পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৬

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২৯শে সেপ্টেম্বর ১৯২৪

যে-মেয়েটি আমাকে শুভ-ইচ্ছা জানিয়ে চিঠি লিখেছিল তার চিঠিতে একটি অনুরোধ ছিল, “আপনি ডায়ারি লিখবেন।” তখনই জবাব দিলুম, “না, ডায়ারি লিখব না।” কিন্তু, মুখ দিয়ে একটা কথা বেরিয়ে গেছে ব’লেই যে সেই কথাটা অটল সত্যের গৌরব লাভ করবে এতবড়ো অহংকার আমার নেই।

তার পর চব্বিশে তারিখে জাহাজে উঠলুম। বাদলার হাওয়া আরো যেন রেগে উঠল; সে যেন একটা অদৃশ্য প্রকাণ্ড সাপের মতো জাহাজটার উপর ক্ষণে-ক্ষণে ছোবল মেরে ফোঁস ফোঁস করতে লাগল। যখন দেখলুম দুর্দৈবের ধাক্কায় মনটা হার মানবার উপক্রম করছে তখন তেড়ে উঠে বললুম, “না, ডায়ারি লিখবই।” কিন্তু, লেখবার আছে কী। কিছুই না, যা-তা লিখতে হবে। সকল লেখার সেরা হচ্ছে যা-তা লেখা। যথেচ্ছারের অধিকার রাজার অধিকার।

বিশেষ কোনো-একজনকে চিঠি লেখবার একটা প্রচ্ছন্ন বীথিকা যদি সামনে পাওয়া যেত তা হলে তারই নিভৃতছায়ার ভিতর দিয়ে আমার নিরুদ্দেশ বাণীকে অভিসারে পাঠাতুম। কিন্তু সে-বীথিকা আজ নেই। তাই অপরিচিত ক্যাবিনে আলো জ্বেলে নিজের কাছেই নিজে বকতে বসলুম। আলাপের এই অদ্বৈতরূপ আমার পছন্দসই নয়। সংসারে যখন মনের মতো দ্বৈত দুর্লভ হয়ে ওঠে তখনই মানুষ অদ্বৈতসাধনায় মনকে ভুলিয়ে রাখতে চায়। কারণ, সকলের চেয়ে দুর্বিপাক হচ্ছে অ-মনের মতো দ্বৈত।

সকল অধ্যায়

১. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০১
২. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০২
৩. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৩
৪. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৪
৫. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৫
৬. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৬
৭. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৭
৮. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৮
৯. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ০৯
১০. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১০
১১. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১১
১২. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১২
১৩. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১৩
১৪. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১৪
১৫. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১৫
১৬. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১৬
১৭. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১৭
১৮. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১৮
১৯. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ১৯
২০. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ২০
২১. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ২১
২২. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ২২
২৩. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ২৩
২৪. পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি – ২৪

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন