মৌর্য – ৬০

আবুল কাসেম

সেলুকাসের পরাজয় মৌর্যদের অনেক বড় বিজয়, এতে সন্দেহ নেই। গ্রিকদের বিরুদ্ধে এ জয় দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত। আলেকজান্ডারের সময় থেকে সেলুকাসের সময় পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময়ে সিন্ধু অঞ্চলে গ্রিক শাসন ভারতীয় ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ অধ্যায় অবসানের নায়ক চন্দ্ৰগুপ্ত মৌর্য আর নেপথ্য স্বপ্নদ্রষ্টা পণ্ডিত আচার্য তাঁর মহামন্ত্রী চাণক্য। এ দুজন এখন মহা ভাবনায়। সেলুকাস শর্ত মেনে নিলে কোনো সমস্যা থাকে না। না মানলে কীভাবে অগ্রসর হতে হবে, এই ভাবনা ও আলোচনায় মত্ত এঁরা।

চাণক্য ভেবেচিন্তে বললেন, পথ একটাই উন্মুক্ত। আমাদের জোর করতে হবে। জোর করতে হলে সামনে এসে যাবে সেলুকাসের যুদ্ধাপরাধের বিচার, শুধু সিন্ধু অঞ্চল নয়, তাঁর সমস্ত সাম্রাজ্য অধিকারের জন্য অভিযান এবং সম্রাটের কন্যাকে সবার ইচ্ছার বাইরে বিয়ে। আগে হবে বিয়ে, তারপর অভিযান এবং সব শেষে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সম্রাট এবং তাঁর জেনারেলদের বিচার।

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত হেসে বললেন, আচার্য শুরুতেই কঠিন পথ বেছে নিয়েছেন। আমি আলোচনার পক্ষে। এঁরা এখন পরাজিত। পরাজয়ে গ্লানি আছে। গ্লানিবোধ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে অন্তরায় সৃষ্টি করে। একটু সময় নিয়ে বাস্তবতা অনুধাবন করে সুস্থ সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই নেবেন।

মহামান্য সম্রাট, এঁরা সম্মানজনক রাজকীয় আত্মীয়তা মানতে চাইছেন না। একে অসম্মান মনে করছেন। ভারতীয়দের প্রতি অবজ্ঞা থেকে এই মনোভাবের জন্ম হয়েছে। আমরা তাঁদের আর ছাড় দেব কেন? এখন সবই আমাদের হাতের মুঠোয়।

হাতের মুঠোয় বলেই বেশি ভাবতে হচ্ছে, আচার্য। আমরা চাইলেই তাঁদের হত্যা করতে পারি। কিন্তু জবরদস্তি করে কি এদের মন জয় করতে পারি? আনুগত্য লাভ করতে পারি? পারি না। বাহুবলে জয় আর অন্তর শক্তির জয় এক জিনিস নয়। ভারতীয় দর্শন অন্তরের শক্তিতে বিশ্বাসী। পাশ্চাত্যের সঙ্গে এখানেই আমাদের পার্থক্য।

তাহলে আমরা কত সময় অপেক্ষা করব? এই অপেক্ষা কালে আবার সংগঠিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করে পশ্চিমের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সম্রাট পুত্র এন্টিওকাস সৈন্যসামন্ত নিয়ে এসে আমাদের আক্রমণ করে বসবে না তো?

কেন, পশ্চিমাঞ্চলে আমাদের ভারতীয় সীমানা বরাবর মৌর্য সৈন্য পাঠানো হয় নি?

পাঠানো হয়েছে সম্রাট। আমরা আমাদের সিন্ধু অঞ্চল অধিকারে নিয়েছি। কিন্তু সেখানে আমাদের সৈন্যবল কম। এখানে বন্দী গ্রিকদের ঘিরে রাখতে অধিকাংশ মৌর্য সৈন্য নিয়োজিত। সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে আমরা আরও সৈন্য সেখানে পাঠাতে পারি। পিতা সেলুকাস বন্দী জানতে পারলে এন্টিওকাস অভিযানে আসবে, তা নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যায়।

চন্দ্রগুপ্ত এ নিয়ে ভাবেন নি, তা নয়। এন্টিগোনাসকে রাজ্য দখলের সুযোগ দিয়ে জেনারেল মোলনকে নিয়ে সীমান্ত অরক্ষিত রেখে পুত্র এন্টিওকাস পিতৃ-উদ্ধারে চলে আসবেন বলে তিনি মনে করেন না। পিতার অবর্তমানে এই পুত্র সেলুসিয়ার একচ্ছত্র শাসক হতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। কথাটা তিনি চাণক্যকে জানিয়েও দিলেন।

আপনার কথায় যুক্তি আছে, সম্রাট। কিন্তু সব ঘটনা যুক্তি মেনে ঘটে না। আরেকটি বিপদাশঙ্কা আছে। সম্রাট টলেমি সেলুকাসকে খুব পছন্দ করেন। তাঁর নৌসেনাপ্রধানও ছিলেন সেলুকাস। টলেমি সাহায্য করতে এগিয়ে এলে তা এক ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে।

এটা একটা আশঙ্কার কথা। আপনি আমাদের গোয়েন্দাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিন। পশ্চিম সীমান্তে আরও সৈন্য মোতায়েন করুন।

ঠিক এ সময় কর্নেলিয়া নিকোমেডেসকে নিয়ে উপস্থিত হলেন। আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি একান্তে মহামান্য সম্রাটের সঙ্গে কথা বলতে চাই। সবাই রীতিমতো অবাক হলেন। চাণক্য সম্রাটের দিকে তাকিয়ে বললেন, আমরা উঠে যেতে পারি, কিন্তু সম্রাটকে নিরাপত্তাঝুঁকিতে রেখে যেতে পারি না।

কর্নেলিয়া হেসে দিয়ে বললেন, সম্রাটের নারী নিরাপত্তা রক্ষীরা বাইরে আছে। এদের সেখানে উপস্থিতি কি যথেষ্ট নয়?

সম্রাট বললেন, আপনারা আসুন, আচার্য, প্রিন্সেসের প্রতি আমার আস্থা আছে।

কর্নেলিয়া বললেন, আপনি চাইলে নিকোমেডেসও বাইরে অপেক্ষা করতে পারে।

সম্রাট মজা করে বললেন, আপনার নিরাপত্তার জন্য একজন গ্রিক পুরুষ থাকা উচিত।

নিকো শুধু পুরুষ নয়, সম্রাট টলেমির একজন নৌসেনা, আমার কাজিন। বেড়াতে এসে আপনাদের জালে আটকা পড়েছে।

সম্রাট লক্ষ করলেন, প্রিন্সেস নির্ভীকভাবে কথা বলে যাচ্ছেন এবং যতটা সম্ভব স্বচ্ছ তাঁর মনোভাব। বললেন, সম্রাট না এসে আপনাকে পাঠালেন?

তিনি পাঠাননি, আমি নিজেই এসেছি।

বলুন, কী বলতে এসেছেন।

মহামান্য সম্রাট, সভয়ে বলব, না নির্ভয়ে?

আপনি যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

কিছুদিন আগে আমি নিকোকে নিয়ে আপনার সঙ্গে দিখা করতে গিয়েছিলাম, তা বোধ হয় আপনি জানেন।

জানি আমি। কিন্তু আপনি দেখা না করে ফিরে গেছেন।

আচার্য ভদ্রবাহু আমাদের ইচ্ছার বাইরেই ফেরত পাঠিয়েছেন। তিনি অবশ্য ঠিক কাজ করেছেন। আপনার মন্ত্রী আমাদের জিম্মি রেখে সম্রাট সেলুকাসের কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, যেগুলো আপনার ভাবমূর্তিতে আঘাত হেনেছে। আপনার সম্পর্কে আমার ধারণা অতি উচ্চ। আমার অনুরোধ, আমাদের সন্ধিচুক্তির মধ্যে আচার্য ভদ্রবাহুকে উপস্থিত রাখুন!

তিনি এখন পাটালিপুত্রে অবস্থান করছেন। আমি তাঁকে অনুরোধ করতে পারি, কিন্তু উপস্থিত করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারি না।

আপনি আমার কথা বলুন, আমার বিশ্বাস, তিনি আমার অনুরোধ ফেলতে পারবেন না।

চন্দ্রগুপ্ত এ কথায় অবাক হলেন। বললেন, আচার্যের এতটা আস্থা আপনার ওপর।

একবার যাচাই করে দেখুন না। আপনার আস্থা তো অর্জন করতে পারি নি, তাই বোধ হয় এ প্রশ্ন।

কর্নেলিয়ার এ কথায় সম্রাটের হৃদয়ে ছোট্ট একটা চোট লাগল। তিনি হেসে দিয়ে বললেন, দেবতার ভাগ্য বরণের কথা আপনি আমাকে বলেছেন, আমি বলি নি।

কিন্তু আপনি সন্ধির শর্তে বিয়ের কথা উল্লেখ করে আমার ভালোবাসাকে অসম্মান করেছেন।

আমি সম্রাটের ওপর চাপ দিতে চেয়েছি আপনাকে পাওয়ার জন্য, তার বেশি কিছু নয়।

আমি কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র আনিয়ে পড়েছি। দুর্বল রাজার কন্যাদান তথা বৈবাহিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ‘অত্যয় সন্ধির’ কথা জানি। আপনার ভালোবাসার শক্তি এত কম? আস্থারও প্রচুর অভাব। আপনার ওপর আমি কীভাবে নির্ভর করব? আমি যতটুকু বুঝি, আপনি কখনোই আমার ওপর জোর খাটাতে পারবেন না। আমাদের মায়েদের কথা চিঠিতে লিখেছিলেন, মনে আছে? মায়ের কাছ থেকে প্রচণ্ড আঘাত পাওয়া কেউ অন্যকে আঘাত করতে পারে না।

আপনি তো আমাকে আঘাত করেই যাচ্ছেন।

এ আঘাত আপনাকে জাগিয়ে তোলার জন্য। অবশ্য যারা জেগে ঘুমায়, তাদের জাগানো যায় না—এ রকম একটি প্রবাদ গ্রিসেও আছে।

আর কী বলতে এসেছেন?

আমি বন্দিনী, আমার আর কী বলার আছে?

সন্ধির শর্ত ছাড়া বিয়ে?

না, তা করলে গ্রিকদের এখন ছোট করা হবে। রাজনৈতিক শক্তির একটা গুরুত্ব আছে। মানুষ জানবে, যুদ্ধে পরাজিত হয়েই গ্রিকরা তাদের কন্যাকে বলি দিয়েছে।

হেলেন, এ কথা বলে আপনি আমাকে এবার সত্যিই আঘাত করেছেন।

আমি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলেছি, আমার নয়। তাই মনে কষ্ট নেবেন না। এ যুদ্ধে যদি আপনার পরাজয় হতো, তা আমি মানতে পারতাম না।

কী বলছেন আপনি, প্রিন্সেস?

ঠিক বলেছে সে, মহামান্য সম্রাট। উত্তর থরের যুদ্ধে আপনাদের পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে একটি রটনা রটানো হয় যে আপনি বন্দী হয়েছেন, অথবা মারা গেছেন। সে দ্রুত ছুটে এল উত্তর থরে। আসার সময় বলল, যুদ্ধবন্দী হলে আপনার মুখ দেখবে না, আর যদি যুদ্ধ করে নিহত হন, তাহলে সামরিক কায়দায় স্যালুট করবে। আপনাকে পরাজিত দেখতে চায় না সে, বলল নিকোমেডেস।

গ্রিকদের পরাজয়ে আমি খুশি, এ কথাও বলা যাবে না। মনে হয় এ যুদ্ধে সবার বিজয়ই আমি চেয়েছি, যা সম্ভব নয়। গ্রিক কন্যা হিসেবে আমার ভাগ্যও নির্ধারণ করে দিয়েছে নিয়তি। কিন্তু এ ভাগ্যকে আমি মানি না। নিয়তি আমাকে নিয়ে খেলছে জন্ম থেকেই। পৃথিবীতে কি এমন ভাগ্য কারও আছে, যার মা সৎভাইকে বিয়ে করে? শত্রুকে ভালোবাসে, এমন মানুষ আছে, কিন্তু এমন মানুষ কি আছে যে ভালোবাসার মানুষকে যুদ্ধসন্ধির শর্ত দিয়ে বিয়ে করতে চায়? তা-ও আমার ভাগ্যে ঘটেছে। গ্রিক ট্র্যাজেডির পরিণতি মৃত্যু। আমি আত্মহত্যা করব না, কেউ হত্যা করতে চাইলে প্রতিরোধ করব, আমি দেখতে চাইব নিয়তি আর কী খেলা খেলতে চায় আমাকে নিয়ে। আমি আপনার শর্তে রাজি। বন্দী সম্রাট সেলুকাসকে বোঝাব আমি, তিনি আপনাদের সব শর্ত মেনে নেবেন। তবে আমি এখনো বিশ্বাস করি না এ শর্ত আপনি আরোপ করেছেন, না অন্য কেউ দিয়েছে, যে ভালোবাসার মর্যাদা বোঝে না এবং যে মনের দিক থেকে অত্যন্ত ছোট। আচার্য ভদ্ৰবাহু জানলে কখনোই এ শর্ত আরোপ করতে দিতেন না। এ মানুষটিকে আপনি অনুগ্রহ করে এখানে নিয়ে আসুন। এ বিয়ে শুভ বা অশুভ যা-ই হোক না কেন, তাঁর সামনে হবে—এটিই আমার চাওয়া।

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত ভাবলেন, আচার্য ভদ্রবাহু অভিমান করে চলে গেছেন, তিনি কি আসবেন? তবু বললেন, বিয়ে হোক বা না হোক, আমি তাঁকে নিয়ে আসবই।

পরের ঘটনাগুলো সবই নাটকীয়। সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সম্রাট সেলুকাসের কক্ষে উপস্থিত হলেন। শুধু মহামন্ত্রী চাণক্যকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। সেলুকাস কন্যার প্রত্যাবর্তনে বারবার বলছিলেন, অপমানজনক মুক্তি আমি চাই না

ঢুকেই চন্দ্রগুপ্ত এমন কথা শুনে বললেন, আমি সব শর্ত প্রত্যাহার করছি, সম্রাট। আপনি মুক্ত। আপনি সেলুসিয়ায় ফিরে যান। আমি আপনার সঙ্গে পাঁচশত হস্তী উপহার হিসেবেই পাঠাব। শুধু ভারতীয় ভূখণ্ড আপনি ছেড়ে যাবেন, এ আমার অনুরোধ। যুদ্ধহস্তীগুলো এন্টিগোনাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আপনার কাজে লাগবে।

আপনার মহানুভবতার প্রশংসা করি, সম্রাট। ভারতীয়রা উদার, মহানুভব, তা আবার প্রমাণ করলেন আপনি। ফিলেকাস, তুমি দখল হস্তান্তরের ব্যবস্থা করো। আমরা খুব শিগগির ফিরে যাব।

মহামন্ত্রী চাণক্য কোনো কিছুর জন্যই প্রস্তুত ছিলেন না। মনে মনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন | পরাজিতের সঙ্গে এ কী ব্যবহার! চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আচার্য, আপনি তাঁদের জন্য উপহার পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। বন্দীদের মুক্ত করে দিন, যাতে এরা সম্মানের সঙ্গে সেলুসিয়ায় চলে যেতে পারে।

আমরা কি এভাবে আবার সন্ধিচুক্তি তৈরি করব?

তার প্রয়োজন নেই। শুধু একটা আদেশ জারি করে দিন।

প্রিন্সেস?

তিনিও মুক্ত। তাদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। সেলুকাস ভাবলেন, তিনি স্বপ্ন দেখছেন না তো? প্রিন্সেস কি বলে এসেছে, কে জানে। যা-ই বলুক, সবকিছু পাল্টে গেছে যেন কোনো জাদুমন্ত্রে।

সবার কথা প্রায় শেষ। কর্নেলিয়া বললেন, এত সহজে সবাইকে মুক্ত করে দিলেন, মহামান্য সম্রাট? আমার যে কথা শেষ হয় নি।

কী বলতে চান আপনি, বললেন চাণক্য।

আপনাকে কিছু বলতে চাই না, মহামন্ত্রী মহোদয়। আপনি যা চেয়েছিলেন, আমিও তা চাই। বন্দীদের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে আমার দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তেমন নেই। পরাজিত রাজা এত সুবিধা ভোগ করবেন, এটা বিসদৃশ। সম্রাট মহানুভব, তাই এ কথা বলছেন, কিন্তু আপনি কেন এত সহজে রাজি হয়ে গেলেন, বুঝতে পারছি না।

আমিও বুঝতে পারছি না আপনি কী বলতে চাইছেন?

আচার্য চাণক্যের এ কথায় কর্নেলিয়া বললেন, এত সহজ বিষয়টা আপনি বুঝতে পারছেন না, তা আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। সম্রাট বা রাজারা মহানুভব হলে মন্ত্রীকে হতে হয় কঠিন প্রকৃতির। আপনি আপনার দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছেন না। মহামান্য সম্রাটকে বোঝান যাতে তিনি যে মুক্তিদানের আদেশ করেছেন, তা যেন প্রত্যাহার করে নেন।

কর্নেলিয়ার কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলেন। সম্রাট সেলুকাস বেশি বিস্মিত। বললেন, তোমার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে, কী বলছ আমি বুঝতে পারছি না।

আমি মহামন্ত্রীকে বলছি। তিনি অবশ্যই বুঝতে পারছেন। মহামান্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত, আপনি মহামন্ত্রীকে বলুন চুক্তিপত্রটি চূড়ান্ত করে নিয়ে আসতে, তাতে উভয় পক্ষ স্বাক্ষর করবে।

এ কথা শুনে সেলুকাসের বিস্ময়ের আর সীমা রইল না। প্রায় চিৎকার করে কর্কশ কণ্ঠে বললেন, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? তুমি জানো তুমি কী বলছ?

জানি বাবা, আমার মাথাও খারাপ হয় নি। গ্রিকরা পরাজিত হয়েছে, তাই এরা বিজয়ী মৌর্যদের দেওয়া শর্তে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করবে। কারও দয়ায় ছাড়া পাবে, মুক্ত হবে, এর চেয়ে পরাজয় স্বীকার করে চুক্তি স্বাক্ষর করা অনেক উত্তম। মহামন্ত্রী, আপনি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের জন্য নিয়ে আসুন। চুক্তিপত্রটি একটি কাগজমাত্র নয়, একটি ইতিহাস, যা ঘটে গেছে সিন্ধু উপত্যকায়, গ্রিকদের পরাজয়, কোনো ইতিহাস তা অস্বীকার করতে পারবে না। মৌর্য সম্রাটের মহানুভবতায় গ্রিক সম্রাট সেলুকাস এবং তাঁর বাহিনী মুক্তি পেল, তার কোনো দলিল থাকবে না, তা হয় না। ইতিহাসের এই সত্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এই চুক্তির প্রয়োজন। আমি যত দূর জানি, ভারতীয়রা হৃদয়বান, তাই আবেগপ্রবণ। অবশ্য তার ব্যতিক্রম যে নেই, তা নয়। যেমন মহামন্ত্রী চাণক্য এবং আচার্য ভদ্রবাহু। এঁরা দুজন দুই মেরুর মানুষ। তাঁদের সম্রাট রক্ত-মাংসের একজন মানুষ। আবেগানুভূতিতে পরিপূর্ণ ভারতীয়। তিনি চুক্তি ছাড়াই গ্রিকদের মুক্তি দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আবেগ থেকে এসেছে। তার কারণও কেউ কেউ জানেন। এই আবেগ ইতিহাসের উপাদান নয়, ঐতিহাসিক এক সম্রাটের ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। ইতিহাসের সঙ্গে তা যুক্ত না থাকাই ভালো।

সেলুকাস বললেন, তুমি কি তাহলে বিয়েও মেনে নিচ্ছ?

সন্ধিচুক্তি তো সে কথাই বলে, বাবা। আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেন, আমার মা একজন সিরীয়, যুদ্ধে পরাজিত এক রাজার কন্যা। আমার সত্মা আপামাও তা-ই ছিলেন। আমার পছন্দের এই মাকে আপনি ভালোবেসেছেন। তাই তিনি সুখী ছিলেন। ভালোবাসাই কাউকে সুখ দিতে পারে, কোনো দেশ বা জাতি-ধর্ম নয়। আপনি গ্রিক জাতির যে অহংকার থেকে বিয়ের বিরোধিতা করছেন, আপনার আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে তা চূর্ণ হয়ে গেছে। এ ছাড়া অন্যের রাজ্য দখল করে উপনিবেশ তৈরি করার যে অহংকার, একদিন কোনো মানুষ তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে না, বরং ঘৃণা করবে। তারপরও আমি জানি, যুদ্ধ আপনাদের সংস্কৃতি, অন্যের রাজ্য দখল করার নেশা।

তুমি সম্রাজ্ঞী হলেও তা-ই করতে।

সম্রাজ্ঞী হওয়ার আগে তা বলা শক্ত। রাজা বা সম্রাটের কাজ হলো জনকল্যাণে কাজ করা, তাদের মঙ্গল কামনা করা। সে কাজের চাইতে আপনারা যুদ্ধজয়ের দিকে বেশি মনোযোগী। এ যুদ্ধ হয়তো আপনাদের সে শিক্ষা দেবে না যে যুদ্ধ নয়, মৈত্রী স্থাপনেই শান্তি।

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আমরা মৈত্রী স্থাপনে বদ্ধপরিকর। আশা করি গ্রিকরা আর কখনো ভারতবর্ষ আক্রমণ করবে না।

প্রতিশোধস্পৃহা একদিনে শেষ হয় না, সম্রাট। যে গ্লানি তাড়িয়ে বেড়ায়, তার শেষ হয় প্রচণ্ড ধাক্কায়। আমি গ্লানি মুছে দেওয়ার জন্যই আবার ভারত আক্রমণ করব।

সেলুকাসের কথা শুনে হেসে দিয়ে চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আমরাও প্রস্তুত হয়ে থাকলাম সে আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য।

মহামন্ত্রী চাণক্য সন্ধিচুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করে নিয়ে এলেন। দুই সম্রাটের হাতে দুটি কপি দেওয়া হলো। গ্রিক ও ভারতীয় ভাষায় পাশাপাশি রয়েছে চুক্তির শর্তগুলো। নিচে দুই ভাষায়ই রয়েছে উভয় সম্রাটের নাম।

সেলুকাস চোখ বুলিয়ে বললেন, চুক্তিতে আরেকটি শর্ত যুক্ত করতে হবে।

সবাই চোখ তুলে তাকালেন সম্রাটের দিকে। সম্রাট বললেন, কষ্ট হলেও এ বিয়েতে আমি রাজি। তবে সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের দরবারে আমার একজন গ্রিক দূত থাকবে।

এ শর্ত শুনে সবাই অবাক হলেন। চাণক্য প্রশ্ন তুললেন, তিনি সার্বক্ষণিক দরবারে থাকবেন? আমাদের তাহলে গোপনীয়তা নষ্ট হবে।

এটি মূলত আপত্তি ছিল। সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আচার্য, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেন? সম্রাটের এ শর্তে আমার আপত্তি নেই।

কর্নেলিয়া বললেন, আমি এ প্রস্তাবে খুশি হয়েছি। আরও খুশি হয়েছি মৌর্য সম্রাটের সম্মতিতে। আমার একটি শর্ত আছে। তবে তা সন্ধিতে লেখা হবে না। আচার্য ভদ্রবাহুর উপস্থিতিতে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

তিনি পৌঁছে যাবেন, অনেক আগেই তাঁকে সংবাদ পাঠানো হয়েছে, বললেন চাণক্য। তিনি সুবন্ধুকে ডেকে বললেন, নতুন শর্তটি যুক্ত করে তুমি সন্ধিচুক্তিটি সংশোধন করে নিয়ে এসো।

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত বললেন, আমরা তিনজন একান্তে কথা বলতে চাই। উপস্থিত সবাই মুখ- চাওয়াচাওয়ি করছেন। সম্রাট বললেন, গ্রিক সম্রাট, প্রিন্সেস আর আমি।

পাশের কক্ষে সবাই চলে গেলে সম্রাট পুনরায় বললেন, আমি দুঃখিত যে এ রকম একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। ভারতীয়দের পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কের ধরনটি আমাদের উত্তরাধিকারে এসেছে পিতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করে। গুরুজনদের অসম্মান হয়, এ রকম কাজ থেকে আমরা সচেতনভাবে দূরে থাকি। আর আমাদের পারিবারিক বন্ধন খুবই সুদৃঢ়। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমাদের পরিবারে প্রিন্সেসের কোনো অমর্যাদা হবে না। আমরা পরস্পরকে জানি দীর্ঘদিন থেকে।

দীর্ঘদিন থেকে? অবাক হলেন সেলুকাস। কর্নেলিয়া মিটিমিটি হাসছেন।

চন্দ্রগুপ্ত আবার বললেন, আপনি তখন মহামান্য আলেকজান্ডারের পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপতি সেদিনের কথা আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, সম্রাট আলেকজান্ডারের কবল থেকে আপনি আমাকে মুক্ত হতে সাহায্য করেছিলেন।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, সে তরুণ আমাকেও প্রাণে রক্ষা পেতে সাহায্য করেছিল, সে তরুণ আপনি!

সেদিন আমি বালিকা বয়সী তরুণী প্রিন্সেসকে দেখেছিলাম সিন্ধু নদের লালচে বালুকাবেলায়। পড়ন্ত বিকেল ছিল তখন। সে কথা ভুলে যাই। দীর্ঘকাল পর ঝিলামের প্রমোদ উদ্যানে আবার দেখি। আমি অশ্ব বিক্রেতার ছদ্মবেশে গিয়েছিলাম তক্ষশীলা থেকে ফেরার পথে নতুন সম্রাট, পাগলামি ছিল জীবনের নেশা। প্রিন্সেস তখন খেলার পোশাকে সহচরীদের সঙ্গে। দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই এবং পত্র যোগাযোগ করি। প্রিন্সেস মৌর্য সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞীর মর্যাদা পাবেন। এবার অন্য কথা বলি, বলে থামলেন সম্রাট। পরে বললেন, আমি মৌর্যদের পক্ষ থেকে বলতে পারি, গ্রিকদের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব সব সময় অটুট থাকবে। আমাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের যে পথ দূত নিয়োগের মাধ্যমে আপনি সূচনা করেছেন, তা পরিণতি লাভ করবে। যুদ্ধকালীন আমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করব। সেলুসিয়া ও পাটালিপুত্রের মধ্যে এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। যুদ্ধে সহযোগিতা ছাড়াও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হবে। বাল্মীকি যাবেন হোমারের দেশে। আমাদের সম্পর্ক সুদৃঢ় করবার এ হবে উপযুক্ত উদ্যোগ।

আমি আপনার সঙ্গে একমত। তার আগে আমার সাম্রাজ্যের সুস্থিতি প্রয়োজন। এন্টিগোনাস আমার বড় উদ্বেগের কারণ। তাকে আমি নির্মূল করতে চাই।

আমি আপনাকে এ কাজে সহযোগিতা করব।

আপনার দেওয়া হাতিগুলো এ যুদ্ধে বড় কাজে লাগবে। আপনি শুধু আমার হস্তী যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দেবেন!

তা অবশ্যই করা হবে। চুক্তির বাইরে প্রয়োজনে আরও বেশি হস্তী পাঠাব।

এ সময় উপস্থিত হলেন আচার্য ভদ্রবাহু। চন্দ্রগুপ্ত উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান জানালেন। সেলুকাস এবং কর্নেলিয়াও দেখাদেখি উঠে দাঁড়ালেন।

তুমি অনুরোধ করলে আসতাম না চন্দ্র, আমার প্রিয় ভবিষ্যৎ সম্রাজ্ঞী আহ্বান করলে কী করে না আসি, বলো? আমি সব শুনেছি। আমি খুবই আনন্দিত |

আপনি ভদ্ৰবাহু? আমি আপনার কথা শুনেছি কর্নেলিয়ার মুখে। আপনার বিবেচনাশক্তির প্রশংসা করি আমি। আপনার সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য অনেক অঘটন থেকে রক্ষা পেয়েছে প্রিন্সেস, বললেন সেলুকাস।

চন্দ্র, আচার্য চাণক্য কোথায়?

তিনি আছেন, আচার্য। আমরা নিতান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলছিলাম, তিনি বাইরে আছেন।

আমিও কি বাইরে অপেক্ষা করব?

না, আচার্য, আপনি বসুন, আমাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা শেষ হয়েছে, বললেন চন্দুগুপ্ত প্রিন্সেস, তাহলে বলুন আপনি কেমন আছেন?

আচার্য, আপনার ‘কল্পসূত্র’ আমি পড়েছি। কী অসাধারণ বর্ণনা! এ গ্রন্থ আমাকে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে।

স্বপ্ন দেখলে তো এ রকমই দেখতে হয়। বলতে পারেন এ এক স্বপ্নকাব্য।

শর্মিলা কোথায়, আচার্য?

আছে। ও ধর্মীয় কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছে।

এত বাস্তববাদী ও বিচক্ষণ একটা মেয়ে!

ঠিক বলেছেন। নিকোমেডেস কোথায়?

ও আছে। সে তো আপনার অন্ধভক্ত।

অন্ধভক্ত হবে কেন? সে-ও এক চমৎকার চৌকস যুবক। আমার পছন্দের একজন।

চন্দ্র, তুমি আচার্য চাণক্যকে এখানে নিয়ে এসো। তাঁর অভাববোধ করছি আমি।

সম্রাট সবাইকে ডাকালেন। সবাই মানে মহামন্ত্রী চাণক্য, অমাত্য সুবন্ধু ও নিকোমেডেস। তাঁর প্রধান সেনাপতি, গ্রিক জেনারেল ফিলেকাস ও জেনারেল কিউকেকাসকে সেখানে অবস্থান করতে বললেন।

জেনারেল কিউকেকাস আমার জামাতা, বললেন সেলুকাস।

চন্দ্রগুপ্ত হেসে দিয়ে বললেন, তাঁকেও এখানে আসতে বলো। একটু ভেবে আবার বললেন, না, ওদের দুজনকেও আসতে বলো। সবাই থাকুক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে।

ওদের আসার আগে কর্নেলিয়া বললেন, আমি কি আচার্য ভদ্রবাহুর পাশে বসতে পারি?

আমিই আপনার পাশে আসি, প্রিন্সেস?

তা হবে কেন? প্রিন্সেসই আপনার পাশে বসবে, বললেন সেলুকাস। সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত তাঁর পাশে জায়গা করে দিলেন প্রিন্সেসের জন্য। ভদ্রবাহু ও চন্দ্রগুপ্তের মাঝখানে বসলেন কর্নেলিয়া। বললেন, আমার এ কঠিন সময়ে আপনাকে পেয়ে বড় স্বস্তিবোধ করছি। আপনি আমার মাথায় একটু হাত রাখুন।

ভদ্রবাহু তাঁর মাথায় হাত রাখলেন। কর্নেলিয়ার উচাটন মনোভাবটা কেটে গেল। ভদ্ৰবাহু বললেন, দেবীর মাথায় ফুল-চাক্কিটা যদি পরিয়ে দিতে পারতাম।

কল্পসূত্রের সে দেবী? বললেন কর্নেলিয়া।

সে তো স্বপ্নের দেবী। আমাদের বাস্তবের দেবী আরও সুন্দর। মনোমুগ্ধকর। দেবী সম্রাজ্ঞী, বললেন ভদ্রবাহু।

সকল অধ্যায়

১. মৌর্য – ১
২. মৌর্য – ২
৩. মৌর্য – ৩
৪. মৌর্য – ৪
৫. মৌর্য – ৫
৬. মৌর্য – ৬
৭. মৌর্য – ৭
৮. মৌর্য – ৮
৯. মৌর্য – ৯
১০. মৌর্য – ১০
১১. মৌর্য – ১১
১২. মৌর্য – ১২
১৩. মৌর্য – ১৩
১৪. মৌর্য – ১৪
১৫. মৌর্য – ১৫
১৬. মৌর্য – ১৬
১৭. মৌর্য – ১৭
১৮. মৌর্য – ১৮
১৯. মৌর্য – ১৯
২০. মৌর্য – ২০
২১. মৌর্য – ২১
২২. মৌর্য – ২২
২৩. মৌর্য – ২৩
২৪. মৌর্য – ২৪
২৫. মৌর্য – ২৫
২৬. মৌর্য – ২৬
২৭. মৌর্য – ২৭
২৮. মৌর্য – ২৮
২৯. মৌর্য – ২৯
৩০. মৌর্য – ৩০
৩১. মৌর্য – ৩১
৩২. মৌর্য – ৩২
৩৩. মৌর্য – ৩৩
৩৪. মৌর্য – ৩৪
৩৫. মৌর্য – ৩৫
৩৬. মৌর্য – ৩৬
৩৭. মৌর্য – ৩৭
৩৮. মৌর্য – ৩৮
৩৯. মৌর্য – ৩৯
৪০. মৌর্য – ৪০
৪১. মৌর্য – ৪১
৪২. মৌর্য – ৪২
৪৩. মৌর্য – ৪৩
৪৪. মৌর্য – ৪৪
৪৫. মৌর্য – ৪৫
৪৬. মৌর্য – ৪৬
৪৭. মৌর্য – ৪৭
৪৮. মৌর্য – ৪৮
৪৯. মৌর্য – ৪৯
৫০. মৌর্য – ৫০
৫১. মৌর্য – ৫১
৫২. মৌর্য – ৫২
৫৩. মৌর্য – ৫৩
৫৪. মৌর্য – ৫৪
৫৫. মৌর্য – ৫৫
৫৬. মৌর্য – ৫৬
৫৭. মৌর্য – ৫৭
৫৮. মৌর্য – ৫৮
৫৯. মৌর্য – ৫৯
৬০. মৌর্য – ৬০
৬১. মৌর্য – ৬১
৬২. মৌর্য – ৬২
৬৩. মৌর্য – ৬৩
৬৪. মৌর্য – ৬৪
৬৫. মৌর্য – ৬৫
৬৬. মৌর্য – ৬৬
৬৭. মৌর্য – ৬৭
৬৮. মৌর্য – ৬৮
৬৯. মৌর্য – ৬৯
৭০. মৌর্য – ৭০
৭১. মৌর্য – ৭১
৭২. মৌর্য – ৭২
৭৩. মৌর্য – ৭৩
৭৪. মৌর্য – ৭৪
৭৫. মৌর্য – ৭৫
৭৬. মৌর্য – ৭৬
৭৭. মৌর্য – ৭৭
৭৮. মৌর্য – ৭৮
৭৯. মৌর্য – ৭৯
৮০. মৌর্য – ৮০
৮১. মৌর্য – ৮১
৮২. মৌর্য – ৮২
৮৩. মৌর্য – ৮৩
৮৪. মৌর্য – ৮৪
৮৫. মৌর্য – ৮৫
৮৬. মৌর্য – ৮৬
৮৭. মৌর্য – ৮৭
৮৮. মৌর্য – ৮৮
৮৯. মৌর্য – ৮৯
৯০. মৌর্য – ৯০
৯১. মৌর্য – ৯১
৯২. মৌর্য – ৯২
৯৩. মৌর্য – ৯৩
৯৪. মৌর্য – ৯৪
৯৫. মৌর্য – ৯৫
৯৬. মৌর্য – ৯৬
৯৭. মৌর্য – ৯৭
৯৮. মৌর্য – ৯৮
৯৯. মৌর্য – ৯৯
১০০. মৌর্য – ১০০
১০১. মৌর্য – ১০১
১০২. মৌর্য – ১০২
১০৩. মৌর্য – ১০৩
১০৪. মৌর্য – ১০৪
১০৫. মৌর্য – ১০৫
১০৬. মৌর্য – ১০৬
১০৭. মৌর্য – ১০৭
১০৮. মৌর্য – ১০৮
১০৯. মৌর্য – পুনশ্চ
১১০. মৌর্য – সহায়ক গ্রন্থ/প্রবন্ধ
১১১. মৌর্য – ১০৯
১১২. মৌর্য – ১১০

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন