রেড ফিঙ্গার – ১২

কেইগো হিগাশিনো

অধ্যায় ১২

বদলে গেল ইয়াইকোর অভিব্যক্তি। হাতে ধরে রাখা চায়ের কাপটা শব্দ করে নামিয়ে রাখলো টেবিলের উপরে।

“ভেবেচিন্তে বলছো যা বলার?”

“হ্যাঁ। আমাদের উচিত আত্মসমর্পণ করা, নাওমিকে পুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়া।”

লম্বা একটা সময় স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলো সে। “আমি চিন্তাও করতে পারছি না…”

“আমাদের হাতে আর কোন উপায় নেই। তোমাকে তো বললাম যে পুলিশের লোকেরা এলাকার সবগুলো বাড়িতে খোঁজ নেবে। কোনভাবে যদি জানতে পারে ঘাসগুলো আমাদের বাড়ির, তাহলেই সব শেষ।”

“আমরা এখনো কিছুই জানি না। পুলিশের লোকটা কিন্তু ঘাসের ব্যাপারে তোমাকে কিছু বলেনি।”

“সেটা না বললেও বোঝা যায়। কোন কারণ ছাড়া কেউ কি আমাকে জিজ্ঞেস করবে বাগানের ঘাস কোন জাতের? মেয়েটার কাপড়ে নিশ্চয়ই ঘাসের উপস্থিতি পেয়েছে ওরা।”

“কিন্তু তুমি না বললে সব ঘাস ঝেরে ফেলেছ? পানিও তো ঢেলে দিয়েছ যাতে না লেগে থাকে প্যানে।”

“আমি এতক্ষণ কি বললাম, সেটা তোমার কানে যায়নি? চোখে দেখা যাওয়ার মতন যেগুলো ছিল, সব ঝেরে ফেলেছি আমি। কিন্তু ওদের পরীক্ষার ধরণ তো বোঝোই! একদম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। কিছুটা রয়েও যেতে পারে।”

“এতই যখন জানো, তাহলে কেন ভালো করে ব্যবস্থা নিলে না?” ভ্রু কুঁচকে বলে ইয়াইকো

“আর কি করবো আমি, শুনি? কাজটা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা বুঝতে পারছ? সবকিছু তাড়াহুড়ার মধ্যে করতে হয়েছে আমাকে যেন কেউ না দেখে। মেয়েটার পুরো পিঠজুড়ে লেগে ছিল ঘাস। কি করতে বলছো আমাকে তখন? আবারো ফেরত নিয়ে আসবো বাসায়?”

আকিও জানে যে এখন এসব আলোচনায় আসলে কোন লাভই হচ্ছে না, তবুও মাথায় রক্ত চড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। গতরাতে কাজটা করতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে ওকে, এটা ঠিক। কিন্তু সেই সাথে এটাও ঠিক যে কাজটা যতটা ভালোভাবে করা উচিত ছিল ওর, ততটা ভালোভাবে করতে পারেনি। সবগুলো ঘাসই সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু তাড়াহুড়োয় তা সম্ভব হয়নি।

এক হাতে কপাল চেপে ধরে বসে আছে ইয়াইকো। “কি হবে এখন….”

“বললামই তো তোমাকে। আমাদের কাছে আর কোন উপায় নেই। নাওমিকে পুলিশের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সবাই ভাববে ঘটনায় আমার আর তোমারও সম্পৃক্ততা আছে, কিন্তু সেক্ষেত্রেও আমাদের পক্ষে কিছু প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ একভাবে না একভাবে আমরাই দায়ী সবকিছুর জন্যে।

“সবাই বলবে আর তুমি মেনে নিবে?”

“এছাড়া আর কোন উপায় নেই।”

“আর কোন উপায় নেই! আর কোন উপায় নেই! এক কথা আর কতবার বলবে? একটু কি দায়িত্ব নেয়া যায় না একবার?” চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে বলে ইয়াইকো। “নাওমির ভবিষ্যত যে এসবের সাথে জড়িত, তা তোমার মাথায় আছে? এমন তো নয় যে ও কিছু চুরি করেছে বা কারো কোন ক্ষতি করেছে! কেউ যদি এটা জানতে পারে ও বাচ্চা একটা মেয়েকে মেরে ফেলেছে, তাহলে পুরো জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। ‘আর কোন উপায় নেই’ এই কথাটা বাদে অন্য কিছু কি তোমার মাথায় আসছে না? তুমি যে দৃষ্টিতে পুরো ব্যাপারটা দেখছ, আমি কিন্তু সেভাবে দেখছি না। ছেলের জন্যে একদম শেষ অবধি লড়াই করবো আমি।”

“কি করবে তুমি শুনি? আছে তোমার কাছে কোন সমাধান? আমাদেরকে যদি সামনের বাগানের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়, কিছু বলতে পারবে?”

“আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু অস্বীকার করবো।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকিও।

“পুলিশ কি তোমার কথা মানবে?

“ওরা যদি এটা প্রমাণ করতেও পারে ঘাসগুলো আমাদের বাগানের, তবুও কিন্তু এটা বলা যাবে না যে নাওমিই মেয়েটাকে খুন করেছে। হয়তো বাইরের কেউ আমাদের অগোচরে মৃতদেহটা রেখে গেছে ওখানে।”

“পুলিশের লোকটা জানতে চেয়েছিল বাসায় কেউ আছে কিনা। মেয়েটাকে কেন আমরা কেউ দেখলাম না, সেটার যুক্তিযুক্ত কোন ব্যাখা আছে বলে মনে হয় না।”

“না দেখতেই পারি! সারাক্ষণ তো কেউ আর বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকে না।”

“তোমার কি আসলেই মনে হয় পুলিশ তোমার এই যুক্তিগুলো মেনে নিবে?”

“চেষ্টা না করা অবধি তো বলা যাবে না।”

“কোন লাভ হবে না, আমি বলে দিচ্ছি তোমাকে।”

“তো? নাওমিকে যাতে গ্রেফতার না হতে হয় সেজন্যে যা করার দরকার করবো আমি। কিন্তু তোমার ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকছে না। এত তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দিলে? কিছু কি ভাবতেও পারছ না?”

“অনেক চিন্তা করেছি আমি। কিন্তু অন্য কোন সমাধান নেই, বিশ্বাস করো আমার কথা।”

“না, ভাবোনি। তোমার খালি গা বাঁচিয়ে চলার অভ্যাস। নিশ্চয়ই মনে মনে ধরে নিয়েছ নাওমিকে পুলিশ গ্রেফতার করলেই ঝামেলা চুকে যাবে। পরিবারের প্রতি কোন খেয়ালই নেই তোমার।”

“তোমার ধারণা ভুল।”

“তাহলে আমি যেটাই বলছি, সেটার ভুল ধরছো কেন? ভুল না ধরে চিন্তা ভাবনা করে কোন পরামর্শও তো দিতে পারো। আর যদি বলার মত কিছু না থাকে, তাহলে মুখটা বন্ধ রাখো। পুলিশকে কথাগুলো বিশ্বাস করানো যে সহজ হবে না, সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে হবে না আমার। আমি চেষ্টা করে দেখতে চাই।”

ইয়াইকোর বেপরোয়া ভঙ্গির কারণে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করছে আকিও।

এই সময় মাসায়ের গুণগুণ শব্দ ভেসে এলো ভেতরের ঘর থেকে। এতে আরো রেগে গিয়ে সামনে রাখা টুথপিকের বক্সটা সর্বশক্তিতে মেঝের উপরে আছাড় মারলো ইয়াইকো। চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল ভেতরের কাঠিগুলো।

“আসলে আমি বলতে চাইছি নাওমি যদি এখন নিজে থেকে দোষ স্বীকার করে নেয়, সেটা মিথ্যে বলে ধরা পড়ার চাইতে ভালো। এতে পরবর্তীতে ওর পুনর্বাসন সহজ হবে। তাছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক হবার কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে ওর নাম প্রকাশ করা যাবে না কোথাও। আর আমরা যদি এখান থেকে চলে যাই, তাহলে অতীত সম্পর্কেও কেউ জানবে না। “

“পুনর্বাসন? কি বলছো এসব? তোমার কি আসলেও ধারণা যে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম প্রকাশ না পেলে লোকের মুখ বন্ধ থাকবে? ঠিকানা বদলিয়েও কোন লাভ নেই। ও যে একটা বাচ্চা মেয়েকে খুন করেছে, সেই সত্যটা সারা জীবন তাড়া করে বেড়াবে। কেউ কি ওর বিষয়ে এই সত্যটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারবে কখনো? তুমি নিজে কি এরকম একজন মানুষের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে পারবে? আমি তো পারব না। নাওমি যদি গ্রেফতার হয়, ওর জীবন তো নষ্ট হবেই, সেই সাথে আমাদের জীবনেও কিছু থাকবে না। আর এই সত্যটা যদি বুঝতে না পার, তাহলে তোমার চেয়ে বড় আহাম্মক আর কেউ নেই।”

কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না আকিও।

ইয়াইকোর কথাগুলো যে বাস্তব, সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই একদিন আগ অবধিও আকিওর মনে হতো অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও অপরাধের পূর্ণ শাস্তি পাওয়া উচিৎ। আর হত্যা বা ধর্ষণ এরকম হীন সব অপরাধের জন্যে মৃত্যুদণ্ডই শ্রেয়। একজন খুনী কখনোই নিজের ভুল বুঝতে পারে না। কিন্তু এখনকার আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটা সময় অবধি হাজতবাসের পর ছেড়ে দেয়া হয় খুনীদের। ইয়াইকো ঠিকই বলেছে। একজন চিহ্নিত খুনীর পাশাপাশি একই বাসায় থাকা সহজ হবে না, সে যত কম বয়সেই খুনটা করুক না কেন।

“চুপ করে আছো কেন এখন? বলো কিছু?” অশ্রুসিক্ত চোখে বললো ইয়াইকো।

মন্ত্র জপার মতন একটানা গুণগুণ করেই চলেছে মাসায়ে।

“আমাদের যদি কিছু করতেই হয়, তাহলে একদম ভেবেচিন্তে করতে হবে।”

“ভেবেচিন্তে?”

“মিথ্যে বললে, একদম হিসেব কষে বলতে হবে। পুলিশের লোকেরা যখন জানবে ঘাসগুলো আমাদের বাগানের, নাওমির প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিবে অবশ্যই। ও কি পুলিশি জেরা সামলাতে পারবে?”

“এসব জিজ্ঞেস করছো কেন?”

চোখ বন্ধ করে ফেলল আকিও। চিন্তাটা মাথায় আসলেই মনে মনে গুমরে উঠছে ও।

ছোট মেয়েটার লাশ পার্কে রেখে আসার সময়েই একটা বুদ্ধি মাথায় এসেছিল ওর। নাওমিকে সন্দেহের আওতামুক্ত রাখার জন্যে বুদ্ধিটা খারাপ না। তবে এখন পর্যন্ত ইচ্ছে করে চিন্তাটা মাথা থেকে দূরে ঠেলে রেখেছিল। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় এরকম একটা ভাবনা এসেছে ওর মনে, নিজেকে একথা বলে প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করেছে কোন লাভ হয়নি। যা মন্দ, তা শতভাগ মন্দ। একবার যদি ভাবনাটা জেঁকে বসে ওর চিত্তে, তাহলে আর নিস্তার নেই।

“কি ভাবছ এত? বলো আমাকে?” অধৈর্য্য কন্ঠে বলে ইয়াইকো

“পুলিশের লোকেরা যদি ফিরে আসে…” বলতে শুরু করলো আকিও। “আর আমরা যদি বুঝতে পারি যে মিথ্যে বলে কোন লাভ নেই…” থেমে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল ও।

“তাহলে কি করবো?

““সত্যটা স্বীকার করে নিতে হবে।”

“হ্যাঁ, সেটাই করবো আমি,” শীতল কন্ঠে বলে ইয়াইকো।

“আমার কথা পুরোটা শোনো।”

লম্বা একটা শ্বাস নিল আকিও।

“আমি আসলে বোঝাতে চেয়েছি….”

সকল অধ্যায়

১. রেড ফিঙ্গার – ১
২. রেড ফিঙ্গার – ২
৩. রেড ফিঙ্গার – ৩
৪. রেড ফিঙ্গার – ৪
৫. রেড ফিঙ্গার – ৫
৬. রেড ফিঙ্গার – ৬
৭. রেড ফিঙ্গার – ৭
৮. রেড ফিঙ্গার – ৮
৯. রেড ফিঙ্গার – ৯
১০. রেড ফিঙ্গার – ১০
১১. রেড ফিঙ্গার – ১১
১২. রেড ফিঙ্গার – ১২
১৩. রেড ফিঙ্গার – ১৩
১৪. রেড ফিঙ্গার – ১৪
১৫. রেড ফিঙ্গার – ১৫
১৬. রেড ফিঙ্গার – ১৬
১৭. রেড ফিঙ্গার – ১৭
১৮. রেড ফিঙ্গার – ১৮
১৯. রেড ফিঙ্গার – ১৯
২০. রেড ফিঙ্গার – ২০
২১. রেড ফিঙ্গার – ২১
২২. রেড ফিঙ্গার – ২২
২৩. রেড ফিঙ্গার – ২৩
২৪. রেড ফিঙ্গার – ২৪
২৫. রেড ফিঙ্গার – ২৫
২৬. রেড ফিঙ্গার – ২৬
২৭. রেড ফিঙ্গার – ২৭
২৮. রেড ফিঙ্গার – ২৮
২৯. রেড ফিঙ্গার – ২৯
৩০. রেড ফিঙ্গার – ৩০
৩১. রেড ফিঙ্গার – ৩১

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন