কাউণ্ট কোবরা – ৫৯

কাজী আনোয়ার হোসেন

ঊনষাট

স্লোভেনিয়ার লুবিয়ানা এয়ারপোর্টে নেমে রেন্টাল কার এজেন্সি থেকে নীল একটা মার্সিডিয বেন্য ভাড়া নিয়েছে সুঠামদেহী যুবক। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেছে দেশের উত্তর-পশ্চিমে পাহাড়ি এলাকায়।

মেরি মেয়ার গ্রামের পুলিশ ফাঁড়িতে আধঘণ্টা বিরতির পর, সোজা খ্রিস্টান কবরস্তানের সামনে গিয়ে থামল তার নীল মার্সিডিয। ওটা থেকে নেমে পড়ল ক্লান্ত যুবক। কয়েক রাত ঘুম নেই। খুব রুক্ষ তার চেহারা। চোখে চাপা বেদনা। পরনে জিন্স, ডেনিম জ্যাকেট ও সাদা পোলো শার্ট। মাথার চুল এলোমেলো। ধীর পায়ে হেঁটে লোহার গেট পেরিয়ে নতুন এক কবরের দিকে চলল সে।

ফুরিয়ে এসেছে শীতের কুয়াশা ভরা ধূসর বিকেল। হু-হু হাওয়া বইছে নির্জন কবরস্তানের উত্তরদিক থেকে। নির্জীব, শীর্ণ গাছ থেকে খসে পড়ছে শুকনো বাদামি পাতা, হাওয়ায় ভেসে যাচ্ছে এদিক-ওদিক। দীর্ঘশ্বাস চেপে নতুন সেই কবরের সামনে গিয়ে চুপ করে বসে পড়ল যুবক।

ধীরে ধীরে পেরিয়ে গেল বেশকিছু সময়।

নতুন কবরে বুনে দেয়া সবুজ ঘাস উদাস হয়ে দেখছে যুবক। প্রতি মুহূর্তে বুকে বাড়ছে ক্রোধের ভয়ঙ্কর এক ঝোড়ো তাণ্ডব। সত্যিকার অর্থে জীবনে ভালবাসতে পেরেছে মাত্র দু’একজন নারীকে। তাদেরই একজন লিয়া। মেয়েটা দখল করে নিয়েছিল ওর হৃদয়ের মস্তবড় এক অংশ। আজ লিয়া ঘুমিয়ে আছে কবরের কফিনে, বুলেটের আঘাতে ক্ষত- বিক্ষত।

ওর মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই যুবক যেন বুঝে গেছে, সে হারিয়ে বসেছে নিজের প্রাণের চেয়েও প্রিয় কাউকে।

হিমঠাণ্ডা হাওয়ায় কেঁপে উঠল সে। একটু পর মুখ তুলে দেখল, কখন যেন কবরের ওপাশে এসে দাঁড়িয়েছে চিরচেনা, ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু। কী যেন ভাবছে সে।

উঠে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল সুঠামদেহী যুবক। পরস্পরকে নীরবে আলিঙ্গন করল দুই বন্ধু।

বুক ভেঙে এলেও কাঁদবে না ভেবেছে সুঠামদেহী যুবক। তবুও ওর চোখ বেয়ে নামল তপ্ত কয়েক ফোঁটা অশ্রু।

তার পিঠে আলতো চাপড় দিল বিসিআই বা বাংলাদেশ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্সের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর সোহেল আহমেদ। নিচু স্বরে বলল, ‘রানা, তুই বরং কিছু দিন বিশ্রাম নে। এ ব্যাপারে কথা বলেছি বসের সঙ্গে।’

সবুজ ঘাসে ছাওয়া লিয়ার কবর আবারও দেখল রানা। শীতল হাওয়ার চেয়েও ঠাণ্ডা গলায় বলল: ‘পলিটিশিয়ান এডি অ্যামন নিজের প্রভাব খাটিয়ে ওই দলের হর্তাকর্তাদের গ্রেফতার বলবৎ রাখতে না পারলে, দেশে ফেরার আগে কয়েক দিন ইউরোপেই থাকছি।’

‘জানি, লিয়ার বুকে তোর জন্যে ছিল গভীর ভালবাসা, বলল সোহেল, ‘আমরা হারাতে দেব না ওর স্মৃতি। আগামীকাল বিসিআই থেকে আসছে আরও ক’জন। প্রয়োজনে এক এক করে ওই দলের প্রত্যেককে আমরা পাঠিয়ে দেব নরকে তাদের সঠিক ঠিকানায়।

ঘনিয়ে এসেছে শীতের সন্ধ্যার কালো আঁধার। যে- কোনও সময়ে নীরবে বিদায় নেবে ক্লান্ত, ধূসর ম্লান আলো।

দীর্ঘশ্বাস চেপে বন্ধুর পাশে কবরস্তানের গেট লক্ষ্য করে চলল রানা। হঠাৎ পেছন থেকে করুণ হুতাশের শব্দ তুলে এল শীতল দমকা হাওয়া। রানা পরিষ্কার শুনল ফিসফিস করছে লিয়া: ‘আমাকে যেন ভুলে যেয়ো না, রানা…’

‘না, কোনদিন ভুলব না, লিয়া,’ মনে মনে বলল রানা।

***

সকল অধ্যায়

১. কাউণ্ট কোবরা – ১
২. কাউণ্ট কোবরা – ২
৩. কাউণ্ট কোবরা – ৩
৪. কাউণ্ট কোবরা – ৪
৫. কাউণ্ট কোবরা – ৫
৬. কাউণ্ট কোবরা – ৬
৭. কাউণ্ট কোবরা – ৭
৮. কাউণ্ট কোবরা – ৮
৯. কাউণ্ট কোবরা – ৯
১০. কাউণ্ট কোবরা – ১০
১১. কাউণ্ট কোবরা – ১১
১২. কাউণ্ট কোবরা – ১২
১৩. কাউণ্ট কোবরা – ১৩
১৪. কাউণ্ট কোবরা – ১৪
১৫. কাউণ্ট কোবরা – ১৫
১৬. কাউণ্ট কোবরা – ১৬
১৭. কাউণ্ট কোবরা – ১৭
১৮. কাউণ্ট কোবরা – ১৮
১৯. কাউণ্ট কোবরা – ১৯
২০. কাউণ্ট কোবরা – ২০
২১. কাউণ্ট কোবরা – ২১
২২. কাউণ্ট কোবরা – ২২
২৩. কাউণ্ট কোবরা – ২৩
২৪. কাউণ্ট কোবরা – ২৪
২৫. কাউণ্ট কোবরা – ২৫
২৬. কাউণ্ট কোবরা – ২৬
২৭. কাউণ্ট কোবরা – ২৭
২৮. কাউণ্ট কোবরা – ২৮
২৯. কাউণ্ট কোবরা – ২৯
৩০. কাউণ্ট কোবরা – ৩০
৩১. কাউণ্ট কোবরা – ৩১
৩২. কাউণ্ট কোবরা – ৩২
৩৩. কাউণ্ট কোবরা – ৩৩
৩৪. কাউণ্ট কোবরা – ৩৪
৩৫. কাউণ্ট কোবরা – ৩৫
৩৬. কাউণ্ট কোবরা – ৩৬
৩৭. কাউণ্ট কোবরা – ৩৭
৩৮. কাউণ্ট কোবরা – ৩৮
৩৯. কাউণ্ট কোবরা – ৩৯
৪০. কাউণ্ট কোবরা – ৪০
৪১. কাউণ্ট কোবরা – ৪১
৪২. কাউণ্ট কোবরা – ৪২
৪৩. কাউণ্ট কোবরা – ৪৩
৪৪. কাউণ্ট কোবরা – ৪৪
৪৫. কাউণ্ট কোবরা – ৪৫
৪৬. কাউণ্ট কোবরা – ৪৭
৪৭. কাউণ্ট কোবরা – ৪৮
৪৮. কাউণ্ট কোবরা – ৪৯
৪৯. কাউণ্ট কোবরা – ৫০
৫০. কাউণ্ট কোবরা – ৫১
৫১. কাউণ্ট কোবরা – ৫২
৫২. কাউণ্ট কোবরা – ৫৩
৫৩. কাউণ্ট কোবরা – ৫৪
৫৪. কাউণ্ট কোবরা – ৫৫
৫৫. কাউণ্ট কোবরা – ৫৬
৫৬. কাউণ্ট কোবরা – ৫৭
৫৭. কাউণ্ট কোবরা – ৫৮
৫৮. কাউণ্ট কোবরা – ৫৯
৫৯. কাউণ্ট কোবরা – ৪৬

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন