কাউণ্ট কোবরা – ৫০

কাজী আনোয়ার হোসেন

পঞ্চাশ

ভিয়েনার একটু দূরে তুষারে ছাওয়া পাইন গাছের জঙ্গলে ধূসর ভ্যান নিয়ে পৌঁছে গেল মাসুদ রানা। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে বিরক্ত হয়ে ভাবল: বোধহয় স্রেফ মজা করতেই ওকে এখানে আসতে বলেছে মাইক বুচার।

সামান্য দূরে বরফে ঢাকা বিশাল লেক থেকে উঠছে সাদা ঘন কুয়াশার চাদর। সিটে হেলান দিয়ে গাড়ির জানালা দিয়ে ঘোলাটে গাছপালা দেখছে রানা। মনটা বলছে: বুচারের লোক আসবে না। ভ্যানের মাঝের প্লাইউডের ওদিকে পড়ে আছে নীরব কার্গো। ড্রাগসের কারণে অন্তত দেড় ঘণ্টার ভেতর ঘুম ভাঙবে না মানুষটার।

পাঁচ মিনিট পর অপেক্ষার শেষ হলো। কাদা ভরা পথে কুয়াশার ভিতর দিয়ে আবছা দেখা গেল হেডলাইট। লেকের পাশে নলখাগড়ায় পড়ল সাদা আলো। আঁকাবাঁকা পথে এসে রানার ধূসর ভ্যানের সামনে ও পেছনে থামল একই মডেলের দুটো মার্সিডিয। রুদ্ধ করা হয়েছে রানার ভ্যানের পথ। খুলে গেল গাড়িদুটোর আট দরজা। বন্ধ হলো না ইঞ্জিন। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল মাইক বুচার ও তার পাঁচ সঙ্গী। নাকের ফুটো দিয়ে ভুসভুস করে বেরোচ্ছে সাদা ধোঁয়ার মত নিঃশ্বাস।

চোখ সরু করে চেয়ে আছে রানা। লোকগুলোর সঙ্গে বাচ্চা মেয়েটাকে দেখল না। এমিলিকে ছেড়ে দেয়া হবে এমনটা ভাবেওনি। হ্যাণ্ডেল মুচড়ে ভ্যানের দরজা খুলে নেমে পড়ল রানা। ওর পাঁচ ফুট দূরে এসে থামল মাইক বুচার। নিচু গলায় জানতে চাইল, ‘সে কই?’

‘মেয়েটা কই?’ পাল্টা জিজ্ঞেস করল রানা।

ভুরু কুঁচকে ওকে দেখল বুচার। ‘লোকটাকে পেয়েছ?’

‘আমার কাজ আমি করেছি। এমিলি কোথায়?’

কাঁধের ওপর দিয়ে দলের লোকদের ইশারা দিল বুচার। মুহূর্তের জন্যে রানার মনে হলো, মার্সিডিযের বুট খুলে এমিলিকে বের করবে লোকগুলো। কিন্তু তা না করে সামনে বেড়ে খপ্ করে ওর হাত ধরল ষাঁড়ের মত দু’জন। বাধা দিল না রানা। ওকে ঘুরিয়ে ভ্যানের পাশে দাঁড় করাল তারা। সার্চ করল দক্ষ হাতে। ডানদিকের লোকটা পিস্তল পেয়ে বের করে নিয়ে গুঁজে রাখল নিজের কোমরে।

‘মেয়েটা কোথায়?’ শান্ত, নিচু স্বরে আবারও জানতে চাইল রানা।

ওর মাথার দিকে পিস্তল তাক করেছে এক ষাঁড়। অন্য দু’জন খুলে ফেলল ভ্যানের পেছনের দরজা। সামনে বেড়ে ভেতরে উঁকি দিল মাইক বুচার।

ব্ল্যাঙ্কেটে মুড়িয়ে সিটে ফেলে রাখা হয়েছে রাজনীতিক এডি অ্যামনকে। হাত-পা আটকা পড়েছে প্লাস্টিকের কেই টাই-এ। মুখে ডাক্ট টেপ। জ্ঞান নেই মানুষটার।

পকেট থেকে নিয়ে বন্দির চেহারার সঙ্গে ছবি মেলাল এক ষণ্ডা। বুচারের দিকে চেয়ে মাথা দোলাল। ‘হ্যাঁ, এই লোকই।’

চতুর্থ লোকটা কালো মার্সিডিয থেকে চামড়ার একটা ব্যাগ নিল। ওটা থেকে বের করল স্টেথোস্কোপ। এই লোক বোধহয় ডাক্তার। এডি অ্যামনের বুকে যন্ত্রটা ঠেকিয়ে হৃৎস্পন্দন শুনল সে। একটু পর সন্তুষ্ট হলো। ‘কোথাও কোনও সমস্যা নেই। ‘

‘ভাল দেখালে,’ রানাকে বলল মাইক বুচার।

‘মেয়েটা?’ ভ্যানের দিক থেকে মাথা ঘুরিয়ে তাকাল রানা।

শয়তানি হাসি ফুটল বুচারের মুখে। ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিলেই ওকে পেয়ে যাবে।’

‘চুক্তি অনুযায়ী কথা কিন্তু এমন ছিল না,’ বলল রানা। ‘চুক্তির গুষ্ঠি কিলাই! নিয়ম তৈরি করি আমরা। তুমি কোথাকার কে?’

‘এরপর কী করবে?’

কোটের পকেট থেকে কালো নাইন এম. এম. পিস্তল বের করল মাইক বুচার। সামনে বেড়ে জোরের সঙ্গে নলটা গুঁজে দিল রানার থুতনির নিচে। কর্কশ স্বরে বলল, ‘আমার যদি উপায় থাকত…’

‘কিন্তু উপায় তোমার নেই,’ তার কথাটা শেষ করল রানা। ‘তা-ই না?’

লালচে হলো বুচারের গাল। ‘পরে তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। তখন আরও কাজ দেয়া হবে।’

‘আমার তা মনে হয় না,’ শুকনো গলায় বলল রানা।

‘তুমি যা-খুশি ভাবলেই তো হবে না,’ বলল বুচার, ‘এখন থেকে আমাদের চাকর তুমি।’ ঘাড় ফিরিয়ে লেক দেখল সে। ‘নাকি ওখানে সাঁতার কাটতে চাও?’ হাসি ফুটে উঠেছে তার নিষ্ঠুর মুখে। ‘যা বলা হবে, চুপচাপ পালন করবে। তারপর অপেক্ষা করবে পরবর্তী নির্দেশের জন্যে। কোনও কৌশল করতে গেলেই খুন হবে ওই মেয়ে। কথাটা ভাল করে মাথায় গেঁথে নাও।’

সরাসরি বুচারের চোখে তাকাল রানা। ‘কিছুই ভুলি না আমি, বুচার।’

হাসিটা ম্লান হলো বুচারের। হোলস্টারে পিস্তলটা রেখে হাতের ইশারা করল দলের লোকগুলোকে। ধুম করে বন্ধ হলো ভ্যানের দরজা। ড্রাইভারের সিটে চেপে বসল তাদের একজন। চালু হলো ইঞ্জিন। অন্যরা ঢুকল দুই মার্সিডিযের ভেতর। দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কাদা ও তুষার ছিটিয়ে রওনা হলো গাড়িদুটো। পিছু নিল ধূসর ভ্যান। বুচার ও তার দল সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে এডি অ্যামনকে।

চুপচাপ লাল টেইল-লাইটের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইল রানা। একটু পর কুয়াশায় হারিয়ে গেল লাল বাতি। আবারও নীরবতা নেমেছে লেকের চারপাশে। হাঁটতে শুরু করে কোট থেকে ফোন নিল রানা। ডায়াল করতেই ওদিকের প্রান্ত থেকে এল জবাব।

‘কাজ তা হলে শুরু হলো,’ বলল রানা। মোবাইল ফোন অফ করে হাঁটার গতি বাড়াল ও।

এখন শুধু এগিয়ে যাওয়া।

ওর সামান্যতম ভুল হলেই বেঘোরে মারা পড়বে এডি অ্যামন ও এমিলি কেইলম্যান!

সকল অধ্যায়

১. কাউণ্ট কোবরা – ১
২. কাউণ্ট কোবরা – ২
৩. কাউণ্ট কোবরা – ৩
৪. কাউণ্ট কোবরা – ৪
৫. কাউণ্ট কোবরা – ৫
৬. কাউণ্ট কোবরা – ৬
৭. কাউণ্ট কোবরা – ৭
৮. কাউণ্ট কোবরা – ৮
৯. কাউণ্ট কোবরা – ৯
১০. কাউণ্ট কোবরা – ১০
১১. কাউণ্ট কোবরা – ১১
১২. কাউণ্ট কোবরা – ১২
১৩. কাউণ্ট কোবরা – ১৩
১৪. কাউণ্ট কোবরা – ১৪
১৫. কাউণ্ট কোবরা – ১৫
১৬. কাউণ্ট কোবরা – ১৬
১৭. কাউণ্ট কোবরা – ১৭
১৮. কাউণ্ট কোবরা – ১৮
১৯. কাউণ্ট কোবরা – ১৯
২০. কাউণ্ট কোবরা – ২০
২১. কাউণ্ট কোবরা – ২১
২২. কাউণ্ট কোবরা – ২২
২৩. কাউণ্ট কোবরা – ২৩
২৪. কাউণ্ট কোবরা – ২৪
২৫. কাউণ্ট কোবরা – ২৫
২৬. কাউণ্ট কোবরা – ২৬
২৭. কাউণ্ট কোবরা – ২৭
২৮. কাউণ্ট কোবরা – ২৮
২৯. কাউণ্ট কোবরা – ২৯
৩০. কাউণ্ট কোবরা – ৩০
৩১. কাউণ্ট কোবরা – ৩১
৩২. কাউণ্ট কোবরা – ৩২
৩৩. কাউণ্ট কোবরা – ৩৩
৩৪. কাউণ্ট কোবরা – ৩৪
৩৫. কাউণ্ট কোবরা – ৩৫
৩৬. কাউণ্ট কোবরা – ৩৬
৩৭. কাউণ্ট কোবরা – ৩৭
৩৮. কাউণ্ট কোবরা – ৩৮
৩৯. কাউণ্ট কোবরা – ৩৯
৪০. কাউণ্ট কোবরা – ৪০
৪১. কাউণ্ট কোবরা – ৪১
৪২. কাউণ্ট কোবরা – ৪২
৪৩. কাউণ্ট কোবরা – ৪৩
৪৪. কাউণ্ট কোবরা – ৪৪
৪৫. কাউণ্ট কোবরা – ৪৫
৪৬. কাউণ্ট কোবরা – ৪৭
৪৭. কাউণ্ট কোবরা – ৪৮
৪৮. কাউণ্ট কোবরা – ৪৯
৪৯. কাউণ্ট কোবরা – ৫০
৫০. কাউণ্ট কোবরা – ৫১
৫১. কাউণ্ট কোবরা – ৫২
৫২. কাউণ্ট কোবরা – ৫৩
৫৩. কাউণ্ট কোবরা – ৫৪
৫৪. কাউণ্ট কোবরা – ৫৫
৫৫. কাউণ্ট কোবরা – ৫৬
৫৬. কাউণ্ট কোবরা – ৫৭
৫৭. কাউণ্ট কোবরা – ৫৮
৫৮. কাউণ্ট কোবরা – ৫৯
৫৯. কাউণ্ট কোবরা – ৪৬

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন