৮. ব্যাংক

নবনীতা দেবসেন

ব্যাংকে যেতে হল সকালে উঠেই।

গা ম্যাজম্যাজ করছে তিতলির। শ্রাদ্ধের যা কিছু আয়োজন সবটাই তিতলি করছে। দাদা আর জিনা এসে ওদের অফিসের গেস্ট হাউসে উঠেছে। দাদা বলেছে—’ওসব আমি পারব না তিতু। তুই আর মিতু যা করবার কর, আই শ্যাল পে মাই শেয়ার। অ্যান্ড ডু দ্য নিউফুল অন দ্যাট ডে।’ মিতুল তো চতুর্থী করে নিয়েছে শ্বশুরবাড়িতেই, নিজের মতো করে। এখন অবশ্য সে-ও তিতলির সঙ্গে ঘুরছে। ব্যবস্থার কাজে রিলা-মৌদের সাহায্য না পেলে মুশকিল হত। কলকাতা এখন আর তেমন পরিচিত নেই ওদের দুই বোনের।

ব্যাংকটা গড়িয়াহাটে।

সকালে ভিড় থাকে পথে। এখান থেকে বেশ খানিকটা দূর। এখানটা সুন্দর, ফাঁকা, সবুজ, যেন কলকাতা নয়, যেন বাইরে কোথাও বেড়াতে এসেছে। বারান্দায় দাঁড়ালেই প্রাণটা জুড়িয়ে যায়। সুন্দর বাগানও করেছে এরা হাউসিং কমপ্লেক্সের চৌহদ্দির ভিতরে। সবই তো ভালো, স্বাস্থ্যকর, সুদৃশ্য, কিন্তু ট্যাক্সি না হলে কোথাওই যাওয়া যায় না। সকালে ট্যাক্সি পাওয়াও মুশকিল। কোথাও যেতে হলে আগে থেকে গাড়ি ভাড়া করতে হয়। এখন ব্যাংকে যাবার জন্যেও গাড়ি ভাড়া করা দরকার ছিল। ক’মাসের জন্য তো গাড়ি কেনার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু কাল তিতলির মনে ছিল না। এক্ষুনি আর গাড়ি পাওয়া গেল না। ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে ট্যাক্সি নেই।

বাসে চড়ার অভ্যেস অনেকদিন চলে গেছে।

তা ছাড়া এখন, এসব রাস্তায়, এই ই. এম. বাইপাসে, নতুন নতুন কী সব যে বাস চলে, তাও জানে না তিতলি। মুশকিল হল।

হঠাৎ একটি গাড়ি থামল।

‘আপনি কোনদিকে যাবেন?’

তিতলি তাকাল। স্টিল গ্রে মারুতি এস্টিম। মাঝবয়সি ভদ্রলোক চালকের সিটে। কাঁচাপাকা চুল, কিন্তু মুখটাতে তারুণ্য। অচেনা মানুষের কাছে লিফট নিতে নেই। তাকে যতই বিশ্বাসযোগ্য দেখাক।

‘আপনাকে তো—?’

‘আমি শৌভিক দত্ত। আপনার নীচের ফ্ল্যাটেই থাকি। লিফটে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আপনার আলাপ হয়েছে, হিমিকা।’

‘ও: হো!’ এবার ঠোঁট ছাপিয়ে হাসি ফুটল তিতলির।—’আমি একটু ব্যাংকে যাচ্ছিলাম, গড়িয়াহাটে যাব—আপনি?’

‘আসুন।’ গাড়ির দরজা খুলে ধরল শৌভিক। ‘ওইদিকেই যাচ্ছি।’

.

কোথায় ছিল মায়ের সেই দেড়খানা ঘরের সংসার শিবুদাদের বাড়ির দেড়তলায়, সিঁড়ির মাঝখানে দোতলা আর তেতলার মাঝামাঝি—পায়রার বকবকমে চড়াই পাখির কিচিরমিচিরেই যেটুকু প্রকৃতির স্পর্শ ছিল। আর ছিল বেড়ালের ডাকাতিতে! বেড়ালের হাত থেকে দুধটুকুনি, মাছটুকুনি রক্ষে করতে মাকে সদা সতর্ক থাকতে হত। এই ফ্ল্যাট মায়ের জন্যেই কেনা। মা একদিনও পা রাখলেন না। এখানে এলে মা’র আয়ু বৃদ্ধি পেত।

‘আপনি কি এখানে থাকতে এলেন? না অন্যান্য NRI-দের মতো বছরে একবার ছুটি কাটিয়ে যাবেন?’

শৌভিকের প্রশ্নে জেগে উঠল তিতলি। ‘না, মানে, এখনও স্থির করিনি। ফ্ল্যাটটা নিয়েছিলাম আমার মায়ের জন্যে। মা থাকবেন, আমি বছরে দুবার করে অন্তত এসে মায়ের কাছে থাকব, দিদিরা এসে থাকবে বছরে একবার—এরকমই ইচ্ছে ছিল। তো, মা হঠাৎ চলে গেলেন, গৃহপ্রবেশের আগেই। শ্রাদ্ধের ব্যবস্থা করছি এখন।’

‘ইশ!’ শৌভিক স্তব্ধ হয়ে যায়।

প্ল্যান তো সব গোলমাল হয়ে গেল। এখন দেখি কী করি। আপনারা কতদিন হল এখানে এসেছেন?’

‘এই তো সবে ফ্ল্যাটগুলো অকুপাই করা শুরু হয়েছে। আমরা এসেছি মাস পাঁচেক। কিন্তু এখনও আগের বাড়ি থেকে শিফট করা শেষ হয়নি। আস্তে আস্তে চলেছে। আমাদের তো এজমালি বাড়ি থেকে উঠে আসা, চট করে চলে আসা যায় না। মা-বাবা ওখানেই আছেন। ভাইরা আছে। তাই একটু একটু করে, ওই আর কি।’

‘কোথায় আপনাদের পুরোনো বাড়ি?’

‘নর্থে। বাদুড়বাগানে। বিদ্যাসাগর মশায়ের বাড়িটা চেনেন? তার কাছে।’

না। চেনে না। তিতলি মাথা নাড়ে। অথচ চেনা উচিত ছিল। প্রেসিডেন্সির কাছেই তো বাদুড়বাগান। একদিনও যায়নি কেন? কেন কখনও ইচ্ছে করেনি বাড়িটা দেখে আসতে?

‘হিমির খুব অসুবিধে হয় ওখানে থাকতে। অত লোকজনের মাঝখানে ওর থাকার অভ্যেস নেই, বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে বড় হয়েছে তো? তা ছাড়া ওখানে টয়লেটের অসুবিধে, দেড়শো-দুশো বছরের পুরোনো বাড়ি। ছেলেমেয়েদের স্কুলও তো এদিকে। হিমির অফিসও এ পাড়ায়। তাই এদিকে চলে আসাটাই ঠিক করা হল। বাদুড়বাগান থেকে আসা-যাওয়াও খুব স্ট্রেনুয়াস ছিল।’

শৌভিক আপনমনেই ব্যাখ্যা করে যায়, কেন সে তার বাবা-মা-ভাইদের ছেড়ে, পৈতৃক ভিটে ছেড়ে এই উটকো ফ্ল্যাটে উঠে এসেছে। বোধহয় দিনের মধ্যে দশবার ওর নিজেকে নিজে নিজেই এ কথাগুলো শোনাতে হয়। এখন শ্রোতা পেয়েছে তিতলিকে।

শৌভিকের জন্য মায়া হতে থাকে তিতলির। বেচারি বউয়ের শখ মেটাতে বাবা-মা-ভাইদের, প্রতিবেশীদের পরিত্যাগ করে, জন্মভিটে ছেড়ে, অজানা, অচেনা মুলুকে চলে এসেছে স্ত্রী-পুত্রের হাত ধরে। এখানে ওর কোনও শেকড় নেই।

এসব ফ্ল্যাটে কারুরই কোনও শেকড় থাকে না। এসে পড়বার পরে আস্তে আস্তে অ্যাডভেনটিশাস রুটস গজায়। ঝুরি নামানো শুরু হয় শূন্যে, আস্তে আস্তে সেই ঝুরি একদিন মাটি স্পর্শ করবে, কাণ্ডে পরিণত হবে। ততদিন দোদুল্যমান।

‘ভালোই করেছেন এদিকে এসে। নর্থে এত পলিউশন, ছেলেমেয়েদের তার মধ্যে বেড়ে ওঠাও ভালো না। এখানে অন্তত ফ্রেশ এয়ার পাবে। বাচ্চাকাচ্চাও আছে, সঙ্গীর অভাব হবে না। চিলড্রেনস পার্কে তো কত বাচ্চা খেলা করে দেখি।’

সেটা যা বলেছেন। হানড্রেড পার্সেন্ট কারেক্ট!’ হঠাৎ শৌভিকের ম্লানতা ঘুচে যায়। এই জোরটুকুই সে চাইছিল। দপ করে জ্বলে ওঠে তার মুখটি। বাবা-মাকে ছেড়ে এসে সে পুরোপুরি স্বস্তিতে নেই। তার বুকে অপরাধবোধের কাঁটা বিদ্ধ হয়ে আছে। বৃদ্ধ বাবা-মাকে ফেলে রেখে আসার পাপে।

‘বাচ্চাদের কথাটা তো ভাবতেই হবে। ওদের ওখানে খেলার এরকম সুবিধে ছিল না। তা ছাড়া সুইমিং পুল রয়েছে, জিম রয়েছে। হিমির আর আমার জন্যে জিমটা তো একটা দারুণ লাভ!’ শৌভিক বলতে থাকে—’বাবা-মা আসবেন না নিজেদের ভিটেবাড়ি ছেড়ে। ভাইরা আছে, বাবা-মাকে দেখাশুনো করবার মানুষের অভাব নেই। পুরোনো কাজের লোকজন আছে, তারা তো আত্মীয়ের বাড়া। তবু কী জানেন, আমি তো বড় ছেলে? আফটার অল, আমার কাছে ওঁদের এক্সপেকটেশনটা আলাদা। আমার মা কিন্তু বাবার মতো নন। মা আমাদের এখানে ফ্ল্যাট নেওয়ার স্বপক্ষেই ছিলেন। বাবা শেষ পর্যন্তই অখুশি, একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে বেরিয়ে এসেছি তো?’

একটু থেমে শৌভিক বলল—’স্ট্রেঞ্জ কী জানেন, ছেলেরা দাদু-দিদাকে ভীষণ মিস করছে। উইক এন্ডে এখানে ওদের ধরে রাখা যায় না। বাড়িতে যাবেই যাবে। তাছাড়া খুড়তুতো ভাইবোনেরা আছে—বাড়িতে তো সারাদিনই হুল্লোড় চলছে! ওদের পড়াশুনো কিচ্ছু হয় না ওখানে থাকলে। হিমির খুব টেনশান হয় সেই নিয়ে—’

গড়িয়াহাটের মোড়েই নেমে পড়ল তিতলি। অনেক ধন্যবাদ জানাল শৌভিককে। শুধু শ্রাদ্ধ নয়, মৎস্যমুখীতেও নিমন্ত্রণ করতে হবে এদের। প্রতিবেশীদের সঙ্গে পরিচয়েরও এইটে সুযোগ। ‘গৃহপ্রবেশ’-টাই যেন উদযাপিত হচ্ছে এই নিয়মভঙ্গ উৎসব দিয়ে। কার্ডটা এখনই দেবে কি? না: ফ্ল্যাটেই দেওয়া উচিত। কার্ড ছাপানো হয়েছে তিন ভাই-বোনের নামেই। যদিও মিতুল বারণ করেছিল—’আমি তো বিবাহিত মেয়ে, অন্য গোত্রের—শ্রাদ্ধে আমার রাইট নেই।’

কিন্তু তিতলি শোনেনি। জিনা আর অশোকদার নাম নেই। আজকাল দেখা যায় পুত্র-পুত্রবধু, মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি সকলেরই নাম কার্ডে থাকে। তিতলির সেটা অতি বাজে লাগে। শুধু পুত্রের নামটা থাকাও যেমন বাজে। সবগুলি সন্তানেরই যখন মাতৃদায়, সব ক’জনেই নিমন্ত্রণকর্তা হবে, সেটাই স্বাভাবিক।

.

ব্যাংকের ম্যানেজারটি মেয়ে। তিতলিরই সমবয়সি হবে। স্মার্ট, সুন্দরী, অত্যন্ত এফিশিয়েন্ট। শাড়ি-পরিহিতা মেমসাহেবের মতোই হাবভাব, কিন্তু টেবিলে সিরডি সাঁইবাবার ছবি আছে। খুবই যত্ন করে সাহায্য করে সে তিতলিকে, তিতলি ওকেও নিমন্ত্রণ করতে এসেছে এবং কিছু ফিনান্সিয়াল পরামর্শও নেবার আছে। কাচের ঘরের মধ্যে সৌমী ব্যস্ত। অন্য একজন ক্লায়েন্টের সঙ্গে আলোচনা করছে। যতক্ষণ না ফ্রি হচ্ছে ততক্ষণ তিতলি একটা চেয়ারে বসল। এখানে কোনও ম্যাগাজিন নেই। ওয়েট করতে হলে কেবল মানুষের মিছিল দেখা ছাড়া গতি নেই। সেটা অবশ্য ভালোই লাগে। কত ধরনের, কত স্তরের, কত বয়সের মানুষ। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে, ময়দানবের তৈরি মতন আয়নার, পালিশ করা পাথরের মেঝেয় সাবধানে পা ফেলে-ফেলে কত ধরনের মানুষজন আসছেন। অফিসের চেক নিয়ে বেয়ারা, পেনশন তুলতে বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, অল্পবয়সি চঞ্চল চোখ ছেলেমেয়ে; মাঝবয়সি গিন্নি, বোধহয় এসেছেন ফিক্সড ডিপজিট করতে—মাঝবয়সি পুরুষের সংখ্যাই বেশি। সৌমী ব্যস্ত কাচের ঘরের মধ্যে। তার দরজার বাইরে তিতলি বসে অপেক্ষা করছে। হঠাৎ তিতলিকে দেখতে পেয়ে হাসল সৌমী। হাসিমুখেই ইঙ্গিত করল ভিতরে যেতে।

তিতলি একটু সঙ্কোচের সঙ্গে ঢোকে। এ-দেশে এটা একটা বাজে ব্যবস্থা। ডাক্তার, ব্যাংকার, সবাই একজন থাকতে-থাকতে আরেকজনকে ভদ্রতা করে ডেকে নেয়। প্রিভেসির মূল্য দেয় না, হাত দিয়ে যে চেয়ারটা ওকে দেখিয়ে দিল সৌমী—টেবিলের ধারের সেই চেয়ারে না বসে একটু দূরের চেয়ারটাতেই বসল তিতলি। যে ভদ্রলোক বসে আছে, তাঁর পিছনে। বসেই নজর করল। ভদ্রলোকের বসার ধরন, মাথার পিছনটা কাঁধের কাছটা দেখে হঠাৎ বুকের মধ্যে ছলাৎ করে উঠল—খুব চেনা একজনের কথা মনে পড়ে গেল তিতলির। কিন্তু সে এ-দেশে থাকে না। দুজন মানুষের মধ্যে এতখানি মিলও হয়? সৌমী ফোন তুলছে। কাকে যেন বলছে—’পিংকি, মিস্টার চন্দ্রর কাজটা হয়ে গিয়ে থাকলে নিয়ে এসো। হয়ে গিয়েছে? গুড! হি ইজ ওয়েটিং—

তিতলির মাথার মধ্যেটা ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। শেষের কথাগুলো ঠিক কানে ঢুকল না…মিস্টার চন্দ্র? তাহলে তো ঠিকই দেখেছে। ও তাহলে আর কেউ নয়, সে-ই।

‘গুড মর্নিং, ডক্টর চ্যাটার্জি, হাউ আর ইউ টুডে? আমি এক্ষুনি ফ্রি হয়ে যাব, উই আর অলমোস্ট ডান—’

এবার ভদ্রলোক কৌতূহল মুখ ফেরালেন এদিকে। এবং পাথর হয়ে গেলেন। তারপরেই পিং পং বলের মতো লাফিয়ে বেরিয়ে এল নামটা, তাঁর ঠোঁট ভেদ করে। অস্ফুটে। ‘তিত-লি’!

তিতলি দেখল, অর্জুন।

‘সো ইউ নো ওয়ান অ্যানাদার?’ হাসিহাসি গলায় প্রশ্ন করল সৌমী।

‘ইয়েস, উই ডু।’ বলে হাসতে চেষ্টা করল তিতলি।—উই ওয়ার ইন কলেজ টুগেদার।’

‘গ্রে-ট কতদিন পরে দেখা?’ সৌমী জিগ্যেস করে।

‘তা বছর দশ-বারো হবে?’—গলা ঝেড়ে নিয়ে বলল অর্জুন।

‘বারে।’ তিতলি বলল। মনে মনে। বারো বছর। এক যুগ। এক যুগ, পরে তোর সঙ্গে দেখা হচ্ছে অর্জুন। বারো বছর তোকে চোখে দেখিনি, তোর গলার স্বর শুনিনি, তোর মুখে তিতলি ডাকটা শুনিনি। বারো বছর। যত বছর আমরা পরস্পরকে চিনতাম, তার চেয়ে ঢের বেশি দিন হয়ে গেল পরস্পরকে না-চেনার হিসেব। মুখে বলল,

‘তুই কলকাতায়? কেপটাউনে থাকিস বলে শুনেছিলাম?’

‘থাকতাম। এখন অনেকদিন কলকাতায়।’ একটু থেমে বলল—’তুই এখানে? কবে এলি? কলেজ ছুটি বুঝি?’

ব্যাগ খুলে কার্ড বের করতে করতে চোখ নীচু রেখে তিতলি বলল—’মা। মা চলে গেলেন।’

অর্জুন স্তব্ধ হয়ে যায়।

প্রথমে সৌমীর দিকে তিতলি একটা সাদা খাম এগিয়ে দেয়, নামলেখা। তারপর আরেকটা নাম-না-লেখা খাম বের করে, কলম বের করে, তাতে লেখে, অর্জুন চন্দ্র।

‘এই যে। দুটো ঠিকানাই দেওয়া আছে। শ্রাদ্ধ একুশে, চৈতন্যমঠে। আর ”মৎস্যমুখী”টা বাড়িতে। নতুন ফ্ল্যাটে। তেইশে। দুটোতেই যাবি। সৌমী, ইউ মাস্ট কাম টু বোথ। তোমাকেই নিমন্ত্রণ করতে আসা।প্লাস, আই ওয়ান্ট টু নো আ ফিউ থিংস।’

সৌমী যারপরনাই দু:খী মুখেই বলল, ওর কখনই কোনও শ্রাদ্ধেই যাওয়া সম্ভব হয় না—কেন না ব্যাংকের আওয়ার্সের মধ্যে ওটা পড়ে।

কিন্তু সন্ধ্যাবেলাটাতে যেতে চেষ্টা করবে।

‘নিশ্চয়ই। আইল ট্রাই মাই বেস্ট।’ ঝকঝকে হাসে সৌমী।

অর্জুন চুপচাপ বসে আছে।

‘তোরও দু’দিনেরই নেমন্তন্ন। যাস। কার্ডে নতুন ফ্ল্যাটের ঠিকানা পাবি।’ অর্জুন চুপচাপ বসে আছে।

অর্জুন কোনও কথা বলল না। তিতলিই বলে, —’মাসিমা-মেসোমশাই কেমন আছেন?’

‘মা ভালো। বাবা নেই। মেসোমশাই—?’

‘বাবাও চলে গেছেন। সাড়ে তিন বছর, চার বছর হল।’

.

একটা অস্বস্তি ঘরের মধ্যে ভারী পাথরের মতো চেপে বসছে। সেটা সৌমীও টের পাচ্ছে। আরেকবার পিংকিকে ফোন করে তাড়া দিলে সে। একগোছা কাগজ নিয়ে পিংকি ঢুকতেই যেন তাজা বাতাস খেলে গেল দমবন্ধ, ঠান্ডা, আধো-অন্ধকার ঝাঁ-চকচকে পালিশ করা ঘরটাতে। এয়ারটাইট সিন্দুকের মতো ঘর। সৌমীই এ ঘরটার প্রাণ। যত্ন করে কাগজপত্রগুলি অর্জুনকে বুঝিয়ে দেয় সৌমী। অজুর্ন উঠে দাঁড়ায়। তারপর হঠাৎ বলে—’আমি বাইরে বসছি। তুই কাজ সেরে আয়।’

‘আমার কিন্তু মিনিট দশেক লাগবে—’

‘আমার হাতে সময় আছে। টেক ইওর টাইম।’

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন