লাভস লেবার লস্ট

উইলিয়াম শেক্সপিয়র

লাভস লেবার লস্ট
ভাষান্তর : অজয় দাসগুপ্ত ও অরবিন্দ চক্রবর্তী

ফার্দিনান্ড ছিলেন নাভারের রাজা। তিনি ও তার ঘনিষ্ঠ তিন বন্ধু লর্ড বিরাউন, লর্ড লঙ্গাভিল আর লর্ড ডুমেন—এরা সবাই অবিবাহিত।

তিন বন্ধুর সাথে একদিন বিকেলে বেড়ানোর সময় তাদের উদ্দেশ্য করে রাজা ফার্দিনান্ড বললেন, দ্যাখ মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। মানুষ চায় এ জীবনে বেঁচে থাকার সময় সে যা সাহস আর বীরত্ব দেখিয়েছে, মৃত্যুর পরও যেন সবাই তা মনে রাখে। তোমরা সবাই আমার কাছে লিখিত প্ৰতিশ্রুতি দিয়েছ যে তিনবছর আমার কাছে থেকে বিধিনিষেধ মেনে বিদ্যার্জন করবে। আর যে ওসব বিধি-নিষেধ ভাঙবে, তাকে নিজের সম্মান নিজেই বিসর্জন দিতে হবে।

হেসে লঙ্গাভিল বলল, আমি আমার সংকল্পে দৃঢ়প্ৰতিজ্ঞ। আর মোটে তো তিনটে বছর। লিখিত শর্ত অনুযায়ী বললে হয়তো আমার দৈহিক পরিশ্রম বাড়বে, তবুও শাস্তিতে থাকতে পারব আমি।

ডুমেন ছিল একজন দার্শনিক। সে বলল সারাজীবন দর্শনের চর্চা করেই কাটিয়ে দেবে। অনায়াসেই সে তিনবছর কাটিয়ে দিতে পারবে।

বিরাউন বলল, রাজার দেওয়া শর্তগুলোর সাথে সে আরও কিছু যোগ করতে চায়। সেগুলি হল, এই তিন বছর সময়ের মাঝে কেউ নারীর মুখ দেখবে না, দিনে-রাতে এক বারের বেশি কেউ আহার করবে না। আর সপ্তাহে অন্তত একদিন উপোস করবে। তিনঘণ্টার বেশি ঘুমানো চলবে না। রাতে আর দিনের বেলা বিশ্রামের নামে ঘুমনোও চলবে না। রাজা ফার্দিনান্ড সানন্দে মেনে নিলেন এই শর্তগুলি।

 

কথা বলছিলেন রাজকুমারীর সাথে। সে সময় রাজকুমারীর তিন সহচরী রোজালিন, মারিয়া আর ক্যাথরিনও ছিল সেখানে।

লর্ড বয়েত বললেন, মাননীয়া রাজকুমারী!! আপনি, মনে রাখবেন নাভারের রাজার সাথে অ্যাকুইতেন হস্তান্তর সম্পর্কিত জরুরি কথাবার্তা বলতেই আপনি এখানে এসেছেন।

রাজকুমারী বললেন, আপনি হয়তো জানেন না লর্ড বয়েত, আগামী তিনবছর রাজা ফার্দিনান্ড শুধু লেখাপড়া নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। এ সময়ে তিনি কোনও নারীর মুখদর্শন করবেন না। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি এ বিষয়ে তাঁর মতামতটুকু জেনে নেবেন। আচ্ছ। আপনি বলতে পারেন এসব আইন কাদের তৈরি? জানতে চাইলেন রাজকুমারী।

ওই যে নাভারের তিন লর্ড! বললেন বয়েত, লঙ্গাভিল, ডুমেন আর বিরাউন – ওঁরাই এসব বিধি-নিষেধের সৃষ্টি করেছেন। আর রাজা ফার্দিনান্ড কোনও আপত্তি না জানিয়ে মেনে নিয়েছেন সে সব।

রাজা ফার্দিনান্ড শুনলেন ফরাসি রাজকুমারী তাঁর সাথে দেখা করতে চান। সে কথায় ফার্দিনান্ড নিজেই এলেন রাজকুমারীর সাথে দেখা করতে। রাজার ব্রত যাতে ভঙ্গ না হয়। সেজন্য রাজকুমারী আর তাঁর তিন সহচরী আগেভাগেই নিজেদের মুখে মুখোশ এঁটে নিলেন যাতে তাদের নারী বলে বোঝা না যায়।

ফরাসি রাজকুমারীকে অভিবাদন জানিয়ে রাজা ফার্দিনান্ড এসে বসলেন তার মুখোমুখি। তাকে পাল্টা অভিবাদন জানিয়ে রাজকুমারী শুরু করলেন কাজের কথা। ফরাসি রাজকুমারীকে অ্যাকুইতেন প্রদেশ ফিরিয়ে দেওয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কথা-বার্তা বলে বিদায় নিলেন রাজা ফার্দিনান্ড। এবার এগিয়ে এসে রাজকুমারীর সহচরী রোজালিন আর ক্যাথরিনের সাথে যেচে আলাপ করলেন রাজা ফার্দিনান্ডের অন্যতম বন্ধু লর্ড বিরাউন। তিনি চলে যাবার পর রাজকুমারীর আর এক সহচরী মারিয়া তাকে উল্লেখ করলেন বিকারগ্রস্ত বলে।

 

একদিন ফরাসি রাজকুমারী তার তিন সহচরীর সাথে শিকারে বেরিয়েছেন, এমন সময় লর্ড বিরাউনের বিদূষক কস্টার্ড এসে তার হাতে একটি চিঠি দিয়ে বলল তার প্রভু এই চিঠিটা রোজালিনকে দেবার জন্য পাঠিয়েছেন, মুখ আঁটা খামটা রাজকুমারী তার হাত থেকে নিলেন। খামটা খুলে চিঠি পড়ে দেখলেন রাজকুমারী। সেটা একটা প্রেমপত্ৰ—— জনৈক ডন আড্রিয়ানা আর্মাডো একটা প্রেমপত্র লিখেছে জ্যাকুইনেতা নামে এক গ্ৰাম্য বালিকাকে। প্রেমপত্র পড়ে তার ভাষায় মুগ্ধ হয়ে গেলেন রাজকুমারী। তিনি আবেগের সাথে সেটায় চুমো দিলেন। কিছুক্ষণ বাদে তিনি চিঠিটা ফিরিয়ে দিলেন রোজালিনকে।

এদিকে তিন বন্ধুর কারও জানতে বাকি নেই। ফরাসি রাজকন্যার প্রেমে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছেন রাজা ফার্দিনান্ড। একইভাবে তারাও অস্থির হয়ে উঠেছেন রাজকুমারীর তিন সহচরীকে প্রেম নিবেদন করার জন্য। হাতে লেখা চিঠি নিয়ে তারা হন্যে হয়ে বনের মাঝে খুঁজে বেড়াচ্ছেন প্ৰেয়সীদের। একসময় তারা নিজেরাই ধরা পড়ে গেলেন ফার্দিনান্ডের হাতে। তাঁরা তিনজনেই যে প্ৰতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছেন সে কথা স্বীকার করলেন তারা। সেই সাথে তিন লর্ড এও স্বীকার করলেন যে নারীর মুখ না দেখা, সপ্তাহে একদিন উপোস করা এসব উদ্ভট বিধি-নিষেধ আরোপ করে তারা প্রতারণা করেছেন যৌবনের সাথে। তাদের সাথে রাজাও একবাক্যে স্বীকার করলেন নারীই পুরুষের প্রেরণাদাত্রী, নারীই এনে দেয় পুরুষের পৌরুষত্ব। এবার ফরাসি রাজকুমারী ও তার তিন সহচরীর মন জয় করতে তাদের রাশি রাশি দামি উপহার পাঠাতে লাগলেন ফার্দিনান্ড ও তার তিন লর্ড। কিন্তু রাজকুমারী ও তার তিন সহচরী একে নিছক মজা বলেই ধরে নিলেন। অনন্যোপায় হয়ে রাজা ফার্দিনান্ড ও তার তিন লর্ড সরাসরি প্রেম নিবেদন করে বসলেন ফরাসি রাজকুমারী ও তার তিন সহচরীকে। রাজকুমারী বললেন, নিজের শপথ ভেঙে রাজা যে অন্যায় করেছেন সে জন্য তিনি তার প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছেন। তিনি ফার্দিনান্ডকে বললেন বনে গিয়ে একটানা বারো মাস কঠোর তপস্যা করতে। বারো মাস তপস্বী জীবন যাপন করার পরও যদি তার প্রেমের অনুভূতি বজায় থাকে, তাহলে তিনি যেন ফিরে এসে তাকে নতুনভাবে প্রেম নিবেদন করেন। রাজকুমারী কথা দিলেন তখন তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে গ্ৰহণ করবেন। রাজকুমারী আরও বললেন ইতিমধ্যে তার বাবা মারা গিয়েছেন। এই বারোমাস তিনি এক নির্জন ঘরে নিজেকে আটকিয়ে রেখে পিতৃশোক পালন করবেন।

রাজা ফার্দিনান্ড বললেন, রাজকুমারীর নির্দেশ পালন করতে তাঁর অবশ্যই কষ্ট হবে, তবুও তিনি যে তার প্রেমের আহ্বানে সাড়া দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সে কথা মনে রেখে এ কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারবেন।

তিন লর্ডের প্রেমের আহ্বানে রাজকুমারীর তিন সহচরীও অনুরূপ শর্ত আরোপ করলেন। রোজালিন লর্ড বিরাউনকে বললেন তিনি যদি একবছর আর্তের সেবায় কাটিয়ে দিতে পারেন তাহলে তিনি লর্ড বিরাউনকে গ্ৰহণ করতে রাজি আছেন।

ক্যাথরিন লর্ড ডুমেনকে বললেন তিনি যদি বারোমাসের মধ্যে সুন্দর স্বাস্থ্য, সততা আর একমুখ দাড়ি—এই তিনটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে পারেন তাহলে তিনি তাকে গ্রহণ করতে রাজি আছেন।

মারিয়া অবশ্য অন্যদের মতো লর্ড লঙ্গাভিলের উপর কোনও শর্ত আরোপ না করে বললেন, রাজকুমারীর সহচরী হিসেবে তাকেও একবছর কালো পোশাক পরে থাকতে হবে। একবছর পর তিনি কালো পোশাক ত্যাগ করে লর্ড লঙ্গাভিলকে গ্রহণ করবেন।

রাজকুমারী তার সহচরীদের সাথে বিদায় নেবার সময় লর্ড বিরাউন তাদের বললেন, এক বছর সময় খুব কম না হলে পরে সেটা মিলনাত্মক হবে এই আশায়, তঁরা হাসিমুখেই কাটিয়ে দেবেন। সে সময়টা।

রাজকুমারী ও তার তিন সহচরী এবং রাজা ফার্দিনান্ড ও তার তিন লর্ড – সবাই পরস্পরের কাছ থেকে হাসিমুখে বিদায় নিলেন।

সকল অধ্যায়

১. অ্যাজ ইউ লাইক ইট
২. মাচ অ্যাডু অ্যাবাউট নাথিং
৩. দ্য উইন্টার’স টেল
৪. আ মিডসামার নাইট’স ড্রিম
৫. দ্য টেমপেস্ট
৬. লাভস লেবার লস্ট
৭. পেরিক্লিস, দ্য প্ৰিন্স অব টায়ার
৮. দ্য টু জেন্টেলমেন অব ভেরোনা
৯. দ্য কমেডি অব এররস
১০. মার্চেন্ট অব ভেনিস
১১. অলস ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল
১২. দ্য মেরি ওয়াইভস অব উইন্ডসর
১৩. মেজার ফর মেজার
১৪. সিমবেলিন
১৫. দ্য টেমিং অফ দ্য শ্রু
১৬. টুয়েলফথ নাইট
১৭. রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট – ০১
১৮. রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট – ০২
১৯. রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট – ০৩
২০. রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট – ০৪
২১. রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট – ০৫ (শেষ)
২২. টাইটাস অ্যাড্রোনিকাস
২৩. হ্যামলেট, প্রিন্স অব ডেনমার্ক
২৪. ট্রয়লাস অ্যান্ড ক্রেসিডা
২৫. কিং লিয়ার
২৬. ম্যাকবেথ
২৭. জুলিয়াস সিজার
২৮. সনেট

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন