রেড ফিঙ্গার – ১৮

কেইগো হিগাশিনো

অধ্যায় ১৮

দিনে চতুর্থবারের মতন ইন্টারকমটা বেজে উঠলো। এর আগে তিনবারের মধ্যে দু’বার পুলিশের লোক এসেছিল। এবারেও ওদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। ইন্টারকমের রিসিভার নামিয়ে রেখে গম্ভীর মুখে ইয়াইকোর দিকে তাকালো আকিও।

“আবারো পুলিশ?” দুশ্চিন্তা-মাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে ইয়াইকো। “হ্যাঁ।”

“পরিকল্পনা মাফিক কাজ করবো আমরা?”

“আগেই কিছু কোরো না! আগে দেখি কি বলে তারা। যদি দেখি অবস্থা বেগতিক, তাহলে তোমাকে ইশারা করবো। তখন আমরা যা ঠিক করে রেখেছি, সেটা করবে।”

মাথা নেড়ে সায় দেয়ার বদলে ইয়াইকো দুই হাতের তালু একসাথে করে চেপে ধরলো।

“কি সমস্যা?”

“কিছু না। আশা করি কোন ঝামেলা হবে না। “

“এখন এসব বলে লাভ কি? যা হবার সেটাই হবে….”

“হ্যাঁ,” দূর্বলভাবে মাথা নেড়ে প্রায় ফিসফিস করে বলে ইয়াইকো।

দরজা খুলে বাইরে দুই ডিটেকটিভকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো আকিও।

কাগা আর মাতসুমিয়ার সাথে আগেও কথা হয়েছে ওর।

“আবারো বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত,” কাগা বলে। “এবার কি হলো?”

“নিখোঁজ হবার আগে ভিক্টিম ঠিক কি কি করেছিল, কোথায় গিয়েছিল, সেই বিষয়ে তদন্ত করছি আমরা এখন। আমাদের হাতে আসা কিছু সূত্র অনুযায়ী এই এলাকায় দেখা গিয়েছিল তাকে।”

হঠাৎই যেন প্রচণ্ড গরম লাগতে লাগল আকিওর। শিড়দাড়া বয়ে যায় শীতল এক স্রোত।

“তো, আমরা কি করতে পারি?“

“আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম। জানতে চাইতাম তারা কেউ দেখেছিল কিনা মেয়েটাকে,” মাতসুমিয়া ভিক্টিমের ছবি দেখিয়ে বলে।

“আপনার সহকর্মী তো আজ সকালে আমাকে এই কথা জিজ্ঞেস করেছিলেন একবার, তখন বলেছি,” আকিও বলে।

“হ্যাঁ, কিন্তু আমি শুধু আপনার সাথে কথা বলেছিলাম,” কাগা বললো এবারে। “এই একই প্রশ্ন আপনার পরিবারের অন্যদেরও করতে চাই আমি।”

“আমার স্ত্রী’র ব্যাপারেও তো কথা হয়েছিল।”

“কিন্তু আপনার তো চোদ্দ বছর বয়সী এক ছেলেও আছে, তাই না? “ নাওমি’র কথা কানে যেতেই কেঁপে উঠলো আকিও। পুলিশের লোকেরা ভালো করেই জানে এই এলাকার কোন বাড়িতে কতজন সদস্য।

“আমার ছেলে কিছু বলতে পারবে বলে মনে হয় না।”

“হয়তো। কিন্তু আমরা নিশ্চিত হতে চাইছি।”

“বিষয়টা আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ।”

“ঠিক আছে। ছবিটা দেয়া যাবে? আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসছি।” মাতসুমিয়া তার হাতে ছবিটা দিল।

“আমরা এটাও জানতে চাই সেদিন আপনারা কে কখন বাসায় ছিলেন? একটু ভেবেচিন্তে জবাব দিবেন এই প্রশ্নের।”

“কেন?”

“ভিক্টিম যেখানে খুন হয়েছে, সেখানে ঘাসে ঢাকা একটা জায়গা ছিল বলে নিশ্চিত হয়েছি আমরা। সেজন্যেই আপনাদের বাগান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা আর কি।”

“মানে আপনারা বলতে চাইছেন আমাদের বাড়িতে এসেছিল সে?”

“না, আমরা এখনও ল্যাব থেকে কোন রেজাল্ট পাইনি। কিন্তু এমনটাও হতে পারে যে আপনাদের অবর্তমানেই হয়তো মেয়েটা বাগানে প্রবেশ করেছিল। তখন বাসায় কেউ ছিল না। এজন্যেই আপনারা সেদিন কে কোথায় ছিলেন, তা জানতে চাইছি। “

“এই তথ্যগুলো জানলে আমাদের সুবিধা হবে তদন্তে,” কাগা হেসে কথাটা বললো।

আসলেও কি তাই? আকিও ভাবে। কিন্তু এখন আরো প্রশ্ন করলে সন্দেহ বাড়বে বৈ কমবে না ডিটেকটিভদের। ছবিটা হাতে নিয়ে বাড়ির ভেতর চলে এলো ও।

“এসব প্রশ্ন করছেন কেন উনারা?” ফ্যাকাসে মুখে জানতে চাইল ইয়াইকো। “জানিনা। কিন্তু এবারে জবাব চাই তাদের।”

“আমাদের অ্যালিবাই আছে কিনা তা যাচাই করে দেখবে?

“‘সেটা হতে পারে। কিন্তু আমরা কখন বাসায় ছিলাম, তাতে তো কিছু যায় আসে না।”

“আমাদের কি সন্দেহ করছে পুলিশ?”

“তাই তো মনে হচ্ছে।”

“প্লিজ এমন কিছু বলো না যাতে নাওমিকে সন্দেহ করে। এটা বললে কেমন হয় যে ও স্কুল থেকে ফেরার পর আর বেরই হয়নি।”

জবাব দেয়ার আগে কিছুক্ষণ ভাবলো আকিও। “না, সেটা উচিৎ হবে না।“

“কেন?”

“এই অবস্থায় আমাদের খুব সাবধানে সব পরিকল্পনা করতে হবে।” ছবিটা হাতে নিয়ে হলওয়েতে ফিরে এলো আকিও। ডিটেকটিভ দু’জন এখনও আগের জায়গাতেই আছে।

“কি হলো?” কাগা জিজ্ঞেস করলো।

“আমার ছেলেও কখনো দেখেনি মেয়েটাকে।”

“ঠিক আছে। আপনি, আপনার স্ত্রী এবং ছেলে গতকাল কে কখন বাসায় ফিরেছিলেন, তা বলতে পারবেন?”

“আমি ফিরেছি সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ।”

“আপনার অফিস কোথায়, সেটা জানতে পারি কি?” একটা নোটপ্যাড বের করে বের করলো কাগা।

আকিও তাকে বললো যে ওর অফিস কায়াবাচোতে। সাধারণত সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কাজ শেষ হয়ে যায় ওর, কিন্তু সেদিন সাড়ে ছ’টা অবধি ছিল।

“আপনি কি সেই সময় একাই ছিলেন?”

“কাজ একাই করছিলাম, কিন্তু আরো কয়েকজন সহকর্মী ছিল ওখানে।”

“আপনার ডিপার্টমেন্টের?”

“আমার ডিপার্টমেন্টের ছিল একজন। কিন্তু অন্যান্য ডিপার্টমেন্টেরও কয়েকজনকে দেখেছি।”

“আচ্ছা। আপনার সহকর্মীদের নাম বলা যাবে কি?” বিনীত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো কাগা।

“আমি আপনাকে মিথ্যে বলছি না।”

“সেই বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই,” হাত নেড়ে বলে কাগা। “আমার মনে হয় না যে কেসটার সাথে আপনার কোন সম্পৃক্ততা আছে। কিন্তু আনুষ্ঠানিকতার খাতিরে আমাদের জিজ্ঞেস করতেই হয়। আসলে শুধু আপনাকে না, এই এলাকার মোটামুটি সব বাসাতেই আমাদের অফিসারেরা সবার কাছ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করছে। আমরা ঘটনার সময়কার সামগ্রিক একটা চিত্র দাঁড় করাতে চাইছি আর কি। আপনার কাছে হয়তো বিরক্তিকর ঠেকছে পুরো ব্যাপারটা।”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকিও।

“চাইলে যাচাই করে দেখতে পারেন, কোন সমস্যা নেই। আমার সহকর্মী ইয়ামামোতো ছিল আমার সাথে সেদিন অফিসে। ও অন্য ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে। এছাড়াও আরো দু’জন ছিল।”

তাদের নামধাম এবং কোন ডিপার্টমেন্টে কাজ করে সব খুলে বললো আকিও। ও নিশ্চিত যে পুলিশের লোকেরা এখন মায়েহারা পরিবারের সবার অ্যালিবাই পরীক্ষা করে দেখবে। মেয়েটার পিঠে লেগে থাকা ছোট ছোট ঘাসগুলোই ওদের আতশ কাঁচের নিচে ঠেলে দিয়েছে।

তবে আকিওর নিজের অ্যালিবাই নিয়ে কোন চিন্তা নেই। মিথ্যে কিছু বলেনি ও। কিন্তু ওর পরিবারের যে সেটায় খুব উপকার হবে, এমন নয়। বরং উল্টোটাই সত্যি। ওকে বাদ দিয়ে অন্যদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিবে পুলিশ।

এখন কেবল ঠুনকো মিথ্যে বলে পার পাওয়া যাবে না। দক্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের ক্রমাগত প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে নাওমি আগে বা পরে কিছু বেফাঁস কিছু বলেই বসবে।

“আর আপনার স্ত্রী?” কাগা প্রশ্ন করে।

“আমি যতদূর জানি, দুপুরে কাজ ছিল ওর। ফিরেছে সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ।” ইয়াইকো কোথায় চাকরি করে সেই তথ্যটা নোটবুকে টুকে নিল কাগা। “আর আপনার ছেলে?” লেখা শেষে জিজ্ঞেস করে সে।

এবার শুরু হবে আসল খেলা, আকিও ভাবে। বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে যায় অকস্মাৎ।

“স্কুল থেকে দেরি করে ফিরেছিল ও। এই আটটার দিকে।”

“আটটা! স্কুল তো ছুটি হয় অনেক আগে!”

“সেটাই তো! বকাও দিয়েছিলাম, কিন্তু আজকালকার ছেলেমেয়েদের তো চেনেনই।”

“পুরোটা সময় কি একাই ছিল?’

“তাই তো বলেছিল। এর বেশি কিছু বের করতে পারিনি। আমার ধারণা কোন ভিডিও গেইম আর্কেডে গিয়ে পড়ে ছিল।”

সন্দিহান চোখে নোটবুকের লেখাগুলোর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল কাগা। তবে সন্দেহ খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। খানিক বাদেই হাসিমুখে আকিওর দিকে তাকাল সে।

“আর আপনার মা?”

“আমার মা?” একটু অবাকই হলো আকিও। “মা’র ঠাণ্ডা লেগেছিল খুব। সারাদিন ঘুমিয়েছে। তাছাড়া মা’র যে অবস্থা, কেউ বাগানে ঢুকলেও খেয়াল করার কথা না।”

“ঠাণ্ডা লেগেছিল? গতকাল দেখে তো ওরকম কিছু মনে হলো না।”

“পরশুদিন হুট করেই জোর এসেছিল খুব।“

“ওহ আচ্ছা…”

“আর কিছু জানতে চান? “

“না, আপাতত এটুকুই। এই সময়ে এসে বিরক্ত করার জন্যে দুঃখিত। গোয়েন্দা দু’জন চলে গেছে নিশ্চিত হবার পর দরজা বন্ধ করে ডাইনিং রুমে ফিরে এলো আকিও। ইয়াইকো অপেক্ষা করছিল ওর জন্যে। কানে ফোনের রিসিভার চেপে ধরে রেখেছে সে। ইশারা করে বোঝাল হারুমি ফোন করেছে।

“ওর আবার কি চাই?”

“তোমাকে কি যেন জিজ্ঞেস করবে।”

পেট গুড়গুড় করছে আকিও’র। সেই অবস্থাতেই রিসিভারটা নিল ও। “কি খবর?”

“ভাইয়া, শোন্…দু’জন পুলিশ অফিসার এসেছিল আমার এখানে। মা’র ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করলো।”

প্রায় লাফিয়ে উঠলো আকিও। এত তাড়াতাড়ি ওর বোনের সাথেও কথা বলা হয়ে গেছে!

“মা’র ব্যাপারে আবার কি প্রশ্ন?”

“জানতে চাইছিল যে কেন গতকাল আর আজকে মা’র দেখাশোনা করতে তোদের ওখানে যাইনি। আমি বলেছি তুই খেয়াল রাখতে পারবি বলে যেতে মানা করেছিস। সেটাই জানিয়ে রাখলাম।“

“আচ্ছা।”

“আমি যে তোদের বাড়ির সামনে গাড়ি পার্ক করি, সেটা অনেকেরই নজরে পড়েছে। দুই দিন না দেখে অবাক হয়েছে নিশ্চয়ই।”

“আর বলিস না। আমাদের বাসায় তো কয়েকবার পুলিশ এসেছে ইতিমধ্যে। এই এলাকার উপরে ভালোই নজর পড়েছে ওদের।”

“শুনেই তো বিরক্তিকর মনে হচ্ছে। কিন্তু মা কেমন আছে? আমি যে স্যান্ডউইচগুলো নিয়ে গিয়েছিলাম, দিয়েছিলি?”

“হ্যাঁ, দিব না কেন? সেটা নিয়ে ভাবিস না।”

“ঠিক আছে। কিছু লাগলে ফোন দিস।”

“দিব। রাখলাম।”

মাথা নিচু করে রিসিভার নামিয়ে রাখল আকিও। “কি হলো তোমার?” ইয়াইকোর কন্ঠে উৎকণ্ঠা।

“আমাদের হাতে আর কোন উপায় থাকল না,” জবাব দেয় ও। “করতেই হবে কাজটা।”

সকল অধ্যায়

১. রেড ফিঙ্গার – ১
২. রেড ফিঙ্গার – ২
৩. রেড ফিঙ্গার – ৩
৪. রেড ফিঙ্গার – ৪
৫. রেড ফিঙ্গার – ৫
৬. রেড ফিঙ্গার – ৬
৭. রেড ফিঙ্গার – ৭
৮. রেড ফিঙ্গার – ৮
৯. রেড ফিঙ্গার – ৯
১০. রেড ফিঙ্গার – ১০
১১. রেড ফিঙ্গার – ১১
১২. রেড ফিঙ্গার – ১২
১৩. রেড ফিঙ্গার – ১৩
১৪. রেড ফিঙ্গার – ১৪
১৫. রেড ফিঙ্গার – ১৫
১৬. রেড ফিঙ্গার – ১৬
১৭. রেড ফিঙ্গার – ১৭
১৮. রেড ফিঙ্গার – ১৮
১৯. রেড ফিঙ্গার – ১৯
২০. রেড ফিঙ্গার – ২০
২১. রেড ফিঙ্গার – ২১
২২. রেড ফিঙ্গার – ২২
২৩. রেড ফিঙ্গার – ২৩
২৪. রেড ফিঙ্গার – ২৪
২৫. রেড ফিঙ্গার – ২৫
২৬. রেড ফিঙ্গার – ২৬
২৭. রেড ফিঙ্গার – ২৭
২৮. রেড ফিঙ্গার – ২৮
২৯. রেড ফিঙ্গার – ২৯
৩০. রেড ফিঙ্গার – ৩০
৩১. রেড ফিঙ্গার – ৩১

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন