বেজি (অনেকদিনের এই ডেস্কো)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বেজি

অনেকদিনের এই ডেস্কো–
আনমনা কলমের কালিপড়া ফ্রেস্কো
দিয়েছে বিস্তর দাগ ভুতূড়ে রেখার।
যমজ সোদর ওরা যে সব লেখার–
ছাপার লাইনে পেল ভদ্রবেশে ঠাঁই,
তাদের স্মরণে এরা নাই।
অক্সফোর্ড ডিক্সনারি, পদকল্পতরু,
ইংরেজ মেয়ের লেখা “সাহারার মরু’
ভ্রমণের বই, ছবি আঁকা,
এগুলোর একপাশে চা রয়েছে ঢাকা
পেয়ালায় মডার্‌ন্‌ রিভিয়ুতে চাপা।
পড়ে আছে সদ্যছাপা
প্রুফগুলো কুঁড়েমির উপেক্ষায়।
বেলা যায়,
ঘড়িতে বেজেছে সাড়ে পাঁচ,
বৈকালী ছায়ার নাচ
মেঝেতে হয়েছে শুরু, বাতাসে পর্দায় লেগে দোলা।
খাতাখানি আছে খোলা।–
আধঘণ্টা ভেবে মরি,
প্যান্থীজ্‌ম্‌ শব্দটাকে বাংলায় কী করি।

পোষা বেজি হেনকালে দ্রুতগতি এখানে সেখানে
টেবিল চৌকির নীচে ঘুরে গেল কিসের সন্ধানে–
দুই চক্ষু ঔৎসুক্যের দীপ্তিজলা,
তাড়াতাড়ি দেখে গেল আলমারির তলা
দামি দ্রব্য যদি কিছু থাকে;
ঘ্রাণ কিছু মিলিল না তীক্ষ্ন নাকে
ঈপ্সিত বস্তুর। ঘুরে ফিরে অবজ্ঞায় গেল চলে,
এ ঘরে সকলি ব্যর্থ আরসুলার খোঁজ নেই ব’লে।

আমার কঠিন চিন্তা এই,
প্যান্থীজ্‌ম্‌ শব্দটার বাংলা বুঝি নেই।

শান্তিনিকেতন, ৪ অক্টোবর, ১৯৩৮

সকল অধ্যায়

১. আকাশপ্রদীপ (গোধূলিতে নামল আঁধার)
২. জানা-অজানা (এই ঘরে আগে পাছে)
৩. পঞ্চমী (ভাবি বসে বসে)
৪. শ্যামা (উজ্জ্বল শ্যামল বর্ণ)
৫. জল (ধরাতলে চঞ্চলতা সব-আগে নেমেছিল জলে)
৬. বধূ (ঠাকুরমা দ্রুততালে ছড়া যেত প’ড়ে)
৭. ধ্বনি (জন্মেছিনু সূক্ষ্ম তারে বাঁধা মন নিয়া)
৮. স্কুল-পালানে (মাস্টারি-শাসনদুর্গে সিঁধকাটা ছেলে)
৯. যাত্রাপথ (মনে পড়ে, ছেলেবেলায় যে বই পেতুম হাতে)
১০. ভূমিকা (স্মৃতিরে আকার দিয়ে আঁকা)
১১. প্রশ্ন (বাঁশবাগানের গলি দিয়ে মাঠে)
১২. বঞ্চিত (রাজসভাতে ছিল জ্ঞানী)
১৩. আমগাছ (এ তো সহজ কথা)
১৪. কাঁচা আম (তিনটে কাঁচা আম পড়ে ছিল গাছতলায়)
১৫. ময়ূরের দৃষ্টি (দক্ষিণায়নের সূর্যোদয় আড়াল ক’রে)
১৬. তর্ক (নারীকে দিবেন বিধি পুরুষের অন্তরে মিলায়ে)
১৭. ঢাকিরা ঢাক বাজায় খালে বিলে (পাকুড়তলির মাঠে)
১৮. নামকরণ (একদিন মুখে এল নূতন এ নাম)
১৯. সময়হারা (খবর এল, সময় আমার গেছে)
২০. যাত্রা (ইস্‌টিমারের ক্যাবিনটাতে কবে নিলেম ঠাঁই)
২১. বেজি (অনেকদিনের এই ডেস্কো)
২২. পাখির ভোজ (ভোরে উঠেই পড়ে মনে)

নোট নিতে এবং টেক্সট হাইলাইট করতে লগইন করুন

লগইন