বর্ণপরিচয় (দ্বিতীয় ভাগ)

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

বর্ণপরিচয়
শ্রীঈশ্বরচন্দ্রবিদ্যাসাগর প্রণীত।
দ্বিতীয় ভাগ।

সং যু ক্ত ব র্ণ।

একষষ্টিতম সংস্করণ।
কলিকাতা
সংস্কৃত যন্ত্র।
সং বৎ ১ ৯ ৩ ৩।

মূল্য পাঁচ পয়সা।

1876.

বর্ণপরিচয়
শ্রীঈশ্বরচন্দ্রবিদ্যাসাগর প্রণীত।

দ্বিতীয় ভাগ।
সং যু ক্ত ব র্ণ।
একষষ্টিতম সংস্করণ।

কলিকাতা

PUBLISHED BY THE SANSKRIT PRESS DEPOSITORY,
NO. 30 BECHOO CHATTERJEE’S STREET.
1876.

.

বিজ্ঞাপন

বালকদিগের সংযুক্তবর্ণপরিচয় এই পুস্তকের উদ্দেশ্য। সংযুক্ত বর্ণের উদাহরণস্থলে যে সকল শব্দ আছে, শিক্ষক মহাশয়েরা বালকদিগকে উহাদের বর্ণবিভাগমাত্র শিখাইবেন, অর্থ শিখাইবার নিমিত্ত প্রয়াস পাইবেন। বর্ণবিভাগের সঙ্গে অর্থ শিখাইতে গেলে, গুরু শিষ্য উভয় পক্ষেরই অত্যন্ত কষ্ট হইবেক, এবং শিক্ষা বিষয়েও আনুষঙ্গিক অনেক দোষ ঘটিবেক।

 ক্রমাগত শব্দের উচ্চারণ ও বর্ণবিভাগ শিক্ষা করিতে গেলে, অতিশয় নীরস বোধ হইবে ও বিরক্তি জন্মিবে, এজন্য মধ্যে মধ্যে এক একটি পাঠ দেওয়া গিয়াছে। ঐ সকল পাঠ বালকদিগের সম্পূর্ণ রূপে বোধগম্য হইবার যোগ্য বিষয় লইয়া সঙ্কলিত হইয়াছে। শিক্ষক মহাশয়েরা উহাদের অর্থ ও তাৎপর্য্য স্ব স্ব ছাত্রদিগের হৃদয়ঙ্গম করিয়া দিবেন।

শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা
কলিকাতা। সংস্কৃত কালেজ।
১লা আষাঢ়, সংবৎ ১৯১২।

.

সংযুক্ত বর্ণ।

য ফলা

য ্য

ক্যঐক্য, বাক্য, অনৈক্য।
খ্যঅসংখ্য, অখ্যাতি, উপাখ্যান।
গ্যভাগ্য, আরোগ্য, সৌভাগ্য।
চ্যবাচ্য, বিবেচ্য, পদচ্যুত।
জ্যত্যাজ্য, রাজ্য, জ্যোতি।
ট্যনাট্য, কাপট্য, নৈকট্য।
ড্যজাড্য।
ঢ্যআঢ্য।
ণ্যপুণ্য, অরণ্য, লাবণ্য।
ত্যনিত্য, সত্য, হত্যা, মৃত্যু।
থ্যতথ্য, পথ্য, মিথ্যা।
দ্যঅদ্য, বাদ্য, বিদ্যা, বিদ্যুৎ।
ন্যঅন্য, ধন্য, শূন্য, অন্যায়।
প্যরৌপ্য, আলাপ্য।
ভ্যলভ্য, সভ্য, অভ্যাস।
ম্যরম্য, অগম্য, বৈষম্য।
য্যন্যায্য, শয্যা।
ল্যবাল্য, তুল্য, মূল্য, কল্যাণ।
ব্যনব্য, দিব্য, ব্যয়, তালব্য।
শ্যবশ্য, অবশ্য, আবশ্যক।
ষ্যদূষ্য, পোষ্য, শিষ্য।
স্যশস্য, আলস্য, ঔদাস্য।
হ্যসহ্য, বাহ্য, লেহ্য,

সংযুক্ত বর্ণ।

য ফলা

য ্য

ক্যঐক্য, বাক্য, অনৈক্য।
খ্যঅসংখ্য, অখ্যাতি, উপাখ্যান।
গ্যভাগ্য, আরোগ্য, সৌভাগ্য।
চ্যবাচ্য, বিবেচ্য, পদচ্যুত।
জ্যত্যাজ্য, রাজ্য, জ্যোতি।
ট্যনাট্য, কাপট্য, নৈকট্য।
ড্যজাড্য।
ঢ্যআঢ্য।
ণ্যপুণ্য, অরণ্য, লাবণ্য।
ত্যনিত্য, সত্য, হত্যা, মৃত্যু।
থ্যতথ্য, পথ্য, মিথ্যা।
দ্যঅদ্য, বাদ্য, বিদ্যা, বিদ্যুৎ।
ন্যঅন্য, ধন্য, শূন্য, অন্যায়।
প্যরৌপ্য, আলাপ্য।
ভ্যলভ্য, সভ্য, অভ্যাস।
ম্যরম্য, অগম্য, বৈষম্য।
য্যন্যায্য, শয্যা।
ল্যবাল্য, তুল্য, মূল্য, কল্যাণ।
ব্যনব্য, দিব্য, ব্যয়, তালব্য।
শ্যবশ্য, অবশ্য, আবশ্যক।
ষ্যদূষ্য, পোষ্য, শিষ্য।
স্যশস্য, আলস্য, ঔদাস্য।
হ্যসহ্য, বাহ্য, লেহ্য,

র ফলা

ক্রবক্র, বিক্রয়, ক্রোধ, ক্রোশ।
গ্রঅগ্র, গ্রহণ, আগ্রহ, গ্রাম।
ঘ্রশীঘ্র, ব্যাঘ্র, আঘ্রাণ।
ছ্রকৃছ্র।
জ্রবজ্র, বজ্রপাত, বজ্রাঘাত।
ত্রগাত্র, মিত্র, ত্রাস।
দ্ররৌদ্র, নিদ্রা, হরিদ্রা।
ধ্রগৃধ্র।
প্রপ্রণয়, প্রথম, প্রদীপ, প্রধান।
ভ্রশুভ্র, ভ্রম, ভ্রংশ, ভ্রাতা।
ম্রআম্র, তাম্র, নম্র।
ব্রব্রণ, ব্রত।
শ্রআশ্রয়, পরিশ্রম, বিশ্রাম।
স্রসহস্র, হিংস্র, সংস্রব।
হ্রহ্রাস।

২ পাঠ।

 ১। শ্রম না করিলে, লেখা পড়া হয় না। যে বালক শ্রম করে, সেই লেখা পড়া শিখিতে পারে। শ্রম কর, তুমিও লেখা পড়া শিখিতে পারিবে।

 ২। পরের দ্রব্যে হাত দিও না। না বলিয়া, পরের দ্রব্য লইলে, চুরী করা হয়। চুরী করা বড় দোষ। যে চুরী করে, তাহাকে চোর বলিয়া, সকলে ঘৃণা করে। চোরকে কেহ কখনও প্রত্যয় করে না।

 ৩। যে ছাত্র প্রত্যহ মন দিয়া লেখা পড়া শিখে, সে সকলের প্রিয় হয়। যদি তুমি প্রতিদিন মন দিয়া লেখা পড়া শিখ, সকলে তোমায় ভাল বাসিবে।

 ৪। কখনও কাহারও সহিত কলহ করিও না। কলহ করা বড় দোষ। যে সতত সকলের সহিত কলহ করে, তাহার সহিত কাহারও প্রণয় থাকে না। সকলেই তাহার শত্রু হয়।

 ৫। যখন পড়িতে বসিবে, অন্য দিকে মন দিবে না। অন্য দিকে মন দিলে, শীঘ্র অভ্যাস। করিতে পারিবে না। অধিক দিন মনে থাকিবে না। পাঠ বলিবার সময়, ভাল বলিতে পারিবে না।

 ৬। যে চুরী করে, মিথ্যা কথা কয়, ঝগড় করে, গালাগালি দেয়, মারামারি করে, তাহাকে অভদ্র বলে। তুমি কদাচ অভদ্র হইও না। অভদ্র বালকের সংস্রবে থাকিও না। যদি তুমি অভদ্র হও, কিংবা অভদ্র বালকের সংস্রবে থাক, কেহ তোমাকে কাছে বসিতে দিবে না, তোমার সহিত কথা কহিবে না, সকলেই তোমায় ঘৃণা করিবে।

ল ফলা

ল 

ক্লশুক্ল, ক্লেশ।
গ্লগ্লানি।
প্লবিপ্লব, প্লাবন, প্লীহা।
ম্লঅম্ল, ম্লান, অম্লান।
ল্লপ্রফুল্ল, উল্লাস, ভল্লুক।
শ্লশ্লাঘা, অশ্লীল, শ্লেষ।
হ্লআহ্লাদ, আহ্লাদিত।

ব ফলা

ব 

ক্বপক্ব, অপক্ব, পরিপক্ব।
জ্বজ্বর, জ্বলিত, জ্বালা।
ট্বখট্বা।
ত্বত্বরা, সত্বর, প্রভুত্ব।
দ্বদ্বার, দ্বিতীয়, দ্বেষ।
ধ্বধ্বনি, ধ্বংস, সাধ্বী।
ন্বসমন্বয়, অন্বেষণ।
ল্ববিল্ব, পল্বল।
শ্বঅশ্ব, নিশ্বাস, বিশ্বাস।
স্বহ্রস্ব, আস্বাদ, তেজস্বী।
হ্ববিহ্বল, জিহ্বা, আহ্বান।

৩ পাঠ।

সুশীল বালক।

 ১। সুশীল বালক পিতা মাতাকে অতিশয় ভাল বাসে। তাঁহারা যে উপদেশ দেন, তাহা মনে করিয়া রাখে, কখনও ভুলিয়া যায় না। তাঁহারা যখন যে কাজ করিতে বলেন, তাহা করে, যে কাজ করিতে নিষেধ করেন, কদাচ তাহা করে না।

 ২। সে মন দিয়া লেখা পড়া করে, কখনও অবহেলা করে না। সে সতত এই ভাবে, লেখা পড়া না শিখিলে, চির কাল দুঃখ পাইব।

 ৩। সে আপন ভ্রাতা ও ভগিনীদিগকে বড় ভাল বাসে, কদাচ তাহাদের সহিত ঝগড়া করে না, ও তাহাদের গায় হাত তুলে না, খাবার দ্রব্য পাইলে, তাহাদিগকে না দিয়া একাকী, খায় না।

 ৪। সে কখনও মিথ্যা কথা কয় না। সে জানে, যাহারা মিথ্যা কথা কয়, কেহ তাহা দিগকে ভাল বাসে না, কেহ তাহাদের কথায় প্রত্যয় করে না, সকলেই তাহাদিগকে ঘণ করে।

 ৫। সে কখনও অন্যায় কাজ করে না। যদি দৈবাৎ করে, তাহার পিতা মাতা ধমকাইলে, রাগ করে না। সে এই মনে করে, অন্যায় কাজ করিয়াছিলাম, এজন্য পিতা মাতা ধমকাইলেন, আর কখনও, এমন কাজ করিব না।

 ৬। সে কখনও কাহাকেও কটু বাক্য বলে, কুকথা মুখে আনে না, কাহারও সহিত ঝগড়া ও মারামারি করে না, যাহাতে কাহারও মনে ক্লেশ হয়, কদাচ এমন কাজ করে না।

 ৭। সে কখনও পরের দ্রব্যে হাত দেয় না। সে জানে, পরের দ্রব্য লইলে চুরী করা হয়, চুরী করা বড় দোষ, যাহারা চুরী করে, সকলে তাহাদিগকে ঘৃণা করে, চোরের দুঃখের সীমা নাই।

 ৮| সে কখনও আলস্যে কাল কাটায় না, যে সময়ের যে কাজ, মন দিয়া তাহা করে। সে লেখা পড়ার সময়, লেখা পড়া না করিয়া, খেলা করিয়া বেড়ায় না।

 ৯। সে কখনও, দুঃশীল বালকদিগের সহিত বেড়ায় না, ও তাহাদের সহিত খেলা করে না। সে মনে করে, দুঃশীলদিগের সহিত বেড়াইলে ও খেলা করিলে, আমিও দুঃশীল হইয়া যাইব।

 ১০। সে যখন বিদ্যালয়ে থাকে, গুরু মহাশয় যে সময় যাহা করিতে বলেন, তাহা করে, কদাচ তাহার অন্যথা করে না। সে কখনও তাহার কথার অবাধ্য হয় না, এজন্য তিনি তাহাকে ভাল বাসেন।

ণ ফলা

ণ 

ণ্ণবিষণ্ণ।
ষ্ণকৃষ্ণ, বৈষ্ণব, তৃষ্ণা, সহিষ্ণু।
হ্ণঅপরাহ্ণ।

ন ফলা

ন 

গ্নভগ্ন, মগ্ন, অগ্নি।
ঘ্নবিঘ্ন, কৃতঘ্ন, বিষঘ্ন।
ত্নযত্ন, রত্ন।
ন্নঅন্ন, ভিন্ন, প্রসন্ন, অবসন্ন।
প্নস্বপ্ন।
ম্ননিম্ন।
শ্নপ্রশ্ন।
স্নস্নান, জ্যোৎস্না।
হ্নচিহ্ন, মধ্যাহ্ন, বহ্নি, আহ্নিক।

ম ফলা

ম 

ক্মরুক্মিণী।
গ্মবাগ্মী।
ঙ্মবাঙ্ময়, পরাঙ্মুখ।
ট্মকুট্মল।
ণ্মমৃণ্ময়, হিরণ্ময়।
ত্মআত্মা, দুরাত্মা, আত্মীয়।
দ্মপদ্ম, ছদ্মবেশ, পদ্মিনী।
ধ্মআধ্মান।
ন্মজন্ম, উন্মাদ, উম্মূলিত।
ম্মসম্মত, সম্মান, সম্মুখ।
ল্মগুল্ম, শাল্মলি।
শ্মশ্মশান, রশ্মি, শ্মশ্রু।
ষ্মগ্রীষ্ম, উষ্ম।
স্মভস্ম, স্মরণ, অকস্মাৎ।
হ্মব্রহ্ম, ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মা।

৪ পাঠ।

যাদব।

যাদব নামে একটি বালক ছিল, তাহার বয়স আট বৎসর। যাদবের পিতা প্রত্যহ তাহাকে পাঠশালায় পাঠাইয়া দিতেন। যাদব লেখা পড়া শিখিতে ভাল বাসিত না। সে এক দিনও পাঠশালায় যাইত না; প্রতিদিন পথে পথে খেলা করিয়া বেড়াইত।

 পাঠশালার ছুটী হইলে, সকল বালক যখন বাড়ী যাইত, যাদবও সেই সময়ে বাড়ী যাইত। তার বাপ মা মনে করিতেন, যাদব পাঠশালায় লেখা পড়া শিখিয়া আসিল। এই রূপে, প্রতি দিন সে বাপ মাকে ফাঁকি দিত।

 এক দিন যাদব দেখিল, ভুবন নামে একটি বালক পাঠশালায় পড়িতে যাইতেছে। তাহাকে কহিল, ভুবন, আজ তুমি পাঠশালায় যাইও না। এস দুজনে মিলিয়া খেলা করি। পাঠশালার ছুটী হইলে, যখন সকলে বাড়ী যাইবে, আমরাও সেই সময়ে বাড়ী যাইব।

 ভুবন কহিল, না ভাই, আমি খেলা করিব না। সারা দিন খেলা করিলে, পড়া হবে না। কাল পাঠশালায় গেলে, গুরু মহাশয় ধমকাইবেন, বাবা শুনিলে ক্রোধ করিবেন। আমি আর দেরি করিব না। বেলা হইল, ত্বরায় পাঠশালায় যাই। এই ধলিয়া ভূবন চলিয়া গেল।

 আর এক দিন যাদব দেখিল, অভয় নামে একটি বালক পড়িতে যাইতেছে। তাহাকে কহিল, অভয়, আজ পড়তে যাইও না। এস দুজনে খেলা করি।

 অভয় কহিল, না ভাই, তুমি বড় খারাপ ছোকরা, তুমি এক দিনও পড়িতে যাও না। তোমার সহিত খেলা করলে আমিও তোমার। মত খারাপ হইয়া যাইব। তোমার মত পথে পথে খেলিয়া বেড়াইলে, লেখা পড়া কিছুই হবে না। কাল গুরু মহাশয় বালিয়াছেন, ছেলেবেলা মন দিয়া লেখা পড়া না করিলে, চির কাল দুঃখ পায়।

 এই বলিয়া অভয় চলিয়া যায়। যাদব টানাটানি করিতে লাগিল। অভয় তাহার হাত ছাড়াইয়া পলাইয়া গেল। কহিল, আজ আমি তোমার সব কথা গুরু মহাশয়কে বলিয়া দিব।

 অভয় পাঠশালায় গিয়া গুরু মহাশয়কে যাদবের কথা বলিয়া দিল। গুরু মহাশয় যাদবের পিতার নিকট বলিয়া পাঠাইলেন, তোমার ছেলে এক দিনও পড়িতে আইসে না। প্রতিদিন পথে পথে খেলিয়া বেড়ায়। আপনিও পড়িতে আইসে না, এবং অন্য অন্য বালককেও আসিতে দেয় না।

 যাদবের পিতা শুনিয়া অতিশয় কোপ করিলেন, তাহাকে অনেক ধমকাইলেন, বই কাগজ কলম যা কিছু দিয়াছিলেন, সব কাড়িয়া লইলেন। সেই অবধি, তিনি যাদবকে ভাল বাসিতেন না, কাছে আসিতে দিতেন না, সম্মুখে আসিলে, দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিতেন।

রেফ

র্কতর্ক, কর্কশ, শর্করা।
র্খমূর্খ।
র্গদুর্গম, নির্গত, বিসর্গ।
র্ঘদীর্ঘ, মহার্ঘ, দুর্ঘট।
র্জনির্জন, দুর্জন, দুর্জয়।
র্ঝনির্ঝর, ঝর্ঝর।
র্ণকর্ণ, বর্ণ, স্বর্ণ, নির্ণয়।
র্থঅর্থ, সার্থক, সমর্থ।
র্ধনির্ধন।
র্নদুর্নয়, দুর্নাম।
র্পদর্প, সর্প, অর্পণ, কর্পূর।
র্বদুর্বল।
র্ভনির্ভয়, দুর্ভাগ্য, দুর্ভাবনা।
র্লদুর্লভ, নির্লোভ।
র্বনির্বংশ, পুনর্বার।
র্শদর্শন, আদর্শ, পরামর্শ।
র্ষহর্ষ, বিমর্ষ, বর্ষা, বার্ষিক।
র্হগর্হিত।

৫ পাঠ।

নবীন।

নবীন নামে এক বালক ছিল। তাহার বয়ঃক্রম নয় বৎসর। সে খেলা করিতে এত ভাল বাসিত যে, সারা দিন পথে পথে খেলিয়া বেড়াইত, এক বারও লেখা পড়ায় মন দিত না। এজন্য, সে কিছুই শিখতে পারিত না। এই কারণে, গুরু মহাশয় প্রতিদিন তাহাকে ধমকাইতেন। ধমকের ভয়ে সে আর পাঠশালায় যাইত না।

 এক দিন, নবীন দেখিল, একটি বালক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিতে যাইতেছে, তাহাকে কহিল, অহে ভাই, এস দুজনে খানিক খেলা করি।

 সে বলিল, আমি পড়িতে যাইতেছি, এখন খেলতে পারিব না। পড়িবার সময় খেলা করিলে, লেখা পড়া শিখিতে পারিব না। বাবা আমাকে পড়িবার সময় পড়িতে ও খেলিবার সময় খেলিতে বলিয়া দিয়াছেন। আমি যে সময়েরা যে কাজ, সে সময়ে সে কাজ করি। এজন্যে, বাবা আমাকে ভালবাসেন, আমি তাঁর কাছে যখন যা চাই, তখন তাই দেন। যদি আমি এখন, পড়িতে না গিয়া, তোমার সহিত খেলা করি, বাবা আমাকে আর ভাল বাসিবেন না। আমি শুনিয়াছি, লেখা পড়ায় অবহেলা করিয়া, সারা দিন খেলিয়া বেড়াইলে, চির কাল দুঃখ পাইতে হয়। অতএব, আমি চলিলাম। এই বলিয়া সে সত্বর চলিয়া গেল।

 নবীন খানিক দূর গিয়া দেখিল, একটি বালক, চলিয়া যাইতেছে। তাহাকে কহিল, ভাই, তুমি কোথায় যাইতেছ? সে বলিল, বাবা আমাকে এক জিনিস আনিতে পাঠাইয়াছেন। তখন নবীন কহিল, তুমি পরে জিনিস আনিতে যাইবে। এখন এস, দুজনে মিলিয়া খানিক খেলা করি।

 সেই বালক বলিল, না ভাই, এখন আমি খেলিতে পারিব না। বাবা যে কাজ করিতে বলিয়াছেন, অগ্রে তাহা করিব। বাবা কহিয়াছেন, কাজে অযত্ন করা ভাল নয়। আমি কাজের সময় কাজ করি, খেলার সময় খেলা করি, কাজের সময় কাজ না করিয়া, খেলিয়া বেড়াইলে চির কাল দুঃখ পাইব। আমি কখনও কাজে অমনোযোগ করি না। যে সময়ের যে কাজ, সে সময়ে সে কাজ করি। আমি তোমার কথা শুনিয়া কাজে অবহেলা করিব না।

 এই কথা শুনিয়া, নবীন সেখান হইতে চলিয়া গেল। খানিক গিয়া, এক রাখালকে দেখিয়া কহিল, আয় না ভাই, দু’জনে মিলিয়া খেলা করি। রাখাল কহিল, আমি গরু চরাইতে যাইতেছি, এখন খেলা করিতে পারিব না। এখন খেলা করিলে, গরু চরান হইবেক না। প্রভু রাগ করিবেন, গালাগালি দিবেন। আমি কাজে অযত্ন করিব না। কাজের সময় কাজ করিব, খেলার সময় খেলা করিব। বাবা এক দিন বলিয়াছিলেন, কাজের সময় কাজ না করিয়া, সারা দিন খেলা করিয়া বেড়াইলে, চির কাল দুঃখ পাইতে হয়। তুমি যাও, এখন আমি খেলা করিব না।

 এই রূপে, ক্রমে ক্রমে তিন জনের কথা শুনিয়া, নবীন মনে মনে ভাবিতে লাগিল, সকলেই কাজের সময় কাজ করে। এক জনও, কাজে অবহেলা করিয়া, সারা দিন খেলিয়া বেড়ায় না। কেবল আমি সারা দিন খেলা করিয়া বেড়াই। সকলেই বলিল, কাজের সময় কাজ না করিয়া, খেলিয়া বেড়াইলে, চির কাল দুঃখ পাইতে হয়। এজন্য, তারা সারা দিন খেলা করিয়া বেড়ায় না। আমি যদি, লেখা পড়ার সময়, লেখা পড়া না করিয়া, কেবল খেলিয়া বেড়াই, তা হলে, আমি চির কাল দুঃখ পাইব। বাবা জানিতে পারিলে, আর আমায় ভাল বাসিবেন না, মারিবেন, গালাগালি দিবেন, কখনও কিছু চাহিলে, দিবেন না। আর আমি লেখা পড়ায় অবহেলা করিব না, আজ অবধি, লেখা পড়ার সময় লেখা পড়া করিব।

 এই ভাবিয়া সেই দিন অবধি, নবীন লেখা পড়ায় মনোযোগ করিল। তার পর, আর সে সারা দিন খেলা করিয়া বেড়াইত না। কিছু দিনের মধ্যেই নবীন অনেক শিখিয়া ফেলিল। তাহা দেখিয়া সকলে নবীনের প্রশংসা করিতে লাগিল। এই রূপে লেখা পড়ায় যত্ন হওয়াতে, নবীন ক্রমে ক্রমে অনেক বিদ্যা শিখিয়াছিল।

মিশ্র সংযোগ—দুই অক্ষরে।

ক্কচিক্কণ, কুক্কুর, কুক্কুট।
ক্ততিক্ত, রক্ত, শক্ত, ভক্তি।
ক্ষভক্ষণ, লক্ষণ, পরীক্ষা।
গ্ধদগ্ধ, দুগ্ধ, মুগ্ধ।
ঙ্কঅঙ্ক, শঙ্কা, অঙ্কুর।
ঙ্খশঙ্খ, শৃঙ্খলা, বিশৃঙ্খল।
ঙ্গঅঙ্গ, অঙ্গার, অঙ্গুলি।
ঙ্ঘলঙ্ঘন, জঙ্ঘা।
চ্চউচ্চ, উচ্চারণ।
চ্ছতুচ্ছ, পুচ্ছ, আচ্ছাদন।
চ্ঞযাচ্ঞা।
জ্জকজ্জল, লজ্জা, সজ্জা।
জ্ঝকুজ্ঝটিকা।
জ্ঞবিজ্ঞ, আজ্ঞা, জ্ঞান।
ঞ্চঅঞ্চল, চঞ্চল, সঞ্চয়।
ঞ্ছলাঞ্ছনা, বাঞ্ছা।
ঞ্জঅঞ্জলি, খঞ্জন, গঞ্জনা।
ট্টঅট্ট, অট্টালিকা।
ড়ড়্গখড়্গ।
ণ্টকণ্টক, বণ্টন।
ণ্ঠকণ্ঠ, উৎকণ্ঠা, কুণ্ঠিত।
ণ্ডখণ্ড, দণ্ড, মণ্ডল, পণ্ডিত।
ত্তউত্তম, উত্তর, প্রবৃত্তি।
ত্থউত্থান, উত্থাপন, উত্থিত।
দ্গগদ্গদ, মুদ্গর, উদ্গার।
দ্ঘউদ্ঘাটন, উদ্ঘাত।
দ্দউদ্দীপন, উদ্দেশ।
দ্ধবদ্ধ, শ্রদ্ধা, বুদ্ধি, বৃদ্ধি।
দ্ভউদ্ভব, অদ্ভুত।
ন্তঅন্ত, দন্ত, চিন্তা, সন্তোষ।
ন্থগ্রন্থ, মন্থন, পন্থা।
ন্দমন্দ, আনন্দ, মন্দির, সন্দেহ।
ন্ধঅন্ধ, গন্ধ, সন্ধান, বন্ধু।
প্ততপ্ত, লিপ্ত, তৃপ্তি, দীপ্তি।
ব্জঅব্জ, কুব্জ।
ব্দঅব্দ, শব্দ।
ব্ধলব্ধ, লুব্ধ, ক্ষুব্ধ।
ম্পকম্প, সম্পর্ক, সম্পূর্ণ।
ম্ফলম্ফ, গুম্ফিত।
ম্বকম্বল, বিলম্ব, সম্বোধন।
ম্ভআরম্ভ, গম্ভীর, সম্ভোগ।
ল্কশল্ক, বল্কল, উল্কা।
ল্গফাল্গুন।
ল্পঅল্প, কল্পনা, সঙ্কল্প।
শ্চনিশ্চয়, পশ্চাৎ, পশ্চিম।
শ্ছশিরশ্ছেদ।
ষ্কশুষ্ক, দুষ্কর, পরিষ্কার।
ষ্টকষ্ট, দুষ্ট, মিষ্ট, যথেষ্ট।
ষ্ঠকনিষ্ঠ, জ্যেষ্ঠ, নিষ্ঠুর।
ষ্পপুষ্প, বাষ্প, নিষ্পীড়ন।
ষ্ফনিস্ফল।
স্কতস্কর, পুরস্কার, মনস্কাম।
স্খস্খলন, স্খলিত।
স্তহস্ত, মস্তক, পুস্তক, বস্তু।
স্থসুস্থ, স্থান, অস্থি, স্থ‌ূল।
স্পবাস্প, অস্পদ, পরস্পর।
স্ফস্ফটিক, আস্ফালন, স্ফীত।

৬ পাঠ

মাধব।

মাধব নামে একটি বালক ছিল। তাহার বয়স দশ বৎসর। তাহার পিতা তাহাকে বিদ্যালয়ে শিক্ষা করিতে দিয়াছিলেন। সে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাইত এবং মন দিয়া লেখা পড়া শিখিত। কখনও কাহারও সহিত ঝগড়া বা মারামারি করিত না, এজন্য সকলেই তাহাকে অত্যন্ত ভাল বাসিত।

 এ সকল গুণ থাকিলে কি হয়, মাধবের একটি মহৎ দোষ ছিল। সে পরের দ্রব্য লইতে বড় ভাল বাসিত। সুযোগ পাইলেই কোনও দিন কোনও বালকের পুস্তক লইত, কোনও দিন কোনও বালকের কলম লইত, কোনও দিন কোনও বালকের কাগজ লইত, কোনও দিন কোনও বালকের ছুরী লইত। এই রূপে প্রায় প্রতিদিন এক এক বালকের এক এক দ্রব্য চুরী করিত।

 মাধব যে বালকের কোনও বস্তু চুরী করিত, সে পণ্ডিত মহাশয়ের নিকটে গিয়া কহিত, মহাশয়! আমার অমুক বস্তু কে লইয়াছে। মাধব চুরী করিয়া এমন লুকাইয়া রাখিত যে, শিক্ষক মহাশয়, অনেক চেষ্টা করিয়াও তাহার সন্ধান করিতে পারিতেন না। কে চুরী করিয়াছে স্থির করিতে না পারিয়া, তিনি সকল বালককেই তিরস্কার করিতেন।

 প্রত্যহ গালাগালি খাইয়া, কয়েকটি বালক পরামর্শ করল, আজ অবধি আমরা সতর্ক থাকিব এবং দেখিব কে চুরী করে। দুই তিন দিনের মধ্যেই, তাহারা মাধবকে চোর বলিয়া ধরিয়া দিল। মাধব সে দিন এক বালকের একখানি পুস্তক লইয়াছিল। পণ্ডিত মহাশয় চোর বলিয়া তাহাকে গালাগালি দিতে লাগিলেন। তখন মাধব কহিল, আমি চুরী করি নাই, ভুলিয়া লইয়াছিলাম। পণ্ডিত মহাশয় সে দিন তাহাকে ক্ষমা করিলেন, কহিয়া দিলেন, তুমি আর কখনও কাহারও দ্রব্যে হস্তার্পণ করিও না। মাধব বলিল, আমি আর কখনও কাহারও কোনও দ্রব্যে হাত দিব না।

 দুই তিন দিন কাহারও কোনও দ্রব্য হারাইল না। পরে পুনরায় বিদ্যালয়ের বালকদিগের দ্রব্য হারাইতে লাগিল। মাধব পুনরায় চোর বলিয়া ধরা পড়িল। সে বারেও শিক্ষক মহাশয় তাহাকে ক্ষমা করিলেন এবং অনেক বুঝাইয়া কহিয়া দিলেন, যদি তুমি পুনর্বার চুরী কর, তোমাকে বিদ্যালয় হইতে বহিস্কৃত করিয়া দিব। সে কহিল, আমি আর কখনও চুরী করিব না। আর চুরী করিব না বলিয়া, পণ্ডিত মহাশয়ের নিকট কহিয়াও, কয়েক দিন পরে পুনর্বার চুরী করিল এবং চোর বলিয়া ধরা পড়িল।

 এই রূপে বারংবার চুরী করাতে পণ্ডিত মহাশয় তাহাকে বিদ্যালয় হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন। তাহার পিতা, এই সকল জানিতে পারিয়া তাহাকে যথেষ্ট তিরস্কার ও প্রহার করিলেন। কিছু দিন পরে, তাহার পিতা তাহাকে আর এক বিদ্যালয়ে পাঠাইলেন। সে সেখানেও চুরী করিতে লাগিল। সেই বিদ্যলয়ের পণ্ডিত মহাশয়, বিস্তর ভর্ৎসনা ও প্রহার করিয়া তাহাকে তাড়াইয়া দিলেন।

 এই সকল দেখিয়া, শুনিয়া, তাহার পিতার মনে অতিশয় ঘৃণা হইল। তিনি ক্র‌ুদ্ধ হইয়া তাহাকে বাটী হইতে বহিষ্কৃত করিয়া দিলেন। বাল্যকালে চুরী অভ্যাস করিয়া মাধব আর সে অভ্যাস পরিত্যাগ করিতে পারিল না। ক্রমে ক্রমে যত বড় হইতে লাগিল, ততই তাহার ঐ প্রবৃত্তি বাড়িতে লাগিল। সে সুযোগ পাইলেই, কাহারও বাটীতে প্রবেশ করিয়া, চুরী করিত। এজন্য, যে দেখিত, সেই তাহাকে ঘৃণা করিত। কেহ তাহাকে বিশ্বাস করিত না। কাহারও বাড়ীতে গেলে, সে তাহাকে দূর দূর করিয়া তাড়াইয়া দিত।

 মাধবের দুঃখের সীমা ছিল না। সে খাইতে না পইয়া, পেটের জ্বালায় ব্যাকুল হইয়া, দ্বারে দ্বারে কাঁদিয়া বেড়াইত, তথাপি তাহার প্রতি কাহারও স্নেহ বা দয়া হইত না।

মিশ্র সংযোগ—তিন অক্ষরে

ক্ষ্ণতীক্ষ্ণ।
ক্ষ্মসূক্ষ্ম, যক্ষ্মা, লক্ষ্মী।
ঙ্ক্ষআকাঙ্ক্ষা, আকাঙ্ক্ষিত।
জ্জ্বউজ্জ্বল।
ত্ত্রপুত্ত্র, পৌত্ত্র।
ত্ত্বতত্ত্ব, মহত্ত্ব।
ত্ম্যদৌরাত্ম্য, মাহাত্ম্য।
ন্ত্রতন্ত্র, মন্ত্র, যন্ত্র, মন্ত্রী।
ন্ত্বসান্ত্বনা।
ন্দ্রচন্দ্র, তন্দ্রা, ইন্দ্রিয়।
ন্দ্বদ্বন্দ্ব, প্রতিদ্বন্দ্বী।
ন্ধ্যবন্ধ্যা, সন্ধ্যা।
ন্ন্যসন্ন্যাস, সন্ন্যাসী।
ম্প্রসম্প্রতি, সম্প্রীত।
ম্ভ্রসম্ভ্রম, সম্ভ্রান্ত।
র্চ্চঅর্চ্চনা, চর্চ্চা, অর্চ্চিত।
র্চ্ছমূর্চ্ছনা, মূর্চ্ছা, মূর্চ্ছিত।
র্জ্জগর্জ্জন, উপার্জ্জন।
র্ত্থপ্রার্ত্থনা, প্রার্ত্থিত।
র্দ্দকর্দ্দম, নির্দ্দয়, নির্দ্দোষ।
র্দ্ধঅর্দ্ধ, মূর্দ্ধন্য, নির্দ্ধারিত।
র্ম্মকর্ম্ম, ধর্ম্ম, নির্ম্মল।
র্য্যকার্য্য, ধৈর্য্য, ঐশ্বর্য্য।
র্ব্বখর্ব্ব, গর্ব্ব, পূর্ব্ব, সর্ব্বদা।
র্শ্বপার্শ্ব, পারিপার্শ্বিক।
ষ্ট্রউষ্ট্র, রাষ্ট্র।
ষ্প্রনিষ্প্রয়ােজন, দুষ্প্রবৃত্তি।
স্ত্রঅস্ত্র, বস্ত্র, শাস্ত্র, স্ত্রী।

৭ পাঠ।

[ শিশুশিক্ষা হইতে উদ্ধৃত ]

সাত বার।

রবি,সােম,মঙ্গল,বুধবৃহস্পতি,
শুক্র,শনি।

বার মাস।

বৈশাখ,জ্যৈষ্ঠ,আষাঢ়,শ্রাবণ,
ভাদ্র,আশ্বিন,কার্ত্তিক,অগ্রহায়ণ,
পৌষ,মাঘ,ফাল্গুন,চৈত্র,

ছয় ঋতু।

গ্রীষ্ম,বর্ষা,শরৎ,হেমন্ত,শীত,বসন্ত।

গ্রীষ্ম।

দ্বাদশ মাসের মধ্যে বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল। এই কালে সূর্য্যের তেজ বড় তীক্ষ্ণ হয়। জলাশয়ের জল শুকাইয়া যায়। দিনের বেলায়, রৌদ্রের জন্যে, ঘরের বাহির হওয়া যায় না। অনবরত শরীরে ঘর্ম্ম হয়। সর্ব্বদা পিপাসা পায়। শরীর জুড়াইবার জন্যে, সকল জীব জন্তু শীতল স্থানে বাস করিতে বাসনা করে। দক্ষিণ দিক হইতে বেগে বায়ু বহিতে থাকে। মধ্যে মধ্যে অপরাহ্নে ঝড়, জল, বজ্রাঘাত হয়। আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি নানাবিধ সুস্বাদু ফল পাকে। এই কালে দিন বাড়ে, রাত্রি ছোট হয়।

 হে বালকবালিকাগণ! তোমরা গ্রীষ্মকালে রৌদ্রের সময় ঘরের বাহির হইও না। বিকাল বেলায় যখন মাটী ও বায়ু শীতল হইয়াছে দেখিবে, তখন ঘরের বাহির হইয়া, খেলা করিবে ও বেড়াইবে।


বর্ষা।

আষাঢ় শ্রাবণ মাস বর্ষাকাল। এই কালে আকাশ প্রায় মেখে আচ্ছন্ন থাকে। সর্ব্বদা অতিশয় বৃষ্টি ও মেঘগর্জ্জন হয়। নদী, খাল, বিল, পুষ্করিণী প্রভৃতি জলাশয় জলে পরিপূর্ণ হইতে থাকে। পথে অতিশয় কর্দ্দম হয়। লোকের যাতায়াত করা কঠিন হইয়া উঠে।

 বর্ষাকালে ভেকগণের বড় আনন্দ। ইহারা, নূতন জল পাইয়া, নানা রঙ্গে খেলা করে ও উচ্চ স্বরে ডাকিতে থাকে। ময়ুর ময়ুরী, মেঘ দেখিয়া, আহ্লাদে মত্ত হইয়া, নাচিয়া বেড়ায়। কেতক ও কদম্ব পুষ্পের গন্ধে চারি দিক আমোদিত হয়। আতা, পিয়ারা, আনারস প্রভৃতি সুস্বাদু ফল সকল পাকিয়া উঠে। কৃষকেরা মাঠে ধান্য রোপণ করে।

 এই কালে, পূর্ব্ব দিক হইতে বায়ু বহিতে থাকে। হে শিশুগণ! ঐ বায়ু অত্যন্ত অহিতকারী। উহা শরীরে লাগাইলে, এবং বৃষ্টিতে ভিজিলে ও কাদায় বেড়াইলে, কফ, কাসী, জ্বর প্রভৃতি নানা রোগ জন্মিতে পারে।


শরৎ।

ভাদ্র অশ্বিন দুই মাস শরৎকাল। এই কালে আকাশমণ্ডল ও দিক সকল পরিস্কৃত হইতে থাকে। সূর্য্যের কিরণ খরতর হয়। পথের কর্দ্দম ও ভূমির জল শুকাইতে আরম্ভ হয়। নদীর জল নির্ম্মল হয়। চন্দ্র ও তারাগণের জ্যোতি উজ্জ্বল হওয়াতে, রাত্রিকালে আকাশের বড় শোভা হয়। পদ্ম, কুমুদ প্রভৃতি জলপুষ্প প্রস্ফ‌ুটিত হইয়া, জলাশয়ের শোভা করে। হংস, বক, চক্রবাক প্রভৃতি জলচর পক্ষী আনন্দে কেলি করিতে থাকে। তাল, লেবু, সুপারি, নারিকেল প্রভৃতি নানাবিধ ফল পক্ব হইয়া উঠে।

 শরৎকালে সমুদয় মাঠ ধানের গাছে পরিপূর্ণ দেখিয়া, নয়নের বড় প্রীতি হয়। হে শিশুগণ! সকালে বিকালে যদি মাঠের দিকে বেড়াইতে যাও, ধানের শোভা দেখিয়া বড় আহ্লাদ পাইবে। শরৎকালের রৌদ্র প্রচণ্ড ও অপকারক কদাচ শরীরে লাগাইও না, লাগাইলে নিশ্চিত পীড়া হইবেক।


হেমন্ত।

কার্তিক অগ্রহায়ণ দুই মাস হেমন্ত। এই কালে উত্তর দিক হইতে অল্প অল্প শীতল বায়ু বহিতে আরম্ভ হয়, এবং অল্প অল্প শীত অনুভব হইতে থাকে। রাত্রিকালে এত হিম পড়ে যে, প্রভাতে বোধ হয় যেন বৃষ্টি হইয়াছে।

 হেমন্তকালে মনুষ্যেরা শীতবস্ত্র ব্যবহার করিতে আরম্ভ করে। দিনের পরিমাণ অল্প হইতে থাকে, এবং রাত্রির পরিমাণ ক্রমে ক্রমে অধিক হয়। রৌদ্রের তেজ হ্রাস হইয়া যায়। এই কালে ক্ষেত্রের ধান্য পাকিয়া উঠে।

 হেমন্তকালের হিম শরীরে লাগিলে, বড় পীড়া হয়, অতএব শীতবস্ত্র দ্বারা সর্ব্বদা শরীর ঢাকিয়া রাখা কর্তব্য।


শীত।

পৌষ মাঘ দুই মাস শীতকাল। উত্তরের বায়ু, যত বেগে বহিতে থাকে, ততই শীতের বৃদ্ধি হয়। রাত্রিকালে, মনুষ্যেরা শীতনিবারণের জন্যে লেপ, কাঁথা, কম্বল ব্যবহার করিয়া থাকে। দিবসেও শাল, বনাত, লুই, পাছুড়ি প্রভৃতি শীতবস্ত্র গায়ে না দিলে শীত ভাঙ্গে না। কোনও ব্যক্তিই জলের নিকটে যাইতে চায় না। শীতকালে কেবল আগুনের তাপ ও রৌদ্রের উত্তাপ ভাল লাগে।

 রাত্রিকালে, আকাশমণ্ডল ধূমে ও হিমে আচ্ছন্ন হইয়া থাকে। চন্দ্র ও তারাগণ মলিন দেখায়। শীতকালে রাত্রি অনেক বড় হয়, দিন অনেক ছোট হইয়া যায়। মুগ, মটর, সরিষা প্রভৃতি শস্য সকল শিশিরের জল পাইয়া পাকিয়া। উঠে। পদ্ম আদি জলপুষ্প এক বারে নষ্ট হইয়া যায়। মধ্যে মধ্যে প্রাতঃকালে কুজ্বাটিকা হইয়া থাকে। শীতকালে, সকল লোকেই অতিশয় পরিশ্রম করতে পারে।


ফাল্গুন চৈত্র এই দুই মাস বসন্তকাল। এই কালে দক্ষিণ দিক হইতে মন্দ মন্দ বায়ু বহিতে থাকে। আকাশমণ্ডল নির্ম্মল হয়। সূর্য্যের তেজ তীক্ষ হইতে আরম্ভ হয়। চন্দ্র ও তারাগণের আলোক উজ্জ্বল হয়। সমুদয় তরু ও লতার শ্রীবৃদ্ধি হয়। কাহারও নূতন পল্লব, কাহারও মুকুল, কাহারও মঞ্জরী, কাহারও ফুল, কাহারও ফল উৎপন্ন হইতে থাকে। পুষ্পের মধু পান করিবার অভিলাষে ভ্রমর ও মধুমক্ষিকা এক পুষ্প হইতে উড়িয়া অন্য পুষ্পে বসিতে থাকে। পক্ষিগণ বৃক্ষের শাখায় বসিয়া আহ্লাদে মধুর স্বরে গান করে।

 বসন্তকাল সকল কাল অপেক্ষা উত্তম। এই কালে শীত, গ্রীষ্ম, বৃষ্টি, শিশির কিছুই থাকে না। এজন্য সকলপ্রকার জীব জন্তু আনন্দে কালযাপন করে।

সম্পূর্ণ

অধ্যায় ২ / ২

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন