চিরদিন শহরেই থাকি

জীবনানন্দ দাশ

চিরদিন শহরেই থাকি
পড়ে থাকি পাটের আড়তে
করি কেরানির কাজ—শুভে-লাভে যদি কোনোমতে
দিন যায় চ’লে
আকাশের তলে
নক্ষত্রেরা কয় কোন্‌ কথা
জোৎস্নায় প্রাণের জড়তা
ব্যথা কেন পায়
সে সব খবর নিয়ে কাজ কিবা হায়

বিয়ে হয়েছিল কবে—মরে গেছে বউ
যদিও মহুয়া গাছে ফুটে ওঠে মৌ
একবার ঝরে গেলে তবু তারপর
মহুয়া মহুয়া তবু : কেরানির ঘর
কেরানির ঘর শুধু হায়
জীবনের গল্প শুধু একবার আসে—শুধু একবার নীল কুয়াশায়
নিঃশেষে ফুরায়।

দেবতা ভজি না আমি
তীর্থ করি নাকো
তোমরা ঠাকুর নিয়ে থাকো।
তবু আমি একবার ছুটি পেয়ে বেড়াবার তরে
গেলাম খানিকটা দূর—তারকেশ্বরে
গভীর অসাধ নিয়ে—গাঢ় অনিচ্ছায়
ট্রেনে আমি চড়িলাম হায়
কলরবে ধোঁয়ার ধূলায়
সাধ ক’রে কে বা মিছে যায়

জানি না ঈশ্বর কে বা—জানি শুধু ভুখা ভগবান
দিনগত পাপক্ষয় ক’রে পাব ত্রাণ
তারপর একদিন নিমতলা ঘাটে
কিংবা কাশি মিত্রের তল্লাটে
পড়ে রব
তবুও যখন আমি ঢের রাতে ফিরিলাম ঘর
বুকে জাগে সেই দেশ : তারকেশ্বর
দেবতারে কে খুঁজেছে—সারাদিন ঘুরিয়াছি পথে
অবসন্ন ধুলোর জগতে
অসংখ্য ভিড়ের মাঝে আমি
একখানা মুখ দেখে গিয়েছি যে থামি
সিংহের মূর্তির কাছে তাহারে ফেলেছি দেখে
দেখিয়াছি কবে যেন দেবতার পায়ে তা’রে
এশিরিয়া ব্যাবিলনে আমি
দেখেছি মিশরে
ঈসিসের ঘরে
সারাদিন—দিনমান আজ এই তারকেশ্বরে
আবার তাহার মুখ দেখিলাম, (আহা,)
ধানসিড়ি নদীটির বিকেল বেলার মৌন জলে
বেতের ফলের মতো যেই চোখ, যেই রূপ
ধরা দেয় পৃথিবীর নীরব আঁচলে
দেখিলাম তাহা
আবার তাহার মুখ দেখিলাম, আহা।
———————
বিকল্প পাঠ : ছত্র ১৮ : ‘ভজি’ স্থানে ‘বুঝি’; ছত্র ৩৮ : ‘দেবতার পায়ে তারে’ স্থলে ‘সিংহের মূর্তির কাছে তারে’

[সংযোজন
‘রূপসী বাংলা’র পাণ্ডুলিপি খাতার অন্যান্য কবিতা
১৯৮৪]

সকল অধ্যায়

১. সেই দিন এই মাঠ
২. চারিদিকে শান্ত বাতি
৩. তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও
৪. বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি
৫. যতদিন বেঁচে আছি
৬. একদিন জলসিড়ি নদীটির পারে
৭. আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে
৮. কোথাও দেখিনি আহা এমন বিজন ঘাস
৯. হায় পাখি একদিন কালীদহে ছিল না কি
১০. জীবন অথবা মৃত্যু চোখে রবে
১১. যেদিন সরিয়া যাব তোমাদের কাছ থেকে
১২. পৃথিবী রয়েছে ব্যস্ত
১৩. ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তোমাদের নক্ষত্রের রাতে
১৪. ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন
১৫. যখন মৃত্যুর ঘুমে শুয়ে রবো
১৬. আবার আসিব ফিরে
১৭. যদি আমি ঝরে যাই একদিন
১৮. মনে হয় একদিন আকাশের
১৯. যে শালিখ মরে যায় কুয়াশায়
২০. কোথাও চলিয়া যাবো একদিন
২১. তোমার বুকের থেকে একদিন চলে যাবে
২২. গোলপাতা ছাউনির বুক চুমে
২৩. অশ্বত্থে সন্ধ্যার হাওয় যখন লেগেছে
২৪. ভিজে হয়ে আসে মেঘে এ দুপুর
২৫. খুঁজে তারে মরো মিছে
২৬. পাড়াগাঁর দু পহর ভালোবাসি
২৭. কখন সোনার রোদ নিভে গেছে
২৮. কোথাও মঠের কাছে
২৯. চলে যাব শুকনো পাতা-ছাওয়া ঘাসে
৩০. এখানে ঘুঘুর ডাকে অপরাহ্নে
৩১. শ্মশানের দেশে তুমি আসিয়াছ
৩২. তবু তাহা ভুল জানি
৩৩. সোনার খাঁচার বুকে রহিব না আমি
৩৪. কতদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে
৩৫. এ-সব কবিতা আমি যখন লিখেছি
৩৬. কতদিন তুমি আর আমি এসে এইখানে বসিয়াছি
৩৭. এখানে প্রাণের স্রোত আসে যায়
৩৮. একদিন যদি আমি
৩৯. দূর পৃথিবীর গন্ধে ভরে ওঠে
৪০. অশ্বত্থ বটের পথে
৪১. ঘাসের বুকের থেকে
৪২. এই জল ভালো লাগে
৪৩. একদিন পৃথিবীর পথে
৪৪. পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস করে
৪৫. মানুষের ব্যথা আমি পেয়ে গেছি
৪৬. তুমি কেন বহু দূরে
৪৭. আমাদের রূঢ় কথা শুনে
৪৮. এই পৃথিবীতে আমি অবসর নিয়ে শুধু আসিয়াছি
৪৯. বাতাসে ধানের শব্দ শুনিয়াছি
৫০. একদিন এই দেহ ঘাস
৫১. আজ তারা কই সব
৫২. কোনোদিন দেখিব না তারে আমি
৫৩. হৃদয়ে প্রেমের দিন
৫৪. ঘাসের ভিতরে সেই চড়ায়ের শাদা ডিম
৫৫. এই সব ভালো লাগে
৫৬. সন্ধ্যা হয়
৫৭. একদিন কুয়াশার এই মাঠে
৫৮. ভেবে ভেবে ব্যথা পাব
৫৯. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
৬০. কত ভোরে-দু’-পহরে
৬১. এই ডাঙা ছেড়ে হায়
৬২. এখানে আকাশ নীল
৬৩. সমুদ্রের জলে আমি দেহ ধুয়ে
৬৪. তোমরা স্বপ্নের হাতে ধরা দাও
৬৫. অনন্ত জীবন যদি পাই আমি
৬৬. ঘরের ভিতরে দীপ জ্বলে ওঠে সন্ধ্যায়
৬৭. কত দিন ঘাসে আর মাঠে
৬৮. গুবরে ফড়িং শুধু উড়ে যায় আজ
৬৯. আকাশে চাঁদের আলো
৭০. কেমন বৃষ্টি ঝরে
৭১. সন্ধ্যা হয়ে আসে
৭২. গল্পে আমি পড়িয়াছি কাঞ্চী কাশী বিদিশার কথা
৭৩. চিরদিন শহরেই থাকি
৭৪. ঘাটশিলা—ঘটশিলা—

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন