মৌর্য – ২৬

আবুল কাসেম

ভদ্রবাহু তাঁর খুব প্রিয় শিষ্য সুলভদ্রকে জৈনসংঘের কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। স্থুলভদ্র ভদ্রবাহুর অবর্তমানে জৈনধর্মের হাল ধরবেন। এ সময় সুবন্ধু এসে উপস্থিত হলেন। সুবন্ধু চাণক্যের নিকটজন, সে কথা ভদ্ৰবাহু জানেন। তাই স্থুলভদ্রকে বললেন সুবন্ধুর দেখভাল করতে।

সুবন্ধু জৈন মঠে প্রথম এসেছেন। স্বাভাবিকভাবেই মঠ ও মঠবাসীদের প্রতি তাঁর কৌতূহল রয়েছে। কথার ফাঁকে ফাঁকে এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন। স্থুলভদ্র বললেন, আচার্য, কাউকে প্রয়োজন কি আপনার?

সুবন্ধু হেসে দিয়ে বললেন, না, আচার্য, আমি নতুন এসেছি তো, তাই দেখছি।

চলুন তাহলে, ঘুরে ঘুরে দেখিয়ে দিই।

দেখতে যাওয়ার আগে সুবন্ধু ভদ্রবাহুকে জানালেন চাণক্য কিছুক্ষণের মধ্যে আসবেন।

চাণক্য কিছুক্ষণের মধ্যেই এলেন। তাঁকে কিছুটা বিভ্রান্ত লাগছে। মঠে প্রবেশ করে তিনি জল চাইলেন!

আপনার শরীর ঠিক আছে তো, আচার্য?

শরীর ঠিক আছে। আপনাকে ধন্যবাদ যে আপনার কথায় সম্রাট সাম্রাজ্যের কাজে মনোযোগ দিয়েছেন।

সম্রাট রাজকার্যে মনোযোগ দিয়েছেন? খুবই ভালো কথা। কিন্তু আচার্য, আমি তো সম্রাটের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাই নি।

চাণক্য মনে মনে ভাবলেন, তাহলে সম্রাটের ভাবান্তরের কারণ কী? মুখে বললেন, আপনার তো কথা বলার দরকার নেই, আচার্য, শুধু ইচ্ছা করলেই হয়।

ভদ্রবাহু জানেন, চাণক্য তাঁর সঙ্গে মজা কিংবা আঘাত করার জন্য কোনো কথা বলেন না। তাই এ কথাকে আমলে না নিয়ে বললেন, সম্রাটদের মর্জি। বলে হাসলেন।

কোনো ভূমিকা না করে চাণক্য বললেন, বরাহ মিহিরের প্রেত বড় উৎপাত করছে।

সে কথা আমাকে কেউ কেউ বলেছে। আপনাকে বলল কে?

আমি নিজেই সে উৎপাতের শিকার।

অদ্ভুত ব্যাপার।

শুধু অদ্ভুত না, তার প্রেতাত্মা আপনার মৃত্যুদণ্ড চাইছে আমার কাছে। না হয় নাকি আমাকে দেখে নেবে।

আপনাকে দেখে মনে হচ্ছিল একটু অস্থির আছেন আপনি। আপনি কী বললেন?

সম্রাটের কাছে যেতে বলেছি।

ভালো করেছেন!

উৎপাতটা বন্ধ করা যায় না?

চেষ্টা করতে হবে। খুব কঠিন একটা উপসর্গ আছে। ২৩তম তীর্থঙ্কর পরশেনাথ এ মন্ত্রসূত্রের উপাসক ছিলেন।

একটু তাড়াতাড়ি চেষ্টা করুন, আচার্য, না হয় সে আপনার সঙ্গে আমারও মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে দেবে।

চাণক্যের কথা শুনে উচ্ছ্বসিতভাবে হেসে দিলেন ভদ্রবাহু। বললেন, ও আগে আমার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করবে, তারপর আপনার, কিছুটা সময় বেশি পাবেন আপনি, বলে আবার হাসলেন ভদ্রবাহু।

স্থলভদ্রের সঙ্গে সুবন্ধু ঘুরেফিরে দেখলেন জৈনদের বিহার এলাকা। এখানে যেসব শ্রমণরা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি মহাকাশবিজ্ঞান ও দর্শনের শিক্ষা গ্রহণ করেন, এঁরা সবাই দিগম্বর তাঁদের সঙ্গে আলাপ করে বিস্মিত হলেন সুবন্ধু। অনেক গভীর তাঁদের মহাকাশবিজ্ঞান এবং দার্শনিক জ্ঞান। কাল বা সময় সম্পর্কে বলা তাঁদের কথা মাথা ধরিয়ে দিয়েছে সুবন্ধুকে। সুলভদ্র বললেন, এ জ্ঞান আমরা পাই লোকপরম্পরায়। এতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই।

চাণক্যের উপস্থিতিতেই এক জৈন সন্ন্যাসী জানালেন, তাঁদের কেউ কেউ প্লেগে আক্রান্ত হয়েছে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে তা মহামারির রূপ লাভ করতে পারে।

চাণক্য বললেন, ভয়ানক কথা।

ভদ্রবাহু এ কথা শুনে একটু চক্ষু বুজলেন। শুনতে পেলেন, এটা মিহিরেরই কাণ্ড। তার প্রেত প্রতিশোধস্পৃহায় একেবারে উন্মাদ হয়ে গেছে। শিষ্যদের উদ্দেশে বললেন, তোমরা উদ্যোগ নাও, উপসর্গ স্তোত্রের ব্যবস্থা করতে হবে।

.

কর্নেলিয়ার পিসি দিদাইমেইয়া সংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন সেলুসিয়ায়। এই পিসির কাছে বড় হয়েছেন কর্নেলিয়া। বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সঙ্গে মায়ের চলে যাওয়ায় তাঁর অন্তর ভেঙে গেছে সেই ছোটবেলায়। পিসি তখন তাঁকে তাঁর কাছে নিয়ে যান এবং মায়ের স্নেহ-মমতায় বড় করে তোলেন।

মুখটা শুকনা লাগছে কেন, কর্নি? পিসি তাঁকে আদর করে কর্নি বলে ডাকেন।

তোমাকে দেখে আমার সব ক্লেদ দূর হয়ে গেছে, পিসি। জড়িয়ে ধরে বললেন কর্নেলিয়া। এখন দেখো কেমন ফেয়ার ফেয়ার লাগবে।

ঝিলাম থেকে চলে এলি কেন?

তুমি জানো না, পিসি? মৌর্য আক্রমণের ভয়ে আমাকে জরুরিভাবে নিয়ে আসা হয়েছে।

এসে ভালোই করেছিস। তোকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে যাব।

বেশ মজা হবে।

তোর মা গিয়েছিল সেদিন আমার বাড়িতে।

তার কথা আমাকে বলো না তো, পিসি। একেবারে শুনতে চাই না। সে আমার জীবন থেকে বাদ গেছে।

সে তোর কথা খুব অনুভব করে।

তার তো আরও সন্তান রয়েছে। আমার মা নেই, এই যা।

তোর কষ্টটা আমি বুঝি। সম্পদ হয়েছে, সন্তান হয়েছে, কিন্তু সে সুখী নয়।

গ্রিক মিথ কী বলে, পিসি, বলে, পাপের শাস্তি ভোগ করবে বংশপরম্পরায়।

তুই ভাইবোনদের অভিশাপ দিসনে। ওরা কোনো পাপ করে নি।

ওরা কি আমার ভাইবোন, না ভাইয়ের সন্তান? ছি, আমি আর ভাবতে পারছি না। পিসি, তুমি কেমন আছ, বলো?

তোর পারসিয়ান মা’টা খুব ভালো ছিল রে কর্নি। এমন মা হয় না।

তার ছেলে এমনটা করল?

কেন, তার মেয়ে লাউডিসকে তো তুই খুব পছন্দ করিস।

তা বলতে পারো। আমার সিরিয়ান মা এমনটা করতে পারল, আমি আর ভাবতে পারি না, পিসি। একবারও ভাবল না আমার অবস্থা কী হবে।

লাউডিস তার মেয়েকে নিয়ে এ সময় উপস্থিত হলো। আমি শুনেছি, পিসি, তুমি কর্নেলিয়ার কক্ষে আছ, তাই চলে এলাম।

তোর মেয়েটা খুব কিউট হয়েছে তো। এই, তুই আমার কাছে আয়, বলে হারমিজকে কাছে টেনে নিলেন দিদাইমেইয়া।

হারমিজ নানুকে একটু নাচ দেখিয়ে দাও, বলল কর্নেলিয়া।

সে নিজের গানে নাচতে শুরু করল। তারপর কারও আগ্রহ ব্যক্ত করা ছাড়াই অভিনয় শুরু করে দিল। তা দেখে দিদাইমেইয়া প্রচুর হাসলেন। বললেন, লাউডিস, তোর এই মেয়ে একদিন খুব নাম করবে।

লাউডিস বলল, পিসি, তুমি এসেছ, ভালো হয়েছে। আমরা একটা সংকটে আছি। আমার মনে হয় এ সময়ে তোমার পরামর্শ কর্নেলিয়ার খুব কাজে লাগবে।

কী সমস্যা, কর্নি?

মা, কর্নি কী? হারমিজের প্রশ্ন।

তোর খালামণির আরেক নাম, বলে হাসলেন লাউডিস।

খুব মজা তো।

হ্যাঁ, খুব মজা। তুই এখন একটু বাইরে গিয়ে খেলা কর, যা। লাউডিসের কথায় বাইরে অপেক্ষমাণ সহচরী দিমিত্রি হারমিজকে নিয়ে গেল।

লাউডিস বললেন, কর্নেলিয়া নতুন সমস্যা পাকিয়েছে।

কাউকে ভালোবেসে ফেলেছে? মন্দ কী? শুনেছিলাম ওই ছেলেটা, আর্কিমেডেস, কর্নির পিছু নিয়েছিল।

সে নয়, পিসি।

তাহলে?

সম্রাট চন্দ্ৰগুপ্ত।

কী? মজা করছিস?

একদম না।

কর্নি, ঠিক বলছে লাউডিস?

কর্নেলিয়া মাথা নাড়লেন।

তোর বাবা জানে?

না। জানবে কেমন করে?

সম্পর্কটা ছিন্ন করা কি সম্ভব? সে ভারতীয়, হোক না সম্রাট। সে বিয়ে করে নি?

একজন সম্রাজ্ঞীর কথা আমরা জানি, বললেন লাউডিস।

তাহলে ভুলে যা। আরও সম্রাজ্ঞী থাকতে পারে।

অনেক ভেবেছি, পিসি।

কেন তুই সেদিকে পা বাড়ালি? পরিণতির কথা একবারও ভাবলি না। তোর বাবা কোনোমতেই রাজি হবে না।

তা জানি।

তাহলে?

সে জন্যই তো তোমার সাহায্য চাওয়া, বললেন লাউডিস।

আচ্ছা, দেখা যাক। আমাকে ভাবতে দে।

তুমি এখনই বাবাকে কিছু বোলো না।

তা বলব না। তবে ব্যাপারটা বেশ জটিল। আমি চন্দ্রগুপ্ত সম্পর্কে নিজে খোঁজখবর নেব, বললেন পিসি।

সকল অধ্যায়

১. মৌর্য – ১
২. মৌর্য – ২
৩. মৌর্য – ৩
৪. মৌর্য – ৪
৫. মৌর্য – ৫
৬. মৌর্য – ৬
৭. মৌর্য – ৭
৮. মৌর্য – ৮
৯. মৌর্য – ৯
১০. মৌর্য – ১০
১১. মৌর্য – ১১
১২. মৌর্য – ১২
১৩. মৌর্য – ১৩
১৪. মৌর্য – ১৪
১৫. মৌর্য – ১৫
১৬. মৌর্য – ১৬
১৭. মৌর্য – ১৭
১৮. মৌর্য – ১৮
১৯. মৌর্য – ১৯
২০. মৌর্য – ২০
২১. মৌর্য – ২১
২২. মৌর্য – ২২
২৩. মৌর্য – ২৩
২৪. মৌর্য – ২৪
২৫. মৌর্য – ২৫
২৬. মৌর্য – ২৬
২৭. মৌর্য – ২৭
২৮. মৌর্য – ২৮
২৯. মৌর্য – ২৯
৩০. মৌর্য – ৩০
৩১. মৌর্য – ৩১
৩২. মৌর্য – ৩২
৩৩. মৌর্য – ৩৩
৩৪. মৌর্য – ৩৪
৩৫. মৌর্য – ৩৫
৩৬. মৌর্য – ৩৬
৩৭. মৌর্য – ৩৭
৩৮. মৌর্য – ৩৮
৩৯. মৌর্য – ৩৯
৪০. মৌর্য – ৪০
৪১. মৌর্য – ৪১
৪২. মৌর্য – ৪২
৪৩. মৌর্য – ৪৩
৪৪. মৌর্য – ৪৪
৪৫. মৌর্য – ৪৫
৪৬. মৌর্য – ৪৬
৪৭. মৌর্য – ৪৭
৪৮. মৌর্য – ৪৮
৪৯. মৌর্য – ৪৯
৫০. মৌর্য – ৫০
৫১. মৌর্য – ৫১
৫২. মৌর্য – ৫২
৫৩. মৌর্য – ৫৩
৫৪. মৌর্য – ৫৪
৫৫. মৌর্য – ৫৫
৫৬. মৌর্য – ৫৬
৫৭. মৌর্য – ৫৭
৫৮. মৌর্য – ৫৮
৫৯. মৌর্য – ৫৯
৬০. মৌর্য – ৬০
৬১. মৌর্য – ৬১
৬২. মৌর্য – ৬২
৬৩. মৌর্য – ৬৩
৬৪. মৌর্য – ৬৪
৬৫. মৌর্য – ৬৫
৬৬. মৌর্য – ৬৬
৬৭. মৌর্য – ৬৭
৬৮. মৌর্য – ৬৮
৬৯. মৌর্য – ৬৯
৭০. মৌর্য – ৭০
৭১. মৌর্য – ৭১
৭২. মৌর্য – ৭২
৭৩. মৌর্য – ৭৩
৭৪. মৌর্য – ৭৪
৭৫. মৌর্য – ৭৫
৭৬. মৌর্য – ৭৬
৭৭. মৌর্য – ৭৭
৭৮. মৌর্য – ৭৮
৭৯. মৌর্য – ৭৯
৮০. মৌর্য – ৮০
৮১. মৌর্য – ৮১
৮২. মৌর্য – ৮২
৮৩. মৌর্য – ৮৩
৮৪. মৌর্য – ৮৪
৮৫. মৌর্য – ৮৫
৮৬. মৌর্য – ৮৬
৮৭. মৌর্য – ৮৭
৮৮. মৌর্য – ৮৮
৮৯. মৌর্য – ৮৯
৯০. মৌর্য – ৯০
৯১. মৌর্য – ৯১
৯২. মৌর্য – ৯২
৯৩. মৌর্য – ৯৩
৯৪. মৌর্য – ৯৪
৯৫. মৌর্য – ৯৫
৯৬. মৌর্য – ৯৬
৯৭. মৌর্য – ৯৭
৯৮. মৌর্য – ৯৮
৯৯. মৌর্য – ৯৯
১০০. মৌর্য – ১০০
১০১. মৌর্য – ১০১
১০২. মৌর্য – ১০২
১০৩. মৌর্য – ১০৩
১০৪. মৌর্য – ১০৪
১০৫. মৌর্য – ১০৫
১০৬. মৌর্য – ১০৬
১০৭. মৌর্য – ১০৭
১০৮. মৌর্য – ১০৮
১০৯. মৌর্য – পুনশ্চ
১১০. মৌর্য – সহায়ক গ্রন্থ/প্রবন্ধ
১১১. মৌর্য – ১০৯
১১২. মৌর্য – ১১০

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন