১৫. ট্রেনিংয়ের ধরন পাল্টেছে

হুমায়ূন আহমেদ

ট্রেনিং ক্যাম্প।

লরেনকো মারকুইস।

২৩ ডিসেম্বর। মঙ্গলবার।

মোজাম্বিক, আফ্রিকা।

ট্রেনিংয়ের ধরন পাল্টেছে। এন্ড্রু জনাথনের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রবিনসন। তার ট্রেনিং জনাথনের মতো ভয়াবহ নয়। রবিনসন কথা বলে নিচু গলায় এবং হাসিমুখে। কমান্ডোদের জন্যে এটা একটা বড় পাওনা। জনাথনকে তারা ভয় করে। ভালবাসে রবিনসনকে।

মঙ্গলবারের ভোরবেলায় রবিনসন সবাইকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। তারা প্রায় চল্লিশ মিনিট চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। জনাথনের বেলায় তা হত না। এই চল্লিশ মিনিট সে কাটাত ফুট ড্ৰিল করিয়ে।

রবিনসনের চোখে সানগ্লাস। মাথার ধবধবে সাদা চুল বাতাসে উড়ছে। তার হাতে একটা কফির মগ। সে কফিতে চুমুক দিচ্ছে এবং এক জন এক জন করে সবার মুখের দিকে তাকাচ্ছে। তার মাথায় কোনো পরিকল্পনা আছে নিশ্চয়ই।

কমান্ডোরা, এবার আমরা ট্রেনিংয়ের মূল পর্যায়ে এসে গেছি। তোমরা তোেমাদের সামনে হার্ডবোর্ডের যে-জিনিসগুলি দেখছ, সেগুলি ফোর্টনকের আদলে তৈরি। ফটোগ্রাফ থেকে তৈরি করা হয়েছে। কাজেই মোটামুটি নিখুত বলা চলে। যে-সব জায়গায় সেন্ট্রি থাকে, সে-সব জায়গায় ডামি রাখা হয়েছে। রাস্তা দেখানো হয়েছে চকের গুঁড়ো দিয়ে। যেসব জায়গায় ডাবল লাইন দেখছ, সে-সব রাস্তা একটু উঁচু। ট্রিপল লাইন মানে আরো উঁচু।

লক্ষ করছ নিশ্চয়ই, ফোর্টনক কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা। তবে সুখের বিষয়, কাঁটাতারের সঙ্গে কোনো অ্যালার্ম সিস্টেম নেই। কাজেই আমরা সহজেই কাঁটাতার কেটে ভেতরে ঢুকতে পারব। আমাদের হাতে চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্ল্যান আছে। প্রতিটি প্ল্যানই আমরা পরীক্ষা করব। কোন প্ল্যান নেওয়া হবে সেটা ঐ মুহূর্তেই ঠিক করা হবে। হয়তো এমন হতে পারে, সব কটি প্ল্যান বাতিল করে আমাদের নতুন কিছু ভাবতে হবে।……

যেমন ধর, আমরা জানি ফোর্টনকে বর্তমান সৈন্যসংখ্যা তিন শ পঞ্চাশ। গিয়ে দেখলাম রাতারাতি সেখানে এক ডিভিশন সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। তখন নিশ্চয়ই আমাদের তৈরি প্ল্যান খাটবে না। কী বল?

স্যার, সেরকম কোনো সম্ভাবনা কি আছে?

থাকবে না কেন? নিশ্চয়ই আছে। কেন, ভয় লাগছে?

কমান্ডোদের মধ্যে বেশ কয়েক জন উঁচু গলায় হেসে উঠল। এমন করাটা জনাথনের সঙ্গে সম্ভব ছিল না।

প্রথম পরিকল্পনাটি এরকম—আমরা দক্ষিণ দিক থেকে আসব—এই যে দেখ, এইদিক থেকে। আট জন সেন্ট্রিকে শেষ করবার দায়িত্ব থাকবে আট জনের। ওপর। কাজটি করতে হবে বেয়োনেটের সাহায্যে, কোনক্রমেই গুলি করা যাবে না। ঠিক একই সময় দুজন চলে যাবে কারারক্ষী মাওয়ার বাসভবনে। মাওয়া থাকে এইখানে—দোতলায়। দোতলায় ওঠার সিঁড়ি আছে। সিঁড়িতে কোনো দরজা নেই। মাওয়ার বাড়ির সামনে থাকে এক জন সেন্ট্রি। তাকে সামলানোর পর এরা ঢুকবে মাওয়ার ঘরে এবং চাবি নিয়ে দ্রুত চলে আসবে এই জায়গায়। এখানে আছেন জুলিয়াস নিশো। তারা চাবি নিয়ে এখানে এসেই দেখবে, আমি সেলের সামনে অপেক্ষা করছি।

স্যার, যদি চাবি না-পাওয়া যায়?

না-পাওয়া গেলেও কোনো সমস্যা হবে না। আমাদের সঙ্গে তালা ভাঙার যন্ত্র আছে। তবে আমি সেটা ব্যবহার করতে চাই না। এতে অনেক সময় নষ্ট হবে। আমাদের হাতে এত সময় নেই।

এবার আমি তোমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ব্যারাকেই সব সৈন্যরা থাকবে। খুব সম্ভব ঘুমিয়ে থাকবে। আমাদের পনের জনের একটি দলের ওপর দায়িত্ব থাকবে ব্যারাক সামলানোর।

কিভাবে সামলানো হবে?

ভালোভাবেই সামলাতে হবে। আমরা পেছনে কিছু রেখে যাব না। এখন পর্যন্ত পঁচিশ জন কমান্ডো ব্যবহার করা হয়েছে। আমাদের হাতে আছে আরো পঁচিশ জন। ঠিক না?

জ্বি স্যার।

এই পঁচিশ জনের দশ জন থাকবে রিজার্ভে। এদের দায়িত্ব হচ্ছে নিশোকে ঠিকমত বের করে নিয়ে আসা।

বাকি পনের জনের?

বাকি পনের জনের দায়িত্ব ফোটনকে নয়। তারা সরাসরি চলে যাবে এয়ারপোর্টে। সেটা তারা দখল করবে এবং আমাদের জন্যে অপেক্ষা করবে। তাদের দায়িত্বে থাকবে এমন একজন লোক, যার ওপর ভরসা করা চলে। বেন ওয়াটসন। বেন ওয়াটসন হচ্ছে একাই একটি ব্রিগেড। তোমরা যারা তার সঙ্গে কাজ করবে, তারাই সেটা টের পাবে। ফোর্টনকের জন্যে যেমন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে, এয়ারপোর্টের জন্যে সেরকম কিছু তৈরি করা হয় নি। তার কারণ, বেন ওয়াটসন কোনো রকম প্ল্যানিং-এ বিশ্বাসী নয়। একেক জনের কর্মপদ্ধতি একেক রকম।…….

এখন আমরা এ-জায়গা থেকে পঁচিশ গজ দূরে চলে যাব। সবাইকে আমি কাজ ভাগ করে দেব। আমি দেখাব, কী করে আসতে হবে, কোন দিক দিয়ে আসতে হবে। এবং আমরা চেষ্টা করব, কত কম সময়ে কাজটা শেষ করতে পারি সেটা দেখতে। তোমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের হাতে সময় খুব কম, এক ঘন্টা কুড়ি মিনিট। এর মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করে প্লেনে উঠতে হবে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করতে চাও?

কাঁটাতারের বেড়া কে কাটবে?

রবিনসন হেসে ফেলল এবং হাসতে-হাসতে বলল, আমি। ঐ কাজটি আমি খুব ভালো করতে পারি। এস, এখন শুরু করা যাক। প্রথম প্ল্যানটি আমরা এখন দেখব। স্কোয়াড, অ্যাটেনশন। টু দা লেফট, কুইক মার্চ।

সকল অধ্যায়

১. ০১. জুলিয়াস নিশো
২. ০২. কিছু কিছু অত্যন্ত বুদ্ধিমান মানুষ আছে
৩. ০৩. অল্পবয়সী মেয়েরা সহজেই হতাশ হয়
৪. ০৪. ফকনার ক্রমেই বিরক্ত হচ্ছিল
৫. ০৫. জুলিয়াস নিশোর ঘুম ভাঙল
৬. ০৬. জেনারেল সিমসন
৭. ০৭. এন্ড্রু জনাথন
৮. ০৮. বেন ওয়াটসনকে ডেকে তোলা হল
৯. ০৯. টিলার ওপর চমৎকার বাংলো
১০. ১০. গামাল হাসিম লোকটি স্বল্পভাষী
১১. ১১. পঞ্চাশ জনকে রিক্রুট করার দায়িত্ব
১২. ১২. সত্তর জন সদস্যের চুক্তিপত্রে সই
১৩. ১৩. ট্রেনিং ক্যাম্প
১৪. ১৪. জুলিয়াস নিশোর শরীর খুব খারাপ
১৫. ১৫. ট্রেনিংয়ের ধরন পাল্টেছে
১৬. ১৬. মোরান্ডা
১৭. ১৭. মেসঘরে ঢুকে সবাই অবাক হল
১৮. ১৮. ইঞ্জিনের হুম-হুম গর্জন
১৯. ১৯. চারদিকে অন্ধকার
২০. ২০. মাওয়া জেগে উঠল
২১. ২১. এয়ারপোর্টে সবাই অপেক্ষা করছে
২২. ২২. আফ্রিকার মতো দেশ
২৩. ২৩. ফকনার দাঁড়িয়ে আছে
২৪. ২৪. জেনারেল ডোফা বিস্মিত
২৫. ২৫. রবিনসন এগিয়ে গেল ফকনারের দিকে
২৬. ২৬. এক ঘন্টা একুশ মিনিটের মাথায়
২৭. ২৭. উসসি নদীতে ডোফা
২৮. ২৮. কবরের শোকগাঁথা

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন