কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.৪

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

বীরেশ্বর রায় গিয়েছিলেন, সুলতা, বন্ধুর বিয়েতে বরযাত্রী। কলকাতা জীবনের বন্ধু। সম্পর্কে ভাই। সোমেশ্বরের মামাতো ভাইয়ের ছেলে। কুড়ারাম ভটচাজ বিয়ে করেছিলেন কালীঘাটে এক গরীব ব্রাহ্মণের মেয়েকে—তা বলেছি। বিনিময়ে তিনি তাঁর শ্যালকের ভাগ্যের পথ খুলে দিয়েছিলেন। তাকে নিজের অধীনে কোম্পানীর সেরেস্তায় ঢুকিয়েছিলেন। তিনিও নিজের ভাগ্য গড়ে নিয়েছিলেন যথাসাধ্য। রায় বংশের তুলনায় তা তেমন কিছু না হলেও যথেষ্টই করেছিলেন। কালীঘাট তখন গ্রাম। কালীঘাট ছেড়ে তিনি কলকাতার ভিতরে উত্তরাঞ্চলে বড় বাড়ী করেছেন। ছেলে ইংরিজী লেখা-পড়া শিখেছে। নাম হয়েছে। তারই বিয়ে,—বিয়ে চব্বিশ পরগনার দক্ষিণ অঞ্চলে জয়নগর মজিলপুরের কাছে। কন্যাপক্ষ গ্রামের জমিদার এবং মানী লোক। এ বিয়েতে বীরেশ্বর গিয়েছিলেন। সোমেশ্বরের মামাতো ভাইয়ের ছেলে বীরেশ্বরেরই সমবয়সী এবং সম্পর্কে খুড়তুতো ভাই।

বিয়ের আসরে বাঈজী নাচ হয়েছিল—সেই আসরে তিনি বসেছিলেন, মগ্ন হয়ে গিয়েছিলেন। নাকি খুব ভাল গাইছিল বাঈজী। বাঈজীর একটি মেয়ে ছিল, সেও তার সঙ্গে সুর দিচ্ছিল। গাইছিল ভৈরবী।

ঠিক ঠিক জায়গায় বাহা-বাহা এবং মোহর বকশিশ করেছিলেন। এমন সময় একটি কিশোরী মেয়ে এসে দাঁড়াল। আশ্চর্য সপ্রতিভ এবং আশ্চর্য রূপ। গৌরাঙ্গী নয়, শ্যামাঙ্গী কিন্তু অপরূপ তার লাবণ্য। তখন মেয়েরা—সে দশ বছর বয়স থেকে—চিকের ভেতরে বসে। পথে হাঁটে মুখ নিচু করে। ক্ষণে-ক্ষণে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে ষাট বছরের বৃদ্ধ থেকে বারো বছরের বালককে দেখে; সেই আমলে সেই তের-চৌদ্দ বছরের কিশোরী এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল, নমস্কার! আপনাকে বাসরে বর ডাকছে।

মুখের দিকে তাকিয়ে বীরেশ্বর বলেছিলেন, আমাকে?

—হ্যাঁ! আপনি তো বরের ভাই! রায়বাবু!

—হ্যাঁ। কিন্তু—

—কিন্তু কিছু নেই, বর বাসরে বিপদে পড়েছেন।

—বিপদে পড়েছেন?

—হ্যাঁ। গান গাইতে গিয়ে মান গিয়েছে। মান বাঁচাতে আপনাকে ডাকছেন।

বীরেশ্বর কৌতুক অনুভব করেছিলেন। বরের হয়ে বাসরে তাঁকে গান গাইতে হবে? হিন্দু প্রথা সামাজিক আচার বহু কিছুকেই তিনি বরদাস্ত করতে পারতেন না। কিন্তু বিয়ের বাসরে একটা রোমান্স আছে এটা তিনি মানতেন।

কণ্ঠস্বর যেমনই হোক, নবযুবক বীরেশ্বরের গায়ক-খ্যাতির জন্য লোলুপতা ছিল। থিয়েটারের দলে সিরিয়াস অ্যাক্টরের সিরিও কমিক কি কমিক পার্টে খ্যাতির জন্য এবং কমিক অ্যাক্টরের সিরিয়াস পার্টে নামের জন্য যেমন লোলুপতা থাকে—এও তাই আর কি। তবে গানে জ্ঞান এবং দখল তাঁর ছিল। শিক্ষার ক্ষেত্রে বীরেশ্বরের ফাঁকি ছিল না। তিনি শিকারীও ছিলেন, তিনি লিখেছেন—

“I have never missed my bullet shot at a target nor have I ever erred in ‘tal’ in any recital of any Raga . “

যে ঘটনাটা ঘটল তারই ওপর লিখেছেন ওটা।

বাসরে যেতেই বর বললে—ভাই বীরা, তুমি মান রাখ ভাই। এই ইনি আমার দিদি-শাশুড়ী। গান শুনে বললেন—ওরে, হরু ধোপা বাইরে এসেছে, ওর গাধা হারিয়েছে। বলে ঘরে ঢুকেছে। বল, এ তার গাধা নয়! তারপর এমন গান শোনালেন এঁরা যে, বাজাতে গিয়েও হেরে গেলাম।

হেসে বীরেশ্বর বললেন—আগে ওঁদের অনুমতি হোক!

ঠাকুমা বললেন-তোমার অনুমতি হোক ভাই রায়হুজুর, তুমি বসবে আমাদের ঘরে, এতে আমাদের অনুমতি লাগে! তুমি এসেছ শুনে অবধি আমাদের উকিঝুঁকির সীমা নেই। সবাই দেখেছি। আর বলব কি, যাকে বলে মজে যাওয়া তাই গেছি। এই বয়সে আপসোস হচ্ছে, কেন সেকালে জন্মেছিলাম।

বীরেশ্বর ঘরে ঢুকে বরের আসনের পাশে বসেছিলেন। বাজনার সরঞ্জামের অভাব ছিল না। তবলা পাখোয়াজ থেকে তানপুরা সব।

বীরেশ্বর পাখোয়াজ টেনে নিয়ে ঘা দিয়ে দেখেছিলেন সুন্দর করে বাঁধা আছে। ময়দার লেপনেও হাত দিতে হয়নি। বলেছিলেন—নিন ঠাকুমা, আরম্ভ করুন।

—আগেই আমরা?

—আমি তো বাজাচ্ছি।

—বেশ।—নে লা, ভাই ভবানী, নে। রায়হুজুরের বাজনার সঙ্গে আর কে গাইবে? তুই নে!

এই সেই মেয়ে যে তাঁকে আসরে ডাকতে গিয়েছিল। সে বললে—না, উনি গাইবেন আমরা শুনব। দায় তো বরের ঠাকুমা, কনের তো নয়। বর গাইতে পারে তো ওঁকে আমরা ছেড়ে দেব নইলে বেঁধে রাখব। তা ওঁর বদলে উনি এসেছেন, ছাড়িয়ে নিয়ে যান।

বর বললে—না না। আপনি গান। সত্যি বলতে আপনার গান শোনবার জন্যেই বীরাকে ডেকেছি। নইলে রাখুন না আমাকে বেঁধে। ছাড়ানটা চাচ্ছে কে? তা ছাড়ান কি এ বাঁধনের পর মেলে কারুর?

ঠাকুমা বলেছিলেন, তোমরা বড় চতুর জন্তু নাতজামাই। বাঁধন ছিঁড়ে পালাও। আবার রাতচরা গরুর মত রাত্রে চরে এসে ভালমানুষ সেজে দাঁড়িয়ে থাক গোয়ালের সামনে।

মেয়েরা খিল খিল করে হেসে উঠেছিল। বীরেশ্বরের মনে খট করে লেগেছিল কথাটা। তিনি গলাটা ঝেড়ে পরিষ্কার করে নিয়ে বলেছিলেন, বেশ আমিই গাইছি। কে বাজাবে? বরকে বলেছিলেন, তুই ধর, ঠেকা দিয়ে যাবি!

—না না। ওই উনিই ধরবেন।

—কে?

সেই মেয়েটিকেই দেখিয়ে দিয়েছিল নারায়ণচন্দ্র।

বীরেশ্বর পাখোয়াজটা পাশে রেখে তবলা বাঁয়া এগিয়ে দিয়ে বলেছিলেন নিন। এবং তানপুরাটা নিয়ে সুর দেখে ধরেছিলেন সাধারণ গান।

“কালার লেগেছে রূপ নয়নে।
কালার—।
লেগেছে রূপ নয়নে-এ-এ-এ, লেগেছে!
কালার!”

তবলার কোমল হাতে হলেও চটাং শব্দে ঠিক ধরবার সময় চাটির শব্দ তুলে ক্ষিপ্রগতিতে মেয়েটির আঙুলগুলি যেন নেচে উঠল—নাচের জলদ তালে চলা হালকা প্রণয়ের মত। তবলা বোল বলে মুখর হয়ে উঠল, একেবারেই পরান দিয়ে বাজনা ধরেছে। বিস্ময়ের সীমা রইল না তাঁর। এ মেয়ে কে?

হঠাৎ মেয়েটি তালে চাঁটি দিয়ে বললে—হুঁ!

অর্থাৎ তাঁকে ধরিয়ে দিচ্ছে, যাচ্ছে যাচ্ছে ধর। হেসে সামলে নিলেন বীরেশ্বর। তারপরই বুঝতে পারলেন বাজিয়ে আড়ি মারছে। ঠোঁটের উপর ঠোঁট চেপে ধরে মুখ রাঙা করে যেন রোষ ভরে বাজিয়ে চলেছে। আবারও হেসে তিনিও ধরলেন বাঁকা পথ। খেলতে লাগলেন। জলদ থেকে জলদত্তর করলেন গতিকে।

কালার লেগেছে রূপ নয়নে। কালা-র
লেগেছে রূপ নয়নে রূপ নয়নে রূপ নয়নে
কালা-র লে-গেছে রূপ নয়নে-এ
কা-লা-র। লেগেছে।

ঘরখানা সংগীতের শব্দতরঙ্গে ভরে উঠেছে। কথা গৌণ হয়ে গেছে। খেলছে কণ্ঠে সুর তার তবলার বোল। ঝর ঝর ঝর ঝর শব্দে জলপ্রপাত করছে অথবা ঝামো ঝামো শব্দে একখানা বাসন মেঝেতে পড়ে গড়িয়েই চলেছে দ্রুত থেকে দ্রুততর গতিতে। শ্রোতাদের নিঃশ্বাস ফেলবার অবকাশ নেই। শব্দের মধ্যেও তারা একটা লড়াই চলছে বুঝতে পারছে। অকস্মাৎ বীরেশ্বর অনুভব করলেন তিনি একটি অক্ষর উচ্চারণের মত সময় কখন হারিয়ে ফেলেছেন, এবারই তবলায় গানে সমাপ্তির ছেদ পড়বে, ও মারবে তবলা চাঁটিঝাঁ—কিন্তু তাঁর তখনও একটি অক্ষর বাকী থেকে যাবে। কা-লা-র কা লা পর্যন্ত বলা হবে, র অক্ষরটি অনুচ্চারিত রাখতে হবে, তিনি হেরে যাবেন। মুহূর্তে তিনি সামলে নিলেন, কা লা দুটি অক্ষরকে জুড়ে ক্লা ক’রে নিলেন এবং গাইলেন কালার লেগেছে রূপ নয়-নে ক্লার! মেয়েটি ফিক করে হেসে তবলায় সমাপ্তির ধাঁ মেরে বললে, আপনার সঙ্গে আমি পারি। বাবা, এ দৌড়ে কলকেতা পৌঁছুনো যেতো।

বীরেশ্বর আশঙ্কা করেছিলেন, সে উচ্চহাস্যে ব্যঙ্গ করে এই অতিসুক্ষ্ম ভুলটুকু, যা এদের কারও কাছে ধরা পড়েনি, তাকে ধরিয়ে দিয়ে তাঁকে অপদস্থ করবে। কিন্তু তারও উপর বেশী হয়েছিল বিস্ময়। এ মেয়ে কে? তিনি জানেন, তিনি দেখেছেন, সঙ্গীতে জন্মগত প্রতিভা নিয়ে অনেকে জন্মায়। অত্যন্ত প্রত্যক্ষ। এ যে তাই তাতে তাঁর সন্দেহ রইল না। কিন্তু এ মেয়ে কে?

গোটা ঘরখানা স্তব্ধ হয়ে ছিল। শ্রোতাদের বিস্ময় এবং অভিভূত ভাবটা এখনও কাটে নি! কয়েক মুহূর্ত পর ঠাকুমা জিজ্ঞেস করলেন, একটা হার-জিত যেন হল! তা জিতল কে রে ভবানী?

—উনি ঠাকুমা। চমৎকার হেসে মেয়েটি বললে।

ঠাকুমা বললেন—তাতে লজ্জা নেই। বীরু রায় কত বড় বড় ওস্তাদ রেখে গান শিখেছে। তোর বিদ্যে তো ভগবৎদত্ত। তোর বাবার ঔরুসের’ ফল। তবে তোর ঐ বাবা তোকে সাধতে দেয় এই যা, নইলে এতদিন ভাতের হাঁড়ির কালি আর উনোনের ছাই চাপা পড়ত। তা এইবারে তুই একটা গান শুনিয়ে দে। দেখবি গানে রায়বাবু তোকে ঠকাতে পারবে না।

সঙ্গে সঙ্গে ধীরেশ্বর পাখোয়াজ কোলে তুললেন। মেয়েটি বললে—থাক।

বীরেশ্বর বললেন —সে কি? না-না, তা হবে না। তা হলে বুঝব আমাকে যোগ্যই মনে করছ না তুমি!

ঠাক্‌মা বলে উঠলেন—তা বটে ভাই। যোগ্য বর মিলল না বলে মেয়ের বিয়েই দিলে না বাপ। কুল মেলে তো পার মেলে না। পাত্র মেলে তো কুলে মেলে না।

—কি বলছ ঠাকুমা। তা হলে আমি উঠে যাচ্ছি।

—না। হাত জোড় করে বীরেশ্বর বললেন—ঠামার দোষে আমায় অপমান করে চলে যাওয়াটা ঠিক হচ্ছে? বসুন। গান আমাকে শোনাতেই হবে।

ভবানী বসেছিলেন। এবং তানপুরাটা তুলে নিয়ে কানে একটু মোচড় দিয়ে সুরটা ঠিক করে নিয়ে চোখ বুজে মৃদু স্বরে সুর মিলিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর থেমে গেলেন। বরকে বললেন—আপনি তানপুরাটা ধরুন না।

নিজে পদ্মাসন হয়ে বসে হাতজোড় করে চোখ বুজে সুর তুললেন। শুরু হল মৃদুকণ্ঠে সুর বিস্তার। আ-আ-আ ধ্বনির সূত্রে গাঁথা একখানি সুরের মালা বুনছেন যেন।

বীরেশ্বর তাঁর বিবরণে তাই লিখেছেন।

তারপর সুর উচ্চ থেকে উচ্চতর হল—সঙ্গে সঙ্গে বাণী প্রকাশ পেলে তার মধ্যে।—আ—গৌরী—।

মাথাটি এপাশ থেকে ওপাশে নাড়ছিল যেন চোখ বুজে গৌরীকে সে দেখছে।

—আ-গৌরী লউটি যায়ে
নয়নে লোর, কাঁপে অধর।—অ
গৌরী লউটি যায়ে।

বীরেশ্বর রায় লিখেছেন, Madam cupid has been burnt to ashes and God Siva has vanished.

তাঁর দিকে না তাকিয়ে চলে গেছেন; গৌরী অপমানিতা বোধ করে কাঁদতে কাঁদতে ফিরছেন। বীরেশ্বর লিখছেন, very carefully, অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বাজনা শুরু করলাম। আমি। শুধু ঠেকা দিয়ে। বিলম্বিত লয়ের সঙ্গে মিলিয়ে। ওর সঙ্গে আড়ি দিতে ইচ্ছে হল না আমার। তার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম অবাক হয়ে। মনে হচ্ছিল ধ্যানস্থ হয়ে গাইছে।

এলায়ে কেশ যোগিনী বেশ
মাখলি অঙ্গে ভস্ম শে-ষ
হোথা মহেশ, জাগে চমকি,
হিয়া কাতর রে—

পাখোয়াজ জলদে বেজে উঠল। কণ্ঠস্বরে সুরও দ্রুত হল। মাথা দ্রুত নড়ছে মেয়েটিশ। তারপর আবার বিচিত্র কৌশলে দ্রুত লয় থেকে ফিরে এল সে শান্ত মন্থর লয়ে—

নারদ চলে গিরিবর-ঘর
মনোহর বর যোগী-শ্বর
আওয়ে আওয়ে তব ঘরপর
যাচি গৌরী কর-রে।
জাগে বসন্ত উঠয়ে গৌরী
তনু কাঁপে থর-থ-র রে।।

অত্যন্ত শান্তভাবে গাইলে ভবানী। কলা-কৌশলের বাহুল্য এতটুকু বিস্তার করেনি। বীরেশ্বর একবার জলদে তাকে টেনেছিলেন। সে তাল রেখে এগিয়ে গিয়েও এমনভাবে শান্তগতিতে ফিরল এবং তাঁকে ফেরাল যে, তিনি মনে মনে তারিফ না করে পারলেন না। গান যখন শেষ হল, তখন গোটা বাসরটি যেন হরগৌরীর বাসরের আশীর্বাদের আভাসে ভরে উঠেছে। মেয়েটি তখনও বসে আছে। তারপর একসময় চোখ মেলে তাকিয়ে চারিদিকটাকে দেখে নিয়ে, একটু হেসে নমস্কার করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

বীরেশ্বর শুধু বললেন-এ ভগবানের আশীর্বাদ।

সুরেশ্বর বললে, বীরেশ্বর লিখেছেন, I could find no other expression than this- ভগবানের আশীর্বাদ। Is there any other expression? No.

তিনি ওইখানেই খুড়তুতো ভাইয়ের শ্বশুরকে বললেন, এই মেয়েটিকে আমি বিয়ে করতে চাই। আপনি সম্বন্ধ করে দিন।

তিনি বিব্রত হয়ে বললেন, বাবা, তুমি রাজপুত্র। মেয়েটি—

—মেয়েটি কি?

—ও এখানকার একজন ভদ্রলোকের পালিতা কন্যা। মহেন্দ্রচন্দ্র যৌবনে চাকরীর সন্ধানে বেরিয়ে মিশনারীদের চাকরী নেন, তাদের সঙ্গে আসামে গৌহাটিতে গিয়েছিলেন। সেখানে কে এর সাধক-দম্পতির সঙ্গে পরিচয় হয়ে ভক্ত হয়ে পড়েন। এ-কন্যা তাঁর। সাধু পাগল হয়ে যান। সাধুর স্ত্রী ওঁদের আশ্রয়ে থাকেন। তারপর তিনিও মারা যান। কন্যাটিকে মহেশকে দিয়ে যান। বলে যান, যেখানে-সেখানে, যার-তার হাতে যেন এ-কন্যার বিয়ে না দেন। কুলীনদের ঘরে তো কন্যা কুমারী থাকে! তা যার-তার হাতে দেবার মেয়ে ও নয়। চরিত্রও একটু অদ্ভুত। কখনও যেন কেমন কেমন, আবার বেশ সহজ। হাসিখুশি। গান-বাজনায় জন্ম থেকে সিদ্ধ বলতে গেলে। মহেশচন্দ্র নিজে শিক্ষিত মানুষ। লেখাপড়াও শিখিয়েছেন। কিছু কিছু ইংরিজী জানে। অসম সাহস। আনন্দময়ী। আনন্দেই থাকে।

—মেয়েটির পালকপিতাকে বলুন একবার। আমাকে যোগ্য পাত্র মনে করেন কিনা দেখুন! মেয়ের পালক পিতা বলেছিলেন, অযোগ্য তোমাকে কি করে বলব? তবে? একটু ভেবে বলেছিলেন, কয়েকটা কথা জিজ্ঞাসা করব?

—করুন।

—তুমি মদ্যপান কর?

–করি।

—তাহলে?

—যদি ছেড়ে দি।

–দেবে?

—দেব।

অনেকক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেছিলেন, দাঁড়াও বাবা, ওকে একবার জিজ্ঞাসা করে আসি। ওর অমতের জন্যই কয়েক জায়গায় আমার পছন্দ হলেও সম্বন্ধ ভেঙে দিয়েছি। ওকে জিজ্ঞাসা করে আসি।

বীরেশ্বর লিখেছেন, I began to pace up and down. I was mad for her. At last her father came back with a smiling face, and I know that she has given her consent-she has liked me. A great joy-a victory. Yes, a victory it was.

মহেশবাবু বলেছিলেন, কন্যা এখন আমার, আমিই সম্প্রদান করব। মেয়েটির পিতা ছিলেন সাধক। পাগল হয়ে কামাখ্যা পাহাড়ে পড়ে মারা গেছেন। তাঁর নাম ভবানীও জানে না। বলতে মানা আছে। তুমিও জিজ্ঞাসা করো না।

–বেশ। তাও করব না। কিন্তু আমার বাবাকে বলবেন, কন্যা আপনার।

—হ্যাঁ, তা বলব আমি।

—আমি বিবাহ করে বাড়ী ফিরব। দিন দেখুন।-দিন মিলেছিল একদিন পরেই। সেই দিনই বিবাহ করে তিনি বাড়ী ফিরেছিলেন।

সুলতা, এরপর দেখ, ছবির মধ্যে আবার একটা মস্ত ফাঁক।

রায়বংশের জীবনে সেদিন এমন একটি জট পাকাল যে, তার মধ্যে বাঁধা পড়ে গোটা রায়বাড়ীর সারা অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠল। এবং ধারাবাহিকতা পর্যন্ত ওই জটের মধ্যে জড়িয়ে হারিয়ে গেছে।

অথচ ১৮২৪ সাল থেকে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত রায়বাড়ীতে বহু কাণ্ড ঘটে গেছে। যা বিস্ময়কর অথচ তার কোন কারণ খুঁজে পাইনি।

সব থেকে বিস্ময়কর বিমলাকান্ত রায়বাড়ী থেকে চলে গেলেন। বারো বছর বয়সে জামাই হয়ে এ-বাড়ীতে এসেছিলেন। সোমেশ্বর রায়ের প্রতিশ্রুতিমত সম্পত্তির অর্ধেকের মালিক তিনি। বীরেশ্বর রায় বিমলাকান্তের উপর ছেলেবেলা থেকেই বিদ্বিষ্ট ছিলেন। একেবারে দেখতে পারতেন না। বিমলাকান্ত শান্ত, শ্রীমান পুরুষ, মিষ্টভাষী, গান-বাজনা বুঝতেন কিন্তু ও থেকে দুরে সরে থাকতেন। স্ত্রী বিমলাও উগ্র প্রকৃতির ছিলেন, স্বামীর উপর কথায় কথায় রেগে উঠতেন, কলহ—করতেন, বিমলাকান্ত হেসে সহ্য করে যেতেন। বিমলাকে তার মায়ের ব্যাধি মৃতবৎসা রোগে ধরল, সন্তানের পর সন্তান মারা গেল। শোকে মাথা খারাপ হল তাঁর। পাগলামিতে যা সামনে পেতেন, তাই ছুঁড়ে আঘাত করতেন সামনের মানুষকে। বিমলাকান্ত আঘাত সহ্য করে সামলাতেন। তিনি বলতে গেলে অহরহ আগলে থাকতেন তাঁকে। এক ভাই বীরেশ্বরের সঙ্গে ছিল প্রীতি। কিন্তু বীরেশ্বর এবং বিমলাকান্তকে এক স্থানে রাখেননি সোমেশ্বর। বিমলাকান্ত কলকাতায় থাকতেন। কিন্তু বীরেশ্বর থাকতেন কীর্তিহাটে। জন রবিনসন নীল কুঠীয়ালের পুত্রের সঙ্গে দুর্ধর্ষপনা করে বেড়াতেন। পাদরী হিল সাহেবের কাছে পড়তেন।

হঠাৎ বীরেশ্বরের জীবনে পরিবর্তন ঘটল। তিনি বিবাহ করলেন ভবানীকে। এবং বললেন, তিনি থাকবেন কলকাতায়।

বিমলাকান্তকে সোমেশ্বর লিখলেন, কীর্তিহাটে এস।

তখন সোমেশ্বরের শরীর ভেঙেছে। তিনি যেসব সম্পত্তি কুড়ারাম রায় ভট্টাচার্যের পর কিনেছিলেন এবং রায়দের সেই জমিদারীই বেশী, তা সব দেবোত্তর করে ট্রাস্টি নিযুক্ত করলেন ছেলে এবং জামাইকে। অ্যাডভাইসার রাখলেন রামব্রহ্মা স্মৃতিতীর্থকে এবং গিরীন্দ্র আচার্যকে।

বীরেশ্বর বিবাহ করে কলকাতায় তখন জীবনে ফিরবার চেষ্টা করছেন। প্রতিশ্রুতিমত মদ ছেড়েছেন। বধু ভবানীকে নিয়ে আনন্দে থাকেন জানবাজারের বাড়িতে। বাড়ীটা তখন ছোট ছিল। কিন্তু বেশীদিন থাকা তাঁর হল না। বাপের অসুখের জন্য ফিরে আসতে হল কীর্তিহাটে। কীর্তিহাটে এসে স্বতন্ত্র বাসের জন্য বিবিমহল তৈরী করালেন। ওই বাড়ীতে থাকবেন। তাঁর বাপের দেবোত্তরের দলিলের তিনি বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন—সম্পত্তির অংশ ভাগ্নেকে, ভগ্নীপতিকে দিতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু দেবোত্তর রায়বংশের, দেবোত্তরে ভগ্নীপতি ট্রাস্টি কেন হবে? কিন্তু সোমেশ্বর তা শোনেননি।

তাঁর ওই স্মরণের খাতায় এসব লেখা আছে, তার সঙ্গে আছে কয়েকটা বিনিদ্র আনন্দরজনীর কথা। অকপটে সব তিনি লিখে গেছেন।

তারপর মারা গেলেন সোমেশ্বর। বীরেশ্বর স্ত্রীর অনুরোধেই কোন বিরোধ করলেন না দলিল নিয়ে; কীর্তিহাটে বিমলাকান্তের কর্তৃত্বে হস্তক্ষেপ পর্যন্ত করলেন না। সেই বৎসর ১৮৪৫ সালে জন্ম হল কমলাকান্তের। শুধু কমলাকান্তেরই জন্ম নয়, বীরেশ্বর রায়ের নিজেরও সন্তান হল। প্রায় একসঙ্গে।

একসঙ্গে ভবানী এবং বিমলার সন্তান হল। দুদিন আগে-পরে। তার ফল হল বিচিত্র। মৃতবৎসা রোগ এবারে বিমলার ভাল হল, ভবানীকে ধরল। গ্রামের লোকে বললে, খুঁজে দেখুন রায়বাবুরা, কোন শাপশাপান্ত কোথাও আছে।

বীরেশ্বর বললেন, থাক শাপ। চেঁচাতে বারণ করছি, চেঁচালে চাবুক মারব।

এরই বৎসর খানেকের মধ্যে বিমলা আত্মহত্যা করলেন। তাঁর বাতিক হয়েছিল—মরে গেল, তার ছেলে মরে গেল। কমলাকান্ত দু’বছরের ছেলে, নীচে বাগানে খেলা করছিল। বিমলা বারান্দায় এসে চীৎকার করে উঠল, ঝোপে সাপ আছে। কমলাকান্ত সেই দিকেই ছুটছিল। বিমলা বারান্দা থেকে লাফিয়ে নীচে পড়ল ছেলেকে ধরতে। এবং মারা গেল তৎক্ষণাৎ। ভবানীই মানুষ করতে লাগলেন কমলাকান্তকে। বীরেশ্বর তাকে তখন থেকেই রত্নেশ্বর বলে ডাকতেন।

তারপর তার দু বছর পর হঠাৎ একটা কিছু ঘটল। বীরেশ্বর আবার মদ ধরলেন। এবং আক্রোশ হল বিমলাকান্তের উপর আর ওই দুগ্ধপোষ্য চার বছরের কমলাকান্তর উপর। স্ত্রীর উপর বিমুখ হলেন। জন রবিনসন অর্থাৎ জুনিয়র রবিনসন তখন নীলকুঠীর মালিক হয়েছে। তার ওখানে গিয়ে সময় কাটাতে লাগলেন। মদ্যপান, শিকার-এই দুই নেশাতে প্রমত্ত হয়ে উঠলেন। তারপর বিরোধ বাধতে লাগল বিমলাকান্তের সঙ্গে। ধীরে ধীরে বিরোধটা যেন একটা গুহাবাসী হিংস্র জন্তুর মত বাইরে আসতে লাগল। দুটো জ্বলন্ত চোখ ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছিল। বীরেশ্বর নিজেই লিখেছেন, আমার ক্রোধ, সে ঘুমভাঙা জন্তুর মত গুহা থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছে আমি বুঝতে পারছি। I am helpless.

ফলে বিমলাকান্ত ছেলে কমলাকান্তকে নিয়ে একদিন একটা পর্ব-উপলক্ষ্যে শ্যামনগর যাচ্ছি বলে গিয়ে আর ফিরলেন না। ওখান থেকে চলে গেলেন কলকাতায়। নিজে ভাগ্য গড়বেন বলে। বীরেশ্বরকে চিঠি লিখলেন, “তোমার পৈতৃক সম্পত্তি তুমি নির্বিবাদে ভোগ কর। আমি সন্তুষ্টচিত্তে অকপট আশীর্বাদ করিয়া বিদায় লইলাম। আর কীর্তিহাট ফিরিব না। তুমি চাহিলে যাহা শ্বশুরমহাশয় আমাকে দিয়াছিলেন, তাহা দলিল করিয়া ফিরাইয়া দিব।”

তার পর একবছর পর যা ঘটল তা আরও মর্মান্তিক

বীরেশ্বর তখন কীর্তিহাটে—এই বিবিমহলে বাস করছেন। একদিন সকালে কাঁসাইয়ের উপর যে বিবিমহলের ঘাট, সেই ঘাটে ভবানীর একটি গহনার পুঁটুলি পাওয়া গেল; সে গহনাগুলি তাঁর গায়ে থাকত, কিন্তু ভবানীকে পাওয়া গেল না।

একটা দহ ওখানে ছিল। কিন্তু তখন ভরা কংসাবতী। আশ্বিনের মাঝামাঝি দুকুল ভরে বইছে নদী। তবু পাঁচখানা গ্রামের জেলে এল। জাল টানলে সেই দহে। কিন্তু কোন চিহ্ন পাওয়া গেল না।

এই দেখ একখানা বড় ছবি। এটাকে এঁকেছি আবছায়ার মধ্যে। এটা গাঢ় কালি দিয়ে, কালের যবনিকা টানিনি। দেখ, আলোর জোর পড়লেই দেখতে পাবে, আভাসে একটি নারীদেহ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছ? তারপর অবশ্য এদিকটা গাঢ় কালো। যবনিকা পড়ে গেছে। ঢেকে রেখেছে সবকিছু। তারই মধ্যে গাঢ়তর কালো রঙে আঁকা একটি পুরুষকে পাবে। দেখ। ওই বীরেশ্বর রায়। উন্মাদ। কালপুরুষের মত অট্ট হাসছেন। ওঁর সেই খাতাতে বড় বড় করে লেখা আছে—

Am I going mad? Yes—It is madness!—Let it come.

প্রথম খণ্ড সমাপ্ত

সকল অধ্যায়

১. কীর্তিহাটের কড়চা – কথারম্ভ
২. কীর্তিহাটের কড়চা – পরিচয়
৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১
৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.২
৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৩
৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৪
৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৫
৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৬
৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৭
১০. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৮
১১. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৯
১২. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১০
১৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১১
১৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১২
১৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.১
১৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.২
১৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৩
১৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৪
১৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৫
২০. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৬
২১. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৭ (?)
২২. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৮
২৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.১
২৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.২
২৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.৩
২৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.৪
২৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১
২৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.২
২৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৩
৩০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৪
৩১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৫
৩২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৬
৩৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৭
৩৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৮
৩৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৯
৩৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১০
৩৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১১
৩৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১২
৩৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১৩
৪০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১৪
৪১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১৫
৪২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১
৪৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ২
৪৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৩
৪৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৪
৪৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৫
৪৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৬
৪৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৭
৪৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৮
৫০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৯
৫১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১০
৫২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১১
৫৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১২
৫৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৩
৫৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৪
৫৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৫
৫৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৬
৫৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৭
৫৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৮
৬০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৯
৬১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ২০
৬২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১
৬৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ২
৬৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৩
৬৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৪
৬৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৫
৬৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৬
৬৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৭
৬৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৮
৭০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৯
৭১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১০
৭২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১১
৭৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১২
৭৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৩
৭৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৪
৭৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৫
৭৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৬
৭৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৭
৭৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৮
৮০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৯
৮১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ২০
৮২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ২১. পরিশিষ্ট

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন