সাদা আমি কালো আমি – ১.১৯

রুণু গুহ নিয়োগী

দেবীবাবু ও মনাদাব মত গোয়েন্দা দফতরের বিরাট ‘অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও সোর্সের জাল বিছনো দায়িত্বশীল অফিসাররা আমাদের দফতব থেকে চলে যেতে আমাদের বিভাগ একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিল বৈকি, কারণ তাঁদের বদলে যাঁরা এসেছিলেন তাঁদের গোয়েন্দা দফতরে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল না। আর তাঁদের সোর্সের কোনও মাধ্যম তো থাকার প্রশ্নই নেই। সোর্স হচ্ছে পুলিশের উপগ্রহ, চোখ। সেই চোখের দৃষ্টি কমে যাওয়ার অর্থ নিজেদের দেখার ক্ষমতা কমিয়ে ফেলা। সোর্সের কার্যকরী ভূমিকার জন্যই আমরা শুধু কলকাতা পুলিশ এলাকায় সংঘটিত অপরাধ ছাড়াও বাজ্য পুলিশের এলাকার বহু অপরাধেরও নিষ্পত্তি করতে পেরেছি।

একদিন ভোরবেলায় লালবাজারে আমার: কোয়ার্টারে এসে হাজির নিমাত্রা-রেলঘরিয়া অঞ্চলের নারায়ণ সরকার, হাতে একটা চটের থলি। কালো ভুষোর মত তার গায়ের রঙ, দোহারা চেহারা, নিমতা আলিপুর অঞ্চলের মাস্তান। সব সময় পূর্ববঙ্গের ভাষায় কথা বলে। আমার বিশ্বস্ত সোর্স। তাকে ওই ভোরবেলায় দেখে বিরক্ত লাগল। আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, “কি ব্যাপার, এত ভোরে?” নারায়ণ বলল, “একটা ভুল কইরা ফালাইছি।” জিজ্ঞেস করলাম, “কি ভুল?” সে বলল, “একটা খুন কইরা ফালাইছি।” তার কথা শুনে আঁৎকে উঠে বললাম, “খুন করেছিস? কোথায়?” নারায়ণ বলল, “আমাগো ওইখানে। পোলাটা আমার বোইনের পিছনে লাগতো, মাথাটা ঠিক রাখতে পারি নাই, কোপ দিয়া ধড় নামাইয়া দিছি। এই দ্যাখেন।” নারায়ণ হাতের থলিটার মুখ খুলে দেখাল। দেখি একটা কাটা মাথা। প্রথমে ভাবছিলাম নারায়ণ বোধহয় থলিতে করে আমার জন্য লাউ টাউ নিয়ে এসেছে। থলির ভেতর আমি মুখ বাড়িয়ে চমকে উঠি! নারায়ণ নির্বিকার চিত্তে বলে, “এই পোলাটা। আপনে হয়ত মুখের কথায়, বিশ্বাস করতেন না, তাই মাথাটা কাইটা লইয়া আইছি।” আমার ভেতরে তখন অসম্ভব রাগ হচ্ছে, ভাবছি লোকটি কি উন্মাদ? আমি তবু দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আর বাকি দেহটা?’ সে বলল, “সেটা আমি একটা হাই-ড্রেনের মইধ্যে ফালাইয়া দিছি।” বললাম, “সেখানেই এই মাথাটা নিয়ে রাখ। তারপর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ কর।” নারায়ণ বলল, “ওই থানায় আমি যামু না। আপনি একটা ব্যবস্থা কইরা দেন।” রাগ না দেখিয়ে বললাম, “য়া বলছি তাই কর।” সে জানাল, “থানার ওরা বিশ্বাস কইরব না।” তাড়াতাড়ি তাকে আমার সামনে থেকে বিদায়ের জন্য বললাম, “তুই যা, আমি থানায় ফোন করে দেব।” আমার আদেশ তার পছন্দ হল না, সে তাই বলল, “আপনে যখন কইতাছেন, তখন যাইতাছি।” নারায়ণ ধীর পায়ে লালবাজার থেকে বেরিয়ে গেল।

নারায়ণ চলে যেতে ভাবলাম, একটা অত্যন্ত অনুগত সোর্স আমি হারালাম। ডানলপ মোড় থেকে রানাঘাট পর্যন্ত ছিল নারায়ণের বিস্তীর্ণ পরিধি, বহু খবর সে আমায় দিয়েছে। সেই সূত্র ধরে আমি ধরেছি অনেক ডাকাত। এমনও হয়েছে, ডাকাতি বা অন্য কোন অপরাধ থেকে লুণ্ঠিত টাকার সে ভাগ নিয়েছে, আবার সেই খবরটা আমাকে দিয়ে গেছে।

নারায়ণ চলে যাওয়ার বেশ খানিকক্ষণ পর আমি থানায় ফোন করে জানালাম, কোথায় আছে লাশ এবং নারায়ণকে যেন গ্রেফতার করে রাখে খুনের অপরাধে। নারায়ণ আমার নির্দেশ অনুযায়ী কাটা মাথাটা বাকি দেহটার কাছে ফেলে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিল। থানার লোকেরা নারায়ণের কথা বিশ্বাসই করেননি। আমি ফোন করাতে লাশ উদ্ধার করে নারায়ণকে গ্রেফতার করে রাখে।

অল্প কয়েকদিন পর নারায়ণ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পায়। মামলা চলাকালীনই বিরুদ্ধ দলের হাতে নারায়ণ খুন হয়ে যায়। অন্ধকার জগতের নিয়ম অনুযায়ীই নারায়ণের পরিণতি!

সকল অধ্যায়

১. সাদা আমি কালো আমি – ১.১
২. সাদা আমি কালো আমি – ১.২
৩. সাদা আমি কালো আমি – ১.৩
৪. সাদা আমি কালো আমি – ১.৪
৫. সাদা আমি কালো আমি – ১.৫
৬. সাদা আমি কালো আমি – ১.৬
৭. সাদা আমি কালো আমি – ১.৭
৮. সাদা আমি কালো আমি – ১.৮
৯. সাদা আমি কালো আমি – ১.৯
১০. সাদা আমি কালো আমি – ১.১০
১১. সাদা আমি কালো আমি – ১.১১
১২. সাদা আমি কালো আমি – ১.১২
১৩. সাদা আমি কালো আমি – ১.১৩
১৪. সাদা আমি কালো আমি – ১.১৪
১৫. সাদা আমি কালো আমি – ১.১৫
১৬. সাদা আমি কালো আমি – ১.১৬
১৭. সাদা আমি কালো আমি – ১.১৭
১৮. সাদা আমি কালো আমি – ১.১৮
১৯. সাদা আমি কালো আমি – ১.১৯
২০. সাদা আমি কালো আমি – ১.২০
২১. সাদা আমি কালো আমি – ১.২১
২২. সাদা আমি কালো আমি – ১.২২
২৩. সাদা আমি কালো আমি – ১.২৩
২৪. সাদা আমি কালো আমি – ১.২৪

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন