কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৩

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

সুরেশ্বর বললে—সুলতা, এ বাড়ীটা তখন আকারে ছোট ছিল। এই যে-দিকটায় এই বারান্দা এবং তার কোণের ঘরগুলো, যেখানে আমরা বসে রয়েছি এগুলো তখনও হয় নি। পূবদিকের আর উত্তর দিকের এল শেপের বাড়ী ছিল, এ দিকটা ছিল একতলা। বীরেশ্বর রায় শুতেন পূব দিকে উইংএর শেষ ঘরখানায়। অর্থাৎ তিনদিক খোলা পেতেন। পশ্চিম-পূর্ব-দক্ষিণ। উত্তর দিকের বড় হলটা ছিল তাঁর মজলিসের ঘর। ওই শোবার ঘরে এখনও তাঁর মেহগনি কাঠের খাটখানা আছে। ওখানাতেই বাবা শুতেন। মা কখনও ওঘরে শোন নি ওই খাটটার জন্যে। বাবাও খাটখানা পাল্টাতে দেন নি।

যাকগে সে সব কথা।

ওই ঘরখানারই দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটা জানালা খুলে তিনি দাঁড়িয়ে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। ওই মেঘ দেখে তিনি বিমুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর খাতায় মেঘের বর্ণনা আছে। বলেছেন—King amongst clouds-বিশবার লিখেছেন—I have never seen such a wonderful black mass of cloud like this Wonderful. This cloud is King cloud amongst the clouds—Puskar—Sumbarta and so on. ঘন কালো, দিগন্ত থেকে দিগন্ত পর্যন্ত বিস্তার করে দিয়েছে আপনাকে, ফুলছে ফাঁপছে, চলছে। চলছে বায়ুকোণ থেকে অগ্নিকোণে। গম্ভীর থমথমে রূপ, নাদির শা চেঙ্গিজ খাঁয়ের মত; গম্ভীর মন্থর গতিতে রাজকীয় মহিমায় চলছে।

হঠাৎ আবার একটা বিদ্যুৎ চমকে উঠল। দক্ষিণে তখন গ্রেভইয়ার্ড রোড, মানে এখনকার পার্ক স্ট্রীট পর্যন্ত সবই বস্তী। গ্রেভইয়ার্ড রোডের ওদিকে জঙ্গল। গোটা দক্ষিণটায় গাছের মাথা আর মেঘে মাখামাখি। বিদ্যুতের চমকটায় সবটা যেন ঝক্‌ক্ করে উঠল, তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে গেল। তিনি জানালাটা বন্ধ করে দিলেন। নিচে থেকে পাগল তখন মিয়া-কি-মল্লারের আলাপে ধরতার প্রাথমিক বিলম্বিত লয় সেরে দ্রুতলয়ের পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। বীরেশ্বর রায় আপনার সঙ্গীতজ্ঞান অনুযায়ী তীক্ষ্ণ বিচারে পাগলের আলাপের বিশ্লেষণ এবং বিচার করছিলেন, হঠাৎ তাঁর মনে হল, পাগলের গানের শক্তিতেই এ মেঘ উঠল নাকি? আজ সকাল থেকে যা ঘটেছে যা দেখেছেন এবং পূর্বে পাগল যে শক্তির পরিচয় দিয়েছে তাতে এ অঘটন সেই ঘটিয়েছে বলেই তাঁর মনে হল। সঙ্গীতে তাঁর অনুরাগ ছিল অসাধারণ, শুধু শুনতেই তিনি ভালবাসতেন না, তিনি চর্চা করেছেন। বড় বড় ওস্তাদদের কাছে নানান গল্প শুনেছেন। সঙ্গীতশাস্ত্রে সব থেকে বেশী গল্প দীপক আর মেঘমল্লার নিয়ে প্রচলিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর নাস্তিক্যবাদী বীরেশ্বর তাঁর জ্ঞানবুদ্ধি মত এ সবে অবিশ্বাস করেও শেষ পর্যন্ত কুল হারিয়ে বসলেন। তিনি আবার একবার শুনলেন আলাপ। নিখুঁত আলাপ করছে পাগল। শুধু ব্যাকরণেই নিখুঁত নয়, পাগলের রামপ্রসাদী গানে যে আশ্চর্য আকৃতিময় প্রাণধর্ম থাকে তাও এতে রয়েছে। পাগল সিদ্ধ গায়ক। বীরেশ্বর সম্ভ্রমভরে নিচে নেমে এলেন।

পাগল ঘরে ছিল না। বুঝতে পারলেন দক্ষিণ দিকে যে বাগানটা আছে সেই বাগানে বসে গাইছে। তিনি বেরিয়ে এলেন।

কুড়ারাম রায় ভট্টাচার্য যে বাড়ীটা করেছিলেন, সেটা আকারে বড় ছিল না। একটু আগেই বলেছি সুলতা যে পূর্ব এবং উত্তর দিকের উইং দুটো পুরনো। পশ্চিম এবং দক্ষিণ উইং পরে তৈরী হয়েছে। এই দক্ষিণ দিকে ছিল তখন বাগান। কলকাতার বনেদী বড়লোকদের বাড়ীতে এখনও কিছু কিছু সে-কালের বাগানের অবশেষ আছে। ছোট পুকুর, বাঁধানো ঘাট, বসবার বেদী, ঝাউএর সারি অনেক অযত্ন সত্ত্বেও ঊনবিংশ শতাব্দীর ভাঙা কুঞ্জবনের মত বেঁচে আছে। সে কুঞ্জ সে কালে রায়বাড়ীতে প্রথম পত্তন করেছিলেন সোমেশ্বর রায়, তাকে সমৃদ্ধ করতে তখন শুরু করেছেন বীরেশ্বর রায়। এই কয়েক বছর অর্থাৎ ১৮৪৯ সাল থেকে ১৮৫৫ সালের মধ্যে তখন রায়বাড়ীর ছোট বাগানটিকে সজ্জায় বেশ একটু ভারীই করে তুলেছিলেন।

.

বাঁধাঘাটের উপর চাতালটা আগাগোড়া মার্বেল দিয়ে বাঁধিয়েছিলেন। ঠিক মাঝখানে ছিল একটা আটকোণা প্রশস্ত বেদী। আর সেটিকে ঘিরে অনেকগুলি বসবার আসন।

সেই মাঝখানের বেদীর উপর বসে পাগল মেঘের দিকে তাকিয়ে বিভোর হয়ে মিয়া-কি- মল্লার ভেঁজে চলছিল। তিনি তার গানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেন নি। একটু শুনে হঠাৎ কি মনে ভেবে নিয়ে ফিরে এসেছিলেন বাড়ীর ভিতর এবং একটা তানপুরা নিয়ে সেটাকে বেঁধে তৈরী করে নিয়ে ফিরে গিয়ে পাগলের পিছনে বসে তাতে সুর তুলেছিলেন। পাগল একবার ফিরে তাকিয়েছিল। ওই একবারই। তারপরই মেঘ ডেকে উঠল। বৃষ্টি এল ছিটেফোঁটা, তারপর একবার মোটা ধারায় প্রবল বেগে। হঠাৎ থেমে গেল। বীরেশ্বর রায় ভিজছিলেন। একটা চাকর ছাতা এনে তাঁর মাথার উপর ধরেছিল। তিনি বলেছিলেন-না। লোকটা কিন্তু দাঁড়িয়েই ছিল। বৃষ্টি হঠাৎ থেমে যেতেই সে বললে—হুজুর!

কথার উত্তর দেননি বীরেশ্বর। সে বলেছিল- হুজুর শিল হবে। হুজুর।

বলতে বলতে সত্যই শিল পড়তে শুরু করেছিল, ছোট ছোট কাঁকর-পাথরের মত। পাগলের গান তখন শেষ হয়েছে। সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বীরেশ্বর উঠলেন এবং পাগলকে বললেন, ওঠো। শিল হবে।

সে বললে-হ্যাঁ।

—চল, ঘরে চল।

—না।

—না নয়। চল। মরবে।

—না, না। মারবে না। মারতে চায় না। দগ্ধাতে চায়।

—পাগলামি করো না, এসো।

তখন শিলের দানা ক্রমশঃ মোটা হতে শুরু হয়েছে। পুকুরের জলে শিল পড়ার গর্তগুলো বড় বড় হচ্ছে। জল ছিটকে উঠছে। বাঁধানো চাতালে শব্দ উঠছে। বীরেশ্বর তাকে হাতে ধরে টেনে নিয়ে ঘরে আনলেন। ঘরে এসে ঢুকেছেন মাত্র, এমন সময় মেঘাচ্ছন্নতার অন্ধকারের সঙ্গে প্রায় সন্ধ্যায় মিলিত সে গাঢ় অন্ধকারকে চিরে বিদ্যুৎ চমকে উঠল—সে চমকে চোখ ঝলসে গেল। তার সঙ্গে সঙ্গেই কড় কড় শব্দে বাজপড়ার মেঘের ডাকে বাড়ীটা পর্যন্ত যেন কেঁপে উঠল। বীরেশ্বর পর্যন্ত চমকে উঠলেন। পাগল চমকাল না। সে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল। বীরেশ্বর বললেন —দেখেছ, হয়তো মরতে আজ।

একটু বিষণ্ণ হাসলে পাগল।

বীরেশ্বর বললেন-তোমার উপরেই পড়ত।

পাগল ঘাড় নাড়লে না।

—তুমি মল্লার গাইছিলে। এমন গান তুমি শিখলে কার কাছে?

—শিখলাম? কার কাছে?

—হ্যাঁ?

অতিবিষণ্ণ করুণ-কণ্ঠে পাগল বললে-শিখলাম? গোড়াতে শিখেছিলাম বাবার কাছে। তারপর ওস্তাদের খোঁজ পেলেই ছুটতাম পিছনে, ঘুরতাম। তা আর কতটুকু? তারপরে?

—তারপরে?

—তারপরে আপনি হল। ওই যেমন করে গন্ধ হল, এটা এল, ওটা এল, গানও এল। আমি খেপে উঠলাম। গান বেঁধেছিলাম—আর তুই পালাবি কোথা, আমি হয়েছি তালগাছের মাথা।

চুপ করে গেল পাগল।

বীরেশ্বর বললেন—তুমি এমন গান জান—এতবড় গাইয়ে—আজ তুমি মল্লার গেয়ে বৃষ্টি আনলে—

—না-না-না। মেঘ দেখে আমার ভাল লাগল। আচ্ছা মেঘ, রাজামেঘ—বুঝেছ রাজামেঘ। এমন দেখা যায় না। তাই দেখে মন হল গাইলাম। বুঝেছ। আমি পারব কি করে? সে পারত তানসেন শুনেছি। এসব তো তারই কাণ্ড। তাকে যে ধরতেই পারলাম না। আছড়ে ফেলে দিলে। বুঝেছ।-আঃ-আঃ-আঃ —ছাড়, ছাড় ছাড়।

আবার পাগলামি উঠল তার—সে নিজের গলা নিজে টিপে ধরে প্রায় শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলবার চেষ্টা করতে লাগল।

বীরেশ্বর দুপুরের মতই তার হাত দুটো ধরে সজোরে টেনে ছাড়িয়ে দিলেন। পাগল মাথা ঠুকতে লাগল। বীরেশ্বর তাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলেন এবার।

—ছাড়, ছাড় আমাকে ছাড়।

বীরেশ্বর অনুভব করলেন-পাগলের দেহে যেন হাতীর বল। কিন্তু তবুও সে বৃদ্ধ, জীর্ণদেহ। কয়েক মুহূর্ত পর মনে হল, লোকটা নিথর হয়ে গেছে। তিনি বিস্ময় অনুভব করে তাকে ছেড়ে দিলেন। সে জড়বস্তুর মত গড়িয়ে পড়ে গেল। পাগল অজ্ঞান হয়ে গেছে।

তিনি বললেন—জল। জল আন।

চাকরেরা দুজন দাঁড়িয়েই ছিল কাছে। তাদের একজন ছুটল।

চোখেমুখে জল দিয়ে পাগলের চেতনা ফিরল বটে কিন্তু সে নিঝুম হয়ে পড়ে রইল। যেন সব শক্তি তার নিঃশেষিত হয়ে গেছে।

.

ওদিকে বাড়ীতে তখন সাড়া পড়ে গেছে। তেলবাতি আগেই হয়ে গেছে, তাতে আলো জ্বলছে, সুগন্ধি ধুপ পোড়ানো হচ্ছে, ফরসী-হুঁকোতে এবেলা জল ফিরিয়ে ঠিক করা হচ্ছে। সারি সারি কক্ষেতে কাঠগড়ার তামাক সেজে রাখছে ছিটমহলের চাকরেরা। সন্ধ্যে লেগে এল। কিছুক্ষণ পরই সোফিয়া বাঈ আসবে, আসর বসবে। নায়েবখানায় নায়েব আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠলেন। এখনও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষণও কম হয়নি। রাস্তাঘাটে জল জমেছে, কাদা হয়ে উঠেছে। সাহেবান লোকদের এলাকাগুলোর খোয়ার রাস্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, বাকী কলকেতার রাস্তাঘাট ধুলো আর গঙ্গাতীরে মাটি, দুপাশে জবজবে নালা। এতে কি আর ঘোড়ারগাড়ী যাবে? অথচ সোফিয়া বাঈকে আনবার ব্যবস্থা করতে হবে। কি যে মতি হল বাবুর!

মতির আর দোষ কি? এ তো এখন আমীরীর অঙ্গ। যে আমীরের বাঈ নাই, সে আবার আমীর নাকি? তাছাড়া বীরেশ্বরবাবু তো বিয়ে করে প্রথম ক’বছর এখানেই ছিলেন, সে জীবন তো তিনি দেখেছেন। সেই নবীন বয়স —আঠারো-উনিশ; আর কলকাতার এই সমাজ, এই হালচাল, এর মধ্যে গঙ্গাজলের মত পবিত্র জীবনযাপন করেছেন। স্ত্রী-অন্ত প্রাণ। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে স্ত্রীকে নিয়ে গান-বাজনা করেছেন। চাকরবাকর কারুর ত্রিসীমানাতে যাবার হুকুম ছিল না। সেই মানুষ কি হল—এই হয়ে গেলেন।

তাঁর ধারণা ওই যে এখান থেকে কীর্তিহাটে গেলেন বউ নিয়ে, বিবিমহল তৈরী করে বাস করতে লাগলেন, বাপের সঙ্গে বনল না, বাপ ঠিক ছেলেকে বিশ্বাস করলেন না; বেশী বিশ্বাস করলেন জামাইকে; তাতেই ঘটল সর্বনাশ। আর ওই কুঠীয়াল জন রবিনসন। ওই সাদা-চামড়া ইংরেজ—সাতসমুদ্র-তেরনদী পেরিয়ে এদেশে এসে ভেল্কিবাজিতে দুনিয়া দখল করে বসল, ওদের অসাধ্য কিছু আছে নাকি? আকণ্ঠ মদ গিলে আর ওইসব যা-তা মাংস খেয়ে ওরা যেমন দৈত্যের মত খাটে, তেমনি বেলেল্লাপনা করে নিজেদের মেমদের নিয়ে। জোড়ায় জোড়ায় দিগেবন্দী হয়ে বুকে বুক ঠেকিয়ে কোমর ধরে নাচে। কুঠীয়ালগুলোর তো রোজ এদেশী নতুন মেয়েছেলে চাই। সে কালো না ফরসা, যুবতী না আধাবয়সী সে দেখবারও চোখ থাকে না মদের ঘোরে। সেই ছোঁয়াচে লোকটি এমন হয়ে গেল। ঘোড়ায় চেপে জন সাহেবের কাছে যাওয়া, জঙ্গলে বাঘ শিকার করা, নদীর মোহনায় কুমীর শিকার করেই বা মন মানবে কেন? আর সেই বউমাটি! তাকে নায়েব দেখেছেন—সে তো সাক্ষাৎ দেবী। চোখমুখের দিকে তাকালেই মন তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ত। সে-মেয়ের এসব সহ্য হবে কেন। তাছাড়া সে বিয়েতে গিয়েছিল, শুনে এসেছে-সে-মেয়ে এক সাধুর কন্যা। সিদ্ধসাধক ছিলেন তার বাপ। সে কন্যার এইসব পাপসংসর্গ দুষ্ট স্বামীসঙ্গ সহ্য হবে কেন? সে জলে ডুবে পরিত্রাণ পেলে। তারপর আর কি, বাধাবন্ধ হীন হয়ে বীরেশ্বর রায় তুফানে ঝাঁপ খেয়েছেন। জীবনে একটা দিন শান্ত হয়ে শুদ্ধ হয়ে শুকনো মাটির বুকে বসে থাকা তাঁর সয় না; সন্ধ্যে হতে হতে ঝাঁপ দেবেন তুফানে। লোকে বাগানবাড়ী যায় স্ফুর্তি করতে; গঙ্গায় বজরায় আসর পেতে স্ফুর্তি জমায়; কেউ যায় খাস বাঈজী কসবীর বাড়ী; আর বীরেশ্বর রায়ের বসতবাড়ীতে আসে বাঈজী। বাপ সম্পত্তি দেবোত্তর করে গেছেন। এসব তাতে নিষিদ্ধ। কিন্তু তাই বা বলে কে? দেখে কে?

ভগ্নীপতি—জামাইবাবু বিমলাকান্ত ছিলেন অন্য একজন সেবায়েৎ, কিন্তু তিনি তো স্বেচ্ছায় সব ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন কাশী। কীর্তিহাট থেকে এসে কিছুদিন পর্যন্ত ছিলেন কলকাতায়। ছেলে কমলাকান্তকে হিন্দু কলেজে ভর্তি করে দিয়েছিলেন, তা নায়েব জানে। প্রথম কলকাতায় চলে এসে উঠেছিলেন এই বাড়ীতেই, দিন পনের ছিলেন, তারপর নায়েবই তাঁর জন্যে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরমশায়দের বাড়ীর ওদিকে একখানা বাড়ী দেখে দিয়েছিলেন—সেখানে উঠে গিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম কিছুদিন যেতেন আসতেন, যোগ ছিল। কিন্তু তারপর চলে গেলেন এখান থেকে। হঠাৎ চলে গেলেন, বলেও গেলেন না। নায়েব সেদিন ওঁদের খোঁজ করতে গিয়ে শুনলে —তাঁরা কাশী চলে গেছেন।

কোচম্যান এসে সেলাম করে দাঁড়াল। বন্দেগী হুজুর।

সেলাম আদবকায়দার বহরটা দেখ! নবাবের জাত কিনা। কথায় কথায় বলবে- অমুক জায়গার নবাব—তার চাচার শ্বশুরের ফুফুর দুধভাইয়ের নানার পোতা। সইয়ের বউয়ের বকুলফুলের বোনপো-বউয়ের বোনঝি-জামাই।

—সেলাম, নায়েবসাহাব। আবার বললে কোচম্যান ওসমান।

—সেলাম! এই সেলামটির জন্য ওসমান আবার সেলাম করেছে। ঠাণ্ডিপোলাও আর বাইগনের কোর্মা খায়, চোখে সুরমা টানে, দাড়িতে আতর একটু লাগায় ওসমান, সেলাম আদায় না করে ছাড়ে না। হাসলেন নায়েব। বললেন—কি?

—এই পানি হইয়ে গেলো, বহুৎ গর্দা কাদা হো গয়া রাস্তামে। পানি ভি হোগা চারপান জাগহমে। ইসমে ঘোড়া লেকে ক্যায়সে যাঁউ?

—বউবাজার তো?

—হাঁ।

—অরে বাবা, ওহি তো শোচতা হ্যায়।

—গর্দামে কাদামে ঘোড়া নেহি চলেগা। কোই জাগা গাঢ়া উড়া হোগা তো পায়ের জখম হো যায়েগা। এতনা দামী জানবার। বিলকুল বরবাদ হো যায়েগা।

—তো কি হুম যায়েগা?

পাল্কী ভেজিয়ে না। কাহার লোগ তো বৈঠকে বৈঠকে খাতা হ্যায়।

—তো বোলায় দেও মহাবীর সিংকো।

চলে গেল ওসমান।

নায়েব আবার আকাশের দিকে তাকালেন। শিল থেমে গেছে। আকাশে মেঘ ফিকে হয়ে কাটতে শুরু করেছে। সূর্যাস্তের রঙ লেগেছে, রাঙা ছোপ ধরেছে, সে-ছোপ দ্রুত উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ছে; নীচের রঙ গাঢ় থেকে গাঢ়তর লাল হয়ে পাটকিলে রঙে দাঁড়িয়েছে। মধ্য-আকাশে মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়েছে নীল আকাশের টুকরো।

মহাবীর এসে দাঁড়াল।

নায়েব বললেন, বেহারা পাল্কী ভেজো বউবাজার, আর তুমলোক চার আদমী যাও। বিবিকে লে আও। সারেঙ্গীদার তবলচী পয়দল আয়েগা। হাঁ? সমঝা?

—জী হুজুর।

মহাবীর চলে যাচ্ছিল। এমন সময় হুম্ হুম্ করে একখানা ভাড়ার পাল্কী এসে ঢুকল বাড়ীর হাতার মধ্যে। বেহারার হাঁক শুনে নায়েব খোলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলেন, একখানা ভাড়ার পাল্কী এসে ঢুকছে। পাল্কীখানা এসে সিঁড়ির নীচে নামল, তার ভিতর থেকে নামলেন—কীর্তিহাটের ম্যানেজার-নায়েব গিরীন্দ্র ঘোষাল। শশব্যস্তে এখানকার নায়েব বাইরে বেরিয়ে গেলেন।

—আসুন-আসুন। আপনি? হঠাৎ? কোন খবর নেই—এমন—

ঘোষাল বললেন—এলাম, জরুরী খবর আছে। মালিক কোথায়?

—এই তো বোধ হয় উপরে গেলেন। সারাদিন এক পাগল নিয়ে পড়ে আছেন।

—পাগল নিয়ে?

—পাগলও বটে, সিদ্ধপুরুষও বটে মশাই। বুঝেছেন?

—কি রকম?

—রকম আজ দেখে তো তাক্‌ লেগে গেল। রোদে পুড়ে যাচ্ছিল—জল-ঝড় একমাসের উপর ছিল না। আজ একেবারে দেখছেন তো চোখেই, জলে-ঝড়ে-শিলাবৃষ্টিতে পৃথ্বী শীতলা ভব হয়ে গেল। পাগল জল আনলে মশায়। বুয়েছেন—ওই বাগানে বেদীর উপর বসে এমন মল্লার হাঁকলে—সে শুনে তো আমাদের একেবারে ঘোর লেগে গেল, খোদ বাবু উপর থেকে নেমে এসে তানপুরো নিয়ে বসে গেলেন পিছনে। বাস, তারপরই বিদ্যুৎ, ডাক, ঝম ঝম করে বৃষ্টি, তারপর শিলাবৃষ্টি। ভাগ্যে বাবু জোর করে পাগলাকে টেনে এনে ঘরে ঢুকিয়েছিলেন, যেমনি ঘরটিতে ঢুকেছেন অমনি বজ্রপাত।

—তাই নাকি? আমি তখন সবে গঙ্গার ঘাটে নেমেছি। ঝড়ে নৌকো সামাল সামাল হয়েছিল, ডুবেই প্রাণটা যেতো বোধহয়, তা মাঝিবেটারা দারুণ মাঝি তো, ভিড়িয়ে ফেললে।

—কতদূর পর্যন্ত মেঘ পেয়েছেন?

—দক্ষিণে তো গেল। কলকাতা ঢোকা পর্যন্ত আকাশ ফটফটে। হেঁড়ে কোণে মেঘ উঠছে—উকি মারছে, তাই নজরে পড়ল খিদিরপুরের ও-মাথায়। বললাম- বেয়ে চল বেটারা। জলদি জলদি। নিমাই মাঝি বললে,—কুলে ভিড়াই নায়েবকর্তা, উ যে ম্যাঘ, ওরে বিশ্বাস নাই, যদি রথ হাঁকায় তো দেখতে দেখতে ঢেকে দিবে। বললাম—সি হবে না রে ব্যাটা। মরতে মরতে কলকাতার ঘাটে পৌঁছতে হবে, এই আজই। বাবু মজলিসে বাঈ নিয়ে বসলে দেখা হবে না কাল বারোটা পর্যন্ত। আমি কাল সকালেই ফিরব। মরি মরি, বাঁচি বাঁচি। চল। তা বেটা হাল ধরেছিল বটে। মুঠো বটে। সোনায় হাত বাঁধিয়ে দিতে হয়। ঘাটে নৌকো লেগেছে আর জল পড়তে লাগল। তারপরে শিল। থামতেই উঠে পাল্কী ভাড়া করেছি। দুনো দোব বলেছি।

কথাটা ঘুরে গেল। কলকাতার নায়েব হেরম্ব ঘোষ পাগলের কথা পাশে রেখে দিলেন; ঘোষালমশায়ের কথার মধ্যে জরুরী কিছুর আঁচ পেয়েছে। সে বললে—কাল সকালে ফিরবেন? রাত্রেই দেখা করবেন বাবুর সঙ্গে!

—এই এখুনি হলে ভাল হয়। এত্তেলা পাঠ্যও একটু। বল খুব জরুরী—।

—এত জরুরী—

থেমে গেলেন হেরম্ব ঘোষ, কাজটা কি জিজ্ঞাসা করতে ভরসা পেলেন না। ঘোষালমশায় রায় এস্টেটের প্রধান কর্মচারী। হেরম্ব ঘোষের কাজ কম নয়, হয়তো বা টাকার দিক দিয়ে তার এখানেই মোটা মোটা টাকার জমা-খরচ হয়; লেন-দেন হয়। ব্যবসাতে টাকা লগ্নী করা, টাকা ধার দেওয়া—সে-সবের মোটা কারবার এখানেই। কিন্তু ঘোষালমশায় দুমাস অন্তর এসে সমস্ত হিসেবনিকেশ দেখে খাতায় সই মেরে যান। তাছাড়া সোমেশ্বর রায়ের দেবোত্তরের ট্রাস্ট-দলিলে তিনি একজন অ্যাডভাইসার। তিনি ছুটে এসেছেন, এখুনি দেখা করবেন, কাল সকালেই ফিরবেন। এ-কাজ খুব জরুরী। তার উপর তিনি নিজে যখন এসেছেন, তখন কাজটা গোপনীয় বলেই মনে হল। জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও পারলেন না হেরম্ব ঘোষ।

ঘোষাল বললেন, এ যদি হয়, মানে কাজটা, খেয়া যদি ঘরে ঢুকোতে পারি, তবে রায়- বংশে লক্ষ্মী রাজলক্ষ্মী হলেন, আর অচলা হলেন।

—বলেন কি?

—হ্যাঁ।

একজন চাকর এসে রূপো-বাঁধানো হুঁকোতে কক্ষে চড়িয়ে ঘোষালের সামনে বাড়িয়ে ধরলে। হুঁকো নিয়ে তাতে টান দিয়ে ঘোষাল বললেন, তুমি যাও ঘোষ। বাবুকে বলে এস। এক্ষুনি। বলবে- মহিষাদলের কথা। খুব জরুরী।

ঘোষ বললে—মহিষাদল! উ কথা কাগজে বার করে দিয়েছে ঈশ্বর গুপ্ত। ওই দেখুন না সংবাদপ্রভাকর পড়ে রয়েছে।

ঘোষাল তুলে নিলেন কাগজখানা। একটা খবরের নীচে দাগ দেওয়াও রয়েছে। ‘কলিকাতার শীল বনাম মহিষাদলের রাজা বাহাদুর।’ “অহো, হে পাঠকগণ! মহারাজ মহিষাদলাধিপতি অবোধ অকৃতজ্ঞ কর্মচারীদিগের কুহকজালে জড়িত হইয়া হইয়া এতদিনের পর দারুণ দুর্দশাপ্রাপ্ত হইলেন।….বর্তমান অধিরাজ বাহাদুর কি অশুভক্ষণে কলুটোলানিবাসী ধনরাশি “মতি শীল মহাশয়ের স্ত্রী আনন্দময়ী দাসীর নিকটে এক লক্ষ টাকা কর্জ করিয়াছিলেন, সেই লক্ষ টাকার নিমিত্ত তাঁহার সর্বস্বান্ত হইল। মতিলাল শীলের পুত্র শ্রীযুক্ত বাবু হীরালাল শীল তাঁহার বিষয়াদির তত্ত্বাবধায়কের পদে নিযুক্ত হইয়া তাঁহাকে রক্ষা করণার্থে প্রতিজ্ঞাকরতঃ পরিশেষে সর্বস্ব গ্রাস করিয়া বসিলেন।”

ঘোষাল কাগজখানা ফেলে দিলেন। কাগজ জানে কচু লেখে ঘেঁচু। কি জানে তারা? কতটুকু জানে? ঘোষাল নিজে মহিষাদলের কর্মচারী ছিলেন। সেখান থেকে তারা তাঁকে অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি—তাঁকে সর্বস্বান্ত করতে চেয়েছিল। সোমেশ্বর রায় তাঁকে আশ্রয় দিয়ে রক্ষা করেছিলেন। এইসব ঋণ করতে ঘোষাল বারণ করেছিলেন বর্তমান মহারাজার বাবাকে, লক্ষ্মীনারায়ণ গর্গ বাহাদুরকে। দুহাতে খরচ করতে নিষেধ করেছেন। অপরাধ তাঁর এই।

কাগজখানা ফেলে দিয়ে ঘোষাল বললেন, উনি দেখেছেন কাগজ? খবর জানেন?

—উনিই তো দাগ দিয়েছেন।

—বহুত আচ্ছা। যাও, গিয়ে বল—মহিষাদলের আরও খবর আছে জরুরী। বলবে শীলেরা সম্পত্তি রাখবে না, বিক্রী করবে—। সেই খবর নিয়ে এসেছি।

—কিনবেন নাকি?

—আমি কিনতে বলব! এতবড় সম্পত্তি, আর বাড়ীর দোরের সম্পত্তি আর মিলবে না। ঠিক এই সময়েই উপরে বীরেশ্বরের গলাঝাড়ার শব্দ পাওয়া গেল।

.

বীরেশ্বর রায় বিকেলে গোসলখানায় স্নান সেরে তখন সদ্য বেরিয়েছেন, চাকরে স্নানঘরে- পরা ধুতি ছাড়িয়ে পাটে পাটে কোঁচানো কোঁচায় ফুল-কেটে কাপড় হাতে দাঁড়িয়ে ছিল—কাপড় ছাড়িয়ে নেবে, একটা চাকর বিলেতের আমদানি টার্কিস তোয়ালে দিয়ে গা মুছে দিচ্ছে। টেবিলের উপর আতরদানে আতর-তুলো রাখা রয়েছে। আংটি রয়েছে বাক্সে; চেন-ঘড়ি রয়েছে। আলনায় পাটভাঙা নবাবী ঢঙের মসলিনের বুটিদার পাঞ্জাবি। টালিগঞ্জে মহীশূরের টিপু সুলতানের বংশধরেরা এসে অবধি কলকাতার সন্ধ্যে আসরে এই ঢঙের পাঞ্জাবির রেওয়াজ হয়েছে। বাইরে যেতে হলে চোগা-চাপকান, চাদর-শাল টুপির রেওয়াজ শুধু দরবারী পোশাকই নয়, বড় বড় জলসায়, নাচের আসরেও চলে বটে, কিন্তু বাঈ-বাড়ী কি বাগানবাড়ী বা ছোট মজলিসে এইটের চল হয়েছে। বিশেষ করে যারা খুব উঁচুমেজাজী শৌখীন, তাদের মধ্যে।

গলার সাড়া দিয়ে হেরম্ব ঘোষ বাইরে দাঁড়ালেন।

রায় বললেন—ঘোষ? গলার সাড়ার ইশারায় তিনি বুঝেছেন।

—আজ্ঞে হ্যাঁ।

—ভেতরে এস।

ভেতরে এসে হেঁট হয়ে নমস্কার করে দাঁড়ালে ঘোষ।

—কি?

—আজ্ঞে, কীর্তিহাট থেকে ঘোষালমশায় এসেছেন। কাজ খুব জরুরী। কাল সকালেই ফিরে যাবেন তিনি।

—গিরীন্দ্র ঘোষালমশাই?

—আজ্ঞে হ্যাঁ। আজই এখুনি দেখা করতে চান।

—পাঠিয়ে দাও।

—ওই মহিষাদলের রাজবাড়ীর ব্যাপার, আজ কাগজে—

—বুঝেছি। তিনি আসুন, তাঁর কাছেই শুনব।

হেরম্ব ঘোষ চলে গেলেন।

রায় বললেন—কাপড় ছাড়িয়ে নে। বাইরে কে আছে, ঘোষালমশাই এলে দাঁড়াতে বলবি, কাপড় ছাড়া না হলে যেন না ঢোকেন।

চাকর তাঁকে কাপড় ছাড়িয়ে নিল। এ সেদিনের আমীর আভিজাত্যের অঙ্গ।

সকল অধ্যায়

১. কীর্তিহাটের কড়চা – কথারম্ভ
২. কীর্তিহাটের কড়চা – পরিচয়
৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১
৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.২
৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৩
৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৪
৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৫
৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৬
৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৭
১০. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৮
১১. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.৯
১২. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১০
১৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১১
১৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ১.১২
১৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.১
১৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.২
১৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৩
১৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৪
১৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৫
২০. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৬
২১. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৭ (?)
২২. কীর্তিহাটের কড়চা – ২.৮
২৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.১
২৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.২
২৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.৩
২৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩.৪
২৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১
২৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.২
২৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৩
৩০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৪
৩১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৫
৩২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৬
৩৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৭
৩৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৮
৩৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.৯
৩৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১০
৩৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১১
৩৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১২
৩৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১৩
৪০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১৪
৪১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪.১৫
৪২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১
৪৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ২
৪৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৩
৪৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৪
৪৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৫
৪৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৬
৪৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৭
৪৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৮
৫০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ৯
৫১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১০
৫২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১১
৫৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১২
৫৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৩
৫৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৪
৫৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৫
৫৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৬
৫৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৭
৫৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৮
৬০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ১৯
৬১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৩য় খণ্ড – ২০
৬২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১
৬৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ২
৬৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৩
৬৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৪
৬৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৫
৬৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৬
৬৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৭
৬৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৮
৭০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ৯
৭১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১০
৭২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১১
৭৩. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১২
৭৪. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৩
৭৫. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৪
৭৬. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৫
৭৭. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৬
৭৮. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৭
৭৯. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৮
৮০. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ১৯
৮১. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ২০
৮২. কীর্তিহাটের কড়চা – ৪র্থ খণ্ড – ২১. পরিশিষ্ট

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন