২৯. রাজকন্যার মতো দেখাচ্ছে

হুমায়ূন আহমেদ

সাইফুল ইসলাম মজা খালের পাশে উবু হয়ে বসে ছিল। তার পেছনে দুটি প্রকাণ্ড গাবগাছ। জায়গাটা ঝোপেঝাড়ে ভর্তি। সাপের আড়া নিশ্চয়ই, কিন্তু সাইফুল ইসলামের কেন জানি ভয় করছিল না। দুপুরের দিকে তার প্রচণ্ড ক্ষুধা হয়েছিল, এখন সেটাও নেই। থানার ঘড়িতে রাত নটা বাজার পর একটি শেয়াল তাকে বারবার উঁকি দিয়ে দেখে যেতে লাগল। মরা মানুষ ভেবেছে বোধ হয়। সাইফুল ইসলাম বলল, যা, যা।

শেয়ালটা নড়ল না।

সাইফুল ইসলামের হঠাৎ করে জহুর ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। জহুর ভাই নাকি এক বার চৌধুরী সাহেবের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বলেছিল, হাতজোড় করে মাফ চাও, না হলে এইখানেই খুন করে ফেলব।

চৌধুরী সাহেব হাতজোড় করে মাফ চেয়েছিলেন। কত দিনের কথা, এখন লোকে সেই ঘটনাটা মনে রেখেছে। তার নিজের কেন এ রকম সাহস নেই?

শেয়ালটা আরেকটু এগিয়ে এল। সাইফুল ইসলাম মাটির ঢেলা ছুঁড়ে মারল। শেয়ালটা খানিকটা পিছিয়ে গেল, কিন্তু তাকিয়ে রইল।

কটা বাজে? থানার ঘড়িতে নটার ঘন্টা মনে হয় এক যুগ আগে বেজেছে। সময় আর যাচ্ছে না। রাত এগারটায় একটা ট্রেন আছে। সে কি পালিয়ে যাবে রাত এগারটায়? কিন্তু পালিয়ে যাবেটা কোথায়? শেয়ালটা এগিয়ে আসছে আবার। সে আবার একটা টিল ছুঁড়ল। টিলের শব্দে সড়াৎ করে কী-একটা যেন নামল পানিতে। সাপ নাকি? সাইফুল ইসলাম হঠাৎ লক্ষ করল সাপের অয়টা তার কেটে গেছে। অবশ্যি মনসুরের বাবা বরকত আলি তার জন্যে একটা শিকড় আনবেন বলে গেছেন। সেটি সঙ্গে থাকলে সাপ দশ হাত দূরে থাকবে। সত্যি সত্যি এমন কিছু কি আছে?

মসজিদ থেকে মিষ্টি সুরে ওয়াজ হচ্ছে। কথাগুলি বোঝা যাচ্ছে না। বোধ হয় পর্দা-পুশিদার উপর বলা হচ্ছে। হায়াহীন মেয়েদের কথা, যারা নাভির নিচে শাড়ি পরে, বেগানা পুরুষের দিকে ড্যাবডাব করে তাকায়। যাদের পাতলা রাউজের ভেতর দিয়ে সবকিছুই দেখা যায়–ওয়স্তাগফেরুল্লাহ! এই রমণীদের জন্যে হাবিয়া দোযখ।

সাইফুল ইসলাম উঠে দাঁড়াল। বরকত আলি সাহেবকে সে শনিবারে আসতে বলেছে। কিছুই হয়ত করা যাবে না। এক বার শেষ চেষ্টা করলে কেমন হয়? আর কেউ না থোক, জহুর ভাই তো নিশ্চয়ই তার পাশে এসে দাঁড়াবেন।

 

রান্নাঘরে নতুন করে চারটি চাল ফোটাচ্ছে টুনী। সে দেখে এসেছে মামা বারান্দায় নেই। তার কেন যেন মনে হচ্ছে, মামা গিয়েছে সাইফুল ইসলামকে আনতে। নিয়ে এলে সে নিশ্চয়ই চারটি ভাত খাবে এখানে। টুনী বসে আছে উনুনের পাশে। তার চেহারা তেমন ভাল নয়। কিন্তু আগুনের লালচে আচে তাকে রাজকন্যার মতো দেখাচ্ছে। আগুনের পাশে মানুষকে সব সময়ই সুন্দর দেখায়।

অধ্যায় ২৯ / ২৯

সকল অধ্যায়

১. ০১. সে ছাড়া পেল বসন্তকালে
২. ০২. দবির মিয়া নীলগঞ্জের বাজারে
৩. ০৩. রাজনৈতিক আলোচনা নিষিদ্ধ
৪. ০৪. দেশের উন্নতি হচ্ছে না
৫. ০৫. অঞ্জু খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে
৬. ০৬. অমাবস্যার রাতে নীলগঞ্জ বাজারে
৭. ০৭. সন্ধ্যার আগেই বাঁয়া-তবলা নিয়ে
৮. ০৮. সাইফুল ইসলাম খানার পাশ দিয়ে
৯. ০৯. জহুরের বিছানা আজ বারান্দায়
১০. ১০. থানাওয়ালাদের বিরুদ্ধে কেইস
১১. ১১. জায়গাটা অন্ধকার
১২. ১২. চৌধুরী সাহেবের বাড়ি
১৩. ১৩. রাতে ভালো ঘুম হয় না
১৪. ১৪. হঠাৎ বৃষ্টি
১৫. ১৫. এশার নামাজের পর
১৬. ১৬. নবীনগর থেকে মনসুরের বাবা
১৭. ১৭. দবির মিয়া বিছানায় শোওয়ামাত্র
১৮. ১৮. সাইফুল ইসলাম ভোরবেলা গলা সাধে
১৯. ১৯. জহুরের শার্টের পকেটে
২০. ২০. খয়েরী রঙের একটা শাড়ি
২১. ২১. সাইফুল ইসলাম রাত এগারটার সময়
২২. ২২. নীলগঞ্জ স্টেশনের ওয়েটিং রুমে
২৩. ২৩. অঞ্জু স্কুলে গিয়েছে
২৪. ২৪. সন্ধ্যাবেলা মেয়ে দেখতে আসবার কথা
২৫. ২৫. খুঁটি পোঁতা হচ্ছে
২৬. ২৬. কাঁঠাল গাছের নিচে
২৭. ২৭. নাশতা নিয়ে এল অঞ্জু
২৮. ২৮. ট্রেন থেকে নেমে
২৯. ২৯. রাজকন্যার মতো দেখাচ্ছে

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন