নাকাল নেংটি

বিমল ঘোষ

নাকাল নেংটি

 

Cov34

 

Cov35

 

চেঙা-বেঙা পিকনিক করতে গিয়ে কত যে আপদ-বিপদে পড়েছিল, সে কথা আর সবাই ভুলে গেলেও চেঙা-বেঙা তো ভুলতে পারে না৷ ভুলতে পারে না পুঁচকে নেংটি সেদিন তাদের কত উপকার করেছে৷

 

তাই সেই উপকারের কথা মনে করে ক-দিন পরেই চেঙা-বেঙা ঠিক করল নেংটিকে বেঙার বাড়িতে এনে খাওয়াবে৷ তারিফ জানাবে তার বাহাদুরির৷ নেংটিকে চিঠি লিখল এই কথা জানিয়ে৷

বাদুড় পিয়োন রাতের আঁধারে চুপিচুপি চিঠিটা রেখে গেল, লাল টুকটুকে লেপের ওপরে৷ ঘুম ভাঙতেই নেংটি চেঙা-বেঙার চিঠি পড়ে যেমন অবাক, তেমনি খুশি৷ তাড়াতাড়ি উঠে চোখ-মুখ ধুতে গেল৷

 

Cov36

 

ইজের-জামা না পরে অন্য বাড়িতে খেতে যাওয়া চলে না৷ নেংটি তাই সাজতে বসল আয়নার সামনে৷ অত সকালে দাদাকে সাজপোশাক করতে দেখে নেংটির ভাই-বোন-চেংটি, ভেংচি আর চিমটি ছুটে গিয়ে মাকে ওই খবরটা দিল৷ ঘরে এসে মা দেখেন, নেংটি টেরি বাগিয়ে মুখে খাবোল খাবোল পাউডার মাখছে৷

নেংটির মা বললেন-"হ্যাঁরে নেংটে, ব্যাপার কী?" নেংটি তখন মাকে চেঙা-বেঙার চিঠি দেখাল, বলল সব কথা৷ মা সব শুনে বললেন-"চেঙা-বেঙা বড়োলোক৷ বেঙার বাড়ি গিয়ে সামলে-সুমলে চোলো বাছা৷"

নেংটি বলল-"ওসব তুমি ভেবো না মা৷"

 

Cov37

 

মায়ের হুকুম পেয়ে নেংটি বেরিয়ে পড়ল বাড়ি থেকে৷ ওদিকে ছুঁচো পাড়ার ছেঁচকিও একটা নতুন তিন চাকার সাইকেল চালিয়ে চলেছে৷

নেংটিকে দেখে সে সাইকেল থামাল৷ বলল, "কোথায় চলেছিস এত সেজেগুজে?"

নেংটি খুব চাল দেখিয়ে বলল, "বেঙার বাড়িতে ভোজ খেতে৷"

ভোজ খাওয়ার নামে ছেঁচকির জিভে জল এল-বলল, "বেশ! বেশ! চল তোকে আমার সাইকেলে চড়িয়ে পৌঁছে দিয়ে আসি৷"

নেংটি মহাখুশি-চড়ে বসল ছেঁচকির সাইকেলের পেছনে৷ ছেঁচকি বেপরোয়া সাইকেল চালিয়ে ছুটল৷ হাঁসু-মাসু আর টিকটু তাই দেখে আঁতকে পালাল৷

 

Cov38

 

কুতকুত কাঠবেড়ালি রগড় দেখবার জন্যে হাঁসুকে ডেকে নিল৷ ওদের পেছন পেছন ছুটতে লাগল৷ চেঁচাতে লাগল-"ন্যাংলা ভায়া, নেমে পড়ো-ছেঁচকি ছুঁচো দিনের বেলায় চোখে দেখে না৷ অঘটন ঘটিয়ে ছাড়বে৷"

নেংটি ভাবে, হিংসুটে ওরা৷ তাই ভয় দেখাতে মিছিমিছি অমন সব কথা বলছে৷ ছেঁচকিও রেগে-মেগে আরও জোরসে গাড়ি ছোটাল-সামনেই যে ডোবা, সেদিকে খেয়াল নেই৷ গাড়ি ছুটছে সাঁই সাঁই৷ নেংটিও আঁতকে উঠল-বলল-"থামাও থামাও, দোহাই দাদা আমায় নামাও৷"

গাড়ি আর থামবে কী! গড়গড়িয়ে পড়ল গিয়ে ডোবায়৷

 

Cov39

 

ভাগ্যিস নেংটি সাইকেলের পেছনে ছিল, আর ডোবাতেও জল ছিল কম, তাই খুব বেঁচে গেল৷ ছেঁচকি আর তার সাইকেল ডোবার পাঁক-কাদায় যখন হাবুডুবু, নেংটি তখন একলাফে ডাঙায় পড়ল৷ ছুটল-পাঁই পাঁই, সাঁই সাঁই৷ বুঝল পরের গাড়ি চড়ে বড়োমানুষি দেখানোর চেয়ে নিজের পায়ে হেঁটে চলাই ভালো ৷ হাঁটতে-হাঁটতে-হাঁটতে নেংটি শেষটায় বেঙার বাড়ির কাছে পৌঁছোল৷ দেখল বাড়ির সামনে চেঙা-বেঙা গেট তৈরি করেছে৷ সাজিয়েছে খাসা! 'গ-ম-স্বা-ত' কথাটা বড়ো বড়ো হরফে লিখে ঝুলিয়ে দিয়েছে৷

 

Cov40

 

কথাটার মানে নেংটি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারে না৷ শেষটায় নেংটি বুঝতে পারল-চেঙা-বেঙা বড়োলোক৷ তবে তেমন লেখাপড়া জানে না-তাই 'স্বাগতম' কথার চারটে হরফ ওলটপালট করে সাজিয়েছে৷ চেঙা-বেঙার ভুলটা শুধরে দেওয়ার লোভ সামলাতে পারল না নেংটি৷

কাছেই ছিল একটা কাঠের সিঁড়ি, সেটা টেনে নিয়ে এল৷ ছিটকিনি না লাগিয়েই, তড়বড়িয়ে তার ওপরে উঠল৷ 'স্বা'-'গ'-'ত', ঠিক জায়গায় বসিয়ে হাত-পা ছুড়ে নাচ জুড়ে দিল সিঁড়িটার ওপরেই৷

 

Cov41

 

নাচের গুঁতোয় ছিটকিনি-খোলা মই বেটাল৷ বিদ্যে জাহির করে দেমাক দেখাতে গিয়ে নেংটি পড়ল ছিটকে৷ চেঙা ছুটে এসে সিঁড়িটা ধরে ফেলল৷

ভাগ্যিস চেঙা ছুটে এসে সিঁড়িটা ধরে ফেলেছিল! তা না হলে নেংটি মই চাপা পড়েই পটল তুলত৷ নেংটি মই থেকে পড়ে মরল না বটে, তবে হাত-পা মুখ-মাথায় চোট লেগেছে৷ কেটে-কুটে ফুটিফাটা৷ তখন তখনই বেহুঁশ! চেঙা-বেঙা তখুনি তাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে গেল ঘরে৷ বাতাস করে জল ঢেলে, তবে নেংটির কাটা-ঘা ধুইয়ে-মলম-পটি লাগিয়ে দিল৷

নেংটির কাঁদবার উপায় নেই৷ মুখ বুজে সব সইতেই হয়৷

 

Cov42

 

মলম-পটি লাগিয়ে, গরম দুধ খাইয়ে চেঙা-বেঙা নেংটিকে তখনি খাড়া করে তুলল৷ নেংটি তবু খুব মনমরা৷ মায়ের কাছে কী করে মুখ দেখাবে৷ বাড়ি ফিরলে ভাই-বোনেরা টিটকারি দেবে, মা-বাবা বকুনি লাগবে৷ বেচারা ভেবে পায় না কী করে! কোথায় যায়! বুঝতে পারে ছোটো হয়ে বড়োদের ভুল শোধরাতে গিয়েই এই বিপদ৷ নেংটি হঠাৎ বলে বসে- "আজ বাড়ি যাই, আর একদিন আসব'খন৷" চেঙা-বেঙা বলে-"আরে! তাও কি কখনও হয়! অত মন খারাপ করার কী আছে? কলের গান শোনো৷ আমরা বাজারটা সেরে আসি৷" কলের গানে রেকর্ড চড়িয়ে চেঙা-বেঙা বলল-"টা-টা, গুডবাই৷"

 

Cov43

 

কলের গানে রেকর্ড চড়িয়ে দিয়ে চেঙা-বেঙা বাজার করতে গেল৷ নেংটিও গান শুনে ভুলে গেল ঘায়ের টনটনানি৷ কলের গানের সুরে গলা মিলিয়ে সে গান ধরল৷ গান শেখার তার ভারি শখ-কিন্তু বাড়িতে গুনগুন করলেই-মা-বাবা সবাই ধমক লাগায়৷ ভাই-বোনগুলো ভেংচি কাটে৷ সে সব ঝামেলা ওখানে নেই৷ নেংটি তাই মনের সুখে গলা ছাড়ল৷ রেকর্ডের গান শেষ হতেই আপনা থেকে কলের গানটা থেমে গেল৷ নেংটি তাতে ঘাবড়াল না একটুও৷ তুড়ুক করে কলের গানের রেকর্ডের ওপর লাফিয়ে উঠে চেঙা-বেঙার মতোই আবার শুঁড়-চাকিটা ঠিক জায়গায় বসিয়ে দিল৷

 

Cov44

 

ওমা! ওটা ঠিক জায়গায় সরিয়ে এনে বসাতেই-নেংটিকে নিয়েই রেকর্ডখানা বাঁই বাঁই করে আবার ঘুরতে শুরু করল৷ গানও বেজে উঠল গ্যাঁক গ্যাঁক করে! নেংটি যে নেমে পড়বে-সে উপায় রইল না৷ নেংটিও রেকর্ডের সঙ্গে আনিমানি খেয়ে খুব ঘুরতে লাগল৷ ভয়ে চেঁচাতে লাগল-তবে গানের গুঁতোয় তার হাঁকডাক চাপা পড়ে গেল৷ কেউ শুনতে পেল না নেংটি কাঁদছে৷ কেউ ছুটে এল না তাকে বাঁচাতে৷ রেকর্ডের ঘুরপাকে পড়ে নেংটি ঘুরছে তো ঘুরছেই৷ ঘুরুনির চোটে নেংটির গায়ের মলম-পটি ছিটকে ছোটে৷ চোখের সামনে তারা ফোটে৷

 

Cov45

 

কলের গানের রেকর্ডের ওপরে চেপে নেংটি ঘুরছিল বাঁই বাঁই করে৷ তাই সে দেখল ঘরের চেয়ার-টেবিল, খাট-পালং সবই ঘুরছে চারধারে৷ ঘুরুনির চোটে বেচারার গা-মাথা বেসামাল, শেষটায় চোখ দুটোতে ঝাপসা দেখতে লাগল৷ হঠাৎ গোঁ-গোঁ করে গান ফুরিয়ে গেল! ঘ্যাচাং করে থেমে গেল কলের গান৷ আর তার হাঁচকা ঝাঁকুনি খেয়ে পুঁচকে নেংটিও ছিটকে গেল জানলা গলে বাইরে৷

জানলার বাইরে গিয়েও নেংটি ঘুরছে৷ ঠিক যেন উড়ন চরকি৷ ঘুরতে ঘুরতে চলল হাওয়ায় ভেসে৷

 

Cov46

 

জানলার বাইরে পাতাবাহার, ফলসা গাছ৷ ফলসাতলায় পাখিদের গানের জলসা চলছিল৷ গান ধরেছে কাদাখোঁচা, হাঁড়িচাচা, ছাতারে, চড়ুই-মড়ুই পাখির দল৷ কাঠবেড়ালিদের নিয়ে ওরা 'নববর্ষে'র উৎসব করছিল৷ কিচিরমিচির কনসার্টের তালে পাখিদের গান৷ কাঠবেড়ালিদের লেজখাড়া নাচ৷

ঠিক তেমন সময়, ঘুরতে ঘুরতে নেংটি পড়ল গিয়ে তাদের মাঝখানে৷ কাঠবেড়ালি আর পাখির দল সরে দাঁড়াল৷ ব্যাপার দেখে সবাই ওরা হকচকিয়ে উঠল৷ মাটিতে পড়েও নেংটি বাঁই বাঁই করে ঘুরতে লাগল-চরকি বাজির মতো৷

 

Cov47

 

নেংটিকে চরকির মতো ঘুরতে দেখে পাখির দলের ভয়-ভাবনা ঘুচল৷ পাখিরা ভাবল-কেউ বুঝি ওদের জলসায় নাচতেই এসেছে৷ ওমা! ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ নেংটি চিতপাত! পড়েই বেহুঁশ! শুরু হল হাত-পা খিঁচুনি৷

চোখ কপালে উঠল নেংটির৷ কাঠবেড়ালিগুলো তাই দেখে চোঁচা দৌড় দিল৷ ভয়ে চ্যাংড়া চড়ুই চেঁচাতে লাগল-"মরে গেল! হায় কী হল!" চিটকে চড়ুই বলল-"খামোখা চেঁচিয়ো না-মরেনি, হুঁশ হারিয়েছে৷ নদীতে নিয়ে গিয়ে মাথায় জল দিলেই হুঁশ ফিরবে৷ এসো, সবাই ঠোঁট লাগাও৷ নিয়ে যাই ওকে নদীর ধারে৷"

 

Cov48

 

চিটকে দেখতে ছোটো৷ তবে-চড়ুইদের ভেতর ওই সবচেয়ে চালাক৷ ও যেমনি ছটফটে তেমনি চটপটে৷ চড়ুইরা সবাই তাই ওকে খুব মানে৷ চিটকের হুকুমমতো তখুনি পাখিরা নেংটির জামায় ঠোঁট লাগাল৷ অনেক টানাটানি ঠেলাঠেলির পর, চড়ুইরা নেংটিকে নিয়ে উড়ল৷ জোড়া জোড়া ডানা ঝাপটে তুলল আকাশে৷ শহর থেকে নদী অনেক দূরে৷ পাখিরা চলল হেঁতুল-তেঁতুল তাল-শাল গাছ ডিঙিয়ে-নেংটিদের বাড়ির ওপর দিয়ে৷ নীচে নেংটির ভাই-বোনেরা চেঁচাতে লাগল-"উড়োজাহাজ, উড়োজাহাজ!"

 

Cov49

 

পাখিরা উড়ে চলেছিল নেংটিকে নিয়ে নদীর দিকে৷ গোল বাধাল আকাশের ওপরে কনকনে জলো-হাওয়া৷ নেংটির গায়ে-মাথায় ফুরফুরে হাওয়া লাগতেই তার হুঁশ ফিরে এল৷ চমকে উঠে তখুনি চোখ খুলল নেংটি৷ দেখে তার চারপাশে মেঘেরা ছুটোছুটি করছে৷ আর, এক দল পাখি তাকে উড়িয়ে নিয়ে চলেছে৷ সর্বনাশ! এ কী ফ্যাসাদ৷ কোথা থেকে কী যে হয়ে গেল, নেংটি ভেবে পায় না৷ খানিকটা চুপ করে রইল৷ তারপরেই নেংটি হাত-পা ছুড়ে চেঁচাতে লাগল৷ পাখিরাও ভয় পেয়ে ছেড়ে দিল নেংটিকে৷ নেংটির জাঙিয়ার পা দুটো ফুলে উঠল উড়োছাতার মতো৷

 

Cov50

 

ভাগ্যিস, জাঙিয়ার পা ফুলে উড়োছাতা হয়ে গেল৷ নইলে বাছাধন বুঝত মজাটা! ডিগবাজি খেয়ে আর তালগোল পাকিয়েই নীচে পড়তে হত৷ সেটা আর ঘটল না৷ তবে সোজা নামতে লাগল নীচের দিকে-হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে৷ নেংটির চোখ তখন কপালে উঠেছে! কিছু করবার উপায় নেই! কিছু ধরবার উপায় নেই! নামতে নামতে শেষটায় নেংটি টুপ করে পড়ল এক মুটের মাথায়, বাজার-ভরতি ঝাঁকায়৷ পড়তেই শুয়োর সিং মুটের মাথায় ঝাঁকুনি লাগল৷ একটু শুধু সে চমকে উঠল৷ তবে টের পেল না আসল ব্যাপারটা৷

 

Cov51

 

মুটের ঝাঁকার মাঝখানে ছিল পালংশাক, কমলালেবু, পাঁউরুটি৷ আকাশ থেকে নামতে নামতে সোজা তারই ওপরে পড়ল নেংটি৷ তাই সে জখম হল না৷ লাগল না এতটুকু চোট কোথাও৷ মুটের ঝাঁকায় বসে নেংটি দেখল-চেঙা-বেঙা চলেছে আগে আগে৷ নেংটি বুঝল তার ভোজের সওদাতেই ঝাঁকা ভরতি৷ নেংটি যখন বেঙার বাড়ির কাছ বরাবর এসে পৌঁছোল, তখন হঠাৎ তার নজরে পড়ল একটা ঠোঙা৷ তার ভেতরে দিব্যি লাল টুকটুকে কাগজে মোড়া টফির মতো কী যেন সব রয়েছে৷ নেংটি লোভ সামলাতে পারল না৷ ঠোঙায় হাত ঢুকিয়ে তারই একটা তুলে নিল৷

 

Cov52

 

লাল টুকটুকে কাগজে মোড়া জিনিসটা নেংটির একেবারে অচেনা৷ তাই সে সেটা টিপেটুপে দেখতে লাগল৷ নাকের কাছে এনে ওটা শুঁকল বার দুই৷ দেখতে অনেকটা পেঁয়াজের মতো৷ কামড়ে দেখে নেংটি, পেঁয়াজ তো নয়! ভেতরে কচকচে পাথরের কুচি৷ তাই নেংটি রেগে-মেগে ঠোঙাটা তুলে নিয়ে ঝুড়ির একপাশে ছুড়ে ফেলে দিল৷

ঠোঙায় ছিল বোমা, ভুঁই পটকা৷ ব্যস! অমনি দুম-দাম করে ফাটল সেগুলো৷ ভুঁই পটকার ঝটকায় আলু, কপি, চিংড়ি মাছ-সব ছিটকে গেল চারধারে৷ নেংটিও খেল ঝটকান-ডিগবাজি৷ মুটে শুয়োর সিং চিতপটাং৷

 

Cov53

 

শুয়োর সিং মুটের ঝাঁকায় পটকা-বোমা ফাটতেই চেঙা-বেঙা বেজায় চমকে উঠল৷ পেছনে ফিরে দেখে শুয়োর সিং মাটিতে গড়াগড়ি৷ ঝুড়ির মাল ছড়াছড়ি৷ সব চেয়ে বড়ো বোমাটার ঝটকা লেগেছিল নেংটির গায়ে৷ ন্যাংলা নেংটি ছিটকে গিয়ে পড়ল কোথায়? বেঙার বাড়ির জানলা গলে-ধপাস করে একেবারে বেঙার খাটের ওপর৷ খাটের ওপর পাতা ছিল তুলোঠাসা নরম গদি৷ তাই একটুও চোট লাগল না নেংটির গায়ে-পায়ে৷ বেচারা বেজায় দিশেহারা৷ কোথা থেকে কীসব ওলটপালট হয়ে গেল! অথচ সে ফিরে এল আবার সেই বেঙার বাড়িতেই!

নেংটি ভাবল-এত ঝামেলার পর আবার যখন এখানেই এলুম, তখন মুখটি না খুলে চুপটি করে বসে থাকাই ভালো৷ দিব্যি ভালোমানুষটি সেজে বেঙার খাটের ওপর বসে রইল নেংটি৷ ভাবটা এই, যেন সে কিছুই জানে না৷

 

Cov54

 

ওদিকে চেঙা-বেঙাও দৌড়োল শুয়োর সিংয়ের কাছে৷ নেংটিকে খাওয়াবে বলে কত কী বাজার করে নিয়ে আসছিল৷ সব মাটিতে ছড়াছড়ি! কাক-চিল গোরু-ছাগলগুলো- মাছ তরকারি ভাগাভাগি করে মুখে পুরেছে৷

ব্যাপার দেখে চেঙা-বেঙা ঘেঁষল না আর সেদিকে৷ দু-জনে খালি হাতে, মুখ কাঁচুমাচু করে ঘরে ফিরল৷

ঘরে ঢুকে চেঙা-বেঙা এ-ওর মুখ চায়৷ নেংটিও কী বলবে ভেবে পায় না৷ সবাই চুপচাপ, কেউ আর কথাটি কয় না৷ ঠিক তেমন সময় শুয়োর সিং মুটে ভাঙা ঝাঁকায় করে গোটাকতক ধুলোমাখা আলু আর একটা পাঁউরুটি কুড়িয়ে নিয়ে হাজির হল৷ শুয়োর সিং কেঁদে বলল- "বার বার মানা করলুম গো, বোমা-পটকাগুলো কিনো না৷ শুনলে কি আমার কথা!"

 

Cov55

 

চেঙা তখন আমতা আমতা করে বলল-"তুমি ভাই কিছু মনে কোরো না৷ কপালের দোষে আমাদের আয়োজনটা একেবারে মাটি হয়ে গেল৷ থাকবার মধ্যে আছে এই পাঁউরুটি-এটাই তুমি আমাদের উপহার হিসাবে নাও৷"

চেঙার কথা শুনে নেংটি হাঁফ ছাড়ল৷ যাক বাবা! ওরা টের পায়নি কেউ, আমিই যত ফ্যাসাদের গোড়া! নেংটি তাড়াতাড়ি হাত বাড়িয়ে পাঁউরুটিটা নিয়ে নিল৷ বলল-"এটা হল আমার উপহার-ওটি খাওয়া চলবে না৷ আলু ক-টা দিয়েই আলুর দম রাঁধো-সবাই মিলে তাই খাব৷" চেঙা-বেঙা কী আর করে? বোকার মতো রসুইঘরে আলুর দম রাঁধতে গেল৷ নেংটিও সেই ফাঁকে বেরিয়ে পড়ল-জানলা গলে৷ চলল বাড়ির দিকে পাঁউরুটি খেতে খেতে৷

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন