তোমায় হৃদ মাঝারে রাখবো – ২৫

মৌরি মরিয়ম

এতগুলো জিনিসপত্র নিয়ে এসে রীতিমতো হাঁপিয়ে উঠল নিহিন। এখন ৮ টা বাজে, এত সকালে কলরবের ওঠার কথা না, তবু এসে বেল বাজালো না। যদি কলরবের ঘুম ভেঙে যায়। তাই শওকত সাহেবকে ফোন করল,

“আংকেল আমি এসে গিয়েছি, দরজার সামনে।”

“দাঁড়াও মা, আমি এক্ষুনি দরজা খুলছি।”

দরজা খুলতেই নিহিন সালাম দিলো। শওকত সাহেব জবাব দিয়ে বললেন,

“এসো মা, ভেতরে এসো।”

নিহিন ভেতরে আসতেই কল্প দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু নিহিনের দুই হাত আটকা থাকায় ওকে ধরতে পারল না। অবাক হলেন, “এত কিছু কী? ওমা গিটার! কলরবের জন্মদিনের উপহার?”

নিহিন হেসে বলল,

“জ্বি আংকেল।”

“কিন্তু ও তো গান গায় না এখন আর।”

কল্প একথা শুনে বলল,

“জানো মিষ্টি, পাপ্পার গান আমি কখনো শুনিনি। সবাই বলে পাপ্পা নাকি অনেক ভালো গান গাইত।”

“যাতে আবার গান গায় সেজন্যই তো গিটার দেয়া।”

“বলতে বলতে জিনিসগুলো রাখলো। তারপর কল্পকে কোলে নিল।”

শওকত সাহেব বললেন,

“শাড়ি পরায় কিন্তু মা তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।”

এ কথা বলাতেই কল্প মন খারাপ করে বলল,

“দাদাভাই, তুমি কেন বললে? আমি আগে বলতাম তো!”

“ওহো! সরি সরি। আমার দাদাভাইকে বলতেই সুযোগ দিলাম না!” নিহিন কল্পকে খুশি করার জন্য বলল,

“কী বলেছে দাদাভাই? আমি তো খেয়াল করিনি। এখন তুমি বলো, পরে বললেও আমি তো তোমারটাই আগে শুনছি।”

কল্প একটা বিশ্বজয়ের হাসি দিল, তারপর বলল,

“তুমি যে শাড়ি পরেছো, সেজন্য তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে।” বলেই কল্প চুমু খেল নিহিনের গালে।

“তাই! থ্যাংক ইউ।”

তারপর নিহিন চুমু খেল কল্পর গালে। এরপর কল্প অন্য ব্যাগগুলো দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল,

“মিষ্টি, এগুলো কী এনেছো?”

নিহিন কল্পর চুলে হাত বুলিয়ে বলল,

“একটাতে ফুল আর একটাতে কেক বানানোর জিনিস।”

“ইয়ে, তুমি কেক বানাবে?”

“হুম, বানাবো তো। আজকে পাপ্পার জন্মদিন না?”

“হিহি”

দাঁত বের করে হাসল কল্প। তারপর জিজ্ঞেস করলো,

“কোন কেক বানাবে?”

“চকলেট কেক!”

চোখগুলো বড় বড় হয়ে গেল কল্পর।

“ওয়াও! তাহলে আমাকে কোল থেকে নামাও। নাহলে তোমার দেরি হয়ে যাবে না?”

কল্পকে কোল থেকে নামিয়ে নিহিন কেক বানাতে শুরু করে দিলো। আংকেল জিজ্ঞেস করল,

“তুমি কলরবকে উইশ করেছিলে?”

“না আংকেল, উইশ করিনি যাতে ও ভাবে যে আমি ওর জন্মদিন ভুলে গিয়েছি।”

“বাহ ভালো করেছ।”

“আপনারা উইশ করেছেন?”

“হ্যাঁ আমরা তো কাল রাতেই উইশ করেছি, কেক কেটেছি। কল্প আর আমি আগেই কেক এনে লুকিয়ে রেখেছিলাম।”

নিহিন হাসল। তারপর বোল এর মধ্যে ময়দা নিতেই কল্প বলল,

“তুমি কি পরোটা বানাবে?”

“নাতো।”

“তাহলে কি কেক বানাতেও ময়দা লাগে?”

“হ্যাঁ তো।”

“কিন্তু তাহলে তো কেক হোয়াইট হওয়ার কথা।”

“না বাবু, আমি যখন চকলেট মিক্স করবো তখনই আর হোয়াইট থাকবে না, চকলেট কালার হয়ে যাবে।”

শওকত সাহেব বললেন,

“কল্প চল এখান থেকে, আন্টিকে ঠিকমতো কাজ করতে দে। তুই বড্ড প্রশ্ন করছিস।”

“ও থাক না আংকেল, ও থাকলে আর প্রশ্ন করলে আমার ভালোই লাগবে।”

কল্প বলল,

“উফ দাদাভাই, তুমি অনেক ডিস্টার্ব করছো, যাও তো এখান থেকে। আমি কেক বানানো শিখছি।”

“তুই শিখে কী করবি?”

“কেন বানিয়ে খাবো।”

‘তোর বানানো লাগবে না, তোর বউ তোকে বানিয়ে দেবে।”

“আর বউ যদি না বানাতে পারে আর দোকানেও যদি না থাকে তাহলে কি আমি না খেয়ে মরব?”

একথায় সবাই হেসে দিল। তারপর নিহিন কল্পকে জিজ্ঞেস করল, “তুমি আজ ঘুম থেকে এত তাড়াতাড়ি উঠেছো যে?”

“পাপ্পার বার্থডে যে!”

“আচ্ছা!”

কেকটা বেশ হচ্ছে। নিহিন আর কল্প ড্রইং রুমে বসে রাজ্যের গল্প করছিল। তখন শওকত সাহেব এসে কল্পকে ফোন এগিয়ে দিয়ে বলল,

“কল্প তোর ফোন।”

“কে?”

“তোর বড় দাদাভাই।”

কল্প ফোনটা নিয়ে হাঁটছে আর কথা বলছে। শওকত সাহেব নিচু স্বরে নিহিনকে বলল,

“মা, আমরা একটু বাইরে যাব এখন।”

“আমরা বলতে?”

“কল্প আর আমি।”

“কখন আসবেন? আমার কেক তো আর ৭/৮ মিনিট লাগবে। তারপর তো আমরা সবাই মিলে গিয়ে ওকে উঠাবো ভেবেছিলাম। আপনারা আসতে আসতে যদি ও ওঠে যায়?”

“না মা। আমরা সারপ্রাইজ রাতে দিয়েছি। এখন শুধু তুমি একা দেবে। আর বাসায় থাকলে কল্প তোমার পিছু ছাড়বে না, তুমি যেখানে যাবে তোমার সাথে আঠার মতো লেপটে থাকবে। সেজন্যই আমি ওকে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি।”

নিহিনের লজ্জা লাগছিল,

“আমি চেয়েছিলাম সবাই মিলে…”

কথা শেষ করতে দিলো না শওকত সাহেব।

“সবাই একসাথে সারপ্রাইজ দেওয়ার সুযোগ অনেক আসবে। আমি চাই আজ তুমি একাই ওকে সারপ্রাইজ দাও। ওর ভালো লাগবে। তাছাড়া এক দেড় ঘণ্টা পরই তো আমরা চলে আসছি, কেক কাটার সময় তো থাকবোই। তাছাড়া একটু কাজও আছে ওখানে।”

সেই এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ল নিহিনের। বলল,

“কিন্তু আংকেল, ওকে না বলে গেলে যদি রাগ করে।”

“আরে না ও তো দূরে গেলে রাগ করবে। আমরা তো আমার বোনের বাসায় যাচ্ছি। এই পাশের বিল্ডিংয়ের পরের বাসাটাই।”

“ও, ঠিক আছে।”

২৬

নিহিন ঘরে ঢুকে দেখল কলরব গভীর ঘুমে মগ্ন। একপাশে ফিরে শুয়ে আছে। খালি গায়ে শুধু একটা থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরা। বুক ভর্তি লোম! দেখেই লজ্জা পেল নিহিন। এখন তো গরমের দিনও না, শীতের মধ্যে খালি গায়ে ঘুমানোর কী দরকার!

রান্নাঘরের বারান্দায় একটা ফোল্ডিং মই দেখেছিল। সেটার কথা মাথায় রেখেই নিহিন অনেকগুলো গোলাপ আর বেলি ফুল নিয়ে এসেছিল। প্ল্যান ছিল ফুলের পাপড়িগুলো কলরবের ঘরের ফ্যানের ওপরে দিয়ে রাখবে, তারপর কল্প ধাক্কা দিয়ে কলরবকে ডেকে উঠাবে, কলরব চোখ মেললে সবাই একসাথে “হ্যাপি বার্থডে” বলে চিৎকার করবে, আর তখন নিহিন ফ্যানটা ছেড়ে দেবে, ফুলগুলো সাথে সাথে ফ্যানের ওপর থেকে পড়বে কলরবের ওপর। কত্ত সুন্দর প্ল্যান ছিল, কিন্তু এখন তো ও ছাড়া আর কেউ নেই। ইন্সট্যান্ট এত প্ল্যান বানানো যায় নাকি?

নিহিন রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে আর কীভাবে কী করা যায় তা ভাবছে। এমন সময় চোখ পড়ল বিছানার পাশেই ২ টা বেড সুইচ। কীসের হতে পারে? একটা লাইটের, আরেকটা কী ফ্যানের হতে পারে? হতেই তো পারে। আংকেলকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেই হয়, কিন্তু লজ্জা লাগে তো। তার চেয়ে নিজে খুঁজে বের করাই ভালো। একটা সুইচ অন করতেই লাইট জ্বলে উঠল, অফ করে দিয়ে আরেকটা অন করল। যা ভেবেছিল তাই, এবার ফ্যান চলতে শুরু করল। ভাগ্যিস কলরব কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমায়, তা না হলে এসব করতে করতেই ওর ঘুম ভেঙে সব গুবলেট হয়ে যেত।

নিহিন সব গোলাপের পাপড়িগুলো ছিঁড়ে নিল। বেলি ফুলগুলো ছোট হওয়ায় আর ছিঁড়ল না। তারপর রান্নাঘর থেকে মইটা নিয়ে এসে তার ওপরে ওঠে বেশি করে ফুলের পাপড়ি ফ্যানের ওপর ছড়িয়ে দিলো। শাড়ি পরে মইয়ের ওপর উঠতে বেশ কসরত করতে হলো নিহিনকে।

তারপর খাটের পাশে একটা টি টেবিল এনে কেকটা তার উপর রাখল। কলরব যেদিকে ফিরে ঘুমাচ্ছে তার উলটো পাশে, মানে কলরবের পিছনে। কেকটা খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করেছে নিহিন। হৃদয় আকৃতির করে বানিয়েছে, তার একপাশে হোয়াইট ক্রিম দিয়ে লেখেছে “শুভ জন্মদিন কলরব” একপাশে দুটো ভালোবাসা একে দিয়েছে। একটা একটু বড়, আরেকটা একটু ছোট। বড়টা কলরব, ছোটটা নিহিন। বুঝবে কি না কে জানে!

গিটারটা দাঁড় করিয়ে মাথার কাছে বিছানার ওপর রাখল। বারান্দার দরজা, ঘরের দরজা, বাথরুমের দরজা সব বন্ধ করে দিয়ে সবগুলো জানালার পর্দা ফেলে ঘরটাকে অন্ধকার করার চেষ্টা করল। পর্দাগুলো ভারী হওয়ার কারনে ঘর ভালোই অন্ধকার হলো। তারপর কলরবের ৩২ তম জন্মদিন উপলক্ষে ৩২ টা লাল রঙের ডেকোরেটেড মোম সারাঘরে সাজিয়ে রাখলো নিহিন, শেষ মুহূর্তে জ্বালাবে বলে। লাল ভালোবাসার রং। তাছাড়া লাল কলরবের প্রিয় রং, যদি সাদাকে কোনো রং বলে ধরা না হয়।

তারপর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো নিহিন। নিজেকেও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়া উচিত। এত সকালে বেড়িয়েছে যে সাজার সময়ই পায়নি, কোনোরকমে শাড়িটা পরে দৌড় দিয়েছে নিহিন। যদিও নিহিনের সাজগোজের প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, শুধু কলরবকে খুশি করার জন্যই সাজা আবশ্যক। চুলগুলো এতক্ষণ হাতখোঁপায় বাঁধা ছিল, এখন ছেড়ে দিয়ে একবার আঁচড়ে নিল। কাজলে চোখ আঁকল। সিলভার পাড়ের পুরো সাদা রঙের একটা কাতান শাড়ি পরেছে নিহিন। সাদা নাকি শোকের আর দুখের রং, কিন্তু কলরবের তো এ রংটাই সবচেয়ে প্রিয়, এটা না পরে পারে কী করে নিহিন? তাই সাদাকে মাত করতে ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক আর কপালে লাল টিপ পরল। তারপর নিজেকে আর একবার দেখে মোমগুলো সব জ্বালিয়ে দিয়ে খাটের ওপরে কলরবের পাশে গিয়ে বসলো। কলরব অঘোরে ঘুমাচ্ছে, নিঃশ্বাস ওঠানামা করছে। ঘুমন্ত মানুষটাকে নিষ্পাপ শিশুর মতো দেখাচ্ছে, কী যে মায়া লাগছে! শান্তি লাগছে! ডাকতেই ইচ্ছে করছে না। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে, আজ এবং অনন্তকাল ধরে!

২৭

“এই, ওঠো।”

কোনো সাড়াশব্দ নেই। নিহিন কলরবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে আবার ডাকল,

“কী উঠবে না?”

কোনো সাড়া নেই, মানুষ এত ঘুমায় কীভাবে যে গায়ে হাত দিয়ে ডাকলেও ওঠে না! এবার কলরবের বাহু ধরে ঝাঁকুনি দিলো নিহিন। কলরব চোখ মেলল,

“আরেকটু ঘুমাই প্লিজ।”

তারপর নিহিনের হাতটা টেনে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে আবার ঘুমাতে লাগল। নিহিন বলল,

আরে, এ তো দেখছি আবার ঘুমাচ্ছে। এই তুমি আর কত ঘুমাবে? কলরব আবার চোখ মেলে তাকিয়ে হাত ছেড়ে নিহিনের কোমরে ধরে এক টান দিয়ে নিজের বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলল,

“তুমি কেন উঠেছো? আসো তো, আরও ঘুমাবো।”

নিহিন বুঝল কলরবের ঘুমই ভাঙেনি। ও হয়তো ভাবছে স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এত শক্ত করে ধরেছে, যে নিহিনের দম বন্ধ হবার জোগাড়। নিহিন কলরবকে ধাক্কা দিয়ে বলল,

“এই ছাড়ো আমাকে, ব্যথা পাচ্ছি তো, উফ।”

কলরব চোখ খুলল, কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে নিহিনকে ছেড়ে দিয়ে লাফিয়ে ওঠে বলল,

“তুমি?”

নিহিন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।

“আরেকটু হলে তো মেরেই ফেলছিলে।”

কলরব সে কথার উত্তর না দিয়ে ঘরির দিকে তাকিয়ে বলল,

“তুমি এত সকালে! আমার ঘরে? কীভাবে?”

নিহিন একটা হাত পিছনে নিয়ে হাতড়ে হাতড়ে সুইচটা ধরল। তারপর ফ্যান ছাড়তেই সব ফুলগুলো পড়লো ওদের মাথার ওপর। সঙ্গে সঙ্গে নিহিন সুর করে গাইলো,

“হ্যাপি বার্থডে টু ইউ…”

ততক্ষণে বিস্মিত কলরব চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল, তারপর ফ্যান বন্ধ করে দিল যাতে মোমগুলো নিভে না যায়, তবু বেশিরভাগ মোম নিভে গেল। হিনিনের উইশ করা শেষ হতেই বলল,

“হোয়াট আ প্লেজেন্ট সারপ্রাইজ!”

হাসলো নিহিন। কলরব আবার বলল,

“পুরো বাসর ঘর বানিয়ে দিলে! ক্যান্ডেল লাইট বাসর ঘর!”

“ইশ, যাও।”

লজ্জা পেয়ে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকাল নিহিন। ও ভাবতেই পারেনি কলরব এইটাইপ কিছু বলবে, তাহলে জীবনেও ফুল নিয়ে এসব করত না। কলরব বলল,

“কিন্তু সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজ তুমি নিজে। যাক তোমাকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখার সৌভাগ্য অবশেষে হলো। শাড়ি পরতে শিখেছ তাহলে এতদিনে। তার ওপর পরেছ সাদা শাড়ি, সাদা রঙে তো তোমাকে আগে থেকেই ভালো লাগে আমার, আর সঙ্গে লাল মিলিয়ে কী সাজটাই না দিয়েছ। ইউ আর লুকিং গরজিয়াস! অনেকটা রবীন্দ্রনাথের লাবণ্য, চারুলতা, আশালতা, বিনোদিনী কিংবা কুমুদিনীর মতো।”

“খুব যে বলছো, পড়েছ ক্যারেকটারগুলো?”

“অবশ্যই।”

“তাহলে বলছো কেন? সমাপ্তি আর আশালতার তো আমার অর্ধেক বয়স ছিল।”

“আর লাবণ্যর…”

কথা শেষ করতে দিল না কলরব। হেসে বলল,

“ম্যাডাম, আমি জাস্ট বলতে চেয়েছি সাজটা ওদের মত হয়েছে!”

“কিন্তু বিনোদিনী তো ছিল বিধবা। ও সাজতো না।”

“ম্যাডাম আপনি ভুলে যাচ্ছেন কেন? শেষের দিকে বিনোদিনী যখন বিহারীবাবুর কাছে গিয়েছিল, গয়নাগাটি পরে বউ সেজেই গিয়েছিল।”

“আচ্ছা আচ্ছা বুঝলাম।”

তর্কযুদ্ধে জিতে হাসতে লাগল কলরব। নিহিন গিটারটা হাতে নিয়ে ওর সামনে ধরল,

“এটা তোমার জন্য।”

কলরব বলল,

“ওহ ওয়াও! সো সেক্সি গিটার! কিন্তু আমি তো এখন বোধহয় সব ভুলে গিয়েছি। ১০ বছর ধরে গিটার ধরি না।”

“মানুষ এসব ভোলে না, আমার জন্য তোমাকে গাইতেই হবে। কোনো কথা শুনবো না। তবে হ্যাঁ, কল্পর সামনে গাইবে। আজ ও খুব আফসোস করছিল তোমার গান কখনো শোনেনি বলে।”

“আচ্ছা ঠিক আছে, ট্রাই করব।”

“ট্রাই ফ্রাই বুঝি না, গাইতে হবে।”

“আচ্ছা বাবা গাইবো তো।”

তারপর নিহিন বিছানা থেকে নেমে গেল, কলরব নামতে গিয়েই কেকটা দেখতে পেল।

“আরেব্বাস, আরো সারপ্রাইজ আছে নাকি? কেকটা নিশ্চই তুমি বানিয়েছ?” কেকের ওপর কিছু ফুলের পাপড়ি পড়েছিল, নিহিন ওগুলো সরাতে সরাতে বলল,

“হ্যাঁ, কিন্তু বুঝলে কী করে? দোকানের মতই তো ডেকোরেট করেছি।”

“নিহিন নিহিন গন্ধ পাচ্ছি তো।”

বলেই হেসে ফলল কলরব। নিহিন বলল,

“ঘোড়ার ডিম, সত্যিটা বলো।”

“আরে বাবা, আমার বার্থডেতে তুমি দোকান থেকে কেক আনবে? এটা হতে পারে? আমি চিনি না তোমাকে?”

“ও।”

কলরব কেকের এক পাশ থেকে একটু উঠাতে গেল আর নিহিন বলে উঠল, “কি করছো?”

“খাবো।”

“আগে দাঁত ব্রাশ করে আসো। মুখ না ধুয়েই খেতে আসছে!”

“আরে আমি একটু খাবো।”

“না বেশিটুকুই খাও বাট আগে মুখ ধুয়ে এসো, যাও।”

কলরবকে ঠেলে পাঠিয়ে দিলো নিহিন। কলরব নিহিনের দিকে তাকিয়ে বলল,

“এত ফোর্স করছো কেন? বাথরুমেও কোন সারপ্রাইজ আছে নাকি?”

“উফ তুমি যাও তো।”

হাসতে হাসতে গেল কলরব। যাওয়ার সময় বলল,

“মোমগুলো আবার জ্বালিয়ে দাও।”

“কেন?”

“তাহলে অন্ধকারে থাকবে? ছি ছি কী দুষ্টু চিন্তা!”

“কী বললে তুমি?”

অভিমানী সুরে বলল নিহিন। কলরব বলল,

“আচ্ছা সরি, তুমি মোমগুলো জ্বালিয়ে দাও, কাজ আছে। আমি আসছি।”

“ঠিক আছে।”

“সাবধানে, শাড়ি সামলে!”

মোম জ্বালানো শেষ করে খাটের একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে দেওয়ালে টাঙানো নিজের ছবিটা দেখছিল নিহিন। কলরব দাঁত ব্রাশ করে এসে বলল,

“এবার কি আমি একটু কেক খেতে পারি?”

“হ্যাঁ খাও, তবে পাশ থেকে। কল্প আর বাবা আসলে কেক কাটবে কলরব একটু কেক হাতে উঠাতে উঠাতে বলল,

“তারা কোথায় গিয়েছে? ফুপির বাসায় নাকি অন্য কোথাও?”

“ফুপির বাসায়ই। বলল তো পাশের বাসার পরের বাসা।”

কলরব বলল,

“কেকটা অসাধারণ হয়েছে।”

নিহিন বলল,

“তুমি এভাবে খালি গায়ে ঘুমাচ্ছিলে কেন? আর এখনও সেভাবেই ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন?”

“কেন? সমস্যা কী?”

“ছি ছি লজ্জা করে না?”

“না ওটা তোমার করলেই হবে। সবাই মিলে লজ্জা পেয়ে লজ্জার গোডাউন খুলবো নাকি?”

“প্লিজ একটা কিছু পরো। আমার অস্বস্তি লাগছে।”

“উফ মেয়েরা যে কী জ্বালাতে পারে!”

নিহিন এবার নিজের ছবিটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কলরব ওয়ারড্রবের

কাছে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর টি শার্ট পড়ে নিহিনের পিছনে দাঁড়িয়ে বলল,

“নিজেকে কেউ এত দেখে?”

“ছোটবেলা দেখতে ভালো লাগে।”

কলরব নিহিনের একটা হাত ধরে নিজের দিকে ফেরালো। নিহিন ফিরতেই হাঁটু মুড়ে বসল নিহিনের সামনে। তারপর পকেট থেকে স্বর্ণের নূপুরটা বের করে নিহিনের সামনে ধরল। বলল,

“উইল ইউ ম্যারি মি?”

নিহিনের বুকের ভেতর হাজারখানেক প্রজাপতির ওড়াউড়ি শুরু হয়ে গেল। কিছু বলতে পারল না, শুধু মাথা নিচু করে মিষ্টি করে হাসল। কলরব বলল,

“তাহলে পা দাও।”

“নিহিন একটা পা এগিয়ে দিলো। কলরব পা টা ধরে নিজের কোলে উঠাতে গেলেই নিহিন বলে উঠল, “

“একি করছো? পা ধরছো কেন? এমনি পরিয়ে দিলেই তো হয়।” কলরব একটা ধমক দিলো। বলল,

“উফ, কী হবে পা ধরলে? মহাভারত অশুদ্ধ হবে?”

“পাপ হবে আমার।”

“কখনো না, তোমার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ অবধি আমার। একটা কথাও আর বলবে না।”

কলরব নিহিনের পা টা নিজের কোলের ওপরে উঠিয়ে নূপুরটা পরিয়ে দিলো। আর তারপর নিহিনের পায়ের পাতাতে একটা চুমু খেল। সর্বাঙ্গে শিউরে উঠল নিহিন। কলরব তাকিয়ে দেখল নিহিন কাঁপছে, চোখ বন্ধ। পা টা যেভাবে যত্ন করে তুলেছিল সেভাবে যত্ন করে নামিয়ে রাখল। তারপর ওঠে দাঁড়াল। নিহিন তখনও মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইল। কলরব ওর মুখটা দুহাতে তুলল। তাকাল না নিহিন। কলরব নিহিনের বন্ধ দুটি চোখের পাতায় চুমু খেল। তারপর জড়িয়ে ধরল, নিহিনও ধরল। কিছুক্ষণ পর কলরব জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই ডাকল সেই পুরোনো নামে,

“পরি?”

“হু।”

কণ্ঠটা ভারী শোনালো নিহিনের। কলরব বলল,

“এতদিন এই নামটাতে ডাকতে পারছিলাম না, আজকের দিনটার অপেক্ষায়।”

“এখন শান্তি হয়েছে?”

“খুব।”

“আচ্ছা তুমি যে নূপুরটা আমাকে দিয়েছিলে সেটা আর এটা তো একই রকম। ইচ্ছে করে একরকম বানিয়েছ না?”

“হ্যাঁ।”

“এতদিন পরও ডিজাইনটা তোমার মনে আছে?”

“না। তিথিকে বলেছিলাম যে করেই হোক ডিজাইনটা এনে দিতে হবে।”

“আচ্ছা এজন্যই ও ছবি তুলে নিয়োছিল।”

“হুম তাও আবার তোমার পাসহ, দেখেই মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।”

“ইশ।”

আরেকটু শক্ত করে ধরল কলরব। যেন কেউ নিয়ে যাচ্ছে। নিহিন বলল, “তিথি আমাকে কিছু বলল না?”

“বললে সারপ্রাইজ নষ্ট হতো যে!” তারপর বলল,

“শোনো, তোমাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার ছিল।”

“বলো।”

“প্রথমত, বাবা আর আমি তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে যাব। কবে যাব, সেটা বাসায় কথা বলে জানাবে আমাকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”

“ঠিক আছে।”

“তোমার বাবা এবার রাজি হবে তো পরি?”

“হবে, কারণ অনেক দিন ধরেই আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি রাজি হইনি। আর তাদের পছন্দে একবার বিয়ে করে তো…”

“স্টপ! এতকিছু জানতে চাইনি।”

হঠাৎ মনে পড়ায় নিহিন জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ওই দিন তুমি হাসছিলে কেন?”

“কোনদিন?”

“ওই যে, এসব বলতে চাচ্ছিলাম তুমি শুনতে চাচ্ছিলে না বললে অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি তোমার পছন্দ না। তারপর আমি বললাম ‘আমিও তো তোমার অতীত’ তারপর হাসছিলে।

“কারণ তুমি আমার অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সব। ওইদিন বলিনি কারণ তখনো তোমাকে প্রপোজ করিনি

“ইচ্ছে করে আমাকে কনফিউশনে রেখেছিলে।”

“না, কিছু সমস্যা ছিল। সেগুলো সমাধান না করে বলব কী করে?”

“কী প্রবলেম?”

“ওই তোমার আমার বিয়েতে কী কী বাধা আসতে পারে সেগুলো।”

নিহিন কলরবের বুক থেকে মাথা তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কী সেগুলো?”

“পরে বলব। এখন এসব বলার সময় না কারণ ওগুলো প্রায় সমাধান করে ফেলেছি।”

আবার কলরবের বুকে মাথা রাখল নিহিন।

“আচ্ছা তুমি কি ঠিক করে রেখেছিলে আজ আমাকে প্রপোজ করবে?”

“হ্যাঁ, প্রথমবার প্রপোজ করেছিলাম তোমার জন্মদিনে আর এবার আমার জন্মদিনে করতে চেয়েছিলাম।”

“আমি যদি না আসতাম।”

“তাহলে আমি নিজেই গিয়ে নিয়ে আসতাম।”

“যদি মনে না থাকত? আর উইশ না করতাম?”

“মনে করিয়ে দিতাম।”

“রাগ করতে না?”

“এত বছর পর তাই রাগ করতাম না। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি জানতাম আমার বার্থডেতে তোমার কোনো প্ল্যান থাকবেই। তার ওপর তিথিও মুখ ফসকে বলে ফেলছিল, পরে কথাটা গিলে ফেলেছে। ততক্ষণে আমি যা বোঝার বুঝে গিয়েছি।”

নিহিন সরে দাঁড়িয়ে বলল,

“পাজিটা আমার কাছে মুখ ফসকে তোমার প্ল্যানের কথা বলতে পারল না, অথচ তোমার কাছে ঠিকই বলে দিলো!”

“আহা শোনো না, কাছে এসো..”

এই বলে নিহিনকে আবার বুকে জড়িয়ে ধরল।

“কী প্ল্যান তা বলেনি তো। বিশ্বাস করো আমি শুধু জানতাম যে তোমার কোনো প্ল্যান থাকবে। সেটা যে এরকম ক্যান্ডেল লাইট বাসর ঘরের প্ল্যান তা আমি স্বপ্নের মধ্যেও দেখিনি।”

“উফ পেয়েছে এক কথা, এটা মোটেও ক্যান্ডেল লাইট বাসর ঘর নয়। পরিবেশটা একটু রোমান্টিক করার জন্য এভাবে সাজিয়েছি।”

“ভালোই হয়েছে, আমার প্ল্যান ছিল শুধু প্রপোজ করা। সেটা এত সুন্দরভাবে তোমার জন্যই সম্ভব হলো।”

নিহিন আবার একটু সরে গিয়ে কলরবের দিকে তাকিয়ে বলল,

“হুম, অনেক হয়েছে আর কী কী গুরুত্বপূর্ণ কথা যেন বলবে? শুধু তো একটা বললে।”

“সেটা নাহয় বলব, কিন্তু বারবার সরে যাচ্ছ কেন?”

“আই কন্ট্যাক্ট করার জন্য।”

“সারাজীবন বহু আই কন্ট্যাক্ট করতে পারবে, পাল্লাও দেবো। কিন্তু এখন একটু আমার বুকে থাকো। খুব শান্তি লাগে। বুকের ভেতর আগুন জ্বলছিল এতদিন, একটু ঠাণ্ডা হতে দাও।”

একথায় নিহিনের চোখে ভিজে উঠল। সেটা দেখতে পেয়ে কলরব বলল,

“খবরদার, এখন কাঁদলে একটা থাপ্পড় মেরে গালে দাগ বসিয়ে দেবো।”

এরপর নিহিন নিজেই কলরবের বুকে মাথা রাখল। তারপর কলরব বলল,

“অবশ্য গাল লাল করার আরো উপায় আছে।”

“ইশ, আর কোনো কথা নেই?”

“আছে তো। ওই যে গুরুত্বপূর্ণ কথা। তার মধ্যে আরেকটা হলো আজ তোমাকে ১৫/১৬ জনের মত রান্না করতে হবে।”

“আচ্ছা। কিন্তু এতজন কারা?”

“আমরা ৪ জন, সাব্বির, তিথি আর কিছু ফ্রেন্ড, বড় চাচা আর ফুপিদের বাসা থেকে কেউ আসতে পারে, ও হ্যাঁ খালামনিও আসবে।”

“মানে কি আজ আমার ইন্টারভিউ?”

ভয়ে ভয়ে বলল নিহিন। কলরব বলল,

“আরে নাহ, এমনি সবার তোমাকে দেখার আগ্রহ তাই। আর তজনের রান্না বাইরে ব্যবস্থা করা যেত, কিংবা বুয়া করতে পারত, কিন্তু তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি কারণ আমি সবাইকে জানাতে চাই যে আমি কতটা ভাগ্যবান। তারাও দেখুক ১০ বছরের কষ্টের পুরস্কারসরূপ আমি কি পেতে চলেছি। তারাও বুঝুক গত ১০ বছর কষ্ট করলেও বাকি ৭০ বছর বেহেশতি খাবার খেতে পারব। বলোতো পরি ১০০ বছর বাঁচব না?”

নিহিনের প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে, এত ভালোবাসা কোথায় রাখবে ও? ও কি যোগ্য এত ভালোবাসার? অনেক কষ্টে কান্না চেপে ধরা গলায় বলল,

“হুম।”

শেষ পর্যন্ত এক ফোঁটা জল চোখ গড়িয়ে পড়েই গেল। কলরব বুঝলো এ কান্না আটকে রাখা এত সহজ নয়।

“আমি জানি আমি আর ৩০ বছর বাঁচলেও তুমি আমাকে হাজার বছরের সুখ দেবে।”

নিহিন কোনো কথা বলতে পারল না। কলরব ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল, “কেঁদো না প্লিজ। তুমি কাঁদলে আমার বড় কষ্ট হয়। তোমার থেকে দূরে থাকার চেয়েও অনেক বেশি কষ্ট।”

নিহিন বলল,

“এটা সুখের কান্না।”

“না তুমি সুখেও কাঁদতে পারবে না। হাসবে শুধু।”

নিহিন ভেজা চোখেই হেসে বলল,

“আচ্ছা। আর কী গুরুত্বপূর্ণ কথা যেন আছে?”

“হুম, আর একটা কথা। ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করব ভেবেছিলাম কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তোমাকে জাস্ট জানিয়ে দিলেই হবে।”

“কী?”

“না মানে, কল্প আমাকে ছাড়া ঘুমাতে পারে না। বিয়ের পরও কিন্তু ও আমাদের সাথেই ঘুমাবে।”

“না, তা হবে না। তাছাড়া বিয়ের পর কল্প তোমার কাছে ঘুমাতেই চাইবে না।” চিন্তায় পড়ে গেল কলরব।

“পরি শোনো…”

ওকে থামিয়ে নিহিন বলল,

“তখন ও শুধু আমার সাথেই ঘুমাতে চাইবে।”

হাসল কলরব।

“তোমার মতো লক্ষ্মী বউয়ের কাছে এটাই আশা করা যায়।”

“কিন্তু তুমি ঘাবড়ে গিয়েছিলে।”

“ঠিক তা নয়।”

“দেখো কল্প আমারও ছেলে, আমার ছেলেকে নিয়ে তুমি অনেক ভেবেছো এই পাঁচ বছর। এবার আমাকে ভাবতে দাও তো।”

হাসল কলরব। নিহিন কলরবের বুকে মুখ ঘষছিল। কলরব বলল, “শুড়শুড়ি দিচ্ছ কেন?”

নিহিন এতক্ষণে ছাড়ল কলরবকে।

“তোমার শুড়শুড়ি আছে?”

কলরব খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল,

“হ্যাঁ আছে। তো, এমনভাবে বলার কী হলো?”

এবার কলরবকে শুড়শুড়ি দেওয়া শুরু করল নিহিন। কলরব তো রীতিমতো লাফাচ্ছিল আর হাসছিল,

“এই থামো, থামো বলছি। আমি ধরলে কিন্তু বাঁচবে না, খবর আছে।”

তবু নিহিন শুড়শুড়ি দিয়েই গেল। হঠাৎ কলরব নিহিনকে ধরে সামনের দিকে ফিরিয়ে ওর হাত দুটো পিছনে নিয়ে আসলো। তারপর হাত ছেড়ে দিয়ে পিছন থেকেই জড়িয়ে ধরে বলল,

“আমার বউটা খানিকটা দুষ্টু হয়েছে, অথচ তা টের পাওয়ার সুযোগই হয়নি আমার এতদিন।”

নিহিন লজ্জায় কিছু বলতে পারল না। কলরব ওর ঘারের ওপর থেকে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু খেল। ভালোলাগায় মরে যাচ্ছিল নিহিন। কলরব নিহিনের কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিল। তারপর বলল,

“জানো শাড়ি পরে তোমাকে একদম বউ বউ লাগছে!”

নিহিন হাসল। কলরব বলল,

“দাঁড়াও…”

বলেই নিহিনের শাড়ির আঁচল তুলে মাথায় ঘোমটা পরিয়ে দিলো কলরব। তারপর এমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল যে নিহিন লজ্জায় কুঁকড়ে গেল।

তারপর কলরব বলল,

“এখন একদম নতুন বউ। ওয়েট…”

তারপর কলরব আচমকা নিহিনকে কোলে তুলে নিয়ে আয়নার দিকে হাঁটতে লাগল। নিহিন তাকাতেই পারছিল না, শুধু ভাবছিল এ সময়টাকে যদি আটকে দেয়া যেত। আয়নার সামনে গিয়ে ও দাঁড় করিয়ে দিলো নিহিনকে। তারপর বলল,

“দেখো, কী অসাধারণ লাগছে। নিহিন কিছু বলল না। কলরবই আবার বলতে শুরু করল,”

“শুধু একটা জিনিস মিসিং, নাকে যেন কী একটা দেয়, নাক থেকে কান পর্যন্ত..”

“নথ।”

“হ্যাঁ নথ। আরো একটা জিনিস যেটা কপালে দেয়।”

“টিকলি?”

“না, টিকলির পাশে যেটা দেয় এভাবে।”

নিহিনের মাথায় হাত দিয়ে এঁকে দেখালো। নিহিন বলল, “টায়রা।”

“হ্যাঁ, ওটাও মিসিং। এই দুটো জিনিস হলেই বিয়ের কনে মনে হতো। আর এখন সদ্যবিবাহিত নতুন বউ বলে মনে হচ্ছে। উফ পাগল হয়ে যাচ্ছি। শোনো আজ আমি চরিত্রহীন হতে চাই।”

“ইশ!”

নিহিন সরিয়ে দিতে চাইল কলরবকে। কিন্তু ও এমনভাবেই ধরেছে যে পারল না।

তারপর কিছুক্ষণ নিহিনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

“আচ্ছা, মনে আছে ছোটবেলার একটা কথা। তোমাদের ছাদে একদিন দেখা করতে গিয়েছিলাম। একটা কাজ করব বলেছিলাম আর তুমি কেঁদে ফেলেছিলে। তোমার কান্না দেখে আমি বলেছিলাম, এসব করা দূরের কথা আর এসব বলবও না, তুমি বড় হলে করব। পরি এখন কিন্তু তুমি বড় হয়ে গেছ। সুতরাং…”

একথা শুনেই নিহিনের মনে পড়ে গেল। লজ্জায় মাথা নিচু করে হেসে ফেলল।

কলরব বলল,

“দেখেছ আগে যে কথা শুনে কাঁদতে, এখন সেকথা শুনে হাসছ।

একথা শুনে ধ্যাত বলে সরে যেতে চাইলো নিহিন। কিন্তু যথারীতি কলরবের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পারল না নিহিন। কলরব বলল,

“এত সোজা না।”

তারপর কলরব দুহাতে নিহিনের মুখটা তুলে ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখল।

কিছুক্ষণ পর বেল বাজতেই সরে গেল নিহিন,

“আংকেল আর কল্প এসেছে। আমি দরজা খুলতে যাচ্ছি।”

“দাঁড়াও।”

“কী?”

“বলো বাবা আর কল্প এসেছে।”

নিহিন হেসে বলল,

“বাবা আর কল্প এসেছে।”

“এই তো এখন কল্পর মায়ের মতো লাগছে!”

নিহিন আবার হাসল। কলরব কেকটা হাতে নিয়ে বলল,

“কেকটা রান্নাঘরে রেখে আমি দরজা খুলছি। তুমি মোমগুলো ঝটপট সরিয়ে ফেলো। এগুলো দেখলে কল্পর মন খারাপ হতে পারে, ওকে রেখে আমরা সেলিব্রেট করেছি ভেবে।”

“আচ্ছা।”

দরজার দিকে রওনা হয়েই ফিরে তাকাল কলরব। বলল,

“ঘোমটা টা ফেলো। নাহলে কল্প হাঁ করে তাকিয়ে থাকবে। আর ওর হাজারটা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।”

নিহিন লজ্জা পেয়ে ঘোমটা ফেলে দিলো। কতদিকে খেয়াল কলরবের! ঘরের দরজার বাইরে গিয়ে আবার উঁকি দিলো কলরব,

“শোনো..”

নিহিন তাকাতেই বলল,

“শশুরআব্বা এবারও ফিরিয়ে দিলে তুলে নিয়ে আসব তোমাকে।”

২৮

নিহিন ক্লাস শেষ করে বাসার দিকে ফিরছিল। ফোনটা তখনই এলো। নম্বরটা দেখেই ভয়ে নিহিনের হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেল! অনেকবার ফোন নম্বর বদলেছে কিন্তু তবুও কীভাবে যেন এই লোকটা নম্বর পেয়েই যায়। ধরবে নাকি ধরবে না ভাবছে। অবশ্য না ধরলে ফোন করতেই থাকবে। জীবন অতিষ্ট করে ফেলবে। ভয়টাকে যথাসম্ভব দমিয়ে রেখে ফোন ধরল নিহিন।

“হ্যালো।”

“সুন্দরী এতবার ফোন করালে কেন? প্রথমবার ধরতে পারলে না? এত অপেক্ষা আমার পছন্দ না জানোই তো।”

“ফোন বাজছিল শুনতে পাইনি। কী বলবেন বলুন।”

“শুনলাম তোমার নাগর নাকি ফিরে এসেছে। তার সাথে নাকি বিবাহ বসবা?”

এ কথা বলে বিশ্রীভাবে হাসছিল ‘জিকো। নিহিন ভয়ে কুঁকড়ে গেল! শওকত সাহেব ও কলরব নিহিনের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল। আলতাফ সাহেব শুধু যে বিয়েতে রাজি হয়েছেন তাই নয় উলটো কলরবের সাথে যে অন্যায় তিনি করেছেন তার জন্য ক্ষমাও চেয়েছেন। সেদিনই ওদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হয়েছে। সপ্তাহখানেক পর ওদের বিয়ে। বিয়েটা তেমন ঘটা করে হবে না। নিহিনদের বাসায় একদম ঘরোয়াভাবে শুধু পরিবারের মানুষদের নিয়ে বিয়ে হবে। আত্মীয়স্বজনদেরও এখন জানানো হবে না। এ খবর এত তাড়াতাড়ি জিকো জানল কীভাবে?

“একি! সুন্দরী চুপ কেন?”

“আপনার সাথে তো আমার ডিভোর্স আরো ৬ বছর আগে হয়েছে। তাহলে এখন আমি আবার বিয়ে করি বা না করি তাতে আপনার কী?”

“ওরে বাবা! মেয়েটা কত চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শিখেছে দেখো! ওহহো আমি তো ভুলেই গেছি তুমি তো আবার এখন লেকচারার। সারাদিন লেকচার দিয়ে দিয়ে স্বভাব খারাপ হয়ে গেছে। সবার সাথেই লেকচার দিতে মন চায়!”

এ কথা বলে জিকো আবার তার সেই বিশ্রী হাসিটা দিলো। নিহিন চুপ করে রইল। ঘৃণায় ওর গা গোলাচ্ছে। ফোনটা রাখারও সাহস হচ্ছে না। জিকো আবার বলল,

“বুঝলা নিহিন, এজন্যই বলি মেয়ে মানুষের অত পড়ালেখার দরকার নাই। তোমার বাপটা আসলে বুঝল না!”

“এত আবোল-তাবোল কথা না বলে আপনি কেন ফোন করেছেন সেটা বলেন।”

“ওমা একসময় কত ভালোবাসা ছিল আমাদের। আমি কি তোমাকে ফোন করতে পারি না?”

“না পারেন না। আমার ওপর আপনার সব অধিকার ৬ বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে।”

“শোনো নিহিন, আমি কিন্তু তোমাকে ইচ্ছায় ছাড়ি নাই। তোমার বাপটা এমন প্যাঁচ খেললো শালার!”

“আমি রাখছি।”

“আরে পাগল শোনো শোনো।”

“তাড়াতাড়ি বলুন। এত সময় নেই।”

“তোমার পেয়ারের নাগরকে বলছো আমার কথা? কত ভালোবাসতাম সেসব বলছো?”

“সেসব জানার প্রয়োজন মনে করেনি সে।”

“আহহা! পুরুষ মানুষ আবার এসব জানার প্রয়োজন মনে করবে না তাই কি হয়?”

“সবাইকে নিজের মতো ভাববেন না।”

“আমিই তোমার হয়ে বলে দেই কি বলো?”

এ কথা বলে জিকো আবার সেই বিশ্রী হাসিটা দিলো। অসহ্য লাগছিল নিহিনের।

“আমার এখন ক্লাসে যেতে হবে, রাখি।”

“ওমা সন্ধ্যাবেলায় ক্লাস থাকে নাকি তোমার?”

“থাকে ইভনিং মাস্টার্সের ক্লাস। রাখছি।”

ফোন রাখার জন্য বাধ্য হয়ে মিথ্যে বলল নিহিন। এই লোকটাকে সে

কখনোই ক্ষ্যাপাতে চায় না। ক্ষেপলে যে এ লোকটা কতটা ভয়ংকর হয় তা ওর থেকে ভালো পৃথিবীর আর কেউ জানে না।

নিহিন বাসায় ঢুকেই আলতাফ সাহেবের এ কাছে চলে গেল। এবং তাকে জিকোর ফোন করার কথা বলল। নিহিন তখনো ভয়ে কাঁপছিল। আলতাফ সাহেব মেয়েকে পাশে বসিয়ে বলল,

“তুই এখনো ওকে এত ভয় পাস কেন মা?”

“বাবা সে একটা ভয়ংকর মানুষ। আমার মনে হয় না সে আমাকে কখনো শান্তিতে থাকতে দেবে। শুনলে তো সে এখন আমাকে হুমকি দিচ্ছে করলবকে সব বলে দেবে।”

“আমি বলি কি মা কলরবের কাছে আমরাই সবটা বলে রাখি। নাহয় জিকো যে ধরনের ছেলে কখন কী হয়!

“আমি অনেকবার বলতে চেয়েছি বাবা সে শুনতে চায় না।”

“যদি আমি বলি?”

“সে শুনতে চাইবে না বাবা।”

“তবু চেষ্টা করে দেখি। জিকো বলতে গেলে তো বিয়েই ভেঙে যাবে। নিহিন আর কোনো কথা না বলে নিজের ঘরে চলে এলো। ভালো লাগছে না। কিছু ভাল লাগছে না। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত নেমে যাচ্ছে। নিহিনের এমন কোনো অতীত নেই যেটার জন্য ভয় পেতে হবে কিন্তু ওর সব ভয় জিকোকে নিয়ে! ওর মত খারাপ মানুষেরা সব করতে পারে।

লাঞ্চ শেষে কলরব নিজের চেম্বারে যাচ্ছিল, ঠিক সে সময়েই খবর এলো এক ভদ্রলোক তার সাথে দেখা করতে এসেছেন, ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছেন। লোকটিকে দূর দেখে চিনতে পারল না কলরব। একটু দূর থেকেই লক্ষ করল পোশাকে ভদ্রলোক হলেও চোখ দেখে মনে হচ্ছে জব্বর মাল টেনে এসেছে। নেশাখোর কারো ওর সাথে অফিসে দেখা করতে আসার কথা না! কলরব লোকটার বাকি সবকিছুর দিকে আরেকটু নজর দিলো। বিদেশি দামি ব্যান্ডের স্যান্ডেল, ঘড়ি ও সানগ্লাস, জিন্স, শার্ট পরে আছে সে। দু লাখ টাকা দামের ঘড়ি যে লোকটার হাতে সে ওর সাথে কী উদ্দেশ্যে দেখা করতে আসতে পারে? এসব ভাবতে ভাবতে কলরব লোকটির সাথে দেখা করতে গেল। লোকটি ওকে দেখেই হ্যান্ডশেক করার জন্য উঠে দাঁড়াল। হ্যান্ডশেক করে দুজনে কোনাকুনি দুটো সোফায় বসলো। কলরব বলল,

“সরি আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।”

লোকটি অদ্ভুতভাবে হেসে বলল,

“আমি জিকো, নিহিনের হাজব্যান্ড।”

কলরব কিছুটা অবাক হলেও সামলে নিয়ে বলল,

“এক্স হাজব্যান্ড!”

“ওহ হ্যাঁ এক্স, তবে ব্রাদার ডিভোর্স টা কিন্তু ওই বুড়ো জোর করে করিয়েছে। আমরা কিন্তু দুজন দুজনকে প্রচণ্ড ভালোবাসতাম। এমনকি এখনো বাসি। এজন্য আজ অবধি অন্য কাউকে বিয়েও করিনি।”

“আচ্ছা। তা আমি আপনার জন্য কী করতে পারি?”

“কিছুই না। এই একটু দেখতে আসলাম বউটার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে!”

কী অদ্ভুত কথা! ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পরেও বউ বউ করছে। কলরবের ইচ্ছে করছে লোকটার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। সেদিন নিহিনের কাছে পুরো কাহিনি শুনলে আজ এই লোকটার সব কথার জবাব দিতে পারতো। কিন্তু কিছুই জানে না আন্দাজে কী বলবে! কলরব যথাসম্ভব মাথা ঠাণ্ডা রেখে বলল,

“তা কেমন দেখলেন?”

জিকো কলরবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে বলল,

“নিহিন আপনাকে আমাদের বাচ্চার কথা বলেছে?”

কলরব এবার আকাশ থেকে পড়ল। নিহিনের বাচ্চা আছে? নিহিনের বাসায় তো কোনো বাচ্চা দেখেনি। তাহলে কি বাচ্চা এই লোকের কাছে থাকে? নিহিন কথাটা ওকে বলল না কেন? পরক্ষণেই মনে পড়ল ও নিজেই তো কিছু জানতে চায়নি। কিন্তু এখন কী উত্তর দেবে? কলরব আর যাই হোক না কেন এ লোকটার কাছে ছোটো হতে চায় না। নিহিনকেও ছোট করতে চায় না। তাই মৃদু হেসে বলল,

“দেখুন মিস্টার জিকো, নিহিন আমার প্রেমিকা, হবু স্ত্রী। সে আমাকে কী বলেছে কী বলেনি সেসব আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেসব নিয়ে আমি নিশ্চয়ই আপনার সাথে কথা বলব না?”

“অন্ধ! একেই বলে প্রেমে অন্ধ! আমিও ছিলাম! তবে ব্রাদার আমি আপনার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বলছি ওর তো দ্বিতীয় বিয়ে, আপনার তো প্রথম! একটু ভালো করে খোঁজখবর নিয়ে নিন। নিহিন কিন্তু প্রচুর নেশা করে। ইয়াবা খায়! ইয়াবাখোর বউ চলবে তো?”

এ কথাটা বলে জিকো খুব বিশ্রীভাবে হাসলো। রাগে কলরবের শরীর ফুটছে। অফিস না হলে কলরব এ লোকটাকে মেরে বাপের নাম ভুলিয়ে দিত। কলরব হেসে বলল,

“আমিও ইয়াবা খাই। আমরা দুজন মিলেই খাই।”

এ কথা শুনে জিকো একটু ভরকে গেল। কলরব তাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,

“এ ব্যাপারে আপনার নিশ্চয়ই কিছু বলার নেই? থাকলেও সেসব শোনার সময় আমার নেই। এটা আমার অফিস, আমার কাজ আছে। আপনি এখন আসতে পারেন।”

‘পরে কিন্তু আফসোস করেও কূল পাবেন না।”

জিকো তার বিশ্রী হাসিটা দিয়ে চোখ মেরে বেড়িয়ে গেল!

২৯

কলরব পুরোটা বিকেল ভাবতে লাগল নিহিনকে কি জানানো উচিত এই লোকটার আসার কথা? নিহিন যা বলতে চেয়েছিল তাও কি জেনে নেয়া উচিত ভবিষ্যতের সুখ শান্তির জন্য? কিন্তু এখন জানতে চাইলে নিহিন ভুল বোঝে যদি? কিন্তু নিহিনের বাচ্চার ব্যাপারে তো ক্লিয়ার হওয়া জরুরি। সে যদি নিহিনের কাছে থাকে তাহলে কল্প কি তার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে? নিহিনদের বাসায় সেদিন প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল সেদিন সেখানে দুটো বাচ্চা দেখেছিল। কিন্তু তারা তো মোহনা আপুর বাচ্চা। তাহলে কি বাচ্চা জিকোর কাছে থাকে। ভবিষ্যতে কি কখনো নিহিনের কাছে থাকতে চাইবে। আসলে নিহিনের বাচ্চা থাকলেও সেটা কোনো সমস্যা না। সমস্যা হচ্ছে কল্প সহজেই অন্য বাচ্চাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারে না। কি করবে এখন? নিহিনদের বাসায় এত প্রশ্নের তাড়নায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল কলরবের। কিন্তু নিজের অজান্তেই সবকিছু সহজ করে দিলো নিহিন। কলরব বাসায় গিয়ে দেখে নিহিন এসেছে।

নিহিন কলরবের ঘরে রকিং চেয়ারে বসে গল্পের বই পড়ছিল। কলরব ঘরে ঢুকতেই নিহিন ওর দিকে তাকিয়ে হাসল। এ হাসিটা দেখে কলরবের সারাদিনের ক্লান্তি, দুশ্চিন্তা সব দূর হয়ে গেল। কলরব হেসে বলল,

“তুমি!”

নিহিন হেসে উত্তর দিলো,

“একজনের আবদার রাখতে এলাম!”

“কার?”

“আমার ছেলের। বিকেলে ফোন করে বলল মা তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। যেদিন থেকে ছেলেটা আমাকে মা বলতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই আমি আর ওর কথা ফেলতে পারি না। মা কি সন্তানের কথা ফেলতে পারে? তাই ক্লাস শেষ করে সোজা এখানে চলে এসেছি।”

কলরব নিহিনের মধ্যে একজন পরিপূর্ণ মাকে দেখছিল। ব্যাগ রেখে স্যুট খুলতে খুলতে কলরব বলল,

“তা তোমার ছেলে কোথায় এখন?”

“পড়তে বসেছে, এই কয়েক মিনিট আগে ওর টিচার এসেছে। আমি তোমার সাথে দেখা করে যাব বলে অপেক্ষা করছিলাম।”

“খুব ভালো করেছ। তাছাড়া আমি থাকতে তুমি একা কেন যাবে?” এ কথা বলে নিহিনের চেয়ারের মুখোমুখি বিছানায় বসলো কলরব। তারপর দুহাতে নিহিনের একটা হাত ধরে বলল,

“পরি আমি কিছুক্ষণ পর তোমাকে ফোন করতাম। ভালো হয়েছে দেখা হয়ে গেল।”

“কী হয়েছে?”

নিহিন সোজা হয়ে বসলো। কলরব বলল,

“তেমন কিছু না। তবে আমার ব্যাপারটা তোমাকে জানানো উচিত।”

“বলো।”

“আজকে জিকো বলে একটা লোক আমার সাথে দেখা করতে অফিসে এসেছিল।”

নিহিনের বুক কেঁপে উঠল। দুদিন ধরে যে ভয় করছিল তাই হলো তাহলে! কলরব বলল,

“লোকটা বলছিল সে তোমার এক্স হাজব্যান্ড।”

“কেন এসেছিল? কী বলেছে সে?”

“তেমন কিছু নয়। তবে মনে হচ্ছে সে আমাদের বিয়ে ভাঙতে চাচ্ছে।”

নিহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

“আমার মনে হচ্ছিল সে তোমার কাছে যাবে। দুদিন ধরে আমাকে অনেক হুমকি ধামকি দিচ্ছিল।”

“কীসের হুমকি? আর তার কথা শুনেই তুমি এত ভয় পাচ্ছ কেন? কী করবে সে?”

“কলরব প্লিজ তুমি বিয়ের আগেই আমার অতীতটা জেনে নাও। নাহলে আমি কিছুতেই শান্তি পাব না। ওই লোকটার কাছ থেকে শোনার থেকে আমার কাছ থেকে শোনা ভালো। কারণ সে যখন বলবে কখনোই পুরোটা বলবে না। উলটো আরো অনেক রঙচঙ মিশিয়ে বলবে!”

“আচ্ছা তুমি এত দুশ্চিন্তা কেন করছো? এসব তো পরেও জানা যাবে তাই না?”

“না প্লিজ। তুমি প্রথমে শুনবে না বলেছিলে আমি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু লোকটা যখন তোমার অফিস পর্যন্ত চলে গেছে এখন তো আমার সবটা তোমাকে জানাতেই হবে। নাহলে এ বিয়ে হবে না।”

কলরব নিহিনের হাতের উলটোপিঠে চুমু দিয়ে বলল,

“এমনভাবে বলো না পরি। অনেক কষ্টের পর তোমাকে পেতে যাচ্ছি।”

নিহিন চুপ, শক্ত হয়ে বসে রইল। কলরব বলল,

“আচ্ছা বলো।”

নিহিন কলরবের দিকে নয়। মেঝের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করল,

“আমার বিয়ে হয়েছিল কলেজে ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়। জিকো অনেক বড়লোকের ছেলে ছিল। টাকাপয়সার অভাব ছিল না। কাজকর্ম করতে হতো না। উনি সারাদিন ঘুরে বেড়াত আর নেশা করত। ওই বাড়িতে আমি একরকম বন্দি জীবনযাপন করতাম। বাড়ির বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল। কলেজে যেতে দিত না। ফোন ব্যবহার করতে দিত না। জিকো ছাড়া বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগেরও আর কোনো মাধ্যম ছিল না আমার। পরীক্ষার সময়গুলোতে বাবা জোর করে আমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসত। পরীক্ষা শেষ হতেই জিকো আবার ওনাদের বাসায় নিয়ে যেত। আমাকে ছাড়া লোকটা পাগল হয়ে যেত। আমার পরীক্ষা কখনোই ভালো হতো না। রেজাল্টও ভালো হতো না। কোনোরকমে পাশ করতাম। এইচএসসি পাশ করার পর ওরা বলল আর পড়াবে না। আসলে জিকোর সাথে আমার সম্পর্কটা একটু অন্যরকম ছিল, সব স্বামী-স্ত্রীর মতো না। মানে আমি ওনার সাথে সহজ হতে পারতাম না। আপনি আপনি করে বলতাম। প্রথম রাত থেকেই আমি ওনাকে অনেক ভয় পেতাম। এজন্য দূরে দূরে থাকতাম। এটার অবশ্য কারণ ছিল। মানে.. আমি.. আসলে..”

নিহিন আমতা আমতা করছে বলে কলরব বলল,

“তুমি যেসব বলতে অস্বস্তিবোধ করছো সেসব স্কিপ করো না পরি?”

“না এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বলতে হবে।”

কলরব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“আচ্ছা বলো।”

নিহিন পাশে রাখা পানির বোতল থেকে পানি খেয়ে আবার বলতে শুরু করল,

“প্রথম রাত থেকেই সে আমার ওপর খুব জবরদস্তি করেছে। আমি কী চাই কী চাই না, সেসব ভাবার প্রয়োজন মনে করেনি। আর প্রথম রাতেই জলন্ত সিগারেট নিভিয়েছিল আমার শরীরে। ভয়টা তখনই ঢুকে গিয়েছিল!”

“শিট!”

“আমার সারা শরীরে সিগারেটের পোড়া দাগ পাবে। দাগ পাবে আরো অনেক অত্যাচারের।”

“প্রতিবাদ করোনি কখনো?”

“প্রতিবাদ করতে জানতাম না। তুমি তো জানোই আমি কেমন ছিলাম। তুমি চলে যাওয়ার পরের বছরই তো বিয়ে হলো। এক বছরেই তো আমি আর বড় হয়ে যাইনি। আর ওর বাড়িতে যাওয়ার পর বড় হওয়ার সুযোগই মেলেনি আর!”

“আংকেলকে কখনো বলোনি এসব কথা?”

“বাবাকে বলতে লজ্জা লাগত। আর মা তো আমার বিয়ের কয়েক মাস পরেই অসুস্থ্য হয়ে মারা গেলেন। বলার মতো ছিল আর মোহনা আপু। ও তো তখন দুলাভাইয়ের সাথে দেশের বাইরে থাকত। বাবাও কখনো কিছু বুঝতে পারতেন না। আসলে বাবার তো দোষ না। জিকো ওনার সামনে একদম অন্যরকম ভালো মানুষটা সেজে থাকত যে সে আমার সাথে এরকম করত এটা বাবা বললেও বিশ্বাস করতে পারতেন না।”

“অবিশ্বাসের কী আছে? তুমি তোমার শরীরের মারের দাগ দেখাতে পারতে না?”

“বাবাকে দেখবো কী করে?”

“কেন?”

“আমার লজ্জা লাগত। ছোটো ছিলাম তো! আমি খুব কনফিউজড থাকতাম কী করব সে ব্যাপারে।”

কলরব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

“আচ্ছা লোকটা তোমাকে মারতো কেন?”

“সরাসরি মারত না কখনো। অত্যাচার করত। এই যেমন শরীরের মধ্যে সিগারেট নেভাতো, কামড়াতো, গরম চা ছুড়ে মারতো। জোর করে নেশা করাতো। এরকম আরো অনেক কিছুই।”

“নেশা বলতে?”

“মদ, গাঁজা, ইয়াবা, সিসা, হেরোইন, কোকেন, এলএসডি।”

“এলএসডি পর্যন্ত!”

“হ্যাঁ। প্রথম প্রথম তো আমি এসব সহ্য করতে পারতাম না। কিন্তু ওর সাথে এসব নেশা না করলে ওর অত্যাচারের মাত্রা ভয়ংকরভাবে বেড়ে যেত। পরবর্তীতে আমিও আসক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।”

“পরে ছাড়লে কীভাবে এসব? নেশা ছাড়া তো অনেক মুশকিলের ব্যাপার।”

“ডিভোর্সের পর রিহ্যাবে ছিলাম কয়েকমাস।”

“আচ্ছা তারপর?”

“যখন আমাদের বিয়ের বয়স একবছর তখন আমি প্রথমবার প্রেগন্যান্ট হলাম। চেকআপের কথা বলে ওনার বন্ধুর ক্লিনিকে নিয়ে অ্যাবরশন করাল। ওনার অত্যাচার, বন্দি জীবন, প্রথম বাচ্চা হারানোর কষ্ট সব মিলিয়ে এরপর আমি এত বেশি ফ্রাস্টেটেড হয়ে গেলাম যে সুইসাইড এটেম্পট নিলাম। কিন্তু ভাগ্য খারাপ হলে যা হয় বেঁচে গেলাম।”

“ভাগ্য ভালো ছিল পরি। নাহয় আজ আমরা এক হতাম কীভাবে?”

নিহিন হাসল। আর তখনই কলরব খেয়াল করল নিহিন কাঁদছে। কলরব বলল,

“কাঁদছ কেন? আরে পাগল যা গেছে তা তো গেছেই। যা আছে তাই নিয়ে ভাবো না। একটা বাচ্চাকে হারিয়েছ কিন্তু কল্পর মতো আরেকটা বাচ্চার মা তো তুমি হতে পেরেছ!”

নিহিন কান্নায় একদম ভেঙে পড়ল,

“আমি মা হয়েছিলাম! আমার একটা পুতুলের মতো মেয়ে ছিল!” কলরব চুপ করে রইল। কী বলা উচিত এ মুহূর্তে বুঝতে পারছিল না। নিহিন কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“বাচ্চা অ্যাবরশনের পর কিছুদিন আমি উন্মাদের মতো ছিলাম। আবার যখন প্রেগন্যান্ট হলাম তখন আমি বাবার বাসায় চলে আসতে চেয়েছিলাম। জিকো আসতে দেয়নি। হাতে পায়ে ধরে রেখেছে। কথা দিয়েছে এবার আমার বাচ্চার আর কোনো ক্ষতি করবে না। সে কথা রেখেছিল। একটা পুতুল এলো আমার কোলজুড়ে। আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেল। আমার মনে হলো এই বাচ্চাটার জন্য আমি আবার বাঁচব। তখন জিকোর অত্যাচারও আমি ভুলে যেতে পারতাম মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে।”

“তারপর?”

“মেয়েটার যখন ১১ মাস বয়স তখন..”

নিহিন কাঁদতে কাঁদতে আর কথা বলতে পারছিল না। কলরব নিহিনকে ধরে দাঁড় করিয়ে জড়িয়ে ধরল। নিহিন কলরবের বুকে পড়ে খুব কাঁদল। কান্নাটা একটু কমে এলে বলল,

“মেয়েটা নিউমোনিয়া হয়ে মারা যায়। জিকোকে এতবার বলেছি ওকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। সে শোনেনি। সে নেশার ঘোরে পড়ে থাকত সারাদিন সারারাত! বলত সামান্য ঠাণ্ডা জ্বর এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। আমি নিজেও কিছু চিনতাম না যে একা নিয়ে যাব। শেষে জিকোর ফোন চুরি করে বাবার সাথে যোগাযোগ করলাম। বাবা এসে হসপিটালে নিয়ে গেল। কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটা চলেই গেল। এ ঘটনার পর আমি আর জিকোদের বাড়িতে যাইনি। তখনই বাবাকে বললাম আমাকে কোনো রিহ্যাবে পাঠাতে। কারণ আমি তখন পুরোদস্তুর নেশাখোর। বাবা এসব জানতেন না। এ কথা শুনে অনেক অবাক হয়েছিলেন। তবে বাবা ওইসময় আমাকে প্রচণ্ড সাপোর্ট দিয়েছিলেন কারণ এ সবকিছুর জন্য অনিচ্ছাকৃতভাবে হলেও সে দায়ী। আমি সুস্থ হওয়ার পর বাবাকে বললাম দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে যাতে জিকো আমাকে আর খুঁজে না পায় কখনো। এটাও জানালাম আমি আবার পড়াশোনা শুরু করতে চাই। এরপর বাবা আমাকে পড়াশোনার জন্য মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিলেন। এর কিছুদিন পর বাবা ডিভোর্সের ব্যবস্থা করেলেন। জিকো আমাকে ডিভোর্স দিতে রাজি ছিল না। বাবাই ম্যানেজ করেছে সব। এরপর অনেক আফসোস হতো লজ্জা না পেয়ে যদি ব্যাপারগুলো বাবার সাথে আরো আগে শেয়ার করতাম তাহলে আরো আগে মুক্তি পেতাম আমি!”

কলরবের এত কষ্ট হচ্ছিল যে এক্ষুনি গিয়ে জিকোকে খুন করে আসতে ইচ্ছে করছিল! কলরব নিহিনের মুখটা ধরে কপালে একটা চুমু দিলো। তারপর চোখে চোখ রেখে বলল,

“আমার এই ছোট্ট পরিটা এক জীবনে এত কষ্ট করে ফেলেছে আমি ভাবতেই পারছি না।”

নিহিন চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। কলরব বলল,

“আমার সত্যিই আরো আগেই সবকিছু শোনা উচিত ছিল পরি। তাহলে আজকে লোকটাকে মেরে ওর চেহারা পালটে ফেলতাম আমি। আরেকবার আসুক ও আমার কাছে।”

নিহিন হেসে ফেলল। ওর কান্না থেমেছে। কলরব ওর চোখ মুছে দিয়ে বলল, “আমার পরির চোখে কান্না মানায় না। আমার পরি শুধুই হাসবে। কারণ তার হাসিতে নিশ্বাস নিতে শুরু করেছে আরো কিছু মানুষ!”

নিহিন আবার হাসল। কলরব বলল,

“দেখো কল্পর মা তো তুমি হয়েই গেছ। আর যদিও তোমার ওই মেয়েটাকে আমি ফিরিয়ে আনতে পারব না। সে ক্ষমতা তো আল্লাহ মানুষকে দেননি তবে আমাদের বিয়ের পর আবার মা হবে তুমি। আমি আল্লাহর কাছে চাইবো তিনি যেন ওই মেয়েটার মত একটা মেয়ে তোমাকে আবার দেন। এই বাবাটা কিন্তু সন্তানের ব্যাপারে অনেক কেয়ারিং।”

নিহিন হাসল শুধু কিছুই বলতে পারল না। জীবনের একটা সময় খুব খারাপ গেলে বোধহয় আরেকটা সময় খুব ভালো যায়। কলরব বলল,

“কিন্তু আমি এটা বুঝলাম না ওই বদ লোকটা আমাদের বিয়ের কথা জানল কীভাবে?”

“সে আমাদের দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হয়। যদিও দূরের কোনো আত্মীয়দের জানানো হয়নি। তবু আত্মীয়দের মাধ্যমেই কথাটা ওনার কানে গেছে। এমনকি আমার যে পুরোনো প্রেমিকের সাথে বিয়ে হচ্ছে সেটাও জেনে গেছে। ঠেস মেরে কথা বলছিল।”

“আমার কথা আগে থেকে জানত?”

“হ্যাঁ আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিল বিয়ের আগে প্রেম ছিল কি না। আমি তখন তোমার কথা বলেছিলাম।”

“তার রিয়াকশন কী ছিল?”

“তেমন কোনো রিয়াকশন ছিল না। খুব স্বাভাবিক ছিল। ওরও বিয়ের আগে অনেক প্রেম ছিল। সেসব কথাও আমাকে বলত।”

“ও। আচ্ছা লোকটার কি চরিত্রে সমস্যা ছিল? মানে বিয়ের পর কোনো মেয়েঘটিত কোনো সমস্যা দেখেছ?

“না। মেয়েঘটিত সমস্যা ছিল না।”

“তাহলে ব্যাটা সাইকো। নেশা করে করে এ অবস্থা হয়েছে। তবে চান্স পেলে জীবনে ওকে একটা মাইর আমি দিতে চাই।”

নিহিন হেসে বলল,

“হয়েছে এবার ছাড়ো। কল্পর টিচার যাওয়ার সময় হয়েছে। গেলেই কল্প এখানে চলে আসবে।”

“আসুক। বাবা মা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে এ দৃশ্য ছেলে দেখলে ক্ষতি কী? উলটো ওর আরো ভালো লাগবে। ও নির্ভরতা পাবে।”

“ধ্যাত লজ্জা করে না?”

“না।”

“ছাড়ো।”

“তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেবো না। তোমায় বক্ষমাঝে রাখব ছেড়ে দেবো না…”

কলরব দু লাইন গাইতেই নিহিনের মনটা ভালো লাগায় ভরে গেল। কল্প বাইরে থেকেই বোধহয় গানটা শুনতে পেল কারণ ও বলল,

“পাপ্পা গান গাইছে।”

কলরব তাড়াতাড়ি সরে গেল আর ঠিক তখনই কল্প ঘরে ঢুকে বলল,

“পাপ্পা গান গাইছো! গিটার নাও প্লিজ।”

নিহিন কল্পকে কোলে নিয়ে বসলো। কলরব গিটার নিয়ে গান শুরু করল,

“কত লক্ষ জনম ঘুরে ঘুরে মনরে মনরে
লক্ষ জনম ঘুরে ঘুর,
আমরা পেয়েছি ভাই মানব জনম,
এ জনম চলে গেলে আর পাবো না।
তোমায় হৃদমাঝারে রাখব ছেড়ে দেবো না।
ওরে ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর পাবো না
ক্ষ্যাপা ছেড়ে দিলে সোনার গৌড় আর পাবো না
না না না ছেড়ে দেবো না।
তোমায় হৃদমাঝারে রাখবো ছেড়ে দেবো না।
তোমায় বক্ষমাঝে রাখবো ছেড়ে দেবো না।”

নিহিন গান শুনছে আর হাসছে। শুধু নিহিনের ঠোঁট নয়, হাসছে নিহিনের চোখ, গাল, চিবুক সবকিছুই। হারিয়ে যাওয়া হাসিগুলো সব ফিরে এসেছে তার জীবনে। হাসি বানানোর কারিগরকে যে ফিরে পেয়েছে।

***

অধ্যায় ৬ / ৬

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন