৬.৩.৩ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : ভুঁই-কুমীর

জগদানন্দ রায়

ভুঁই-কুমীর

তোমরা এই পোকাদের জীবনের কথা বোধ হয় জান না। ইহাদিগকে তোমরা দেখিয়াছ কি না, তাহাও জানি না। বাংলা দেশের অনেক জায়গাতেই কিন্তু ভুঁই-কুমীর দেখা যায়। এই পোকার ইংরাজি নাম Ant Lion অর্থাৎ পিঁপ্‌ড়েদের সিংহ। বাংলা দেশের কতক কতক অংশে ইহাদিগকে ভুঁই-কুমীর বলা হয়। তাই আমরা ইহাদিগকে ভুঁই-কুমীর নাম দিলাম।

ভুঁই-কুমীর, জল-ফড়িং পোকাদেরি জ্ঞাতি, অনেক সময়ে ইহাদিগকে জল-ফড়িং বলিয়াই ভুল হয়। কারণ জল-ফড়িঙের মত ইহাদের চারিখানি পাত্‌লা শিরাযুক্ত ডানা থাকে, শরীরখানাও সেই রকমের লম্বা কিন্তু আকারে ছোট। ইহারা দিনের বেলায় বড় বাহির হয় না। রাত্রিই ইহাদের চরিয়া বেড়াইবার সময়। কখন কখন রাত্রিতে প্রদীপের কাছে আসিয়া ইহারা ডানা ঝট্‌পট্ করে।

যাহা হউক, ভুঁই-কুমীরের ইতিহাস বড় মজার। ইহার জলে ডিম পাড়ে না; ধূলা বা বালির উপরে ডিম পাড়িয়া উড়িয়া যায়। ডিম হইতে শীঘ্রই বাচ্চা বাহির হয়। এই বাচ্চাদের চেহারা বড় অদ্ভুত। এখানে একটা ভুঁই-কুমীরের বাচ্চার ছবি দিলাম। ছবিতে মুখের সম্মুখে একজোড়া প্রকাণ্ড বাঁকানো দাঁত দেখিতে পাইবে। চেহারাটাও কতকটা কুমীরের মত। বোধ হয় এইজন্যই ইহাদিগকে ভুঁই-কুমীর নাম দেওয়া হয়। ইহারা শুক্‌নো বালি, মাটি বা ধূলাতে বোতলে তেল ঢালার ফনেলের মত একএকটা গর্ত্ত করিয়া লুকাইয়া থাকে। আমরা বীরভূম জেলার বেলে মাটির ধূলায় এই পোকাদের গর্ত্ত যে কত দেখিয়াছি, তাহা গুণিয়া শেষ করা যায় না। গর্ত্ত খুঁড়িবার সময়ে ইহার নরম বালিতে মাথা ডুবাইয়া সমস্ত দেহটাকে ঘুরাইতে থাকে। ইহাতে গুঁড়ো বালি-মাটি সরিয়া গেলে, ছোট পেয়ালার মত একটি গোলাকার গর্ত্ত হইয়া পড়ে। এই গর্ত্তের সব দিক্‌ই খুব ঢালু থাকে। ভুঁই-কুমীরের বাচ্চারা ইহারি তলায় সর্ব্বাঙ্গ ধূলায় ঢাকিয়া চুপ্ করিয়া পড়িয়া থাকে। কোনো নূতন জিনিস দেখিলে, তাহা হাতে করিয়া নাড়াচাড়া করা ছোট ছেলেপিলেদের একটা বিশেষ স্বভাব। পিঁপ্‌ড়েদেরও এই রকম স্বভাব দেখা যায়। কোনো জিনিস সম্মুখে পড়িলে উঁকি মারিয়া বা দুই চারিবার শুঁয়ো বুলাইয়া তাহা না দেখিলে তাহাদের যেন তৃপ্তি হয় না। পথের মাঝে পেয়ালার মত একএকটা গর্ত্ত দেখিলেই, পিঁপ্‌ড়েরা তাহা উঁকি মারিয়া দেখিতে চায় এবং ইহাতে প্রায়ই পা ফস্কাইয়া গর্ত্তের ভিতরে পড়িয়া যায়। এই রকমে একবার গর্ত্তের ভিতরে পড়িলে, আর রক্ষা থাকে না। গর্ত্তের তলায় বালির মধ্যে ভুঁই-কুমীরের যে বাচ্চা লুকাইয়া থাকে, সে চট্ করিয়া বাহির হইয়া তাহার সাঁড়াসির মত দাঁত দিয়া পিঁপ্‌ড়েকে ধরিয়া ফেলে। পিঁপ্‌ড়েরা পলাইবার জন্য খুবই চেষ্টা করে এবং কখনো কখনো শত্রুর হাত হইতে ছাড়াও পায়, কিন্তু তখনি তাহাদিগকে আবার ধরা দিতে হয়। গর্ত্তের চারিদিকে যে ঢালু বালি-মাটি থাকে, তাহার উপর দিয়া উঠিতে গেলেই পিঁপ্‌ড়েদের পা পিছ্‌লাইয়া যায়। কাজেই তখন গড়াইতে গড়াইতে তাহারা আবার শত্রুর মুখের গোড়ায় আসিয়া হাজির হয়।

ভুঁই-কুমীরের বাচ্চারা পিঁপ্‌ড়ে বা অপর শিকারগুলিকে চিবাইয়া খায় না; দাঁত দিয়া ধরিয়া শরীরের সার অংশটা শুষিয়া লয় এবং খোলাটি ফেলিয়া দেয়।

যাহারা ফাঁদ পাতিয়া শিকার করে, তাহাদের অদৃষ্টে সকল দিন শিকার জুটে না। ভুঁই-কুমীরদের অদৃষ্টে প্রায়ই তাহা ঘটে; শিকার না পাইলে তাহাদিগকে উপবাসী থাকিতে হয়। সপ্তাহে প্রায়ই দুই-তিন দিন ইহারা কিছু না খাইয়া কাটায়। অন্য পতঙ্গদের বাচ্চার মত ইহারা পেটুক নয়, তাই এত অল্প খাইলেও ইহাদের কোনো ক্ষতি হয় না।

সকল অধ্যায়

১. ১. এক-কোষ প্রাণী – খড়িমাটির পোকা
২. ২. স্পঞ্জ
৩. ৩.১ হাইড্রা
৪. ৩.২ রাবণচ্ছত্র
৫. ৩.৩ প্রবাল
৬. ৪. তারা-মাছ – স্নায়ুমণ্ডলী
৭. ৫.১ কেঁচো
৮. ৫.২ পরাশ্রিত অকেজো প্রাণী
৯. ৫.৩ জোঁক
১০. ৫.৪ ক্রিমি – গোল ক্রিমি
১১. ৬.০ কীট-পতঙ্গ, প্রাণীদের বিভাগ
১২. ৬.১.১ কঠিনবর্ম্মী : চিংড়িমাছ
১৩. ৬.১.২ কঠিনবর্ম্মী : কাঁকড়া
১৪. ৬.১.৩ কঠিনবর্ম্মী : পতঙ্গ
১৫. ৬.২.১ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : বোলতা
১৬. ৬.২.২ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : ভীমরুল
১৭. ৬.২.৩ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : কুমরে-পোকা
১৮. ৬.২.৪ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : কাঁচ-পােকা
১৯. ৬.২.৫ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : মৌমাছি
২০. ৬.২.৬ ঝিল্লীপক্ষ পতঙ্গ : পিপীলিকা
২১. ৬.৩.১ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : উই
২২. ৬.৩.২ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : জল-ফড়িং
২৩. ৬.৩.৩ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : ভুঁই-কুমীর
২৪. ৬.৩.৪ শিরা-পক্ষ পতঙ্গ : পাখীর গায়ের উকুন
২৫. ৬.৪.০ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ
২৬. ৬.৪.১ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ : গোবরে পোকা
২৭. ৬.৪.২ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ : ধামসা পোকা
২৮. ৬.৪.৩ কঠিন-পক্ষ পতঙ্গ : জোনাক পোকা
২৯. ৬.৫.০ শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ
৩০. ৬.৫.১ শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ : প্রজাপতি
৩১. ৬.৫.২ শল্ক-পক্ষ পতঙ্গ : গুটিপোকা
৩২. ৬.৬.০ দ্বিপক্ষ পতঙ্গ
৩৩. ৬.৬.১ দ্বিপক্ষ পতঙ্গ : মাছি
৩৪. ৬.৬.২ দ্বিপক্ষ পতঙ্গ : মশা
৩৫. ৬.৭.০ গান্ধী পোকা
৩৬. ৬.৭.১ ছারপোকা
৩৭. ৬.৮.০ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ
৩৮. ৬.৮.১ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : ফড়িং
৩৯. ৬.৮.২ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : উচ্চিংড়ে ও ঘুর্‌ঘুরে পোকা
৪০. ৬.৮.৩ ঋজুপক্ষ পতঙ্গ : আরসুলা
৪১. ৬.৯.০ লূতা
৪২. ৬.৯.১ মাকড়সা
৪৩. ৬.৯.২ কাঁকড়া-বিছা
৪৪. ৬.১০.১ সহস্রপদী : তেঁতুলে-বিছা
৪৫. ৬.১০.২ সহস্রপদী : কেন্নো
৪৬. ৭. কোমলাঙ্গী : শঙ্খ, শামুক, গুগলি

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন