বিমল ঘোষ


সেদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বেঙা দেখে-চেঙা হাজির৷ তার বগলে একখানা খবরের কাগজ! কী ব্যাপার! চেঙা বলল-"বেঙা দাদা, ভারি জোর খবর৷" খবরের কাগজখানা খুলে ধরল বেঙার সামনে৷ বেঙাকে দেখাল-বড়ো বড়ো হরফে লেখা-ফটো প্রতিযোগিতা-ভালো ফটো তুলে পাঠাতে পারলে পাঁচ হাজার, দু-হাজার নয়তো কম সে কম এক হাজার টাকাও মিলতে পারে৷ চেঙা বলল-"বেঙা দাদা তোমার ক্যামেরাটা বার করো৷ চলো বেরিয়ে পড়ি দু-জনে ফটো তুলতে৷"
বেঙা ভেবে দেখল-চেঙার মতলবটা খারাপ নয়৷

কাজেই বেঙা চটপট হাত-মুখ ধুয়ে, চা-পাউরুটি খেয়ে নিল৷ ওর সোনামামা উপহার দিয়েছিল একটা ক্যামেরা-সেটা দেরাজ থেকে বার করল৷ ক্যামেরাটাকে এর আগে আর কোনোদিন বেঙা কাজে লাগায়নি৷ তবু চেঙার কাছে ভাবখানা দেখাল এমনি যে, যেন ফটো তোলার ব্যাপারে ওর জুড়ি নেই৷ চেঙাও এমন বোলচাল দিল-যেন সেও খুব ভালো ছবি তুলতে পারে৷ তারপর দু-জনে সাতসকালেই বেরিয়ে পড়ল বাড়ি থেকে৷ বেঙা ক্যামেরা কাঁধে ঝুলিয়ে খুব চালের মাথায় চলল এগিয়ে৷ চেঙা চলল তার পাশে পাশে৷

ওদের বাড়ি থেকে অনেক দূরে হিজলবন৷
সেই বনে গিয়ে ঢুকল ওরা৷ বনের ভেতরে ঢুকে বেঙার হাত নিশপিশ করে৷ কেবলই মনে হয়-এ জিনিসটার ছবি তুলি-ও জিনিসটার ছবি নিই৷ চেঙা কেবলই বাধা দেয়৷ বলে-"বেঙা দাদা, অমন ধড়ফড় কোরো না৷ আজেবাজে জিনিসের ছবি তুলে নামও হবে না, ইনামও পাবে না৷"
বেঙা রেগে যায়, বলে-"থাম তুই! হেঁটে হেঁটে পা ব্যথা৷ বেলা এক প্রহর পার, সে খেয়াল আছে?" বেঙা একটা আশশেওড়া গাছের ফটো তোলবার তোড়জোড় করছে৷ এমন সময় চেঙা চেঁচিয়ে ওঠে-"আরে থামো! ওই দেখো! নাদাভুঁড়ি হাতি ছুটে চলেছে৷"

হাতি ছুটে চলেছে শুনেই বেঙা বেজায় খুশি! বেঙা ঘুরে দেখে সত্যিই তো তাই৷ চেঙা বলে-"চলো বেঙা দাদা ওদিকটাতেই এগোই৷ দেখি হাতিটা কোথায় যায়, কী করে? তাগবাগ বুঝে ওর যদি একটা ফটো নিতে পার, তাহলে পাঁচ হাজার টাকা মারে কে!"
চেঙার কথায় বেঙাও নেচে ওঠে৷ গুটিগুটি দু-জনে ক্যামেরা বাগিয়ে নিয়ে আরও খানিক এগিয়ে যায়৷ গিয়ে দেখে-হাতিটা শুঁড় জড়িয়ে একটা গাছ টানাটানি করছে৷

চেঙা বলে-"বেঙা দাদা৷ আর দেরি নয়৷ চটপট কাজ সারো৷" বেঙা বলে-"দাঁড়া, আগে ফোকাস করি৷"
ফোকাস করতে গিয়ে বেঙা হয়রান৷ এটা ঘোরায়, ওটা ঘোরায়-ফোকাস আর হয় না৷ চেঙাও ঝুঁকে পড়েছিল ক্যামেরাটার ওপর৷ নাদাভুঁড়ি হাতিটা দূর থেকেই ওদের দেখতে পেয়েই চমকে উঠল৷ ভাবল-চেঙা-বেঙা অমন ঝুঁকে পড়ে তার দিকে তাক করছে কেন? তবে কি ওদের কোনো খারাপ মতলব আছে?

নাদাভুঁড়ি রেগে-মেগে হাঁক হাঁক করে ডাক ছাড়ল৷ চার পা তুলে তেড়ে এল চেঙা-বেঙাকে৷ চেঙা-বেঙা চোখ-কান বুজে ছুটল-বাপরে! মারে! চিৎকার করে৷ বেঙার ক্যামেরা, চেঙার জলের বোতল ছিটকে পড়ল এধারে-ওধারে! চেঙার জলের বোতলটা ছিটকে পড়ে আটকে গেল নাদাভুঁড়ির গজদাঁতে! সেটা পেয়ে নাদাভুঁড়ি ভারি খুশি৷ আর বেশি দাপাদাপি করল না৷ বোতল পেয়ে থপথপিয়ে নেচে নেচে চলল তার বাড়ির দিকে৷
চেঙা-বেঙাও বনের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল৷ বেঙার তখনও ভয়ে কাঁপছে হাত-পা৷

চেঙা বলল-"বেঙা দাদা, ভাবনা কীসের-ক্যামেরাটা তো নেয়নি নাদাভুঁড়ি! ওই দেখো-পড়ে রয়েছে৷"
বেঙা বলল-"ক্যামেরাতে আর আমি হাত দেব না, ছবি তুলতে হয় তুমিই তোলো বাপু৷"
চেঙাকে ছবি তোলবার হুকুম দিয়েছে বেঙা৷ আর তাকে পায় কে!
চেঙা দৌড়ে গিয়ে ক্যামেরাটা কুড়িয়ে নিয়ে এল৷ লাফিয়ে লাফিয়ে চলল আর একদিকে৷

বেঙা বলল-"ওদিকে চললি কোথা?"
চেঙা বলল-"আমড়া গাছে তুতু-পুতু কাঠবেড়ালি থাকে-তার ছবি তুলব৷"
বেঙা বলল-"তুতু-পুতু যেমন ছটফটে-তেমনি ভীতু-গাছ থেকে নামবেই না৷"
চেঙা হেসে বলল-"সে জন্যে তুমি ভেবো না৷"
আমড়াতলায় পৌঁছেই কতকগুলো পাকা পাকা বুনো কুল ছড়িয়ে দিল৷ কুলের লোভে তুতু-পুতু গাছ থেকে নেমে এল৷ ক্যামেরার কাচে তুতু-পুতুর ছবি দেখে-চেঙা ভারি খুশি৷

তুতু-পুতুর গোঁফ নড়ছে, লেজ নড়ছে-ঠিক যেন সিনেমার রঙিন ছবি৷ চেঙা তাই দেখেই খুশিতে ডগমগ! খেয়াল নেই যে, ফটো তুলতে ক্যামেরার চাবিটা টিপতে হবে৷ তুতু-পুতুরও ভয় ভয় করে৷ তবু কুলের লোভ ছাড়তে পারে না৷ চেঙা পারে না ক্যামেরার কাচে সিনেমা দেখার লোভ ছাড়তে৷ বেঙাও একটা সিগারেট ধরিয়ে-খুব মন দিয়ে দেখছিল ব্যাপারটা৷ হঠাৎ খানিকটা ধোঁয়া বেঙার গলায় আটকে গেল৷ বেঙা খুব জোরে খক খক করে কেশে উঠল৷ তুতু-পুতুও সেই বিকট কাশির আওয়াজ শুনেই তড়বড়িয়ে গাছে উঠল৷

তুতু-পুতু কাঠবেড়ালিটা ভয় পেল-গাছে গিয়ে উঠল বেঙার দোষেই৷ বেঙা তাই চুপচাপ আমড়াতলা থেকে সরে পড়ল৷ পাছে চেঙা বকুনি দেয় এই ভয়ে৷ চেঙার তখন ওসব দিকে খেয়াল নেই৷ সে ছুটল কাঠবেড়ালির পিছু পিছু৷ উঠল গিয়ে আমড়া গাছে৷ সরু ডালের দু-পাশে ঠ্যাং ঝুলিয়ে ক্যামেরাটা বাগিয়ে ধরল৷
বেঙা চেঁচিয়ে বলল-"ভয় পেয়ো না তুতু-পুতু, তোমায় আমরা মারব না, ধরব না-শুধু একখানা ফটো তুলব৷" ফটোর কথা শুনে তুতু-পুতু একেবারে কথাকলি নাচ জুড়ে দিল৷ চেঙা ফটো তোলার ফুরসতই পায় না৷

বেঙাও দূরে দাঁড়িয়ে তুতু-পুতুর নাচ দেখছিল৷ হঠাৎ নজর পড়ল গাছের মগডালে-ইয়া এক থোকা পাকা আমড়া৷ খিদেয় তার পেট চোঁ-চোঁ করছিল৷ পাকা আমড়া দেখেই বেঙার নোলা দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল৷ তাই তাড়াতাড়ি একটা বড়ো ঢিল কুড়িয়ে নিল৷ ধাঁ করে ছুড়ে মারল-আমড়া পাড়বার মতলবে৷ ঢিল লেগে আমড়াগুলো ঝরে পড়ল চেঙার পিঠে ঢপ ঢপ করে! চেঙা বেসামাল৷ 'বাপরে! মারে! গেনুরে' হাঁক ছেড়ে-পড়ল আমড়াতলায়৷ চেঁচাতে লাগল-"দাদারে দাদা ভূতের কিল৷" ভূতের নাম শুনে তুতু-পুতুও মারল এক লাফ৷ ক্যামেরাটা রয়ে গেল গাছের ডালে৷

চেঙা গাছ থেকে পড়তেই বেঙারও পিলে চমকে উঠল৷ দুড়দাড়িয়ে ছুটে এল চেঙার কাছে৷ বলল, "ভূতের কিল নয়রে বোকা! পাকা আমড়া৷ ওইগুলোই পড়েছিল তোর পিঠে৷"
চেঙা দেখল সত্যিই তো তাই! মিছিমিছি অতখানি ভয় পাওয়া তার ঠিক হয়নি! তাই তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল গায়ের ধুলো ঝেড়ে৷ ক্যামেরাটা পেড়ে নিয়ে এল গাছ থেকে৷ চলল দু-জনে আমড়া খেতে খেতে৷
পাহাড়ের কাছাকাছি পৌঁছে বেঙা বলল-"দেখ চেঙা, জানোয়ার-মানোয়ারগুলোর ফটো তুলে কাজ নেই-চল ওই পাহাড়ে উঠি৷ পাহাড়ের গুহায় সাধুরা থাকে৷ তাদের ফটো তুলতে ভয়ও নেই, বিপদও নেই৷"

পাহাড়ে গুহা আছে, সাধুবাবা আছে-এত সব খবর চেঙা জানত না৷ শুধু মার কাছে শুনেছিল-পাহাড়ের বনে রকমারি ফুল আর পাখি থাকে৷ তাই সে বেজায় খুশি৷ বেঙার আগে আগেই চেঙা চলল লাফাতে লাফাতে৷ পাথর ঢিবি ডিঙিয়ে পাহাড়ে উঠতে লাগল৷ বেঙা মোটা শরীরটা নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে চলল তার পিছু পিছু৷ বেশ খানিকটা ওপরে উঠতেই চেঙা দেখল আঁধার-কালো গুহা৷ তার ভেতরে দু-দুটো আগুনের ভাঁটার মতো চোখ! দেখেই ও থমকে দাঁড়াল৷
বেঙা বলল-"থামলি কেন বোকা! পা চালিয়ে চল৷ ওই তো সাধুবাবা জপ করতে বসেছে৷"

গুহার ভেতরে বড়ো বড়ো অমন দু-দুটো চোখ দেখে চেঙার গা ছমছম করে উঠল৷ ভয়ে ভয়ে চাপাগলায় বেঙাকে বলল-"হ্যাঁগো বেঙা দাদা৷ ভূত-টুত নয়তো?"
বেঙা বলল, "দুর বোকা! ভূত বুঝি পাহাড়ের গুহায় থাকে! ভূত থাকে তাল-তেঁতুল গাছে৷ চল না, পা-চালিয়ে এগিয়ে চল৷ আমি তো রয়েছি-ভয় কীসের তোর?"
বেঙার কথায় ভরসা পেয়ে চেঙা গুহার দিকে এগিয়ে চলল৷ গুহার সামনে গিয়ে দেখে-চোখ ট্যারা করে কে যেন ধ্যানে বসে আছে৷ চেঙা তাড়াতাড়ি ক্যামেরা বাগিয়ে নিয়ে আবার ফোকাস ঠিক করতে লাগল৷

বেঙা চাপা গলায় বলল, "এই চেঙা! ফটো পরে তুলিস৷ চল, আগে সাধু মহারাজের পায়ের ধুলো নিয়ে আসি?" চেঙা কেমন ঘাবড়ে গেল৷ বলল, "হ্যাঁ বেঙা দাদা, পায়ের ধুলো না নিলে সাধুবাবারা বুঝি রেগে যায়?"
বেঙা বলল, "দূর বোকা, সাধুদের রাগ-টাগ নেই৷ পায়ের ধুলো নিলে সাধুবাবা খুশি হয়ে পেসাদ-টেসাদ খেতে দেয়৷ চল গুহায় ঢুকি৷"
গুহায় ঢুকতেই পেঁচু মহারাজের ধ্যান ভেঙে গেল৷ ডানা মেলে তেড়ে এল পেঁচু প্যাঁচা৷ চেঙা-বেঙা ভয়ে পেছু হটতে গিয়ে গড়িয়ে পড়ল পাহাড়ের গা বেয়ে৷

গড়াতে গড়াতে চেঙা-বেঙা পড়ল এসে পাহাড়ের নীচে৷ আর একদিকে৷ বেঙা গড়ায়নি তত বেশি-লাফ মেরেই নীচে পড়েছে৷ তাই সে তাড়াতাড়ি গায়ের ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াল৷ চেঙা তখনও বেজায় কাবু৷ ঘাড়ই তুলতে পারে না তো উঠে দাঁড়াবে কী করে!
বেঙা বললে-"কীরে চেঙা, অমন করছিস কেন? এইটুকুতেই অমন ঘাবড়ালে চলে কি? ও কিছু নয়, উঠে পড়৷" চেঙা চোখ বুজে চিঁ-চিঁ করে বলল-"দাদা গো দাদা, বেজায় মাথা ঘুরছে৷ গা ঝিমঝিম করছে-আর বুঝি বাঁচি নে৷"
বেঙা বলল-"আলবাত বাঁচবি৷ চল-ওই তো কাছেই ফালতু বিল৷ দেখ, কেমন নীল জল টলটল করছে৷ শালুক কমল ফুটে রয়েছে কাতারে কাতারে৷ ফুরফুরে হাওয়া বইছে৷ পাখিরা গান ধরেছে৷ ওখানে গিয়ে চোখ-মুখে জল দিয়ে খানিকটা জিরিয়ে নিলেই গায়ের জোর ফিরে পাবি৷"

চেঙাকে টেনে তুলে নিয়ে বেঙা চলল বিলের দিকে৷ বিলের ধারে এসে ওরা দেখল ডাঙার কাছেই একটা পোড়া কাঠ ভাসছে৷ বেঙা বলল-"চল রে চেঙা, ওই পোড়া কাঠের ভেলায় উঠি৷ দিব্যি বেড়ানো যাবে, ছবি তোলা যাবে৷"
বেঙা দাদা ভেলার চড়বার মতলব দিয়েছে, আর কি চেঙা চুপ করে থাকতে পারে! ভেলায় চড়বার শখ তার অনেক দিনের, তা ছাড়া মজা আর ডানপিটেমি পেলেই চেঙা খুশি৷ তাই পাহাড় থেকে গড়িয়ে অত যে তার চোট লেগেছে, সে কাথাটা একদম ভুলেই গেল৷ রীতিমতো তড়বড়িয়ে ছুটে গিয়ে চেঙা-বেঙা ভেলায় চড়ে বসল৷ ভেলাটাও ভেসে চলল বড়োসড়ো একটা ফুলের দিকে৷

চেঙা বলল, "বেঙা দাদা, দেখো দেখো, খাসা ফুল৷ ওটারই একটা ফটো তুললে কেমন হয়?" বেঙা ক্যামেরাটা বাগিয়ে ধরে বলল, "সেই মতলবই তো করেছি রে বোকা৷ ও ফটো তোলা তোর কাজ নয়৷" ফোকাস যখন ঠিকঠাক, তেমন সময় ভেলাটা হঠাৎ বুড়বুড়ি কেটে ছুটতে লাগল খুব জোরে, শোঁ-শোঁ করে৷ তখন দেখা গেল ভেলাটা আসলে পোড়া কাঠ নয়৷ রীতিমতো ইয়া এক কুমির! বেঙা ভুল বুঝতে পেরে বেসামাল৷ হাত-পা ছুড়ে চেঁচাতে লাগল, "পুলিস! পাহারাওয়ালা! জলদি আও৷ বাঁচাও বাঁচাও!"
চেঙার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোয় না৷ বেঙার ঠ্যাংখানা জড়িয়ে ধরে বেচারা চেঙা ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল৷ কুমিরটা দাঁত বার করে হো-হো করে হাসতে হাসতে ছুটল জল তোলপাড় করে৷

কেলেকাঠ কুমিরটা বেঙার চেঁচানি শুনে হেসে কুটিকুটি৷ ওদের দু-জনকে পিঠে নিয়ে ছুটেছে সোজা পুবমুখো! দৌড়োতে দৌড়োতে বলল-"চেঁচাসনি মিছিমিছি৷ পুলিস পাহারাওয়ালারা হেথা কোথারে! তেনারা তো সব নালবাজারে৷"
কুমিরের টিটকিরি শুনে বেঙার হুঁশ হল৷ বুঝল, কুমিরটার মতলব খারাপ! সত্যিই তো এখানে চেঁচিয়ে লাভ কী? অমনি সে ডান হাতে ক্যামেরাটা তুলে ধরল৷ মারল তিড়িং করে সাড়ে সাতগজি এক লাফ! চেঙা ছিল তার ঠ্যাং ধরে৷ পড়ল গিয়ে দু-জনেই জলে৷

বেচারা চেঙা জলে পড়ে হাবুডুবু৷ তার লোমচামড়া ভিজে ঢোল৷ জল খায় ঢোকে ঢোকে৷ এর আগে কখনো সে জলে নামেনি৷ সাঁতারও কাটেনি কোনোদিন৷ ডাঙাতেই দৌড়ঝাঁপ করে বেড়ায়৷ যাক তবুও চেঙা বেঁচে গেল, নেহাত বেঙার ঠ্যাংটা ছাড়েনি বলেই৷ বেঙা সাঁতারে বাহাদুর, তাই চেঙার অত ঠ্যাং-টানাটানিতেও সে জলে ডুবল না৷ কোনো রকমে ডাঙায় হাজির হল, কুমিরটাকে কলা দেখিয়ে৷
ডাঙায় উঠে বেঙা দেখে জল খেয়ে চেঙার পেট ফুলে জয়ঢাক-ওদিকে বেলা কাবার! তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে না গেলে বাড়ি ফেরাই হবে না৷
বেঙা বলে-"পা চালিয়ে চল৷" চেঙা নড়ে না চড়ে না৷ সাড়াও দেয় না বেঙার তাড়া খেয়ে৷ বেঙা তখন করল কী, চেঙার হাত ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে চলল৷ হাঁটছে তো হাঁটছেই৷

যেতে যেতে চারধার আঁধার হয়ে গেল৷ পথ আর দেখা যায় না, চেনা যায় না৷ শুধু চারধারে জোনাকি পোকার ঝিকিমিকি আলো৷ এসব দেখেশুনে চেঙার গা-ছমছম, আর বেঙার বুক ঢিপ ঢিপ করে৷ গহন বনের ভেতর চৌমাথায় এসে দাঁড়াল দু-জনে৷ চেঙা গালে হাত দিয়ে ভাবে-কোন পথ ধরবে! বেঙা ভাবে কোন দিকে যাবে-ডাইনে না বাঁয়ে? চেঙা-বেঙা কোনো রকমে এগিয়ে পেটমোটা কুটুরে গাছটায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়৷ চেঙা বলে-"বাঁ-দিকেই বাড়ির পথ৷" বেঙা বলে-"তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাস তো ডান দিকের পথ ধর৷" এই নিয়ে লাগল ঝগড়া আর তর্ক৷ ওদিকে রাতও বেড়ে যায়৷ শেষটায় বেঙা রেগে-মেগে ডান দিকেই পা বাড়াল৷ বলল-"তোর মতলবেই এত ফ্যাসাদ৷ আমি চললুম এই পথে৷" চেঙা বলল-"বেশ! আমি চললুম বাঁ-দিকে৷"
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন