মহাশ্বেতা দেবী
‘খড়মড় খড়মড়’ শব্দ করে রঙিন মোড়কটা খুলতে লাগল সোনাই। বনি দেখল, কী সুন্দর লাল কাগজ, ওপরে সোনালি ফিতে! মোড়ক খুলেই সোনাইয়ের চোখ গোলগোল হয়ে গেল। বনির দিকে চেয়ে বলল, ‘যাঃ এবার কী হবে ?’ বলেই ক্যাও ম্যাও করতে করতে পালিয়ে গেল। বনি এবারে এগিয়ে এল। উপহারের বাক্সের মধ্যে একটা স্পঞ্জ ছিল, তার ওপর ঠ্যাং ছড়িয়ে কমলা রঙের একটা মাকড়সা। মোড়কটার ওপর আঠা দিয়ে একটা কার্ড লাগানো। সেখানে লেখা, ‘সোনাইকে, তার দাদা বাবাই।’ সোনাই বনিদের বাড়িতে একমাসের জন্য বেড়াতে এসেছে। বাড়িতে ওর দাদার সঙ্গে কুকুর আর বিড়ালের মত সম্পর্ক। সেই দাদা আবার সেধে সোনাইকে উপহার পাঠিয়ে দিয়েছে এমন ঘটনা নিজের চোখে দেখেও বনির বিশ্বাস হচ্ছিল না।
বনির ছোট ভাইটা হঠাৎ লেবু চুষতে চুষতে এ ঘরে ঢুকল। মোড়কটা নিয়ে খচমচ আওয়াজ করতে লাগল। মাকড়সাটার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকল, তারপর কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে গেল। সোনাই এতক্ষণ রান্নাঘরে বসে ছিল। এবার ভয়ে ভয়ে ফের ঘরে ঢুকল। হঠাৎ বাক্সটার মধ্যে থেকে একটা ছোট্ট রিমোট না কি যেন তুলে নিয়ে বলে, ‘এটা কি রে বনি?’ বনি বলল, ‘ভগবান জানে।’
সোনাই ততক্ষণে ওটা টিপতে শুরু করেছে। ওমনি মাকড়সাটা নড়তে শুরু করল। এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে এক সময় সোনাইয়ের পায়ের কাছে ওটা চলে এল। সোনাই হঠাৎ করে একটা লম্বাটে বোতাম বেশ জোরে টিপতেই মাকড়সাটা এক লাফে সোনাইয়ের মাথার ওপরে গেড়ে বসল। তখন সোনাইয়ের চিৎকারের বহর আর দেখে কে? বনি কানে হাত চাপা দিল। সবাই দৌড়ে এল। এমনকি বনির ভাইও । ততক্ষণে সোনাই অজ্ঞান। এক ঘন্টা পরে ওর জ্ঞান ফিরেছিল। তাও মগ মগ জল ছেটানোর পর। বাড়ি ফিরে ওর দাদার সঙ্গে বেশ কয়েকদিন কথা বন্ধ ছিল। কিন্তু এ ঘটনা থেকে সোনাই বুঝেছিল, লোকে কেন বলে সব জিনিস দেখেশুনে করতে হয়।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন