বচন
বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের সংখ্যার ধারণা প্রকাশের উপায় বা সংখ্যাত্মক প্রকাশের উপায়কে বচন বলে। অর্থাৎ বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ যে ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর প্রতিনিধিত্ব করছে বা বোঝাচ্ছে, সেই ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীর সংখ্যা, অর্থাৎ সেটি একসংখ্যক না একাধিক সংখ্যাক, তা বোঝানোর পদ্ধতিকেই বচন বলে।
প্রকারভেদ
বচন ২ প্রকার- একবচন ও বহুবচন।
একবচন
যখন কোন শব্দ দ্বারা কেবল একটি ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীকে বোঝান হয়, তখন তাকে একবচন বলে। যেমন- ছেলেটা, গরচটা, কলমটা, ইত্যাদি।
বহুবচন
যখন কোন শব্দ দ্বারা একাধিক ব্যক্তি, বস্ত্ত বা প্রাণীকে বোঝান হয়, তখন তাকে বহুবচন বলে। যেমন- ছেলেগুলো, গরচগুলো, কলমগুলি, ইত্যাদি।
কেবল বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের বচনভেদ হয়। কখনোই বিশেষণ পদের বচনভেদ হয় না। কিন্তু কোন বিশেষণবাচক শব্দ যদি কোন বাক্যে বিশেষ্য পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তখন তা বিশেষ্য পদ হয়, এবং কেবল তখনই তার বচনভেদ হয়। [পদ প্রকরণ]
বাংলায় বহুবচন বোঝানোর জন্য কতগুলো শব্দ বা শব্দাংশ (বিভক্তি) ব্যবহৃত হয়। এগুলোর অধিকাংশই এসেছে সংস্কৃত ভাষা থেকে। অর্থাৎ, বলা যায়, এগুলোর বেশিরভাগই তৎসম শব্দ বা শব্দাংশ। যেমন- রা, এরা, গুলা, গুলি, গুলো, দিগ, দের (শব্দাংশ বা বিভক্তি); সব, সকল, সমুদয়, কুল, বৃন্দ, বর্গ, নিচয়, রাজি, রাশি, পাল, দাম, নিকর, মালা, আবলি (শব্দ)।
বহুবচন বোধক শব্দাংশের ব্যবহার
১.রা/এরা: শুধু উন্নত প্রাণীবাচক শব্দের সঙ্গে, অর্থাৎ মানুষ বা মনুষ্যবাচক শব্দের সঙ্গে ‘রা/এরা’ ব্যবহৃত হয়। সোজা কথায়, বস্ত্তবাচক শব্দের সঙ্গে ‘রা/এরা’ যুক্ত হয়। যেমন- ছাত্ররা লেখাপড়া করে। শিক্ষকেরা লেখাপড়া করান। তারা সবাই লেখাপড়া করতে ভালোবাসে।
২. গুলা/গুলি/গুলো: বস্ত্ত ও প্রাণীবাচক শব্দের সঙ্গে ‘গুলা/গুলি/গুলো’ যুক্ত হয়। যেমন- বানরগুলো দাঁত কেলাচ্ছে। অতগুলো আম কে খাবে? গুলিগুলো মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছিলো।
বহুবচন বোধক শব্দের ব্যবহার
১. উন্নত প্রাণীবাচক বা ব্যক্তিবাচক শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত বহুবচন বোধক শব্দ-
২. বস্তু ও প্রাণীবাচক শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত বহুবচন বোধক শব্দ-
৩. কেবল জন্তুবাচক শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত বহুবচন বোধক শব্দ-
৪. বস্তুবাচক বা অপ্রাণীবাচক শব্দের সঙ্গে ব্যবহৃত বহুবচন বোধক শব্দ-
বহুবচনের বিশেষ প্রয়োগ
১. একবচন বোধক বিশেষ্য ব্যবহার করেও বহুবচন বোঝানো যেতে পারে। যেমন-
২. একবচন বোধক বিশেষ্যের আগে বহুত্ব বোধক শব্দ, যেমন- অজস্র, অনেক, বিস্তর, বহু, নানা, ঢের ব্যবহার করেও বহুবচন বোঝানো যেতে পারে। যেমন-
৩. বিশেষ্য পদ বা তার সম্পর্কে বর্ণনাকারী বিশেষণ পদের দ্বিত্ব প্রয়োগে, অর্থাৎ পদটি পরপর দুইবার ব্যবহার করেও বহুবচন বোঝানো যেতে পারে। যেমন-
৪. বিশেষ নিয়মে সাধিত বহুবচন-
৫. কিছু বিদেশি শব্দে বাংলা ভাষার বহুবচনের পদ্ধতির পাশাপাশি বিদেশি ভাষার অনুকরণেও বহুবচন করা হয়ে থাকে। যেমন-
বিশেষ দ্রষ্টব্য : বহুবচন বোধক শব্দ ও শব্দাংশগুলোর অধিকাংশই সংস্কৃত। আর তাই এগুলো ব্যবহারের নিয়মও সংস্কৃত শব্দে বা তৎসম শব্দেই বেশি হয়। খাঁটি বাংলা শব্দে বা তদ্ভব শব্দে এসব নিয়ম সাধারণত মানা হয় না। আর আধুনিক বাংলা ভাষার চলিত রীতিতেও এ সকল নিয়ম প্রায়ই মানা হয় না। তদ্ভব শব্দের বহুবচনে ও আধুনিক চলিত রীতিতে বিশেষ্য ও সর্বনামের চলিত রীতিতে সহজ কয়েকটি শব্দ ও শব্দাংশ ব্যবহৃত হয়। এগুলো হল-
সাবধানতা/ অশুদ্ধি সংশোধন
একই সঙ্গে একাধিক/ একটির বেশি বহুবচন বোধক শব্দ ও শব্দাংশ ব্যবহার করা যাবে না। যেমন- ‘সব মানুষেরা’ বললে তা ভুল হবে। বলতে হবে ‘সব মানুষ’ বা ‘মানুষেরা’।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন