৩২. আউট অব দ্য ফায়ার

জে. কে. রাওলিং

৩২. আউট অব দ্য ফায়ার

আমি যাবো না, আমার হাসপাতাল উইংগ-এ যাবার দরকার নেই, আমি যাবো না।

প্রফেসর টফটির হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ও অস্পষ্টভাবে কথাগুলো বলৈ যাচ্ছিলো। ছাত্রদের সঙ্গে ধরাধরি করে টফটি হ্যারিকে বাইরে নিয়ে এনট্রেন্স হলে ঢুকলেন। টফটি হ্যারিকে দেখে খুবই চিন্তিত হলেন।

হ্যারি ওর মুখ থেকে ঘাম মুছে বললো, আমি… আমি ভালো আছি। হঠাৎ আমি ঘুমিয়ে পড়ে নাইট মেয়র (নিশঃস্বপ্নে দেখেছি।

বৃদ্ধ জাদুকর সহানুভূতির সুরে বললেন–পরীক্ষার চাপ। হ্যারির পিঠে হাত রেখে বললেন, এমন হয় ইয়ংম্যান এমন হয়, এমন হয়! নাও এক গেলাস ঠাণ্ডা জল খাও! গ্রেট হলে বাকি প্রশ্নগুলির উত্তর দেবার জন্য যেতে পারবে তো? পরীক্ষার সময় প্রায় শেষ হতে চলেছে, এখন তুমি তোমার শেষ প্রশ্নের জবাবটি আশাকরি সুন্দর করে শেষ করতে পারবে।

–হ্যাঁ পারবো, হ্যারি পাগলের মতো বললো, আমি বলছি… না আমি যতটুকু পেরেছি তাই করেছি। আমি মনে করি…।

বৃদ্ধ জাদুকর মিষ্টি সুরে বললেন, আমি হলে গিয়ে তোমার পরীক্ষার কাগজ নিয়ে নিচ্ছি, তুমি এখন তোমার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ো।

হ্যারি ভীষণভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বললো, তাই যাবো। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ প্রফেসর।

বৃদ্ধ জাদুকর ধীরে ধীরে গ্রেটহলে চলে গেলেন।

হ্যারি এক সেকেন্ড দেরি না করে মার্বেল সিঁড়ির কাছে গেলো। তারপর করিডোর দিয়ে এতো জোরে দৌড়াতে লাগলো দেখে গ্রেটহলের জাদুকররা ওকে বকুনি দিতেই ও ঝড়ের মতো দৌড়াতে দৌড়াতে হাসপাতালের (হসপিট্যাল উইংগ) ডবল দরজার সামনে দাঁড়ালো। ম্যাডাম পমফ্রে তখন অসুস্থ মন্টেগুকে চামচ দিয়ে গাঢ় নীল রঙের তরল একটা ওষুধ খাওয়াচ্ছিলেন। হ্যারিকে হাঁফাতে দেখে থমকে গেলেন।

–পটার, তোমার কী হয়েছে, তুমি এমনভাবে এলে কেন?

হ্যারি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল কেমন আছেন দেখতে এসেছি, খুব জরুরি। হ্যারির মনে হচ্ছিল বুঝি ওর হৃদপিণ্ড বুকের ভেতর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসবে।

–উনি তো এখানে নেই পটার, আমরা তাকে সেন্ট মাংগোস হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছি। এই বয়সে চার চারটে স্টানিং স্পেল সোজা তার বুকে মেরেছে। ম্যাডাম পমফ্রে দুঃখ ভরাক্রান্ত গলায় বললেন।

হ্যারি হতাশ হয়ে বললো, নেই, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল নেই এখানে?

ও ডরমেটরির বাইরে ছুটির ঘণ্টা শুনতে পেলো। অনেক ছেলে–মেয়েদের হাঁটার গমগম শব্দ শুনতে পেলো। ওরা ওপরের আর নিচের করিডোরের দিকে চলেছে। ও চুপ করে মধ্যবর্তী করিডোরে দাঁড়িয়ে রইলো ম্যাডাম পমফ্রের দিকে তাকিয়ে। ওর মন অব্যক্ত এক আশঙ্কাতে পূর্ণ হয়ে গেছে।

কাকে ও মনের কথা বলবে? কেউ নেই। ডাম্বলডোর নেই, হ্যাগ্রিড চলে গেছেন, কিন্তু ও আশা করেছিলো অন্তত প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে হসপিটাল উইংগ-এ দেখতে পাবে। যদিও উনি ওকে মাঝে মাঝে অনেক শাস্তি দিয়েছেন, বকেছেন, পয়েন্ট কেটেছেন। কখন কি করেন বোঝা দুষ্কর কড়া মেজাজের মহিলাকে। কিন্তু তিনি কাছে আছেন জানতে পারলে ও অনেক স্বস্তি পায়, ভরসা পায়।

ম্যাডাম পমফ্রে দুঃখ দুঃখ মুখে বললেন–আমি জানি খুবই অপ্রত্যাশিত ব্যাপার তুমি খুবই আঘাত পেয়েছে। কিন্তু ওদের মধ্যে কেউ তাকে দিনের আলোতে স্টান প্রয়োগ করতে পারবে? যতো সব কাপুরুষের বাচ্চা। আমি যদি চিন্তিত না হতাম, তাহলে আমাকে ছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের কি হতো। আমি প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করতাম।

কে যেন ওর মাথার মধ্যে থেকে বললো, রন, হারমিওন?

সেই কথাটা মনে হতেই আবার ও ঝড়ের বেগে দৌড়লো। দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রছাত্রীদের দুহাত দিয়ে ঠেলে ঠুলে দৌড়াল। ওর এই অদ্ভুত কাণ্ডের জন্য স্বভাবতই ওরা সবাই রেগে মেগে প্রতিবাদ করলো।

ও শুনতে পেলো সকলে ওকে ডাকছে, হ্যারি, হ্যারি। হারমিওন, হ্যারিকে দেখে ভয় পেয়ে গিয়ে বললো–কী হয়েছে হ্যারি? তুমি ঠিক আছে তো? শরীর খারাপ হয়নি তো?

রন বললো–হল ছেড়ে তুমি কোথায় গিয়েছিলে?

হ্যারি এক নিঃশ্বাসে বললো, আমার সঙ্গে তোমরা চলো, তোমাদের সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে।

ও দোতলার করিডোর দিয়ে যেতে যেতে পাশের প্রতিটি ক্লাসরুম দেখতে লাগলো। অবশেষে একটা বড় ঘর খালি রয়েছে দেখতে পেয়ে, ঘরের মধ্যে লাফিয়ে ঢুকে ও দরজা বন্ধ করে দিলো। তারপর দরজায় পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে রন আর হারমিওনের দিকে তাকালো।

–ভোল্ডেমর্ট সিরিয়সকে ধরেছেন। –কী বলে? –কেমন করে জানলে? –পরীক্ষার হলে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ার সময় স্বপ্নে দেখেছি, এই মাত্র দেখেছি। –কিন্তু কোথায়? কেমন করে? ফ্যাকাশে মুখে হারমিওন বললো।

–আমি জানি না কেমন করে? কিন্তু সেই জায়গাটা আমি ঠিক জানি। ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রেজ-এ একটা ঘর যেখানে তাক ভর্তি। তাতে রয়েছে ছোট ছোট কাঁচের বল। সাতানব্বই নম্বরের শেষ প্রান্তে, ভোল্ডেমর্ট সিরিয়সের কাছ থেকে জানতে চাইছিলেন যা হচ্ছে। তাই ওকে দারুণ অত্যাচার করছেন। শেষে বলেছেন, তোমাকে সবশেষে হত্যা করবো।

হ্যারির গলা শুধু নয়, আতঙ্কে পায়ের হাঁটুও কাঁপছে। ও একটা ডেস্কের কাছে গিয়ে বসে পড়লো, চেষ্টা করতে লাগলো ধাতস্থ হতে।

–আমরা ওখানে কেমন করে যাবো, হ্যারি ওদের বললো। সামান্য সময় সকলে নীরব। তারপর নীরবতা ভঙ্গ করে রন বললো।

হ্যারি জোরে জোরে বললো, আমাদের ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজ-এ যেতে হবে, তাহলে সিরিয়সকে উদ্ধার করা যাবে।

হ্যারি বুঝতে পারলো না কেন ওরা দুজনে তালবাহানা করছে। ও কি কোনও অযৌক্তিক কথা বলেছে?

–হ্যারি, হারমিওন ভয়মিশ্রিত গলায় বললো, ভোল্ডেমর্ট সেখানে গেলো কেমন করে? কেউ বুঝতে পারলো না?

–তা আমি কী করে বলবো, প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেমন করে ওখানে যাবো, হ্যারি একটু অসহিষ্ণু হয়ে বললো।

–শোনো হ্যারি, কথাটা তুমি বুঝতে চেষ্টা করো। এখন প্রায় পাঁচটা বাজে, মিনিস্ট্রি অফ ম্যাজিকে সব কর্মীরা রয়েছে। বুঝতে পারছি না ভোল্ডেমর্ট আর সিরিয়স তাদের চোখ এড়িয়ে সেখানে ঢুকলেন কেমন করে। তুমি তো জানো পৃথিবীতে ওই দুজন সম্ভবত ওয়ান্টেড জাদুকর। তুমি কী বলতে চাও ওরা আউররদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেই বাড়িতে ঢুকেছেন?

–আমি বলতে পারছি না। সম্ভবত ভোল্ডেমর্ট অদৃশ্য হবার ক্লোক বা ওই জাতীয় কিছু গায়ে দিয়েছেন; হ্যারি বেশ জোরে বললো, কিন্তু আমি যতোবার ওখানে গেছি ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজ ফাঁকা দেখেছি।

হারমিওন স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো–তুমি সেখানে কখনও যাওনি হ্যারি, তুমি সেই জায়গাটা স্বপ্নে দেখেছো, এটাই বুঝতে চেষ্টা করো।

হ্যারি হারমিওনের দিকে এগিয়ে গিয়ে জোর গলায় বললো, মোটেই ওগুলো সাধারণ স্বপ্ন নয়। তাহলে রনের বাবার ব্যাপারটা কী, সেটা বলো। আমি স্বপ্নে দেখেছি বলেই তো বলেছিলাম।

রন বললো, ওর কথাটা উড়িয়ে দেবার মতো নয় হারমিওন।

হারমিওন নিজের বিশ্বাস থোয়াতে চায় না। বললো, হ্যারি একটা কথা শোনো, কেন তুমি বুঝতে পারছো না? সিরিয়স আছেন গ্রিমন্ড প্লেসে, সেখান থেকে ভোল্ডেমর্ট সিরিয়সকে ধরে নিয়ে যাবেন কেমন করে?

হ্যারি বললো, তোমরা জানো না সিরিয়স লুকিয়ে বাড়ির মধ্যে বসে থেকে থেকে অস্থির হয়ে গেছেন। কেউ ওইরকমভাবে বন্দি হয়ে থাকতে পারে? খুব সম্ভব ফ্রেশ বাতাসের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন তখন!

–কিন্তু কেন, হারমিওন ওর জেদ ছাড়ে না। ভোল্ডেমর্ট সেই অস্ত্রটা কজা করার জন্য সিরিয়সকে ধরবেন কেন কথাটা আমার মাথায় ঢুকছে না।

–আমি জানি না, তবে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে, হ্যারি বাধা দিয়ে বললো, হতে পারে সিরিয়সকে আটকে রেখে…।

রন মাঝপথে বললো–আমি ভাবছিলাম, সিরিয়সের ভাই একজন ডেথ ইটার ছিলেন, ঠিক না? হতে পারে সে সিরিয়সকে সিক্রেট করেছে কেমন করে সেই অস্ত্রটা পাওয়া যাবে সেই জন্য।

হ্যারি বললো, ঠিক বলেছো, সেই জন্যই ডাম্বলডোর সিরিয়সকে কোথাও বেরোতে দিতে চাইতেন না।

হারমিওন বললো, শোনো, আমি তোমাদের ভাবনা-চিন্তার সঙ্গে একমত নই, আমাদের হাতে কোনও প্রমাণ নেই যে ওরা দুজনে সেখানে আছেন।

রন বললো, হারমিওন এটা মনে রাখবে হ্যারি কিন্তু স্বপ্নে দেখেছে। ও স্বপ্নে যা দেখে তাই সত্য হয়।

হারমিওন বললো, হতে পারে, তবে আমি তোমাদের সঙ্গে একমত নই। আমি পরিষ্কার করে এটাই বলতে চাই…।

–তুমি কী বলতে চাও?

–হ্যারি, তুমি এটাকে সমালোচনা মনে করবে না! তোমার একটা স্বভাব হয়ে গেছে মানুষকে আমি বাঁচাচ্ছি।

হ্যারি, হারমিওনের দিকে সোজা তাকালো–বাঁচাচ্ছি, মানে তুমি কি বলতে চাও খুলে বলবে?

–বেশ খুলেই বলছি, হারমিওন সংযত হলো। ধরো, লেকের জঙ্গলের তলায় ডেলাকৌরকে বাঁচানোর ব্যাপারটা। তুমি একটু বাড়াবাড়ি করেছিলে তাই না?

কথাটা শুনে হ্যারির মুখটা লাল হয়ে গেলো। ও বেশ রেগে গেছে, এখন কেন হারমিওন সেই কথা তুলছে? বাড়াবাড়ি মানে?

হারমিওন বললো, বলতে চাই, তুমি মহৎ ও মহান। অবশ্য সকলেই বলেছিলে তুমি দারুণ কাজ করেছে।

–তুমি বলতে চাও আমি ডেলাকৌরকে বাঁচিয়ে হিরো বনতে চেয়েছি?

–না… না… না, হারমিওন লজ্জিত স্বরে বললো, তুমি যা ভাবছো আমি কিন্তু তা বলতে চাইনি।

হ্যারি ধৈর্য হারিয়ে বললো, যা বলবার বা যা বলতে চাও তা খোলাসা করে বলো, অযথা আজেবাজে কথা বলে আমার সময় নষ্ট করো না।

–আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, ভোল্ডেমর্ট তোমাকে জানেন হ্যারি। জিনিকে চেম্বার অফ সিক্রেটসে নিয়ে গিয়ে তোমাকে ধরবার টোপ ফেলেছিলেন। এই রকমই করে তিনি ভাবছেন সিরিয়সের প্রতি দূর্বলতার জন্য, তুমি তাকে বাঁচাতে যাবে। মানে ডিপার্টমেন্ট অফ মিনিস্ট্রিতে যাবে।

–হারমিওন, আমাকে ধরার জন্য যা করতে চাইছেন তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ওরা ম্যাকগোলাগলকে সেন্ট মাংগোসে নিয়ে গেছে, অর্ডারের পক্ষ থেকে এখন কেউ হোগার্টসে নেই, আর আমরা যদি ওখানে না যাই তাহলে সিরিয়সকেও হত্যা করতে পারে।

–কিন্তু হ্যারি, আবার বলছি ওটা তোমার স্বপ্ন মাত্র?

হ্যারির চোখে মুখে নিদারুণ হতাশার ছাপ ফুটে উঠলো। হারমিওন কী তাহলে ওর দলে নেই? ও খুবই বিপদের সংকেত দেখতে পেলো।

হ্যারি রনের দিকে তাকিয়ে বললো, আশ্চর্য! কেন তোমরা আমার কথা বুঝতে চাইছো না? আমি সাধারণ স্বপ্ন দেখিনি, নাইট মেয়র দেখিনি। তাহলে অকলামেন্সি শেখার মানে কী? বলতে চাও ডাম্বলডোর আমাকে যা ঘটেছে, বা যা ঘটবে তা দেখা থেকে বাধা দিতে চান? কারণ সেগুলো সত্য, হারমিওন সত্য। সিরিয়সকে ধরেছেন ভোল্ডেমর্ট, সেটা কেউ জানে না আমি একমাত্র দেখেছি। একমাত্র আমরাই ওকে বাঁচাতে পারি। তোমাদের যদি সঙ্গে থাকার কোনও অসুবিধে থাকে খুবই ভালো। কিন্তু একাই আমি যাচ্ছি, বুঝতে পেরেছো?

যদি আমার মনে রাখার ব্যাপারটা ভুল না হয়, আর আমার কাউকে বিপদ বা মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো তোমার কাছে প্রবলেম মনে হয়, তাহলে তোমাকে ডিমেন্টরদের হাত থেকে বাঁচানো নিশ্চয়ই কোনো প্রবলেম ছিলো না। হ্যারি রনকে আরও মনে করিয়ে দিলো, তোমার বোনকে বসিলিস্ক থেকে বাঁচানো?

রন গরম হয়ে গিয়ে বললো, কখনোই তোমাকে বলিনি আমার প্রবলেম ছিলো বা আছে।

–কিন্তু হ্যারি, হারমিওন বললো, ডাম্বলডোর তোমাকে অকলামেন্সি শিখতে বলেছিলেন, যাতে তুমি আজেবাজে জিনিস মন বা মাথা থেকে হটাতে পারো। তুমি যদি অকলামেন্সি যথাযথভাবে শিখতে তাহলে কখনই ওই সব উদ্ভট স্বপ্ন দেখতে না।

তোমরা যদি মনে করো আমি যা করতে চলেছি, তা সত্যের ভিত্তিতে নয়…।

–সিরিয়স কিন্তু বলেছিলেন, তোমার মন থেকে আজেবাজে চিন্তা দূর করে দিয়ে কিছু শেখার চেয়ে অন্য কোনও কিছুই ইম্পর্টেন্ট নয়।

ক্লাসরুমের দরজাটা কে যেনো খুললো। ওরা সচকিত হয়ে তাকিয়ে দেখলো জিনি! জিনি একটু আশ্চর্য হয়ে ভুরু কপালে তুলে বললো, কী ব্যাপার তোমরা এতো জোরে জোরে কথা বলছো কেন?

জিনির পেছনে দাঁড়িয়ে লুনা। ওর চোখে মুখে কোনও চিন্তা-ভাবনা নেই।

সব শুনে জিনি বললো, হ্যারি তর্কাতর্কি করে লাভ নেই। সিরিয়স সত্যি আমাদের হেড কোয়ার্টারে (অর্ডার অফ ফনিক্স) আছেন বা নেই সেটা প্রথমে জানা দরকার।

–কতোবার বলবো, তিনি ওখানে নেই, আমি স্বপ্নে দেখেছি। হ্যারি উত্তেজিত হয়ে বললো।

হারমিওন বললো, লন্ডন যাবার আগে সেটা আগে জেনে নেওয়া দরকার।

–যদি জানা যায় সিরিয়স সেখানে নেই তাহলে আমাদের একটা কিছু করতে হবে। প্রশ্নটা যাচাই করা প্রয়োজন সিরিয়সকে ভোল্ডেমর্ট নির্যাতন করে চলেছে। কিনা। ভোল্ডেমর্ট খুব ধূর্ত, ফন্দি ফিকিরে ওস্তাদ।

–কেমন করে, তোমরা যাচাই করবে আমার কথা।

–আমাদের আমব্রিজের ঘরে গিয়ে সিরিয়সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, হারমিওন বললো, এই ব্যাপারে আমরা জিনি, লুনার সাহায্য নিতে পারি।

লুনা বললো, কোনও আপত্তি নেই। সিরিয়স মানে তোমরা স্টাবি বোর্ডম্যানের (হোঁতকা লোকটার) কথা বলছো?

ওর কথার কেউ জবাব দিলো না। হ্যারি বললো, অতি উত্তম প্রস্তাব। তোমরা তাহলে আমব্রিজকে ওর ঘর থেকে

কোনও ছুতোতে হটাবার চেষ্টা করো, আমি আগের মতো ঘরে ঢুকে ফায়ার প্রেসে সিরিয়সের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। যা করবে এখনই করো হাতে কিন্তু সময় নেই।

–আমরা ঘরে গিয়ে বলবো পিভস ভীষণ গোলমাল করছে, তাকে একটু বকাঝকা করুন। তখন তিনি ঘর ছেড়ে চলে গেলেই…।

রন বললো, সে ভার আমার। বলবো পিভস ট্রান্সফিগারেসন ডিপার্টমেন্ট ভাঙ চুর করছে, মাইল খানেক দূরে ডিপার্টমেন্ট। আমি পিভসকে তুতিয়ে, পালিয়ে সেখানে পাঠাতে পারবো বলে মনে হয়।

হারমিওন বাধার সৃষ্টি করলো না। বললো, খুব সম্ভব এখন স্নিদারিনরা তার ঘরে রয়েছে, ওদেরও তো সরাতে হবে।

জিনি বললো, লুনা আর আমি করিডোরের দুপ্রান্তে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো। কেউ যদি আমব্রিজের ঘরের দিকে যেতে চায়, বলবো কেউ ওখানে গ্যারেটিং (হতচেতন করার) গ্যাস ছুঁড়েছে।

হারমিওন বললো, খুব ভালো। হ্যারি আমি আর তুমি অদৃশ্য হবার আলখেল্লা পরে সেখানে যাবো। তুমি এখন সিরিয়সের সঙ্গে কথা বলবে।

হ্যারি অসম্ভব রেগে থাকলেও হারমিওনের কথায় রাজি হয়ে গেলো।

–পাঁচ মিনিট, মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে যা করবার তা করতে হবে। আমব্রিজের ইনকুইসিটরিয়ল স্কোয়ার্ড আর ফিলচ থেকেও সাবধান থাকতে হবে।

–হ্যাঁ এখনই। তুমি কি মনে করছো ডিনারের পরে? ওদিকে সিরিয়সকে নির্যাতন করেই চলেছেন ভোল্ডেমর্ট!

–ঠিক আছে ঠিক আছে, তুমি অদৃশ্য হবার আলখেল্লার ব্যবস্থা করো, হারমিওন বললো।

লুনা, জিনি, রন, হারমিওনের সঙ্গে করিডোরে দাঁড়ালো। হ্যারিকে হারমিওন ফিস ফিস করে বললো, প্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু করা যাক।

জিনি প্ল্যান মতো করিডরে ঘোরাফেরা করতে করতে গ্যারেটিং গ্যাসের ভয় সকলকে দেখাতে লাগলো।

একজন বললো–গ্যাস? কোথায় গ্যাস? –রং টং গ্যাসে নেই, দেখবে কেমন করে?

জিনি আর লুনা প্ল্যান মতে আমব্রিজকে ঘর থেকে আগেই বার করে দিয়েছে। হ্যারি আর হারমিওন পা টিপে টিপে আমব্রিজের ঘরের সামনে (অদৃশ্য হবার আলখেল্লা পরে) দাঁড়ালো। হ্যারি ছুরি দিয়ে তালা খুলে ঘরে ঢুকলো। তারপর ফায়ার প্লেসে ফুঁ পাউডার ছড়িয়ে আগুন জ্বালালো। এমারল্ড রং-এর আগুনের রশি লকলক করে উঠলো। হ্যারি হাঁটু গেড়ে বসে ওর মাথাটা আগুনে পুরে বললো বারো নম্বর গ্রিমন্ড প্লেস।

প্রথমে ওর মাথার ভেতরটা অসম্ভব ব্যাথা বেদনার সঙ্গে ঘুরতে লাগলো। তারই সঙ্গে কাটা কপালে তীব্র জ্বালা-যন্ত্রণা। ও হাঁটু দুটো ফ্লোরে শক্ত করে চেপে রইলো। একটু পর ওর মাথা ঘোরা কমে গেল। তারপর দেখলো গ্রিমন্ড প্লেসের ঠাণ্ডা কিচেনে পৌঁছে গেছে।

কিচেন শূন্য!

ও খুব জোরে জোরে ডাকলো, সিরিয়স? সিরিয়স আপনি কোথায়? ওর গলার স্বর প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো।

ঘরে খুট খুট শব্দ হতেই হ্যারি বললো–ওখানে কে? কে তুমি? ও হাউজ এলফ ক্রেচারকে দেখতে পেলো। ওর মুখটা হাসিখুশিতে ভরা। হাতে ব্যান্ডেজ, সম্ভবত আঘাত পেয়েছে।

ক্রেচার আগুনের দিকে তাকিয়ে বললো–পটার তুমি? এখানে এখন?

হ্যারির ক্রেচারের প্রশ্নের জবাব দেবার সময় নেই। বললো–সিরিয়স কোথায় ক্রেচার?

–মাস্টার তো বাড়িতে নেই, হ্যারিপটার।

–কোথায়? কোথায় গেছেন? হ্যারিপটার বললো। কথাটা শুনে ক্রেচার বোকার মতো হাসতে লাগলো।

–বোকার মতো হাসবে না। যা জিজ্ঞেস করছি তার জবাব দাও। ক্রেচারকে শাস্তি দেবার কোনও মানে হয় না। ক্রেচারের স্বভাব ছেলে মানুষের মতো। কোথায় গেছেন বলেনি। লুপিন, ম্যাড আইও নেই? দুজনের মধ্যে একজনও নেই। ক্রেচার ছাড়া কেউ নেই হ্যারি পটার, ক্রেচার বোকার মতো দাঁত বার করে হাসতে হাসতে বললো।

হ্যারি অধৈর্য হয়ে বললো–সিরিয়স কী ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজে গেছেন?

 –মাস্টারতো বেচারি ক্রেচারকে কোথায় যাচ্ছেন বলেন না।

–বাজে কথা বলবে না ক্রেচার, আমি জানি তুমি জানো, হ্যারি ধমকে বললো।

ক্রেচার চুপ করে রইলো অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে পটারের দিকে তাকিয়ে। তারপর ক্রেচার বললো–মাস্টার আর ওখান থেকে ফিরে আসবেন না হ্যারিপটার। ক্রেচার আর তার মিস্ট্রেস এখানে রয়েছে।

ক্রেচার কথাটা বলে কিচেন থেকে চলে গেলো।

হ্যারি ক্রেচারকে কার্স দেবার জন্য একটি শব্দ ব্যবহার করার আগেই হ্যারির মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেলো। ওর নাকে মুখে গাদাগাদা ছাই ঢুকতে লাগলো। কে যেনো ওকে টান মেরে আগুন থেকে তুললো। তারপরই দেখলো আমব্রিজ ওর মাথার চুল টেনে ধরেছেন। মুখ চোখ দেখে মনে হয় গলা টিপে মারবেন।

আমব্রিজ, হ্যারির গলাটা ধরে মুখটা ওপরে তুলে বিকৃত স্বরে বললেন, কোনসাহসে তুমি আমার ঘরে ঢুকেছো? তুমি কী জানো না আমার ঘরের চারদিকে লুকোনো সেনসরিং জাদু মাখানো আছে? ব্যবস্থাটা করেছি ওই দুটো উইসলি ঘরে ঢোকার পর থেকে।

আমব্রিজ হ্যারির পকেট থেকে ওর জাদুদণ্ড নিয়ে নিলেন। হারমিওনেরটা আগেই নিয়েছেন।

আমব্রিজ আরও শক্ত করে ওর চুলের মুঠি ধরে কর্কশ স্বরে আবার বললেন, আমি জানতে চাই, কোন সাহসে তোমরা আমার ঘরে ঢুকেছে?

হ্যারি কো কো করে বললো, আমার ফায়ার বোল্টটা খুঁজতে এসেছিলাম।

–মিথ্যাবাদী! আমব্রিজ আবার হ্যারির চুল টানলেন, তুমি খুব ভালো করেই জানো ওটা পাতাল ঘরে সুরক্ষিত আছে। তুমি আমার ফায়ার প্লেসে মুণ্ডু ঢুকিয়ে জানতে পারি কার সঙ্গে কথা বলছিলে?

–কারও সঙ্গে না, হ্যারি ওর মাথাটা ছাড়িয়ে নেবার জন্য টান দিতেই ওর বেশ কয়েক গাছা চুল ছিঁড়ে গেলো।

আমব্রিজ ওকে ধরে ছুঁড়ে ফেলতেই হ্যারি ডেস্কের সঙ্গে টক্কর খেলো–লায়ার!

হ্যারি দেখলো মিলিসেন্ট বালস্ট্রোড আর মা্যালফয় হারমিওনকে দেওয়ালে চেপে ধরে রয়েছে। ম্যালফয়ের হাতে হ্যারির ম্যাজিক ওয়ান্ড। ও সেটা নিয়ে হাসতে হাসতে লোফালুফি করে চলেছে।

তারপরই দেখলো একদল স্লিদারিন, জিনি, রন, লুনাকে ধরে নিয়ে ঘরে ঢুকছে। নেভিলকে ক্র্যাবে গলাটিপে ধরেছে। না ছাড়লে দমবন্ধ হয়ে মরে যাবে।

ওয়ারিংটন বললো–সবকটাকে একসাথে বাঁধে। রন প্রবল বিক্রমে জিনিকে ছাড়াবার চেষ্টা করছিলো হাঃ হাঃ হাঃ।

যে স্নিদারিন মেয়েটা জিনিকে ধরেছিল তার হাত থেকে ছাড়া পাবার জন্য জিনি প্রচণ্ডভাবে হাত-পা ছুঁড়তে লাগলো।

আমব্রিজ বললেন–ভালো ভালো সবকটাকে একসঙ্গে বাঁধো। যতো তাড়াতাড়ি পারি আমাকে হোগার্টস থেকে উইসলিদের ভাগাতে হবে। উইসলিবিহীন হোগার্টস, তাই না?

আমব্রিজ স্যামোইজ চামড়ায় মোড়া আরাম কেদারায় বসে দেখতে লাগলেন। বন্দিদের, অনেকটা ফুলের বাগানে কোলা ব্যাঙের মতো মুখ ফুলিয়ে।

–তো পটার, তুমি ওইসব বামুনদের আমার ঘর পাহারা দেবার জন্য বাইরে রেখেছো? ট্রান্সফিগারেসন ডিপার্টমেন্টে নাকি ভাঙচুর করছে এইসব বাঁদরগুলো।

সব টেলিসকোপের কাঁচে আলকাতরা মাখিয়েছে? মিস্টার ফিলচ এখনই আমাকে খবর দিলেন।

–হ্যাঁ হ্যাঁ তোমাদের কারও সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার দরকার ছিলো? কিন্তু কার সঙ্গে? ডাম্বলডোর, হ্যাগ্রিড? তাই না হ্যাগ্রিড দানবটার সঙ্গে? অথবা ম্যাকগোনাগল? কে কে যেনো আমাকে বললো, ম্যাকগোনাগল কথা কইতে পারছেন না, এতে দুর্বল।

ম্যালফয় আর তার বন্ধু-বান্ধবরা হো : হো : করে হেসে উঠলো। হ্যারি রাগের চোটে থর থর করে কাঁপতে লাগলো।

–খুব ভালো খুব ভালো, পটার। তুমি তোমার কাজ করেছে, এখন আমি আমার কাজ করি পটার কি বলো? আমব্রিজের মুখে মধু ঝরে পড়ে যেনো। আমি তোমাকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করেছি, তুমি তার জবাব দাওনি। এখন তোমার ওপরো শক্তি প্রয়োগ করা ছাড়া অন্য কোনও পথ দেখছি না। ড্রাকো ম্যালফয় তুমি কি অনুগ্রহ করে স্নেইপকে এখানে একবার আসতে খবর দেবে?

ম্যালফয় হ্যারির জাদুদণ্ডটা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। হ্যারির চোখ সেদিকে পড়লো না। ওর মনে হলো অর্ডার অফ ফনিক্সের হোমড়া চোমড়াদের মধ্যে এমন আর কেউ নেই যে সিরিয়সকে বাঁচাতে পারে। কিন্তু ও ভুল করছে। এখনও ডাম্বলডোরের সদর দপ্তর অর্ডার অফ ফনিক্সে আর একজন আছেন, স্নেইপ।

ঘর বলতে গেলে নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে রন, হারমিওন ইত্যাদির ছাড়া পাবার জন্য টানা-হাচড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওয়ারিংটনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করার জন্য রনের ঠোঁট কেটে গেছে। মেঝেতে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। ষষ্ঠবার্ষিকীর এক ছাত্রী জিনিকে দু হাতে চেপে ধরে আছে। ক্র্যাবে ভীষণ জোরে নেভিলকে ধরে রেখেছে। হারমিওন মিলিসেম বালস্ট্রোডের হাত থেকে মুক্ত হবার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলেছে। লুনাকে যে ধরে রয়েছে তার সঙ্গে কোনও রকম ধস্তাধস্তি না করে ও খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রয়েছে।

ড্রাকো ম্যালফয় ঘরে ঢুকলো, ওর পেছনে স্নেইপ।

স্নেইপ বললেন, হেড মিস্ট্রেস আপনি আমাকে ডেকেছেন? কথাটা বলে বন্দিদের দিকে তাকালেন। দেখে মুখোভাবের কোনও পরিবর্তন নেই।

–খুশি হয়েছি স্নেইপ। আপনি আমাকে এক বোতল ভেরিটাসিরাম আনিয়ে দিতে পারেন?

স্নেইপ আমব্রিজের তেল তেলে চুলের দিকে তাকিয়ে বললেন–পটারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আমার শেষ বোতলটা তো আপনি সেদিন নিয়েছেন।

আমব্রিজের মুখটা লাল হয়ে গেলো।

বাচ্চা মেয়েদের মতো আধো আধো গলায় আমব্রিজ বললেন, আমার প্রয়োজনে আর একটা বোতল তো বানাতে পারেন?

–অবশ্যই। তবে সেটা বানাতে পুরো মুন সাইকল লাগবে। না দেওয়ার তো কোনো কারণ দেখছি না। দুঃখিত একমাসে সেটা বানানোর সম্ভাবনা কম।

–একমাস! আমব্রিজ ককিয়ে উঠলেন। আমার তো আজ সন্ধেবেলা দরকার। এই মাত্র পটারকে দেখলাম কোনও একজন অজানা লোকের সঙ্গে আমার ফায়ার প্লেস থেকে কথাবার্তা বলছে। আমি সেই লোকটি কে তা জানতে চাই।

–তাই, স্নেইপ বললেন। পটারের দিকে খুবই কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললেন, হ্যারিপটারের দেখছি বারবার স্কুলের আইন ভাঙা স্বভাবে দাঁড়িয়েছে। নতুন কথা কি আর বলছেন হেড মিস্ট্রেস!

স্নেইপ বরফ শীতল চোখে হ্যারির মুখের দিকে তাকালেন। হ্যারি চাইলো যে মর্মান্তিক দৃশ্যটা ও দেখেছে সেটা স্নেইপ দেখুন। ওর মনের গভীরে ঢুকে পড়ুন।

আছে, আমি ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আপনি যদি অনুগ্রহ করে এক বোতল পোসান দেন, তাহলেই হবে। আমি সত্যি কথাটা ওকে বলতে বাধ্য করাবো, আমব্রিজ রেগে গিয়ে বললেন।

–আমি তো আপনাকে আগে বলেছি ভেরিটাসিরামের স্টক আমার কাছে নেই। আপনি যদি পটারকে বিষাক্ত করতে চান তাহলে আপনার ইচ্ছের সঙ্গে আমারও ইচ্ছে রয়েছে। তবে মুক্কিল কি জানেন, সবচেয়ে শক্তিশালী ভেনম এতো দ্রুত শরীরে গিয়ে কাজ করে যে অপরাধী কথা বলতে অনেক সময় নেয়।

স্নেইপ হ্যারির দিকে তাকালেন। হ্যারি তার দিকে কিছু বলার জন্য অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে দেখলেন।

ও যেন বলতে চাইছে ভোল্ডেমর্ট সিরিয়সকে হত্যা করার জন্য ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজে আটকে রেখেছে।

প্রফেসর আমব্রিজ স্নেইপকে বললেন–শুনুন আপনি এখনও প্রোবেসনে আছেন। আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে সাহায্য করতে চাইছেন না। লুসিয়াস ম্যালফয় সর্বদা আপনার সুখ্যাতি করে, তাই আশা করেছিলাম। এখন আপনি আমার অফিস থেকে যেতে পারেন।

স্নেইপ মাথাটা সামান্য নুইয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যাবার জন্য দরজার কাছে এগিয়ে গেলেন। হ্যারির মনে হলো অর্ডারের শেষ সদস্যকে সিরিয়সের অবস্থাটা যেমন করে তোক জানানো দরকার।

ও চিৎকার করে বললো–ওনার কাছে প্যাড ফুট আছে। কোথায় প্যাডফুট লুকানো আছে ভাল করেই জানেন।

আমব্রিজ হতভম্ব হয়ে বললেন–প্যাডফুট? প্যাডফুট আবার কী, কোথায় লুকানো আছে, স্নেইপ ও কি বলতে চাইছে?

স্লেইপের হাত আমব্রিজের অফিস ঘরের দরজার নবে, স্নেইপ হ্যারির দিকে তাকালেন। অবর্ণণীয় তার মুখের চেহারা। হ্যারি বুঝতে পারলো না স্নেইপ ওর কথাটা ঠিক বুঝতে পারলেন কি না। কিন্তু আমব্রিজের সামনে আর একটি শব্দও উচ্চারণ করতে চাইলো না।

–আমার কোনও ধারণা নেই, স্নেইপ তিক্ত কণ্ঠে বললেন। শোনো পটার আমি যদি কখনও কোনও উদ্ভট, উল্টোপাল্টা কথা শুনি, তাহলে তোমাকে ব্যাবলিং বিভারেজ দিতে বাধ্য হবো। ক্র্যাবে তোমার হাতটা আলগা করো। লংবটম যদি দম আটকে মরে যায় তাহলে বুঝতেই পারছো আমাদের অনেক কাজ বেড়ে যাবে। তুমি যদি কখনও কোথাও চাকরির দরখাস্ত করো, তাহলে যদি কেউ আমার কাছে তোমার সম্বন্ধে লিখিত কিছু জানতে চায় তাহলে তোমার আচরণ আমি জানাতে বাধ্য হবো।

স্নেইপ, হ্যারি ও তার বন্ধু-বান্ধবদের বিরাট অশান্তি–চাঞ্চল্যের মধ্যে রেখে দিয়ে দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে চলে গেলেন। হ্যারি আমব্রিজের দিকে তাকালো, দেখলো আমব্রিজ রাগে ফুঁসছেন।

হাতের জাদুদণ্ড রেখে বললেন, খুব ভালো, খুব ভালো। আমার তো দেখছি অন্য কিছু একটু না করার আর পথ নেই। স্কুলের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা সবচেয়ে বড় কথা হা হা মিনিস্ট্রির নিরাপত্তাও এর মধ্যে জড়িয়ে রয়েছে। পটার তুমি আমাকে কঠোর হতে বাধ্য করলে, আমি কিন্তু তা চাইনি। আমব্রিজ উত্তেজিত হয়ে ঘরে পায়চারি করতে করতে বললেন, কখনও কখনও পরিস্থিতি কঠোর হতে আমাকে বাধ্য করে। আমি আশা করছি মিনিস্ট্রি আমার কথা সম্যক বুঝতে পারবেন। কঠোর সিদ্ধান্ত ছাড়া আমার আর কোনও পথ নেই।

ম্যালফয় আনন্দে অধীর হয়ে রইলো।

–ক্রুসিয়েটাস কার্স মনে হয় তোমাকে বলতে বাধ্য করাবে, আমব্রিজ শান্ত ভাবে বললেন।

হারমিওন কথাটা শুনে চেঁচিয়ে উঠলো, প্রফেসর! ওই কার্স ব্যবহার করা বে আইনী।

আমব্রিজ যেন হারমিওনের কথা শুনতে পাননি। হাতের জাদুদণ্ডটা তুললেন। মুখে চোখে তার কদর্ঘ প্রতিহিংসার ছাপ। হ্যারি আগে কখনও কাউকে ওইরকম দেখেনি।

–মিনিস্টার অবশ্যই আপনাকে আপনার ঘৃণিত স্বার্থের জন্য আইন ভঙ্গ করতে দেবেন না, প্রফেসর আমব্রিজ? হারমিওন আবার সেইরকম কণ্ঠে বললো।

–কর্নেলিয়স যেটা জানেন না তা নিয়ে কোনোদিন মাথা ঘামাননি। আমব্রিজ হাঁফাতে হাঁফাতে হ্যারির আপাদ মস্তক জাদুদণ্ড দিয়ে ছোঁয়াতে লাগলেন। যেখানে সবচেয়ে বেশি ওর আঘাত লাগবে, দেহের সেই জায়গাটা বেছে নিলেন। ও জানে না, গত গ্রীষ্মের ছুটিতে আমি ডিমেন্টরদের হ্যারিকে আক্রমণ করতে বলেছিলাম। কিন্তু উনি ওকে তার ছেলে তাড়াবার প্রচেষ্টা করে খুশি হয়েছিলেন, একই ব্যাপার।

–আপনি? আপনি ডিমেন্টরদের আমাকে আক্রমণ করতে বলেছিলেন? হ্যারি বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বললো।

হ্যারির কপালে জাদুদণ্ড ঠেকিয়ে বললেন, কাজটাতো একজনকে করতেই হবে হ্যারি। সকলেই তো তোমার ব্যাপারে চুপচাপ। কেউ কোনও কিছু করতে চায় না। তোমাকে ডিসক্রেডিট করতে চায় না, আমি একমাত্র লোক যা করতে সাহস করছি, ক্রুস।

মিলিসেন্ট হালস্ট্রোডের পেছন থেকে হারমিওন আঁতকে উঠে চিৎকার করে বললো–না… না… হ্যারি… আমাদের বলতেই হবে।

–কখনই না, হ্যারি বললো।

–না, হ্যারি আমাদের বলতেই হবে, তোমাকে বাধ্য করছেন। প্রতিরোধ করার উপায় নেই।

হারমিওনকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে মিলিসেন্ট ওকে দেওয়ালে আরও চেপে রাখলেন। বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকালো হারমিওন।

আমব্রিজ বললেন, ছোট মেয়েটি আমার, আমার প্রশ্নের সঠিক জবাব দাও। নাও নাও দেরি করো না বলো কার সঙ্গে ও কথা বলছিলো।

রনের গলায় হাত চেপে ধরা। অনেক কষ্টে বললো–না না বলবো না, বলবো।

জিনি ভেঙে পড়া হারমিওনের মুখের দিকে এমনিভাবে তাকিয়ে আছে যেন আগে কখনও দেখেনি।

হারমিওন কোনও রকমে বলতে পারলো, ও হ্যাঁ, ডাম্বলডোরের সঙ্গে কথা বলছিলো হ্যারি।

ঘরের সকলেই হারমিওনের দিকে তাকালো। ডাম্বলডোর? আমব্রিজ সন্দিগ্ধভাবে ওর মুখের দিকে তাকালেন।

–তাহলে তোমরা জানো ডাম্বলডোর এখন কোথায়? নিশ্চয়ই জানো? রন গোঙাতে গোঙাতে বললো, হার… বল–বে–না, বলবে না। –তোমাদের অবস্থা দেখে আমাকে বলতেই হবে।

–আমরা লিকি কলড্রন ডায়গন অ্যালিতে, থ্রি ব্রুমস্টিকে এমন কি হগসমিডে পাইনি, হারমিওন ফোপাতে ফোপাতে বললো।

–মূর্খ মেয়ে। তুমি কী ভাবছো, যখন সমস্ত মন্ত্রিসভা তার খোঁজ পাবার জন্য স্বৰ্গৰ্মৰ্ত্ত এক করছে তখন ডাম্বলডোর পরম নিশ্চিন্তে পাবে বসে বিয়ার খাবেন? আমব্রিজ ভীষণ জোরে ধমকে বললেন।

হারমিওন বললো, আমরা ওনাকে খুব একটা দরকারি কথা বলতে চেয়েছিলাম।

–বুঝলাম, তো তাকে কী বলতে চাইছিলে শুনি।

 –আমরা বলতে চাইছিলাম, সব প্র… প্র… প্রস্তুত আছে।

–কী প্রস্তুত আছে? বলো ঠিক করে বলো মিস…। হারমিওন বললো অস্ত্রটা।

–অস্ত্র? আমব্রিজ বললেন। চোখ দুটো তার উত্তেজনায় জ্বলজ্বল করে উঠলো। তোমরা আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য কোনও একটা মেথড তৈরি করছিলে? এমন একটা অস্ত্র যা মিনিস্ট্রির বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারো। ডাম্বলডোরের আদেশে করতে চলেছে। তাই না?

–হা হা, কিন্তু সেটা শেষ হবার আগেই তো ডাম্বলডোর কোথায় চলে গেলেন। সেই অস্ত্রটা তার জন্য আমরা তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু কোথায় আছেন জানি না বলে তাকে জানাতে পারছি না।

আমব্রিজ কর্কশস্বরে বললেন, কী ধরনের অস্ত্র? কিন্তু হারমিওনের কাঁধ থেকে হাত সরালেন না।

হারমিওন বললো, ওটা বানালেও আমরা ব্যবহার করতে জানি না। আ আ… প্র… প্র… প্রফেসর যেমন বলেছেন তেমনভাবে বানিয়েছি।

–প্রফেসর ডাম্বলডোর বলেছিলেন? ঠিক বলছে–এমন একটা অস্ত্র মিনিস্ট্রির বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে?

–চলোতো দেখি সেই অস্ত্রটা, আমব্রিজ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন। হারমিওন স্নিদারিনদের আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, ওরা কেউ যাবে না। আমব্রিজ কর্কশভাবে বললেন, তুমি কোনও শর্ত আরোপ করবে না।

–ঠিক আছে, ঠিক আছে, বেশ ওরা চলুক। ওরা একদিন ওই অস্ত্র আপনার ওপোর ছুঁড়বে কিন্তু। বেশ আপনি হাজার হাজার লোকদের ওটা দেবেন। তাহলে ওরা আপনার কথামতো ওটা দেখবে, সমস্ত স্কুলের ছেলে মেয়েরো জানবে ওটা কোথায় আছে–ওহ আমার খুব আনন্দ হবে, ওরা ওটা ব্যবহার করতে পারবে। আর আপনি যদি কারও ওপোর বিরূপ হন, শাস্তি দেন তাহলে ওরা আপনাকে ছুঁড়ে মারবে।

হারমিওনের বক্তব্য যে আলতুফালতু ও ধর্তব্যের বাইরে নয় সেটা ভালোভাবেই আমব্রিজ বুঝতে পারলেন। স্কোয়াডের ছেলে–মেয়েদের দিকে তাকালেন। ম্যালফয় ওর কৌতূহল চাপা দিতে পারলো না। মুখে লালসার ছাপ।

আমব্রিজ অনেকটা সময় হারমিওনের মুখের দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা আরও গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করলেন।

হারমিওন হাঁফাতে হাঁফাতে বললো, কিন্তু এ… এ… একটা ক..কথা স্যার। ওটা বানানো… এ… একটু বাকি আছে, সেটা…ই, ডাম্বলডোরকে জা.. জা… জানাতে চেয়ে… ছিলাম।

ঠিক আছে, চলো আমরা দুজনে শুধু দেখে আসি। কী বলো পটারকেও সঙ্গে নেওয়া যাক।

ম্যালফয় কৌতুহলের সঙ্গে বললো, প্রফেসর আমাদের স্কোয়াডের দুএকজন। গেলে ভালো হয়। আমরা আপনার সঙ্গে যাবো?

আমব্রিজ ম্যালয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, মনে রেখো আমি একজন তকমা আঁটা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ অফিসার। তোমার ঘটে কি বুদ্ধি নেই যে আমি দুটি অর্বাচীনকে সামলাতে পারব না? যাই হোক আমার মনে হয় অস্ত্রটা অপরিণত বয়স্ক ছেলেমেয়েদের জন্য নয়। তাদের দেখার কোনও কারণ নেই। তোমরা এই ঘরে ওদের কড়া পাহারায় আটকে রাখবে আমি না ফেরা পর্যন্ত। আমব্রিজ, রন, জিনি, নেভিল আর লুনাকে দেখালেন। দেখবে ওরা যেন এখান থেকে না পালায়।

ম্যালফয় বললো, ঠিক আছে ম্যাডাম। মুখ দেখে মনে হয় ওকে সঙ্গে না নেওয়াতে ও খুবই মর্মাহত ও আশাহত হলো। তোমরা দুজনে আগে আগে চলে আমাকে রাস্তা দেখাও, আমব্রিজ হ্যারি আর হারমিওনের দিকে কড়া দৃষ্টিতে জাদুদণ্ড দেখিয়ে বললেন।

সকল অধ্যায়

১. ০১. ডাডলি ডিমেন্টেড
২. ০২. অ্যা পেক অব আউলস
৩. ০৩. দ্য অ্যাডভান্স গার্ড
৪. ০৪. নাম্বার টুয়েলভ, গ্রিম্মল্ড প্লেস
৫. ০৫. দ্য অর্ডার অব দ্য ফনিক্স
৬. ০৬. দ্য নোবল অ্যান্ড মোস্ট এনসিয়েন্ট হাউজ অব ব্ল্যাক
৭. ০৭. দ্য মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক
৮. ০৮. দ্য হিয়ারিং
৯. ০৯. দ্য উওস অব মিসেস উইসলি
১০. ১০. লুনা লাভগুড
১১. ১১. দ্য সর্টিং হ্যাটস নিউ সং
১২. ১২. প্রফেসর আমব্রিজ
১৩. ১৩. ডিটেনসন উইথ ডলোরেস
১৪. ১৪. পার্সি অ্যান্ড প্যাডফুট
১৫. ১৫. দ্য হোগার্টস হাই ইনকুইজিটর
১৬. ১৬. ইন দ্য হগস হেড
১৭. ১৭. এডুকেসনাল ডিক্রি নাম্বার টুয়েন্টি-ফোর
১৮. ১৮. ডাম্বলডোরস আর্মি
১৯. ১৯. দ্য লায়ন অ্যান্ড দ্য সারপেন্ট
২০. ২০. হ্যাগ্রিডস টেল
২১. ২১. দ্য আই অব দ্য স্নেক
২২. ২২. সেন্ট মাংগোস হসপিটাল ফর ম্যাজিকাল ম্যালাডিস অ্যান্ড ইনজুরিস
২৩. ২৩. ক্রিস্টমাস অন দ্য ক্লোজড ওয়ার্ড
২৪. ২৪. অকলামেনসি
২৫. ২৫. দ্য বীটল অ্যাট বে
২৬. ২৬. সিন অ্যান্ড আনফোরসিন
২৭. ২৭. দ্য সেনট্যুর অ্যান্ড দ্য স্নিক
২৮. ২৮. স্নেইপস ওয়ারস্ট মেমরি
২৯. ২৯. কেরিয়ারস এডভাইস
৩০. ৩০. গ্রপ
৩১. ৩১. আউলস
৩২. ৩২. আউট অব দ্য ফায়ার
৩৩. ৩৩. ফাইট অ্যান্ড ফ্লাইট
৩৪. ৩৪. দ্য ডিপার্টমেন্ট অব মিসটেরিস
৩৫. ৩৫. বিয়ন্ড দ্য ভেইল
৩৬. ৩৬. দ্য ওনলি ওয়ান হি এভার ফিয়ার্ড
৩৭. ৩৭. দ্য লস্ট অব প্রফিসি
৩৮. ৩৮. দ্য সেকেন্ড ওয়ার বিগিন্স

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন