মহাপ্লাবন – ২০

কাজী আনোয়ার হোসেন

বিশ

প্রায় আসবাবপত্রহীন ঘরে চিচিওয়াকে দেখে রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগল ইয়াকুয়া নেতা গোখারো নাগিনো। মাঝবয়সী লোক সে, চওড়া দুই কাঁধ, দশ বছরেরও বেশি ইয়াকুয়ার হয়ে চালাচ্ছে এই ক্লাব; এ সময়ে হতে দেয়নি বড় কোনও ঝামেলা। যারা চেয়েছে বেঈমানি করতে, বা করেছে ঘাড়- ত্যাড়ামি, টোকিও উপসাগরের নিচে সিমেণ্ট ভরা ড্রামে এখন শুয়ে আছে তারা। অথচ, আজ যা হলো, উঁচু পর্যায়ের নেতাদের কাছে হেঁট হয়ে যাবে তার মাথা।

খুন নাগিনোর কাছে নতুন কিছু নয়। তবুও জ্বরাক্রান্ত ওরের হলদে চোখ দেখে শিউরে উঠল সে। প্রেতাত্মা সম্পর্কে যা শুনেছে, তার অর্ধেক সত্য হলেও এই লোক জাপানের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর খুনি। এমন কী ইয়াকুয়া নেতারাও বাধ্য না হলে খুন করে না, অথচ খুনের আগে ভয়ঙ্কর নির্যাতন করে ওরে চিচিওয়া। তা যে শুধু টাকার জন্যে, তা নয়, কষ্ট দিতে পারলে আনন্দিত হয় সে।

‘আমার ক্লাবে ঝামেলা সহ্য করব না,’ বলল নাগিনো।

‘আমার ধারণা, গোলমালের উপযুক্ত কারণ আছে আমাদের বন্ধু ওরে চিচিওয়ার,’ বলল লো হুয়াং।

‘আপনার বন্ধু,’ শুধরে দিল নাগিনো। ‘বেশ কয়েক বছর আগেই সংগঠন থেকে সরে গেছে সে।’

তিক্ততা বোঝাতে মেঝেতে রক্তাক্ত থুতু ফেলল ওরে। ‘আবার সংগঠন!’ বিড়বিড় করল।

‘আমার বোধহয় উচিত তোমাকে রিঙে ঢুকিয়ে দেয়া, যাতে শেষ করতে পারো নিজের কাজ,’ বলল নাগিনো।

‘তাই করো,’ সায় দিল ওরে।

মাঝ থেকে বাধা দিল লো হুয়াং, ‘যার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে, সে আসলে কে?’

‘চিনতে পারোনি?’ ফোঁস তুলল ওরে, ‘যাদের খুন করতে পাঠালে, তাদেরই একজন সে।’

‘এসব কী বলছ তোমরা?’ বলল নাগিনো। ‘ওই লোক তো বাংলাদেশের জাহাজ ব্যবসায়ী!’

খিকখিক করে হাসল ওরে। ‘কচুর ব্যবসায়ী! ওই লোক এসেছে আমেরিকান সরকারের তরফ থেকে। খোঁজ নিলে জানবে সে হয়তো সিআইএর এজেন্ট!’

‘এজেন্ট? সিআইএ?’ খাবি খেল ইয়াকুয়া নেতা। ‘ওই লোক এখানে এল কেন?’

‘আপনার দুশ্চিন্তার কিছু নেই,’ আশ্বস্ত করতে চাইল লো হুয়াং। ‘ওরের কথা ঠিক হলে, এই ক্যাসিনো নিয়ে মাথা-ব্যথা নেই তার।’

‘তা হলে কী চায় সে?’

‘ওরেকে চিনে ফেলেছে ওরা। তাই এখানে এসেছে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে।

‘ওরা?’ বিস্মিত হলো নাগিনো। ‘একজনের বেশি?’

‘দুর্গের মত এই জায়গায় একা ঢুকবে কে?’

আবারও রেগে গেল ইয়াকুয়া নেতা। ওরের দিক থেকে ঘুরে তাকাল লো হুয়াং লিটনের দিকে। ‘আপনিই নিয়ে এসেছেন এই বদ্ধ পাগলটাকে। আপনার কারণেই ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। আপনার পিছু নিয়েই এখানে ঢুকেছে ওই লোক। আগে থেকে বলেননি, তাই সতর্ক ছিলাম না। আমার বোধহয় উচিত আপনাদের দু’জনকেই খুন করা।’

‘শুধু এই লোকটাকে খুন করে ফেলে দাও তোমার কোই পণ্ডে, তাতেহ হবে,’ বলল ওরে। ‘আরও ভাল হয় কাজটা আমাকে করতে দিলে।’

‘না,’ মাথা নাড়ল হুয়াং, ‘আগে জানতে হবে লোকটা একা এসেছে কি না।’

‘তা জানা অসম্ভব,’ বলল নাগিনো, ‘স্বাভাবিক কারণেই এই ক্লাবে কোনও ভিডিয়ো ক্যামেরা রাখা হয় না।

‘ওই লোককে পিটিয়ে ওর পেট থেকে বের করো সব,’ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ওরে।

নিজ এলাকায় ভয়ানক প্রেতাত্মার প্রকোপ দেখে খুব নাখোশ হয়েছে গোখারো নাগিনো। খুন করতে অতিরিক্ত আগ্রহী লোক এই ওরে। অথচ, দরকার না হলে জল ঘোলা করে না তারা। কড়া গলায় বলল ইয়াকুয়া নেতা, ‘ইচ্ছে হচ্ছে তোমাদের দু’জনকেই ক্লাব থেকে বের করে দিই। ওই ব্যাটা যদি তোমার পেছনেই এসে থাকে, তোমাকে বের করে দিলে সে বা তার সঙ্গের অন্যরাও বেরিয়ে যাবে।’

‘সঙ্গে যাবে ক্লাবের অনেক তথ্য,’ বলল লো হুয়াং। ‘শুধু তাই নয়, তাদের কাছে প্রমাণ রয়ে যাবে, কারা আসে আর কী করে। অবাক হব না সব তথ্য পুলিশের কাছে গেলে।’

‘পুলিশ নিয়ে চিন্তা নেই, গর্বের সঙ্গে বলল নাগিনো, ‘আজ বিদেশি যারা এসেছে, ঘাড় ধরে সবাইকে বের করে দেব।’

‘আরও ভাল বুদ্ধি দিতে পারি,’ বলল লো হুয়াং। ‘ওই বাদামি বাঁদরটাকে ঢুকিয়ে দিন লড়াইয়ের রিঙে। পারলে বাঁচার চেষ্টা করুক। ছবি তুলে টাঙিয়ে দিন ক্লাবের সব জায়গায়। একা থাকলে দারুণ লড়বে। আর সঙ্গে কেউ এলে, বাঁচাতে চাইবে ওকে। তখন অনায়াসে আপনার লোক ধরবে সে বা তাদেরকে। তাতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙবে না।

সকল অধ্যায়

১. মহাপ্লাবন – ১
২. মহাপ্লাবন – ২
৩. মহাপ্লাবন – ৩
৪. মহাপ্লাবন – ৪
৫. মহাপ্লাবন – ৫
৬. মহাপ্লাবন – ৬
৭. মহাপ্লাবন – ৭
৮. মহাপ্লাবন – ৮
৯. মহাপ্লাবন – ৯
১০. মহাপ্লাবন – ১০
১১. মহাপ্লাবন – ১১
১২. মহাপ্লাবন – ১২
১৩. মহাপ্লাবন – ১৩
১৪. মহাপ্লাবন – ১৪
১৫. মহাপ্লাবন – ১৫
১৬. মহাপ্লাবন – ১৬
১৭. মহাপ্লাবন – ১৭
১৮. মহাপ্লাবন – ১৮
১৯. মহাপ্লাবন – ১৯
২০. মহাপ্লাবন – ২০
২১. মহাপ্লাবন – ২১
২২. মহাপ্লাবন – ২২
২৩. মহাপ্লাবন – ২৩
২৪. মহাপ্লাবন – ২৪
২৫. মহাপ্লাবন – ২৫
২৬. মহাপ্লাবন – ২৬
২৭. মহাপ্লাবন – ২৭
২৮. মহাপ্লাবন – ২৮
২৯. মহাপ্লাবন – ২৯
৩০. মহাপ্লাবন – ৩০
৩১. মহাপ্লাবন – ৩১
৩২. মহাপ্লাবন – ৩২
৩৩. মহাপ্লাবন – ৩৩
৩৪. মহাপ্লাবন – ৩৪
৩৫. মহাপ্লাবন – ৩৫
৩৬. মহাপ্লাবন – ৩৬
৩৭. মহাপ্লাবন – ৩৭
৩৮. মহাপ্লাবন – ৩৮
৩৯. মহাপ্লাবন – ৩৯
৪০. মহাপ্লাবন – ৪০
৪১. মহাপ্লাবন – ৪১
৪২. মহাপ্লাবন – ৪২
৪৩. মহাপ্লাবন – ৪৩
৪৪. মহাপ্লাবন – ৪৪
৪৫. মহাপ্লাবন – ৪৫
৪৬. মহাপ্লাবন – ৪৬
৪৭. মহাপ্লাবন – ৪৭
৪৮. মহাপ্লাবন – ৪৮
৪৯. মহাপ্লাবন – ৪৯
৫০. মহাপ্লাবন – ৫০
৫১. মহাপ্লাবন – ৫১
৫২. মহাপ্লাবন – ৫২
৫৩. মহাপ্লাবন – ৫৩
৫৪. মহাপ্লাবন – ৫৪
৫৫. মহাপ্লাবন – ৫৫
৫৬. মহাপ্লাবন – ৫৬
৫৭. মহাপ্লাবন – ৫৭
৫৮. মহাপ্লাবন – ৫৮
৫৯. মহাপ্লাবন – ৫৯
৬০. মহাপ্লাবন – ৬০
৬১. মহাপ্লাবন – ৬১

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন