কিলিং মিশন – ৩৬

কাজী আনোয়ার হোসেন

ছত্রিশ

পশ্চিম সাসেক্স থেকে লণ্ডনের পার্ক সার্কাস সোয়া একঘণ্টার পথ। কিন্তু প্রচণ্ড জ্যামে শহরের সে-এলাকায় পৌঁছুতে লাগল দু’ঘণ্টার বেশি। ওয়েবসাইট ঘেঁটে ম্যাণ্ডক অ্যাণ্ড কার্ক লিটারারি এজেন্সির অফিসের ঠিকানা খুঁজে নিল রানা। মন্থর গতি তুলে সেদিকে চলল ফক্স। এদিকে বার্নার ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতেই কে যেন রিসিভ করল রানার কল। দেরি না করে বলল রানা, ‘হ্যালো, লিলিয়ান!’

‘হ্যালো, আপনি কে বলুন তো?’ বিরক্ত কণ্ঠে বলল এক তরুণী। ‘আপনাকে তো চিনলাম না! আমার তো মনেই নেই আমার একটা বড় ভাই আছে! নাকি আমি স্বপ্নে তার গলার আওয়াজ শুনছি?’

‘গত ক’দিন বিপদে পড়ে ফোন করতে পারিনি,’ বলল রানা। ‘তবে ভুলে যাইনি তোমাকে।’

‘বলো তো তোমার কী হয়েছে?’ ভাই বিপদে আছে শুনে সিরিয়াস হয়ে গেছে লিলিয়ানা।

‘পরে বলব,’ বলল রানা, ‘এখন সময় নেই।’ কথা গুছিয়ে নিতে গিয়ে সময় নিল ও।

চুপ করে অপেক্ষা করছে লিলিয়ানা।

‘এখন কোথায় আছ, লিলি? তোমাদের এস্টেটে?’

‘না, রাজপ্রাসাদের মত এক বাড়ি কিনেছি জেনেভায়। এখন আমার ঘর গুছিয়ে নেয়ার জন্যে দরকারি কিছু শপিং করছি। একটু পর ওখানে ফিরব।’

‘তা হলে ওখানে আর যেয়ো না,’ বলল রানা। ‘এমন কোথাও যাও, যেখানে তোমাকে খুঁজে পাবে না কেউ। ব্যাখ্যা দেব না, কিন্তু এটা তোমার জানা খুব জরুরি, আমার জন্যে বিপদে আছ তুমি। যে-কোন সময়ে কিডন্যাপ হবে।’

‘তুমি নিজেও তো সেক্ষেত্রে বিপদে আছ, ‘ বলল লিলিয়ানা। ‘আমরা দুই ভাইবোন না হয় একসঙ্গে কোথাও লুকিয়ে পড়ি?’

‘তা আপাতত সম্ভব নয়। বরং বলো কোথায় যেতে চাও?’

‘নরম্যাণ্ডির বন্দরে আমার ইয়ট আছে। ওটাতেই আছে ক্রুরা। ব্যক্তিগত প্লেনে চেপে ওখানে চলে যাব। তারপর ইয়ট নিয়ে হারিয়ে যাব ভূমধ্য সাগরে। একবার ওদিকে গেলে খুঁজে পাবে না কেউ।

‘গুড।’

‘তোমার জন্যে মন ভীষণ খারাপ ছিল। গত কয়েক দিন কয়েকবার কল করেও ফোন বন্ধ পেয়েছি।’

‘জানি। এখন ওটা ব্যবহার করতে পারছি না।’

‘আমাকে বলবে, কারা তোমার ক্ষতি করতে চাইছে?’

‘পরে জানাব। তুমি রওনা হয়ে যাও। তোমার বাবা ছাড়া আর কাউকে কিছু বোলো না।’

‘কিন্তু একসপ্তাহের ভেতরে তুমি যোগাযোগ না করলে আমি ভাড়া করব মার্সেনারিদেরকে। তারা হয়তো তোমাকে সাহায্য করতে পারবে।’

‘দরকার হবে না,’ বলল রানা, ‘আশা করি আগামী সাতদিনের ভেতরে মিটে যাবে সব ঝামেলা।’

‘কথা দাও, পরে আমার সামনে বসে সব খুলে বলবে?’

‘ঠিক আছে। এখন সোজা গিয়ে ওঠো তোমার বিমানে।’

‘পুরো একসপ্তাহ পেলে, এরপর কিন্তু দেরি না করে মার্সেনারিদের ভাড়া করব।’

‘বেশ।’ ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল রানা।

‘আপনার একটা দুশ্চিন্তা কমল,’ বলল ফক্স। ‘দেখা যাক, এবার রক্তপিশাচগুলোকে শায়েস্তা করতে পারি কি না।’

ম্যাণ্ডক অ্যাণ্ড কার্ক লিটারারি এজেন্সির অফিসের কাছে পৌঁছে আবারও ফোন করল রানা। ওপ্রান্ত থেকে কথা বলে উঠল ভারী কণ্ঠের এক লোক। ‘হ্যালো? কাকে চান?’

‘আপনি কি রোহান কার্ক?’ জানতে চাইল রানা। ‘না, আমি পল ম্যাণ্ডক। স্যর, আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?’

‘মিস্টার হ্যারিসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করেছি।’

‘আপনি কে? আরও গম্ভীর হলো লোকটার গলা। ‘আপনি কি মিস্টার হ্যারিসের চাকরি করেন?’

রানা বুঝে গেল, এখন যদি বলে যে খুন হয়েছে স্টিভ হ্যারিস, তো শামুকের মত গুটিয়ে যাবেন ম্যাণ্ডক। হয়তো ফোন করবেন পুলিশে। সেক্ষেত্রে তাঁকে হাতের কাছে পাবে না ওরা। তার চেয়ে মিথ্যা বলা ভাল। ‘জী, আমি মিস্টার হ্যারিসের চাকরি করি।’

‘তো আপনার মনিবকে বলে দেবেন, আমাদের তরফ থেকে সব জানিয়ে দিয়েছেন আমার পার্টনার। ডাইনী, পিশাচ, শয়তান, ড্রাকুলা- এসব নিয়ে কাজ করি না আমরা। অসুস্থ মানসিকতার কোন লেখাও প্রকাশ করি না। আপনার মনিব যেন বই প্রকাশ করার জন্যে অন্য কাউকে বেছে নেন। আশা করি আমার কথা আপনি বুঝেছেন। ভাল থাকুন। দয়া করে দ্বিতীয়বার ফোন করে আমাদেরকে বিরক্ত করবেন না।’

রানা ‘কিন্তু…’ বলতে না বলতেই ঠাস্ করে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন পল ম্যাণ্ডক।

‘আপনি ভদ্রতার সঙ্গে কথা বললেও খেপে গেছে লোকটা,’ বলল ফক্স।

‘দরকার হলে তার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে সব জেনে নেব,’ তিক্ত স্বরে বলল রানা।

কাঁধ ঝাঁকাল ফক্স। ‘তাতে হয়তো কাজ হবে। আর কাজ না হলেও আপনাকে অ্যাকশনে দেখে আমার ভাল লাগবে।

বিকেল চারটের দিকে ম্যাণ্ডক অ্যাণ্ড কার্ক লিটারারি এজেন্সির অফিসের সামনে গাড়ি পার্ক করল ফক্স। দেরি না করে ভিক্টোরিয়ান ভবনে ঢুকল ওরা। লবিতে বড় এক বোর্ডে পেল পাঁচতলা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নানান অফিসের নাম। বইয়ের এজেন্সি ওপরতলায়। ক্যাঁচকোঁচ শব্দ তোলা পুরনো এক সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠল ওরা। সামনে বড় দরজা পেরোতেই পুরনো আমলের রিসেপশন এরিয়া। মস্ত ঘরের দু’দিকে টবে পাতাবাহার গাছ। নানান তাকে অসংখ্য বই। একধারে ডেস্ক। ওটার ওপরে প্লেক-এ লেখা: পল ম্যাণ্ডক। বামের ঘরের দরজার দিকে তাক করা আছে একটা তীরচিহ্ন। রোহান কার্কের নামের পর একই জিনিস আছে ডানের ঘরের দিকে। ডেস্কের পেছনে বসে আছেন মোটা এক মহিলা। বয়স হবে চল্লিশ। পাক ধরেছে বেণী করা চুলে। চুপচাপ কমপিউটারে কী যেন লিখছেন। রিসেপশনে রানা ও ফক্স প্রবেশ করতেই মুখ তুলে ওদেরকে দেখে মিষ্টি করে হাসলেন।

জবাবে রানাও হাসল। ‘গুড আফটারনুন, ম্যাম।’

‘চমৎকার দিন, তাই না?’ খুশিমনে বললেন মহিলা। রানা লক্ষ করল তাঁর গলায় সোনার চেইনে ঝুলছে ক্রুশ। ‘আমি এলেনা ম্যাণ্ডক, অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। আপনারা কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে এসেছেন, মিস্টা…’

‘আমি জন ব্যারন,’ বলল রানা। ‘আর ইনি আমার সহকারী মিস্টার হকিন্স। আমরা এসেছি মিস্টার রোহান কার্কের সঙ্গে দেখা করতে।’

‘আগে ফোনে যোগাযোগ করলে ভাল করতেন।’ একটু ম্লান হলো এলেনার হাসি। ‘দেখি আপনাদের জন্যে কিছু করতে পারি কি না। আপনারা কি দু’জন কো-অথোর? বই জমা দিতে চান?’

‘তা নয়, আমরা এসেছি দ্য হ্যাভোক ক্লাব নামের বইটির বিষয়ে আলাপ করতে,’ বলল রানা।

কথাটা শুনে আড়ষ্ট হলো মহিলার মুখ। তিনি কিছু বলার আগেই ডানের দরজা খুলে বেরোলেন চিকন এক দীর্ঘদেহী লোক। পরনে হাতকাটা কার্ডিগান। ভেতরে বোতাম খোলা শার্ট। ডানহাতে ধোঁয়া ওঠা কফির মগ। রানা জানতে চাইল, ‘আপনিই কি মিস্টার কার্ক?’

‘জী, আমিই রোহান কার্ক।’

নিজেদের নকল নাম জানাল রানা। ‘স্যর, আমরা কি কিছুক্ষণের জন্যে আপনার অফিসে বসতে পারি? খুবই জরুরি একটা বিষয়ে আলাপ করতে চাই।’

‘স্টিভ হ্যারিসের বইয়ের ব্যাপারে, ভুরু কুঁচকে বললেন এলেনা ম্যাণ্ডক।

হঠাৎ করেই গম্ভীর হলেন কার্ক। ‘স্টিভ হ্যারিস? কিন্তু…’

‘প্লিয, স্যর,’ দৃঢ়কণ্ঠে বলল রানা। হাতের ইশারায় দেখিয়ে দিল ভদ্রলোকের অফিসের দরজা।

কয়েক মুহূর্ত দ্বিধা করে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কার্ক। ‘বেশ, আসুন। তবে মনে হয় না কোন সাহায্যে আসব।’

তিনি অফিসে ঢুকতেই রানার পিছু নিয়ে ঘরে পা রাখল ফক্স। পেছনে ভিড়িয়ে দিল দরজা। ওখানেই রয়ে গেল। কার্ককে ভয় দেখাতে এটা করেছে ফক্স। ডেস্কের পেছনে নিজের চেয়ারে বসলেন ভদ্রলোক। রানা বুঝে গেল নার্ভাস হয়ে গেছেন তিনি

‘বুঝলাম, মনে চাপ তৈরি করতে আপনাদেরকে পাঠিয়ে দিয়েছেন মিস্টার হ্যারিস,’ বললেন কার্ক। ‘তবে তাতে লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না। এরই ভেতরে আমরা মানা করে দিয়েছি তাঁকে। তাঁর বই আমরা প্রকাশ করব না। অবশ্য একটা কথা না বলে পারছি না, আমার যদি উপায় থাকত, তো দ্বিধা না করেই তাঁর বই প্রকাশকের কাছে দিতাম। তবে…’

‘আসলে এ-বিষয়ে আলাপ করতে আমরা আসিনি, স্যর, বলল রানা। ‘আপনাদের এজেন্সি হ্যারিসের বই প্রকাশ করবে কি করবে না, সেটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। আমরা এসেছি তাঁর পাণ্ডুলিপির কপি হাতে পাওয়ার জন্যে। আমরা জানি, আপনি ওটা পড়ে দেখেছেন।

হঠাৎ করেই গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ পড়ল কার্কের মুখে। ‘কী যেন নাম বললেন আপনারা নিজেদের?’

‘ভয় পাবেন না, মিস্টার কার্ক। যাদের বিরুদ্ধে হ্যারিস তাঁর বইয়ে নানান তথ্য লিখেছেন, তাদের তরফ থেকে এখানে আসিনি আমরা।’

‘কিন্তু… তা হলে… আমি তো কিছুই বুঝছি না! আপনারা যদি ওই দুই পক্ষের কেউ না হন, তো কার হয়ে কাজ করছেন আপনারা?’

‘আমরা ফ্রিল্যান্সার,’ বলল ফক্স।

ফ্যাকাসে হলেন কার্ক। চোখে ভয়। ‘বলুন তো, আসলে কী জন্যে ওই বই দেখতে চাইছেন?’

ওটায় কী আছে সেটা আমরা জানি,’ বলল রানা। ‘তাই এখন জানতে চাই ওটার তথ্য আমাদের কাজে লাগবে কি না।’

‘কী ধরনের কাজে লাগবে?’ অবাক হয়ে বললেন কার্ক।

তখনই ওরা শুনল রিসেপশন এরিয়ায় গলার আওয়াজ। খেপে গেছেন এক ভদ্রলোক। চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘কী? ওদেরকে ঢুকতে দিয়েছ তুমি!’

তিন সেকেণ্ড পর দড়াম করে খুলে গেল কার্কের অফিসের দরজা। ভেতরে ঢুকলেন মধ্যবয়স্ক এক লোক। তাঁকে মারমুখী দেখে একপাশে সরল ফক্স। বেঁটে ও মোটা লোক পল ম্যাণ্ডক। রানা বুঝে গেল, ইনিই এজেন্সির সিনিয়র পার্টনার। একটু আগে তাঁর সঙ্গেই কথা হয়েছে ওর।

রেগে গেছেন তিনি। দুই গাল লালচে। রানাকে বললেন, ‘আপনি আবারও বিরক্ত করছেন? আমি কিন্তু আগেই বলেছি, আমাদেরকে বিরক্ত করবেন না! আমরা মরে গেলেও হ্যারিসের বই এই এজেন্সি থেকে বের করব না!’

কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কার্ক, কিন্তু হাতের ঝাপটা মেরে তাঁকে থামিয়ে দিলেন ম্যাণ্ডক। ‘যা বলার আমাকে বলতে দাও, রোহান!’

সময় হয়েছে বলার, ভাবল রানা। চট করে তাকাল ফক্সের দিকে। মাথা দোলাল প্রাক্তন সৈনিক। রানা বলল, ‘হ্যারিস খুন হয়েছেন নিজের বাড়িতে। আর সেজন্যেই আমরা জানতে চাই, কীসের ভেতরে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অনেক মানুষের জীবন নির্ভর করছে তাঁর ওই বইয়ের প্রকাশ বা না প্রকাশের ওপরে। তাই আমরা চাই ওই পাণ্ডুলিপি একবার পড়ে দেখতে।’

রানার কথা শুনে হাঁ হয়ে গেছে কার্কের মুখ। লালচে থেকে ফ্যাকাসে হলো ম্যাণ্ডকের চেহারা। কয়েক সেকেণ্ড পর নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন, ‘খুন হয়ে গেছেন? কী করে মারা গেলেন তিনি?’

‘খবরের কাগজ থেকে জেনে নেবেন,’ বলল রানা। ‘অফিশিয়ালি বলা হবে: বাড়িতে ডাকাতির সময় খুন হন তিনি। কিন্তু কথাগুলো মিথ্যা। সত্যি কথা হচ্ছে, বইটা লিখেছেন বলে খুন করা হয়েছে তাঁকে। আমার ব্যক্তিগত মতামত জানতে চাইলে বলব: বহু আগেই তাঁর মাথায় একটা বুলেট গেঁথে দেয়া উচিত ছিল।’

ভীষণ ঘাবড়ে গেছেন কার্ক। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারলে খুশি হন। শুকনো গলায় বললেন, ‘আপনারা আসলে কারা?’

‘আমরা আপনাদের সত্যিকারের বন্ধু,’ বলল রানা। ‘এই এজেন্সিতে হ্যারিসের বই আছে সেটা কেউ জেনে গেলে, ধরে নিন যে-কোন সময়ে খুন হবেন আপনারা। তবে সেটা ঠেকাতে পারব আমরা। যদিও সেজন্যে চাই জরুরি কিছু নাম ও তথ্য। সেগুলো এখন আছে আপনাদের কাছে।’

‘হ্যারিস লিখেছেন ব্রিটেনে শয়তান-পূজারীর অস্তিত্ব আছে। তবে আপনারা সেই বই নিজের চোখে দেখেননি,’ বলল ম্যাণ্ডক। ‘তা হলে কেন ধরে নিচ্ছেন তেমন লোক এ দেশে আছে?’

‘আমরা জেনেবুঝেই কথা বলছি,’ বলল রানা। ‘মিথ্যা কোন তথ্য দেননি হ্যারিস। কল্পনায় ভর করে কিছু লিখতে যাননি। যা লিখেছেন, সবই ছিল সত্যি।’

‘তেমন বাস্তব কোন প্রমাণ আপনারা দেখাতে পারবেন?’ জানতে চাইলেন কার্ক।

‘ভিডিয়ো দেখাবার মাধ্যমে প্রমাণ দিতে পারব, কয়েক রাত আগে বলি দেয়া হয়েছে এক মেয়েকে,’ বলল ফক্স। ‘তাতে কি আপনাদের মনে বিশ্বাস জন্মাবে?’

‘হায়, ঈশ্বর!’ বিড়বিড় করলেন কার্ক।

‘হায়, যিশু! আমি জানতাম, এসবে আমাদের নাক গলানো একদম ঠিক হচ্ছে না!’ রেগে গিয়ে পার্টনারের দিকে তাকালেন ম্যাণ্ডক। ‘সব দোষ আসলে তোমার, রোহান!’

‘বইটা আমাদেরকে দেখাবেন?’ জানতে চাইল রানা।

‘ওটা আর আমাদের কাছে নেই,’ মাথা নাড়লেন কার্ক। ‘সত্যি বলতে কখনও ছিল না। মাত্র ছোট একটা অংশ পাঠিয়ে দিয়েছিলেন হ্যারিস। ওটা ছিল বইয়ের পাঁচভাগের একভাগ।’

‘পাঁচভাগের একভাগ?’ ভুরু কুঁচকে তাঁকে দেখল ফক্স।

‘বহু লেখক এমনটা করে,’ বললেন কার্ক। ‘কয়েক পাতা পড়েই আমরা বলে দিই, ওটা প্রকাশের উপযুক্ত কি না। তাই হ্যারিসের কাছে এক শ’ পৃষ্ঠা চেয়ে নিয়েছিলাম।’

‘ওটা ছিল একটা ফ্ল্যাশ ড্রাইভে,’ বললেন ম্যাণ্ডক। ‘বইটা নিয়ে আমরা কাজ করব না জানাবার পর ফেলে দিই ফ্ল্যাশ ড্রাইভ। চাইলেও ওটা আর আপনাদেরকে দেখাতে পারব না।’

কার্কের দিকে তাকাল রানা। ‘আপনি ভয়েস মেসেজে বলেছেন, একদল লোকের বিরুদ্ধে ভয়ানক সব অভিযোগ তোলা হয়েছে। তা হলে কি ধরে নেব যে অনেকের নাম এসেছে সেই বইয়ে?’

‘বইয়ের চরিত্রের ব্যাপারে আমরা দায় নেব না বলেই ছদ্মনাম ব্যবহার করেন হ্যারিস,’ বললেন ম্যাণ্ডক। ‘কারও সত্যিকারের নাম উল্লেখ করেননি। আশা করি বুঝতে পারছেন, চাইলেও আমরা আপনাদেরকে কোন ধরনের সহায়তা দিতে পারব না।’

ভদ্রলোক নার্ভাস। বারবার রানার চোখ থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন চোখ। এটা খেয়াল করেছে রানা। ওর ধারণা হলো, মিথ্যা বলছেন তিনি। ফক্সও একই কথা ভাবছে।

এ-মুহূর্তে আমাদের কি কিছু করার আছে? ভাবল রানা। লালমুখো মোটা ম্যাণ্ডকের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দিলে, তার পেট থেকে কিছু বেরোবে? মনে তো হয় না! ওদিকে ভয় পেয়ে হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মরবেন লোকটা। তাঁর খুনের দায় এসে চাপবে ওদের ঘাড়ে।

অবশ্য অন্যকিছু করা যায়। আপাতত বিদায় নেবে ওরা। অফিস বন্ধ হওয়ার পর গোপনে এসে ঢুকবে এখানে। খুঁজে নেবে হ্যারিসের পাণ্ডুলিপি। তাতেও আছে বড় ঝুঁকি। অবশ্য দ্বিতীয় পথ অপেক্ষাকৃত ভাল।

কাঁধ ঝাঁকাল রানা। ‘বেশ, বইটা যখন পাব না, তো আর কিছুই করার নেই। আপনাদের সময় নষ্ট করলাম বলে মাফ করে দেবেন।’

‘না-না, ঠিক আছে,’ ভদ্রতা করলেন ম্যাণ্ডক। রানা দেখল বিশাল এক স্বস্তির শ্বাস ফেললেন তিনি।

‘চলো, যাওয়া যাক,’ ফক্সকে বলল রানা।

কার্কের অফিস থেকে বেরিয়ে রিসেপশনে কাউকে দেখল না ওরা। আবারও ক্যাঁচকোঁচ শব্দ তোলা সিঁড়ি বেয়ে নেমে এল। পুরনো দালান থেকে বেরোতেই ওদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিকেলের সোনালি রোদ।

‘বস্, আপনি জানেন, ডাহা মিথ্যা বলেছে ওরা, তা-ই না?’ বলল ফক্স। ‘ওদের কাছে বইটা আছে। আমরা তো চলে এলাম। এখন যদি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ থেকে সব মুছে ফেলে?’

মাথা নাড়ল রানা। ‘মনে হচ্ছে বইটা নিজেদের কাছে রেখেছে। ওটা তাদের কাছে নেই, সেটা বিশ্বাস করবে না কেউ। যে-কোন সময়ে হাজির হবে লিয়োনেলের লোক। তাই বিপদ এড়াতে বইটাকে তারা রেখেছে তুরুপের তাস হিসেবে।’

‘তাই যদি করে, তো ধরে নিন খুন হবে এরা।’

‘ম্যাণ্ডক বা কার্ক আমাদের মত নন, অন্য জগতের মানুষ। জানেন না কতবড় বিপদে আছেন।’

‘এবার কী, বস্?’ বলল প্রাক্তন সৈনিক। ‘ছুটির পর হানা দেবেন ওদের অফিসে?’

‘আপাতত কোথাও থেমে লাঞ্চ সেরে নেব, বলল রানা। ‘তারপর রাতে নামব বই উদ্ধারে।’

গাড়ির কাছে পৌঁছে গেছে ওরা, এমনসময় শুনল ছুটন্ত পদশব্দ। পরক্ষণে এল মহিলা-কণ্ঠ: ‘মিস্টার ব্যারন! মিস্টার হকিন্স! প্লিয! এক মিনিট!’

ভিক্টোরিয়ান বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভারী শরীরে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসছেন মিসেস ম্যাণ্ডক। হাঁফিয়ে উঠেছেন। হাঁসফাঁস করতে করতে বললেন, ‘দয়া করে একটু অপেক্ষা করুন!’

‘আপনার জন্যে কী করতে পারি, ম্যাম?’ জানতে চাইল রানা।

‘না, আমার জন্যে কিছু করতে হবে না। তবে আমি হয়তো আপনাদেরকে সাহায্য করতে পারব।’

বারবার পাঁচতলার জানালা দেখছেন মিসেস ম্যাণ্ডক। রানার মনে হলো, তিনি ভয় পাচ্ছেন তাঁকে দেখে ফেলবেন তাঁর স্বামী। ‘আপনাদেরকে কিছু বলার আগে একটা কথা,’ বললেন তিনি। ‘আগে আমাকে বলবেন কেন আপনারা এসবে জড়িয়ে গেছেন।’

মহিলার চোখে কোন কপটতা দেখল না রানা। তাই নরম সুরে বলল, ‘মিসেস ম্যাণ্ডক, একদল নরপশু যা-খুশি করছে, তাই তাদেরকে ঠেকাতে চাই। আর সেজন্যেই এসবে জড়িয়ে গেছি। আপনি হয়তো সেই পাণ্ডুলিপিটা পড়েছেন, তাই না?’

লালচে হলো মহিলার মুখ। অজান্তে ডানহাতে ধরলেন বুকে ঝুলন্ত ক্রুশ। হয়তো ভাবছেন, আত্মিক সহায়তা পাবেন ওটা থেকে। ‘হ্যাঁ, পড়েছি!’ একবার শিউরে উঠলেন। ‘বীভৎস বর্ণনা! বেশিরভাগ মানুষ জানেও না কত ভয়ঙ্কর সব অপরাধ করছে এরা। আমার স্বামী বা রোহানের কোন ধারণা নেই তাদের সম্পর্কে। ওদের কাছে হ্যাভোক ক্লাব আসলে সাধারণ একটা বই।’

‘তাঁরা কি সত্যিই ফ্ল্যাশ ড্রাইভ থেকে ফাইল ডিলিট করে দিয়েছেন?’

মাথা দোলালেন মহিলা। ‘সত্যিই ওটা আমাদের এজেন্সিতে আর নেই।’

রানা বলল, ‘বলুন তো, দ্য হ্যাভোক ক্লাব আসলে কী?’

‘গোপন অশুভ ধর্মের সমিতি। বহু পুরনো বিপজ্জনক কাল্ট ওটা।’

‘আপনি মনে করেন যে ওটার অস্তিত্ব আছে?’

‘ঈশ্বর জানেন অবশ্যই ওটা আছে।’ কী যেন ভেবে নিয়ে বললেন এলেনা, ‘আপনাদের নাম তো ব্যারন বা হকিন্স নয়?’

‘আমার নাম মাসুদ রানা। আর ওর নাম উইলবার ফক্স।’

‘আপনারা গোয়েন্দা?’

‘আগে মিলিটারিতে ছিলাম,’ বলল রানা।

হাসলেন এলেনা। ‘জানতাম। চলনে-বলনে বোঝা যায় যে আপনারা আগে মিলিটারিতে ছিলেন।

‘কী করে বুঝলেন?’ জানতে চাইল ফক্স।

‘আমার বাবা ছিলেন প্যারাশুট রেজিমেন্টের সৈনিক,’ গর্বের সঙ্গে বললেন এলেনা। ‘সার্জেন্ট। থার্ড ব্যাটেলিয়ন। তাঁকে আর তাঁর মিলিটারির বন্ধুদেরকে দেখেছি ছোটবেলা থেকে। তখনই বুঝেছি, তাঁরা সাধারণ মানুষের মত নন।’

আন্তরিকতা বাড়াবার জন্যে বলল ফক্স, ‘মিস্টার রানা আর আমি ট্রেইনিং নিয়েছি এসএএস ফোর্স থেকে।’

‘আপনারা আমার স্বামীকে বলেছেন, বীভৎস এক খুনের ভিডিয়ো আছে আপনাদের হাতে। এ-কথা কি সত্যি?’

‘নিজের চোখে দেখেছি এক মেয়েকে খুন হতে,’ বলল ফক্স। ‘তখন ভিডিয়ো করেছি গোটা ব্যাপারটা।’

ক্রুশ খামচে ধরে বিড়বিড় করে বাইবেলের শ্লোক পড়লেন এলেনা। ‘এখন যদি তাদের সঙ্গে আপনাদের দেখা হয়, তখন কী করবেন?

‘খুনিগুলোর যা প্রাপ্য, সেটা মিটিয়ে দেব,’ বলল রানা।

মাথা দোলালেন মহিলা। চট্ করে দেখলেন পাঁচতলার জানালা। ভাবছেন ওপর থেকে তাঁকে দেখে ফেলবেন তাঁর স্বামী।

‘আপনি চাইলে কোথাও গিয়ে আলাপ করা যেতে পারে, ‘ বলল রানা। ‘কোন কফি শপ বা রেস্টুরেন্ট?’

‘না, আমাকে এখনই ফিরতে হবে, নইলে ওরা জেনে যাবে অফিসে আমি নেই। অবশ্য একজনের সঙ্গে আপনাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেব। সে এসব ব্যাপারে অনেক কিছু জানে।’

‘সে কে?’ বলল রানা। ‘তা হলে তার ফোন নম্বরটা দিন।’

মাথা নাড়লেন মহিলা। ‘চাইলেও তার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। বরং আপনাদের ফোন নম্বর দিন। সে রাজি হলে নিজে থেকেই যোগাযোগ করবে। কোথাও গিয়ে কারও সঙ্গে দেখা করে না। তাই আপনাদেরকেই যেতে হবে তার ওখানে।’

‘আমাদের হাতে সময় খুব কম, ম্যাম,’ বলল রানা।

‘বুঝতে পেরেছি, মস্ত বিপদে আছেন আপনারা। কিন্তু এ- বিষয়ে আপনাদেরকে কোনভাবে সাহায্য করতে পারব না। যার কথা বলছি, নিজেও বিপদের ভয়ে খুব সতর্ক থাকে।’

‘কিন্তু আপনাকে বিশ্বাস করে সে।’

‘তা করে,’ বললেন এলেনা। ‘শত শত বছরের শয়তান- পূজার গোপন সব ঘটনা ওর চেয়ে বেশি জানে না কেউ। হয়তো খুলে বলবে কত গভীরে প্রোথিত থঅথের কাল্টের শেকড়। আর একবার সেটা বুঝলে পেছাবার উপায় থাকবে না আপনাদের।’

‘আমরা সত্যিই বিপদে আছি,’ বলল রানা। ‘তবে এটাও ঠিক, জানতে চাই আপনার পরিচিত লোকটা দ্য হ্যাভোক ক্লাব সম্পর্কে কী বলেন।’ বার্নার ফোনের নম্বর মহিলাকে জানাল ও।

পেন্সিল দিয়ে ছোট এক কাগজে সংখ্যা টুকলেন এলেনা, তারপর বললেন, ‘আশা করি সে যোগাযোগ করবে।’

‘কখন যোগাযোগ করবে?’ জানতে চাইল রানা।

‘আগে আমি ওর সঙ্গে কথা বলব,’ চট্‌ করে ওপরতলার জানালা দেখলেন এলেনা। ঘুরে ব্যস্ত পায়ে গিয়ে ঢুকলেন ভিক্টোরিয়ান ভবনে।

‘তো এবার?’ রানার দিকে তাকাল ফক্স।

‘রাত নামার আগে আর কিছু করার নেই। খিদে লাগেনি তোমার?’

‘কেউ ধরে দিলে আস্ত শয়তান-পূজারী রোস্ট করে খেয়ে নিতে পারি।’

গাড়িতে উঠল ওরা। পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে কিছুটা যেতেই সামনে পড়ল সারাদিন খোলা থাকে এমন এক টার্কিশ কাবাবের হোটেল। বিকেল বলে হোটেলে খদ্দের নেই। পেছনের কোণের টেবিলে গিয়ে বসল ওরা। ওয়েটার আসতেই অর্ডার দিল রানা ও ফক্স। রানার জন্যে ভেড়ার কাবাব, রুটি, সালাদ, আর ফক্সের জন্যে গ্রিল চিকেন। যেহেতু রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স নেই, তাই সফট ড্রিঙ্ক ছাড়া কড়া কোন পানীয় বিক্রি করে না। দু’জনের জন্যে দুটো কোকাকোলা নিল রানা।

‘মহিলার কথা থেকে কী বুঝলেন, বস্?’ গ্রিল করা মুরগি আসতেই ওটার ওপরে মেয়োনেস ঢালল ফক্স। একটুকরো মাংস মুখে ফেলে চিবুতে শুরু করে বলল, ‘সত্যিই কিছু জানেন, নাকি খামোকা সময় নষ্ট করছেন আমাদের?’

‘দুশ্চিন্তায় ছিলেন,’ বলল রানা। ‘বইটা পড়েছেন সেটা গোপন করেছেন স্বামীর কাছ থেকে। ম্যাগুক আর রোহান ভাবছেন কীভাবে বাঁচাবেন নিজেদের চামড়া। কিন্তু ওই মহিলা তাঁদের মত নন।

‘আপনি কি ভাবছেন, দ্য হ্যাভোক ক্লাব বইটা ম্যাণ্ডক আর রোহান ডিলিট করার সময় চুপচাপ সেটা দেখেছেন এলেনা?’

‘আমার ধারণা, গোপনে বইটার কপি করেছেন তিনি। ওটা কোনভাবেই ডিলিট হতে দেননি।’

‘সেক্ষেত্রে আমরা কেন চাপ দিলাম না মহিলাকে?’

‘কারণ, রহস্যময় লোকটার কাছে বইটা দিয়েছেন তিনি,’ বলল রানা। ‘এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলবে সে।’

‘যদি ফোন করে আর কী!’

‘করবে।’

আঠারো মিনিট পর বেজে উঠল রানার ফোন। স্পিকার চালু করে কল রিসিভ করল রানা। এখন প্রতিটা কথা শুনবে ফক্স। ওরা ছাড়া রেস্টুরেন্টে অন্য খদ্দের নেই। দূরে কাবাব মেশিন সাফ করছে সাদা অ্যাপ্রন পরা কর্মচারী। আরেকজন প্লাস্টিকের কণ্টেইনারে কুচি করে জড় করছে সালাদ ও পেঁয়াজ। ধারেকাছে এমন কেউ নেই যে ওদের কথা শুনবে।

‘আমি কি মিস্টার রানার সঙ্গে কথা বলছি?’ ওদিক থেকে এল কাঁপা কাঁপা পুরুষকণ্ঠ। ম্যাণ্ডকের মত ভারী নয় গলা।

‘আমি মাসুদ রানা। আপনি কে?’

‘ববি জনসন বলছি।’

রানার মনে হলো মিথ্যা কথা বলছে লোকটা। এলেনা ম্যাণ্ডকের সঙ্গে তার সম্পর্ক কী, আপাতত বোঝা যাচ্ছে না।

আবারও বলল লোকটা, ‘আমাকে বলা হয়েছে, দ্য হ্যাভোক ক্লাব সম্পর্কে কিছু তথ্য জানতে চান আপনারা। তো সেটাই যদি হয়, তা হলে আমার কাছ থেকে বহুকিছুই জেনে নিতে পারবেন।’

‘আমরা জানতে আগ্রহী,’ বলল রানা। ‘যদিও জানি না সেজন্যে আপনাকে টাকা দিতে হবে কি না।

‘সফট্ওয়্যার প্রোগ্রাম বিক্রি করে আমি পেয়েছি হাজার কোটি টাকা, তাই আরও টাকা আমার চাই না। আমি চাই সবাই যেন জানতে পারে আসল সত্যিটা।’

সেক্ষেত্রে আমাদের কাছ থেকে আপনি আসলে কী চান?’ জানতে চাইল রানা।

‘আমাকে বলা হয়েছে, আপনাদের কাছে একটা ভিডিয়ো আছে। ওটা দেখতে চাই। এ থেকে হয়তো বহুকিছুই বুঝে নেব। আজ পর্যন্ত তাদের অশুভ অনুষ্ঠানের কোন ভিডিয়ো রেকর্ড করতে পারেনি কেউ।’ উত্তেজনায় কাঁপছে তার গলা।

‘আমার সহকর্মীর করা ভিডিয়োটা দেখাতে পারি,’ বলল রানা। ‘বদলে আশা করব আমাদেরকে বলবেন এরা কারা। এ-ছাড়া, আমাদের কাছে আছে এনক্রিপ করা একটা বই। আপনি ওটা খুলতে পারলে অনেক কিছুই জেনে যাব।’

‘এরই ভেতর ওটা পড়েছি,’ বলল জনসন।

রানা বুঝে গেল, ওর ধারণা ঠিক- ম্যাণ্ডক ও রোহান বইটা ডিলিট করার আগেই এ-লোকের কাছে ওটা পাঠিয়ে দিয়েছেন এলেনা।

‘আপনারা চাইলে বইটা পড়তে পারেন। বহুকিছুই জানতে পারবেন।’

‘কোথায় দেখা হবে?’ জানতে চাইল রানা। ‘আপনি কি এখন লণ্ডনে আছেন?’

‘আর কখনও নারকীয় সেই শহরে যেতে চাই না,’ বলল জনসন। ‘তা ছাড়া, কোথাও যেতে আমার ভাল লাগে না। যে দ্বীপে আছি, এখানেও বেশিরভাগ সময় কাউকে আমার বাড়িতে ঢুকতে দিই না। কিন্তু আপনাদের ব্যাপারটা আলাদা।’

‘কোন্ দ্বীপের কথা বলছেন?’ বলল রানা। ভাবছে, ব্যাটা আফ্রিকা বা বারমুডার কোন দ্বীপের কথা বলবে না তো!

‘আইল অভ ম্যান।’

মনে মনে হিসাব কষল রানা। আইরিশ সাগরের দ্বীপ ওটা। লণ্ডন থেকে তিন শ’ মাইলেরও বেশি দূরে। ড্রাইভ করে গেলে লাগবে কমপক্ষে আটঘণ্টা। বিমানে করে যেতে পারবে মাত্র একঘণ্টায়। ‘লণ্ডন থেকে বহুদূরে,’ বলল রানা।

‘মনে হয় না কষ্ট করে এলে আপনাদেরকে ঠকতে হবে,’ বলল জনসন।

কয়েক মুহূর্ত ভেবে নিয়ে বলল রানা, ‘আমরা এক্ষুণি রওনা হচ্ছি।’

সকল অধ্যায়

১. কিলিং মিশন – ১
২. কিলিং মিশন – ২
৩. কিলিং মিশন – ৩
৪. কিলিং মিশন – ৪
৫. কিলিং মিশন – ৫
৬. কিলিং মিশন – ৬
৭. কিলিং মিশন – ৭
৮. কিলিং মিশন – ৮
৯. কিলিং মিশন – ৯
১০. কিলিং মিশন – ১০
১১. কিলিং মিশন – ১১
১২. কিলিং মিশন – ১২
১৩. কিলিং মিশন – ১৩
১৪. কিলিং মিশন – ১৪
১৫. কিলিং মিশন – ১৫
১৬. কিলিং মিশন – ১৬
১৭. কিলিং মিশন – ১৭
১৮. কিলিং মিশন – ১৮
১৯. কিলিং মিশন – ১৯
২০. কিলিং মিশন – ২০
২১. কিলিং মিশন – ২১
২২. কিলিং মিশন – ২২
২৩. কিলিং মিশন – ২৩
২৪. কিলিং মিশন – ২৪
২৫. কিলিং মিশন – ২৫
২৬. কিলিং মিশন – ২৬
২৭. কিলিং মিশন – ২৭
২৮. কিলিং মিশন – ২৮
২৯. কিলিং মিশন – ২৯
৩০. কিলিং মিশন – ৩০
৩১. কিলিং মিশন – ৩১
৩২. কিলিং মিশন – ৩২
৩৩. কিলিং মিশন – ৩৩
৩৪. কিলিং মিশন – ৩৪
৩৫. কিলিং মিশন – ৩৫
৩৬. কিলিং মিশন – ৩৬
৩৭. কিলিং মিশন – ৩৭
৩৮. কিলিং মিশন – ৩৮
৩৯. কিলিং মিশন – ৩৯
৪০. কিলিং মিশন – ৪০
৪১. কিলিং মিশন – ৪১
৪২. কিলিং মিশন – ৪২
৪৩. কিলিং মিশন – ৪৩
৪৪. কিলিং মিশন – ৪৪
৪৫. কিলিং মিশন – ৪৫
৪৬. কিলিং মিশন – ৪৬
৪৭. কিলিং মিশন – ৪৭
৪৮. কিলিং মিশন – ৪৮
৪৯. কিলিং মিশন – ৪৯
৫০. কিলিং মিশন – ৫০
৫১. কিলিং মিশন – ৫১
৫২. কিলিং মিশন – ৫২
৫৩. কিলিং মিশন – ৫৩
৫৪. কিলিং মিশন – ৫৪

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন