বর্ণপরিচয় (প্রথম ভাগ)

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

বর্ণপরিচয় – শ্রীঈশ্বরচন্দ্রবিদ্যাসাগর প্রণীত।
প্রথম ভাগ।

অ সং যু ক্ত ব র্ণ।
দ্বিষষ্টিতম সংস্করণ।
কলিকাতা
সংস্কৃত যন্ত্র।
সং বৎ ১৯৩৩।
মূল্য এক আনা।

PUBLISHED BY THE SANSKRIT PRESS DEPOSITORY,
NO. 30 BECHOO CHATTERJEE’S STREET.
1876.

.

ষষ্টিতম সংস্করণের বিজ্ঞাপন

আবশ্যক বোধ হওয়াতে, এই সংস্করণে কোনও কোনও অংশ পরিবর্ত্তিত হইয়াছে; সুতরাং সেই সেই অংশে পূর্ব্বতন সংস্করণের সহিত অনেক বৈলক্ষণ্য লক্ষিত হইবেক।

প্রায় সর্ব্বত্র দৃষ্ট হইয়া থাকে, বালকেরা অ, আ, এই দুই বর্ণস্থলে স্বরের অ, স্বরের আ, বলিয়া থাকে। যাহাতে তাহারা, সেরূপ না বলিয়া, কেবল অ, আ এইরূপ বলে, তদ্রূপ উপদেশ দেওয়া আবশ্যক।

যে সকল শব্দের অন্ত্য বর্ণে আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ এই সকল স্বর বর্ণের যোগ নাই, উহাদের অধিকাংশ হলন্ত, কতকগুলি অকারান্ত, উচ্চারিত হইয়া থাকে। যথা, হলন্ত―গুড়, ঘর, হাত, জল, পথ, বন ইত্যাদি; অকারান্ত―কত, ছোট, ভাল, ঘৃত, দৈব, মৌন ইত্যাদি। কিন্তু অনেক স্থলেই দেখিতে পাওয়া যায়, এই বৈলক্ষণ্যের অনুসরণ না করিয়া, তাদৃশ শব্দ মাত্রই অকারান্ত উচ্চারিত হইয়া থাকে। বর্ণযোজনার উদাহরণ স্থলে যে সকল শব্দ প্রযুক্ত হইয়াছে, তন্মধ্যে যে গুলি অকারান্ত উচ্চারিত হওয়া আবশ্যক, সেই সেই শব্দের পার্শ্বদেশে * এইরূপ চিহ্ন যোজিত হইল। যে সকল শব্দের পার্শ্বদেশে তদ্রূপ চিহ্ন নাই, উহারা হলন্ত উচ্চারিত হইবেক।

বাঙ্গালা ভাষায় তকারের ত, ৎ, এই দ্বিবিধ কলেবর প্রচলিত আছে। দ্বিতীয় কলেবরের নাম খণ্ড তকার। ঈষৎ, জগৎ, বৃহৎ প্রভৃতি সংস্কৃত শব্দ লিখিবার সময় খণ্ড তকার ব্যবহৃত হইয়া থাকে। খণ্ড তকারের স্বরূপ পরিজ্ঞানের নিমিত্ত, বর্ণপরিচয় পরীক্ষার শেষ ভাগে তকারের দুই কলেবর প্রদর্শিত হইল।

শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা
কর্ম্মাটাঁড।
১লা পৌষ, সংবৎ ১৯৩২।

.

বিজ্ঞাপন

বর্ণপরিচয়ের প্রথম ভাগ প্রচারিত হইল। বহুকাল অবধি, বর্ণমালা ষোল স্বর ও চৌত্রিশ ব্যঞ্জন এই পঞ্চাশ অক্ষরে পরিগণিত ছিল। কিন্তু বাঙ্গালা ভাষায় দীর্ঘ ৠ কার ও দীর্ঘ ৡকারের প্রয়োগ নাই; এ নিমিত্ত ঐ দুই বর্ণ পরিত্যক্ত হইয়াছে। আর, সবিশেষ অনুধাবন করিয়া দেখিলে, অনুস্বার ও বিসর্গ স্বর বর্ণ মধ্যে পরিগণিত হইতে পারে না; এজন্য, ঐ দুই বর্ণ ব্যঞ্জন বর্ণ মধ্যে পঠিত হইয়াছে। আর, চন্দ্রবিন্দুকে ব্যঞ্জন বর্ণ স্থলে এক স্বতন্ত্র বর্ণ বলিয়া গণনা করা গিয়াছে। ড ঢ য এই তিন ব্যঞ্জন বর্ণ পদের মধ্যে অথবা পদের অন্তে থাকিলে ড় ঢ় য় হয়; সুতরাং অভিন্ন বর্ণ বলিয়া পরিগৃহীত হইয়া থাকে। কিন্তু যখন আকার ও উচ্চারণ উভয়থাই পরস্পর ভেদ আছে, তখন উহাদিগকে স্বতন্ত্র বর্ণ বলিয়া উল্লেখ করাই উচিত; এই নিমিত্ত, উহারাও স্বতন্ত্র ব্যঞ্জন বর্ণ বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়াছে। ক ও ষ মিলিয়া ক্ষ হয়, সুতরাং উহা সংযুক্ত বর্ণ; এজন্য, অসংযুক্ত ব্যঞ্জন বর্ণ গণনা স্থলে পরিত্যক্ত হইয়াছে।

শ্রীঈশ্বরচন্দ্র শর্ম্মা
কলিকাতা, সংস্কৃত কালেজ।

১লা বৈশাখ, সংবৎ ১৯১২।

.

বর্ণপরিচয় – প্রথম ভাগ।


স্বরবর্ণ

বর্ণপরিচয়ের পরীক্ষা।

ব্যঞ্জনবর্ণ

ড়ঢ়য়

বর্ণপরিচয়ের পরীক্ষা।

য়
ঢ়
ড়

বর্ণযোজনা

করজলপথরস
খলদশফলবন
ঘটনখভয়শঠ
অচলঅলসআদরইতর
অধমঅবশআলয়ঈষৎ
অপরঅসৎআসনঔষধ
কপটদশমমরণবসন
গরলধবলরজকশকট
জগৎনয়নলবণসরল

আকারযোগ।

কামা

উদাহরণ

কাকতালপাঠলাভ
গানদানভাগবাস
ঘাসনামমাসশাক
ঘটাসভাতারামালা
লতাদয়াদাতারাজা
কথাজবাভাষাশাখা
কারণঅগাধকাপাসতাড়না
বালককপাটপাষাণভাবনা
সাহসসমানবাচালযাতনা

ইকারযোগ

ি
কিবি

উদাহরণ।

তিলমণিদধিগিরি
দিনগতিতরিনিধি
হিমযদিরবিলিপি
কিরণকঠিনঅগতিনিবিড়
দিবসহরিণঅবধিশিশির
নিকটমলিনঅশনিবিহিত

ঈকারযোগ

কীতী

উদাহরণ।

কীটধীরঘটীজয়ী
গীতনীলনদীবলী
তীরশীতধনীশশী
জীবনগভীরতরণী
নীরসশরীররজনী
শীতলঅলীকপদবী

উকারযোগ

কুসু

উদাহরণ।

কুলবুধলঘুঋতু
ঘুণমুখঋজুমধু
তুষসুখকটুতনু
কুশলআকুলঅলঘু
মুখরচতুরঅপটু
সুলভমধুরঅতনু

ঊকারযোগ

কূদূ

উদাহরণ।

কূপদূরভূতশূল
গূঢ়*ধূমমূঢ়সূপ
নূতনভূষণ
পূরণশূকর
অকূলময়ূর
অপূপমসূর

ঋকারযোগ

কৃতৃ

উদাহরণ।

কৃশ*ঘৃত*দৃঢ়*মৃগ*
গৃহ*তৃণ*ধৃত*বৃষ*
কৃপণপৃথকবৃহৎ
অকৃত*অনৃত*আবৃত*
সদৃশ*অমৃত*মসৃণ*

একারযোগ

কেদে

উদাহরণ।

কেশতেজভেকবেশ
খেদদেশমেঘশেষ
কেবলপেচকবেতন
চেতনমেলকশেখর
ছেদনলেখকসেবক
আদেশঅপেয়*আবেশ
অনেকঅভেদঅশেষ

ঐকারযোগ

কৈদৈ
জৈন*দৈব*শৈল*
তৈল*বৈধ*হৈম*
কৈতবভৈরবশৈশব
ধৈবতবৈভবসৈকত

ওকারযোগ।

কোদো

উদাহরণ

কোণদোষরোগ
গোলবোধলোভ
চোরভোগশোক
কোমলভোজনরোদন
গোপনমোদকলোচন
চকোরকপোতআমোদ
কঠোরঅবোধঅশোক

ঔকারযোগ

কৌপৌ

উদাহরণ।

কৌলচৌরপৌষলৌহ*
গৌরতৌলমৌন*শৌচ
কৌশলযৌবন
গৌরবসৌরভ

মিশ্র উদাহরণ

সাধুঘৃণারিপুভূমি
পূজাশোভাতালুকৃপা
ধেনুবায়ুনীতিপীড়া
নাভিসেবাসুখীরাশি
শিখামেধাধাতুখেলা
বেণুরীতিবীণাসীমা
লীলানৌকানাড়ীহানি
বিকারশৃগালদয়ালু
আকৃতিনিষেধমৃগয়া
মানুষবিচারনিরীহ
বিনাশকৌতুকসোপান
কোকিলনীরোগদুরাশা
বিড়ালএকাকীপিপাসা
পৃথিবীবালিকামেধাবী
অধিকারঅনুপায়অভিমান
পরিহাসপরিতােষঅনুতাপ
পুরাতনবিপরীতনিবারণ
সমুদায়অভিলাষঅনুযােগ
অনুরাগঅনুমানপরিবার
অবিচারপরিশােধকৌতূহল
পরিণামআলােচনাবিবেচনা
অনুধাবনঅবিবেচনা
অকুতােভয়অনুশােচনা
পরিবেশনঅভিনিবেশ
অনুশীলননিরভিমান
অনধিকারপরিদেবনা
অনুমােদনপারলৌকিক
নিরপরাধপারিতােষিক

অনুস্বারযোগ

অংবং

উদাহরণ।

অংশ*হংস*সিংহ*
বংশ*মাংস*হিংসা
দংশনসংযোগবিংশতি
সংশয়সংসারমীমাংসা

বিসর্গযোগ

কঃনঃ

উদাহরণ।

দুঃখ*দুঃখিতনিঃশেষ
দুঃখীদুঃশীলনিঃসৃত*
দুঃসময়অধঃপাতনিঃসহায়
দুঃসাহসমনঃপূত*পুনঃপুনঃ

চন্দ্রবিন্দুযোগ

কাকাঁচাচাঁ

উদাহরণ।

চাঁদফাঁদকাঁচা
দাঁতবাঁকচাঁপা
পাঁচহাঁসতাঁবা
কাঁটালকাঁসারি
পাঁকালসাঁখারি

বর্ণ বিশেষে উ ঊ ঋ যোগের বিশেষ

গু

উদাহরণ।

গুড়অগুণগুহা
গুণবিগুণগুণবান
রু

উদাহরণ।

রুচিতরুঅরুণ
রুধিরকরুণানিরুপায়

উদাহরণ।

শুকপশুঅশুভ*
শুচিশিশুকিংশুক

হু

উদাহরণ।

বহুরাহুবহুমান
বাহুআহুতিহুতাশন
রূ

উদাহরণ।

রূঢ়সরূপআরূঢ়*
রূপনিরূপণঅপরূপ
হৃ

উদাহরণ।

হৃত*সুহৃৎআহৃত*
হৃদয়সহৃদয়অপহৃত*

১ পাঠ

বড় গাছ।
ভাল জল।
লাল ফুল।
সােজা পথ।
ছােট পাতা।

২ পাঠ।

পথ ছাড়।
জল খাও।
হাত ধর।
কথা শুন।
বাড়ী যাও।

৩ পাঠ।

কথা কয়।
জল পড়ে।
মেঘ ডাকে।
হাত নাড়ে।
খেলা করে।

৪ পাঠ।

কি পড়।
কোথা যাও।
ধীরে চল।
কাছে এস।
বই আন।

৫ পাঠ।

নূতন ঘটী।
পুরাণ বাটী।
কাল পাথর।
সাদা কাপড়।
শীতল জল।

৬ পাঠ।

বাহিরে যাও।
ভিতরে এস।
কপাট খােল।
কাগজ রাখ।
কলম দাও।

৭ পাঠ।

আমি যাইব।
সে আসিবে।
তােমরা যাও।
তিনি গিয়াছেন।
আমরা যাইতেছি।
তাহারা আসিতেছে।

৮ পাঠ।

কাক ডাকিতেছে।
গরু চরিতেছে।
পাখী উড়িতেছে।
জল পড়িতেছে।
পাতা নড়িতেছে।
ফল ঝুলিতেছে।

৯ পাঠ।

আমি মুখ ধুইয়াছি।
রাখাল কাপড় পরিতেছে।
ভুবন কাপড় পরিয়াছে।
গােপালের পড়িবার বই নাই।
মাধব কখন পড়িতে গিয়াছে।
যাদব এখনও শুইয়া আছে।
রাখাল সারা দিন খেলা করে।

১০ পাঠ।

রাম, তুমি হাসিতেছ কেন।
নবীন কেন বসিয়া আছে।
আমি আজ পড়িতে যাইব না।
তিনি এখানে কখন আসিবেন।
আমরা কাল সকালে যাইব।
তুমি একলা কোথা যাইতেছ।
তোমরা এখানে কি করিতেছ।

১১ পাঠ।

তুমি কখন পড়িতে যাইবে।
যাদু কাল সকালে আসিবে।
তোমার গৌণ হইল কেন।
আমি আজ বিকালে যাইব।
কাল আমরা পড়িতে যাই নাই।
আজ আমি তোমাদের বাড়ী যাইব।
কাল রাম আমাদের বাড়ী আসিবে।

১২ পাঠ।

কখনও মিছা কথা কহিও না।
কাহারও সহিত ঝগড়া করিও না।
কাহাকেও গালি দিও না।
ঘরে গিয়া উৎপাত করিও না।
রোদের সময় দৌড়াদৌড়ি করিও না।
পড়িবার সময় গোল করিও না।
সারা দিন খেলা করিও না।

১৩ পাঠ।

তারক ভাল পড়িতে পারে।
ঈশান কিছুই পড়িতে পারে না।
কৈলাস কাল পড়া বলিতে পারে নাই।
আজ অসুখ হইয়াছে, পড়িতে যাইব না।
কাল জল হইয়াছিল, পথে কাদা হইয়াছে।
তুমি দৌড়িয়া যাও কেন, পড়িয়া যাইবে।
উমেশ ছুরিতে হাত কাটিয়া ফেলিয়াছে।

১৪ পাঠ।

আর রাতি নাই। ভোর হইয়াছে। আর শুইয়া থাকিব না। উঠিয়া মুখ ধুই। মুখ ধুইয়া কাপড় পরি। কাপড় পরিয়া পড়িতে বসি। ভাল করিয়া না পড়িলে, পড়া বলিতে পারিব না। পড়া বলিতে না পারিলে, গুরু মহাশয় রাগ করিবেন; নূতন পড়া দিবেন না।

১৫ পাঠ।

বেলা হইল। পড়িতে চল। আমার কাপড় পরা হইয়াছে। তুমি কাপড় পর। আমার বই লইয়াছি। তোমার বই কোথায়। এস যাই, আর দেরি করিব না। কাল আমরা সকলের শেষে গিয়াছিলাম; সব পড়া শুনিতে পাই নাই।

১৬ পাঠ।

দেখ রাম, কাল তুমি, পড়িবার সময়, বড় গোল করিয়াছিলে। পড়িবার সময় গোল করিলে, ভাল পড়া হয় না; কেহ শুনিতে পায় না। তোমাকে বারণ করিতেছি, আর কখনও পড়িবার সময় গোল করিও না।

১৭ পাঠ।

নবীন, কাল তুমি, বাড়ী যাইবার সময়, পথে ভুবনকে গালি দিয়াছিলে। তুমি ছেলে মানুষ, জান না, কাহাকেও গালি দেওয়া ভাল নয়। আর যদি তুমি কাহাকেও গালি দাও, আমি সকলকে বলিয়া দিব, কেই তোমার সহিত কথা কহিবে না।

১৮ পাঠ।

গিরিশ, কাল তুমি পড়িতে এস নাই কেন। শুনিলাম, কোনও কাজ ছিল না, মিছামিছি কামাই করিয়াছ; সারা দিন খেলা করিয়াছ; রোদে দৌড়াদৌড়ি করিয়াছ; বাড়ীতে অনেক উৎপাত করিয়াছ? আজ, তোমাকে কিছু বলিলাম না। দেখিও, আর যেন কখনও এরূপ না হয়।

১৯ পাঠ।

গোপাল বড় সুবোধ। তার বাপ মা যখন যা বলেন, সে তাই করে। যা পায় তাই খায়, যা পায় তাই পরে, ভাল খাব, ভাল পরিব বলিয়া উৎপাত করে না?

 গোপাল আপনার ছোট ভাই ভগিনী গুলিকে বড় ভাল বাসে। সে কখনও তাদের। সহিত ঝগড়া করে না, তাদের গায় হাত তুলে না। এ কারণে, তার পিতা মাতা। তাকে অতিশয় ভাল বাসেন।

 গোপাল যখন পড়িতে যায়, পথে খেলা করে না; সকলের আগে পাঠশালায় যায়। পাঠশালায় গিয়া, আপনার জায়গায় বসে; আপনার জায়গায় বসিয়া, বই খুলিয়া পড়িতে থাকে; যখন গুরু মহাশয় নুতন পড়া দেন, মন দিয়া শুনে।

 খেলিবার ছুটী হইলে, যখন সকল বালক খেলিতে থাকে, গোপালও খেলা করে। আর আর বালকেরা, খোলার সময়, ঝগড়া করে, মারামারি করে। গোপাল তেমন নয়। সে এক দিনও, কাহারও সহিত, ঝগড়া বা মারামারি করে না।

 পাঠশালার ছুটী হইলে, বাড়ী গিয়া, গোপাল পড়িবার বইখানি আগে ভাল জয়গায় রাখিয়া দেয়; পরে, কাপড় ছাড়িয়া, হাত পা মুখ ধোয়। গোপালের মা যা কিছু খাবার দেন, গোপাল তাই খায়; খাইয়া, আপনার ছোট ভাই ভগিনী গুলি লইয়া, খানিক খেলা করে।

 গোপাল কখনও লেখা পড়ায় অবহেলা করে না। সে পাঠশালায় যাহা পড়িয়া আইসে, বাড়ীতে তাহা ভাল করিয়া পড়ে; পুরাণ পড়া গুলি দুবেলা আগা গোড়া দেখে। পড়া বলিবার সময়, সে সকলের চেয়ে ভাল বলিতে পারে।

 গোপালকে যে দেখে, সেই ভাল বাসে। সকল বালকেরই গোপালের মত হওয়া উচিত।

২০ পাঠ।

গোপাল যেমন সুবোধ, রাখাল তেমন নয়। সে বাপ মার কথা শুনে না; যা খুসি তাই করে; সারা দিন উৎপাত করে; ছোট ভাই ভগিনী গুলির সহিত ঝগড়া ও মারামারি করে। এ কারণে, তার পিতা মাতা তাকে দেখতে পারেন না।

 রাখাল, পড়িতে যাইবার সময়, পথে খেলা করে; মিছামিছি দেরি করিয়া, সকলের শেষে পাঠশালায় যায়। আর আর বালকেরা পাঠশালায় গিয়া পড়িতে বসে। রাখালও দেখাদেখি বই খুলিয়া বসে; বই খুলিয়া হাতে করিয়া থাকে, এক বারও পড়ে না।

 লেখা পড়ায় রাখালের বড় অমনোযোগ। সে এক দিনও মন দিয়া পড়ে না। এবং এক দিনও ভাল পড়া বলিতে পারে না। গুরু মহাশয় যখন নুতন পড়া দেন, সে তাহাতে মন দেয় না, কেবল এ দিকে, ও দিকে চাহিয়া থাকে।

 খেলিবার ছুটী হইলে, রাখাল বড় খুসী। খেলিতে পাইলে, সে আর কিছুই চায় না। খোলবার সময়, সে সকলের সহিত ঝগড়া ও মারামারি করে; এ কারণে, গুরু মহাশয় তাহাকে সতত গালাগালি দেন।

 ছুটী হইলে, বাড়ীতে গিয়া, রাখাল পড়িবার বই কোথায় ফেলে, কিছুই ঠিকানা থাকে না; কোনও দিন পাঠশালায় ফেলিয়া। অইসে; কোনও দিন পথে হারাইয়া আইসে। রাখালের পিতা, এক মাসের ভিতর, চারি বার বই কিনিয়া দিয়াছেন। তিনি কাহিয়াছেন, এবার বই হারাইলে আর কিনিয়া দিবেন না।

 রাখালকে কেহ ভাল বাসে না। কোনও বালকেরই রাখালের মত হওয়া উচিত নয়। যে রাখালের মত হইবে, সে লেখা পড়া শিখিতে পারিবেক না।

২১ পাঠ

একদুইতিনচারিপাঁচ
১০
ছয়সাতআটনয়দশ

সম্পূর্ণ

অধ্যায় ১ / ২

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন