সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৭

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

“মেঘনাদবধচিত্র’।– বহুকাল হইল প্রথম বর্ষের ভারতীতে। (শ্রাবণ-কার্তিক, পৌষ, ফাল্গুন ১২৮৪) মেঘনাদবধ কাব্যের এক দীর্ঘ সমালোচনা বাহির হইয়াছিল, লেখক মহাশয় এই প্রবন্ধে তাহার প্রতিবাদ প্রকাশ করিতেছেন। তিনি যদি জানিতেন ভারতীর সমালোচক তৎকালে একটি পঞ্চদশবর্ষীয় বালক ছিল তবে নিশ্চয়ই উক্ত লোকবিস্মৃত সমালোচনার বিস্তারিত প্রতিবাদ বাহুল্য বোধ করিতেন। — রিজ্‌লি সাহেবের নবপ্রকাশিত গ্রন্থ অবলম্বন করিয়া ক্ষীরোদচন্দ্রবাবু “ব্রাহ্মণ্যধর্মের শ্রীবৃদ্ধি’ নামক যে প্রবন্ধ সংকলন করিয়াছেন, তাহাতে ভারতবর্ষের অনার্যজাতীয়েরা কী করিয়া ব্রাহ্মণ্যের গণ্ডির মধ্যে অল্লে অল্পে প্রবেশ লাভ করিয়াছে তাহার কথঞ্চিৎ আভাস পাওয়া যায়– প্রবন্ধটি নিরতিশয় সংক্ষিপ্ত হওয়ায় আমরা যথেষ্ট তৃপ্তি লাভ করিলাম না।– “সাকার ও নিরাকার উপাসনা’। ইহাতে যে-সকল তর্ক অবলম্বিত হইয়াছে তাহা এতই সরল যে, সহসা মনে প্রশ্ন উদয় হয় এ-সকল কথা কি কাহাকেও বিশেষ করিয়া বুঝানো আবশ্যক? দুঃখের বিষয় এই যে, আবশ্যক আছে। আরও দুঃখের বিষয় এই যে যাঁহারা মনে মনে এ সমস্তই বুঝেন, তাঁহারাও নানারূপ কৃত্রিম কূট তর্ক উদ্‌ভাবন করিতেছেন, সুতরাং এ যুক্তিগুলি স্থলবিশেষে ভুল ভাঙিবার এবং স্থলবিশেষে কেবলমাত্র মুখবন্ধ করিবার জন্য আবশ্যক হইয়াছে।’ — “অনাহারে মরণ’। বাল্যকাল হইতে যথেষ্ট পুষ্টিকর আহার পায় না বলিয়া যে বাঙালি জাতির মনুষ্যত্ব অসম্পূর্ণ থাকে এ কথা আমরা লেখকের সহিত স্বীকার করি। শরীর অপুষ্ট থাকাতে আমাদের চরিত্রের ভিত্তি কাঁচা থাকিয়া যায়। লেখকের মতের সহিত আমাদের সম্পূর্ণ ঐক্য আছে কেবল তাঁহার রচনার দুই-এক স্থলে আমাদের খটকা লাগিয়াছে। এক স্থলে আছে “তাঁহারা বাক্যসার, বক্তাদিগের অপেক্ষা ভালো স্বদেশপ্রেমিক “better patriots’।’ ইংরাজি কথাটা জুড়িয়া দিবার অত্যাবশ্যক কারণ বুঝিতে পারিলাম না। প্রবন্ধের উপসংহারে গদ্য সহসা বিনা নোটিসে একপ্রকার ভাঙাছন্দ পদ্যে পরিণত হইয়াছে, তাহার তাৎপর্য বুঝা কঠিন। সেইজন্য এই আড়ম্বরহীন গম্ভীর প্রবন্ধ শেষকালটায় হঠাৎ এক অদ্ভুত আকার ধারণ করিয়াছে; সংযতবেশ ভদ্রলোক সভাস্থলে অকস্মাৎ নটের ভাব ধারণ করিলে যেমন হয় সেইরূপ। শেষ অংশটুকু বিচ্ছিন্ন করিয়া একটা স্বতন্ত্র পদ্য রচনা করিলে এরূপ খাপছাড়া হইত না।

সাধনা, শ্রাবণ, ১২৯৯। নব্যভারত, জৈষ্ঠ্য ও আষাঢ়, ১২৯৯

সকল অধ্যায়

১. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০১
২. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০২
৩. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০৩
৪. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০৪
৫. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০৫
৬. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০৬
৭. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০৭
৮. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০৮
৯. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ০৯
১০. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১০
১১. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১১
১২. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১২
১৩. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৩
১৪. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৪
১৫. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৫
১৬. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৬
১৭. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৭
১৮. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৮
১৯. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ১৯
২০. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২০
২১. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২১
২২. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২২
২৩. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২৩
২৪. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২৪
২৫. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২৫
২৬. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২৬
২৭. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২৭
২৮. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২৮
২৯. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ২৯
৩০. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩০
৩১. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩১
৩২. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩২
৩৩. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩৩
৩৪. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩৪
৩৫. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩৫
৩৬. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩৬
৩৭. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩৭
৩৮. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩৮
৩৯. সাময়িক সাহিত্য সমালোচনা – ৩৯

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন