চিঠিপত্র – ১৬ (শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত – ৪

সম্প্রতি কতকগুলো গদ্যকবিতা জড়ো করে “শেষসপ্তক’ নাম দিয়ে একখানি বই বের করেছি। সমালোচকরা ভেবে পাচ্ছেন না ঠিক কী বলবেন। একটা কিছু সংজ্ঞা দিতে হবে, তাই বলছেন আত্মজৈবনিক। অসম্ভব নয়, কিন্তু তাতে বলা হল না, এগুলো কবিতা কিম্বা কবিতা নয় কিম্বা কোন্‌ দরের কবিতা। এদের সম্বন্ধে মুখ্য কথা যদি এই হয় যে, এতে কবির আত্মজীবনের পরিচয় আছে, তাহলে পাঠক অসহিষ্ণু হয়ে বলতে পারে, আমার তাতে কী। মদের গেলাসে যদি রঙকরা জল রাখা যায় তাহলে মদের হিসাবেই ওর বিচার আপনি উঠে পড়ে। কিন্তু, পাথরের বাটিতে রঙিন পানীয় দেখলে মনের মধ্যে গোড়াতেই তর্ক ওঠে, ওটা শরবত না ওষুধ। এ রকম দ্বিধার মধ্যে পড়ে সমালোচক এই কথাটার ‘পরেই জোর দেন যে, বাটিটা জয়পুরের কি মুঙ্গেরের। হায় রে, রসের যাচাই করতে যেখানে পিপাসু এসেছিল সেখানে মিলল পাথরের বিচার। আমি কাব্যের পসারি, আমি শুধোই– লেখাগুলোর ভিতরে ভিতরে কি স্বাদ নেই, ভঙ্গি নেই, থেকে থেকে কটাক্ষ নেই, সদর দরজার চেয়ে এর খিড়কির দুয়ারের দিকেই কি ইশারা নেই, গদ্যের বকুনির মুখে রাস টেনে ধরে তার মধ্যে কি কোথাও দুল্‌কির চাল আনা হয় নি, চিন্তাগর্ভ কথার মুখে কোনোখানে অচিন্ত্যের ইঙ্গিত কি লাগল না, এর মধ্যে ছন্দোরাজকতার নিয়ন্ত্রিত শাসন না থাকলেও আত্মরাজকতার অনিয়ন্ত্রিত সংযম নেই কি। সেই সংযমের গুণে থেমে-যাওয়া কিম্বা হঠাৎ বেঁকে-যাওয়া কথার মধ্যে কোথাও কি নীরবের সরবতা পাওয়া যাচ্ছে না। এই-সকল প্রশ্নের উত্তরই হচ্ছে এর সমালোচনা। কালিদাস “রঘুবংশে’র গোড়াতেই বলেছেন, বাক্য এবং অর্থ একত্র সম্‌পৃক্ত থাকে; এমন স্থলে বাক্য এবং অর্থাতীতকে একত্র সম্‌পৃক্ত করার দুঃসাধ্য কাজ হচ্ছে কবির, সেটা গদ্যেই হোক আর পদ্যেই হোক তাতে কী এল গেল।

৩ জুন, ১৯৩৫

সকল অধ্যায়

১. চিঠিপত্র – ১৮ (শ্রীশৈলেন্দ্রনাথ ঘোষকে লিখিত)
২. চিঠিপত্র – ১৯ (শ্রীশৈলেন্দ্রনাথ ঘোষকে লিখিত)
৩. মোটকথা – ১ (দুই মাত্রা বা দুই মাত্রার গুণক নিয়ে)
৪. মোটকথা – ২ (দুই মাত্রা বা দুই মাত্রার গুণক নিয়ে)
৫. চিঠিপত্র – ১ (জে, ডি, এণ্ডার্সন্‌কে লিখিত)
৬. ছন্দের অর্থ
৭. ছন্দের হসন্ত হলন্ত – ১
৮. ছন্দের হসন্ত হলন্ত – ২
৯. ছন্দের মাত্রা – ১
১০. ছন্দের মাত্রা – ২
১১. বাঙলা ছন্দের প্রকৃতি
১২. গদ্যছন্দ
১৩. বাংলাভাষার স্বাভাবিক ছন্দ
১৪. বাংলা শব্দ ও ছন্দ
১৫. সংগীত ও ছন্দ
১৬. সংস্কৃত-বাংলা ও প্রাকৃত-বাংলার ছন্দ
১৭. ছন্দে হসন্ত
১৮. চিঠিপত্র – ২ (জে, ডি, এণ্ডার্সন্‌কে লিখিত)
১৯. চিঠিপত্র – ৩ (শ্রীপ্রমথ চৌধুরীকে লিখিত)
২০. চিঠিপত্র – ৪ (শ্রীপ্যারীমোহন সেনগুপ্তকে লিখিত)
২১. চিঠিপত্র – ৫ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২২. চিঠিপত্র – ৬ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২৩. চিঠিপত্র – ৭ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২৪. চিঠিপত্র – ৮ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২৫. চিঠিপত্র – ৯ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২৬. চিঠিপত্র – ১০ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২৭. চিঠিপত্র – ১১ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২৮. চিঠিপত্র – ১২ (শ্রীদিলীপকুমার রায়কে লিখিত)
২৯. চিঠিপত্র – ১৩ (শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত)
৩০. চিঠিপত্র – ১৪ (শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত)
৩১. চিঠিপত্র – ১৫ (শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত)
৩২. চিঠিপত্র – ১৬ (শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত)
৩৩. চিঠিপত্র – ১৭ (শ্রীধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন