১. রমেন্দ্রনাথ সোম, ম্যারেজ রেজিস্টার

নিমাই ভট্টাচার্য

ম্যারেজ রেজিস্টার – নিমাই ভট্টাচার্য

রবিবার বিকেলে দোতলার বারান্দায় সাইনবোর্ড ঝোলান হলো– রমেন্দ্রনাথ সোম, ম্যারেজ রেজিস্টার। বড় বড় অক্ষরে এই লেখাগুলির নীচে ছোট তাক্ষরে লেখা–এখানে ১৯৫৪ সালের স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুসারে বিবাহ দেওয়া হয়।

চব্বিশ ঘণ্টা পার হতে না হতেই খুব জোরে কলিং বেল বেজে উঠল। রমেনবাবু তাড়াতাড়ি দরজা খুলতেই একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, মিঃ সোম আছেন?

হঠাৎ আনন্দে উত্তেজনায় রমেনবাবুর মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বললেন, আমিই মিঃ সোম।

আমি এসেছিলাম বিয়ের নোটিশ দিতে।

কিন্তু আপনি একা তো নোটিশ দিতে পারবেন না।

ভদ্রলোক হেসে বললেন, না না, একা নোটিশ দেব না। সুমিত্রা নীচে অপেক্ষা…

ওঁকে ডেকে আনুন।

ভদ্রলোক সঙ্গে সঙ্গে তরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন। রমেনবাবুও প্রায় দৌড়ে ভিতরের ঘরে গিয়ে ওঁর স্ত্রী সাবিত্রীকে বললেন, সাবি, এক ভদ্রলোক বিয়ের নোটিশ দিতে এসেছেন। তুমি তাড়াতাড়ি তিন কাপ চা কর।

সাবিত্রী সেলাই করছিল। মুখ না তুলেই হাসতে হাসতে বললো, দেখে মনে হচ্ছে তুমিই বিয়ে করবে।

স্ত্রীর কথায় মিঃ সোম একটু হাসেন কিন্তু কোন কথা না বলেই তাড়াতাড়ি বাইরের ঘরে যান। আলমারী থেকে স্পেশ্যাল ম্যারেজ আইনের ৫নং ধারা অনুযায়ী বিয়ের নোটিশ দেবার একটা ফর্ম বের করেন। টেবিলটা একটু ঠিকঠাক করেন। দুটো চেয়ার একটু কাছে টেনে আনতে না আনতেই আবার কলিং বেল বাজে।

মিঃ সোম তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেন। না, ওরা না। গোয়ালা দুধ দিতে এসেছে। অন্য দিন তিরিশ বছরের পরিচিত এই গোয়লাকে দেখেই ভাল লাগত কিন্তু আজ ওকে দেখেই মিঃ সোমের মেজাজ বিগড়ে গেল। বেশ একটু বিরক্ত হয়েই বললেন, যাও, যাও, ভিতরে যাও। যাতায়াতের রাস্তা আটকে বসে না।

গোয়ালা চলে যাবার পর পরই আবার বেল বাজল। মিঃ নোম দরজা খুলতেই দেখলেন, সেই ভদ্রলোক আর একজন ভদ্রমহিলা। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, আসুন–আসুন।

ওঁরা দুজনে মিঃ সোমের পিছন পিছন বাইরের ঘরে এলেন। বসলেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সাবিত্রী চা নিয়ে এলেন।

ভদ্রলোক কিছু বলার আগেই ভদ্রমহিলা বললেন, আমরা এখুনি চা খেয়ে এলাম।

সাবিত্রী ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলার উপর দিয়ে দৃষ্টিটা বুলিয়ে নিয়ে বললেন, তাতে কী হলো? করেছি যখন, খেয়েই নিন।

সাবিত্রী ভিতরে চলে যেতেই মিঃ সোম বললেন, আমি ম্যারেজ অফিসার হবার পর আপনারাই প্রথম এলেন।

ভদ্রলোক বললেন, তাই নাকি?

হ্যাঁ।

তাহলে তো আমরা খুব লাকী।

মিঃ সোম হাসতে হাসতে বললেন, আপনাদের চাইতে আমি বেশী লাকী।

ওঁরা হাসেন।

চা খেতে খেতেই মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার নামটা জানতে পারি কী?

নিশ্চয়ই। আমি প্রবীর ব্যানার্জী আর ওর নাম সুমিত্রা সরকার।

মিঃ সোমের মুখের হাসি তখনও মিলিয়ে যায়নি। বললেন, দেখে মনে হয়, আপনারা দুজনেই কলেজের প্রফেসর।

মিঃ ব্যানার্জী একটু হেসে বললেন, আমরা দুজনেই এম. এ. পাস করেছি কিন্তু কেউই কলেজে পড়াই না। আমি এল. আই. সী.-তে আছি আর সুমিত্রা একটা স্কুলে পড়াচ্ছে।

সুমিত্রা একটু ম্লান হাসি হেসে বললেন, একদিন দুজনেই অধ্যাপক হবার স্বপ্ন দেখতাম কিন্তু মানুষ যা চায় তা সে কখনই পায় না।

মিঃ সোম বললেন, বোধহয় আমরা সেভাবে মন-প্রাণ দিয়ে চাইতে পারি না বলেই…

ওঁকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়েই মিঃ ব্যানার্জী বললেন, মন প্রাণ দিয়ে চাইলেও অনেক সময় অনেক কিছুই পাওয়া যায় না। এবার একটু হেসে বললেন, আজ থেকে কুড়ি বছর আগে আমাদের বিয়ে হাওয়া উচিত ছিল কিন্তু পেরেছি কী?

এ তো ভাগ্যের পরিহাস!

এবার সুমিত্রা বললেন, ঐ ভাগ্যের দোহাই দিয়েও সবকিছু মেনে নেওয়া সহজ নয়।

চা খাওয়া শেষ। এবার মিঃ সোম ১৯৫৪ সালের স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টের সেকেণ্ড সিডিউলের ৫নং ধারা নোটিশ অব ইনটেনডেড ম্যারেজ-এর ফর্ম মিঃ ব্যানার্জীর সামনে এগিয়ে দেন।

ফর্মের উপর দিয়ে চোখ বুলিয়ে নিয়ে মিঃ ব্যানার্জী এবার পকেট থেকে কলম বের করে লিখতে শুরু করেন : পাত্রের নাম–শ্রীপ্রবীর কুমার ব্যানার্জী, কণ্ডিসন–আনম্যারেড, অকুপেশন–সার্ভিস, বয়স–৪২, ডোয়েলিং প্লেস–৩৫১এ, ক্ষেত্ৰমোহন নস্কর রোড, কলিকাতা ৪°, লেনথ অব রেসিডেন্স–১২ বছর।

এবার উনি পাত্রীর বৃত্তান্ত লিখতে শুরু করেন। পাত্রীর নাম-শ্ৰীমতী সুমিত্রা সরকার, কণ্ডিসন–উইডো, অকুপেশন সার্ভিস…

পাত্রীর বৃত্তান্ত লেখা শেষ হতেই মিঃ সোম ওঁকে বললেন, আগে ব্রাইড সই করবেন, তার নীচে আপনি সই করবেন।

ওঁরা দুজনে সই করার পর মিঃ সোম ফর্মটা হাতে নিয়েই বললেন, আপনাদের দুজনের হাতের লেখাই অপূর্ব।

মিঃ সোমের কথায় ওঁরা দুজনেই একসঙ্গে হেসে উঠলেন।

হাসলেন কেন? মিঃ সোম ওঁদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন।

প্রবীর হাসতে হাসতে সুমিত্রাকে বললেন, বলো, হাসলে কেন।

সুমিত্রার মুখেও হাসি। বললেন, আমরা যখন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হই তখন কেউ কাউকে চিনতাম না। এই হাতের লেখার জন্যই আমাদের প্রথম আলাপ হয়।

মিঃ সোম বললেন, ভেরী ইন্টারেস্টিং।

প্রবীর কথা বলেন না। সুমিত্রা বললেন, শুরুতে সত্যি খুব ইণ্টা রেস্টিং মনে হয়েছিল কিন্তু পরে তার জন্য দুজনকেই অনেক খেসারত দিতে হয়।

এবার প্রবীর বললেন, ফর্ম দেখেই বুঝতে পারছেন, সুমিত্রার বিয়ে হয়েছিল এবং…

মিঃ সোম বললেন, এখন আর ওসব পুরনো কথা মনে করে কী লাভ? যা হবার তা তো হয়েই গেছে, এখন…

সুমিত্রা বললেন, এমন দিনে যদি সব কথা মনে না পড়ে তাহলে আর কবে পড়বে? উনি একটু উত্তেজিত হয়ে বললেন, আমার বাবা অত্যন্ত বদমেজাজের লোক ছিলেন। আমার মায়ের কাছ থেকে উনি আমার মনের কথা জানতে পেরেই—

.

সুমিত্রা ঘরে ঢুকতেই ওর বাবা দরজা বন্ধ করে দিলেন। ড্রয়ার থেকে রিভলবার বের করে টেবিলের উপর রাখলেন। তারপর সোজা সুজি মেয়ের দিকে তাকিয়ে গিরীশবাবু বললেন, শুনে রাখো সুমি, আমার জীবিতকালে যদি তুমি নিজের খেয়ালখুশি মতো বিয়ে কর, তাহলে তোমার বিয়ের আসরে আমি আত্মহত্যা করব।

সুমিত্রা মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

গিরীশবাবু আবার বললেন, আমি জীবিত থাকতে আমাদের বংশে এসব কেচ্ছাকেলেঙ্কারি হতে পারবে না।

গিরীশবাবুর ঘর থেকে বেরিয়ে সুমিত্রা নিজের ঘরে যেতেই ওর মা ছুটে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, উনি কী বললেন?

রাগে, দুঃখে, ঘেন্নায় সুমিত্রা মুখ ঘুরিয়ে বললো, তুমি যে কী করে এই গুণ্ডা স্বামীকে এতকাল বরদাস্ত করলে, তা আমি ভেবে পাই না। এমন স্বামীর সঙ্গে আমার বিয়ে হলে হয় আমি তাকে মার্ডার করতাম, নয়তো আমি নিজে আত্মহত্যা করে মরতাম।

গিরীশবাবুর স্ত্রীর মুখ দিয়ে একটা শব্দ বেরোয় না।

সুমিত্রা বলে, আজ তোমাকে বলে রাখছি, বাবা জোর করে আমার বিয়ে দিলেও প্রবীরকে বিয়ে না করে আমি মরব না।

.

একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, তারপর কী হলো?

প্রচুর টাকা ব্যয় করে একটা অপদার্থের সঙ্গে বাবা আমার বিয়ে দিলেন।

তিনি কী করতেন?

সাদা প্যান্ট কালো কোট পরে কোর্টে যেতেন আর শ্বশুরের টাকায় রোজ বোতল বোতল মদ খেতেন।

মিঃ সোমের মুখ একটু বিকৃত হয়। মুখে কোন প্রশ্ন করেন না।

সুমিত্রা বললেন, অত মদ খাবার ফলে সিরোসিস অব লিভার হয়ে ভদ্রলোক তিন বছর পরই মারা গেলেন।

এবার প্রবীর বললেন, সতের বছর পরে হঠাৎ মাসখানেক আগে বর্ধমান স্টেশনে আমার সঙ্গে সুমিত্রার দেখা হলো।

বর্ধমান লোক্যাল ছাড়তে তখনও দেরী আছে। অপরাহুবেলার গাড়ি। যাত্রীর ভীড় নেই বললেই চলে। প্রবীরবাবু একটা ফাঁকা কম্পার্টমেন্টের জানলার ধারে বসলেন। এক ভড় চা খেলেন। তারপর একটু বিশ্রাম করবেন বলে পায়ের জুতো খুলে সামনের বেঞ্চিতে পা দুটো ছড়িয়ে দিলেন।

দুপাঁচ মিনিট কেটে গেল। তারপর হঠাৎ ছোটবেলার কথা মনে পড়ল প্রবীরবাবুর। মার কথা, বাবার কথা, ছোট ভাই সুবীরের কথা। প্রথম রেলগাড়ি চড়ে কাশী যাবার কথা।

জীবনের প্রথম রেলগাড়ি চড়ার আনন্দের কথা, উত্তেজনার কথা মনে করেই প্রবীরবাবুর একটু হাসি পায়।…

সুবীর দুহাত দিয়ে মার মুখখানা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলে, আচ্ছা মা, দাদা বলছে সাহেব না হলে রেলগাড়ি চালাতে দেয় না; সত্যি কী?

মা সুবীরের জামার বোতামগুলো ঠিক করে লাগাতে লাগাতে বললেন, বড় বড় গাড়ি সাহেবরাই চালায়।

আচ্ছা মা, দাদা বলছিল, যেসব সাহেবরা গাড়ি চালায় তারা বলে খুব মোটা আর রাগী হয়।

মা কোনমতে হাসি চেপে বলেন, বোধহয়।

আচ্ছা মা রেলগাড়ি জোরে চলে না কি জাহাজ?

রেলগাড়ি।

সুবীর দাদার গভীর জ্ঞানের প্রমাণ পেয়ে মুগ্ধ হয়। বলে, তাহলে দাদা ঠিকই বলেছে।

সুবীর ছোটবেলায় বড্ড বেশী বকবক করতো। মিনিটে মিনিটে প্রশ্ন করতে দাদাকে। হেরে যাবার ভয়ে আর বড় ভাইয়ের সম্মান বজায় রাখার লোভে প্রবীর ওর প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিত।

বর্ধমান লোক্যালের প্রায় ফাঁকা কম্পার্টমেন্টে বসে সেসব দিনের কথা ভাবতে বেশ লাগে প্রবীরবাবুর। খুশীর হাসি ছড়িয়ে পড়ে  সারা মুখে। তারপর হঠাৎ সে খুশীর হাসি উবে যায়। মন বিষণ্ণ হয়। মার মৃত্যু, বাবার মৃত্যু, সুবীরের বিদেশ যাওয়া–সব যেন কেমন এলোমেলো হয়ে গেল।

তারপর?

তারপরের দিনগুলোর কথা ভাবতে গিয়েই সুমিত্রার কথা মনে পড়ে প্রবীরবাবুর।…

সুমিত্রা প্রবীরের একটা হাতের উপর নিজের হাতে রেখে বলে, দুঃখ করবে না। বাবা-মা কি চিরকাল থাকেন?

–না, তা থাকেন না কিন্তু…

সুমিত্রা একটু হেসে বলে, সূর্যমুখী বা পদ্মের মতো সব ফুল কি দীর্ঘজীবী হয়? হয় না। অনেকেই শিউলির মতো সাত সকালে ঝরে পড়ে কিন্তু তাই বলে কি শিউলির মাধুর্য বা সৌরভ কম?

সুমিত্রার কথায় প্রবীর মুগ্ধ হয়। বলে, সত্যি তুমি এত সুন্দর কথা বলে যে তোমাকে কাছে পেলে অনেক দুঃখই আমি ভুলে যাই।

–তোমার কাছে এলে আমিও আমার দুঃখ ভুলে যাই।

–জানো সুমিত্রা, আমার এম. এ. পড়ার একটুও ইচ্ছা ছিল না কিন্তু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ভর্তি হয়ে যাই। এখন মনে হয়, তোমার দেখা পাব বলেই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছিলাম।

–কি জন্য ভর্তি হয়েছ, তা জানতে চাই না। তবে তুমি ফাস্ট ক্লাস না পেলে আমার সর্বনাশ।

–কেন

–কেন আবার? সবাই বলবে, আমার পাল্লায় পড়ে তোমার পড়াশুনা হলো না।

প্রবীরবাবুর কামরায় আরো দু-চারজন যাত্রী উঠেছেন। ঘড়ির কাটা আরো একটু এগিয়েছে কিন্তু সেসব দিকে ওঁর খেয়াল নেই। উনি অতীত স্মৃতি রোমন্থন করতে বিভোর।…

সুমিত্রা বেশ উত্তেজিত হয়েই বললো, জানো কাল সুবীর কী কাণ্ড করেছে?

–কী?

–আমি মার জন্য একটু ফল কিনতে লেকমার্কেট গিয়েছিলাম। হঠাৎ কানে এলো, একটা ছেলে বৌদি বৌদি করে চিৎকার করছে।…

–তারপর?

সুমিত্রা হাসতে হাসতে বলে, আমি তো কল্পনাও করতে পারিনি, কেউ আমাকে বৌদি বলে ডাকতে পারে। তাই ওদিকে নজরও দিইনি।

প্রবীরও হাসছে। হাসতে হাসতে সুমিত্রার দিকে তাকিয়ে আছে।

সুমিত্রা বলে, তারপর হঠাৎ দেখি সুবীর একদল বন্ধুকে নিয়ে আমাকে প্রায় ঘিরে ফেলে বলছে–

তুমি তো আচ্ছা লোক!

কেন? কী করলাম?

এতবার ডাকলাম; তর জবাব দিলে না?

কই আমি তো শুনতে পাই নি।

ষাঁড়ের মতো চিৎকার করে ডাকছি বৌদি বৌদি আর তুমি শুনতে পাওনি?

সুবীর, তুই একটা থাপ্পড় খাবি।

কেন?

বাজারের মধ্যে বৌদি বৌদি করবি কেন?

তবে কি তোমাকে মাসীমা বা দিদিমা বলে ডাকব?

এতক্ষণ শোনার পর প্রবীর হাসতে হাসতে জিজ্ঞাসা করল, তারপর কী হলো?

–ওরা সবাই ধরল, বৌদি, আইসক্রীম খাব।…

–খাওয়ালে?

–না খাওয়ালে ওরা আমাকে বাড়ি ফিরতে দিত?

বর্ধমান লোক্যাল ছাড়ার সময় আরো এগিয়ে এসেছে কিন্তু প্রবীরবাবুর সেদিকে খেয়াল নেই। উদাস দৃষ্টিতে প্ল্যাটফর্মের দিকে তাকিয়ে থাকেন আর মনে মনে সেইসব সোনালী দিনের কথা মনে করেন। বেশ খানিকটা দূরে, প্ল্যাটফর্মের ওদিকে, হঠাৎ একটা নারী মূর্তি দেখে উনি চমকে ওঠেন।

কে?

সুমিত্রা?

না, না, সুমিত্রা এখানে কেমন করে আসবে? কেন আসবে?

অসম্ভব।

কয়েকটা মুহূর্তের মধ্যেই সব তর্ক-বিতর্কের অবসান হলো।…

সুমিত্রা!

কে? প্রবীর?

তুমি এখানে?

সুমিত্রা একটু ম্লান হাসি হেসে বললো, ওসব কথা পরে হবে। আগে বলল, কেমন আছো?

প্রবীরও একটু হাসে। বলে, খুব ভাল।

স্ত্রী? ছেলেমেয়ে? সবার কী খবর?

সবাই ভাল আছে।

তুমি কি বর্ধমানে থাকো?

না।

তবে কোথায়?

কলকাতায়।

কলকাতায় কোথায়? ভাবানীপুরের বাড়িতেই?

টালিগঞ্জে।

চেহারা এরকম বিক্রী হয়েছে কেন?

স্ত্রী যত্ন করে না।

কেন?

কেন আবার? সতের বছর সে আমার দেখাশুনা করে না।

প্রবীর!

সুমিত্রা মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

দু-এক মিনিট কেউই কোন কথা বলে না। তারপর প্রবীর প্রশ্ন করে, তোমার কী খবর? তোমার স্বামী কি এখানেই থাকেন?

সুমিত্রা মুখ নীচু করেই খুব আস্তে আস্তে বললো, আমি একটা স্কুলে চাকরির ইন্টারভিউ দিতে এসেছিলাম। আর আমার স্বামী বিয়ের তিন বছর পরই মারা গিয়েছেন।

সে কী!

অবাক হচ্ছে কেন? অত মদ গিললে কী কোন মানুষ বাঁচতে পারে?

তোমার ছেলেমেয়ে…

প্রবীর, আমার কোন ছেলেমেয়ে নেই। হঠাৎ লোকজনের কলকোলাহল শুনেই বোঝা গেল, ট্রেন ছাড়ার দেরী নেই। প্রবীর ওকে জিজ্ঞাসা করল, তুমিও কি কলকাতা যাবে?

হ্যাঁ।

তাহলে চলল ট্রেনে উঠি। ট্রেন ছাড়ার বোধহয় আর দেরী নেই।

চলো।

.

এতক্ষণ চুপ করে শোনার পর মিঃ সোম প্রশ্ন করলেন, এতদিন আপনারা কেউ কারুর কোন খবরও রাখতেন না?

না।

এতকাল বিয়ে করেননি কেন?

প্রবীর একটু হেসে বললেন, করতে পারিনি। একটু থেমে বললেন, তাছাড়া সব সময়ই মনে হতো, সুমিত্রা একদিন নিশ্চয়ই আমার কাছে আসবে।

যাই হোক ম্যারেজ অফিসার হিসেবে আপনাদের পেয়ে আমি খুব খুশী। ভগবান এবার নিশ্চয়ই আপনাদের সুখী করবেন।

প্রবীর পার্স থেকে নোটিশ দেবার ফি পাঁচ টাকার একটা নোট বের করে বললেন, মাস খানেক পরে আবার আসব।

নিশ্চয়ই আসবেন।

.

দিন তিনেক পরের কথা। বিকেলবেলার দিকে একদল ছেলে আর একটা মেয়ে এসে হাজির। মেয়েটির বয়স নিঃসন্দেহে আঠাবোর অনেক বেশী। তাই ব্যাপারটা একটু গোলমেলে মনে হলেও মিঃ সোম কিছু বললেন না। বিয়ের নোটিশ দেবার ফর্ম বের করার আগেই উনি জিজ্ঞাসা করলেন, উড বী ব্রাইডগ্রম কে?

পিছন থেকে পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের একটা ছেলে সামনে এগিয়ে এসে বললো, আমি।

আপনার নাম?

দিলীপ ঘোষ।

এবার মেয়েটিকে দেখিয়ে মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, এই মেয়েটিকে আপনি বিয়ে করতে চান?

হ্যাঁ।

ওঁর নাম কী?

মায়া বসু।

ইনি আপনার আত্মীয়া কী?

না, না।

কোন কোন আত্মীয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় না জানেন?

না, ঠিক জানি না।

মিঃ সোম সঙ্গে সঙ্গে ১৯৫৪ সালের স্পেশ্যাল ম্যারেজ অ্যাক্টের চটি বইখানা বের করেই বললেন, ছেলেরা কাকে কাকে বিয়ে করতে পারে না শুনে নিন।

দু-তিনটি ছেলে একসঙ্গে বললো, বলুন, বলুন।

মিঃ সোম বললেন, সাঁইত্রিশজন আত্মীয়াকে ছেলেরা বিয়ে করতে পারে না। তারা হচ্ছেন–মা, বাবার বিধবা স্ত্রী অর্থাৎ বিমাতা, মার মা, মার বাবার বিধবা অর্থাৎ স্টেপ গ্রাণ্ড মাদার, মার মার মা, মার মার বাবার বিধবা অর্থাৎ…

হঠাৎ কটি ছেলে হেসে উঠল। ঐ ভীড়ের মধ্যে থেকে একজন ছেলে বললো, দাদু, মায়াকে দেখে কি দিলীপের দিদিমা ঠাকুমা মনে হচ্ছে?

ছেলেটির কথায় ওরা সবাই হেসে উঠল।

মিঃ সোম একটু শুকনো হাসি হেসে বললেন, মনে না হলেও আইনের ব্যাখ্যা করা আমার কর্তব্য।

দিলীপ বললো, আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন আমাদের মধ্যে কোন আত্মীয়তা নেই। মায়ারা আমাদের বাড়িতে ভাড়া থাকে।

ভাড়াটে বা বাড়ির মালিক, তাতে আমার কিছু আসে-যায় না। এবার মিঃ সোম একটু হেসে বললেন, যে কোন একুশ বছরের ছেলে আঠারো বছরের যে কোন মেয়েকেই বিয়ে করতে পারে, তবে বিয়ে হবে না যদি ছেলেটির স্ত্রী জীবিত থাকে যদি সে উন্মাদ বা জড়বুদ্ধি সম্পন্ন হয়, যদি…

দিলীপ বললো, আমাদের একটু তাড়া আছে। যদি এবার ফর্মটা দেন…

মিঃ সোম সঙ্গে সঙ্গে একটা ফর্ম এগিয়ে দিয়ে বললেন, এই নিন। দিলীপ সঙ্গে সঙ্গে ফর্মে ওদের নাম-ধাম লিখতে শুরু করল। সবকিছু লেখা হবার পর দুজনে সই করল। মিঃ সোম ফর্মটি হাতে নিয়ে বললেন, কোন ভুল বা মিথ্যা বৃত্তান্ত থাকলে ইণ্ডিয়ান পেনাল কোডের ১৯৯ ধারা অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত…

দিলীপ বললো, সব ঠিক আছে।

তিরিশ দিনের মধ্যে কোন আইনসঙ্গত আপত্তি না উঠলে তার পর এলেই আপনাদের বিয়ে হতে পারবে।

দিলীপ এবার ওর বন্ধুদের বললো, তোরা একটু বাইরে যা।

বন্ধুর দল বাইরে যেতেই দিলীপ আর মায়া একটু এগিয়ে এসে দাঁড়াল। দিলীপ বললো, হাজার হোক আপনিই আমাদের বিয়ে দেবেন। আপনার কাছে কিছুই লুকোবার নেই। তাই বলছিলাম…

দিলীপ কথাটা শেষ না করেই মায়াকে ইশারা করে।

মায়া বলে, আমাদের এই বিয়েতে আপনাকে একটু সাহায্য করতে হবে।

মিঃ সোম বললেন, আইনের মধ্যে আমি সবরকম সাহায্য করতে প্রস্তুত।

মায়া বলে, আমাদের এই বিয়েতে বাড়ির মত নেই বলে…

তাতে কিছু হবে না।

এবার দিলীপ বললো, আমাদের এই বিয়ের খবরটা যদি বাইরের কেউ না জানতে পারে তাহলে…

আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকেই কিছু জানাব না; তবে যদি কেউ ম্যারেজ নোটিশ বুক দেখতে চান, তাহলে আমি দেখাতে বাধ্য। আর আমার দরজার পাশের নোটিশ বোর্ডে এই নোটিশের কপি লাগানো থাকবে।

দরজার পাশের নোটিশ বোর্ডে…

দিলীপকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই মিঃ সোম মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, নোটিশ বোর্ডে নোটিশ লাগাতেই হবে; তবে তার জন্য আপনাদের ভয়ের কোন কারণ নেই।

দিলীপ একটু চিন্তিত হয়ে বললো, ভয় শুধু একটাই।

কীসের ভয়?

জানাজানি হয়ে গেলে মায়ার বাবা নিশ্চয়ই মায়াকে দূরে সরিয়ে দেবেন।…

আপনি তাহলে পুলিসের সাহায্য নেবেন।

পুলিসের সাহায্য নিতে চাই না।

কেন?

মায়ার বাবা লোকাল থানায় কাজ করেন।

দিলীপ আবার মায়াকে চোখের ইশারা করল। এবার মায়া সঙ্গে সঙ্গে মিঃ সোমের পায়ের উপর পাঁচ-দশ টাকার কয়েকটা নোট রেখে প্রণাম করতেই উনি চমকে উঠলেন।

মায়া বললো, আপনার উপর আমাদের ভবিষ্যৎ জীবন নির্ভর করছে।

মিঃ সোম গোল করে পাকানো দশ টাকার নোটগুলো তুলে নিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে দিলেন। বললেন, আপনাদের সাহায্য করাই আমার কাজ। আমার সাহায্যের জন্য টাকা লাগবে না।

মায়া বলল, আমরা আপনার ভরসায় রইলাম।

মিঃ সোম একটু হেসে বললেন, আমি ভরসা দেবার কে? ভরসা করুন ভগবানের উপর।

ওরা বেরিয়ে যাবার উদ্যোগ করতেই মিঃ সোম বললেন, আমি একটা পাঁচ টাকার নোট নিয়ে নিয়েছি। বাকি টাকা নিয়ে যান। দিলীপ বললো, প্রণামীর টাকা তত ফেরত নিতে নেই।

আমি কি ঠাকুর-দেবতা যে আমাকে প্রণামী দিচ্ছেন? এ টাকা আপনারা নিয়ে যান।

না, না, এ টাকা আমরা নিতে পারব না।

না, না, তা হয় না। এ টাকা আপনারা…

ওরা তর তর করে সিঁড়ি দিয়ে নামে। মিঃ সোম একটু জোরেই বলেন, পরের দিন এলে এ টাকা নিতেই হবে। নয়ত

দিলীপ আর মায়া চলে যাবার পরই সাবিত্রী বাইরের ঘরে এসে মিঃ সোমকে জিজ্ঞাসা করলেন, চা খাবে?

খাব।

সাবিত্রী রান্না ঘরে চা করতে যাবার পরই আবার কলিংবেল বাজল। মিঃ সোম দরজা খুলতেই দেখলেন চারজন বয়স্ক ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা। তাঁদের পিছনে ছটি ছেলেমেয়ে। একজন ভদ্রলোক জিজ্ঞাসা করলেন, আপনিই কী মিঃ রমেন সোম?

হ্যাঁ।

আমরা কি ভেতরে আসতে পারি?

নিশ্চয়ই।

মিঃ সোম ওঁদের বাইরের ঘরে নিয়ে গেলেন। বসালেন।

এবার একজন প্রবীণ ভদ্রলোক বললেন, আমার নাম এস, কে, রায়চৌধুরী।

মিঃ সোম সঙ্গে সঙ্গে হাত জোড় করে নমস্কার করলেন।

এবার মিঃ রায়চৌধুরী অন্যদের পরিচয় করিয়ে দিলেন, মিসেস বাসু, মিসেস রায়চৌধুরী, ডাঃ বাসু, আমার ছেলে সুব্রত, আমার ভাবী পুত্রবধূ অঞ্জলি বসু।

ওঁদের সবার সঙ্গে পরিচয় হতেই মিঃ সোম খুশীর হাসি হাসেন।

ডাঃ বাসু বললেন, সুব্রত আর অঞ্জলি একসঙ্গে এঞ্জিনিয়ারিং পড়তো। এবারই পাস করল।…

খুব ভাল।

মিসেস বাসু বললেন, ওরা বিয়েতে বাজে টাকা খরচ না করে সেই টাকা দিয়ে কানাডায় যাবে বলেই…

মিঃ সোম সুব্রত আর অঞ্জলির দিকে তাকিয়ে বললেন, এইতো চাই।

মিঃ রায়চৌধুরী বললেন, আমাদের একটা আর্জি আছে।

বলুন, বলুন।

আজ তো বিয়ের নোটিশ দিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিন্তু বিয়ের দিন আপনাকে একটু কষ্ট করে ডাঃ বাসুর বাড়িতে যেতে হবে।

নিশ্চয়ই যাব।

ডাঃ বাসু বললেন, কোন বড় অনুষ্ঠান আমরা করতে চাই না; তবে দু-চারজন আত্মীয়বন্ধুর সামনে শুভকাজ সম্পন্ন হলে…

এত করে বলার কোন প্রয়োজন নেই। আমি নিশ্চয়ই…

মিসেস রায়চৌধুরী বললেন, আমরা কেউ এসে আপনাকে নিয়ে যাব।

মিঃ সোম বললেন, তবে একটু আগে থেকে আমাকে জানাবেন, কবে কখন…

ডাঃ বাসু বললেন, এরপর এদিকে এলেই আমি নিজে আপনাকে জানিয়ে যাব।

মিঃ সোম ফর্ম বের করতে করতে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি আপনাদের মতো উদার ও আধুনিক হত তাহলে কত গরীব মধ্যবিত্ত যে বেঁচে যেতো তার ঠিক-ঠিকানা নেই।

ডাঃ বাসু হাসতে হাসতে বললেন, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা মুখেই ইনকিলাব-জিন্দাবাদ বলে চিৎকার করে কিন্তু পুরনো সংস্কার বিসর্জন দেবার সাহস তাদের নেই।

মিঃ সোম বললেন, তা ঠিক।

মিঃ রায়চৌধুরী ফর্মটা সুব্রতকে দিয়ে বললেন, এটা তোমরা ফিল-আপ করো।

সুব্রত আর অঞ্জলি ফর্ম নিয়ে ওপাশের টেবিলে চলে যেতেই মিঃ সোম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি চা খাবেন?

ওঁরা দু-তিনজন একসঙ্গে বললেন, না, না, চায়ের দরকার নেই।

ওঁরা আর বেশীক্ষণ অপেক্ষা করেন না। অঞ্জলি আর সুব্রত ফর্ম ভরে দেবার পরই ওঁরা চলে যান।

.

ওঁরা চলে যাবার পরও রমেন সোম চেয়ার ছেড়ে উঠতে পারেন। কত কী ভাবেন না, কত কী মনে পড়ে।

উনি মনে মনে আশা করেছিলেন, যারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সমাজের মুখোমুখি দাঁড়াতে সাহস করবে না, শুধু তারাই ওর কাছে বিয়ের জন্য আসবে কিন্তু এরা কজন এসে ওর চোখ খুলে দিলেন।

সত্যি হিন্দু সমাজে প্রত্যেকটি আনন্দোৎসব যেন এক একটা অভিশাপ। একটা শিশু জন্ম হবার পর থেকেই শুরু হয় উৎসব। ষষ্ঠী পূজা থেকে শুরু করে মরার পর শ্রাদ্ধ করেও তার শেষ নেই। প্রথম বছর মাসে মাসে শ্রাদ্ধ করতে হবে, তারপর বছর বছর। শাস্ত্র বলে, অবস্থা অনুযায়ী ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হবে। তাই তো সীতা গয়ায় বালির পিণ্ড দিয়ে পিতৃপুরুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছিলেন কিন্তু আজকের দিনে দীন দরিদ্রতম ব্যক্তিকেও সর্বস্ব খুইয়ে কিছু অনুষ্ঠান না করলে সে তার নিজের সমাজে টিকতে পারবে না।

মিঃ সোমের হঠাৎ মনে পড়ে অমর মামার কথা। নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে নিঃসম্বল অবস্থায় সপরিবারে এসে ঠাঁই নিয়েছেন রানাঘাটে। তারপর কঁচড়াপাড়া। স্কুলে মাস্টারি না পেয়ে শেষ পর্যন্ত স্টেশনের ধারে একটা ছোট্ট চায়ের দোকান খুললেন। ঐ চায়ের দোকানের কেটলি, ডেকচি, কাপ-ডিশ, ইত্যাদি টুকটাক সরঞ্জাম কেনার জন্যও মামীর হাতের একটা চুড়ি বিক্রি করতে হয়।

ঐ চায়ের দোকান থেকে সারাদিনে যে দু-তিন টাকা আয় হতে তাই দিয়ে অমর মামার সংসারের ছটি প্রাণী কোনমতে অনাহারের হাত থেকে বাচছিলেন। বছরখানেকের মধ্যে আশেপাশে অনেক গুলো দোকান আর দু-তিনটে কাঠের গোলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অমর মামার চায়ের দোকান বেশ জমে উঠল। ঐ ছোট্ট চায়ের দোকান আস্তে আস্তে কাঁচড়াপাড়ার বিখ্যাত অমর কেবিন হলো। তারপর পারিবারিক মর্যাদা সামাজিক কর্তব্য অনুযায়ী দুটি মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে অমর মামার হাত থেকে অমর কেবিন চলে গেল।

অমর মামার কথা মনে হতেই রমেন সোমের মন বিষয় হয়ে ওঠে। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে-মানুষ বড় নাকি সামাজিক নিয়ম বড়?

আপন মনেই মিঃ সোম হাসেন। নিজেই নিজের প্রশ্নের জবাব দেন, মানুষ মরুক কিন্তু সামাজিক নিয়ম ঠিক থাক।

হঠাৎ মনে হয়, অমর মামা যদি সর্বস্ব হারিয়ে মেয়ের বিয়ে না দিয়ে স্পেশাল ম্যাবেজ অ্যাক্টের…

না, না, এ সাহস সবার হয় না; হতে পারে না! বাবা, ঠাকুর্দা, চোদ্দপুরুষের ধারা লঙ্ঘন কবে এভাবে মেয়ের বিয়ে দেবার সাহস অমর মামার মতো মানুষের হতে পারে না কিন্তু ডাক্তার, এঞ্জিনিয়ার, কলেজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক, শিল্পী-সাহিত্যিক, জননেতা? তারাও কি অমর মামার মতো ভীতু? মেরুদণ্ডহীন? নাকি এরা সবাই টাটা বিড়লার মতো কোটিপতি?

অনেক ভাবনা-চিন্তা করেও মিঃ সোম এ প্রশ্নের জবাব খুঁজে পান না। শুধু ভাবেন, তিরিশ-চল্লিশ টাকা ব্যয় করে যদি সব ছেলেমেয়ের বিয়ে হতো, তাহলে বোধহয় ভারতবর্ষের মানুষ গরীব থাকত না।

অধ্যায় ১ / ৫

সকল অধ্যায়

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন