কিলিং মিশন – ৩৮

কাজী আনোয়ার হোসেন

আটত্রিশ

রানা ও ফক্সকে দরজা দিয়ে ঢুকতে দেয়ার জন্যে ভারী শরীর নিয়ে পিছিয়ে গেল ববি জনসন। রানার পর বিশাল লিভিংরুমে ঢুকল ফক্স। তিনটে জানালা দিয়ে আবছা আলোয় ওরা দেখল উপত্যকা ও উপকূল। আঁধার সাগরের কালো আকাশে মিটমিট করে জ্বলছে অজস্র নীলচে নক্ষত্র।

রানা বুঝে গেল, টিলার গভীরে কায়দা করে গির্জার নিচে তৈরি করা হয়েছে জনসনের বাড়ি। লিভিংরুমে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে আছে কিছু আসবাবপত্র। ফায়ারপ্লেসের ওপরের দেয়ালে ঝুলছে মস্ত ফ্ল্যাটস্ক্রিন টিভি। আরেক দেয়ালে ছয়ফুটি ক্রোম-প্লেটেড ক্রুশ ছাড়া অন্যান্য দেয়াল ফাঁকা। ওদেরকে বসতে দেয়ার জন্যে দশ ফুট দূরে পাশাপাশি দুই আর্মচেয়ার দেখাল জনসন। নিজে ভীষণ মোটা বলে কোন চেয়ারে বসতে পারবে না।

‘ড্রিঙ্ক দেব?’ জানতে চাইল সে। ‘বাড়িতে অবশ্য আছেই শুধু বিয়ার। আমি নিজে কড়া কিছু পান করি না।’

‘ধন্যবাদ, লাগবে না,’ বলল রানা।

মাথা নাড়ল ফক্স।

‘আমার আরেকটা বিয়ার চাই,’ ফ্রিযের কাছে গেল জনসন। ডালা খুলে হাতে নিল এক পাইন্টের বিয়ারের বোতল। বুড়ো আঙুল দিয়ে অনায়াসেই উড়িয়ে দিল ওটার ক্যাপ।

হাতিটা বোধহয় দিনে শেষ করে দশ পাইন্টের বেশি বিয়ার, ভাবল রানা।

দূরে ডাবল সোফায় গিয়ে বসল জনসন। কোলের ওপরে রাখল ম্যাগনাম রিভলভার। আক্রমণ এলে চট্ করে হাতে তুলে নেবে। চোঁ-চোঁ করে খালি করল বিয়ারের অর্ধেক বোতল।

‘আপনার বাড়িটা চমৎকার,’ মন্তব্য করল রানা।

‘কাউকে ঢুকতে দিই না,’ বলল জনসন। ‘তবে আমার বড় বোন আপনাকে পছন্দ করেছে। সবসময় বলে: অন্যদের চেয়ে ঢের বেশি বুঝি মানুষের চরিত্র।’

‘আপনার বোন?’ জনসনের সঙ্গে মিসেস ম্যাণ্ডকের চেহারার মিল আছে, টের পেল রানা।

মাথা দোলাল লোকটা। ‘হ্যারিসের বইটা পড়েই সঙ্গে সঙ্গে ই-মেইল করেছিল। ভীষণ ঘাবড়ে গেছে। দুঃখ লাগে, নিরেট এক গর্দভের সংসার করছে। ওই বই আসলে কীসের ওপরে লেখা, সেটাও বুঝতে পারেনি লোকটা।’

এরপর তাঁদের অফিসে গেলাম আমরা,’ বলল রানা।

‘আপনাদের কথা শুনে আমার বোন বুঝল, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।’ আরেক চুমুক বিয়ার নিল জনসন। হাতের তালুতে মুছে নিল মুখ। ‘জেন্টলমেন, এবার হয়তো আমাদের ভেতরে হবে চমৎকার বন্ধুত্ব। জানতাম, বহু বছর ধরে মানুষ খুন করছে অশুভ হ্যাভোক ক্লাব। তাই কয়েক বছর হলো ওটার সম্পর্কে নানান তথ্য সংগ্রহ করেছি। কিন্তু সত্যিকারের কোন প্রমাণ হাতে ছিল না। এবার হয়তো সেটা পাব।’

হাতির মত শরীর নিয়েও ঝট করে উঠে দাঁড়াল সে। চলে গেল দেয়ালের তাকের কাছে। ওখানে ট্রেতে আছে রানা ও ফক্সের জিনিসপত্র। ঘুরে ওদের দিকে তাকাল সে। ‘দেখা যাক আমার জন্যে কী এনেছেন আপনারা। বলুন তো, কোন্ ফোনে আছে সেই ভিডিয়ো?’

‘আমারটায়,’ বলল ফক্স। ‘যেটা একটু ছোট।’

‘আপনি নিজেই কি তুলেছেন ভিডিয়ো ফুটেজ?’

‘আপনি তো ভাল করেই জানেন আমরা কারা,’ বলল রানা, ‘কিন্তু আপনার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।

মাথা দোলাল দানব। ‘মাফ করবেন, আসলে এত উত্তেজিত হয়ে গেছি, নিজের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারিনি। আমার আসল নাম গ্রেগ ডিলান।’

‘আপনার বোন বিয়ের আগে ছিলেন এলেনা ডিলান,’ বলল রানা।

‘গাধাটাকে বিয়ে করার আগে ওটাই ছিল ওর নাম। আমরা দুই ভাইবোন ধার্মিক পরিবারে মানুষ হয়েছি। অবশ্য ওর চেয়েও বেশি ঝুঁকে পড়ি ধর্মের দিকে।’ দেয়ালে ক্রুশ দেখাল ডিলান। ‘বলতে দ্বিধা নেই, ধর্ম আমার কাছে জীবনের চেয়েও প্রিয়।’

‘যদিও মনে হচ্ছে না যে আপনি যাজক,’ বলল রানা।

হাসল ডিলান। ‘আসলেই তা নই। স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবার কথা বাদ দিলে বাকি সময় পড়ে থাকতাম কলেজে টেকনোলজি নিয়ে। বাইশ বছর বয়সে আমরা চারবন্ধু মিলে তৈরি করলাম শক্তিশালী একটি সার্চ ইঞ্জিন অ্যাপলিকেশন। নানান দরকারে বহুবার ওটা ব্যবহার করেছেন আপনারা। সে-সময়ে ভালভাবে চলছে ডট বুম। নামকরা এক কোম্পানির কাছে অ্যাপলিকেশনটা বিক্রি করে আমরা আয় করলাম শত শত কোটি টাকা।’

হাতের ইশারায় চারপাশ দেখাল সে। ‘হয়তো বুঝেছেন, দুনিয়া থেকে দূরে থাকতে গিয়ে ব্যয় করেছি আমার সম্পদের বড় একটা অংশ। আর এখানে বসেই গবেষণা করেছি, গত কয়েক শতাব্দীতে কীভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতায় চলে গেছে শয়তান-পূজারীরা। বেশিরভাগ মানুষ এসব কিছুই জানে না। বাস্তবতা হচ্ছে, যে-কোন সময়ে হাসতে হাসতে সম্পদশালী দেশগুলোর ক্ষমতা দখল করে নেবে নরপশুগুলো।’

‘একটু খুলে বলবেন, কীভাবে এসবে জড়ালেন?’ জানতে চাইল রানা।

‘কীভাবে?’ দীর্ঘশ্বাস ফেলল ডিলান। ‘ওর নাম ছিল কেন মিচেল। ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ধর্ম বিশ্বাস করত না। তবুও পরস্পরকে ভালবাসতাম ভাইয়ের মত। ওর জন্যেই একসময় বুঝলাম, কালো জাদু বা শয়তান-পূজা এখন কোন্ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।’

ডিলানের বক্তব্য শোনার জন্যে অপেক্ষা করছে রানা।

বড় করে শ্বাস ফেলে বিয়ার গিলল ডিলান। ‘আগেই বলেছি, মাত্র ক’দিনের ভেতরে মস্ত বড়লোক হয়ে গেলাম আমরা চারবন্ধু। আর অত টাকা পেয়ে বেছে নিলাম আলাদা পথ। টেকনো ব্যবসায় রয়ে গিয়ে নতুন এক কোম্পানি খুলল কেভ ওডোনেল। ট্রপিকাল এক দ্বীপে গিয়ে বাস করতে লাগল টমাস গ্রেমাজ। সারাদিনে তার একমাত্র কাজ হয়ে উঠল গ্লাসের পর গ্লাস রাম শেষ করা। নিজে আমি ভাবলাম, টাকার যখন অভাব নেই, এবার আয়েস করে কাটিয়ে দেব বাকি জীবন। আমাদের ভেতরে সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী ছিল কেন মিচেল। ওর ইচ্ছে ছিল ব্যবসায় টাকা লগ্নি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করবে। এরপর চারবছর আর ওর সঙ্গে দেখা হয়নি। একদিন ফোন দিল। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। অনুরোধ করল, যেন একটু সময় দিই। মনের কথা বলার মত কেউ নেই ওর। ঠিকানা দিল। ওখানে গিয়ে দেখলাম, সস্তা এক হোটেল উঠেছে মিচেল। রুমে ঢুকে চমকে গেলাম ওকে দেখে। চেনা যাচ্ছিল না। যেন জীবন্ত কঙ্কাল। কীভাবে ওর জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে, সেটা বিস্তারিতভাবে জানাল।

বন্ধুর করুণ পরিণতির কথা বলতে গিয়ে ভারী হয়ে গেছে গ্রেগ ডিলানের গলা। ‘টাকার পেছনে ছুটতে গিয়ে ফিন্যানশিয়াল এক ব্রোকারের সঙ্গে পরিচয় হয় ওর। নামকরা মস্তবড় কিছু কর্পোরেশনের হয়ে ট্রিলিয়ন ডলারের বিজনেস দেখাশোনা করত সেই লোক। শিক্ষানবিশ হিসেবে কেনকে সঙ্গে নিল। দেখাতে লাগল কীভাবে পিচ্ছিল দড়ি বেয়ে উঠে যেতে হবে অকল্পনীয় সম্পদের পাহাড়ের চূড়ায়। অবশ্য সেজন্যে দুটো শর্ত ছিল তার। প্রথম কথা: কেনের প্রাপ্য সবকিছুর দশ পার্সেন্ট পাবে সে। আর দ্বিতীয় শর্ত: চিরকালের জন্যে ভুলে যেতে হবে বিবেকের কথা।’

‘বলতে থাকুন, আমরা শুনছি,’ বলল রানা।

‘লোকটা আরও জানাল: ‘মূল্য পরিশোধ করতে দ্বিধা এলে ভুলেও নেমো না এই খেলায়।’ তখন টাকার নেশায় পেয়েছে কেনের। সবকিছু চট্ করে বুঝে নিত। ওর মনে হলো কয়েক হাজার কোটি টাকা পেলে সত্যিই খুব সুখী হবে ও।’

‘তারপর কী হলো তার?’ জানতে চাইল ফক্স।

‘প্রথম দু’বছর কাটল সুখস্বপ্নের মাঝে। ব্যবসা করতে গিয়ে আয় করল শত শত কোটি টাকা। পেল বিলাসবহুল জীবন। কিন্তু এরপর ওর মনে হলো: আরও টাকা পাচ্ছি না কেন? বেচারা তখনও ভাবতে পারেনি জড়িয়ে যাচ্ছে কীসে।’

বিয়ার শেষ করে বোতলটা দেখল ডিলান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও শুরু করল: ‘সেই সময়ে কেন জানল, নতুন বন্ধুরা অদ্ভুত এক ধর্মের অনুসারী। ওটা খুব অস্বাভাবিক কিছু। আগ্রহ দেখাতেই ওকে তাদের ধর্মে বরণ করে নিল তারা। জানিয়ে দিল: কখনও বেইমানি করতে পারবে না, নইলে ভয়ঙ্কর বিপদে পড়বে। শয়তান-পূজার অনুষ্ঠানে যেতে লাগল ও। ওর চোখের সামনে জবাই হলো একের পর এক মেয়ে। কিছু বলবে সেই সাধ্য ওর ছিল না।’

হতাশ চোখে ওদেরকে দেখল ডিলান। ‘ এরপর শয়তানের কাছে বলি দেয়া হলো কিছু শিশুকে।’

চুপ করে থাকল রানা ও ফক্স।

ঘরে বিরাজ করছে থমথমে পরিবেশ।

‘শিশু-হত্যার দৃশ্য মন ভেঙে দিল কেনের,’ বলল ডিলান। ‘তখনই যোগাযোগ করল আমার সঙ্গে। বলেছিল, বহু আগেই খুন হয়ে গেছে ওর বিবেক। কিন্তু এত চরম অন্যায় আর সহ্য করতে পারছে না। স্বীকারোক্তি দিল আমার কাছে। সেই রাতে ওকে হোটেলে রেখে ফিরলাম তখনকার অ্যাপার্টমেন্টে। একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছি। ভাবতে লাগলাম, কীভাবে সুস্থ জীবনে ফেরত আনব বন্ধুকে। জানতাম না, আর কখনও ওকে জীবিত দেখব না। পরদিন সেই হোটেলের রুমে পাওয়া গেল ওর লাশ। সিলিঙের আংটা থেকে দড়িতে ঝুলছিল দু’পা। কেটে নেয়া হয়েছে মাথা। ওটা ছিল মেঝেতে। জীবিত অবস্থায় ছিলে নেয়া হয় ওর চামড়া।’

‘দুঃখজনক,’ বলল ফক্স।

‘ড্রাগখোর এক খুনিকে গ্রেফতার করল পুলিশ। আগে দুটো খুন করেছে সে।’ মাথা নাড়ল ডিলান। ‘আমি ভাল করেই বুঝে গেলাম, শয়তান-পূজারীদের বিরোধিতা করেছে বলে চরম শাস্তি দেয়া হয়েছে কেনকে। এরপর দেরি করিনি আত্মগোপনে যেতে। চোখ খুলে গিয়েছিল। আইল অভ ম্যানে তৈরি করলাম এই আস্তানা। তখন থেকে সংগ্রহ করছি শয়তান-পূজারীদের বিরুদ্ধে নানান ধরনের প্রমাণ। গবেষণা করে জেনেছি, বেশিরভাগ দেশের রাজনৈতিক উঁচু পর্যায়ে আছে তারা। এরপর একসময়ে জেনে গেলাম দ্য হ্যাভোক ক্লাবের কথা।

‘ঊনবিংশ শতক থেকে শুধু ব্রিটেনে নয়, অন্য দেশেও চালু আছে এই ক্লাব। ইউরোপের দেশগুলোর ক্ষমতাশালীরা ওটার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত।’

‘ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীও কি তাদেরই কেউ?’ বলল ফক্স।

‘জানা নেই,’ বলল ডিলান। ‘তবে শয়তান-পূজা না করলে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারে না কেউ।’ ফক্সের দিকে তাকাল সে। ‘আঠারো শ’ বিশ সালে ব্রিটেনে চালু হয়েছে প্রাচীন ধর্ম অর্ডার অভ থঅর্থ। শিকারি পাখির মুওওয়ালা মিশরীয় এক অপদেবতা সে। তখন থেকে আরও ছড়িয়ে গেল কালো জাদুর প্রচারণা।

‘থঅথের মূর্তির বেদিতে এক মেয়েকে আমি খুন হতে দেখেছি,’ বলল ফক্স।

‘একবার ওই ভিডিয়োটা দেখতে পারি?’ বলল ডিলান। ‘আপনার হাতেই আছে আমার ফোন, ওটাতে পাবেন,’ বলল ফক্স।

‘আমাদের কাছে ল্যাপটপে স্টিভ হ্যারিসের বইটাও আছে,’ বলল রানা। ওটা পড়তে পারলে হয়তো জানা যাবে অর্ডার অভ থঅথের সঙ্গে কীসের সম্পর্ক হ্যাভোক ক্লাবের।

‘আপনারা হয়তো জানেন না,’ বলল ডিলান, ‘ঊনবিংশ শতকে শার্লন হলে থঅথের মন্দির তৈরি করেছিল ফিলিপ এন. শার্লন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র সন্তান জিওফ্রি এন. শার্লন এবং পরে নাতি গ্রেগরি এন. শার্লন ছিল মন্দিরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। তাদেরকে গভীর শ্রদ্ধা করত ব্রিটেনের উঁচু সমাজের সবাই। পরে সেই গোপন সঙ্ঘ সম্পর্কে নতুন তথ্য আর পাইনি। আমি যদি পনেরো শতক থেকে শয়তান-পূজার বিষয়টা ব্যাখ্যা করি, সেক্ষেত্রে হয়তো গোটা ব্যাপারটা ভাল করে আপনারা বুঝতে পারবেন।’

‘অতীত নিয়ে ভাবছি না,’ বলল লেকচারে বিরক্ত ফক্স। ‘আমরা জানতে চাই বর্তমানে শার্লন হলে কী ঘটছে।’

‘আপনারা যদি ওখানে যান, তো এরপর কী করবেন?’ জানতে চাইল ডিলান।

‘হয়তো পুড়িয়ে দেব প্রাসাদ,’ বলল ফক্স। ‘ওখানে কাউকে পেলে তাকে খতম করে দেব।

‘তাতে লাভ কী?’ মাথা নাড়ল ডিলান। ‘ওরা তো একজন দু’জন নয়। সমাজের মাথা তারা। সংখ্যায় হয়তো এক শ’র বেশি। আমি নিজে এ-ব্যাপারে খুব বেশিকিছু জানি না। অর্থাৎ, আপনাদেরকে নানান তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারব না।’

‘অথচ, ভুল ধারণা দিয়েছেন, প্রচুর তথ্য আমাদেরকে দিতে পারবেন,’ বলল রানা।

‘আসলে সেটা বোঝাতে চাইনি,’ মাথা নাড়ল ডিলান। ‘আমি জানি না ওই দলের নেতৃত্বে এখন কারা আছে। আশা করি বুঝেছেন, আমি একজন গবেষক, গোয়েন্দা নই। গোপনে কী করছে খুনিগুলো, সেটা আমার জানা নেই।’

‘আপনি তো হ্যারিসের বইটা পড়েছেন,’ বলল ফক্স। ‘ওটা থেকে জরুরি কোন তথ্য পাননি?’

‘পড়েছি মাত্র এক শ’ পৃষ্ঠা।’

‘অথচ, ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রচুর তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে পারবেন,’ বলল ফক্স। ‘এখন তো মনে হচ্ছে অত দূর থেকে এখানে এসে সময় নষ্ট করেছি আমরা।

‘ওই বইয়ে যাদের কথা লিখেছে, তাদের আলাদা ছদ্মনাম দিয়েছে হ্যারিস,’ বলল ডিলান। ‘এ-ব্যাপারে বিশদ বর্ণনাতেও যায়নি। সে ছাড়া আর কেউ জানত না এরা কারা।’

‘তা হলে সত্যিই আমরা সময় নষ্ট করেছি,’ বিড়বিড় করল ফক্স। কড়া চোখে দেখল ডিলানকে। রানা বুঝে গেল যুবকের মনের ইচ্ছে। যদি উপায় থাকত, ঘাড় ধরে ডিলানকে জানালা দিয়ে নিচের উপত্যকায় ছুঁড়ে ফেলত ফক্স।

‘আমার কাছে বইয়ের যে অংশ, চাইলে ওটা পড়তে পারেন,’ ক্ষতিপূরণ হিসেবে জানাল ডিলান।

‘অ্যালেক্যাণ্ডার লিয়োনেল বা অ্যালান শ’ নামে কারও কথা বইয়ে লিখেছে হ্যারিস?’ জানতে চাইল রানা।

মাথা নাড়ল ডিলান। ‘তেমন কিছু বইয়ে দেখিনি।’

‘শার্লন হলে ছিল ধেড়ে শকুনের মত গলাছেলা এক বুড়ো,’ বলল ফক্স।  ‘হাতে ওয়াকিং স্টিক। বয়সে লিয়োনেলের চেয়ে ত্রিশ বছরের বেশি। নিজের বইয়ে তার ব্যাপারে কিছু লিখেছে হ্যারিস?’

‘না, ওয়াকিং স্টিকসহ কারও কথা নেই বইয়ে,’ বলল ডিলান। ‘আমরা আসলে এভাবে কাউকে শনাক্ত করতে পারব না। বরং দেখি ভিডিয়োটা। তাতে হয়তো বহুকিছুই জানতে পারব।’ মোবাইল ফোন অন করে ফক্সের দিকে তাকাল সে।

‘আপনি জেনেবুঝে আমাদেরকে ঠকিয়েছেন,’ সরাসরি অভিযোগ করল ফক্স। ‘এমন ভাব করেছেন, যেন বহুকিছু জানেন। কিন্তু আসলে কিছুই আপনার জানা নেই। তাই মনে হচ্ছে, ভিডিয়ো আপনাকে দেখিয়ে আমাদের কোন লাভ নেই। বরং আপনিও থাকুন আমাদের মত অন্ধকারে।’ রানার দিকে তাকাল ফক্স।

‘ভিডিয়োটা মাত্র একবার দেখতে দিন! প্লিয!’ ভাঙা গলায় বলল ডিলান। প্রায় কেঁদে ফেলেছে।

পায়ের জুতো থেকে শুরু করে মুখের দাঁত পর্যন্ত খুলে নিয়েছে এই শালা!’ রাগ সামলাতে না পেরে রানাকে বলল ফক্স। ‘এত দূর থেকে এসে কী পেলাম? এটা জানলাম, এই মোটা শালা আসলে ফালতু এক লোক! তাই মনে হচ্ছে, ভিডিয়ো আর না দেখানোই ভাল! এই মানসিক কষ্ট এর পাওয়া উচিত! জুতো পরার আগে ওটা দিয়ে ওর ফোলা দু’গাল ফাটিয়ে দিতে পারলে খুশি হতাম!’

কী যেন ভাবছে রানা। কয়েক মুহূর্ত পর বলল, ‘খালি হাতে ফিরছি, তা ঠিক। তবে ভিডিয়ো দেখালে ক্ষতি নেই। পাসওয়ার্ড দাও ডিলানকে। ওই দৃশ্য দেখে বাকি রাত আর ঘুমাতে পারবে না। আপাতত এটুকু আমাদের প্রাপ্তি।’

কথাটা মনে ধরল ফক্সের। সোনালি হাসিতে ভরে গেল মুখ। ‘ঠিক, বস্! শালা ডিলান, তো নে পাসওয়ার্ড— ওটা রিটা। বড় অক্ষরের ‘আর’ দিয়ে শুরু। এরপর সারারাত মনের কষ্টে ছটফট করে মর!’

অপমান গায়ে না মেখে ফোনে পাসওয়ার্ড দিল ডিলান। ভিডিয়ো চালু হতেই ঝুঁকে বসল সোফায়। নিজেরা চেয়ার থেকে উঠল না রানা বা ফক্স। দ্বিতীয়বার খুনের দৃশ্য দেখার ইচ্ছে ওদের নেই।

‘আশ্চর্য!’ নিচু স্বরে বলল ডিলান। ‘এই ভিডিয়ো করলেন কী করে? আগে তো কেউ এদের এত কাছে যেতে পারেনি!’

‘আমার কপাল মন্দ ছিল,’ বলল ফক্স।

‘ওটা কী?’

‘ওটাই শার্লন হল,’ বলল রানা। ‘মনোযোগ দিয়ে ভিডিয়ো দেখুন।’

‘তা তো বটেই!’

একটু পর ফ্যাকাসে হয়ে গেল ডিলানের মুখ। হাঁ হয়ে গেছে। বিড়বিড় করল, ‘অবিশ্বাস্য! আগে কখনও এ-দৃশ্য কেউ দেখেনি!’

‘আপনি তৃতীয়জন,’ মন্তব্য করল রানা।

শ্বাস আটকে ফেলল ডিলান। সোনালি চুলের এক মেয়েকে নেয়া হয়েছে অপদেবতা থঅথের মূর্তির সামনে। কমপিউটার বিশেষজ্ঞের মাথার তালু বেয়ে কপালে দরদর করে নামল ঘাম। ভয়-ঘৃণা নিয়ে দেখছে খুনের দৃশ্য। বিড়বিড় করে বলল, ‘তা হলে সত্যিই এরা মানুষ খুন করে!’

‘আরও ভালভাবে দেখো,’ তিক্ত স্বরে বলল ফক্স। ‘ঘাম ঝরলে শরীরের চর্বি গলবে।’

মেয়েটাকে খুন হতে দেখে আরেকটু হলে মোবাইল ফোন হাত থেকে ফেলে দিত ডিলান। ফিসফিস করে বলল, ‘হায়- হায়, ঈশ্বর! হায় হায়!’

এবার নিশ্চয়ই তুমি খুব খুশি?’ দাঁত খিঁচাল ফক্স।

‘নকল ভিডিয়োর মত নয়,’ বলল রানা।

‘কিন্তু এক মিনিট!’ চমকে উঠল ডিলান। ‘শেষ দিকটা আরেকবার দেখতে হবে!’

বিরক্ত হয়ে মাথা নাড়ল ফক্স। ‘দ্বিতীয়বার না দেখে তোমার চলছে না, তাই না, শালা! তুমি নিজেও আসলে নরকের কীট!’

জবাব না দিয়ে প্লেব্যাক পিছিয়ে নিল ডিলান।

যুম করল ইমেজের ওপরে।

কাছ থেকে দেখছে স্ক্রিন।

বিস্ফারিত হলো তার দু’চোখ। হঠাৎ বেসুরো কণ্ঠে বলল, ‘আরে! আমি তো এই মেয়েকে ভাল করেই চিনি!’

সকল অধ্যায়

১. কিলিং মিশন – ১
২. কিলিং মিশন – ২
৩. কিলিং মিশন – ৩
৪. কিলিং মিশন – ৪
৫. কিলিং মিশন – ৫
৬. কিলিং মিশন – ৬
৭. কিলিং মিশন – ৭
৮. কিলিং মিশন – ৮
৯. কিলিং মিশন – ৯
১০. কিলিং মিশন – ১০
১১. কিলিং মিশন – ১১
১২. কিলিং মিশন – ১২
১৩. কিলিং মিশন – ১৩
১৪. কিলিং মিশন – ১৪
১৫. কিলিং মিশন – ১৫
১৬. কিলিং মিশন – ১৬
১৭. কিলিং মিশন – ১৭
১৮. কিলিং মিশন – ১৮
১৯. কিলিং মিশন – ১৯
২০. কিলিং মিশন – ২০
২১. কিলিং মিশন – ২১
২২. কিলিং মিশন – ২২
২৩. কিলিং মিশন – ২৩
২৪. কিলিং মিশন – ২৪
২৫. কিলিং মিশন – ২৫
২৬. কিলিং মিশন – ২৬
২৭. কিলিং মিশন – ২৭
২৮. কিলিং মিশন – ২৮
২৯. কিলিং মিশন – ২৯
৩০. কিলিং মিশন – ৩০
৩১. কিলিং মিশন – ৩১
৩২. কিলিং মিশন – ৩২
৩৩. কিলিং মিশন – ৩৩
৩৪. কিলিং মিশন – ৩৪
৩৫. কিলিং মিশন – ৩৫
৩৬. কিলিং মিশন – ৩৬
৩৭. কিলিং মিশন – ৩৭
৩৮. কিলিং মিশন – ৩৮
৩৯. কিলিং মিশন – ৩৯
৪০. কিলিং মিশন – ৪০
৪১. কিলিং মিশন – ৪১
৪২. কিলিং মিশন – ৪২
৪৩. কিলিং মিশন – ৪৩
৪৪. কিলিং মিশন – ৪৪
৪৫. কিলিং মিশন – ৪৫
৪৬. কিলিং মিশন – ৪৬
৪৭. কিলিং মিশন – ৪৭
৪৮. কিলিং মিশন – ৪৮
৪৯. কিলিং মিশন – ৪৯
৫০. কিলিং মিশন – ৫০
৫১. কিলিং মিশন – ৫১
৫২. কিলিং মিশন – ৫২
৫৩. কিলিং মিশন – ৫৩
৫৪. কিলিং মিশন – ৫৪

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন