স্বর্ণলিপ্সা – ৩৯

কাজী আনোয়ার হোসেন

ঊনচল্লিশ

কানে মোবাইল ফোন ঠেকাতেই ভারী, ঝনঝনে অভিজাত এক কণ্ঠ শুনল রানা। গলা আর্কটিক সাগরের তলস্রোতের মত শীতল হলেও সেটার মাঝে ভাসছে দুশ্চিন্তার বরফের মস্ত সব চাঁই। ‘আমি কি ধরে নেব কথা বলছি মিস্টার মাসুদ রানার সাথে? নাকি আপনাকে সম্বোধন করব মেজর বলে?’

‘আমি কি ধরে নেব কথা বলছি মিস্টার রন স্টুয়ার্টের সঙ্গে?’ পাল্টা জানতে চাইল রানা।

‘যাক, শেষমেশ আমাদের পরিচয় হলো। আশা করি এই আলাপের মাধ্যমে সম্পর্কটাকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।’

‘ব্যবসায়িক আলাপে ভদ্রতা বজায় রাখতে হয়, তাই কথা হয়ে ওঠে মধুর,’ বলল রানা। ‘কারও সঙ্গে ব্যবসা করতে তাকে পছন্দ করতে হবে, এমন তো নয়।’

‘তা হলে কি ধরে নেব ঠিক কথাই শুনেছি? আপনি আমার সঙ্গে কোনও একটা বিষয়ে ব্যবসা করতে চান।’

‘একজনের কাছে দামি কিছু থাকলে, সেটা অন্য কেউ চাইলে নিয়ম হচ্ছে দুই পক্ষকে চুক্তির মাধ্যমে এগোতে হবে। সেটা সবার জন্যেই মঙ্গলময়। তার উল্টো হচ্ছে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া। আমার মনে হয় না আপনি বা আমি সেটা চাই।’

‘আপনি নিশ্চয়ই জানেন, আপাতত আমার সামনে বেশ কিছু পথ খোলা আছে।’

‘যুদ্ধে কেউ সবদিক থেকে প্রস্তুত থাকে না,’ বলল রানা। ‘আর সেজন্যেই ভাল একটা পথ আপনার সামনে তুলে ধরতে চাই। সেক্ষেত্রে আহত বা নিহত না হয়েই নিশ্চিন্তে পার করতে পারবেন বাকি জীবন।’

‘তো বলতে চাইছেন আমার চাই এমন কিছু আপনার কাছে আছে?’ সহজ সুরে বলতে চাইলেও স্টুয়ার্টের গলায় প্রকাশ পেল উৎকণ্ঠা।

‘দুনিয়ার আর কিছু কখনও এত বেশি করে চাননি,’ বলল রানা। ‘প্রাণের মায়াও ছেড়ে দেবেন ওগুলো পাবার জন্যে।’

‘আপনি আমার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছেন। তো, বলুন, আসলে আপনার কাছে কী আছে?’

‘মুখের কথায় নয়, নিজের চোখে সব দেখবেন,’ বলল রানা। ‘আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস দিন। ছবি পাঠিয়ে দেব।’

গড়গড় করে নিজের ই-মেইল ঠিকানা জানাল স্টুয়ার্ট। নিজের স্মার্টফোনে সোনার কয়েনের ছবি বের করল রানা। বিলিয়নেয়ারের ঠিকানায় পাঠিয়ে দিল ওটা। পেরোল পুরো একমিনিট, তারপর ওদিক থেকে এল দুশ্চিন্তাভরা গলা: ‘দেখলাম।’

‘আপনি হয়তো এ বিষয়ে আরও জানতে চাইতে পারেন। তাই বলছি, স্যাম্পল হিসেবে আপাতত আমার কাছে আছে মাত্র গোটা পঞ্চাশেক। তবে যেখানে পেয়েছি, ওখানে ছিল হাজার হাজার।’

‘কত হাজার?’ বেসুরো কণ্ঠে জানতে চাইল রন স্টুয়ার্ট।

‘চুক্তি হলে নিজের চোখেই দেখবেন, গুনে নেবেন।’ শুকনো হাসল রানা। ‘শুধু বলতে পারি, সোনার কয়েনে ভরে উঠবে মাঝারি আকারের দুটো ভ্যান। অবশ্য সত্যিই ওই কাজ করলে টনকে টন ওজনে ভাঙবে গাড়িদুটোর সাসপেনশন। সব খুঁড়ে তুলতে গিয়ে লেগেছে বেশ কয়েক সপ্তাহ। তার চেয়েও বেশি সময় লেগেছে সব গুনে নিয়ে নিরাপদ ওয়্যারহাউসে তুলতে।’

‘কোথায় পেয়েছেন?’ জানতে তর সইছে না স্টুয়ার্টের। ‘আপনার নাকের ডগায় ছিল, স্টুয়ার্ট। এক শ’ বছরেরও বেশি ধরে লক আরডাইকের তীরে পাইন জঙ্গলে পড়ে ছিল। অবশ্য ওগুলো কে ওখানে রেখেছে, বা কোথা থেকে এল, তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমার যদি উপায় থাকত, গাদাগাদা কয়েন গলিয়ে গোল্ড বার তৈরি করে বিক্রি করতাম।’

‘সেক্ষেত্রে মুহূর্তে অর্ধেকে নেমে যাবে ওগুলোর মূল্য। ওগুলো শুধু সোনা নয়, ওর ঐতিহাসিক মূল্যও অনেক।’

‘আর যাই হোক, ইতিহাসে আমার কোনও আগ্রহ নেই, স্টুয়ার্ট। ওগুলো এমন বাতিল কারেন্সি, যেটা আর বাজারে চলে না। যদিও এটা জানি, দুনিয়ার বহু মানুষ ওগুলো পাওয়ার জন্যে মরতেও রাজি হবে। আপনিও তাদের একজন। তাই প্রথমে আপনাকেই প্রস্তাব দিচ্ছি। এখন কী করবেন সেটা স্থির করবেন আপনিই। উপযুক্ত টাকার প্রস্তাব পেলে আমি হয়তো বিক্রি করতে রাজি হয়ে যাব।’

‘মিথ্যা বললে কিন্তু শেষে পস্তাবেন, রানা,’ হুঁশিয়ার করল স্টুয়ার্ট।

‘আমি মিথ্যা বলার মানুষ নই,’ জবাবে বলল রানা। ‘আমার কথায় বিশ্বাস করতে হবে না, নিজের চোখেই দেখতে পাবেন মোহরগুলো।’

‘তো কথা শুরু করা যাক। কীভাবে চুক্তি হবে?’

‘আপনি কি এখন আপনার বাড়িতে?’

‘আমার অনেকগুলো বাড়ি আছে,’ গর্বের সঙ্গে বলল স্টুয়ার্ট। ‘আপাতত আছি স্কটিশ বাড়িটাতে।’

‘তা হলে আমার কথামত কাজ করুন,’ বলল রানা। ‘পাহাড়ি দুর্গ থেকে নেমে এসে কয়েক ঘণ্টার জন্যে দেখা দিন আমাদের মত গরীব মানুষকে। আপনাকে ড্রাইভ করে আসতে হবে কিনলোকার্ড গ্রামে। আমার মনে হয় ওটার নাম আপনি আগেও শুনেছেন।’

‘আপনি কি এখন ওখানেই আছেন?’

‘আমি কোথায় আছি সেটা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না,’ বলল রানা। ‘দুপুর একটায় গ্রামের পাবে পৌছে যাব। আপনার মত দুর্গন্ধে ভরা পচে যাওয়া শামুকের সঙ্গে দেখা করার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার ছিল না। তবে ব্যবসা বলে কথা। তাই মানুষ চলাচল আছে এমন জায়গায় দেখা করব। যাতে ঝামেলায় না ফেলতে পারে আপনার খুনির দল।’

শুকনো হাসল স্টুয়ার্ট। ‘ও? আপনি খুব সতর্ক লোক, তাই না, রানা?’

‘ঠিকই ধরেছেন। এবং সেজন্যেই সামান্যতম বিপদ বা ফাঁদের গন্ধ পেলে সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করব চুক্তি। সেক্ষেত্রে বাকি জীবনেও আর একটা কয়েনও দেখতে পাবেন না। মাথায় রাখবেন, নতুন ক্রেতা খুঁজে নিতে সমস্যা হবে না আমার। এরই ভেতর আগ্রহ দেখিয়েছে বেশ কয়েকজন।’

‘তাই? তারা কারা? সংগ্রাহকদের প্রায় সবাইকেই আমি চিনি।’

‘কারা আগ্রহ দেখাচ্ছে, তা নিয়ে আপনাকে মাথা ঘামাতে হবে না। খামোকা আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না, স্টুয়ার্ট। আপনি কিনলোকার্ডের পাবে আসছেন, নাকি ফোন রেখে দেব?

‘ঠিক আছে, আমি রাজি। তা হলে সেরে নিন আলাপ।’

‘বুঝতেই পারছেন, আপনি আসবেন একা। যদি দেখি ঠিক সময়ে হাজির হননি, বাতিল করব চুক্তি। কোন্ পথে আসছেন, আগেই আমাকে জানিয়ে দেবে আমার লোক। ভুলেও কোনও ভুল করবেন না। পাবের সামনে গাড়ি থেকে নেমে পড়বেন। গাড়িতে যেন অন্য কেউ না থাকে। বার-এ গিয়ে এক পাইণ্ট বিয়ারের অর্ডার দেবেন।’

‘আমি বিয়ার খাই না।’

‘তা হলে এক গ্লাস ওয়াইন নেবেন।’

‘ওদিকের ওয়াইন তো বড়জোর রঙ তোলার স্পিরিট।’

‘ওয়াইন গিলতে হবে না,’ বলল রানা। ‘কারণ, বেশিক্ষণ ওখানে থাকছেন না। যখন বুঝব আপনার লোক হাজির হবে না, দু’জনে গাড়িতে চেপে চলে যাব আমার ওয়্যারহাউসে।’

‘শুনে খুশি হলাম। তো কোথায় যাব আমরা?’

‘মিটিং হবে যেখানে,’ বলল রানা। ‘ওখানে থাকবে আমার পরিচিত একজন।

‘তার মানে মিস থমসন।’

দেখা যাচ্ছে, একা আমি নই, আরও মানুষ হোমওঅর্ক করেছে,’ হেসে বলল রানা।

‘তারপর কী হবে?’

‘চুক্তি হলে দেখতে পাবেন সোনার কয়েনগুলো।’

‘কিন্তু কী কারণে আপনাকে বিশ্বাস করব?’

‘আমাকে বিশ্বাস করতে হবে না। নিজের চোখেই দেখে নেবেন সোনার কয়েনের স্তূপ।’

‘আপনার এসবে জড়িয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক লাগছে আমার কাছে। এটা কি বুঝতে পারছেন?’

কয়েক মুহূর্তের জন্যে চুপ করে থাকল রানা। ঠিক করেছে এবার ফেঁদে বসবে ওর তৈরি গল্পটা। ঠিকঠাক সেটা ঝেড়ে দিলে চট্ করে মিথ্যাটা ধরতে পারবে না স্টুয়ার্ট। ‘এত বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, স্টুয়ার্ট। প্রথমে সোনার কয়েন আবিষ্কার করেছিল রবার্ট উইলসন। সেটা বলেছিল বন্ধু পিটার হ্যাননকে। আর তখন বিশেষজ্ঞ হিসেবে এসবে জড়িয়ে পড়ি বেন হ্যানন আর আমি। সিকিউরিটির ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় ছিল উইলসন আর পিটার। পাগল হয়ে উঠেছিল ভয়ে। ওদের ধারণা হয়েছিল একদল খুনি এসে কেড়ে নেবে সোনার কয়েনগুলো। পাগল আর কাকে বলে!’

আরও তথ্যের জন্যে চুপ করে অপেক্ষা করছে স্টুয়ার্ট।

‘কিন্তু পিটার হ্যানন আর বেন হ্যাননকে বিশ্বাস করত না উইলসন,’ গড়গড় করে বলে চলল রানা। ‘তার ধারণা হয়েছিল: গোপনে সব মেরে দেবে পিটার। আর সেজন্যেই বন্ধুকে সে বলেনি কোথায় আছে সেই গুপ্তধন।’

মন দিয়ে রানার কথা শুনছে জেসিকা। চকচক করছে দুই চোখ। তবে কেন এসব বলছে রানা, সেটা বুঝতে না পেরে কুঁচকে গেল ওর দুই ভুরু।

‘আপনি তা হলে বলতে চান একইসঙ্গে সোনার কয়েন উদ্ধার করেছেন আপনি আর উইলসন?’ জানতে চাইল রন স্টুয়ার্ট। ‘আমার লোকের ভাষ্য অনুযায়ী আপনি মাত্র কয়েক দিন আগে লণ্ডন থেকে এসেছেন এখানে। ততদিনে মারা গেছে উইলসন। সেক্ষেত্রে কি ধরে নেব যে মিথ্যা বলছেন আপনি? মিথ্যুকদের কোনও ঠাঁই নেই আমার কাছে।’ আদর্শ ও নৈতিকতার প্রতিমূর্তি হয়ে উঠেছে চরম দুর্নীতিপরায়ণ বিলিয়নেয়ার।

‘আপনার বেতনভুক অপদার্থ পুলিশগুলো অর্ধসত্য বলেছে। ওরা জানেও না, উইলসন ডুবে মারা যাওয়ার আগে গোটা একসপ্তাহ ধরে আমরা কী করেছি। সব গুছিয়ে নেয়ার পরেই পা রেখেছি কিনলোকার্ড গ্রামে।’ ডাহা মিথ্যা বলছে রানা। তবে মিথ্যা হিসেবে ওটা প্রমাণ করতে পারবে না স্টুয়ার্ট। রানা আশা করছে মগজে যুক্তি কাজ করবে না বলেই সোনার কয়েনের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ দেবে লোকটা। ‘উইলসন জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে আমাকে দেখিয়েছে কোথায় পেয়েছে কয়েনগুলো। পরে বাকিগুলো আবিষ্কার করি আমরা। দু’জন মিলে সরিয়ে নিয়ে যাই নিরাপদ ওয়্যারহাউসে। তারপর কয়েক দিনের জন্যে কাজ গুছিয়ে নিতে লণ্ডনে ফিরি আমি। আর তারপর তো মারাই গেল উইলসন। তাই আমি এখন একমাত্র লোক যে কি না জানে কয়েনগুলো কোথায় আছে।’

কী যেন ভাবল স্টুয়ার্ট। তার পরের কথায় রানার মনে হলো বিশ্বাস করেছে সে। ‘তা হলে তো মনে হচ্ছে সঠিক লোকের সঙ্গেই কথা বলছি। সেক্ষেত্রে একটা কথা বলে দিতে চাই। নিজের চোখে দেখব সোনার কয়েন। তখন স্থির হবে নগদ টাকার ব্যাপারটা। এরপর একবার টাকা পেলে আর কখনও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন না।’

‘ঠিকমত টাকা পেলে আবার কথা কীসের!’ খোলা গলায় হাসল রানা।

‘আমার ধারণা ছিল বন্ধুর ব্যাপারে আপনার কোনও বক্তব্য থাকতে পারে। ওই যে, সেই বেন হ্যানন।’

এবার কণ্ঠ স্বাভাবিক রাখতে কষ্ট হলো রানার। ‘আমি তো আগেই বলেছি, হ্যাননদেরকে বিশ্বাস করত না উইলসন। ওরা চাচা-ভাতিজা বড়বেশি লোভী। সেজন্যেই হয়তো বিপদে পড়েছে। তাদের কী হলো তাতে আমার কিছু যায়-আসে না। আমি আইনি ঝামেলা বা কোনও বিপদে না পড়লেই খুশি।’

রানার কথায় চমকে গেছে জেসিকা। একহাতে মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলল, ‘এসব কী বলছ, রানা!’

‘ঠিক আছে, বুঝতে পেরেছি,’ বলল স্টুয়ার্ট। ‘আপনার কথা শুনে আগ্রহ বোধ করছি। এজন্যেই দিনের পর দিন না খাইয়ে রেখেও বুড়ো হারামজাদার কাছ থেকে সোনার কয়েনের ব্যাপারে কিছুই বের করতে পারিনি। ভেবে পাচ্ছিলাম না, কেন সে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। এতক্ষণে সবই বুঝলাম।’

রাগে বুক জ্বলে গেল রানার। এত জোরে মোবাইল ফোন কানে চেপে ধরেছে যে ব্যথা পাচ্ছে। বুঝে গেছে মুখ খোলাবার জন্যে নির্যাতন করেছে ডিযঅনারেবলরা অসুস্থ বেন হ্যাননকে। বলল, ‘ওই বুড়ো হাবড়াটাকে চাপ দিয়ে লাভ হবে না। আমি হলে এসব বাজে কাজে সময় নষ্ট করতাম না।’

‘আমি নিজেও তাই ভেবেছি।’

এবার কী বলতে হবে ভাবতে গিয়ে চোখ বুজল রানা। ‘তা হলে বুড়োটাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছেন?’

‘না-না, বেঁচে আছে। তবে আজ আপনার সঙ্গে কথা হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেব। আপনার কী মনে হয়, তার বিষয়ে কী করা উচিত?’

‘আপনিই জানেন,’ সহজ স্বরে বলল রানা, ‘এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। শুধু মনে রাখবেন, ঠিক সময়ে হাজির হবেন কিনলোকার্ড গ্রামের পাবে।’ চট্ করে হাতঘড়ি দেখল রানা। ‘দেখা হবে পৌনে চারঘণ্টা পর। মাত্র একবার সুযোগ পাবেন, স্টুয়ার্ট। কোনও ভুল হলে কিন্তু বাকি জীবনেও সোনার হদিস আর পাবেন না। সব আমি বিক্রি করে দেব অন্য কাস্টোমারের কাছে।’

‘আমি ঠিক সময়ে হাজির হব।’

‘তা আমি জানি,’ বলে কল কেটে দিল রানা।

‘কী ভয়াবহ,’ নিচু গলায় বলল জেসিকা। অবাক চোখে দেখছে রানাকে।

থমথম করছে রানার মুখ। ভাল করেই জানে, ওর প্রিয় ওস্তাদের ব্যাপারে মস্ত ঝুঁকি নিয়েছে। ওর যদি কোনও ভুল হয়ে থাকে, জীবিত দেখবে না মানুষটাকে।

‘বুঝলাম না কেন এভাবে কথা বললে,’ বলল জেসিকা। ‘রন স্টুয়ার্ট তো মেরে ফেলতে পারে বেন হ্যাননকে।’

চাপা শ্বাস ফেলল রানা। জেসিকার চোখে কষ্ট ও দ্বিধা দেখে নিচু গলায় বলল, ‘স্টুয়ার্টের জন্যে সব সহজ করে দিতে হয়েছে। ফাঁদে ফেলতে হলে এ ছাড়া উপায় ছিল না। সে এখন ভাবছে সব করছি স্রেফ টাকার জন্যে। টাকা দেবে, বদলে পাবে সোনার কয়েন।’

‘তা বুঝেছি। কিন্তু বেন হ্যানন তো তোমার বন্ধু। তাঁর বাঁচা-মরা নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তা নেই, তা কেন বললে? তুমি তো জানো তিনি বেঁচে আছেন। অথচ, খুন করতে সবুজ বাতি দেখিয়ে দিলে স্টুয়ার্টকে। কাজটা ভুল হয়ে গেল না?’

‘দুটো কারণে এমন করেছি,’ বলল রানা। ‘প্ৰথম কথা, একমাত্র আমি জানি কোথায় আছে সোনার কয়েন। তাই এখন আর বেনকে নির্যাতন করবে না তারা। ওদিকে সোনার হদিস বেন দিতে পারবে না, সেটা আমার মুখের কথা; বিশ্বাস করবে কি করবে না সেটা হুট করে বুঝে উঠতে পারবে না লোকটা। তাই ওকে বাঁচিয়ে রাখবে স্টুয়ার্ট। তার মত লোক কাউকে কখনও পুরো বিশ্বাস করে না। যখন-তখন দেখা করার ব্যাপারে পিছিয়ে যেতে পারে।’

‘তখন?’

‘তখনও বেনকে খুন করবে না। বিশেষ করে আমার সঙ্গে একা দেখা করতে এলে। কারণ, আমি সত্যি বলছি কি না তা জানার উপায় নেই তার। আমি ডাবল-ক্রস করলে সেক্ষেত্রে বেনকে ব্যবহার করবে দাবার ঘুঁটির মত করে। যাতে নিজে মুক্তি পেতে পারে।’

‘অর্থাৎ, আজ স্টুয়ার্টের সঙ্গে দেখা হলে নিশ্চয়ই তাকে বন্দি করবে তুমি। কিন্তু তাতেও তো কোনও লাভ দেখছি না। জিম্মি হিসেবে তার লোকের হাতে রয়ে যাবেন বেন হ্যানন।

‘তাদের জিম্মির চেয়ে আমার জিম্মি ঢের বেশি দামি। ডিনঅনারেবলদের বেতন দিচ্ছে স্টুয়ার্ট। সে না থাকলে একটা পয়সাও পাবে না তারা।’

‘কাজেই বসকে ফেরত পেতে ছেড়ে দেবে বেন হ্যাননকে। অথচ, শেষমেশ স্টুয়ার্টকে পাবে না তারা?’

‘ঠিক ধরেছ।’

‘তবুও তো মুখোমুখি হতে হবে ডিযঅনারেবলদের।’

মাথা নাড়ল রানা। ‘স্টুয়ার্টের সঙ্গে দেখা হলে এরপর তুমি এসবে জড়িত থাকবে না। যা করার আমি একা করব।’

‘তা হলে তো মানুষ খুনোখুনি হবে,’ আপত্তির সুরে বলল জেসিকা।

‘হয়তো, তবে আমার হাতে তখন থাকবে তুরুপের তাস।’

‘অনেক বড় ঝুঁকি নিচ্ছ।’

মাথা দোলাল রানা। ‘সত্যিই তাই। তবে ওদের ঝুঁকিটা আমার চেয়ে অনেক বেশি।’

দীর্ঘশ্বাস ফেলল জেসিকা। ‘তো এখন কী করবে?’

‘দুপুর একটার আগেই গ্রামে গিয়ে স্টুয়ার্টের জন্যে পেতে নেব ফাঁদ।’

সকল অধ্যায়

১. স্বর্ণলিপ্সা – ১
২. স্বর্ণলিপ্সা – ২
৩. স্বর্ণলিপ্সা – ৩
৪. স্বর্ণলিপ্সা – ৪
৫. স্বর্ণলিপ্সা – ৫
৬. স্বর্ণলিপ্সা – ৬
৭. স্বর্ণলিপ্সা – ৭
৮. স্বর্ণলিপ্সা – ৮
৯. স্বর্ণলিপ্সা – ৯
১০. স্বর্ণলিপ্সা – ১০
১১. স্বর্ণলিপ্সা – ১১
১২. স্বর্ণলিপ্সা – ১২
১৩. স্বর্ণলিপ্সা – ১৩
১৪. স্বর্ণলিপ্সা – ১৪
১৫. স্বর্ণলিপ্সা – ১৫
১৬. স্বর্ণলিপ্সা – ১৬
১৭. স্বর্ণলিপ্সা – ১৭
১৮. স্বর্ণলিপ্সা – ১৮
১৯. স্বর্ণলিপ্সা – ১৯
২০. স্বর্ণলিপ্সা – ২০
২১. স্বর্ণলিপ্সা – ২১
২২. স্বর্ণলিপ্সা – ২২
২৩. স্বর্ণলিপ্সা – ২৩
২৪. স্বর্ণলিপ্সা – ২৪
২৫. স্বর্ণলিপ্সা – ২৫
২৬. স্বর্ণলিপ্সা – ২৬
২৭. স্বর্ণলিপ্সা – ২৭
২৮. স্বর্ণলিপ্সা – ২৮
২৯. স্বর্ণলিপ্সা – ২৯
৩০. স্বর্ণলিপ্সা – ৩০
৩১. স্বর্ণলিপ্সা – ৩১
৩২. স্বর্ণলিপ্সা – ৩২
৩৩. স্বর্ণলিপ্সা – ৩৩
৩৪. স্বর্ণলিপ্সা – ৩৪
৩৫. স্বর্ণলিপ্সা – ৩৫
৩৬. স্বর্ণলিপ্সা – ৩৬
৩৭. স্বর্ণলিপ্সা – ৩৭
৩৮. স্বর্ণলিপ্সা – ৩৮
৩৯. স্বর্ণলিপ্সা – ৩৯
৪০. স্বর্ণলিপ্সা – ৪০
৪১. স্বর্ণলিপ্সা – ৪১
৪২. স্বর্ণলিপ্সা – ৪২
৪৩. স্বর্ণলিপ্সা – ৪৩
৪৪. স্বর্ণলিপ্সা – ৪৪
৪৫. স্বর্ণলিপ্সা – ৪৫
৪৬. স্বর্ণলিপ্সা – ৪৬
৪৭. স্বর্ণলিপ্সা – ৪৭
৪৮. স্বর্ণলিপ্সা – ৪৮
৪৯. স্বর্ণলিপ্সা – ৪৯
৫০. স্বর্ণলিপ্সা – ৫০
৫১. স্বর্ণলিপ্সা – ৫১
৫২. স্বর্ণলিপ্সা – ৫২
৫৩. স্বর্ণলিপ্সা – ৫৩
৫৪. স্বর্ণলিপ্সা – ৫৪

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন