সুমনকুমার দাশ
১
অধম কানাই বলে, কলিকালে
পুষেছি এক টিয়ে,
তারে দুগ্ধ কলা, রোজ দুবেলা
দিবো রে মিলাইয়ে
তবু কোন দিন যাবে ছেড়ে,
সাধের পিঞ্জিরা থুয়ে ॥
ময়না ধরতে গেলে না দেয় ধরা,
কয় না মনের কথা,
পাখির ফাঁকি ভেবে আঁখি,
ঝরছে অযথা।
জংলা পাখি পোষ মানে না,
একথা আগে জানি না,
সকল কথা ভেবে চিন্তে
মন ভরে হয় বেদনা ॥
ছাড়লে পাখি, ভাই বন্ধু ইষ্টিকুটুম,
পড়ে মায়ার ফাঁদে,
কেউ ঝাড়ের বাঁশ কাটে,
কেউবা কবর খোদে।
এমন দরদের বাপ মা
তারা সামনে বসে কাঁদে ॥
ওরে ধুতি চাদর রাখো খুলে,
গলায় দাও খিলকা তুলে,
দেও মা খাকীর হাওলা করে,
আজকে তোর মায়ের বুকে
দিলি রে পাষাণ তুলে ॥
২
অধর চাঁদ সাঁই ঘরামি এসে
বেঁধেছেন এক ঘর,
ও সে ঘরের মধ্যে ঘর তৈয়ার
চৌদ্দ পোয়া বন্দে দিয়ে বেঁধেছেন সেই ঘর।
ঘরের রাগের ভাগ সেই বেশি ভারি,
আমি ভাবছি বসে নিরন্তর,
কখন জানি পড়বে ধসে
যদি আসে ঝড় ॥
ঘরের গেল ছাউনি পচে,
এ ঘরের আর বিশ্বাস নাই,
ঘরামির খোঁজ কোথায় পাই,
দীনের দীন নকল দস্ত ভাবছি বসে তাই,
পাগল কানাই কয়, ও মনুরায়
ঘরের তদবির করে জানা চাই,
দুই খুঁটির নিচে মাটির ঘর
তোমরা খাঁটি জানো তাই ॥
তিন কুঠরি নয় দরজা আট দ্বারী
করে সে ঘরে চৌকিদারি
সর্বদায় পিছন বাড়ির মাল হতেছে চুরি,
মালের মহাজন ঘরে বসে
করে সদর বাড়ির কাছারী,
ছয়জনা বোম্বেটে জুটে,
মাল করতেছে চুরি ॥
৩
অধীন পাগলা কানাই কয়,
চড়ে পোড়া প্রেমের নায়,
রাত্রদিন বসে ভাবি আমি হায় রে হায়,
ডুব ডুব ডুব সাধের তরি
কখন যেন ডুবিয়া মরি,
কখন যেন হেঁচকা টানে
আমার প্রাণও যায়।
একে তো মোর জীর্ণ তরি
পাপে বোঝাই হইছে ভারি,
কেমনে দিব পাড়ি
আমার পারের সম্বল নাই।
এই ভাঙা নৌকা বাইতে বাইতে
আমার দিনও যায়।
শোন ওরে মন ব্যাপারী,
এ ভব নদী দিবি পাড়ি,
শ্রীগুরু যার আছে কাণ্ডারি
তার ভবপারের ভয় নাই
অনাসে সে পাড়ি দিয়ে
পারে চলে যায় ॥
৪
আদম হতে দুনিয়া পয়দা
করলেন মালেক সাঁই,
একথা না বললে তো নয়,
কথা বলে যাই সভায়,
লোকে বলে পাগলা কানাইর
বুদ্ধির নামায় ছাই।
মক্কা শরিফ কে তৈয়ার করে
বয়াতি মিস্ত্রীর নাম চাই ॥
আদমকে বেহেস্তে রেখে,
গন্ধম খাওয়াইল,
বয়াতি তার মানে বল,
কোথায় ছিল লাঙলের ফাল,
তার কামার কে ছিল
গুরু হয়ে লাঙল কেবা টানে,
বয়াতি তার মানে বল ॥
কোরানেতে জেন্দা সাধু
নাম আছে চারজনা,
তোমরা সব কথা বলো না,
আমি তাই করতেছি মানা,
ফকির বৈষ্টম কেঁদে বলে,
বয়াতি তার মানে করো না ॥
৫
আমার দেহ জমি আবাদ হইল না,
গুরুর বীজ বুনতে পারলাম না,
বীজ বুনতে পারলে হোত কামরাঙ্গা ফল,
পুষ্ট হোত দানা
গুরুর নিবাদের প্রসাদ ভাই,
আমার ভাগ্যেতে হোলো না।
চিরদিন ক্ষেতে মলাম খেটে,
বেজাতে লাঙল লইলাম জুটে,
জোয়াল নিয়ে গেলাম স্বর্ণধামের মাঠে
পাগল কানাইর কাঁচি পাইলি ভাই,
বীজের দাম দিতে জীবন ফাটে।
চাষার প্রেম ভাঙলে না লয় জোড়া,
গুরুর প্রেমের এ অঞ্চল হামেরা,
আগে জানতে পারলে দিতাম ক্ষেতে
জ্ঞান-প্যারাকের বেড়া
গুরুকে না দিয়ে বস্তু ভাই
খাইতাম সেই গোপন রসের পেড়া ॥
৬
আমার যে জমি আবাদ হয় না,
ছয় বলদ কথা শোনে না,
আমি যখন হালে জুড়ি
যাইতে কইলে যাইত মানে না,
সদায় লাঙল চাটে জোয়াল ছাঁটে,
চঙ্গে টানে না।
দেহ জমি পতিত রইল শস্য ফলে না,
গেলি সেই বলদের কাছে রুখে আসে,
ধরতে চায় ঠাসে
আবার মদনা এড়ে দুষ্ট ভারি
ও সে ভিটে খুচে ধচায় দিছে,
পাগল কানাই বলে ওগো মণি
কইরে দাও দিশে ॥
৭
আমি পাগলামো করে গাই জারি,
কিসের আমার ঘরবাড়ি, আমি হই দেশান্তরী,
পাগল কানাইয়ের কথা কিছু
শোনো বাপু সকলে,
একদলে সোনা বর্তেছে
আরেক দল সবল আছে,
ঘোলা বয় রাত্রদিনে ॥
সেই মানিক যায় যার ঘরে,
অন্ধ পুরুষ না পারে চিনতে তারে
কেউ চেনে তা কপালের ফেরে,
কপালগুণে ভবের পরে
সেই মানিক যায় কভু খোয়ারে,
বিধি যার সখা আছে,
তার দিন সুখে যেতেছে,
সেই বিধিক স্মরে পাগল কানাই
ধুয়ো গাতেছে ॥
৮
আরে ও আমার নতুন ফুলের বাগ,
তাতে এই বসন্তকাল,
উড়ে আয় রে ভ্রমর বস্ বাগে,
মধু করছে টলমল ॥
আরে ও ভ্রমর গেলি কোন দেশে—
ভুলে রলি কার আশে,
সারারাত জেগে পোহাই,
আমার মনের আবেশে ॥
ওরে আমার এহেন কপাল,
গাছে মেলে পঞ্চণ্ডাল,
যদি থাকতে পতি
খেলতাম পাশা
আমার গাছে ধরত ফল ॥
পাগলা কানাই বলে,
ধন মিলে না কপালে,
ফুলভরা বাগ শুকায়
শুভ যোগে ফুল নাহি মিলে ॥
৯
আরও গুপ্ত কথা ভেঙে দিল সভায়
এসে বয়াতি
এক জনের পাঁচটি মুণ্ডু কথার মানে কি?
আমি সে কথাটি তোমায় জিজ্ঞাসি।
আরাক জনার ষোল মুণ্ডু সভায় ধুয়া গাও,
না হলে পর দেশে চলে যাও।
কত আলেম ফাজেল ফকির দরবেশ
বসে বসে ভাবছে তাই,
কত কিতাব কোরান ভারত পুরাণ
কথা মিথ্যা নয়।
পাগলা কানাই বলছে কথার মানে চাই,
না হলে ছাড়ব না তোমায় ॥
১০
আল্লার এই আলম নিরমিল খোদার কলম,
কলমে যা লিখেছে সাঁই,
কোন দিন যাবে দুনিয়া ছেড়ে,
সেই ভাবনা তোর মনে নাই ॥
কানাই বসে কান্দে তাই
মহাজনের পুঁজি লয়ে
সব গেলাম খোয়াইয়ে,
সে কথা তোর কিছুই মনে নাই,
তোর গলায় দেবে প্রেমের ফাঁসি,
সদায় বসে টানবি তাই ॥
সেদিন থাকবে না তোর পারাপারি,
দুই হস্তে লাগাবে দড়ি,
দাখিল করবেন হুজুরে
হাতে দিবে হাত কড়া
পায় লাগাবে জিন বেড়ি ॥
১১
ইমাম আলো শিকার ফেলে
পানি চাইলো বিবির হুজুরে
ও না জানিয়ে জহর গুলে বিবি খায়ালো তারে।
ইমাম যখন জহর খাইল বিষে অঙ্গ জাল হইল,
কোন দোষে সে জহর গুলে
বিবি খাওয়াইল মোরে,
ইমাম বলে ও হোসেন ভাই,
এসো আমি কয়ে বুলে যাই,
ও পাগল কানাই তাই বলে,
বিধির লিখন খণ্ডন না যায় ॥
১২
এই সে দেহ মানুষ ঘুড্ডি
তিনশ ষাট জোড়ার হাড্ডি
সেই ঘুড্ডির কামানই
সে দীর্ঘ পাশে সাড়ে তিন হাত
পাখা দুখানি,
তিনশ ষাট রগের বন্ধন,
তা দেখে লাগে ধন্ধ,
আরও কামড়ার ছাউনি
সেই যে ঘুড্ডি তৈরি করে, কামেলা
তার ভিতরে,
সে উর্ধ্বভাবে সুতা রাখে নিচে উড়াইছে,
উড়তেছে হাওয়ার জোরে, কামেলা তার ভিতরে
সেই জোরে ঘুড্ডি উড়তেছে,
তাই পাগলা কানাই বলে দেখে ঘুড্ডির ছবি
সদায় প্রাণ বিদরে,
বাতাস যেদিন বন্ধ হবে
ঘুড্ডি সেদিন ধাপ্পা খাবে
উড়বে না যুগ যুগান্তরে ॥
১৩
এক ফুল ফুটেছে ভব-সংসারে,
পাগলা কানাই কয় বারেবারে,
বলব কি ফুলের কথা,
ডাল ছাড়া মূল তার কোথা,
ফুল ছাড়া ফল ধরে ভিতরে, আমি বলব কারে
বাহা ফুল ফুটেছে প্রেম সরোবরে ॥
যে জন সন্ধানী হও সেই মহামণি,
আমি উমি কি তাই জানি,
বসে বসে ঢেউ গনি,
সরোবরে ফলে হয় দিবা রজনী,
যে বলতে পারো আমি তাইরি মানি ॥
আমি বলব কি ভাই, সেই ফুলের কথা,
লাল, জরদ, সিয়া, সফেদ যথা—
চার রঙে চার ফুল আছে গাঁথা,
তার কোন ফুল সাদা-
কোন ফুলে কৃষ্ণ আর কোন ফুলে রাধা ॥
১৪
একটি মানুষ দেখলাম ত্রিবেণীর ঘাটে,
আমি বলি দশের নিকটে,
মাটি ছাড়া শূন্যে সে হাঁটে,
তার শিরে জটা বড়ো লেঠা,
সিঁদুর ফোঁটা ললাটে
তিনটি সন্তান আছে তার পেটে,
সে নিজের দুগ্ধ নিজে পান করে
দুগ্ধ নাই হস্তিনীর বাঁটে
গো-মাংস করতেছে আহার
তার জাতি কুলের নাই বিচার
সর্ব দেবতার পূর্বে পূজা তার
সে অনুরাগী সর্বত্যাগী বক্ষস্থলে জনের দ্বার,
আহা করি রূপেরই কারবার,
তাই পাগল কানাই বলে ভেবে দেখে,
লীলার নাই রে পারাপার।
১৫
ও আমার মন রে লয়ে ঠেকলাম বিষম দায়,
সে যে গামছা মোড়ার দলে ফেরে
দমবাজে দমবাজো খেলায়।
তারে ধরতে গেলে না দেয় ধরা
পালায়ে যায় কুটনীপাড়া
কেমনে ধরব সে মনচোরা ॥
সে চোরা চুরি করে নেপুর নিয়ে পায়,
সে জাগাল ঘরে করে চুরি-
ডংকা মেরে ঘুরে বেড়ায়
তারে ধরা বড়ো দায় ॥
হইল সদরপুরে চোরের বসতি
কামেতে প্রেম গিলটি করা,
ধরছে যার আছে জ্ঞান বাতি,
যেমন আগলা নাও শয়তানের ঘোড়া,
গুরু বলে যার নাই প্ৰেম ভক্তি,
তাই পাগল কানাই বলে,
হোলো রে তার ঠকবাজারে গতি ॥
১৬
ও ঘাটে নামবি যদি মনা, আগে গুরু করো ভজনা,
আগে শক্তি থাকতে করো সাধনা,
থাকতে শক্তি করো ভক্তি কুম্ভীরের ভয় রবে না
ও ঘাটে নামবি যদি মনা ॥
আরো প্রেম পাথরে সাঁতার যে দিছে,
ও তার কুম্ভীরের কি ভয় আছে,
ওরে কুম্ভীরকে সে জয় করেছে,
ঘাটে নামলে মরা মানুষ, কুম্ভীর হয় বেহুঁশ,
সেই কুম্ভীর ধাইয়া কুম্ভীর খাইছে
তার কি জরা মৃত্যু আছে?
তাই পাগল কানাই কয় সেই ঘাটে কুম্ভীর রয়
তাজা দেখলে ধরে খায় মরা দেখলে দৌড়ে পালায়,
পাগল কানাই কয় ও মন সাধু
আজ কেনে হলি বুধু,
দিন থাকিতে মুর্শিদ ধরে সাধন ভজন করতে হয়
ও তার কিসের কুম্ভীরের ভয় ॥
১৭
ও ভাই রে দুই পারের তরণী
বহিতেছে ভাটানী উজানী,
সে বড়ো বিষম নৌকারে
শুকনাতে বাচ খেলে রাত্রদিনি ॥
সে নৌকার মাল্লা ছয়জনা
কলেতে আছে গুনটানা,
ষোল দাঁড় বত্রিশ গুনা ব্যাপারী মনা,
সে বড়ো বিষম নৌকা রে
জনম ভরে বোঝাই হলো না ॥
পাগলা কানাই তাই ভাবে
যে দিন যোগ লাগিবে কলে
যে দিন আচম্বিতে নৌকা পড়বে হেলে,
সে দিন খোদার নাম ভুলে যাবে,
কি আরে ও সেদিন শুকনায় তরি তল হবে ॥
১৮
ও মন কি হোলো কি হোলো বসে ভাবছি তাই
আমার পথের সম্বল কিছু সাথে নাই,
কাল কাটালাম হাসে রসে,
সমুখ বাড়িতে রলাম বসে,
পাছ বাড়িতে কি হোলো তার ঠিকানা নাই।
ও মন দুনিয়াদারি, এ ঝকমারি মিথ্যা বসত সার,
না বুঝে কেন প্রাপ্ত-বস্তু করলি রসাতল।
পাগলা কানাই বলে, সামাল মন রে রসনা,
তোমার পাছবাড়িতে সিঁধ কাটিছে
প্রাপ্ত-বস্তু চুরি যেতেছে
মহাজনের কাছে মন তোমার ঘটবে যন্ত্রণা।
১৯
ও মন রসনা, আছে রিপু ছয়জনা,
সময়ের বন্ধু অসময় তোর কেউ হবে না।
তাই বলছি তোরে রসনা রে,
আল্লা কুরসে ডুবাইও না
দিন গেল বিফলে সাধন হলো না ॥
ও ভাই! ভেবে দেখো রে মন—
তোর হলো না সাধন।
মিছে কাজে গেল রে দিন
সকল অকারণ।
তাই সংসারের নাই কোনো সার,
ও যে আল্লার ত্রিভুবন
মায়াতে বিভোর হয়ে
রইলি পরিজন ॥
এ ঘর ছাড়িয়ে যেদিন যাইবা গোরে,
ও মন সেই অন্ধকারে, তাই বলো আমারে,
কোন জনা বাতি দিবে রে তোমার!
পাগলা কানাই ভেবে বলে নিশ্চয়
আল্লা কি জানি হয় আমারে
কু-পথে যাবি নারে মন
বলছি তোমারে ॥
২০
ওরে মনের দুখ বলবো কারে শোনো ভাই সকল,
আমি হয়েছি উলাই পাগল।
ছয় জনা আমার দেহের মদ্দি করে গণ্ডগোল,
আমার আমি ভাই চিনলাম না রে,
আমি ভুলেছি সেই গুরুর বোল,
লোকে বলে হয়েছিস পাগল,
আমি কেমন করে যাব ভবপারে
আমার পারের নাই সম্বল ॥
সেই পারের ঘাটে দিচ্ছে খেয়া গুরু কর্ণধার
সে যে ধরে না পয়সারই ধার,
রসিক জনে পাইলে পরে অমনি করে পার,
যদি প্রেম-রসিক হইতে পারো,
আগে বান্দো রে সেই প্রেমের ধার,
গুরুর চরণ করো রে নেহার,
ও সেদিন গুরু হবে ভবতরি ভাই,
শিষ্য হবে কর্ণধার ॥
পাগলা কানাই বলে শোনো রে কোরবান কই তোরে,
তুই যাবি যদি ভবপারে
গুরুর চরণ সম্বল রেখে চড়ো ইস্টিমারে,
সে যে অনায়াসে পার করে নিবে,
গুরুর ঐ চরণের জোরে-
পয়সা কড়ি লাগবে না পারে
সেদিন চরণ টিকিট দেখাইলে ভাই
ওমনি দিবে ছাড়ে ॥
২১
কলের রথ গড়ে দিছে দীনবন্ধু করছে কোন কাম,
রথের চূড়ার পর লেখা আছে দীনবন্ধুর নাম।
গড়েছে রথে আঁধার মোকাম।
যখন রথ ছিল রে নতুন আরো চলছে দুগুণ,
দেখতে পরিপাটি,
আজ রথের খসেছে খিল কাঠি,
আরো নড়ে গেছে দুই খুঁটি।
তাই পাগল কানাই কয়,
দিনে দিনে তৈল ফুরাইয়া ঘোর হইয়া আলো,
সেই নবির রথ দিক ভুলা হইল ॥
২২
কানাই কয় খাঁচার পাখি
খাঁচায় আছো মন
যে তোরে পুষেছে পাখি,
চিনলিনে সে কেমন ধন,
পেলি যারে সাথের সাথী,
এসে এই সংসার ভুবন ॥
আমার মন করেছ হিরে পিকে-
নামটি হিরেমন,
সংকটের পার, ঐ হিরের ধার,
পারে যেতে হবে রে মন।
তাজ্য করো মন মহিশার,
করগে ধর্ম সুসার, কর্ম উপার্জন ॥
ওরে বাছা এই যে খাঁচা
যেদিন পড়বে খসে
শমন বাঁধবে কসে
ছাড়বে নাক বাঁধবে বাঁধন,
খোদ মালিকের চর এসে,
ভঙ্গ দেও সে রঙ্গ রসে,
রয়েছ সুখ বিলাসে,
ভাবো, তোমার হবে কি শেষে ॥
২৩
কানাই বলে, ও ময়না—
ও সুখের পাখি,
তোরে যত্ন করে রত্ন ভেবে,
খাঁচায় পুরে রাখি,
জানি তুমি মোরে যাবা ছেড়ে,
আমারে দিয়ে ফাঁকি ॥
তুমি জানি মোরে যাবা রে ছেড়ে
বন্দী রবে ধড়,
কত শালটি সুঁদর পড়ে রবে
সুখের বাসরঘর,
ভাই বেরাদর দরদী বন্ধু,
সকল হবে রে পর ॥
দুগ্ধ দধি ক্ষীর, ননী,
খিলাইছি তোরে,
গেলে পরে আর আসবি না
ময়না, সুখের বাসরে
তবে মায়াজালে বন্দী হলি
ময়না, কিসের কারণে ॥
২৪
কি আজব কথা, মেটে তক্তা,
গাড়ের গাঁথা, চামের ছাউনী,
বিনে জোড়ায় সারি মিলেছে,
ছুতার গুণমণি দিন তারিণী।
কে তারা ভব তারা মা নৌকা
গড়েছে সৌদামিনী ॥
সে নৌকায় বোঝায় আছে হীরা কাথা,
মানিক আছে অমূল্য রতন,
বিচার করেন ভাই সাহেবরা যত মোমিনগণ,
আমি বলি বিবরণ,
যেদিন আসবে শমন বাঁধবে কষে,
তোমার আসল বুঝে নিবে রে তখন ॥
চারজন মানুষ জোরে টানে
চারখান বৈঠা জোরে পড়ে উজান পানির পর,
যেদিন আসবে জোয়ার পড়বে ভাটি,
পড়ে রবে চারখানা দাঁড়,
সেই নৌকার উপর
মাঝি মাল্লা সব ছেড়ে যাবে,
ঠিক রবে শুধু মালেক সদাগর,
সেদিনের কথা ভেবে কানাই কয়,
মন আমার হোলো ভাবান্তর ॥
২৫
কি মজার গড়েছে হাওয়া গাড়ি
আমি তার হাজার তারিফ করি
গাড়ির মধ্যে গাড়ির গঠন,
গড়েছে কোন ফিকিরি,
আট কুঠরি নয় দরজা
ষোলজন রয়েছে প্রহরী
তীর্থ ধাম গাড়ির ভিতরে আছে
শুনেছি মুর্শিদের কাছে
আরো বায়ান্ন ধাম শাস্ত্ৰে প্ৰমাণ
কোন ধামে কে আছে?
কোন ধামে কে বিরাজ করে
শুধাইলাম বয়াতির কাছে।
কোন ধামে আছে মধুসূদন
কোন ধামে আছে মথুরা বৃন্দাবন
কোন ধামেতে ব্রহ্মার আসন
কোন ধামেতে পঞ্চানন
পাগলা কানাই বলে ওরে আমার মন,
কোন ধামে লাগে চন্দ্ৰগ্ৰহণ ॥
২৬
কি মজার রথ গড়েছে ভবে তার অঙ্গ মাঝে,
ভয়ংকর চাকা দুইখান আছে, রথের সারথী যে জন,
ভিতরে সে গোপন,
চাকা পবন হেলানে হেলতেছে,
টাকু ঘুরতেছে,
বিনা তেলে দুইটা বাতি দিবানিশি জ্বলতেছে।
রথখানি দেখে আমি হলাম নামাক কুল,
ও সে মাপলে হয় চৌরাশি আঙ্গুল,
রথের চৌষিট্টি জোড়া তাতে রথ খাড়া
রথের হর দেহে ভাই বিন্দু ভরা এসে দেখো তোরা,
পবন ফুরায়ে গেলে রথের খসবে সব জোড়া।
পাগল কানাই মনমরা ॥
২৭
কোকিল প্রভাতকালে, বসে ডালে
বসন্তের স্বরে,
তুই জ্বালাস কেন আমারে,
আমি নারী কেমন করি চাইছিলাম রে,
আমার প্রাণপতি নাই রে ঘরে ॥
কোকিল প্রভাত হলো
কি বোল বলো,
আগে আয় শুনি,
যেমন জলন্ত অগ্নি,
বিচ্ছেদ অনল হয় কেন এমন জ্বলন্ত,
আগুন হয় না কেন পানি ॥
যেমন কাল সাপে দংশিল লহু
বিষেতে করে ভক্ষণ,
পতি বিনে নারীর হয় মরণ,
পাগলা কানাই বলে,
যৌবনকালে পতি নারীর
অঞ্চলের নিধি পরাণের জান পরাণ ॥
২৮
গাছের মধ্যি মানব-নদী
সাধু বলে ঘাটে
ইহার জোয়ার এলে ডুবুডুবু,
ফুলটি যায় জলে ভেসে,
কতজন ধরতে যেয়ে বেকুপ হয়েছে ॥
লাল, জরদ, সিয়া, সফেদ
চার রঙের চার ফুল
কোন ফুলে হয় কালা পয়দা
কোন ফুলে রাসুল।
কোন ফুলে হয় দুনিয়ার গঠন
কোন ফুলে হয় মালেকুল,
অমাবস্যা লাগলে সেদিন,
কোথায় থাকে ফুল
ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব তিনজনা,
ফুলের চতুষ্পার্শ্বে
তারা সব হাসে রসে,
তারা কোন ফুলে হয় ভোলা যোগী,
যোগ সাধনা করতেছে,
ফুলের মূলেতে তারা কি ভাবে আছে
পাগলা কানাই জিজ্ঞাসে ॥
২৯
গুরু নিন্দা অধঃগতি
করলে সভাস্থিতি,
তাইতে এ দুর্গতি
ভেড়া হয়ে ধরতে চাও
তুমি ঘোড়ার আকৃতি ॥
গুরুর পাছার চামড়া নিয়ে
কোন তালায় লাগাব,
আর ডগর বাজাবা,
তাই গুড়গুড় নাকুড় ধিনা,
কোন তালে বাজাবা,
এই কথাটি করে খাঁটি
শিষ্যধন আজ কবা ॥
আসমানের চাঁদ ধরবা বলে,
মই লাগালে চালে,
সেই চাঁদটি ধরবা বলে
পাছার কাপড় তুলে,
পাগলা কানাই বলে
বাঁদরের কি যোগ্য ফোঁটা মেলে।
৩০
গুরুকে ভজবো বলে ছিল রে বাসনা,
আমি পারলাম না রে ভাই,
আমি দিন থাকিতে মুর্শিদ ধরে
ভজন সাধন করতে চাই,
কাওড়া লাগায় মদনচাঁদ গোসাই ॥
আমি কাজে মাতাল হয়েছি বেতাল,
আরো চৌতালে বেড়াই,
আমি চোরের দেশে করি বসত
ও সদায় সিঁদ কাটে ঘরে,
ওরে মদনা বেটা দুষ্ট ভারি,
প্রাণ কাঁদে তাহার ডরে
আমি সাধন ভজন করি কেমন করে?
গুপ্ত তলায় চোরের অধিকার,
তারে ধরি কেমন করে ॥
কাম ক্রোধ লোভ মোহ মায়া
ও যার অন্তরেতে নাই,
তারই হচ্ছে সাধন ভজন
এই অধীনের শক্তি নাই।
মিছে চাকী চাটাম করিয়া বেড়াই;
পাগলা কানাই বলে, তাই মিছে খটখটি,
দেশ-বিদেশে ঘুরে পেট বাঁচাই ॥
৩১
চার চিজে এক গাছ পয়দা
ফুরাত নদীর ধারে,
দু-খান ডাল পাতালে গিয়াছে—
সাধু যে জন, বোঝে সে জন,
ফুল ছাড়া কি ফল আছে,
বিচার করো মিয়া সাহেবরা সত্য কি মিছে।
লাল, জরদ, সিয়া, সফেদ
চার রঙের চার ফুল,
নীল ফুলে হয় কালা পয়দা,
লাল ফুলে হয় দুনিয়ার গঠন,
সেই ফুলে হয় মালেকুল
অমাবস্যা লাগলে সেদিন
হাওয়ায় থাকে ফুল ফুটেছে ফুল রক্তজবা
শীতল নদীর ধারে, দে
খো এই দেহের মাঝারে,
ফকির বৈষ্টম সেবা করে,
পাগলা কানাই বলে গেল সভাতে,
বিচার করো মিয়া সাহেবরা
সত্য কি মিথ্যে।
৩২
চার পোতায় এক ঘর বেঁধেছে ঘরামি তার সৃষ্টিধর,
আড়ে দীঘে আছে প্রমাণ ঠিক সমান সে ঘর।
আছে ঢাকা ঘর মধ্যস্থলে মুর্শিদাবাদ সদরে তার,
আছে কত অলি, শোন বলি, চৌষিট্টি গলি চার বাজার,
কানা কালা বোবারই কারবার, দেখে সন্দ হয় আমার ॥
চার কালেরই চার দোকানদার করতেছে কারবার এসে,
দোকান মাথায় নিয়ে চলে যায়, কানা দেখে হাসে,
বোবায় তাহার জিনিস কিনে ডাকছে তারে মূল্য নিতে,
কানা কালা করছে খেলা খেলছে দিবা নিশিতে
সংসারের পর তাইতে বসে, ভেবে পাই না আর দিশে ॥
সেই যে ঘরে বসত করে জেনপরী একজনা,
আছে কর্ণমূল নাক নাই তার চক্ষু দুটি কানা,
অপর মুখে কয় কথা,
হাতে না লেখি চোখে না দেখি মুখে নাই বলার ক্ষমতা
আমি যে অবশ্য কানাই সাধু জানে তা,
আছে তার আজ্ঞাকারী ত্রিপুরারী হরের মাতা,
শুনে লাগে ধন্দ, ভালোমন্দ, গন্ধ মালুম হয় তথা,
মাতালে কি জানতে পারে তা, অপর মুখে কয় কথা ॥
৩৩
জীবনে মিছা চিন্তা করা
সব দেশে সমানে কলেরা,
আমি রাত ভরে জ্বালায় বাতি,
কোন সময় যায় মারা
দারুণ রোগ দিয়াছে খোদা ভাই,
তিন দাস্ত এক বসিতে মারা,
যদি কেউ পাতলা বাহ্যি করে,
তা দেখে প্রাণ বাঁচে না ডরে।
তোমরা সদায় থাকো সচেতন
থাকে না আন্দারে
পাগলা কানাই ভেবে বলে ভাই,
হরদমে ডাকো সেই আল্লারে।
৩৪
তুই কেমন করে যাবি রে পারে
তোর জীর্ণ তরি তুফান ভারি
তরি বুঝি ডুবে যায় রে ॥
তরির নয় স্থানেতে ছিদ্র নটা,
ঐ দেখো উঠছে তাতে বারি সদা, ভাই রে ॥
তরি হয়েছে রে ডুবু ডুবু
তা দেখে প্রাণ কাঁদে রে ॥
যে দশজন আছে দাঁড়ি
তারা মনের সুখে গাচ্ছে সারি, বসে।
ওরে মহাজনের মাল বলে রে
তাদের তিলেক ভাবনা নাই রে ॥
ওরে বড়ো বোকা মাঝিটি রে,
সে তো জলের গতি বোঝে না রে, ভাই রে।
আবার হালে পানি মানে না রে,
এবার বুঝি প্রাণ যায় রে
পাগল কানাই বলে নাই আর উপায়,
বিনে রে সেই দীন দয়াময়
ভবের নাবিক তিনি চিন্তামণি
তুই ডাক রে ত্বরায় তারে ॥
৩৫
তুমি শোনো, ওগো শোনো,
ওগো খোনকার জী,
তুমি শোনো ওগো মক্কার হাজি,
একটি কথা তোমায় জিজ্ঞাসি,
তুমি যখন ছিলে মার উদরে,
সঙ্গে ছিল আল্লাজি,
কোন মোকামে সেজদা দিলে,
ও তাই বলো খোনকার জী ॥
আজাজিল এক ফেরেস্তা ছিল,
সেও তো বড়ো নামাজি,
ছত্রিশ হাজার বছরের বন্দেগী
তার উপায় হলো কি?
সেই ফারাজির গলায় আবার,
তখ্তি লালতের দেখি ॥
একজন মর্দ হাতেমতাই ছিল,
সেও তো বড়ো নমাজি,
কানাই কয় দেলে ধোঁকা, আমি বোকা,
হয়েছি বিষম পাজী,
বে-নমাজি ইমামতি করে বেড়াই
এই যে দুনিয়ায়,
দোজখ আগুন আমার লাগি হালাল হয়ে যায় ॥
৩৬
তোরা আজব তরি দেখবি যদি আয়,
তরি শুকনো দিয়ে বয়ে যায়,
মন পাগেলা বসে কল চালায়,
সেই তরিখানা গড়ছে ছুতার
করছে সারা কার্য আদি সমুদয়।
তরির তিনশ চৌষট্টি জোড়া
আড়ে পাশে জরিপ সারা
সে তরি ছয়জনা চালায় ॥
যে দিন আসবে তরির খরিদ্দার ব্যাপার,
তরি কেঁদে হবে জারেজার,
দাঁড়ি মাল্লা সব দিবে সাঁতার,
ভাই বেরাদার আত্ম বন্ধু কাঁদবে কত বেশুমার,
কেঁদে মরে ঘরের পরিবার,
ওজু গোসল করাবে জানাজা নমাজ পড়াবে,
সেই দিন হবে রে অন্ধকার ॥
তরি ত্রিবেণীর উজান বাঁকে রয়,
ছয়জনা গুন টেনে যায়,
দুই মুড়া দুইজন মাল্লা বসেছে সদায়,
ভব-সাগরের তুফান দেখে পাড়ি দেওয়া হলো দায়।
পাগলা কানাই বলে হায় রে হায়
মন মাঝিকে কাণ্ডারি করে সুবাতাসে বাদাম টেনে,
সে তরি পাড়ি দেওয়া যায় ॥
৩৭
দুই চাকার রথ দেখেছি
ধুলার এই ধরায়,
কইতে সেই রথের কথা
ছাতি ফেটে যায়।
রথের চারিদিকে ঘেরাও করা,
মধ্যিখানে মাণিক জোড়া,
সেপাই সামন্ত তারা রথ চৌকি দেয় ॥
চাকার নিচে দুইখানি তাক্
দেখতে কি শোভা,
রাতদিন সেই রথে করে
নতুন ফুলের সেবা।
চারিদিকে চারজন চোপদার,
কেউ না কারো হুকুম বরদার,
চূড়ার পর দুই ফুল আছে রক্তজবার,
যেদিন চোরা এসে রথে সিঁদ কাটবে,
পবন আর চৌকিদার
তারা বলবে সারাসার,
রথ থুয়ে তখনি পালাবে,
ভাই রে সেদিন সেই রথের পরে
ডাকাতি হবে
কানাই কয়
দুইখানি চাকা খসে খাকেতে রবে।
৩৮
দুইজন নারী তারা বসত করে
ছা’নচের নিচে,
ওরে তার নিচেতে শলা দিয়া,
ঘর বেঁধেছে জোকারে,
পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে
বসত করি পানির উপরে
ক্ষণে ডোবে ক্ষণে ভাসে আছে তুফান মাঝারে।
ধনের মায়া বড়ো মায়া
পানির ভরা ভরেছে,
ইস্রাফিলের হাতে শিংএ
সদা তৈরি রেখেছে।
গাছের গোড়া ধরে ঝাঁকি দিলে
কি ফল পাওয়া যায়?
গাছের ডাল ধরে ঝাঁকি দিলে
অমূল্য ধন পাওয়া যায়।
ওরে গাছ বড়ো, কি ডাল বড়ো ভাই,
সেও কথাটি পাগল কানাই কয়।
৩৯
দেখে এলাম ঢাকার শহরে
কলের গাড়ি চলতেছে,
বাইশিকল আর হাওয়ার গাড়ি,
কতই বোল বলতেছে,
আমি ধন্য বলি সেই মিস্ত্রীর
তাতে বোম পুরে দেছে,
গাড়িতে মাল টানিতেছে ॥
বলব কি সেই গাড়ির কথা,
ও সে তিন চাকায় চলে,
খুঁজে এলাম সে মিস্ত্রীর
যদি পাই নাগালে,
যত্ন করে রাখতাম তারে
ধরে গাড়ির মাঝারে,
পাগলা কানাই ভাবতেছে তাই,
এসে ভবের বাজারে ॥
আঠার জন মাস্টার দেখো,
সেই গাড়ির আছে,
একজন পালায়ে গেলে,
সব পড়ে রবে,
এত সাধের গাড়ি আমার
মাটি যে হইবে ॥
৪০
নামটি আমার পাগলা কানাই জাতে মুসলমান,
হিন্দু লোকের বাড়ি আমরা করিতাম গাহান,
ব্রাহ্মণ পেলে আমরা করি কোটি কোটি প্রণাম,
সে নাম নারায়ণের সমান ॥
কি হিন্দু কি মুসলমান এই ভবের পরে,
বিষ্ণু হরি দশের জন্ম মুসলমানের ঘরে,
এ কথা লেখা শাস্ত্র রে
সেই শাস্ত্র আছে জমা পণ্ডিতের ঘরে
এ কথার নিন্দা যে করে,
ভবে শাস্তি হয় গো তার তরে ॥
মোহনপুরের কেশব লাহিড়ীর কি দশা হইল,
বিষ্ণু কাইতে বিসমিল্লাহ তার মুখেতে এলো,
ও সে যে কুল মজালো,
ব্রাহ্মণ হয়ে মুসলমানের নিন্দা যে করিল,
ও বেটার জন্মের দোষ ছিল।
৪১
নিজে কানাই রঙ চেনে না,
ভুল পড়ে যায় বলি,
ডাংগা ডহর হাতড়ে বেড়ায়,
বসে না সে রঙের পাড়ায়,
মিছে কেবল ডোংগা ঠেলে ফিরি
যে জানে গহীন জলের খবর
তার কাছে কি ছাপাই আছে,
লাল মতি আর জহর,
রসিক জানে রসের গিয়ান,
অরসিকের জঙ্গল সমান,
মিছে কেবল চিনির বলদ
চিনি বহা সার।
দেহে আছে বিষম নদী,
জোয়ার বচ্ছে নিরবধি,
সাধু জানে তাই,
পানি নাই সেই নদীতে
মানুষ মরে দিনে রাতে
ভয়েতে প্রাণ কাঁপে রে ভাই ॥
৪২
নিশি প্রভাতকালে,
ওরে বিনয় করে কাঁদে বিবি সখিনা,
ও তোরা নিষ্ঠুর পাষেণা
এই কালে ডুবে এল সোনার মদিনা।
আমি ছিলাম নারী অবলা,
তাতেও না দিস রে আল্লা,
পাথর শোক জ্বালা, হায় আল্লাতালা,
এ নবীন বয়সের কালে আর কত সয় জ্বালা,
আমি ছিলাম নারী অকুমারী,
তখন না ছিলাম রে আমি ও কার প্রাণের বারি,
পাগলা কানাই বলে, এ নবীন বয়সের কালে,
স্বামী যায় ছাড়ি।
৪৩
পহেলা দুনিয়া সৃষ্টি কে করিল—
তাই শুনো ওরে ভাই
কথা চাঁদ সভায় জানাই।
লোক বলে পাগলা কানাই
বুদ্ধি জ্ঞান তো নাই,
ঐ মক্কার ঘরটা কে বানাল
সেই মিস্ত্রীর নাম চাই
হাওয়া আদম যখন
এই ভবে এল,
কোথায় লাঙল কোথায় জোয়াল পেল,
কোথায় পেলো লাঙলের ফাল,
কামার কে ছিল,
বয়াতি এই সব কথা বলো
কোরবান, ইদু, বিন্দু, যাদু,
এরাই চারজনা,
কথা সভায় বলো না
সভায় না বললে গোনা,
লেখবেন রব্বানা ॥
৪৪
পাগল কানাই বলে,
আমি মিছামিছি আসিলাম এই ভবে,
আমার আখেরে কি হবে
কোন দিন যেন শমন এসে,
দুই হস্তে রশি দিবে ॥
সেদিন ইষ্টিকুটুম দরদের ভাই বোন তারা,
তফাৎ বসে কাঁদবে
কেউ খাটের বাঁশ বাঁধবে
কেউ গোর খোদবে
আহারে দরদের বাপ মা
শিওরে বসে কাঁদবে ॥
সেদিন কাপড় চাদর
ফেলে রেখে খেলকা দিবে গলে,
সেদিন ডোর কোপনী পরাবে
পড়তে হবে দুখের অনলে,
গগনের চাঁদ পড়বে খসে পাতালে ॥
৪৫
পাগল কানাই বলছে ভাই,
ছোটোকালে দিন আমার নাই,
এখন হয়েছি ভাটি,
জোয়ানকালে বলো ছিল মোট অটুটি,
ষোল চুংগার বুদ্ধির ভাই,
গেল এক চুংগার মধ্যি,
রাত্রি দিন আমি বসে তাই ভাবি ॥
যখন যৌবন ছিল দেহের সাথ
কোঁচা মেরেছি তিন চার হাত,
গিয়াছি চলে দেমাকের সাথ,
এখন হয়েছি বেজুত সে জুত কাল,
শেষকালে কি এই বদ হাল,
হাল দেখো ভাই পোশাক সব ছেঁড়া
কেবল হাটে যেতে উপড়া পড়া
কত কি করা,
আমি দাঁত পড়ে হয়েছি বুড়া ॥
তখন কতইজনা করত আদর
বলত কানাই, কাছে বয়,
এখন দেখলে পথে ঘেন্না করে
সকলে মুখ ঘুরায়ে রয়,
নতুন কালে আদর কত
পুরান কালে ঢেলার মতো
অনাদরে থাকতে হয় ॥
৪৬
পাগল কানাই বসে করতেছে ধিয়ান,
দুই দাঁড়ে এক জাহাজ চলে,
সে জাহাজ পানি ছেড়ে চলে শুকনার পর,
ভাই রে সে এক আজব কল,
সে জাহাজ শুকনাতে ভাসে আর তার মধ্যে জল।
জাহাজের মধ্যে আগুন পানি বোঝাই মালামাল,
ও ভাই মাঝি হাল ছোড়ো না হও সামাল সামাল
যেদিন শমন আসিবে জাহাজ ডুবিবে
মধ্যমাঠে হবে হাঁটুজল,
দাঁড়ি মাল্লা সব ছেড়ে পালাবে
সাধের তরি শুকনার পরে হবে রসাতল।
৪৭
পাগল কানাই বলে সাধের তরি রে চলছে ধূমাকলে,
কখন যেন বাও এসে তারে কাত করে ফেলে।
ওরে সামাল, সামাল, সামাল মাঝি নাও লাগাও সকালে
বিষম পাক সে নদীর ঘাটে,
খোকনা দিও ডাঙ্গায় এঁটে,
কাছি দড়ি মানবে না রে ভাই শেষে প্যাচ পড়ে ॥
এতই সাধের মালমাতরি রে গুড়া সারি সারি,
কোন ঘাটে লাগাব ডিঙ্গা রে বলো ব্যাপারী,
যেমন নৌকা তেমন মাঝি তেমনি নায়ের গুণারী
ভুলো না মন পরের ফোঁসে,
নষ্ট হবে আপন দোষে,
কখন যেন ভাটায় পড়ে রে এ ডুবে মরি
লাভ করিতে আলাম ভবে রে
বলাম পাপের ভাড়া,
দিনে দিনে নৌকা আমার হচ্ছে বাইন এড়া
এখন কি ধন লয়ে ঘরে যাবো রে
ও মন চোরা ॥
৪৮
পাগলা কানাই কয়
পুত্র শোকে হলেম অজ্ঞান,
কাঁদে মায়ে বাহু তুলে,
বেটার কাংগালী হয়ে,
হায় রে দারুণ বিধি
কোন দোষে বৈমুখ হলি,
দিয়ে ধন কেড়ে নিলি,
সইবে কত প্রাণ,
তোর শোকে কাঁদতে কাঁদতে
গেল দুই নয়ান,
সার করলাম ধরাতে শমন
রয়েছে পুড়া জীবন
যেমন শক্তি শেলে লক্ষ্মণ মলো,
সেই দশা আজ আমার হলো,
যেমন রাবণের চিতার মতন
পরান সদায় জ্বলতেছে
পুত্র শোকে এ মন আমার
কতই কথা বলতেছে ॥
বিদেশে যদি থাকত,
মনে পলে বাড়ি আসত,
আমার ঠাণ্ডা হোত প্রাণ,
যখন রই সোনার খাটে,
তাতেই কি ঐ শোক মেটে
ঐ শোকে প্রাণ বাঁচে না বলব কার কাছে ॥
৪৯
পাগলা কানাই কয়
শোনো রে সুখের পাখি
তোরে হৃদয়ের মাঝে যত্ন করে রাখলাম বড়ো সুখী,
ওরে কি দোষ দিয়ে যাবা ছেড়ে দিয়ে মোরে ফাঁকি,
তুমি রয়ে রয়ে মারো শিকল ঝাঁকি,
শোন বলি রে ওরে পাখি তুমি নিগুঢ় কথা ধরো,
তুমি খাঁচার পাখি খাঁচায় থেকে সাধ্য সাধন করো।
ওরে পথ ছেড়ে অপথে গেলি ও পথে ডুবে মরো
সদায় দীনবন্ধুর নাম জপনা করো।
পাখির কেমন মায়া বুঝতে পারলাম না,
রূপের খাঁচার সোনার পাখি,
প্রেমের পাখি জোরে দুই আঁখি,
মোরে ছেড়ে যেও না,
গেলে দেখাশুনা আর বুঝি হবে না ॥
৫০
পাগলা কানাই কয় এসে ভবের বাজারে,
রোজা নমাজ যে জন না করে,
সবারই এক লাহনতা পাবা
হিসাবের কালেতে,
নমাজ দায় আসবে শমন
বাঁধবে তোর নিবন্ধের বাঁধন,
সেদিন কতই কাঁদবি আফসোসের কাঁদন
ভবে আইসে কি কাম করিলি
ওরে আমার মন,
হেলায় হেলায় গেল জীবন
আমি করলাম না সাধন, ভজন।
হোলো কোনদিন দুনিয়া সৃজন
দেহের মধ্যে কোন জাগাতে
আমার আল্লাজির আসন।
৫১
পাগলা কানাই কয় কর্মকার এ রথ
গড়াইলি তুই কি ভাবে।
চাকায় যারা চাক লাগাইয়া কুঠরি
ভাগে ভাগ।
এ চাকা ঘুরছে কি পাকে
উহার এক খোপে কুঠরি রাখে
আরেক খোপে বাটাল দুইটি
এ কত চিজ তাহারই মর্জি,
উহার আট কুঠরি নয় দরজা
চড়নদার তার ষোলজন,
উহার মাঝখানে বসা আছে
গিরি আর মহন্তজন
সে টানতেছে পবন ॥
৫২
পাগলা কানাই বলে
আমার রথ কি এখন চলে,
এ ঘোড়া রথ চলে না রে,
চালাইছি ঈশান কালে
সাবেক বলে কল বিকলে
এ ঘোড়া রথ চলে না রে।
আমি চালাইতেছি ঠেলেঠুলে
যে ঠেলতো সে ঠেলে না রে
ঠেলতে ঠেলতে জীবন গেল
ঠেলা আসে না,
ঐ রথে ছিল যারা
ঐ সব সরে দাঁড়ায় তারা,
ইন্দ্র, চন্দ্র, ঋতু তারা
প্রবোধ মানে না।
কানাইয়ের রথ চলে না।
আমরা ষোলজন একসাথ হয়ে,
কতক দিন দিলাম বাহার,
পাগলা কানাই বলে এখন টানাটানি সার
এ রথ চলবে না রে আর।
৫৩
পাগলা কানাই বলে
আমার সুখের দিন বয়ে যায়,
কোন দিন যেন আসবে
কাল শমন রায়।
যখন আসবে কাল শমন রায় যখন বসি নিরলে
দগ্ধ হই চিন্তা অনলে,
পরের ভাবনা ভাবতে আমার দিন যায়,
যখন ছিলাম মাতৃগর্ভে
গুরু ভজবো বলে ছিল মনের বাসনা।
সেও আশা নিরাশ হলো
কাল যম এসে ধরে নিলো।
বিধি কি দায় ঠেকাল যন্ত্ৰণা,
তাই ভেবে ও আমার মন
পরের ভাবনা ভাবো কি কারণ,
এই পর কি আপন হবে
সকলই ছেড়ে যাবে
অসময় সাথী কেউ হবে না,
তাই বুঝে চল রে মন রসনা।
৫৪
পাগলা কানাই বলে, অন্ধকারে অন্ধকারে ময়,
ডিম্বু ভরে নৈরাকারে আল্লাতালা ভেসে রয়
আল্লার কাছে এই দুনিয়াতে কয়জনা পয়দা হলো তাই।
কয় কারেতে বেহেস্তের পয়দা কয় কারে দোজখ,
কয় কারেতে পয়দা হলো, আলহামদ দুই দরুদ ॥
কেমন মার উদরে ছিলেন, শোনেন ছায়াজি,
যোগ আসনে বসে নাম জপিয়াছ কি?
উদরী হয়ে ভ্রমে পড়ে দেখিয়াছ কি ॥
৫৫
পাগলা কানাই বলে, ও গুরুধন,
ভজিব তোমারই চরণ,
তোমার চরণ আমার জীবনের জীবন,
আমি ঐ চরণ করি স্মরণ,
ঐ চরণে হব মুক্তারণ,
আমি যে, করি সেই মনন
শুনি গুরুর বাক্য বলবান,
আর সকলই বাহ্য জ্ঞান,
আমি গুরু পদে সঁপেছি প্রাণ,
আমার দেহে করো ফুলের বাগান ॥
কেমন গুরু চিনে নেব
গুরুর হাড় খাব আর মাংস খাব,
চামড়া নিয়ে ডগর বানাবো,
খাঁদার পানি গুরুর খাওয়াবো
গুরুকে কি অল্পে ছাড়িব ॥
৫৬
পাগলা কানাই বলে ও মন রসনা,
গুরুর চরণ করো সাধনা,
শমন জ্বালার ভয় রবে না ভয় রবে না,
আপ্ত তত্ত্ব, পরম তত্ত্ব—জ্ঞানীজনে জানে অর্থ,
অজ্ঞানে তা জানে না,
সেই গুরুর চরণ নিষ্ঠুর অতি
তারে কেউ চিনল না, চণ্ডীদাস ও ধনঞ্জয় ঠাকুর রে
কারে কেউ ছাড়তে পারল না ॥
নবরসে নব কীর্তি
করতে পারলে আদর ভক্তি,
নয়ন ভরে দেখতে পাবি চব্বিশ পরগণা
আরো গুরুর নামে ডংকা মারে,
যাবি রে মন ভবপারে,
যাবি রে মন রসনা,
সেই গুরুর চরণ করলে স্মরণ মরণ হবে না।
তাই, পাগলা কানাই বলে,
ও কোরবান মরণে কেউ সঙ্গী হলো না ॥
এক মরণ মরছিল কবির জোলা,
তার আফসোসেতে পাগলা ভোলা,
কাঁধে লয়ে আঁচলা ঝোলা,
আরো হাড়ের মালা,
সে যে শ্মশানে মশানে থাকে,
সর্ব অঙ্গে ভস্ম মাখে,
সর্বদায় থাকে গাছতলা,
রূপ নিহারে বইসে সদায় বাজায় বোম ভোলা,
আরো অহল্যা পাষাণী ছিল,
সেই জানে মরণের জ্বালা ॥
৫৭
পাগলা কানাই বলে ও মন রসনা,
বুঝাইলে বুঝ মানো না,
ভবে আসা-যাওয়ার যন্ত্রণা
জানলে আর ভবে আসতাম না,
আসি বলে ভবে এসে ভাবছে আর যাওয়া হবে না,
আশায় আশায় দিন ফুরাবে
যাওয়ার দিন নিকট হবে,
যেদিন শমন আসে বাঁধবে কষে,
কাঁদবি তুই একা বসে
কাঁদন তোর কেহই শুনবে না ॥
তাই বুঝে করো সাধনা, দিন গেলে কেউ রবে না,
প্রেম মায়ায় মজে খাও মিছরিদানা,
আলেম ফাজেল তাই বুঝে আর পাপ সাগরে ডোবে না,
কেউ হয় রাজ্যত্যাগী, কেউ হয় অনুরাগী,
কেউ আবার হয় বৈরাগী, সংসারের আশা রাখে না,
অধীন পাগলা কানাই কয় মন পাগলা,
কেনে করো অবহেলা,
ঐ বুঝি ডুবলো বেলা,
ছাড়ো এবার কাম রসের খেলা,
শমন যদি করবে দমন, সার করো নাম মালেক আল্লা
পাগলা কানাই কয় শোনো রে কোরবান আলি
বৃথা ভবে আইলি গেলি,
নিজের ধন পরকে দিয়ে, কাঁধে লও আচলা ঝোলা ॥
৫৮
পাগলা কানাই বলে গানের তালে,
ঠেকবি রে মন কালাকালে এই না মায়ার জালে
ও তুই ভবে এসে রইলি বসে
চিনলি না মন আল্লা রাসুলে
তুই দেখ রে নয়ন মেলে,
আর হবে না সাধের জনম
পাবি না দিন গেলে
গেলে দিন আর হবে না
দিন কানা কাচ ধরিস মানিক ফেলে ॥
যেদিন ধড় ছাড়িয়ে মালেক যাবে উড়ে
খালি দেহ পড়ে রবে, এই ভবের বাজারে
সে যে মাতা পিতা কন্যা কেউ চাবে না ফিরে,
ও নিবে যমুনার তীরে।
সোনার অঙ্গ দিবে পুড়া না হয় দিবে কবরে
দয়া হবে না ধড়ে
দেহ থাকতে মন হও রে চেতন
ভুল করলে হারাবি সব ধন,
যার করো রায়তগীরি, দেও না তার মাল গুজারী,
আসল করলে চুরি,
আদালতে আরজি দিয়ে করবে ডিগ্রি জারি,
ওরে তোর শমন আসবে বাড়ি,
মাল কোরকের পেয়াদা এসে
হাতে দিবে দড়ি,
সকল ধন লুটে নিবে,
শূন্য হবে তোর পুরী ॥
৫৯
পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে কি আজব তরি,
এক রঙ্গের মিস্ত্রী তরি গড়লো কোন ফিকিরি,
আঙ্গুল আষ্টেক খাইটা এনে গড়াইছে তরি
হলো এক বেটার পর তিন বিটি চড়া,
আমি তাই ভেবে মরি ॥
তরির আগা নৌকায় একজন থাকে,
আর একজন ডওরায়,
আর একজন পাছা নৌকায় রয়
আমি ভাবতেছি সদায়
তলে পড়ে বেজো বিটি বলছে হায় রে হায়,
তাই পাগলা কানাই বলে তোর গুনটানা বিটি,
কোন দিন জান পালাইয়া যায় ॥
আরো পদ্মানদী বিষম নদী খেলছে তুফান,
মন, সুখে দেও না পাড়ি বসে রইছো কেন?
তরিতে সদায় ওঠে জল ও তরি করছে রে টলমল,
ত্রিবেণীর ত্রিধারায় উজান বচ্ছে জল,
তাই পাগলা কানাই বলে তোর গুনটানা বিটি,
তারে রাখিও সাবধান ॥
৬০
পাগলা কানাইয়ের বয়স গিয়াছে,
হয়েছে লড়বড়ে
আমার দাঁতগুলো সব গিয়েছে পড়ে,
ধুয়ো বাঁধব কেমন করে,
কথায় আমার রস বাঁধে না,
ফস করে কথা যায় সরে,
সবে বলে পাগল কানাই ফরুম খায় ধরে ॥
আরে ওরে জোয়ান কি বাহারে সবে,
কতই রঙ দেখায়,
এখন সবে বলে সরে বসো
ছ্যাপ পড়ে মোর গায়, আফসোসে ছাতি ফেটে যায়,
মাটি নাই গাছের গোড়ায়,
হেঁটে যেতে উচাট খেয়ে
উপড়া পড়ি গাছতলায় ॥
আরে ওরে একলা ঘরে শুয়ে থাকি,
ভিন ভিনায় মাছি,
বলো দেখি ভাই কোন ধুয়ো গোছি,
আমি যে ভাবতে আছি,
রাতদিন আমার হাত আজুর নাই,
চোখে ক্যাতর মুছি ॥
৬১
পাঁচ পাঁচ পঁচিশের বন্ধ,
জমির তো অনেক ছন্দ,
সাধুতে করে পছন্দ
জ্ঞানের লাঙ্গল দেয় জুড়ে।
ছয় রিপুকে বশ করিয়ে
জমি আবাদে ফেলাও সারে,
আত্মাকে প্রহরী রেখে
মরি! হায়, হায় রে
জমিতে জ্ঞানের লাঙ্গল বাইরে ॥
সুরসের রসিক যারা
গুরুর বীজ করে রোপণ,
বুনে রে বীজ ক্ষেতে তারা যোগ মতন,
বীজের অংকুর হলে বোকা,
বলি যে তোমার কাছে,
যোগমত বুনলে সে বীজ,
জমি পাখাল যাবে কিসে?
অধীন পাগলা কানাই বিনয় করে,
মুর্শিদের শ্রী চরণে
শোনো বয়াতি ভাই
তোমার সঙ্গে পাল্লা করা,
যেমন হাতড়িয়ে মাছ ধরা,
অনুমানে বুঝে নিলাম
ও ব্যাটা তুই আসল ভিটে ছাড়া ॥
৬২
পাবনা জেলার সাপটের সন
এই দ্যাশে আইলাম,
আইসে জনম ভরে ঘুরে ফিরে,
বাড়ি গেলাম,
বড়ো বেয়াক্কেল হলাম।
কেউ বলে পাগলা কানাই,
কেউ বলে নাই সে নাই,
লোকের বিশ্বাস হলো না ॥
তোমাকে বলি ওহে লালচাঁদ
তুমি যাইও না,
তুমি যাইবা উত্তর দ্যাশে
আমি যাইব না,
কেউ বলে পাগলা কানাই,
লোকের ভাবটি বোঝে নাই,
লোকের বিশ্বাস হোলো না ॥
৬৩
পার করো হে, প্রেম পাটুনী,
মথুরাতে যাব, দই-দুগ্ধ বেচে তোমার
উচিত মাশুল দেব,
দই-দুগ্ধ দেখে তুমি
করছো কেন আনাগোনা,
পাটনী জাতির স্বভাবের দোষ,
দই-দুগ্ধ খেতে জানে না,
ঘৃত আর মাখন ছানা,
খেলে পরে হজম হয় না,
চীটে গুড় পচা মিঠাই,
খাও হে সদায়,
দই-দুগ্ধের দর কিছু জানো না,
পাগল কানাই, যুগল চরণ,
মেনেও মানো না ॥
৬৪
প্রেম বাজারে প্রেমের হাটে
মন চলো চলো,
সাধ্য সাধন করো, গুরুর চরণ ধরো,
জুয়াচোরের সঙ্গ লয়ে
কেন ঘুরে মরো,
এই মানুষে আছে মানুষ গো—
তারে সাধন বলে ধরো ॥
অনুরাগে রাগের ঘরে
রাগে করে ভর
ও সে একলা একেশ্বর, রাগের উপর,
রাগ হইতে পাক হইল, হইল চার কাল,
পাগল কানাই বলে রে ভাই হও সামাল ॥
বার মাসে বার চন্দ্রের অমাবস্যা হয়,
তা পণ্ডিত লোকে কয়, কোরানে শুনতে পাই,
গুণে পড়ে আলেম লোক সব,
ব্যক্ত হয়ে যায়,
সূর্যের অমাবস্যা বলো
কোন দিবসে হয় ॥
৬৫
ফুল ফোটে খাঁটি যোগে,
দিবা অন্তে নিশিভাগে,
রসিক দেখে অনুরাগে,
তিন পিনীর তিন ধারে,
অরসিক যেতে না রে,
তুলতে সে ফুল সব হারায় মূল,
কাম কুমীরে ঠাঁয় তার আগে,
আস্ত কিছুই না রাখে ॥
বারো মাসে বারোটি ফুল
চার যুগ ধরে ফুটতেছে,
কোন ফুলে রাসুল,
কথার মানে করো উল,
তারে ধরবে বলে ফকির বৈষ্টম,
রাত দিন মাথা কুটতেছে
আমি এই কানাই পাগল,
মাথাতে সদায় হয় গোল,
তারে ধরবো কেমন করে।
তারে ধরতে শিব শ্মশানবাসী,
কৃষ্ণ পাগল হয় উদাসী,
হাতেতে লয়ে বাঁশি,
বৃন্দাবনে ফেরে ॥
৬৬
ফুলের গাছ গড়েছে দীননাথ এক মিস্ত্রী,
চার ডালে তার কুড়ি পাতা,
দেখতে কি বাহার তারি,
গড়ে ছুতোর আপন মনে,
কানাই কি তার সন্ধান জানে
সে যে বিনা বোঁটায় জোড়া।
দিয়ে জোড়া করে পোক্ত,
দিনে দিনে হলো শক্ত,
অষ্ট মাসে অষ্ট কুড়ি,
নবমাসে নব সংযোজন
দশ মাসে ফল পূর্ণ হয়ে ভবে হয় পত্তন ॥
৬৭
বাদি মন করো সাধ্য সাধন,
হয় যাতে নিরিখ নিরুপণ।
তাই বুঝিয়ে ও মন ভোলা,
ভজো গুরুর শ্রীচরণ।
পিছের দিকে দেখো না চেয়ে,
নিকটেতে আইছে কাল শমন ॥
তাই বুঝে আপন কাজে মজে,
ঠিক পথে চল মন রসনা,
ধন-দৌলত জোয়ারের পানি,
ভাটা পলে আর থাকবে না,
সঙ্গে তোর ছিল যারা,
জুয়াচোর হলো তারা,
লুটে নিল মহাজনের মাল ষোলআনা ॥
পাগলা কানাই বলে,
বাদী মন চলো সুপথে,
দুধ বেচে মদ কিনে খেয়ে
পড়ছো বিষম কুপ্যাচে,
তোমার উশুলে শূন্য পল,
জমাতে বাকি রলো
কি জবাব দিবা তুমি
সে মহাজনের কাছে ॥
৬৮
বৃন্দে তুমি নিন্দে করো না
আমি পুরায়ে ভক্তের বাসনা,
রাধার কুঞ্জে বন্ধ থেকে
একদিন আসতে পারলাম না।
এক নিশি তুই একলা ছিলি লো—
বৃন্দে তাইতে বাঁচ না ॥
আমি জানলাম বৃন্দে, তুমি অসতী,
তুমি কখন ঘটাবা কুমতি,
প্রাণ বধিবা নিশিভাগ রাতি,
যেমন রামের সঙ্গে রাবণের বিবাদ,
আমায় করলে ঐ গতি,
হাজার হাজার প্রণাম করি লো—
বৃন্দে তোমার পিরিতি ॥
ও বেশে আর কুঞ্জে যেও না,
তোমায় বারণ করলে শোনো না,
বললে কথা গণ্য করো না,
তুমি যমুনায় স্নান করে এস,
নইলে আছান পাবা না,
চন্দ্ৰবদন দুটো আঁখি হে,
তোমার দেখছি টানাটানা
কানাই বলে কৃষ্ণ প্রেম—
অল্পে না যায় জানা ॥
৬৯
ভাই রে গোর আজাবের কথা,
আমার হৃদয়ে আছে গাঁথা,
থেকে থেকে প্রাণ চমকে ওঠে,
যা করে বিধাতা
আমার মুখে সরে না কথা,
হাতে পায়ে কেওড়া দিয়ে
গোরে কবরে খাড়া,
মারবে জুলমতের ঐ কোড়া
হাড়ে মাংসে এক করবে
থাকবে না কোন জোড়া,
কানাই তাই ভেবে ভেবে
হয়েছে নজর ধরা ॥
৭०
ভাই রে ভাই এক আশ্চর্য কথা শুনে
সদায় আমি ভাবিতেছি,
ভাবছি বসে যোগ সাধনে
ঘুম আসে না দুই চোখী,
বসে বসে তাই ভাবি,
চার মাসে মেয়ে
অষ্ট মাস হয় গর্ভবর্তী
তার কি প্রকারে হয় সন্তানাদি ॥
ভাই রে ভাই, আর একটা কথা
তোমায় বলে যাই,
গানের সন্ধান জেনে সব করিবা,
বিচার করবে দশজনা,
তোমায় আমি তাই বলি,
পারব না এর জব দিতি,
হার মেনে ভাই গান গাওয়াতে দাও ইতি ॥
কোন দেবতা পেটে খায় পিঠে হাগে,
চলে ভারি অনুরাগে,
দুদিন পরে কাজ থাকে না,
আখাতে জ্বলে সে-না,
পাগলা কানাই সভায় জানাই
ভাই রে, বয়াতির কাছে শুনে নেনা ॥
৭১
ভবপারে যাবি রে অবুঝ মন,
আমার মন রে রসনা,
দিন থাকিতে মুর্শিদ ধরে সাধন ভজন করলে না,
ও ভবপারের চেষ্টা করলে না,
দিনে দিনে ফুরাইয়া গেল চেয়ে দেখ রে দিনকানা ॥
তোর দেহের বাদী রিপু ছয়জনা আগে বশ করো তারে
ঐ নাম ভুললে পরে পড়বি ফেরে, প্রাণ যাবে হীরার ধারে,
আবার পুলসিরাত পার হবি কেমন করে,
দায়মালী চোর, ওরে গাঁজাখোর, আর কত বুঝাব তোরে ॥
পাগলা কানাই কয় ওরে অবুঝ মন,
আমার মন রে রসনা,
তোমার আজ মলে কাল দুই দিন হবে
এভাবে দিন যাবে না
চেয়ে দেখো রে দিনকানা ॥
৭২
ভবে এসে বিয়ে পুষে
বসত করে সুখ হলো না,
বিয়ে করে রেখে ঘরে,
একদিনও দেখা দিল না,
প্রাণবন্ধু এল না, নবযৌবন গেল অকারণ,
মনের মানুষ পেলাম না ॥
আমি যে গ্রামে বসত করি,
সেই গ্রামে মানুষ রয় ছয়জন,
আবার ছয়জনা বোম্বেটে জুটে,
মোর গাড়ি করে গমন,
করে খেলার আয়োজন,
তারা হেসে হেসে কাছে বসে
আমারে করে জ্বালাতন ॥
বন্ধুর পাশে কানাই বসে
ফুল বিছানা পেতে রই
ফুলের তেল আর আতর গোলাপ,
বিছানায় ছিটালাম সই,
তবু বন্ধু এল কই।
দারচিনি আর এলাচদানা,
পান বিড়ি বাটায় রইল সই ॥
৭৩
ভবে এসে রলি বসে
কাল কাটালি হাসি রসে
বলি মন মায়ার বশে
যেদিন আসবে শমন বাঁধবে কষে,
ও মন সেই দিন তোমার কি হবে
তাই দেখো ভেবে
ভাই বন্ধু সূত দারা কেউ সঙ্গে না যাবে।
তিরিশ মতি পঞ্চ মানিক তাই কবরে সঙ্গের সাথী
তাতে তোর হবে রে গতি—
যেদিন রোজ হাশরের ময়দান পরে
হিসাব নিবেন আল্লাজি,
ও মন তাই ভাবি,
উসুলের জমা খরচ সব রলো বাকি
চেয়ে দেখো ও মন ভোলা
ছাড়ো রসের খেলা,
দেখো চেয়ে ডুবে যায় বেলা,
তোর সঙ্গের সাথী কেউ হবে না
কাঁদবি বসে একেলা
ও মন পাগলা—
দিনের কাম কিছুই করলি না।
ডুবে যায় বেলা।
৭৪
ভবের পর এক সতী কন্যা পয়দা হয়েছে,
চার দশকে চল্লিশ দিনে বিয়ে হয় তার সত্বরে
তিন মাসে গর্ভ ধরে সেই না নারীর উদরে তবু তো সে সতী কন্যা সতী নাম ধরে,
উহার পতিকে নিয়া গর্ভ হলো, অসতী কে বলে তারে ॥
এই যে সতী কন্যার পতি সে যে পুরুষ মন্দ নয়
পাগলা কানাই বলছে বেটা পণ্ডিতি করেন সভায়,
দিন খাটে ভূতের বেগার রাত্রিযোগে ছেলে হয়,
মায়ের কোলে কাঞ্চা ছেলে যেমন দুগ্ধ খায়,
ঐ রকম আওরতের কোলে পুরুষ সে রজনী পোহায় ॥
তাতে যদি না বোঝো রে যত অদ্ভুত
স্বামী হয়ে গেল পেটে ভবে এসে খেলো দুধ,
হারে নির্বুদ্ধি উল্টা চাষা তারাই বোঝে উল্টা বুঝ,
নারীর জন্য খাটতে খাটতে পিঠ দিয়া বের হয় সূত
মায়াজালে মত্ত হয়ে পরকাল হারালি তাবুদ ॥
৭৫
ভবের হাটে নৌকায় চড়ে
আমার কি জ্বালা হলো,
আমার সঙ্গে ছিল পাঁচজন দাঁড়ি,
গুন থুয়ে সব পালালো।
আর ছিল ছয় জুয়াচোর,
আমারে করে বিভোর,
পাছ দুয়ারে মাল বের করে,
আমায় দেনা করিল ॥
তরির ষোল গিঁড়ে
আর বত্রিশ বাঁধন,
ভাঙ্গল তরির চার কোণা,
তাই করি আনাগোনা
শোনো রে ও দশজনা,
বান চাল মেরে উঠল পানি
তরির প্রবোধ মানে না ॥
মুর্শিদ যায় যাবে তোর নামের ভেরম
ঝাঁপ দিবে সাগরে
হয় মুর্শিদ নেও পার করে
না হয়, যা ইচ্ছা তাই করো মোরে,
পাগলা কানাই উঠবে কূলে
তোমার ঐ চরণ ধরে ॥
৭৬
ভ্রমর জানা যায় ভ্রমরা গুণাগুণ
কৃষ্ণ গুণাগুণ—
ও আগুন আগুন বনে ফেলে দিয়ে পায়,
আবার নবদ্বীপ শূন্য হলো হায় ও মরি হায়,
ও মায়ের কাঁদন শুনে নবি কেঁদে কয়,
কেঁদো না কেঁদো না মা গো বলি তোমায়
পাগল কানাই বলে,
এই ভবে আর কেও রবে না, এসব মিছে মায়াময় ॥
ও মিছে অনাহারী রলে কি কারণ?
আইছো একা যাইবা একা সব অকারণ
বেটা পুত্র কেউ কারো না, ও সবেরই মরণ
ও ‘মা’ জানো মা, কেন করছো রোদন
এই নবির উম্মত যত ও তোমায় সবায় বলবে মা,
তাইতে কি তোমার জীবনও শান্তি হয় না?
৭৭
মনের ভাব তো বুঝতে না পারি,
মন আমার খানিক দেয় আড়ি,
যখন নমাজ পড়তে বসি,
মন চলে যায় পরের বাড়ি,
কেমন করে পড়ব নমাজ গো,
মনকে বাধ্য রাখতে না পারি ॥
দশ ইন্দ্র রিপু ছয়জনা,
কেউ শোনে না কারো কথা,
একি হলো যন্ত্রণা,
জুয়া চোরের সঙ্গ লয়ে গো,
হারালাম ষোল আনা ॥
দশ ইন্দ্ৰ কিসে বাধ্য হয়,
গুরু গো তাই বলো আমায়,
সেও কথাটি না বলিলে,
ছাড়াছাড়ি নাই তোমায়,
কানাই বলে, শোন বলি গো,
তুমি মোরে আজো চিন নাই ॥
৭৮
মানব ঘরে বসত করা
এবার বুঝি হলো দায়,
চোর এসে ঢুকেছে ঘরে
আমার ডানে আর বাঁয়,
কত মণিমুক্তা বোঝায় ঘরে,
তাইতে মনে সন্দ হয়
অমাবস্যা লাগলে পরে
চোর এসে নিদানে বয়,
ঘরের মধ্যে চেতন যারা,
তারা অতি সুখে নিদ্রা যায় ॥
সেই যে চোরে এসে ঘরে
মাল গুদামে আগে যায়
যত ছিল চাবি ছুড়ান
আছে চোরেরই ঐ ঠাঁই
সেই যে চোরে এসে ঘরে
মালামাল সব বেঁধে লয়
খালি ঘরখান দেখে কাঁদে
মোর সুখের মনরায়
সেই যে চোরে এসে ঘরে,
চারদিকে উঁকি মারতেছে,
আট কুঠরি ঘরখানা
তার নয় দরজা আছে,
পাগলা কানাই ভেবে বলে,
ঘরে দিন-দুপুরে ডাকাতি হয়,
আমি শুনেছি মুর্শিদের কাছে
সেই চোরের নেই আকার ভাই,
কানাই বলে চোরের হাতে হলাম এবার পরাজয় ॥
৭৯
মেহের চাঁদের ধুয়ো শুনে
সন্দেহ হয় কানাইর মনে,
শোন মেহের চাঁদ তোমার ধুয়োর মানে।
দাঁড়ার পরে বার বুরুজ
মাতালে চিনবে কেনে,
লাহুত, নাসুত, মলকুৎ, জবরুত
চারটি খান্দান সে স্থানে ॥
হস্ত পদ কুড়ি চন্দ্ৰ মুর্শিদের বাণী,
জোয়ার ভাটা বচ্ছে দেখো,
সেই দেশ চন্দ্ৰহিনী
গুরুর চন্দ্র ধারা দেয়
রাহুল চন্দ্র মৃণালে,
অমেশচন্দ্র জানেন সকলে,
বায়তুল্লার ঘর মোজাপ রেখে
কর্ণে আজান দিতেছে
চক্ষু বটে’ সেজদা করে,
জবানে কেরাৎ পড়তেছে।
বার মাসে বার চাঁদটি হয়,
আমি বলে যাই ধর্মরাজ সভায়,
বিচার করে শুনবেন দশজনায়,
বারিতালার ঘর আছে খোলা
কর্ণে আজান দিতেছে
পাগলা কানাই এই কথাটি
অতি বিনয় করে বলতেছে ॥
৮০
যদি সাধন করতে সাধ থাকে মনে,
তারে ডাকো হে দমে দমে
নইলে সাধন হবে কেমনে?
আমার দয়াল গুরু দয়ার সাগর,
সবার মনের ভাব জানে।
এক ধারা মানে যেই করে সাধন
হয় তার ভজন গুরুর চরণ ॥
যে জন দোদেল বান্দা
কলমা চোর হয়,
তার ভজন সাধন বৃথা যায়,
দরে ইঁদুর থাকতে দরের মুখ ছাপায়,
করে মানুষ দেখলে আল্লা আল্লা,
দূরে যেয়ে নদা নাচায়;
ভাই রে ঐ সাধনে কাম হবে না
সাধুর নিশান চোরের নায়,
যে ভাবে ভাই যাহার ভক্তি হয়,
দয়াল সেইভাবে তাহার দেখা দেয় ॥
আমার দয়াল গুরু সবের মন যোগায়,
সে ধনী মানী পার করে না,
কাঙালের নায় সখা হয়
লাগবে না তার পার ঘাটের কড়ি,
তাই পাগলা কানাই কয়,
যে উঠতে পারে সেই তরিতে,
তাড়াতাড়ি সে পার হয়ে যায় ॥
৮১
যা আছে ভাণ্ডারে
ব্রহ্মাণ্ডে রয়েছে
বার বুরুজ চৌদ্দ খান্দান
তোমার দেহেতে আছে।
চার কুতুব ষোল প্রহরী
বলো, দেহের কোথায় কোথায় আছে।
মুখ মানে মক্কা,
মুর্শিদে বলেছে,
দেহের উপর তলায় তাজ মোকাম,
দলিলে লিখতেছে,
শুনি চার আজান আছে—
আবার কে আজান দেয়
কে সালাম ফিরায়,
বলো কে কে নমাজ পড়তেছে
আসমানেতে একটি চন্দ্ৰ
কোনখানেতে উদয় হয়,
বার মাসে একটি চন্দ্ৰ
বারটি নাম তার কয়,
তোমার দেহের মধ্যে
সাড়ে চব্বিশ কুঠরি আছে,
কোন নামটি ধরে,
কথা বলো আসরে –
সাড়ে চব্বিশ চন্দ্রের কথা গো,
একে একে বলে যাও মোরে
পাগলা কানাই বলছে কথা,
অতি বিনয় করে ॥
৮২
লা-ইলাহা পড় নেক পথে চলো
বদ পথে হয়ো না খাড়া
আজাব হবে বড়ো।
দোওয়া গঞ্জল আরশ পড়ো
তিরিশ রোজা পাঁচ ওক্ত নমাজ,
কেন তুমি ছাড়ো।
অমন পাগলার বেশে ফের,
তিনশ ছুরার মোজাম নিয়ারে
নবির তরিক ধরো ॥
ভাই রে ঈমান আছে কার,
তোমরা বিচার করে দেখো,
মুনশি মৌলভী তারা ছোয়াল করে ফেরে,
তারা বেইমানি করে।
বেদাত লোকে ধরে নিয়ে কাফেরানা করে,
তারা নিজের তফিল ভরে,
দুইটা পয়সার লালস করলে পরে
নসিহত হবে কেমন করে ॥
ভাই রে নমাজে করো নেগা,
তাতে বেহেস্তে পাবা জাগা,
সোনার খাট পালঙ্গ আছে
বেহেস্তের সামিয়ানা
আছে সোনার বালাখানা
নেকীর কাছে হারাম দোযখ
বদীর কাছে মানা,
আছে চার কেতাবে জানা
তাই বুঝে মন ঠিক পথে চলো
কানাই কয় একদিন সব হয়ে যাবে ফানা ॥
৮৩
শত রঙের দেখি রে গাভী এক রঙের দুধগো দেখি,
তবে কেন ত্রিজগতে মানবিচ করতেছি,
এক মায়ের দুধ গো আমরা বাপে বেটায় খেতেছি ॥
সে বড়ো আজব কথা, কথা শুনে লাগে ধান্ধা,
এক মায়ের দুধ গো দেখো খায় বাপে বেটা,
তার সাক্ষী শাস্ত্রেতে লেখা আছে, জরু হয় মাতা ॥
কথা শুনে লাগে ভয়–
সেও কথাটি শুনতে উল্টা শোনা যায়
আগে হয় ছেলের জন্ম তার পিছে পিতা জন্ম পায় ॥
পাগলা কানাই যখন ধুয়া বাঁধি, মানে করে বসে কান্দি,
দিবা রাত্রি ও ধুয়ার মানে করতি
থাক পড়ে মূর্খ কহিবে, কত পণ্ডিতে লাগে ধান্ধি ॥
৮৪
শুনে আশ্চর্য কথা প্রাণ তো বাঁচে না,
আমি ভেবে পাইনে ঠিকানা, সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করলেন না
ভবে এক স্তরে আছে তারা দুইজনা,
একজন ছাড়া আরেকজন চলে না
পাগলা কানাই বলে ভাই সকলে
ভেবে পাই না ঠিকানা ॥
তারা এক-অন্নে আছে দুই ভাই,
তারা এক নাম ধরে দুজনাই,
লোকের মুখে শুনতে পাই,
হস্ত পদ চক্ষু কর্ণ নাক মুখ তাদের কিছুই নাই,
বেদ পুরানে নাম পাবা না
কে দিয়াছে তাদের জন্ম,
সে কথা কারে বা শুধাই ॥
দুইটি ভাইয়ের মস্তকের উপর,
দুইটি শিংগা আছে কি বাহার,
দেখ নাকি অসম্ভব কারবার,
দিলে বোঝা হয়ে সোজা অমনি চলে অনিবার
বিনা সোয়ারে চলন নাই তাহার,
বলে কানাই সবারে ভাই সে মর্ম
পেলাম না রে আর ॥
৮৫
শুনে এক আজব কথা,
অসম্ভব এক লীলে,
কোন নারীর পেটের মধ্যে,
আইবুড়া কন্যা ছিল, সে কন্যা পতি বিনা
কি প্রকারে অস্ত্রাশক্তি হলো ॥
সে কন্যার পেটের মধ্যে
তিনজন পুরুষ বসে ছিল,
তার কেবা আগে, কেবা পাছে,
বলো, কেমন করে দনেই এল,
আবার তিন বাপ পো একসাথ হয়ে
সেই মায়ের কোলে বসে,
মা বোল বলে,
স্তোন ধরে দুধ খেল ॥
সেই কথা শুনে মিলে
কয়েকজন বেকুপ হয়ে গেল,
তাই বুঝে দেখে সাধু লোকে,
হাড়ের মালা গলে নিল,
ডোর কৌপিন সার করিয়ে
তারা সব বনে মাথা দিল,
এই না কথা শুনে কানাই
বেকুপ হয়ে গেল ॥
৮৬
শূন্যের পর এক দোরাক্ত পয়দা
দেখতে কি মজা,
সেই দোরাক্তে বসত করে
এসে চার রাজা
মাসে মাসে ফুলটি ফোটে আজব তামাশা ॥
পূর্ণিমার যোগেতে জোয়ার করছে টলমল,
সামাল করে বেঁধে রেখো মন পানির বাঁধাল,
আসমানে সেই গাছের শিকড় জমিনে তার ডাল ॥
সে গাছে বারো মাসে বারো ফুল সর্বলোকে কয়,
পুরুষের ঋতু কোন দিবসে কয়ে দেও আমায়,
পাগলা কানাই বলে, বলো দেখি,
কয় রোজেতে ফুলের গঠন হয় ॥
৮৭
শোন বয়াতি মায়ের উদরে ছিলে যখন
নামটি ছিল কি?
কোন পালি তার আসন ছিল
নামটি তখন জপছ কি?
শুনি চব্বিশ চাঁদ আদি চন্দ্ৰ কিসে হইল,
আলির বাপের কি নাম
কোন চাঁদে হয় চাঁদের খেলা,
কোন চাঁদে হয় কয় মোকাম,
দেহে আরো চারটি খান্দান আছে,
খান্দানের কি নাম
আরো মক্কা মজিদ ঘর
সে ঘরে আজান দেয় কোন পয়গম্বর
তাই পাগল কানাই কয়,
সভায় এসে বয়াতি বলো তার খবর।
৮৮
শোন বলি এই ভবের পর
দেখ রে ভাই চৌদ্দ পোয়ার ঘর,
না জানি কোন ঘরামি
গোপনে বেঁধেছে ছাদ তার,
একখানি পাড় দুটি খাম্বা রে
আছে নয় দুয়ার ॥
যে জন সেই ঘরামি
সঙ্গে ফেরে রাত্রদিনি,
খ্যানে সে হয় জন্মদাতা
খ্যানে জননী,
খ্যানে হয় সে পরম গুরু রে
ও সে সর্বগুণী ॥
এ বড়ো আজব কথা
না খুঁজিলে পাবা কোথা,
সে ঘরে বিনে সুতায় চার আটন ছাটা,
এ বড়ো আজব কথা রে কানাই ভাবছে শুনে ॥
৮৯
শোন বলি মন পাগল
সারবে তিন তাসের খেলা,
এই না ভবের হাটে,
তোর সঙ্গে আছে ছয়জন দাঁড়ায়ে
তারা দুষ্ট আর বোম্বাটে
কেউ তারা সঙ্গে না হাঁটে
তারা কাম ছেড়ে যায় লোভের ধারে মন
তোফিল বাঁধে আইটে ॥
দুই মুড়া দুই মহরী খাড়া
জমা ওয়াশীল লেখে তারা
দাখিল হয় একজনের কাছে,
দলিল-পত্র সব নিকাশের কাগজ,
ও আবার লক্ষ্য করে যারা,
যদি কুমতি হয় এক দরা,
পাগলা কানাই বলে ও আমার মন
সেদিন নিকাশের চোর পড়বে ধরা ॥
তাই বুঝিয়া ও আমার মন
করো সেই আপ্ত সাধন
সাধন করো ত্বরা,
তিন তাসের খেলা সাঙ্গ করো মন
খেলা করো আজ সারা ॥
৯০
শোন ভাই সকলরা তোরা শোন গাড়ির খবর,
এক গাড়িতে ছত্রিশ জাতি করতেছে সুমঙ্গল
তোরা শোন ভাই সকল।
তাই পাগল কানাই কয় রাস্তায় গাড়ি পত্তন হবে যখন,
বাতাসে মিশবে যোগিগণ।
আর আছে যত যাত্রীগণ।
আর আছে যত যাত্রীগণ, বাতাসে হবে মিলন,
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্যগণ
সেদিন তারা সকলই ছেড়ে যাবে, একা বসে রবে মন।
আবার বিলাতে যখন গাড়ি করিবে গমন
ষোল ষোল বত্রিশ জনে চালাও গাড়ি রাত্রদিনে,
ও মনের মতন।
সে গাড়ির টিকেট মাস্টার যে জন হয়
ঘাটে ঘাটে টিকিট লয়,
তা দেখিয়া ছয় পাগলে করছে গোল,
শোন রে ভাই সকল
আল্লা হরি কিছুই বলে না সেই নিত্য ধামের পাগল
যখন গাড়ি বিলাত থেকে ফিরে আসবে
অন্ধকারে, ধন্ধকারে, কুয়াকারে, নৈরাকারে
সেদিন ছিল কেমন
আরও দশ মাস দশ দিন সেইখানে থেকে
ভবে এসে হলি চেতন।
৯১
শোনো ওরে পাগল মন,
কেবা পর কেবা আপন,
পরের জন্য ঝুরে মরো
তুমি কি কারণ।
সাঁই বিনে নাই গতি,
দুঃখে সুখে যে জন হয় সাথী,
সকলেরই আহার যোগায় জগৎপতি,
মউতকালে যাহার নামে রে
মন পাবা রে সুমতি।
যে তারে না চিনে
খুঁজলে পাবা না ত্রিভুবনে,
ভক্তির সাথে দেখো রে জানে প্রাণে,
যে তারে চিনতে পারে
আছে তার চোখের কোণে ॥
৯২
শোনো বয়াতি একটি কথা শুধাই তোমারে,
এক মৃতা নারীর গর্ভ হোলো লেখা আছে শাস্ত্ররে,
ওরে মৃতা মলো মাটি দিল ছেলে হয় তার কব্বরে,
শুনে দুরন্ত কথা প্রাণ কাঁপে ডরে
পাগলা কানাই বলে জহিরুদ্দী
একথা পালি কোন দ্যাশে ॥
তিনটি ছেলে জন্ম নিয়ে গেল তিন দ্যাশে
দিবস কয়েক বাদে উহার মায়ের
শরীর যায় পঁচে,
সংবাদ পেয়ে আসল ধেয়ে বসল তার মার পাশে,
পচা মাংস দেখে ওরা তিনজনা হাসে
কানাই বলে জহিরুদ্দী কথাটা বলছি প্রকাশে ॥
৯৩
শোনো ভাই গাছের কথা
সে গাছের এক ডালে এক পাতা
আসমান দিকে গাছের শিকড়
জমিনে তার মাথা।
ঠিক জেনে ভাই গাছের গোড়া কাটা
তবু ভাই সে গাছ দিব্যি থাকে তাজা,
এক জাগাতে গাছ থাকে না সে গাছ নড়েচড়ে
গাছের মধ্যে দম রয়েছে ভরে
দমটি যখন বাহির হবে
সাধের গাছ ওমনি যাবে মরে।
পাগলা কানাই বলছে খাঁটি
দিনকানা তুই চিনলি না রে
মইলে গাছ ওমনি দিবে মাটি।
৯৪
শোনো ভাই সকল রে
একটি মজার কথা পড়েছে মনে,
আবার এক বেটাকে ঠেসে ধরে
তার উপরে তিন বিটি বসে,
এই কাল কাটাইল হাসে রসে
ঐ চারজন ভবেতে আইসে,
তিন বিটি জগৎ মজাল,
তাদের চারজন কেউ কম না
তার একজন মলি, শোনো বলি,
এই দেহ খাড়া রবে না
সে মনুষ্য ভাই যে তলে পড়ে
গোড়গুড় পেড়ে উঠতে পারল না,
উঠতে পারলি শোনো বলি
ঐ তিন বিটির প্রাণ বাঁচত না
চিরদিন বিবাদ করে সেই যে চারজনা,
তবু তার উপিত গেল না।
যেদিন ভাঙবে পিরিত
হইতে বিপরীত
সুখ সাগরে সরত বকে না,
পাগলা কানাই বলে ভাই সকলরে
কাল কাটাল হাসে রসে
সেই চারজন এসে।
৯৫
শ্বশুরের সঙ্গে মজিয়া রঙে এক নারীর দেখো
গর্ভ হয়েছে।
তার পতি এসে কোলে বসে মা বোল বলে ডাকতেছে,
স্বামীকে বলছে বাবা, আমার এই দুগ্ধ খাবা,
স্বামী তারে হরণ করতেছে।
সেই সতী নারী ভবের পরে কার ফুলে পয়দা হয়েছে,
বলে যাই দশের কাছে শাস্ত্রে প্রমাণ আছে,
ও তার জিজ্ঞাসা নাও পণ্ডিতের কাছে।
আর সেই যে নারী দীনবন্ধু পয়দা করেছে
কত ফকির বৈষ্টম আলেম ফাজেল রাতদিন ঘুরতেছে
সেই নারী ভবের পরে কেউ চেনে তারে কেউ তো চেনে না।
তাই বুঝে আপন মজে ঠিক রাখো ষোল আনা
পাগলা কানাই বলে নারীর চরণ তালাশ করে পালাম না,
যদি নারীর চরণ পেতাম ভবের কাম সেরে নিতাম,
ভবে আমার বিপদ থাকত না।
৯৬
সখিনা বলে আমার দিন গেল বিফলে।
কেন মা দিছ বিয়ে আমায় শিশুকালে,
এল বসন্তকাল, উদয় হলো শতকদল,
ও যেদিন কাল ভ্রমর বসবে ডালে মধু খাবে কেমনে।
ও বনের পাখি, তোরে আমি জোড়ায় জোড়ায় দেখি—
আহা রে দারুণ বিধি আমায় দিলা ফাঁকি।
আমি কার সঙ্গে দাঁড়াইব, কার সঙ্গে কথা কব,
সারারাত জাগে থাকি ঘুম আসে না দুই চোখি
কানাই কয় এসব কপালের ল্যাখি ॥
৯৭
সবে বলে পাগলা কানাই আনকা ধুয়া বলো,
ওরে আমার ডাকু জ্বর হয়েছিল,
ছয় মাস ছিলাম শয্যায় শুয়ে
কাহিল হয়ে,
আমার নাড়ি জ্বলে গেছে ওষুধ খেয়ে ॥
ইষ্টিকুটুম ভাই বেরাদর ছিল দ্যাশে দ্যাশে,
খবর শুনে নৌকা বয়ে আসতেছে সবে,
যারা আছে তারা কানছে রে বসে ॥
চারজনাতে পরামর্শে ঘরের বাহির করিল,
কেউ মানুষ ডাকতে গিয়াছিল
তখন বর্ষাকাল ছিল,
কেউ বলে গোর কাফনে করে মাটি দেও ঘরে,
তিন কবিরাজ পরামর্শে তখন বিষবড়ি খাওয়াল ॥
৯৮
হায় হায় কি হলো
আর ঘোরে না রথের চাকা রে,
এখন উপায় কি করি,
পাগলা কানাই কয় রথের চাকা,
হয়েছে বাঁকা।
দীনবন্ধু কয় ওরে কানাই
আজ কেন রথ চলে না,
সাধের রথে বসে রে
তুই কি করিস ভাবনা।
গুপ্তভাবে রথ গড়েছে
কামিলকার এমন
দেশ-বিদেশে তালাশ করি
পাই না তাহার অন্বেষণ
দিয়া তিন শত চৌষট্টি জোড়া রে
করেছে সেই রথের পত্তন।
৯৯
হারে হারে মন ভাবো নিরঞ্জন
সাধুর সঙ্গে মিলে,
যেদিন ভবে এসেছিলে রে
মন কি বোল বলিয়ে,
দেহ ছেড়ে মহা-আত্মা যখনেতে যায় চলে,
হায় কিরে তোর মাটির দেহ,
পড়ে রবে ভবের পরে
ভাই বন্ধু দাফন করে রে,
সেদিন নিবে কবরে ॥
হারে অবোধ মন, ওরে পাগল মন,
তুমি বুঝে কেন বোঝো না,
যেদিন কবরেতে অন্ধকারে
থাকবি রে তুই একেলা,
হবে ঘোম অন্ধকার,
দেখে চমৎকার,
সেই যে রে কি ভয়ঙ্কর
দুই ফেরেস্তা সেজে এসে
পুছবে রে তুই বান্দা কার,
কি জবাব দিবি তাহার হুজুরে,
সময় থাকতে হও রে হুশিয়ার ॥
ছাড়ো ছাড়ো মন, ছাড়ো ছাড়ো মন,,
ছাড়ো ভবের খেলা,
যেদিন ইস্রাফিলের শিঙায় সব
হবে রে আখের ফানা,
তিরিশ রোজা পঞ্চ নমাজ,
কোরানেতে যায় জানা,
অধম পাগলা কানাই বলছে রে ভাই,
চিনলি না তুই দিনকানা,
তিরিশ রোজা পঞ্চ নমাজ
সকলে করো সাধনা ॥
১০০
হিংসা নিন্দা দূর করো হে মোমিন মুসলমান
হিংসা নিন্দা দূর না করলে কি মতে পাবি আছান,
আদম সেজদা না করে আজাজিল হয়েছে শয়তান,
মন তোর পাকা বাড়ি দালান কোঠা সব পড়ে রবে।
এ রাজ্যভার ত্যাগ করে একলা যেতে হবে
সেদিন মাতা পিতা দরদী বন্ধু কেউ না সুধাবে,
মন তোর যাবার বেলা সদা ধুতি খেলকা টুপি সার
তাই পাগলা কানাই বলছে মনিরে
আপন আপন কর্মসার
চার যুগ ভরে থাকবি বন্দী
দেখবি সেই বিষম অন্ধকার।
নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন
লগইন