২৬. সিন অ্যান্ড আনফোরসিন

জে. কে. রাওলিং

২৬. সিন অ্যান্ড আনফোরসিন

লুনা ভাসা ভাসা ভাবে বললো, ও ঠিক জানে না কবে ওর বাবা হ্যারি সম্পর্কিত রিটার ইন্টারভিউ দ্য কুইবলারে ছাপবেন। তবে হ্যারির বাঁকা শিং-এর সুরক্যাকস দেখা প্রসঙ্গে বেশ বড় দেখে একটা প্রতিবেদন লিখবেন। এবং খুবই মূল্যবান একটি স্টোরি হবে। তাই হ্যারিকে পরের সংখ্যার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, লুনা বললো।

 ভোল্টেমর্টের প্রত্যাবর্তন সম্বন্ধে হ্যারির কিছু বলা খুব সুবিধাজনক মনে হয় না। খুবই একটা জটিল অভিজ্ঞতা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ও অবশ্য রিটাকে সেই রাতের ঘটনা যতটুকু সম্ভব বলেছে। বলেছে, এই কারণে যাতে লোকেরা ভোল্টেমর্টের প্রত্যাবর্তন সম্বন্ধে জানতে পারে। ও অবশ্য জানে না পাঠকরা বা লোকেরা কেমনভাবে ওর বক্তব্য গ্রহণ করবে। কিছু লোক হয়তো ভাববে ওর মাথা। খারাপ হয়ে গেছে, ও পাগল। শিগগিরই ক্রাম্পলড হর্ন সুরক্যাকস নিয়ে ওর অভিজ্ঞতা, লুনার বাবার কাগজে প্রকাশিত হবে। কিন্তু বেল্লাট্রিকস লেস্টরেঞ্জ আর তার সাথী ডেথ ইটাররা কিছু একটা করার ব্যাপারে ওকে অহরহ খুঁচিয়ে চলেছে। তবে সেটা কার্যকরী হবে কিনা জানে না।

সোমবারে ডিনার খাবার সময় ডিন বললো, লোকেদের কাছে খোলাখুলিভাবে সব জানানোর আগে আমব্রিজের কথা ভেবেছো কি? সীমাস ওর পাশে মুখ গুঁজে একগাদা চিকেন আর হ্যামপাই খেলেও, হ্যারি খুব ভাল করেই জানে ও ওদের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে।

নেভিল বললো–হ্যারির ওটা করা উচিত। ওর চেহারা আর আগের মতো নেই, শীর্ণ, জবুথবু, কথা আটকে যাচ্ছে। একটু থেমে বললো, শক্ত হলেও বলতে হবে ঠিক বলেছি।

হ্যারি বললো–হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিক বলেছো, তবে লোকেদের ভোল্টেমর্টের শক্তি সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল হতে হবে।

–ঠিক বলেছো, যথার্থ বলছো, ডেথইটারদের সম্বন্ধে লোকেদের জানা প্রয়োজন আছে, নেভিল বললো।

মনে হয় নেভিল যা বলতে চায় তা পুরোপুরি বললো না। ও আবার ওর বেকড় আলু মন দিয়ে খেতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর নেভিল, ডিমস আর ডিন কিডিচ প্র্যাকটিস করতে চলে গেলো।

একটু পরে চো-চ্যাং ওর বন্ধু মেরিয়েটার সঙ্গে হলে ঢুকলো। ওকে দেখে হ্যারির পেটের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। চো কিন্তু গ্রিফিন্ডর টেবিলের দিকে না তাকিয়ে, হ্যারির দিকে পিছন ফিরে বসলো।

হারমিওন র‍্যাভেন টেবিলের দিকে উজ্জ্বল দুচোখে তাকিয়ে বললো, আরে ভুলেই গেছি… তা তোমার চোর সঙ্গে ডেটের কি হলো, তাড়াতাড়ি ফিরে এলে কেন?

–ও… হা হা, হ্যারি বললো। তারপর এক প্লেট ভর্তি রুবার্ব ক্রাম্বল টেনে এনে বললো–বলতে পারো কিছুই না।

হ্যারি তারপর হারমিওনকে ম্যাডাম পুড্ডিফুটের চায়ের স্টলে যা যা ঘটেছিল সব বললো।

হারমিওন বললো, কিছু মনে করো না হ্যারি, মেয়েদের সম্বন্ধে তুমি কিছুই জানো না। হারমিওন কথাটা বলে চোর দিকে তাকালো।

–মোটেই না, আমি ট্যাকটলেস নই, হ্যারি বললো।

ওরা রনকে ওর সর্বাঙ্গে কাদা মাখামাখি হয়ে গ্রেট হলে ঢুকতে দেখলো। মনে হলো মেজাজও ঠিক নেই।

হারমিওন সোজাসুজি হ্যারিকে বললো–আরে তুমি চোকে দারুণ ক্ষেপিয়ে দিয়েছো, যখন বললে তুমি আমার সঙ্গে লাঞ্চ খাবে। তাছাড়াও দেখতে চাইছিলো কতোটা তুমি ওকে চাও। ওর স্বভাবই ওই রকম।

–বাঃ সুন্দর! হ্যারি হেসে বললো। রন তখন টেবিলে সাজানো খাবারের প্লেট। ওর কাছে টেনে এনে খেতে শুরু করেছে। ও তো সোজাসুজি আমার মনের কথা জিজ্ঞেস করতে পারতো।

হারমিওন বললো, মেয়েরা ওই রকম প্রশ্ন করে না।

হ্যারি জোর দিয়ে বললো, করা উচিত, করলে আমি বলতে পারতাম, হ্যাঁ আমি তোমাকে পছন্দ করি। তাহলে নতুন করে সেড্রিকের প্রশ্ন তুলে ফাস ফাস করে কাঁদতো না। ওর মৃত্যুর প্রসঙ্গও আনতো না।

–আমি কখনোই বলছি না ও বুদ্ধিমানের মতো কাজ করেছে, হারমিওন বললো।

জিনি ঠিক রনের মতো সারা অঙ্গে কাদা মাখামাখি করে হলে ঢুকলো। ওরও মুখে মেজাজ বিগড়োনোর ছাপ। আমি তোমাকে সেই সময় ওর মনের অবস্থার কথা বলছিলাম।

রন সেদ্ধ আলু ছুরি দিয়ে কাটতে কাটতে মুখ না তুলে হারমিওনকে বললো, তোমার কিন্তু বই লেখা উচিত। এমনভাবে লিখবে, যাতে পাগল মেয়েদের ভাবসাব ছেলেরা বুঝতে পারে।

চো তখন র‍্যাভেনক্লর টেবিল থেকে খাওয়া সেরে উঠে দাঁড়িয়েছে। হ্যারি সেদিকে তাকিয়ে বললো, ঠিক বলেছো।

চো হ্যারির দিকে একবারও না তাকিয়ে গটগট করে হল ছেড়ে চলে গেলো। হ্যারির অবশ্যই মন খারাপ হয়ে যাওয়ার কথা। তাই ম্লান মুখে রন আর জিনিকে জিজ্ঞেস করলো, তারপর কিডিচ প্রাকটিস কেমন হলো তোমাদের?

–দারুণ বিভীষিকা মাখা স্বপ্নের মতো, রন বললো বদমেজাজী স্বরে।

হারমিওন, জিনির মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো, আরে খেতে দাও খেতে দাও, রন যা বলছে মোটেই তা নয়।

জিনি বললো, রন একটুও মিথ্যে বলছে না। সত্যি বলছি দারুণ আতঙ্কের। অ্যাঞ্জেলিনা আমাদের সকলকে কাঁদিয়ে ছেড়েছে।

রন আর জিনি ডিনার শেষ করে স্নান করতে চলে গেলো। হ্যারি আর হারমিওন গ্রিফিন্ডর কমনরুমে গেলো। শুরু করে দিলো ওদের রুটিন হোমওয়ার্ক। হ্যারি যখন নতুন স্টার চার্ট অ্যাস্ট্রোনমির জন্য হিমশিম খাচ্ছে তখন ফ্রেড আর জর্জ এলো।

ফ্রেড বললো, রন, জিনিকে দেখেছিলে? তারপর এধার ওধার তাকিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো। হ্যারি ওর দিকে তাকালে ফ্রেড বললো, ওয়েল, ওদের প্র্যাকটিস খেলা দেখছিলাম। ওইভাবে খেললে ওরা কচুকাটা হবে, আমাদের ছাড়া ওদের চলবে না।

ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে জর্জ বললো–জিনিকে যতোটা খারাপ খেলোয়াড় বলছো ঠিক ততোটা নয়। আমিতো দেখছি মোটামুটি ভালই খেলেছে।

হারমিওন পেছন থেকে আনসিয়েন্ট রুনেসের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বললো, ওর যখন ছ বছর বয়স তখন থেকেই দেখছি ও তোমাদের ম্যাজিক খেলা করছে। তোমাদের চোখে পড়েনি।

–রন একটাও গোল বাঁচাতে পেরেছে? হারমিওন ম্যাজিক্যাল হিয়ারোগ্লাইফিস অ্যান্ড লোগোগ্রাম থেকে মুখ তুলে বললো।

ফ্রেড ওর চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে বললো, হ্যাঁ, পারে, অবশ্য যদি কেউ ওকে লক্ষ্য না করে, শনিবার দেখা যাক ওরা কি করে। দর্শকদের বলতে হবে ওর হাতে যখন কোয়াফিল যায় তখন তোমরা সবাই চোখ বুজে অথবা স্টেডিয়ামের দিকে পেছন করে গল্প করবে।

ফ্রেড আবার উঠে জানালার ধারে দাঁড়িয়ে বিষণ্ণ মুখে খেলার মাঠ দেখতে লাগলো।

–তুমি তো জানো না হারমিওন, কিডিচ খেলার জন্যই আমি এখনও এখানে আছি।

হারমিওন ওর দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকালো।

–মনে রেখো সামনেই তোমার পরীক্ষা।

ফ্রেড বললো, কতোবার তোমাকে বলেছি আমরা তোমার নিউট-এর জন্য একটুও ভাবিত নই।

হারমিওন বললো, আমি বলতে পারছি না শনিবার তোমাদের খেলা আদতেই দেখতে যাবো কি না। তবে জ্যাকেরিয়া স্মিথের দল যদি জেতে তাহলে আমার আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোন পথ নেই।

ফ্রেন্ড বললো, তাহলে আগেই ওকে মেরে ফেলো।

হারামিওন অন্যমনস্ক হয়ে রুনেসের অনুবাদ পড়ার জন্য মাথা নুইয়ে বললো, এই খেলাটা নিয়ে দুটো হাউজের মধ্যে যদি ঝগড়া আর মন কষাকষি হয়।

হারমিওন স্পেলম্যানস সিল্লাবেরি দেখতে দেখতে সামান্য মুখটা তুলে দেখলো ফ্রেড, জর্জ, হ্যারি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।

হারমিওন বললো, হ্যাঁ এটাতো একটা খেলা, ঝগড়া কেন?

ফ্রেড মাথা নাড়িয়ে বললো, হারমিওন সন্দেহ নেই তোমার মন খুব সাদা। কোনও রেষারেষি, ঝগড়াঝাটি করো না। কিন্তু দুঃখের বিষয় তুমি কিডিচ খেলার কিছু বোঝো না।

–হতে পারে; কিন্তু রন গোল দিলো বা গোল আটকালো তা নিয়ে আমার মনকে অশান্ত করতে চাই না।

হ্যারির মনের যন্ত্রণা কাকে বলবে? আমব্রিজ ওকে কিডিচ খেলা থেকে নিলম্বিত করেছেন। তাই জিনিকে বললো, তুমি তো জানো আমব্রিজ আমাকে আজীবন কিডিচ খেলা থেকে বাদ দিয়েছেন।

–জিনি ওকে সান্ত্বনা দিলো, বাদ আর খেলতে পারবে না যতোদিন স্কুলে আমব্রিজ থাকবেন; দুটোর মধ্যে তফাৎ আছে। যাকগে আবার তুমি মাঠে নামলে আমি চেজার হবার চেষ্টা করবো। অ্যাঞ্জেলিনা আর অ্যালিসাতে আসছে বছর স্কুল থেকে চলে যাবে। সিকিংয়ের চাইতে গোলকিপিং আমি পছন্দ করি।

হ্যারি রনের দিকে তাকালো। রন তখন হাতে বাটাররিয়রের বোতল নিয়ে নিজের দু হাঁটুর দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

–অ্যাঞ্জেলিনা মনে হয় ওকে ছাড়বে না, হ্যারির দিকে তাকিয়ে যেনো ওকে বোঝবার দৃষ্টিতে, জিনি বললো, রনের যথেষ্ট প্রতিভা আছে।

হ্যারি শুতে এসে দেখলো রন নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে। ও নিজের বিছানায় শুয়ে আগামী শনিবারের কিডিচ ম্যাচের কথা ভাবতে লাগলো। গ্রিফিন্ডারের দলে না খেলে বাইরে থেকে খেলা দেখতে হবে! যতোবার কথাটা ভাবে ততোই ওর মন খারাপ হয়ে যায়, হতাশ হয়ে যায়। তবু মনে আনন্দ জিনি ভালো খেলছে।

হ্যারির চোখে ঘুম নেই। ওর মনে হয় ও কিডিচ খেলা দেখতে গেছে।

হ্যারি আর হারমিওন যেখানে বসেছে তার তিনধাপ নিচে বসেছেন আমব্রিজ। দুএকবার ব্যাঙের মতো মুখ দিয়ে, পিছন ফিরে ওদের বসে থাকতে দেখেছেন। মুখটা এমন যে না হাসলেও মনে হয় যেনো হাসছেন। কিছুতেই মন থেকে সেই দৃশ্য হটাতে পারছে না।

স্নেইপ ওকে বলেছেন, শোবার সময় কিছু ভাববে না, মন সম্পূর্ণ ফাঁকা করে রাখবে, সব রকম ভাবাবেগ দূরে সরিয়ে রাখবে। প্রতিটি অকলামেন্সির লেসন শেষ হবার পর স্নেইপ কথাগুলো বলেন।

কিন্তু স্নেইপের উপদেশ হাজার চেষ্টা করেও মেনে চলতে পারে না হ্যারি। আমব্রিজের মুখটা মনে পড়লেই সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।

কানে আসছে রনের প্রচণ্ড নাসিকা গর্জন। তারপর গর্জন থেমে যায়, খুব সম্ভব এখন গভীর ঘুমে অচেতন রন। হ্যারির কিছুতেই ঘুম আসছে না। শরীর বড় ক্লান্ত মস্তিষ্ক থেকে সব ভাবনা চিন্তা হটাতে বেশ সময় লাগছে। তারপর ঘুমিয়ে পড়লো।

ও স্বপ্ন দেখলো: নেভিল আর প্রফেসর ম্যাকগোনাগল রুম অফ রিকোয়ারমেন্টস-এ বেশ আনন্দের সঙ্গে ওদের নাচ দেখছে। তারপর ঠিক করলো ওর ডিএ ক্লাবের সব সদস্যদের ডেকে আনে। ঘরটা ছেড়ে যেতেই ও দেখলো বার্নাবাসের কারুকার্য খচিত বেশভূষার বদলে পাথরের দেয়ালে টাঙানো একটা জুলন্ত মশাল। ও মুখটা ঘুরিয়ে নিলো বাঁ ধারে। দেখতে পেলো ও দাঁড়িয়ে রয়েছে অন্ধকার একটা জানালাবিহীন করিডোরে, দূরে রয়েছে একটা বন্ধ কালো দরজা।

ও মনের মধ্যে উদবেলিত উত্তেজনা নিয়ে সেই দরজার দিকে এগোতে লাগলো। ঠিক করলো আজ সে দরজাটা খুলবেই খুলবে। ও দরজার কাছে গিয়ে দেখলো ওর ডানধারে উজ্জ্বল হালকা সবুজ রঙের রশ্মি, দরজাটা সামান্য খোলা। ও দরজাটা সম্পূর্ণ খোলার জন্য ডান হাত বাড়ালো… তারপর

ঘুম ভেঙে গেলো রনের প্রচণ্ড নাক ডাকার শব্দে। আবার ঘুমিয়ে পড়লো। ও তখনও স্বপ্ন দেখছে–অন্ধকারে তার ডান হাতটা বাড়িয়েছে দরজাটা খোলার জন্য।

দরজাটা তখন হাজার হাজার মাইল দূরে সরে গেলো। বিষাদ আর হতাশার মিশ্রণে হাতটা নামিয়ে নিলো। একটা অপরাধবোধ মনকে আচ্ছন্ন করে রইলো। ও জানে সেই দরজাটা দেখা ঠিক হবে না। তবু দেখার ইচ্ছে, দারুন কৌতূহল। রন সবকিছু ভেস্তে দিতে ওর উপর রেগে গেলো। আর দুএক মিনিট পর রন প্রবল গর্জন করে নাক ডাকলে ক্ষতি কি ছিলো?

***

সোমবার সকালে ওরা একই সময়ে ব্রেকফাস্ট খেতে গ্রেট হলে ঢুকলো। ডাকবাহী প্যাচার আসার সময় হয়ে গেছে। ডেইলি ফেটের জন্য শুধু হারমিওন নয়, হলের আরও অনেকে উদগ্রিব হয়ে বসেছিলো, ডেথইটারদের খবরের জন্য। কেন অনেক প্রচেষ্টার পর তারা ধরা পড়ছে না। হারমিওন কাগজ নিয়ে পড়তে বসে গেলো।

হ্যারি মনের আনন্দে কমলালেবুর রস খেতে লাগলো। এই বছরে ও একটি মাত্র নোট পেয়েছে। প্যাচাটা ওর সামনে বসতে হ্যারির মনে হলো প্যাচাটা ভুল করেছে।

হ্যারি প্যাঁচার দিকে তাকিয়ে বললো–আরে তুমি কাকে চাও? কিন্তু দেখলো ওর ঠোঁটে রয়েছে একটা খাম, ওর নাম-ঠিকানা লেখা

হ্যারি পটার
 গ্রেটহল
হোগার্টস স্কুল

 ও প্যাঁচার কাছ থেকে চিঠিটা নিতে গিয়েও পারলো না। সেই সময়ে আর তিন চারটে প্যাঁচা উড়তে উড়তে ওর পাশে বসার জন্য জায়গা খুঁজতে লাগলো। সকলেই তাদের বয়ে আনা চিঠি হ্যারিকে দিতে ব্যস্ত। কে আগে দেবে তারই প্রতিযোগিতা।

রন আশ্চর্য হয়ে বললো–কী ব্যাপার বলতো?

গ্রিফির টেবিলের সকলেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে প্যাচাঁদের চিঠি দেবার তাড়া দেখে।

আরও সাত সাতটা প্যাচার আবির্ভাব!

হারমিওন হাতের কাগজটা সরিয়ে রেখে একটা প্যাচার পা থেকে পাকানো একটা প্যাকেট খুলে নিতে নিতে বললো, আমি জানি এটা কী। এটাই তুমি প্রথমে খোলো হ্যারি!

হ্যারি, ব্রাউন রংয়ের প্যাকেটটা খুলতেই দ্য কুইবলার মার্চ সংখ্যা গড়িয়ে পড়লো। কুইবলারের প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় লাল অক্ষরে ছাপা

হ্যারি পটার শেষ পর্যন্ত মুখ খুললো
হি-হু, যার নাম মুখে বলা যাবে না তার সম্বন্ধে সত্য কথা
সেই রাতে আমি তাকে ফিরে আসতে দেখেছি

লুনা প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে গ্রিফির টেবিলে এসে ফ্রেড আর রনের মাঝখানে বসে বললো–খুব ভাল, তাই না? গতকাল লেখাটা বেরিয়েছে। বাবাকে বলেছিলাম তোমাকে একটা কমপ্লিমেন্টারি কপি পাঠাতে, ঠিক পাঠিয়েছেন। কথাটা বলে অন্যসব পাচাঁদের হুটু হুটু শব্দ করে তাড়াতে লাগলো। দেখতে পেলো হ্যারির টেবিলের ওপোর অনেক পাঠকদের চিঠি পড়ে রয়েছে।

হারমিওন বললো, এগুলো আমি আশা করেছিলাম। চিঠিগুলো যদি খুলি, তুমি কিছু মনে করবে?

হ্যারি সামান্য হতবুদ্ধি হয়ে বললো, হ্যাঁ হ্যাঁ খুলে পড়।

হারমিওন আর রন পটাপট একটার পর একটা খামের মুখগুলো ছিঁড়তে শুরু করেদিলো।

–এটা দেখছি একজনের। ও বলছে, তুমি পাগল ক্ষেপা। আহ এটা…! এক মহিলা লিখছেন, তোমার সেন্ট মাংগোসে ভর্তি হয়ে শকট্রিটমেন্ট করা দরকার, হারমিওন চিঠিটা হাতে নিয়ে বললো। মুখচোখে ওর হতাশার ছাপ।

–ও এটা সুন্দর, যদিও হ্যারি চিঠিটা দেখতে দেখতে বললো।

এক জাদুকরী আঁকাবাঁকা অক্ষরে লিখেছে। লিখেছে তিনি আমার কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করেন।

ফ্রেডও চিঠি খুলছিলো। একটা চিঠি খুলে নিল, দ্বিধাগ্রস্ত মন। এই রকম পাগল করা চিঠি দেখা যায় না। তিনি বিশ্বাস করে না ইউ-নো-হু ফিরে এসেছেন, তো তিনি জানেন না এখন কী ভাববেন। ঈশ্বর রক্ষা করুন, পার্চমেন্টের কি অপব্যবহার।

হারমিওন আর একটা চিঠি পড়লো, এই পাঠককে তুমি বোঝাতে সক্ষম হয়েছো হ্যারি। হারমিওন হাতের চিঠিটা উত্তেজনার সঙ্গে পড়তে লাগলো, আমি তোমার বক্তব্য আদ্যপান্ত পড়েছি।

আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য হয়েছি যে ডেইলি প্রফেট তোমার সঙ্গে বৈমাত্রসুলভ ব্যবহার করে চলেছে। আমি বিশ্বাস করি যে হি-হুঁ যার নাম বলা ঠিক হবে না, তিনি ফিরে এসেছেন। আমি অকপটে বলতে চাই তুমি সত্য কথা বলেছো, সত্যি তুমি ধন্যবাদের পাত্র।

রন একটা চিঠি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বললো, লিখছে তুমি ঘেউ ঘেউ করছে। আর হ্যাঁ এই চিঠিটায় লিখছে, তুমি ওর চিন্তা-ভাবনা বদলে দিতে সক্ষম হয়েছে, তুমি একটি আসল হিরো! আরে একটা ফটোগ্রাফও পাঠিয়েছে দেখছি।

বাচ্চা মেয়ের গলায় কে যেন বললো, এখানে কিসব হচ্ছে?

হ্যারি হাত ভর্তি চিঠি নিয়ে মুখ তুলে দেখলো ওর সামনে প্রফেসর আমব্রিজ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। পেছনে লুনা আর ফ্রেড। আমব্রিজের ফোলা ফোলা ড্যাব ড্যাবে চোখ, প্যাঁচা আর চিঠির বান্ডিলে। হ্যারি সামনে তাকিয়ে দেখলো অনেক ছেলে মেয়েরা ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কৌতুহলের দৃষ্টিতে।

আমব্রিজ ধীরে ধীরে বললেন, ওইসব চিঠি তোমার নামে কেন এসেছে জানতে পারি কি পটার?

ফ্রেড বললো, চিঠি পাওয়াটা কী অপরাধ যোগ্য?

–সাবধান মি. উইসলি। তুমি যদি চুপ না থাকো তাহলে তোমাকে ডিটেনসন করতে বাধ্য হবো, আমব্রিজ ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে বললেন।

–হ্যাঁ কি বলছিলাম পটার?

হ্যারি কি বলবে ভেবে চুপ করে রইলো। কিন্তু চুপ করে থাকার কোনও সঙ্গত কারণ নেই, খুব সম্ভব ইতোমধ্যে আমব্রিজ দ্য কুইবলার এক কপি হাতে পেয়েছেন।

–আমার একটা ইন্টারভিউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠকদের চিঠি এসেছে। মানে গত জুন মাসের ঘটনাবলী সম্বন্ধে।

 হ্যারি আমব্রিজের কথা শোনার পর স্টাফ টেবিলের দিকে তাকালো। হ্যারির মনে দৃঢ় ধারণা ওদিক থেকে ডাম্বলডোর সবকিছু শুনছেন, দেখছেন।

–ইন্টারভিউ? আমব্রিজ বললেন। কী বলতে চাও, কিসের ইন্টারভিউ?

–এক সংবাদদাতা আমাকে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন, তার উত্তর দিয়েছি। হ্যারি বললো–এইগুলো…। কথাটা বলে হ্যারি কুইবলারের কপিটা আমব্রিজের দিকে ছুঁড়ে দিতেই আমব্রিজের মুখটা ভীষণ বিকৃত হয়ে গেলো।

কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন–কাণ্ডটা কবে করলে?

–গত উইক এন্ডে হগসমিডে।

আমব্রিজের হাতে কাগজটা কাঁপতে লাগলো। চোখমুখ রাগে বিবর্ণ! মিস্টার পটার, ভবিষ্যতে তোমার হগসমিডে যাওয়া নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছি। আশ্চর্য! তুমি সাহস করে ইন্টারভিউ দিলে কেমন করে? আমি তোমাকে কতবার বলেছি মিথ্যে কথা বলবে না। অসহ্য!

প্রফেসর আমব্রিজ এতো রেগে গেছেন যে গুছিয়ে কথা কইতে পারছেন না। বললেন, পঞ্চাশ পয়েন্ট গ্রিফিন্ডর থেকে কাটা গেলো। আর তোমার এক সপ্তাহ ডিটেনশন।

–আমব্রিজ দ্য কুইবলারের কপিটা বুকে চেপে চলে গেলেন। অনেক ছাত্র ছাত্রী তার পিছু পিছু চললো।

পরের দিন সকাল বেলা একটা নির্দেশ হাউজ নোটিশ বোর্ডে শুধু নয়, চিপকে দেওয়া হয়েছে করিডোর আর ক্লাসরুমেও।

হোগার্টসের উচ্চ পর্যায়ের আদেশ অনুসারে
কোনও ছাত্র-ছাত্রীর হাতে বা কাছে যদি দ্য কুইবলারের
কপি দেখতে পাওয়া যায় তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
এই আদেশ এডুকেশনাল ডিক্রি সাতাশ নম্বর অনুসারে প্রযোজ্য হলো।
দস্তখত
ডোলোরেস আমব্রিজ উচ্চ পর্যায়ের তদন্তকারী।

যে কোনও কারণেই হোক হারমিওন যতবারই নোটিশটা দেখে ততবারই আনন্দে অধীর হয়ে ওঠে।

হ্যারি বললো, এতো আনন্দের কারণ কী জানতে পারি?

হারমিওন হেসে বললো–তুমি সোজা কথাটা বুঝতে পারছো না? ওই নোটিশ বা আদেশটা পড়ার পর সবাই দ্য কুইবলার পড়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকবে। জানতে ইচ্ছুক হবে কেন নিষিদ্ধ করা হলো।

হারমিওনের বক্তব্য সঠিক প্রমাণীত হলো। স্কুলের সব ছাত্র-ছাত্রী দ্য কুইবলারের কপি পাবার জন্য ছোটাছুটি করতে লাগলো। হ্যারিরও ছাত্রদের ছোটাছুটি নজরে পড়লো।

হারমিওন হ্যারিকে বললো–হ্যারি অবশেষে সকলে তোমার কথা বিশ্বাস করতে চলেছে। তোমার কথা সত্যি, তুমি কোনও মিথ্যে বলোনি।

এদিকে প্রফেসর আমব্রিজ রেগে ক্ষেপে গেছেন। যেখানে পাচ্ছেন সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের পাকড়াও করে নানা প্রশ্ন করছেন, তাদের কাছে কুইবলার আছে কি নেই সার্চ করছেন।

স্কুলের একজনও বাদ রইলো না যারা সেই ইন্টারভিউ পড়লো না বা পড়েনি।

স্কুলের শিক্ষকরাও এডুকেশনাল ডিক্রি ছাব্বিশের আওতায় পড়েন। তারাও একই মনোভাব ব্যক্ত করতে লাগলেন; কিন্তু তাদের মনোভাব ব্যক্ত করা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমব্রিজের দশ পয়েন্ট কাটা পূরণ করেদিলেন প্রফেসর প্রাউট। গ্রিফিরকে কুড়ি পয়েন্ট দিলে হ্যারি তাকে জলের জগ এগিয়ে দিলো। সর্বদাই খুশিতে ডগমগ প্রফেসর ফ্লিটউইক, চার্মস শিক্ষার শেষে স্কোয়েকিং সুগার মাইস দিয়ে শু বলেই দ্রুত চলে গেলেন। প্রফেসর ট্রিলনী ফোঁপাতে ফোঁপাতে তার ডিভিয়েসন ক্লাসে বললেন (আমব্রিজকে অগ্রাহ্য করে) যে, হ্যারি কখনোই দুর্ঘটনায় মারা যাবে না, অনেক বছর বাঁচবে। ও একদিন ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রি হবে, আর কম করে বারোটি সন্তান-সন্তুতির পিতা হবে।

হ্যারির নতুন করে সবচেয়ে আনন্দিত হলো, পরের দিন যখন ট্রান্স-ফিগারেশন ক্লাসের পর চো ওকে ডাকলো। কিছু বোঝবার বা বলার আগেই ও হাতে একটি মেয়ের নরম হাতের স্পর্শ পেলো। চো ওর কানের কাছে মুখ এনে বললো, সত্যি, সত্যি বলছি আমি খুব দুঃখিত। তোমার সাক্ষাৎকার (ইন্টারভিউ) খুবই সাহসী মনের। পড়তে পড়তে আমার চোখে জল এসে গেছে।

হ্যারি চোর মুখ দেখে খুবই দুঃখিত হলো, পড়তে পড়তে ওর চোখে জল এসেছিলো শুনে। আবার ওর সঙ্গে কথা বলছে এটাই আরও বেশি আনন্দের। চো ওর গালে ছোট একটা চুম্বন করে দৌড়ে চলে গেলো। বিশ্বাস করা যায় না ও বাইরে পা রাখা মাত্র ট্রান্সফিগারেশন অথবা যেকোনও জাদুমন্ত্রে একটা বিরাট আনন্দের ঝড় উঠলো ওর মনে। সীমাস লাইন ছেড়ে ওর সামনে দাঁড়ালো। হ্যারির হাত ধরে বললো, বিশ্বাস করো হ্যারি, একটা কপি আমার মায়ের কাছে পাঠিয়েছি।

হ্যারি আরও খুশি হলো ম্যালফয়, ক্র্যাবে, আর গোয়েলের চুপসে যাওয়া মুখ দেখে। ওরা তিনজনে তিন মাথা এক করে কি যেন বলাবলি করছে। হারমিওন চুপি চুপি বললো, ওদের অবস্থা দেখেছো?

হ্যারি খুব ভাল করে জানে ওদের বাবাদের ডেথইটারদের লিস্টে নাম দেওয়াতে ভয় পেয়ে গেছে।

–দারুণ হয়েছে হ্যারি। এখন এমন অবস্থা ওরা প্রতিবাদ করতে সাহস করছে।, হারমিওন বললো। বলবে কেমন করে? তাহলে তো স্বীকার করতে হবে আমব্রিজের আদেশ অমান্য করেছে। হি: হি:।

সবচেয়ে বড় সংবাদ দিল লুনা, ও ওর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো–বাজারে আর একটি কপিও পড়ে নেই, সব বিক্রি হয়ে গেছে বলে বাবা জানিয়েছেন। খুব সম্ভব বাবা আবার নতুন কপি প্রিন্ট করবেন।

হ্যারি ভেবে পাচ্ছে না এর পরে ও কি করবে। ও বললো, ক্রাস্পল–হর্নড সুরক্যাকসদের ওপোর আর কারও কোনও উৎসাহ নেই।

সেই রাতে গ্রিফিল্ডর কমন রুমে হ্যারি হিরো বনে গেলো। ফ্রেড-আর জর্জ কুইবলারের খবরটা এনলার্জমেন্ট চার্ম দিয়ে এনলার্জ করে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছে, বেঁটেখাটো হ্যারির যেন দেখতে অসুবিধে না হয়। মন্ত্রণালয় খুবই অপরিণত চিত্তবৃত্তিসম্পন্ন, আর আমব্রিজ এবার গোবর খাবেন।

হারমিওনের কাছে ওটা খুব মনের মতো হয় না। ও বললো, এইসব করলে ওর একাগ্রতা ক্ষুন্ন হবে। বিরক্ত হয়ে তাড়াতাড়ি শুতে চলে গেলো হ্যারি। ঘন্টা দুই বাদে হ্যারির মানতে হলো পোস্টারটা আজেবাজে নয়। বিশেষ করে টকিংস্পেল যখন শুরু করলো তখন সেটাকে মুছে দিয়ে অসংলগ্নভাবে জোরে জোরে থেমে থেমে বলতে লাগলো ডাংগ এবং আমব্রিজ শব্দ দুটি। কিন্তু আবার ওর কাটা দাগে ব্যথা ও চুলকানি শুরু হয়ে গেলো অস্বস্তিকরভাবে। যেসব লোকেরা ওকে ঘিরে বসেছিলো তারা বারবার ওকে সেই সাক্ষাৎকার সম্বন্ধে নানা প্রশ্ন করতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত হ্যারি বাধ্য হয়ে ঘুমোতে যাচ্ছি বলে হল থেকে চলে গেলো।

ও ডরমেটরিতে গিয়ে দেখলো ওখানে কেউ নেই। ও বিছানার ধারে জানালার ঠাণ্ডা কাঁচে কপালটা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। ঠাণ্ডা পরশে মনে হলো যেনো ব্যথা চুলকুনি ধীরে ধীরে কমছে। মাথা ধরাটা সেরে যাবে সেই আশায় ও বিছানায় শুয়ে পড়লো। ভীষণ ঘুম পেয়েছে তাই চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে ও ঘুমিয়ে পড়লো।

আবার সেই একই স্বপ্ন দেখলো ও পর্দা ফেলা একটা অন্ধকার ঘরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঘরে শুধু একটা মোমবাতি জ্বলছে। ওর সামনে একটা ভেলভেটে মোড়া চেয়ার, তার পিঠে ও হাত রেখেছে। ওর হাতের আঙ্গুলগুলো লম্বা লম্বা সাদা, যেন অনেক বছর তাতে রোদ লাগেনি, শুকনো বড় মাকড়সার পায়ের মতো ফ্যাকাশে।

অদূরে একজন মেঝেতে হাঁটুগেড়ে বসে রয়েছে। ওর পেছনে একটা মোমবাতি জ্বলছে। মোমবাতির শিখা কাঁপছে, লোকটাও কাঁপছে এবং শিউরে উঠছে।

–রকউড তোমার কোনও দোষ দেখছি না, হ্যারি আগের মতোই নির্মম ঠাণ্ডা স্বরে বললো। তারপর ও চেয়ারের ওপোর থেকে হাত সরিয়ে সেই লোকটার কাছে দাঁড়ালো।

হ্যারি বললো, রুকউড তুমি যা বললে, সব সত্য?

–হ্যাঁ প্রভূ সব সত্যি, আমি তো ডিপার্টমেন্টে বহু বছর ধরে কাজ করছি।

 –আভেরি আমাকে বলেছে, বোডে ওটা সরাতে পারবে।

–বোডের পক্ষে কখনই সম্ভব হবে না প্রভু, এই কারণেই ও ম্যালয়ের ইমপেরিয়স কার্সের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে লড়াই করেছে।

–দাঁড়িয়ে কথা বলো রকউড, হ্যারি ফিসফিস করে বললো।

সেই হাঁটু গেড়ে বসা লোকটা হ্যারির পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো। মোমবাতির আলোতে ওর মুখের বসন্তের দাগ, কাটা দাগ জ্বল জ্বল করে উঠলো।

–তুমি কথাগুলো আমাকে জানিয়ে খুব ভালো কাজ করলে। যাকগে অনেক সময় আমার নষ্ট হয়েছে। এসো আবার নতুন করে কাজ শুরু করি। রকউড তোমার কাছে লর্ড ভোল্টেমর্টের কৃতজ্ঞতা রইলো।

–প্রভূ! আমার মহান প্রভূ, রুকউড স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আনন্দে ফেটে পড়ে বললো।

–তোমার কাছ থেকে আমার অনেক তথ্যের প্রয়োজন আছে, সব আমাকে দেবে।

–অবশ্যই, অবশ্যই মহান প্রভু, যা চাইছেন সবই দেবো।

–খুব ভাল, এবার তুমি যাও, আর আভেরিকে পাঠিয়ে দাও

 ক্লকউড মাথা অবনত করে চলে গেলো।

ওয়ালে একটা অতি পুরনো ভাঙা কাঁচের। আয়না ঝোলানো রয়েছে। হ্যারি ওর মুখটা দেখার জন্য আয়নার সামনে দাঁড়ালো। ঘরের অন্ধকারের মধ্যে ওর প্রতিবিম্ব দেখলো। অনেক বড় দেখাচ্ছে ওর মুখটা, মুখের রং মাথার খুলির চেয়ে সাদা, লাল দুই চোখের মনি যেনো ঠিকরে বেরোচ্ছে।

… না… না… আ… আ… আ…!

রন ওকে মেঝে থেকে তুলে দাঁড় করালে হ্যারি চাঁদের আলোতে রনের মুখের দিকে তাকালো। আবার শুরু হলো ওর কাটা দাগে তীব্র যন্ত্রণা আর চুলকানি।

রন হ্যারিকে জোর করে ধরে বললো–আবার কেউ আক্রান্ত হয়েছে? বাবা… আর সেই সাপ?

হ্যারি হাঁফাতে হাফাতে বললো, না না সবাই ভালো আছে। ওর শুধু কাটা দাগে ব্যথা-যন্ত্রণা-চুলকানি আর মাথার ভেতরে যেনো দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। কিন্তু আভেরি ভোল্ডেমর্টকে ভুল তথ্য দেয়ার জন্য দারুণ রেগেছেন।

হ্যারি কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে গোঙাতে গোঙাতে কপালে হাত টিপে বিছানায় শুয়ে পড়লো।

–না, রকউড ভুল বুঝতে পেরে এখন তাকে সাহায্য করবে।

রন ওকে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো–কি আজেবাজে বকছো। ইউ-নো-হুকে তুমি এখন দেখেছো? রনের একটু ভয় ভয় করছে।

কথাটা শুনে হ্যারি ওর একটা হাত প্রসারিত করে নিজের মুখের সামনে ধরলো। না, এখন আর আঙ্গুলগুলো মাকড়সার মতো দেখাচ্ছে না, ডিগডিগে বরফের মতো সাদা লম্বা নয়। ও রকউডের সঙ্গে ছিলেন, তুমি তো জানো রকউড একজন ডেথইটার, আজকাবান জেল থেকে পালানো এক অপরাধী? রকউড এইমাত্র তাকে বলেছে, বোডে কাজটা করতেই পারছে না।

–কী করতে পারছে না?

–কিছু সরিয়ে নিতে। তিনি বলেছেন বোডে যে কাজটা করতে পারে না তা তিনি জানেন। ম্যালফয়ের বাবা ওকে ইমপেরিয়াস কার্স দিয়ে স্তব্ধ করে রেখেছেন।

–তুমি বলছো বোডেকে মন্ত্রমুগ্ধ করে কাজটা করতে বাধ্য করা হয়েছে? রন বললো–কিন্তু হ্যারি সেটা তো করা দরকার ছিলো।

–অস্ত্র! হ্যারি নিজেই অস্ত্র কথাটা বলে পুরো কথাটা শেষ করলো, আমি জানি রন।

ডবমেটরির দরজাটা কেউ খুললো। ঘরে ঢুকলো ডিন আর সীমাস। হ্যারি ওদের দেখে পা ছড়িয়ে আরাম করে শুলো। ওদের হ্যারি স্বপ্নের কথা জানতে দিতে চায় না।

–তুমি বলছিলে না, রন হ্যারির কানের কাছে মুখ এনে বললো (এমন একটা ভাব দেখাল যেন গজগ থেকে র জল খাবার জন্য জগ টেবিলে রাখলো) তুমি বলছিলে ইউ নো হু হয়ে গিয়েছিলে তুমি?

–হ্যারি স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো–হ্যাঁ।

রন অযথা জগ থেকে অনেকটা জল ঢক ঢক করে (দরকার নেই তাও) খেলো।

–হ্যারি, ও বললো। ডিন আর সীমাস এখন ওদের আলখেল্লা খুলতে খুলতে হৈ হৈ করছে। হ্যারি কি দেখেছো বলতে হবে।

আমি কাউকে কিছু বলতে পারি না। একলামেন্সি শেখার জন্য সবকিছুই গোপন রাখতে, মাথা থেকে সবকিছু হটিয়ে দিতে হবে। এটাই তারা চান।

তারা বলতে অবশ্যই হ্যারি ডাম্বলডোরকে বললো, হ্যারি পাস ফিরে রনের দিকে পেছন ফিরে শুলো। হ্যারির তখনও মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। ও মাথার বালিশে প্রচণ্ড জোরে একটা ঘুষি মারলো। কোনো কথা ও বলবে না। ও খুব ভালো করেই জানে আভেরিকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে।

পরদিন সকাল পর্যন্ত হ্যারি আর রন হারমিওনের আসার অপেক্ষায় রইলো। হ্যারি যা দেখেছে সব বলবে হারমিওনকে। এমনভাবে বললো যাতে কেউ যেনো একটি শব্দও শুনতে না পায়। উঠোনে দাঁড়িয়ে ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগাতে লাগাতে ওরা তিনজনে গল্প করতে লাগলো। হ্যারি, হারমিওনকে বলবে যতটুকু স্বপ্নের ব্যাপারটা মনে আছে। হ্যারির কথা শেষে হলে হারমিওন কয়েক সেকেন্ড চুপ করে ফ্রেড জর্জের দিকে তাকালো। ওরা তখন উঠোনের অন্য এক ধারে দাঁড়িয়ে ম্যাজিক্যাল হ্যাট বিক্রি করছে।

ফ্রেড ও জর্জের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এনে হারমিওন বললো–সেই জন্যই ওকে হত্যা করা হয়েছে। বোডে যখন ওই অস্ত্রটা চুরি করে নিজের আয়ত্বে রাখতে চেষ্টা করেছিলো তখন অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটে। মনে হয় প্রতিরোধের জাদুমন্ত্র প্রয়োগ করা হয়েছিলো। মানে যাতে কেউ সেই ফুলের পটটা ছুঁতে না পারে। সেই সব কারণে সব স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ও সেন্ট মাংগোসে ভর্তি হয়েছিলো। মনে আছে সেই হিলার আমাদের কি বলেছিলো? বলেছিলো ও সেরে উঠছে। কিন্তু ওকে সুস্থ করার দায়িত্ব নিতে চায়নি, কেমন করে পারবে? আমি বলতে চাই, সম্ভবত সেটা স্পর্শ করতে গিয়ে ও শক পেয়েছিলো। তখন ইমপেরিয়াস কার্স তুলে নেওয়া হয়েছিলো। যখন ও কথা বলার শক্তি ফিরে পেয়েছিলে, তখন কি করছে সকলকে বলেছিলো। নিশ্চয়ই তোমার মনে আছে? সম্ভবত ওরা জানতো বোডে সেই অস্ত্রটা চুরি করার জন্য মাংগোসে ভর্তি হয়েছে। অবশ্যই লুসিয়াস ম্যালফয়ের পক্ষে খুব সহজ ছিলো কার্সটা ওর ওপোর প্রয়োগ করা।

–মন্ত্রণালয়ে আমার শুনানীর দিন ঘরের এক ধারে ও ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। হ্যারি বললো, ও সেদিন ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজর করিডোরে ছিলো। তোমার বাবা বলেছিলেন, খুব সম্ভব ও লুকিয়ে চুরিয়ে আমার হিয়ারিংয়ের কথাবার্তা শোনার জন্য গিয়েছিলো। কিন্তু যদি…।

–স্টারগিস! সকলকে অবাক করে দিয়ে হারমিওন বলে উঠলো।

–দুঃখিত! রন হতভম্ব হয়ে বললো।

–দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকার অপরাধে স্টারগিস পড়মোর গ্রেফতার হয়েছিলেন। লুসিয়াস ম্যালফয় ওকে দেখতে পেয়েছিলেন। আমি বাজি ধরে বলতে পারি যেদিন তুমি ওকে করিডোরে দেখেছিলে, সেদিনই কাজটা করেছিলো। স্টারগিস মুডির অদৃশ্য হবার আলখেল্লাটা গায়ে পরেছিলো, ঠিক হ্যারি? তো সেটা গায়ে দিয়ে থাকলেও ম্যালফয় ওর : পায়ের শব্দ শুনেছিলেন অথবা আন্দাজ করেছিলেন কারও উপস্থিতি অথবা না লাগে তুক না লাগে তাক এই ভেবে ইমপেরিয়স কার্স প্রয়োগ করেছিলেন। সেখানে প্রহরীও তো ছিলো? তারপর অন্য একদিন সুযোগ পেয়ে খুব সম্ভব তার ডিউটির দিন ডিপার্টমেন্টে ঢুকে সেই অস্ত্রটা ভোল্টেমর্টের জন্য চুরি করার চেষ্টা করেছিলো দরজা ভেঙ্গে। বুঝলে রন, চুপচাপ থাকো। শেষকালে ধরা পড়ার পর তাকে আজকাবানে পাঠানো হয়েছিল।

হারমিওন কথাটা বলে হ্যারির দিকে তাকিয়ে রইলো।

 –এখন রকহুড ভোল্ডেমর্টকে বলেছে কেমন করে সেই অস্ত্রটা পাওয়া যাবে?

–হতে পারে, কিন্তু আমি সব কথা শুনতে পাইনি, কিন্তু মনে হচ্ছে ঠিক বলেছো। রুকউড তো ওখানে চাকরি করতো, হতে পারে ভোল্ডেমর্ট রুকউডকে পাঠিয়েছিলেন কাজটা করার জন্য, হ্যারি এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো।

হারমিওন ঘাড় নাড়লো। তখনও চিন্তামগ্ন। তারপর হঠাৎ বলে উঠলো–কিন্তু তোমার তো ওগুলো দেখার কথা নয় হ্যারি…।

–কী বললে, হ্যারি অবাক হয়ে বললো।

–তোমার মস্তিষ্ক তো এ ব্যাপারে তালাবন্ধ করে নির্লিপ্ত থাকা দরকার তাইতো স্নেইপের কাছে শিখছো? হারমিওন হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললো।

–হ্যাঁ, আমি সেইভাবে চলছি, হ্যারি বললো। কিন্তু…।

হারমিওন বললো, এখন ওইসব চিন্তা থেকে মনকে মুক্ত রাখতে চেষ্টা করতে হবে হ্যারি। মানে তুমি যা যা দেখেছো ওসব চিন্তা না করে এখন থেকে তুমি অকলামেন্সির ওপোর প্রচুর খেটে যাও।

হ্যারি কথাটা শুনে হারমিওনের ওপোর অসম্ভব চটে গিয়ে সেদিন আর ওর সঙ্গে কোনো কথা বললো না। তবে সেদিনটা আরেকটি খুব খারাপ দিন হলো।

হাফলপাফের বিরুদ্ধে গ্রিফিন্ডর হেরে যাওয়াতে স্নিদারিনরা দারুণ মজা পেয়ে সারাদিন করিডোরে দাঁড়িয়ে গান গাইতে লাগলো উইসলি আমাদের রাজা। আস্তে নয়, সকলে মিলে খুব জোরে। ফিলচ খুব বিরক্ত হয়ে সন্ধ্যার পর করিডোরে গান গাওয়া, হৈ হৈ করার ওপোর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন।

আগামী সপ্তাহটা হ্যারির খুব একটা শুভ হলো না। আরও দুটো ডি পোসানের জন্য পেলো। ও তখনও উদ্বেগ-অনিশ্চয়তার ওপোর দিন কাটাতে লাগলো, হ্যাগ্রিড হয়তো বরখাস্ত হতে পারেন। আর ভোল্টেমর্টের স্বপ্ন থেকে মুক্তি পাওয়া, যদিও ও রন আর হারমিওনের কাছে ওর মনোভাবনা ব্যক্ত করলো না। ও হারমিওনের কাছ থেকে কোনো জ্ঞানের কথা শুনতে চায় না। সে যাই হোক সব কথা সিরিয়সকে জানানোর জন্য ব্যাকুল হয়ে রইলো। কিন্তু ভাবলে বা ব্যাকুল হলে তো চলবে না। সেটা সম্ভব নয়, তাই মন থেকে সেইসব চিন্তা দূর করতে চাইলো।

অতি দুঃখের ব্যাপার আগের মতো ওর মস্তিষ্ক তো একটি নিশ্চিত-নিরাপদ স্থানে নেই।

–পটার উঠে পড়ো রকহুডের স্বপ্ন দেখার পর সপ্তা দুই বাদে আবার হ্যারিকে দেখতে পাওয়া গেলো স্নেইপের অফিসের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে। থাকতে। ও মনের ভেতরে যা কিছু জমা আছে তা দূর করার চেষ্টা করছে। আবার  সে ওর শৈশব অবস্থায় ডাডলির অপমানকর ব্যবহারের দৃশ্য দেখে চলেছে। ওর প্রাইমারী স্কুলের ছেলেদের দলবদ্ধ আক্রমণও ডাডলির প্ররোচনায় হয়েছিলো।

–হ্যাঁ, বলতো তোমার শেষ স্মৃতিটি কী? স্নেইপ বললেন। –আমি বলতে পারছি না, হ্যারি উঠে দাঁড়িয়ে বললো।

নানা ধরনের স্মৃতি মাথার ভেতর জট পাকিয়ে গেছে। কোনটি আগে, কোনটি পরে বুঝে উঠতে পারছে না। গাদাগাদা স্মৃতির দৃশ্য আর নানারকম শব্দ। কোনটি বলবে স্নেইপকে?

–আপনি বলছেন, আমার ডাডলি যখন আমাকে বাথরুমের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলো?

–না না, সেই অন্ধকার ঘরের মাঝখানে যেখানে একজনকে নিলডাউন করে মেঝেতে বসিয়ে রাখা হয়েছিলো…।

–না ওটা কিছু নয়।

স্নেইপ, হ্যারির চোখের দিকে তীক্ষ্ণভাবে তাকালেন। হ্যারির মনে পড়ে গেলো চোখের সঙ্গে চোখের সংযোগ লেগলিমেন্সির অতি প্রয়োজনীয়। হ্যারি চোখ পিট পিট করে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।  

স্নেইপ বললেন, বলো কেমন করে সেই লোকটা, আর অন্ধকার ঘরটা তোমার মাথার ভেতর ঢুকলো পটার।

–স্নেইপের দিকে তাকিয়ে হ্যারি বললো, স্বপ্নে… আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম।

স্নেইপ হ্যারির কথাটা বললেন স্বপ্নে? হ্যারি দেখলো ঘরের মধ্যে কাঁচের জারে লাল আরকের মধ্যে একটা বড় কোলা ব্যাঙ ডুবিয়ে রাখা হয়েছে।

–তুমি তো জানো পটার কেন আমরা এখানে বসে আছি? স্নেইপ বললেন, তুমিতো আরও জানো কেন এই সুন্দর সন্ধ্যাটায় এই বিরক্তিকর কাজের জন্য তোমার সঙ্গে রয়েছি?

–হ্যাঁ, হ্যারি সংক্ষেপে বললো।

 –পটার আমাকে মনে করিয়ে দাও কেন এখানে আমরা রয়েছি।

–যাতে আমি অকলামেন্সি শিখতে পারি। হ্যারি মৃত বানমাছের মতো একটা পিছলে মাছের দিকে তাকিয়ে বললো।

–ঠিক বলেছো পটার; যতোই তুমি মনমরা হয়ে থাকে না কেন।

হ্যারি স্নেইপের দিকে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকালো।

–আমি আশা করেছিলাম গত দুমাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর তুমি কিছু শিখেছো। আচ্ছা ডার্কলর্ডকে নিয়ে আর কটা স্বপ্ন দেখেছে পটার? স্নেইপ বললেন।

–ওই একটাই, হ্যারি বললো।

স্নেইপ তীক্ষ্ণ ঠাণ্ডা চোখ দুটো আরও ছোট ছোট করে বললেন, হয়তো, হয়তো তুমি সত্য সত্যই ওই স্বপ্ন আর ভবিষ্যতের কিছু দেখে খুব উপভোগ করেছে। তার জন্য নিজেকে অন্যের থেকে ভিন্ন এবং খুবই দামী মনে করছো?

–মোটেই না, একবারও মনে করি না, হ্যারি কথাটা বলে ওর পকেটে হাত ঢুকিয়ে জাদুদণ্ডটা স্পর্শ করলো।

 স্নেইপ খনখনে গলায় বললেন, হতে পারে পটার, কারণ তুমি দুটোর মধ্যে কোনটাই নও। ডার্কলর্ড ডেথ ইটারসদের কি বলছেন, কেন বলছেন তা তোমার জানার দায়িত্ব নয়।

–করছি না, ভাবছি না। জানি ওগুলোতো আপনার কাজ, ঠিক বলেছি? হ্যারি পটার বললো।

–ঠিক বলেছো পটার, আমার কাজ। এসো এখন আমাদের কাজ শুরু করি, তুমি প্রস্তুত তো? স্নেইপ বললেন।

স্নেইপ জাদুদণ্ড তুলে বললেন–এক, দুই, তিন… লেগিলিমেন্স!

হ্যারি চোখ বন্ধ করলো দেখলো লেক থেকে শত শত ডিমেন্টর ওর দিকে ধেয়ে আসছে। একাগ্রতার জন্য যথাসম্ভব ভয় কাটিয়ে ওঠবার চেষ্টা করলো। ডিমেন্টররা ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ও ওদের হুডের তলায় কালো গভীর গর্ত দেখতে পাচ্ছে, তা সত্ত্বেও দেখছে স্নেইপ হ্যারির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন, এবং কিছু বিড় বিড় করে বলছেন। হঠাৎ সেই ডিমেন্টররা ঝাঁপসা হয়ে গেলো স্নেইপকে ঝাঁপসা থেকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পেলো।

হ্যারি ঠিক সেই সময় ওর জাদুদণ্ডটা উঁচু করলো।

–প্রোটেগো!

স্নেইপ টলমল করতে লাগলেন–ওর হাতের জাদুদণ্ড হাত থেকে ওপোরে উড়ে গেলো, হ্যারির থেকে অনেক দূরে। তারপর হঠাৎ হ্যারির মন নানা স্মৃতিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। সেই সব স্মৃতি তার নয়। একজন বাঁকা নাকের লোক যে গুটিসুটি মেরে বসে থাকা এক মহিলাকে ধমকাচ্ছে। একটা কালো চুলওয়ালা ছেলে এক কোনে বসে কেঁদে চলেছে। মাথায় তেল চপচপে চুলওয়ালা একজন কিশোর একটা অন্ধকার ঘরে একলাটি বসে রয়েছে আর ওর হাতের জাদুদণ্ডটা ছাদের দিকে তুলে মাছি মেরে চলেছে। একটি মেয়ে, হাড্ডিসার একটা ছোট ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসছে আর ছেলেটা একটা ঝাড়ুতে ওঠবার ব্যর্থ চেষ্টা করে চলেছে।

অনেক হয়েছে।

হ্যারির মনে হলো এক অদৃশ্য হাত ওর বুকে হঠাৎ সজোরে আঘাত করলো। ও কয়েক পা পিছিয়ে গেলো সেই আঘাতে। স্নেইপ ঘরের দেয়ালের কাঠের তাকে সজোরে ছিটকে পড়ে গেলেন… কিছু ভেঙে যাবার বা ফেটে যাবার শব্দ শুনতে পেলো। ও স্নেইপের দিকে তাকিয়ে দেখলো স্নেইপ কাঁপছেন, তার মুখ চোখ বিবর্ণ।

হ্যারি বুঝতে পারলো ওর আলখেল্লার পেছনটা ভিজে গেছে। খুব সম্ভব একটা জলের জার ভেঙে গেছে। দেখতে পেলো জারের মধ্যে রাখা পোকাগুলো ঘরের মেঝেতে পড়ে কিলবিল করছে।

রিপ্যারো–স্নেইপ হিস হিস করে বলার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙা বোতল/ জার শুধু জোড়া লেগে গেলো নয়, ভেতরের সবকিছু আগের মতো ভর্তি হয়ে গেলো! পটার, অবশ্যই কিছু উন্নতি লক্ষ্য করছি। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বড় বড় শ্বাস ফেলতে ফেলতে পেনসিভের ভেতর তার কিছু চিন্তা ভরে দিয়ে লেসন শুরু করলেন। বললেন, আমি ঠিক মনে করতে পারছিনে শিও চার্ম ব্যবহার করা সম্বন্ধে তোমাকে কিছু বলেছি কিনা। ওই মন্ত্রটা কিন্তু খুব দরকারি ও কাজের।

হ্যারি চুপ করে রইলো। কিছু বলা মানে বিপদের ব্যাপার! হ্যারি জানে সবেমাত্র ও স্নেইপের শৈশবের স্মৃতিগুলো ভেঙে দিয়েছে। স্নেইপ কাঁদছেন আর তার বাবা-মা তাকে বকে বকে চুপ করাচ্ছেন। হ্যারি ওইরকম একদৃশ্যে স্নেইপ সম্বন্ধে ভাবতে পারে না।

স্নেইপ বললেন, কি বলো আর একবার চেষ্টা করা যাক।

হ্যারি ভয়ে শিউরে উঠলো, স্নেইপের ব্যাপারে যা ঘটিয়েছে কড়ায় গণ্ডায় তার মাশুল দিতে হবে। ওরা যে যার জায়গায় গিয়ে আবার দাঁড়ালো। হ্যারির মনে হলো ওর মাথার ভেতরটা আগের চাইতে অনেক অনেক বেশি ফাঁকা হয়ে গেছে।

তিন গোনার পর হাতের জাদুদণ্ড তুলে খুব জোর দিয়ে স্নেইপ বললেন লেগিলিমেন্স!

হ্যারি পটার ডিপার্টমেন্ট অফ মিস্ট্রিজের সামনের করিডোর ধরে হাঁটছে, কালো পাথরের দেওয়াল দুধারে, শুধু জ্বলন্ত মশাল ছাড়া করিডোরে আর কিছু নেই। শেষ প্রান্তের কালো দরজাটা আরও যেনো বড় হয়ে গেছে। ও এত দ্রুত সেদিকে হাঁটছে যে গতি না কমালে দরজায় প্রচণ্ড আঘাত পাবে। মাত্র একফুট ব্যবধান থাকতে ও দেখতে পেলো অন্ধকার নেই, হালকা সবুজ আলোতে দরজাটা চক চক করছে।

তারপর দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেলো! শেষ পর্যন্ত ও খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পেরেছে। ঘরটা গোল, সেই ঘরের দেয়াল, মেঝে সবই কালো রঙ এর। চারধারে সবুজ আলো জ্বলছে মোমবাতি থেকে। সেই ঘরের অনেকগুলো বাইরে যাবার দরজা। ও বাইরে যেতে চাইলো; কিন্তু কোন দরজা দিয়ে ও বাইরে যাবে বুঝতে পারছে না।

পটার!

হ্যারি ওর বন্ধ চোখ খুললো। আবার স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে মেঝেতে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো। ও ভীষণ হাঁফাচ্ছে। মিনিস্ট্রি অফ মিস্ট্রিজ-এর করিডোর দিয়ে ও দৌড়াতে দৌড়াতে কালো দরজা দিয়ে একটা গোলাকার ঘরে ঢুকে দৌড়ে দৌড়ে এসেছে।

স্নেইপ ওর সামনে দাঁড়িয়ে, প্রচণ্ড রাগে যেনো ফেটে পড়লেন। বললেন, যা যা দেখেছো খুলে বলো।

হ্যারি কোনো রকমে দাঁড়িয়ে বললো, আমি মনে করতে পারছি না।

দেয়ালে ধাক্কা লেগে মাথার পেছনটা ফুলে গেছে, জ্বর জ্বর লাগছে। ও বলল, যা দেখেছি, এর আগে আমি কখনও তা দেখিনি। আমি আপনাকে আগেও বলেছি, আমি একটি দরজার স্বপ্ন দেখেছি যা কখনোও খোলা অবস্থায় ছিলো না।

–তুমি যথাযথ পরিশ্রম করছো না।

যেকোন কারণেই হোক হ্যারির স্নেইপকে আরও বেশি রাগি মনে হলো।

–পটার, তুমি শুধু কুঁড়ে নও, ছিচকে কাঁদুনেও। আশ্চর্য, ভাবতে পারছিনে ডার্কলর্ড..।

–স্যার দয়া করে আমাকে কী বলবেন? আমরা সবাই ভোল্ডেমর্টকে ডার্কলর্ড বলি কেন? ডেথইটাররা তো তাকে ওই নামে ডাকে শুনেছি।

স্নেইপ নাকে একটা শব্দ করে মুখ খুললেন–ঘরের বাইরে কোনো এক জায়গা থেকে একটি মেয়ের আর্তনাদ শুনতে পেলো।

স্নেইপ মাথায় ঝাঁকুনি দিয়ে মুখ তুললেন। চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বললেন, কি ব্যাপার…?

হ্যারি কানে নানারকম শব্দ আর তার প্রতিরোধের শব্দ শুনতে পেলো, মনে হলো শব্দটা এনট্রেন্স হল থেকে আসছে। স্নেইপ হ্যারির দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালেন।

–পটার এখানে আসার আগে কোনও অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলে?

হ্যারি মাথা নাড়লো। আবার সেই মেয়েটা চিৎকার করে উঠলো। স্নেইপ তার জাদুদণ্ডটা হাতে নিয়ে তার অফিসঘরের দরজা পর্যন্ত গেলেন। তারপর ঘর থেকে বাইরে গেলেন।

গোলমাল, চেঁচামেচি, হৈ হৈ ঠিকই এনট্রেন্স হল থেকে ভেসে আসছিলো। অন্ধকার পাতাল ঘর থেকে যে পাথরের সিঁড়িটা ওপোরে উঠে গেছে সেই দিকে ও এগিয়ে গেলো। এনট্রেন্স হলে গিয়ে দেখলো ঘরে তিল ধারণের স্থান নেই। ছাত্ররা গ্রেটহল থেকে স্রোতের মত বেরিয়ে আসছে। সেখানে তখনও ডিনার পর্ব শেষ হয়নি। ও দেখলো আরও অনেকে পাথরের সিঁড়ি দিয়ে হলের দিকে আসছে। হ্যারি লম্বামতন এক স্লিদারিনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে দেখলো যারা সব এসেছে তারা গোলাকার এক বৃত্ত করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অনেকেরই মুখে চোখে আতঙ্কের আর ভয়ের ছাপ! হ্যারির ঠিক বিপরীতে হলের এক ধারে ম্যাকগোনাগল দাঁড়িয়ে রয়েছেন। মুখ দেখে মনে হয় খুব মুষড়ে পড়েছেন।

প্রফেসর ট্রিলনী একহাতে জাদুদণ্ড অন্য হাতে শূন্য জেরির বোতল নিয়ে এনট্রেন্স হলের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাকে কেমন যেনো পাগল পাগল দেখাচ্ছে। তার মাথার চুল খুলে গেছে, চশমাটা ঝুলে পড়েছে। সেই স্কুলে পড়া চশমার একটা কাঁচ দিয়ে একটা চোখ বড় বড় দেখাচ্ছে।

তার গায়ের শাল কাধ থেকে ঝুলে মেঝেতে লুটোপুটি খাচ্ছে। দেখে মনে হয় আলখেল্লায় পা জড়িয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। তার পাশে দুটি ট্রাঙ্ক পড়েছে, তার মধ্যে একটি উল্টে রয়েছে। দেখে মনে হয় কেউ যেন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। ট্রিলনী অদ্ভুত এক ভয়ার্ত দৃষ্টিতে একটা কিছুর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। হ্যারি অবশ্য দেখতে পেলো না সিঁড়ির তলায় কি দেখে তিনি আতঙ্কিত।

–না, ট্রিলনী চিৎকার করে উঠলেন না! না, এটা হতে পারে না, হতে পারে, আমি মানতে পারি না।

একটি মেয়ে সরু সরু উঁচু গলায় যেনো ব্যাঙ্গের সুরে বলে উঠলো, আপনি কি একটুও জানতে পারেননি এটা হতে পারে? হ্যারি টিলনীর ডানধারে একটু সরে গিয়ে দেখতে পেলো যাকে জুলন্ত চোখে বলছেন তিনি আমব্রিজ!

আমব্রিজ বলছেন, আপনি একটি অপদার্থ! আগামীকালের আবহাওয়া কেমন হবে তার পূর্বাভাস দিতে পারেন না! আমার ইন্সপেকসনের সময় আপনার ছাত্রছাত্রীদের পড়াবার সময় দেখেছি আপনি শুধু অযোগ্য নয় আপনার দ্বারা তাদের পড়াশুনোর কিছু উন্নতি সম্ভব হবে না। এইসব কারণে আপনাকে বরখাস্ত করা ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।

প্রফেসর ট্রিলনীর দুচোখ দিয়ে ঝর ঝর করে জল পড়ছে। অপমানিত হয়ে থর থর করে কাঁপছেন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন, আপনি কিছুতেই তা পারেন না। আমি হোগার্টসে ষোল বছর ধরে শিক্ষকতা করছি, হোগার্টস আমার ঘর বাড়ি হয়ে গেছে।

–এক সময়ে আপনার ঘর বাড়ি ছিলো, এখন আর নয়, প্রফেসর আমব্রিজ বললেন।

হ্যারি দেখলো আমব্রিজের চোখে-মুখে আনন্দ উল্লাসের ঝড়! ব্যাঙ্গের মতো চোখে মিসেস ট্রিলনীকে দেখছেন এক সময়ে মৃদু মৃদু হাসছেন। ট্রিলনী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার একটা ট্রাঙ্কের ওপোর পড়ে গেলেন। প্রফেসর আমব্রিজ নিষ্ঠুর কণ্ঠে বললেন, মাত্র একঘণ্টা আগে ম্যাজিক মন্ত্রণালয় আমার বেকমেন্ডসনের ওপোর দস্তক্ষত করেছেন। আপনি আর এখানে থাকতে পারেন না। অনুগ্রহ করে হল থেকে জিনিসপত্র নিয়ে চলে যান। আপনি আমাদের আর দায়গ্রস্থ করবেন না।

ট্রিলনীর দুঃখ, অপমানের ওপোর যেন আমব্রিজের কোনও দায়িত্ব নেই। হুকুম করেছেন, আর সেই হুকুম যত শিগগির সম্ভব ট্রিলনী পালন করুন এটাই তার আনন্দ–মনোবৃত্তি। ট্রিলনী কাঁদলে তার কিছু যায় আসে না। দায়িত্ব দিয়েছে ম্যাজিক মন্ত্রণালয়, সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। কারও দুঃখের ওপোর মন্ত্রণালয়ের কঠোর নির্দেশ টলে না। হ্যারি ওর পাশে কারও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ শুনে পাশে তাকালো। দেখলো ল্যাভেন্ডর আর পার্বতী কাঁদছে। তারা দুজনে দুজনের গলা জড়িয়ে রয়েছে। তারপরই ও শুনতে পেলো পদশব্দ। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ভিড়ের মধ্য থেকে বেরিয়ে সোজা ট্রিলনীর পাশে দাঁড়ালেন। কাছে গিয়ে ট্রিলনীর পিঠে হাত বুলাতে লাগলেন স্বান্তনার ভঙ্গিতে। আলখেল্লার ভেতর থেকে একটা বড় রুমাল বার করে চোখ মুছতে লাগলেন।

–আরে সিবিল কাঁদে না, চুপ করো, শান্ত হও। নাও এটা নিয়ে নাক, চোখ মোছো। তুমি যা ভাবছো তা হবে না। আমি বলছি কেউ তোমাকে হোগার্টস থেকে সরাতে পারবে না।

–তাই নাকি প্রফেসর ম্যাকগোনাগল? ভুতুড়ে গলায় কথাটা বলে দুএক পা এগিয়ে গিয়ে বললেন, আমার আদেশের বিরুদ্ধেতোমার কিছু বলার অধিকার কে দিয়েছে জানতে পারি?

–আমার অধিকার। এক গম্ভীর অকম্পিত কণ্ঠস্বর। সামনের দরজাটা হাট করে খোলা। সব ছাত্রছাত্রী, স্টাফেরা সচকিত হয়ে দেখলো ডাম্বলডোর সোজা দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হ্যারি জানে না হেডমাস্টার বাইরের মাঠে কেন দাঁড়িয়েছিলেন, জানার দরকার নেই। তার উপস্থিতি আর কণ্ঠস্বরে এন্ট্রেল হলের সামনের আবহাওয়া পাল্টে গেলো। দরজার পেছনে অন্ধকার, জমাট কুয়াশা! কথাটা বলে ডাম্বলডোর ধীর পদক্ষেপে গোলাকার বৃত্তের একধার দিয়ে প্রফেসর ট্রিলনীর পাশে দাঁড়ালেন। ট্রিলনী তখনও কাঁদছেন। তার চোখের জল টপ টপ করে ট্রাঙ্কে পড়ছে। ট্রাঙ্কের পাশে রয়েছেন ম্যাকগোনাগল।

–আপনি, প্রফেসর ডাম্বলডোর? আমব্রিজের মুখে অস্বস্তিকর বিশ্রী হাসি, আমি অত্যান্ত দুঃখিত প্রফেসর ডাম্বলডোর। আমার মনে হয় বর্তমান পরিস্থিতি আপনি সঠিক বুঝতে পারছেন না। আমব্রিজ একটা পাকানো পার্চমেন্ট তার আলখেল্লার পকেট থেকে বের করে দেখিয়ে বললেন, আদেশ আমার আর মিনিস্টার অফ ম্যাজিকের স্বাক্ষরিত। এডুকেশনেল ডিক্রির ধারা তেইশ অনুসারে, হোগওয়ার্টসের উচ্চ তদন্তকারীকে অধিকার দেওয়া হয়েছে তিনি যেকোনো শিক্ষককে তার অকর্মন্যতা ও ঠিকঠাক শিক্ষা না দেওয়ার জন্য বরখাস্ত করতে পারেন। ডাম্বলডোর মৃদু মৃদু হাসছেন। সেই সরল হাসিতে কোনো রাগ–বিদ্বেষ–অভিমান নেই।

–তাহলে! আমব্রিজ বললেন, আমি নতুন একজন ডিভিএসন টিচার এপয়েন্ট করলে তারতো একটা থাকার জায়গা করতে হবে।

ডাম্বলডোর আবার সুন্দরভাবে হেসে বললেন–না, না তার কোনো অসুবিধে হবে না। কিন্তু আমি যে নতুন এক ডিভিএসন টিচার ঠিক করেছি, তিনি একলা থাকতে পছন্দ করবেন।

–আপনি ঠিক করেছেন? আমব্রিজ তীক্ষ্ম কণ্ঠে বললেন।

–আমি কি আপনাকে মনে করিয়ে দিতে পারি এডুকেশনাল ডিক্রি নম্বর বাইশের ধারা অনুযায়ী…।

–আমি জানি মন্ত্রণালয় অবশ্যই একজন যোগ্য প্রার্থীকে এপয়েন্ট করতে পারেন যদি হেডমাস্টার প্রার্থী পেতে অসমর্থ হন।

ডাম্বলডোর বললেন, এই সুযোগে আমি বলছি, একজনকে পেয়েছি, তার সঙ্গে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে চাই!

ডাম্বলডোর খোলা দরজার দিকে তাকালেন। তখন আর বাইরে ঘন কুয়াশা নেই, একটু একটু করে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। হ্যারি ঘোড়ার পায়ের শব্দ শুনতে পেলো। হলের মধ্যে ভয় মিশ্রিত হালকা গুঞ্জন শোনা গেলো। যারা খোলা দরজার কাছে দাঁড়িয়েছিলো তারা তাড়াতাড়ি পিছু হটে গেলো। কেউ কেউ কারও গায়ের ওপোর পড়ে গেলো। নতুন যিনি আসছেন তার আসার পথ পরিষ্কার করে দিলো ছাত্রছাত্রীরা।

সেই কুয়াশার মধ্য থেকে একজন বেরিয়ে এলেন। হ্যারির যেনো মনে হলো তাকে কোথায় দেখেছে, হ্যাঁ ভয়াবহ অন্ধকার এক রাতে নিষিদ্ধ অরণ্যে। মাথায় তার সাদা চুল, গভীর নীল দুই চোখ, তার মাথা আর ওপরের দেহ মানুষের মতো হলোও পিছনটা নিম্নাঙ্গ ঘোড়ার মতো। (সিনট্যাক্স অর্ধ মানব, অর্ধ অশ্ব)।

হতবুদ্ধি এবং নির্বাক আমব্রিজকে খুশি মনে হাসতে হাসতে ডাম্বলডোর বললেন, প্রফেসর আমব্রিজ। আপনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই, ইনি ফিরেঞ্জ, আশাকরি আপনার একে যোগ্য মনে হবে।

সকল অধ্যায়

১. ০১. ডাডলি ডিমেন্টেড
২. ০২. অ্যা পেক অব আউলস
৩. ০৩. দ্য অ্যাডভান্স গার্ড
৪. ০৪. নাম্বার টুয়েলভ, গ্রিম্মল্ড প্লেস
৫. ০৫. দ্য অর্ডার অব দ্য ফনিক্স
৬. ০৬. দ্য নোবল অ্যান্ড মোস্ট এনসিয়েন্ট হাউজ অব ব্ল্যাক
৭. ০৭. দ্য মিনিস্ট্রি অব ম্যাজিক
৮. ০৮. দ্য হিয়ারিং
৯. ০৯. দ্য উওস অব মিসেস উইসলি
১০. ১০. লুনা লাভগুড
১১. ১১. দ্য সর্টিং হ্যাটস নিউ সং
১২. ১২. প্রফেসর আমব্রিজ
১৩. ১৩. ডিটেনসন উইথ ডলোরেস
১৪. ১৪. পার্সি অ্যান্ড প্যাডফুট
১৫. ১৫. দ্য হোগার্টস হাই ইনকুইজিটর
১৬. ১৬. ইন দ্য হগস হেড
১৭. ১৭. এডুকেসনাল ডিক্রি নাম্বার টুয়েন্টি-ফোর
১৮. ১৮. ডাম্বলডোরস আর্মি
১৯. ১৯. দ্য লায়ন অ্যান্ড দ্য সারপেন্ট
২০. ২০. হ্যাগ্রিডস টেল
২১. ২১. দ্য আই অব দ্য স্নেক
২২. ২২. সেন্ট মাংগোস হসপিটাল ফর ম্যাজিকাল ম্যালাডিস অ্যান্ড ইনজুরিস
২৩. ২৩. ক্রিস্টমাস অন দ্য ক্লোজড ওয়ার্ড
২৪. ২৪. অকলামেনসি
২৫. ২৫. দ্য বীটল অ্যাট বে
২৬. ২৬. সিন অ্যান্ড আনফোরসিন
২৭. ২৭. দ্য সেনট্যুর অ্যান্ড দ্য স্নিক
২৮. ২৮. স্নেইপস ওয়ারস্ট মেমরি
২৯. ২৯. কেরিয়ারস এডভাইস
৩০. ৩০. গ্রপ
৩১. ৩১. আউলস
৩২. ৩২. আউট অব দ্য ফায়ার
৩৩. ৩৩. ফাইট অ্যান্ড ফ্লাইট
৩৪. ৩৪. দ্য ডিপার্টমেন্ট অব মিসটেরিস
৩৫. ৩৫. বিয়ন্ড দ্য ভেইল
৩৬. ৩৬. দ্য ওনলি ওয়ান হি এভার ফিয়ার্ড
৩৭. ৩৭. দ্য লস্ট অব প্রফিসি
৩৮. ৩৮. দ্য সেকেন্ড ওয়ার বিগিন্স

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন