সামান্য মানুষেরও কিছু গুপ্ত জিনিস থাকে। বিপজ্জনক নয় মহাত্মন, লজ্জাজনক। পায়ে পড়ি, দেখবেন না।

লজ্জা ইনস্পেকটর, কী লজ্জা! ওই বাঁশের চ্যাঙারির মধ্যে থাকে কন্ট্রাসেপটিভ। শ্রদ্ধাস্পদ, আমি আর আমার স্ত্রী যে উপগত হই—এটা কি লজ্জাজনক নয়? সবাই জানে, তবু কী লজ্জার! কেন দেখলেন ইনস্পেকটর? কেন দেখলেন? লজ্জায় আমি যে চোখ তুলতে পারছি না। ক্ষমা করুন মহাত্মন, আমাদের এই গোপনীয়তাটুকুর জন্য। আপনি তো ঈশ্বরের সমতুল, আমরা মানুষ মাত্র। জানি, আপনি এটুকু ক্ষমা করবেন। গরিবের অপরাধ।

আসছি ইপস্পেকটর, এক মিনিট।, না আমি স্ত্রীর সঙ্গে কোনও ষড়যন্ত্র করছি না। আমি তাকে বলছি, সে আপনার জন্য একটু চা করুক। করার দরকার নেই? যেমন আপনার আদেশ।

আলমারিতে সোনা পেয়েছেন ইনস্পেকটর? আজ্ঞে হ্যাঁ, আপনার অনুমান যথার্থ, ওগুলো সোনার গয়নাই বটে। মোট পাঁচ ভরি। হার, দুল, আংটি, বোম মিলে মোট পাঁচ ভরি। এ ছাড়া আরও কয়েক ভরি আছে মায়ের বাক্সে, সেসব মায়ের গয়না। আমাদের বাড়িতে মোট প্রায় দশ ভরি সোনার জিনিস আছে। হ্যাঁ ইনস্পেকটর, আমি অপরাধী। জানি মহাত্মন, ভারতবর্ষের শতকরা সত্তর ভাগ লোকেরই ঘরে দশ ভরি সোনা নেই। আমি সেই দুর্লভ শতকরা ত্রিশজনের একজন, যার ঘরে দশ ভরি—হ্যাঁ, মহাত্মন—দশ ভরি সোনা আছে। বাজেয়াপ্ত করবেন ইনস্পেকটর? না? ধন্যবাদ, অনেক ধন্যবাদ।

আমার স্ত্রীকে দেখছেন ইনস্পেকটর? দেখুন, দেখুন। ওকে বহুকাল কেউ দেখে না। চেহারা এমনিতেও দেখনসই ছিল না, এখন আরও ভেঙে গেছে। না, বয়স খুব বেশি নয়। তবু ওইরকম। খুব সাদামাটা, রোগাভোগা। রাস্তায় বেরোলে কেউ তেমন লক্ষ করে না। বহুকাল পরে আপনিই এক পরপুরুষ যিনি ওকে লক্ষ করেছেন। ও বড় ভয় পেয়েছে, কাঁপছে। এমনিতে খুব কুঁদুলি, আমার সঙ্গে ভীষণ ঝগড়া করে। কিন্তু আপনার সঙ্গে তো চালাকি নয়। আপনি যে মহান, শক্তিমান, ভয়ঙ্কর। আপনার সামনে আমরা আমাদের অস্তিত্ব কার্পেটের মতো পেতে দিয়েছি ধূলায়।

ইনস্পেকটর, সাবধান! আমার এক বছর বয়সের ছেলের ঘুম ভেঙেছে। ওই প্রচণ্ড হামা দিয়ে আসছে আপনার দিকে। কী সাহস! আপনার ভয়ংকর স্তম্ভের মতো জানু ধরে ওই ও উঠে দাঁড়াল। ইনস্পেকটর, ও যে আপনার কোমরের খাপে ভরা রিভলভারের দিকে হাত বাড়াচ্ছে! ক্ষমা করুন, ইনস্পেকটর, ক্ষমা করুন। এ সাহস ওকে মানায় না। নালা-ভোলা ছেলে। ক্ষমা করুন। করেছেন? বাঁচা গেল।

না শ্রদ্ধাস্পদ, ওই চিঠির বান্ডিলটা কোনও গুপ্ত কাগজপত্র নয়। তবে গোপনীয় বটে। বাচ্চা হতে আমার স্ত্রী কিছুকাল বাপের বাড়ি গিয়েছিল। তখন লিখেছিল। দেখবেন? হাহা। দেখুন, আপনার কাছে লজ্জা কী? না দাদা,। চিঠিতে যা লেখা আছে তা হল আবেগের কথা, বিশ্বাসের কথা, কিন্তু সত্যিই কি তাই? যেমন ধরুন এই লাইনটা—তোমাকেই যেন জন্ম-জন্মান্তরে স্বামী পাই—এ কথাটা কি সত্যি হতে পারে? পাগল! আমি তো ভেবেই পাই না, আমার মতো এক সাদামাটা অসফল লোককে আমার স্ত্রী বারবার করে স্বামী হিসেবে চাইবে! এ তো যুক্তিতে আসে না শ্রদ্ধাস্পদ! ও সবই বানানো কথা। বলতে হয় বলে বলা, লিখবার রেওয়াজ আছে বলে লেখা। তবে, আমি মাঝে-মাঝে বের করে পড়ি। বেশ লাগে। মনে হয়, সত্যিই বুঝি!

হ্যাঁ, এই যুবতী মেয়েটাই আমার বোন। না, সুন্দরী নয়। কোত্থেকে সুন্দরী হবে? সুন্দরের ঘরেই সুন্দর জন্মায়। আমরা অতি সাধারণ। তাই ও সুন্দরী নয় বটে। তবে যুবতী। ইচ্ছে হলে আপনি একটু তাকিয়ে থাকুন ওর দিকে। ও ধন্য হোক।

কিছু কি পেলেন শ্রদ্ধাস্পদ? আপনার ভ্রূ কোঁচকানো, মুখশ্রী গম্ভীর এবং চিন্তান্বিত। কিন্তু কী পেলেন মহান? ওই তো ভাঙা ঘটের মাটির চাড়া ছড়িয়ে আছে খুচরো পয়সার সঙ্গে। ওই পড়ে আছে ফুল, জল আর ফুলদানি। বিছানা ওলটানো বলে, বাক্স আলমারি খোলা বলে আমাদের সব ঢেকে রাখা ছেড়া আর ময়লা বেরিয়ে পড়েছে। প্রকট হয়েছে আমাদের তুচ্ছতা। তবু বলুন, কী পেলেন অবশেষে? কোন জিনিস বাজেয়াপ্ত করবেন ইনস্পেকটর?

আমার বুড়ো মা-বাবার ঘোলা চোখের মধ্যে তাকিয়ে কী খুঁজছেন আপনি? কী আছে ওখানে? কী খুঁজছেন আমার স্ত্রী আর বোনের চোখে? ওরা ভীষণ ভয় পেয়ে যাচ্ছে যে? আমার ছেলের চোখেই বা কী আছেশ্রদ্ধাস্পদ? আমার চোখেও? বলুন, ইনস্পেকটর। বলুন!

আপনি ঘন শ্বাস ফেলে আপন মনে বললেন—পেয়েছি। শুনে আমার বুকের ভিতরটা কুয়োর মতো ফাঁকা হয়ে গেল। দোহাই, আমাকে আর রহস্যের মধ্যে রাখবেন না।

পেয়েছেন? ও হরি, ও তো সকলেরই থাকে শ্রদ্ধাস্পদ! আপনি পেয়েছেন আমাদের চোখের মধ্যে লুকিয়ে রাখা স্বপ্ন, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভালোবাসা ও বিশ্বস্ততা। শ্রদ্ধাস্পদ, আমাদের যে আর কিছুই নেই। এসবই অবশ্য অবান্তর, বাজে জিনিস। এসব তো বাজেয়াপ্ত করার উপযুক্ত নয়।

ইনস্পেকটর, ইনস্পেকটর, হে শ্রদ্ধাস্পদ, সর্বশক্তিমান আমাদের এটুকু কেড়ে নেবেন না। আমাদের আর সব নিয়ে যান, বাজেয়াপ্ত করুন। আমাদের ভিখারির পোশাকে বের করে দিন রাস্তায়। দোহাই, আপনার পায়ে পড়ি, আমাদের ওটুকু বাজেয়াপ্ত করবেন না। ইনস্পেকটর, ইনস্পেকটর…

সকল অধ্যায়

১. মুনিয়ার চারদিক – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২. আশ্চর্য প্রদীপ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩. হারানো জিনিস – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪. অনুভব – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫. ঘণ্টাধ্বনি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬. মশা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৭. একটা দুটো বেড়াল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৮. বনমালীর বিষয় – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৯. ক্রিকেট – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১০. খানাতল্লাশ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১১. চিড়িয়াখানা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১২. শুক্লপক্ষ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৩. পুনশ্চ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৪. সূত্রসন্ধান – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৫. হরীতকী – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৬. ঘরের পথ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৭. ট্যাংকি সাফ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৮. দৈত্যের বাগানে শিশু – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৯. লুলু – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২০. জমা খরচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২১. ক্রীড়াভূমি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২২. সুখের দিন – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৩. গর্ভনগরের কথা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৪. দেখা হবে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৫. ভাগের অংশ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৬. সাঁঝের বেলা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৭. সংবাদ : ১৯৭৬ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৮. খেলা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
২৯. বৃষ্টিতে নিশিকান্ত – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩০. চিঠি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩১. জ্যোৎস্নায় – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩২. মাসি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৩. মৃণালকান্তির আত্মচরিত – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৪. চারুলালের আত্মহত্যা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৫. পটুয়া নিবারণ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৬. প্রতীক্ষার ঘর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৭. হলুদ আলোটি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৮. সাপ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৩৯. আমাকে দেখুন – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪০. ভুল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪১. সেই আমি, সেই আমি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪২. অবেলায় – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৩. সাদা ঘুড়ি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৪. উড়োজাহাজ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৫. রাজার গল্প – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৬. আমার মেয়ের পুতুল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৭. সোনার ঘোড়া – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৮. ডুবুরি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৯. সুখদুঃখ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫০. শেষ বেলায় – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫১. পুরোনো দেওয়াল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫২. বন্ধুর অসুখ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৩. ছবি – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৪. সাধুর ঘর – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৫. ঝুমকোলতার স্নানের দৃশ্য ও লম্বোদরের ঘাটখরচ – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৬. আমেরিকা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৭. আরোগ্য – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৮. সম্পর্ক – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৫৯. পোকা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬০. বাবা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬১. দোলা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬২. ছেলেটা কাঁদছে – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬৩. লামডিঙের আশ্চর্য লোকেরা – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬৪. গণ্ডগোল – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
৬৫. স্বপ্নের ভিতরে মৃত্যু – শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন