১৮. আসামীর ক্রস একজামামিনেশন

হুমায়ূন আহমেদ

আজ আসামীর ক্রস একজামামিনেশন হবে।

আসামী কাঠগড়ায় উপস্থিত।

সরদার এ. করিম এগিয়ে গেলেন।

আপনার নাম মিজানুর রহমান?

জ্বি।

পুষ্প নামের মেয়েটিকে আপনি চেনেন?

জ্বি চিনি।

সে যে অভিযোগ আপনার বিরুদ্ধে করেছে সেই সম্পর্কে আপনি কী বলতে চান?

অভিযোগ সত্যি নয়।

আমার জেরা শেষ হয়েছে। আপনি নেমে যেতে পারেন। এখন আমি আমার বক্তব্য পেশ করব।

মিজান অবাক হয়ে তাকাল। জজসাহেব তাকালেন। কোর্টে মৃদু একটা গুঞ্জন হল। করিম সাহেব সুবার বিস্ময় উপভোগ করলেন। নিশাতের দিকে তাকিয়ে হাসির মতো ভঙ্গি করলেন। ইচ্ছে করেই এই নাটকীয়তা তিনি করছেন। এতে সবার মনোযোগ খুবই তীব্রভাবে তিনি আকর্ষণ করতে পারলেন। এর প্রয়োজন ছিল।

মাননীয় আদালত। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে আমি এখানে একটি দুর্বল মামলা পরিচালনা করতে এসেছি। আমার মক্কেলের মেডিকেল রিপোর্টে কিছু পাওয়া যায় নি। কোন প্রত্যক্ষদশীর সাক্ষ্য আমরা জোগাড় করতে পারি নি।

আপনাদের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, এ-দেশের ধর্ষিতা মেয়েদের মেডিকেল রিপোর্টে কখনো কিছু পাওয়া যায় না। ধর্ষিতা মেয়েরা প্রথমে যে কাজটি করেন তা হচ্ছে ধর্ষণের সমস্ত চিহ্ন শরীর থেকে মুছে ফেলেন। অনেক বার করে স্নান করেন। গায়ে সাবান ঘষেন। কারণ তাঁদের ধারণা নেই যে, এটা করা যাবে না। এটা করলে আসামীকে আমরা আইনের জালে আটকাতে পারব না।

আসামীকে শাস্তি দেওয়ার ব্যাপারে আরেকটি বড় বাধা সামাজিক বাধা। এই লজ্জা এবং অপমানের বোঝ কোনো মেয়ে সাহস করে নিতে চায় না। যখন কেউ সাহস করে, তখন কোর্ট তাকে মোটামুটিভাবে ব্যাভিচারিণী হিসেবে প্রমাণ করে দেয়। আমার মক্কেলের ব্যাপারেও সেটা ঘটেছে। তবে আমার মক্কেল শেষ পর্যন্ত কোনে মামলা নিয়ে আসতে পেরেছে, এটা তার জন্যে একটা বড় বিজয়। অনেকেই তা পারে না। তাদের মামলা তুলে নিতে হয়। যেমন মামলা তুলে নিতে হয়েছিল ২১-বাই-বি ঝিকাতলার আশরাফী খানমকে।

আশরাফী খানম আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ৫ই এপ্রিল ১৯৭৬ তারিখে মোহাম্মদপুর থানায় ডাইরি করিয়েছিলেন। সেই ডাইরিতে উল্লেখ আছে যে জনৈক মিজানুর রহমান তাঁকে ধর্ষণ করে। যথারীতি পুলিশ তদন্ত হয়। তবে তদন্তের মাঝামাঝি ফরিয়াদী পক্ষ কেইস উঠিয়ে নেয়। হয়তোবা আমি বলতে পারি কেইস উঠিয়ে নিতে বাধ্য হয়। যদি সেদিন সে তা উঠিয়ে না নিত তা হলে আজ এই মেয়েটি ধর্ষিতা হত না।

মাননীয় আদালতের কাছে আমি জানতে চাচ্ছি আমরা কি তৃতীয় একটি মেয়েকে ধর্ষিতা হবার ক্ষেত্র প্রস্তুত রাখব নাকি রাখব না।

আমার বক্তব্য এই পর্যন্তই। আশরাফী খানম মোহাম্মদপুর থানায় যে-জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার কপি আমি আদালতে পেশ করেছি।

করিম সাহেব বসে পড়লেন। দীর্ঘ সময় আদালতে কোন সাড়াশব্দ হল না। এ. করিম সাহেব নিশাতের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন, আমার তো ধারণা আমরা কেইস জিতে গেছি। আপনার কি তাই মনে হচ্ছে না?

সকল অধ্যায়

১. ০১. কে যেন দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে
২. ০২. রাত আটটা বাজতেই পুষ্পর ঘুম পেয়ে যায়
৩. ০৩. কলিংবেলটা কী সুন্দর করেই না বাজে
৪. ০৪. পুষ্প ঠাণ্ডা মেঝেতে হাত-পা এলিয়ে পড়ে আছে
৫. ০৫. জহিরের দাড়ি শেভ করবার ব্যাপারটা
৬. ০৬. পুষ্পদের বাড়িওয়ালা আওলাদ সাহেব
৭. ০৭. নিশাত বলল, ছটফট করছ কেন
৮. ০৮. মোহাম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ
৯. ০৯. রকিব জেগে আছে
১০. ১০. নিশাত খুব ভোরবেলায় তার মার বাড়িতে
১১. ১১. রকিব তিন দিন অফিসে এসেছে
১২. ১২. কোনো কারণে জহির রেগে আছে
১৩. ১৩. বিখ্যাত লোকদেরই কি চেহারা খারাপ
১৪. ১৪. পুষ্প হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে
১৫. ১৫. দুপুরের খাবারের বিশাল এক আয়োজন
১৬. ১৬. টেলিফোন
১৭. ১৭. দুটি গোলাপগাছ মরে গেছে
১৮. ১৮. আসামীর ক্রস একজামামিনেশন
১৯. ১৯. নিশাত খুব কাঁদছে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন